প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
অধ্যাপক আ ব ম ফারুক

অধ্যাপক আ ব ম ফারুক

  • Font increase
  • Font Decrease

মাল্টিমিডিয়া নিউজ পোর্টাল বার্তা২৪.কম-এ গত ১৩ মে “ঢাবির ফার্মেসি অনুষদের সাবেক দুই ডিনের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রতিবাদ পাঠিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক, ফার্মেসি অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক আ ব ম ফারুক। তিনি মনে করেন, ওই প্রতিবেদনের তথ্য অসত্য ভিত্তিহীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে করা।

অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের পাঠানো প্রতিবাদ লিপি হুবহু তুলে ধরা হলো-

গত ১৩ মে, ২০২২ তারিখে আপনার সংবাদ পত্রে “ঢাবির ফার্মেসি অনুষদের সাবেক দুই ডিনের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ” শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে আমাকে উল্লেখ করে কিছু অসত্য, ভিত্তিহীন তথ্য পরিবেশিত হয়েছে যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে লোকসমাজে আমাকে হেয় করা এবং আমার ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার লক্ষ্যে করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। আমি এতে অত্যন্ত অপমানিত ও সংক্ষুব্ধ হয়েছি। এবিষয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করে আমার নিমোক্ত বক্তব্যটুকু অনুগ্রহ করে হুবহু প্রকাশ করার জন্য আপনাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।

একটি বেনামী চিঠির সূত্র ধরে পরিবেশিত আপনাদের প্রতিবেদনে আমাকে জড়িয়ে যে অসত্য ও ভিত্তিহীন তথ্যগুলো প্রকাশিত হয়েছে সেগুলোর প্রতিটি সম্পর্কে সংক্ষিপ্তভাবে নিয়ে আমি ব্যাখ্যা প্রদান করছি -

১) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত দুই কর্মচারি আমার কোনো নিকটাত্মীয় নয়। তারা আমার স্ত্রীর ভাগ্নেও নয়। কারণ আমার স্ত্রীর কোনো বোন নেই। তারা কেউ আমার স্ত্রীর তো খালাতো মামাতো ফুফাতো বোনেরও ছেলে নয়। আমি ডিন থাকার সময়ে চাকরিতে নিয়োগ পেলেও তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী গঠিত সিলেকশন বোর্ডে ইন্টারভিউ দিয়ে সর্বাত্মকভাবে ঐকমত্যের ভিত্তিতে উপস্থিত প্রার্থীদের মধ্যে সবে য়ে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে পরিগণিত হওয়ায় নিয়োগের সুপারিশ পেয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নিয়োগ পেয়েছে। সেই সিলেকশন বোর্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠানো প্রতিনিধি, কর্মচারি সমিতির প্রতিনিধি, শিক্ষকদের প্রতিনিধি প্রভৃতি অনেকেই ছিলেন। অতএব যথানিয়মে নিরপেক্ষ সিলেকশন বোর্ডের মাধ্যমেই তারা নিয়োগ পেয়েছে। তাই অভিযোগটি অসত্য এবং আমাকে জনসমক্ষে হেয় করার জন্যই এটি করা হয়েছে।

২) আমি ফার্মেসি অনুষদের ডিন থাকাকালে আমার বিরুদ্ধে ‘অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতি সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিয়োগ ওঠে’ বলে আপনারা প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছেন। আমি আপনাদের কাছে তার বিবরণ দাবি করছি। কোন কোন ক্ষেত্রে কোন তারিখে কত অর্থ আত্মসাৎ করেছি তা আমি অবশ্যই জানতে চাই। আশা করি আপনারা তা জানাবেন।

৩) ঢাকা মহানগরীতে আমার অনেক আত্মীয় রয়েছেন। তাদের অনেকে ভাড়া বাড়িতে থাকেন। আবার আমারসহ অনেকেরই বিলাসবহুল না হলেও উপযুক্ত নিজস্ব বাড়ি বা ফ্লাট রয়েছে। তবে কোনোটাই বেনামে নয়। আমার ও আমার আত্মীয়দের অনেকেরই গাড়ি আছে। কিন্তু সেগুলো কোনোটাই বিলাসবহুল নয়, বরং অধিকাংশই অনেক পুরনো।

