বিশ্ব শিক্ষক দিবস: স্মৃতির স্কুল, মহতীপ্রাণ শিক্ষক



ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম
স্মৃতির স্কুল, মহতীপ্রাণ  শিক্ষক

স্মৃতির স্কুল, মহতীপ্রাণ শিক্ষক

  • Font increase
  • Font Decrease

বাবার বদলির চাকরির সুবাদে অনেক স্কুল কলেজে পড়েছি। ফলে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো অনেক শিক্ষককে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। আজ শিক্ষক দিবসে সকল শিক্ষকের কথাই মনে পড়ছে। সকলের কাছে কৃতজ্ঞ। তবে আজ শিক্ষক দিবসে আমি আমার শৈশবের বিদ্যালয় ভেড়ামারা উচ্চ বিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার শিক্ষকদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। আমার শৈশবের এই মহান শিক্ষকদের স্মৃতি আমাকে এখনো প্রবলভাবে নাড়া দেয়।

আমার ছেলেবেলা কেটেছে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায়। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৪ সাল পযন্ত ভেড়ামারা জিকে ২নং কলোনীর ব্যারাকে থাকতাম। পড়তাম ভেড়ামারা হাইস্কুলে। ১৯৮৪ সালে এস এস সি পরীক্ষা দেয়া পর্যন্ত যেসকল শিক্ষককে পেয়েছি তাঁরা হলেন: রুহুল ইসলাম স্যার ( প্রধান শিক্ষক), হাফেজ আবদুর রশীদ স্যার (সহকারী প্রধান শিক্ষক), আনোয়ারুল আজিম স্যার ; বিনোদ কুমার স্যার, মতিউর রহমান খান স্যার; মো. সিরাজুল ইসলাম স্যার; দাউদ আলী খান স্যার; মশিউর রহমান স্যার, এনামুল হক স্যার, আবদুল হাই স্যার, জিনাত আলী স্যার, আবদুল করিম স্যার, আবদুস সালাম স্যার, মকবুল হোসেন ভি এম স্যার , আজিজুল হক চাঁদু স্যার, গিয়াস স্যার এবং আবদুর রব স্যারকে।

আমার নিজ স্কুলের ( ভেড়ামারা হাইস্কুল) বাইরে বাল্যকালে আরেকজন শিক্ষক যিনি আমার পড়াশোনার ভিত্তি তৈরি করেছিলেন, তিনি হলেন আব্দুল্লাহ স্যার। তিনি ধরমপুর স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। আব্দুল্লাহ স্যার আমাকে বাসায় পড়াতেন। স্যার আমাকে গনিত, পদার্থ এবং রসায়ন পড়াতেন। স্যারের পড়াগুলো আজও মনে পড়ে। ২০১১ সালের দিকে স্যারের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ হয়েছিল। স্যার প্রায়ই ফোন দিতেন। ইচ্ছে ছিল স্যার আমায় দেখবেন, কিন্তু আর দেখা হয়নি। স্যার মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে পরপারে চলে গেছেন। স্যারের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।

দায়িত্ব ও পরিশ্রম কাকে বলে সেটা সেই স্কুল জীবনেই দেখেছি হেড স্যার রুহুল ইসলামকে। তুলনাবিহীন এই শিক্ষককে জ্ঞান গরিমায় আদর্শ ছিলেন। সক্রেটিস হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আমাদের জীবনে লেখাপড়ার পাশাপাশি, আদব কায়দা, ভদ্রতা রুহুল স্যারকে দেখেই রপ্ত করেছিল ওই সময়ের ছাত্ররা। ছাত্ররা তাঁকে যেমন ভয় করত, তেমন শ্রদ্ধাও করত। স্যার আমাদের দশম শ্রেণীতে ইংরেজী পড়াতেন। আমাদের সময় ইংরেজীতে লিও তলস্তয় এর লেখা থ্রি কোশ্চেন নামে একটি প্রবন্ধ ছিল। কী গম্ভীরভাবে দরাজ গলায় স্পষ্ট উচ্চারণে স্যার পড়াতেন। তখন কেউ না বুঝলেও ক্লাসে পিন পতন নীরবতা থাকতো। স্যার ক্লাসে বেত নিয়ে ঠুকতেন। বেতের ভয়ে আমি প্রবন্ধটা মুখস্ত করে ফেলেছিলাম প্রবন্ধের শুরুটা ছিল The thought came to a certain king that he would never fail if he knew three things. These three things were: What is the right time to begin something? Which people should he listen to? What is the most important thing for him to do?

