চবিতে শিবির সন্দেহে শিক্ষার্থীকে আটক, ছাত্রলীগের চাঁদা দাবি
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) এক শিক্ষার্থীকে গভীর রাতে তার মেস থেকে তুলে নিয়ে পরিবারের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। পরে ওই ভুক্তভোগী ছাত্রকে শিবির আখ্যা দিয়ে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন তারা।
জানা গেছে, গত সোমবার (১১ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী রেলগেইট এলাকার একটি মেস থেকে ফিশারিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মনিরুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থীকে শিবির সন্দেহে তুলে আনেন চবি ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক উপগ্রুপ সিক্সটি নাইনের বেশ কয়েকজন অনুসারী। এরপর তাকে আটকে রেখে পরিবারের কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। পরে ছেলের নিরাপত্তার কথা ভেবে ওই শিক্ষার্থীর মা বিকাশে তিন ধাপে তাদেরকে ১৩ হাজার ৫০০ টাকা পাঠান।
এ ঘটনার সাথে ছাত্রলীগের সিক্সটি নাইন উপগ্রুপের নেতাকর্মীদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা হলেন, বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী আকিব জাভেদ, সমাজতত্ব বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী ইবনুল জাররাহ ও অর্থনীতি বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী আবু সাইদ শাকিল।
এদের মধ্যে আকিব জাভেদের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমরা জানতে পেরেছিলাম সে নিষিদ্ধ সংগঠন শিবিরের সাথে জড়িত, তাই আমরা কয়েকজন তার মেসে গেছিলাম এবং সেখানে বিভিন্ন জিহাদী বই ও তাদের সংগঠনের নথিপত্র পেয়েছি। সেখান থেকে নিয়ে এসে প্রক্টরের সহযোগিতায় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছি।
তবে চাঁদাবাজির ব্যাপারে তার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি এটিকে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ বলে অস্বীকার করেন।
আরেক নেতা ইবনুল জাররাহর কাছে জানতে চাইলে তিনিও চাঁদাবাজির বিষয়টি অস্বীকার করেন।
অন্যদিকে মনিরুল ইসলামের ছোট ভাই মো. রফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, যখন চাঁদা দাবি করেছে, আমাদের মনে হয়েছে ভাইকে অপহরণ করা হয়েছে। তাই নিরাপত্তার কথা ভেবে আমার মা ০১৬০৬৭৪৬০৪১ নম্বরে মোট ১৩ হাজার ৫০০ টাকা বিকাশ করে। আমাদের জানামতে আমার ভাই নিয়মিত নামাজ পড়ত এবং ভালো ছাত্র। দেশের এমন একটা পরিস্থিতি হয়েছে যে নামাজও পড়া যাবে না। শুধু তাই নয়, তাকে তুলে মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে মেসেঞ্জার থেকে পরিচিতদের কাছে টাকা ধার চাওয়া হয়েছে।
হাটহাজারী থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, শিবির সন্দেহে আটককৃত শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের বাসভবন ও পরিবহন ভাঙচুর মামলার তদন্তপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে চলতি বছরের ৭ আগস্ট রাতে চবির শাটল ট্রেনে দুর্ঘটনার জেরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন। সেসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন উপ-গ্রুপের নেতাকর্মীরা ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। সে রাতে ছাত্রলীগ কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৫টি যানবাহনসহ উপাচার্যের বাসভবন, শিক্ষক ক্লাব ও পুলিশ বক্স ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় সেসময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৭ জন করে ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত এক হাজার জনের নামে দুটি মামলা দায়ের করে। আর এই অজ্ঞাত মামলায় আসামি করে মনিরুলকে আদালতে পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।