৪)আমার দুই মেয়ে বিদেশে লেখাপড়া করছে এটাও সত্য নয়। আমার বড় মেয়ে দেশে অনার্স সমাপ্ত করে বিদেশে এম এস সম্পূর্ণ করে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে আইটি ইঞ্জিনিয়ার স্বামীর সাথে সংসার করছে। ভবিষ্যতে সে নিজের রোজগারে ও নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি পেলে পিএইচডি করবে বলে প্রস্তুতি নিচ্ছে ও অপেক্ষায় আছে।  আমার  ছোট  মেয়ে  দেশে  মাস্টার  ডিগ্রির  থিসিস  করছে।  বিদেশের  কোনো  ভালো  বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএই ডি করার প্রস্তাব পেলে ভবিষ্যতে সেখানে যাওয়ার আশা রাখে। তাদের কারো লেখাপড়ার ব্যয়ভারই

আমাকে বহন করতে হবে না। অতএব বিদেশে তাদের লেখাপড়ার পেছনে বিপুল খর   হচ্ছে এবং তা আমার আয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এ তথ্যটিও অসত্য।

৫) আপনারা লিখেছেন যে আমি ক্ষমতার অপব্যবহার করে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ হিসেবে নিয়েছি। আমি কবে এতটা ক্ষমতাবান হলাম তা আমার জানা নেই এবং আমার সুদীর্ঘ ৪৩ বছরের চাকরিকালে কোথাও থেকে ঘুষও নেইনি। এই অসত্য অভিযোগ প্রকাশের মাধ্যমে আপনারা আমার মানহানি করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাকে কখনো কখনো অন্যান্য বিশেষজ্ঞ শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের সাথে  বেসরকারি  মেডিক্যাল  কলেজের  কার্যক্রম  পরিদর্শনে  পাঠাতেন।  আমাদের  টিমগুলোর  দায়িত্ব  ছিল সেখানে শিক্ষা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে   লছে কিনা সে বিষয়ে মতামত দেওয়া। আমাদের সেই টিমগুলো কোনো ত্রুটি  পেলে  তা  কর্তৃপক্ষকে  অবহিত  করে  করণীয়  সুপারিশ  করতো।  টিম  সদস্যদের  সম্মিলিত  সিদ্ধান্তে সুপারিশগুলো  পাঠানো  হতো  বিধায়  আমার  একার  পক্ষে  কোনো  অর্থনৈতিক  সুবিধা  নেয়ার  কোনো  সুযোগ

সেখানে  ছিল  না।  বিশ্ববিদ্যালয়  কর্তৃপক্ষ  ও  আমাদের  টিমের  লক্ষ্য  ছিল  অনেক  টাকা  খর   করে  যারা বেসরকারি  মেডিক্যাল  কলেজগুলোতে  পড়তে  আসে  তারা  যেন  সঠিক  জ্ঞানটুকু  লাভ  করার  সুযোগ  পায়। তাছাড়া কলেজগুলো যেন বেআইনিভাবে অতিরিক্ত ছাত্র ভর্তি করতে না পারে তা দেখাও আমাদের দায়িত্ব ছিল। কোথাও এসব কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মানা হচ্ছে না দেখলে আমরা বিভিন্ন শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করতাম। উদাহরণস্বরূপ, একবার একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ বেআইনিভাবে ৫০ জন অতিরিক্ত ছাত্র ভর্তি করায় আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির সুপারিশ করাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেই কলেজকে ৫ কোটি টাকা জরিমানা করেছিল। আমাদের এসব কাজকে বিকৃত করে যদি অসত্য অভিযোগ কোনো  গণমাধ্যম  প্রচার  করে  তাহলে  তা  সত্যের  অপলাপ  এবং  আমাদের  জন্য  অত্যন্ত  অপমানজনক। আপনাদের  পরিবেশনা  অনুযায়ী  কোন  কোন  মেডিক্যাল  কলেজ  থেকে  আমি  কত  টাকা  ঘুষ  নিয়েছি  তা বিস্তারিত জানাতে আপনাদেরকে অনুরোধ করছি।

৬) বাংলাদেশ  ফার্মেসি  কাউন্সিলের  ব্যাপারেও  একই  কথা  প্রযোজ্য।  যেসব  বেসরকারি  বিশ্ববিদ্যালয়  তাদেও ফার্মেসি বিভাগে সরকার অনুমোদিত সংখ্যার অতিরিক্ত ছাত্র ভর্তি করতো, কিংবা যাদের শিক্ষক সংখ্যা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত কম, যাদের প্রয়োজনীয় সংখ্যক শ্রেণিকক্ষ ও ল্যাব ছিল না, ল্যাবে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ছিল না, যাদের পরীক্ষা পদ্ধতি স্বচ্ছ ছিল না, যাদের লাইব্রেরিতে পেশা সংশ্লিষ্ট বইয়ের সংখ্যা ছিল অপ্রতুল, যারা শিক্ষকদেরকে শিক্ষা ছুটি দিত না- ইত্যাকার সমস্যা জর্জরিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সঠিক নিয়ম অনুসরণ করাতে আমরা উদ্বুদ্ধকরণ ও   প্রয়োগ দুটোই করেছি। ফার্মেসি কাউন্সিলে এই দায়িত্ব পালনের সময়ও আমি একা ছিলাম না। সেখানেও একটা টিম ও কমিটি ছিল। আমরা যা কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি তা  দেশের স্বার্থে  এবং  টিমওয়ার্কের মাধ্যমে  ও পরবর্তীতে  কমিটির  সিদ্ধান্তে।  সেখানে একা  আমার  পক্ষে দুর্নীতি করে কাউকে অন্যায় সুবিধা দেওয়ার বা নিয়ম না মানা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে হয়রানি করার কোনো প্রশ্নই আসে না।

৭) ২০০৯ সালে প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে শিশুমৃত্যুর দুঃখজনক ঘটনার পর বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় স úর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি কর্তৃক আমাকে টিম লিডার করে একটি বিশেষজ্ঞ পরিদর্শন দল গঠন করা হয়। এর কাজ ছিল  আমাদের ওষুধ কোম্পানিগুলোর ওষুধ  উৎপাদনের সক্ষমতা যাছাই করা ও সুযোগ-সুবিধাগুলো বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ‘গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্রাকটিস’ (জিএমপি) গাইডলাইনের অনুরূপ কিনা তা যাছাই করে রিপোর্ট দেওয়া। কারণ জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে এবং দেশের জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য সেই গাইডলাইন সঠিকভাবে মেনে   চলা আমাদের দেশের জন্য বাধ্যতামূলক। এই গাইডলাইন মেনে না   ললে ওষুধ মানহীন হতে বাধ্য। আমাদের কাজ ছিল কারখানার সুবিধাবলী পরিদর্শন করে সংসদীয় কমিটির কাছে রিপোর্ট আকারে পেশ করা এবং কোনো কোম্পানির কোনো অসম্পূর্ণতা বা ত্রুটি পরিলক্ষিত হলে তা দূর করে কারখানাটি কিভাবে জিএমপি মানস  ক্ষুণ্ন হতে পারে তার পরামর্শমূলক সুপারিশ দেওয়া। তবে যদি কোনো কোম্পানি ইচ্ছাকৃতভাবে নিম্নমানের ওষুধ তৈরি করে কিংবা নকল-ভেজাল ওষুধ উৎপাদনে নিয়োজিত  থাকে  তাহলে  দেশের  বৃহত্তর  জনস্বার্থে  মানুষের  জীবন  রক্ষার্থে  তাদের  উৎপাদনের  লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করাও আমাদের টিমের দায়িত্বের মধ্যে ছিল। অর্থাৎ আমাদের ক্ষমতা ছিল শুধু সুপারিশ করা। কোনো কারখানা বন্ধ করা বা উৎপাদন বন্ধ করে দেয়ার কোনো ক্ষমতা আমাদের ছিল না। সেই ক্ষমতা ছিল ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের।

আমাদের দেশের জনস্বাস্থ্য রক্ষার স্বার্থে এই ব্যাপক পরিসরের দুরূহ কাজটি করার বিষয়ে আমরা সচেতন হই। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কাছ থেকে আমরা তখনকার বাংলাদেশে বিদ্যমান ওষুধ কোম্পানিগুলোর তালিকা সংগ্রহ করি। সেখানে ২৪৭টি অনুমোদিত এলোপ্যাথিক কোম্পানির নাম-ঠিকানা ছিল। কিন্তু কাজ শুরুর পর কয়েক বছর ধরে সারা বাংলাদেশ চষে বেরিয়েও আমরা ১৯৩টির বেশি কোম্পানির অস্তিত্ব খুঁজে পাইনি। অর্থাৎ তারা ছিল কাগজেপত্রে, বাস্তবে নয়। সম্ভবত তাদের একমাত্র কাজ ছিল ভুয়া নাম-ঠিকানা ও কাগজপত্র দেখিয়ে সরকারের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা খর  করে বিদেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি করে কালোবাজারে বিক্রি করে দেয়া। তাদের কোনো কারখানা ছিল না বলে পরিদর্শন করা সম্ভব ছিল না। তাই তাদের নাম আমরা আমাদের রিপোর্ট থেকে বাদ দেই। স্বতঃসিদ্ধভাবে তারা সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপে বাতিল হয়ে যায়।  এই  ৫৪টি  ওষুধ  কোম্পানির  লাইসেন্স  বাতিল  হওয়ার  পেছনে  আপনাদের  বর্ণনা  অনুযায়ী  আমাদের কোনো ‘নেগেটিভ রিপোর্ট দেওয়ার হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে কোটি কোটি টাকার অনৈতিক সুবিধা ও ঘুষ’ নেওয়ার মানসিকতা ছিল না। এই অভিযোগ ডাহা অসত্য ও অত্যন্ত অপমানজনক।

তবে এছাড়াও আমরা কিছু কোম্পানির কারখানা আকর্ষিক পরিদর্শনের সময় নকল-ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদনকালে তাদেরকে হাতে-নাতে ধরেছি এবং র‌্যাব-পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট তাদের কারো  কারো  নামে  বিশেষ  ক্ষমতা  আইনে  মামলা  দিয়েছে  ও  গ্রেফতার  করেছে।  র‌্যাব  ও  মোবাইল  কোর্ট কোনো  কোনো  কোম্পানির  জব্দকৃত  পাহাড়প্রমাণ  নকল-ভেজাল-নিম্নমানের  ওষুধ  আগুন  দিয়ে  পুড়িয়ে দিয়েছে।  সেই  দৃশ্য  বিভিন্ন  সরকারি-বেসরকারি  টেলিভিশনের  সংবাদে  দেশবাসী  তখন  প্রত্যক্ষ  করেছে। আমরা সারা দেশে এরকম ২০টি কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল করার সুপারিশ করেছিলাম। এটি করে আমরা কোনো  অন্যায়  করিনি  বলে  আমি  এখনো  দৃঢ়ভাবে  বিশ্বাস  করি।  আমরা  দেশের  মানুষের  জনস্বাস্থ্য  রক্ষায় সামান্য কিছু কাজ করতে পেরেছি বলে মহান আল্লাহকে কৃতজ্ঞতা জানাই। নকল-ভেজাল-নিম্নমানের ওষুধ প্রস্তুতকারকরা আমাদের নামে যতই ‘নেগেটিভ রিপোটর্’ ‘হুমকি’ ‘ভয়ভীতি’ ‘অনৈতিক সুবিধা’ ‘ঘুষ’ ইত্যাদি অপবাদ  দেওয়ার  চেষ্টা  করুক  না  কেন  আমরা  তাতে  ভীত  নই,  কারণ  এগুলো  একান্তই  অসত্য  ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

৮) ‘কোটি কোটি টাকার অনৈতিক সুবিধা’ আমরা কখনো নেইনি, বরং এ ধরনের প্রস্তাব উল্টোভাবেই এসেছিল। নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদনে নিয়োজিত কোনো কোনো কোম্পানি ফ্ল্যাট, গাড়ি ইত্যাদি ‘উপহার’ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল।  যেহেতু  তখন আমার বাসায় বা অফিসে কোনো ওষুধ  কোম্পানির মালিক  পক্ষের  কারো আসা কড়াকড়িভাবে নিষেধ ছিল তাই এসব প্রস্তাব আসতো অন্যের মারফতে। কিন্তু সেগুলো  গ্রহণ না করার মতো যথেষ্ট মনোবল আমাদের ছিল। যদি কখনো এসব প্রস্তাবের সাথে জড়িত কোম্পানিগুলোর নাম বলা অনিবার্য হয় তখন সেগুলোর আদ্যোপান্ত প্রকাশ করতে আমি সচেষ্ট আছি।

