ছয় দফা দাবিতে দেশব্যাপী সমাবেশের ডাক গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের

  • ঢাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

দেশব্যাপী ৬ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে ছাত্র সমাবেশের ডাক দিল বামধারার ৭ ছাত্র সংগঠনের জোট ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট’।

রোববার (১ অক্টোবর) দুপুরে ঢাবির মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সমাবেশের ঘোষণা দেন গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের নেতৃবৃন্দ।

বিজ্ঞাপন

বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি সাদেকুল ইসলাম সোহেল বলেন, সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দেশের জনগণ হিসাবে আমরা দুঃসহ সময় পার করছি। আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের কবলে দেশ। রাতের অন্ধকারে ভোট ডোকাতির মধ্যদিয়ে জোরপূর্বক ক্ষমতায় আসা একটি ভয়ঙ্কর ফ্যাসিবাদী সরকার দীর্ঘদিন যাবৎ জনগণের কাঁধে চেপে আছে। আবারও তারা একই পথ অবলম্বন করে দেশি-বিদেশি মদদে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করছে। যার ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সাম্রাজ্যবাদী- আধিপত্যবাদী শক্তিগুলোর হস্তক্ষেপের ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী, আমলা এবং ব্যবসায়ীরা মিলে গত ১৫ বছরে ১১ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। উন্নয়নের নামে একদিকে বৈদেশিক ঋণ যেমন বাড়ছে, অন্যদিকে সেই অর্থের একটা বড় অংশ আবার লুটপাট হয়ে যাচ্ছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ও মানুষের বাকস্বাধীনতা হরণের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের নামে সাইবার নিরাপত্তা নামক কালো আইন বলবত রেখেছে। অসংখ্য মানুষ আজ গণবিরোধী আইনের ভুক্তভোগী। 

তিনি আরও বলেন, দেশের শিক্ষাঙ্গনের পরিস্থিতি আরও খারাপ। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা বহুভাগে বিভক্ত। মানসম্মত সর্বজনীন, বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারছে না। ক্রমাগত বাড়ানো হচ্ছে শিক্ষা ব্যয়। শিক্ষার বেসরকারিকরণ, বাণিজ্যিকীকরণ ও শিক্ষা সংকোচন নীতি বেপরোয়া গতিতে এগিয়ে নিচ্ছে সরকার। ফ্যাসিবাদী শাসন অব্যাহত রাখতেই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সন্ত্রাস-দখলদারিত্ব কায়েম করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।  আর এই আধিপত্য ধরে রাখতে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ করে রেখেছে ক্ষমতাসীনরা।

এ রকম পরিস্থিতিতে ছাত্র সমাজসহ সর্বস্তরের জনগণ ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন থেকে মুক্তি চাইছে। বর্তমান ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের ভয়াবহতাকে রুখতে সর্বস্তরের মানুষের ঐক্যবন্ধ সংগ্রাম প্রয়োজন। আমরা গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট ছাত্র-শিক্ষক-শ্রমিক-কৃষকসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক সংগ্রাম গড়ে তোলার আহ্বান জানাই।

উত্থাপিত ৬ দফা দাবি হলো-

১. ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পদত্যাগ এবং জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করা।
২. সর্বজনীন, বৈষম্যহীন, বিজ্ঞানভিত্তিক, গণতান্ত্রিক এবং একই ধারার শিক্ষা নীতি প্রণয়ন করা। জাতীয় শিক্ষাক্রম- ২০২১ বাতিল করতে হবে।
৩. কাগজ-কলমসহ শিক্ষা উপকরণ এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমাও।
৪. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস দখলদারিত্ব বন্ধ কর। অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে।
৫. সাইবার নিরাপত্তা আইন ও অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বিল- ২০২৩ বাতিল কর। শ্রমিকদের অবাধ ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার দিতে হবে।
৬. রাষ্ট্রীয়ভাবে খুন নির্যাতন ও বিনা বিচারে মানুষ হত্যা বন্ধ করা। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা শাসন বন্ধ কার ও স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করা।

দেশব্যাপী ছাত্র সমাবেশের ঘোষণা দিয়ে সোহেল বলেন, দেশব্যাপী বিভিন্ন স্থান এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

অনুষ্ঠানের স্থানগুলো হলো:

১৩ অক্টোবর ২০২৩, চট্টগ্রামে ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
১৫ অক্টোবর ২০২৩, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
৪ নভেম্বর ২০২৩, রংপুরে ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
৫ নভেম্বর ২০২৩, বগুড়ায় ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ৫. ৬ নভেম্বর ২০২৩, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
১১ নভেম্বর ২০২৩, বরিশালে ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ৭. ১৭ নভেম্বর ২০২৩, সিলেটে ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ৮. ১৮ নভেম্বর ২০২৩, ময়মনসিংহে ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
২৪ নভেম্বর ২০২৩, ঢাকায় কেন্দ্রীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জোটের ৭টি দলের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাদেকুল ইসলাম সোহেল, সমন্বয়ক, গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট এবং সভাপতি, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, সালমান সিদ্দিকী, সভাপতি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছায়েদুল হক নিশান, সভাপতি, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, রাকিবুল রনি, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ), এহতেশাম ইমন, দপ্তর সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, অঙ্কন চাকমা, সভাপতি, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, তাওফিকা প্রিয়া, সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত), বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলন।