যৌন হয়রানির অভিযোগে রাবি চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা ও মানববন্ধন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চিকিৎসা কেন্দ্রে কর্মরত এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এক শিশুকে (১৩) যৌন হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিশুর মা বাদী হয়ে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সকালবেলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেছেন। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাওয়ার্দী হোসেন।
একই ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুরে অভিযুক্ত চিকিৎসকের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
মামলার এজাহার অনুযায়ী, গত সোমবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে নগরের তালাইমারি এলাকার আমেনা ক্লিনিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত চিকিৎসকের নাম রাজু আহমেদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের উপপ্রধান চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত।
ভুক্তভোগী শিশুর মা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগের শিক্ষক। মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেছেন, চিকিৎসক রাজু আহমেদের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে। তাকে বোন বলে ডাকেন রাজু। সেই সম্পর্ক থেকে রাজু আহমেদের কাছে মেয়ের নিয়মিত দাঁতের চিকিৎসা করান।
সোমবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে আমেনা ক্লিনিকের নিচতলায় ওই চিকিৎসকের চেম্বারে মেয়ের চিকিৎসা করাতে যান। পরে রাত ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে মুঠোফোনে কল এলে তিনি কথা বলার জন্য চেম্বার থেকে বাইরে বের হন। এই সময় ওই চিকিৎসক তার মেয়েকে যৌন হয়রানি করেন বলে জানান।
তিনি বলেন, এতে তার মেয়ে ভয়ে চিৎকার দেয়। এরপর তিনি ভেতরে প্রবেশ করলে তার মেয়েকে কান্নারত অবস্থায় দেখতে পান এবং মেয়ের মুখে ঘটনার বর্ণনা শোনেন।
এদিকে যৌন হয়ারানির ঘটনার আড়াই ঘণ্টা পরে সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তালাইমারি মোড়ে আমেনা ক্লিনিকের নিজ চেম্বার দুর্বৃত্তদের হামলায় ওই চিকিৎসক আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। হামলায় আহত হয়ে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী ডা. উম্মে কাউসার জাহান।
তিনি জানান, তার স্বামী ডা. রাজু কাজ শেষে ক্লিনিক থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় কয়েকজন দুর্বৃত্ত চেম্বারে ঢুকে লাঠি নিয়ে তাকে বেধড়ক মারধর করে এবং ভাঙচুরও চালায়। হামলায় ডা. রাজু মাথা ও কোমরে আঘাত পান।
তবে ভুক্তভোগী শিশুর মা বলছেন, ঘটনার পর এ বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তি হামলার শিকার বলে চালাচ্ছেন এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চিকিৎসক রাজু আহমেদের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে অভিযুক্ত চিকিৎসক রাজু আহমেদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত ও স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুতের দাবিতে আজ দুপুর ১২টার দিকে প্যারিস রোডে মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের দুই শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘রাজু আহমেদ একই ধরনের ঘটনা দীর্ঘদিন ধরে ঘটাচ্ছেন। এর আগেও তার বিরুদ্ধে নারীদের শ্লীলতাহানি করার অভিযোগ উঠেছিল। যে নিজেকে সংযত রাখতে পারেন না; তার শুধু চাকরি নয়, তার চিকিৎসার সনদ বাতিল করা দরকার।’
অভিযুক্তকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোবাররা সিদ্দিকা বলেন, ‘আমাদের একই দাবিতে বারবার রাস্তায় দাঁড়াতে হচ্ছে। আমরা সহকর্মী, শিক্ষক ও নারী হিসেবে কোথাও নিরাপদ নই। এটি অত্যন্ত দুঃখের নাকি লজ্জার বিষয়, কী বলব, বুঝতে পারছি না।’