স্যারের কারণে আমি সহ বন্ধুরা এই দুটি প্রশ্নের উত্তর দিতে ওস্তাদ ছিলাম। আমার ধারণা এখনো আমি ও আমার সহপাঠীরা চোখ বন্ধ করে এই দুটি প্রশ্নের উত্তর অনর্গল বলতে পারবো।

আর আরেকটি হলো What is the summary of the three questions? বাপরে বাপ এখনো ওই প্রবন্ধের কথা মনে হলে ভাবি তলস্তয়ের চেয়ে বোধ হয় আমাদের রুহুল স্যার এই তিন প্রশ্নের উত্তর বেশি জানেন।

আমার স্কুলের আরেক শিক্ষক ছিলেন হাফেজ স্যার। সকল বিষয়ে পারদর্শী এই স্যারকে কে ভুলতে পারে? স্যার পড়াতেন ইংরেজী দ্বিতীয় পত্র। হাফেজ স্যারের ক্লাস হতো টিফিন পিরিয়ডের পর। সাধারণত টিফিনের পরের ক্লাসগুলিতে ক্লাস নেয়া খুব কঠিন। ছাত্ররা অমনোযোগী হয়ে উঠে। কিংবা বেঞ্চে মাথা রেখে ঘুমিয়ে যায়। কিন্তু হাফেজ স্যার জাদুমন্ত্র জানতেন। ক্লাসকে সচল করে তুলতেন তাও ইংরেজী দ্বিতীয় পত্রের ক্লাস দিয়ে। হয়তো কোন ছাত্রকে দাঁড় করিয়ে বলতেন বলতো দেখি আমি একজন গাধা ছাত্র। ওমনি ক্লাসের সবাই হো হো করে হেসে উঠল। ঝিম ধরা ক্লাসে শুরু হয় আনন্দের বন্যা। ট্রান্সলেশন কাকে বলে স্যার শেখাতেন। ক্লাসে ঢুকেই বলতেন ট্রান্সলেশন কর- ভজহরি চা সিঙ্গারা খেয়ে রসগোল্লা খাচ্ছে। কিংবা ছাগলটি ভরভর করিয়া লাদিয়া দিল। স্কুলের মাঠের পাশেই ছিল পশু চিকিৎসালয় । স্যার ওই সকল দৃশ্য দেখতেন আর ট্রান্সলেশন করতে দিতেন।

আমাদের টিফিনের পর প্রায় সময় একটা প্লেন চক্কর দিত। তখন ভেড়ামারার কেউ একজন পাইলট হয়েছিল সেই নাকি প্লেন নিয়ে ভেড়ামারার উপর দিয়ে চক্কর দিত।( এটা অবশ্য শোনা কথা)। আমরা জানালার বাইরে আকাশের দিকে প্লেন খুঁজতাম। কিশোর বয়সের ছেলেরা প্লেন দেখবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কতটা দক্ষ শিক্ষক হলে শ্রেণি কক্ষের ডিসিপ্লিন নষ্ট হতে দেননি। বরং সেটাকেই পড়ানোর সাবজেক্ট বানাতেন। হাফেজ স্যার একধাপ এগিয়ে গিয়ে আরেকটি ট্রান্সলেশন দিতেন- উড়োজাহাজটি ভো ভো শব্দ করিয়া আসিতেছে। স্যারের পান্ডিত্য ছিল সর্বজনবিদিত। স্মরণশক্তি ছিল অসাধারণ।

করিম স্যার অষ্টম শ্রেণীতে ভূগোল এবং নবম শ্রেণীতে বাংলা ব্যাকরণ পড়াতেন। আমার আব্বার সঙ্গে স্যারের হ্নদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। স্যার আমাকে প্রাইভেট পড়াতেন। অন্য কাউকে পড়াতেন না। আমি স্যারের বাসায় যেতাম। যদিও ওই দুই বিষয়ে আমার আগ্রহ ছিল খুবই কম। কিন্তু আব্বার কারণে যেতাম। স্যারের ছেলে শাকিল আমাদের জুনিয়র ছিল। বাসায় গেলে ওর সাথেই গল্প গুজব বেশি হতো। তবে স্যার এতো সুন্দরভাবে ব্যাকরণ বোঝাতেন তা কখনো ভোলার নয়। আমি কারক কিছুতেই বুঝতাম না। বিশেষ করে অপাদান আর অধিকরণ এই দুই কারকে জড়িয়ে ফেলতাম। স্যার একদিন আমাকে গাছের নীচে নিয়ে বোঝালেন, গাছ থেকে পাতা পড়েছে এটাই অপাদান কারক । মানে কোন কিছু থেকে বিচ্যুত হওয়া। পাতা ডালে ছিল সেখান থেকে ছিড়ে পড়ল। ঠিক একইভাবে তিল থেকে বের হয়ে তেল হল। খেজুর রসে গুড় হল। দুধ থেকে দই হল। আবার স্টেশনের উদাহরণ দিয়ে বোঝাতেন ঈশ্বরদী থেকে ট্রেন ভেড়ামারা আসলো। এ রকমের কত উদাহরণ দিতেন।

অষ্টম শ্রেণির ক শাখার ক্লাস টিচার ছিলেন মতিউর রহমান স্যার। স্যারের বাসা ছিল বামুনপাড়ায়। জিকে ২ নং কলোনি থেকে বামুন পাড়ার দূরত্ব ৫ কিলোমিটার এর মতো হবে। স্যারের বাসায় সকাল ৭টায় প্রাইভেট পড়তে যেতাম। আমার একটা সাইকেল ছিল। বন্ধু মুজিবুল আসতো ষোলদাগ থেকে। ১৯৮১ সালের শীতের দিনগুলোতে মতিউর স্যারের বাসায় যেতে খেজুর রস, আলুর দম, কলাইয়ের রুটি কত কিছু যে খেয়েছি। স্যার আমার উচ্চারণ নিয়ে রসিকতা করতেন, বলতেন তুমি তো পাবনার ছাওয়াল। তোমরা স্ব্ররধ্বনির ব্যবহার জানো না। তোমরা দুইটা স্বরধ্বনির মাঝে কিছু থাকলেই ঝামেলা বাধিয়ে ফেল। বলেই স্যার বলতো ট্যাহা লিয়া আইছ্যাও তো। তখন কিছুই বুঝতাম না। স্যারের ধুতি পড়ার দিকে চেয়ে থাকতাম। বন্ধু মুজিবুল সহ সকলে হো হো করে হেসে দিত। স্যারের অসাধারণ পান্ডিত্য স্বীকার করতেই হবে।

ভেড়ামারা হাইস্কুলের একজন শিক্ষক এসেম্বলীর সময় খুব প্রাণোচ্ছল থাকতেন। তিনি সকলের প্রিয় ভি এম স্যার। স্যারের আসল নাম ছিল মকবুল হোসেন স্যার। সপ্তম শ্রেণীতে ক শাখায় স্যার আমাদের শ্রেণী শিক্ষক ছিলেন। কী পড়াতেন মনে পড়ে না। তবে বেশীরভাগ সময়ে স্যার রামায়ণ এবং মহাভারতের গল্প শোনাতেন।আজিজুল হক স্যারকে সকলে চাঁদু স্যার নামে ডাকতেন। স্যার আমাদের নবম দশম শ্রেণীতে রসায়ন পড়াতেন।

অসাধারণ বাংলা পড়াতেন আজিম স্যার। স্যারকে কোনদিনই চেয়ারে বসতে দেখিনি। ক্লাস নাইনে উঠেই স্যারকে পেলাম। কথা বিচিত্রা নামে বাংলা সহায়ক পাঠ্য ছিল । স্যার সেখান থেকে পড়াতেন পোস্ট মাস্টার, আদরিণী, মামলার ফল এসকল গল্প গুলো। স্যারের পড়ানো দেখে গল্পের নায়ক গুলোকে যেন পথে ঘাটে দেখতাম।

আমাদের সময়ে ধর্মীয় শিক্ষক ছিলেন দুইজন। একজন হলেন সিরাজ স্যার আর অপরজন হাই স্যার। ওই সময়ে নীল ডাউন বলে স্কুলে একটা প্রচলিত শাস্তির বিধান ছিল। ধর্ম শিক্ষক হাই স্যার আমাদের প্রায় সময়েই নীল ডাউন করতেন। পড়ার কারণে নয়, নামাজ না পড়ার কারনে। জোহরের নামাজের সময় কে কে মসজিদে যাইনি সেটা স্যার মনে রাখতেন। আর তার শাস্তি ছিল নীল ডাউন কিংবা মসজিদে বদনা কিনে দেয়া। হাই স্যার আমাদের নীল ডাউনের শাস্তি দিলেও স্যার কে কেন জানি নিষ্পাপ একজন মানুষ মনে হতো। নোয়াখালীর মানুষ ছিলেন। স্যার নোয়াখালির আঞ্চলিকতায় কথা বলতেন। ধর্মপরায়ণ, ন্যায়নিষ্ঠ স্যারকে সবাই ভালবাসতেন।

আমাদের আরেকজন হাই স্যার ছিলেন । তিনি কৃষি বিজ্ঞান পড়াতেন। স্যার স্টুডেন্টদের অনেক পছন্দ করতেন। সেই সুবাদে আমি ও আমার বন্ধুরা হাই স্যার এর ১৬ দাগের বাড়ীতে অনেকবার গেছি। যতদূর মনে পরে হাই স্যার এর অনেক লেখা কৃষি কথা নামে পত্রিকায় ছাপা হত।

ক্লাস টেনে আমাদের ক্লাস টিচার ছিলেন রব স্যার। খুবই ভাল একজন টিচার ছিলেন। আজও মনে পড়ে এস এস সি পরীক্ষার আগে টেস্ট পরীক্ষার ফলাফল দিয়েছিলেন রব স্যার। ১৯৮৩ সালে রব স্যার আমাদের পিকনিকে নিয়ে গিয়েছিলেন হার্ডিঞ্জ ব্রীজের নীচে। সেবারই স্যার একটা গান গেয়েছিলেন হৈমন্তী শুক্লার তুমি চলে গেলে, চেয়ে চেয়ে দেখলাম। এরপর যতদুর জেনেছিলাম স্যারও কান্সারে আক্রান্ত হয়ে ইহজগত ছেড়ে চলে গেছেন। এখনো কোন কারণে হার্ডিঞ্জ ব্রীজের কাছে গেলে ১৯৮৩ সালের পিকনিক আর স্যারের গানের কথা মনে পড়ে।

আমার জীবনে দেখা সুদর্শন স্যার ছিলেন এনামুল হক স্যার। স্যারের গ্রামের বাড়ি ছিল চাঁদগ্রাম। ১৯৮০ সালে আমরাও চাঁদগ্রামে থাকতাম। স্যার প্রতি শুক্রবার চাঁদগ্রাম চাষীক্লাবে মিটিং করতেন। অসম্ভব জনপ্রিয় ছিলেন স্যার। গ্রাম্য সালিশ মিটিংয়ে স্যার যে সমাধান দিতেন, সেটাই সবাই মানতেন। স্কুলেও স্যার আমাদের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দিতেন। এসেম্বলীর সময় দেখতেন কেউ নোংরা কাপড়ে এসেছি কি না, কিংবা কারো চুল বড় হয়েছে কি না, কেউ নখ কেটেছে কি না। স্যারের শাস্তি ছিল স্কুল মাঠের ঘাস পরিস্কার করা। কিন্তু কখনো এগুলো শাস্তি মনে হয় নি। স্কুলের পুরস্কার বিতরণী কিংবা বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় স্যারকে খুবই প্রানবন্ত দেখেছি। স্যার মাঝে মাঝে আমাদের দিয়ে কবিতা আবৃত্তি করাতেন।

পেশাগত জীবনে আমিও একজন শিক্ষক। কিন্তু এটি এখন আর সম্মানীয় স্থানে নেই। আশির দশকে আমার দেখা ভেড়ামারা হাই স্কুল এর সেই সময়কার শিক্ষকদের তুলনা হয় না। ছাত্র হিসেবে আমার শৈশব ও কৈশোরের এই সকল শিক্ষকেরা হ্নদয়ের মণিকোঠায় চির জাগরুক হয়ে আছে । তাঁদের স্মৃতি আমি বহন করতে চাই অন্তহীন কাল ধরে। আমি যখন স্কুলের ছাত্র ছিলাম তখন বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকদের বেতন ও ভাতাদি সবচেয়ে অবহেলিত ছিল। তবুও আমার শিক্ষকদের কখনো স্কুলে বা অন্য কোন আলাপচারিতায় কখনো আফসোস করতে দেখিনি! তবে একটা জিনিসের স্যারদের অভাব ছিল না, সেটা হলো সম্মান!

আজ শিক্ষক দিবসে সকল শিক্ষকদের জানাই শ্রদ্ধা ও অভিনন্দন।

(ডঃ মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম, ইতিহাস বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রাক্তন প্রো ভাইস চ্যান্সেলর, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।)

   

বর্ণাঢ্য আয়োজনে নতুন বছরকে বরণ করল জবি



জবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষকে বরণ করা হয়েছে।

১৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলা নববর্ষ (১৪৩১) উপলক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা আয়োজন করা হয়।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আয়োজনে মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিমের নেতৃত্বে মঙ্গল শোভাযাত্রাটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে রায় সাহেব বাজার ও ভিক্টোরিয়া পার্ক প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে শেষ হয়।

এবারের নববর্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রায় ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া রিকশাচিত্রকে মূল প্রতিপাদ্য করে এবং ‘বৈশাখে নূতন করিনু সৃজন, মঙ্গলময় যত তনু-মন’ স্লোগানকে সামনে রেখে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা হয়েছে।

শোভাযাত্রায় রিকশাচিত্রের পাশাপাশি সংকটাপন্ন প্রাণী প্রজাতির মধ্যে কুমিরের মোটিফ তুলে ধরা হয়। এছাড়াও লক্ষ্মীপেঁচা, ফুল, মৌমাছি, পাতা, বাঘ এর মুখোশ এবং গ্রামবাংলার লোক কারুকলার নিদর্শনসমূহ স্থান পায়।

মঙ্গল শোভাযাত্রা শেষে একাত্তরের গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি ভাস্কর্য চত্বরে আলোচনা সভা হয় ৷ সংগীত বিভাগ ও নাট্যকলা বিভাগের আয়োজনে সংগীতানুষ্ঠান ও যাত্রাপালার আয়োজন করা হয় ৷

ভাষা শহীদ রফিক ভবনের নিচতলায় জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তরের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় দিনব্যাপী প্রকাশনা প্রদর্শনী।

এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগ ও ইন্সটিটিউটের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতি, প্রেসক্লাব, রিপোটার্স ইউনিটিসহ সকল সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে।

;

শূন্যপদ নিয়ে টেনেটুনে চলছে লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, লক্ষ্মীপুর
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে চলছে টেনেটুনে। এতে কোনোভাবে ক্লাস চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হলেও ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার মান।

অধ্যক্ষসহ বিভিন্ন পদে এখানে লোকবলের চাহিদা রয়েছে ২শ ৩৫ জনের। অথচ এতসংখ্যক লোকবলের বিপরীতে এখানে রয়েছেন মাত্র ৫১ জন। যেখানে শূন্যপদের চাহিদার সংখ্যা ১শ ৮৪ জনের, সেখানে ইনস্টিটিউটটির টেনেটুনে না চলে উপায়ও নেই।

লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এখানে চিফ ইনস্ট্রাক্টর পদে মোট পদসংখ্যা ১৪টি। আছেন মাত্র ৩ জন। বাকি ১১টি পদ এখনো খালি।

ইনস্ট্রাক্টর পদে মোট পদসংখ্যা ৪৬টি। আছেন মাত্র ৮ জন। বাকি ৩৮ পদ খালি। জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে মোট পদসংখ্যা ৪৫টি। আছেন মাত্র ৫ জন। বাকি ৪০ পদ খালি। ওয়ার্কশপ সুপার পদের সংখ্যা ৩টি। ৩টি পদই খালি। ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর পদসংখ্যা ১০৮টি। কর্মরত আছেন ২৪ জন, খালি ৮৪।
৩য় শ্রেণির কর্মচারীর পদসংখ্যা ৭টি। কর্মরত ৪, খালি ৩টি। ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদসংখ্যা ১১টি। কর্মরত ৭, শূন্য ৪টি। খণ্ডকালীন শিক্ষক আছেন ১২ জন। অধ্যক্ষের পদও খালি। চলছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে। ল্যাব সংখ্যা ২০টির মতো।

এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. জহিরুল ইসলাম জানান, ল্যাব সংখ্যা ৪০টি হলেও শিক্ষার মান যথাযথ রাখা যাবে। তবে যে কয়টি ল্যাব রয়েছে, সেগুলোতে সরঞ্জামাদি প্রয়োজনীয়সংখ্যক সরবরাহ রয়েছে।

একইসঙ্গে তিনি এটাও জানান, সারাদেশের পলিটেকনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর চিত্র প্রায় একইরকম। তবে প্রতি বছরই নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। চলতি বছর লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিকে ৪ জন শিক্ষক পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে কাজে যোগ দিয়েছেন ৩ জন।

তিনি আরো জানান, নতুন ল্যাব করার আগে এখানে একটি নতুন ভবন প্রয়োজন। তা হলে ল্যাবসহ ক্লাসরুমের প্রয়োজনও মেটানো যাবে।

 

;

ঢাবি এমফিল প্রোগ্রামে ভর্তির আবেদনপত্র আহ্বান



ঢাবি করেস্পন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের এমফিল প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য আগ্রহী প্রার্থীদের কাছ থেকে নির্ধারিত ফরমে আবেদনপত্র আহ্বান করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ অধিদফতর এর বিজ্ঞপ্তি হতে এ তথ্য জানা যায়।

এ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রার্থীদের সংশ্লিষ্ট বিভাগ/ইনস্টিটিউটের শিক্ষকদের মধ্য থেকে তত্ত্বাবধায়ক নির্বাচন করতে হবে এবং তত্ত্বাবধায়কের অধীনে ও মাধ্যমে এমফিল, গবেষণার জন্য আবেদন করতে হবে। আগামী ২৩ মে ২০২৪ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে (https://du.ac.bd) আবেদন ফরম ডাউনলোড করা যাবে। ভর্তি ফরমের ফিস বাবদ ১০০০/- টাকা আগামী ২৩ মে ২০২৪ তারিখের মধ্যে জনতা ব্যাংক টিএসসি শাখায় জমা দিতে হবে। আবেদনপত্র যথাযথভাবে পূরণ করে আগামী ২৩ মে ২০২৪ তারিখের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগের চেয়ারম্যান/ইনস্টিটিউটের পরিচালকের অফিসে জমা দিতে হবে। আবেদনপত্রের সঙ্গে ফিস বাবদ টাকা জমার রশিদের মূলকপি, সকল পরীক্ষার সনদ ও নম্বরপত্রের ফটোকপি এবং সম্প্রতি তোলা ১ (এক) কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি সংশ্লিষ্ট তত্ত্বাবধায়ক/বিভাগের চেয়ারম্যান/ইনস্টিটিউটের পরিচালক কর্তৃক সত্যায়িত করে জমা দিতে হবে। এছাড়া, গবেষণার একটি রূপরেখা (Synopsis) জমা দিতে হবে।

এতে আরো জানানো হয়, বাংলাদেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিদেশ থেকে স্নাতক/স্নাতক (সম্মান) ও মাস্টার্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ভর্তির ক্ষেত্রে আবেদনপত্র গ্রহণের পূর্বে তাদের অর্জিত ডিগ্রির সমতা নিরূপণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় সমতা নিরূপণ কমিটির আহ্বায়কের (ডিন, জীববিজ্ঞান অনুষদ, কার্জন হল সংলগ্ন) নিকট আবেদন করতে হবে। এম.বি.বি.এস/ সম্মান ডিগ্রিধারী প্রার্থীগণ তাদের ডিগ্রির সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত বিভাগে আবেদন করতে পারবেন।

প্রার্থীদের ক্ষেত্রে জানানো হয়, প্রার্থীর সকল পরীক্ষায় কমপক্ষে ২য় বিভাগ/শ্রেণি এবং CGPA নিয়মে ৫-এর মধ্যে ৩.৫ ও CGPA ৪-এর মধ্যে ৩ থাকতে হবে।

এছাড়াও প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীভুক্ত ও ট্রান্সজেন্ডার প্রার্থীদের ক্ষেত্রে সকল পরীক্ষায় ন্যূনতম দ্বিতীয় বিভাগ/শ্রেণি থাকতে হবে এবং সিজিপিএ পদ্ধতিতে ৫-এর মধ্যে ৩ এবং ৪-এর মধ্যে ২.৫০ থাকতে হবে।

উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েবসাইট (https://du.ac.bd) ভিজিট করে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে।

;

চবির শাটলের নিচে পড়ে কিশোরের মৃত্যু 



চবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীদের একমাত্র বাহন শাটল ট্রেনের নিচে পড়ে দ্বিখন্ডিত হয়ে এক কিশোরের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তবে তার নাম-পরিচয় এখনও জানা যায়নি।

বুধবার (১৭ এপ্রিল) বিকাল সাড়ে ৫ টার শাটল ট্রেনটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বটতলী রেলস্টেশনের উদ্দেশ্য ছেড়ে যাচ্ছিলো। সন্ধ্যা ৬ টার দিকে চট্টগ্রাম পিলখানা জামে মসজিদের নিকটে পৌঁছালে কিশোরটি শাটল ট্রেনের নিচে পড়ে যায়। এসময় ট্রেনের নিচে পড়ে তার পুরো শরীর দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানা যায়, চবির শাটল ট্রেন পিলখানা জামে মসজিদের নিকটে আসলে ওই ছেলে ট্রেনের সামনে পড়ে যায় এবং তার পুরো শরীর দুই ভাগ হয়ে তৎক্ষনাৎ দুর্ঘটনাস্থলেই মারা যায়। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ষোলশহর রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ খোরশেদ আলম গণমাধ্যমকে জানান, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, ছেলেটি ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে। তার পুরো শরীর দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে। তার শরীর ও চেহারা দেখে আমরা যতটুকু বুঝতে পেরেছি, সে বস্তির কোনো ছেলে হবে। কিন্তু এখনও তার পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। মরদেহ বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে (চমেক) রয়েছে। পরিচয় শনাক্তের কাজ চলছে। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. নুরুল আজিম সিকদার বলেন, ‘শাটলের নিচে পড়ে এক কিশোরের মারা যাওয়ার ঘটনাটি কিছুক্ষণ আগেই জেনেছি। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে। তার পরিচয় শনাক্ত করে পরিবারের কাছে মরদেহ পৌঁছে দেওয়া হবে।



;