৯) সেই পরিদর্শনকালে কোনো কোম্পানির ওপর আমার বা আমাদের কোনো ব্যক্তিগত জিঘাংসা ছিল না। তাই জিঘাংসা চারিতার্থ করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। পরিদর্শনের পর যেসব কোম্পানির জিএমপি সুবিধা অপ্রতুল এবং বারবার সময় দেয়ার পরেও যারা তাদের সুবিধাবলী উন্নত করেনি, শুধু তাদের বেলায় সুবিধাবলী উন্নত না করা পর্যন্ত রোগীর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হবে এমন কিছু মানহীন প্রডাক্টের উৎপাদন সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার জন্য সংসদীয় কমিটির কাছে সুপারিশ করা হয়েছিল। সেটি করা হয়েছিল জনস্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত না করার স্বাথেই। যেমন উচ্চ প্রযুক্তির এন্টিবায়োটিক ও ক্যানসারের ওষুধ তৈরি করে এমন একটি বড় কোম্পানি অত্যন্ত ঘন বসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকায় তার কারখানা, তাদের কোনো এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) বা বর্জ্য পরিশোধন ব্যবস্থাও ছিল না। ফলে তারা আশেপাশের বাসিন্দাদের ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি তৈরি করছিল। তারা জিএমপি অনুসরণ করতো না এবং তাদের কারখানার অভ্যন্তরীণ পরিবেশ ছিল অত্যন্ত নোংরা। এর ফলে তাদের উৎপাদিত এন্টিবায়োটিক ও ক্যান্সারের ওষুধ মানহীন হতে বাধ্য, এমনকি তারা কারখানার অভ্যন্তরের কর্মীদেরও ক্রমাগত স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি তৈরি করছিল। আমরা তাদেরকে উৎপাদন ব্যবস্থার সংস্কার করে কেবল তারপরেই উন্নত এন্টিবায়োটিক ও ক্যান্সারের মত অত্যন্ত জটিল ওষুধগুলোর পুনরায় উৎপাদনে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি এবং সে অনুযায়ী সুপারিশ করেছি।

এছাড়া বেশ কয়েকটি কোম্পানি পেনিসিলিন এবং নন-পেনিসিলিন গ্রুপের বিভিন্ন এন্টিবায়োটিক একসাথে তৈরি করছিল, যা রোগীর জন্য বিপজ্জনক। কয়েকটি কোম্পানি এন্টিবায়োটিকসহ বিভিন্ন ওষুধ উৎপাদন করে মান-নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই তা বাজারজাত করছিল। অন্য একটি কোম্পানি গরুর ওষুধ ও মানুষের ওষুধ একসাথে একই মেশিনে একই পদ্ধতিতে তৈরি করছিল। এটাও নিয়মবিরুদ্ধ। কয়েকটি কোম্পানি ওষুধ উৎপাদন নিয়মিতভাবে করলেও কোথা থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করছে তার কোনো কাগজ দেখাতে পারেনি। ঘন বসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকার আরেকটি কোম্পানি দিনে উৎপাদন না করে শুধু রাতের বেলায় কারখানা চালাত। এলাকাবাসীর প্রতিবাদেও তারা কোনো কর্ণপাত করতো না। তাদেরও কাঁচামালের উৎস সন্দেহমুক্ত ছিল না। এরা সবাই জিএমপি গাইডলাইনবিরোধী কাজে লিপ্ত ছিল।

এসব কোম্পানি কীভাবে ওষুধ উৎপাদনের অনুমোদন পেয়েছিল তা আমাদের জানা নেই। তাদের সবার ব্যাপারেই সঠিক উৎপাদন সুবিধাবলী তৈরি না হওয়া পর্যন্ত ওষুধ উৎপাদন বন্ধ রাখতে সুপারিশ করা হয়েছিল। কাউকেই ছাড় দেওয়া হয়নি। অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কোম্পানিকেও না। জনস্বাস্থ্যের ব্যাপারে আমরা কোথাও কোনো আপোষ করিনি। ওষুধ খেয়ে মানুষ ভালো হওয়ার পরিবর্তে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এটা কোনোভাবেই আমরা মেনে নেইনি। আমরা আমাদের সুপারিশ পাঠিয়েছি মাত্র। এখানে ঘুষ গ্রহণের কোনো ব্যাপার ছিল না।

অথ  এসব কোম্পানির অনেকেই সেই সময় থেকে আমাদের সম্পর্কে গোপনে কুৎসা ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে, কিন্তু কখনোই সামনে আসেনি। তারা নানাভাবে আমাদেরকে সমাজে হেয় করার জন্য মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে, কিন্তু তারা নাম-ঠিকানা প্রকাশ করছে না। বেনামে তারা নাকি দুদকে অভিযোগ করেছে এবং সেটা হুবহু আপনার পত্রিকা প্রকাশ করেছে। আমি অভিযোগকারী/দেরকে প্রকাশ্যে পরি য় দিয়ে কোনো সত্য অভিযোগ থাকলে তা জানানোর জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। সংসদীয় স্থায়ী কমিটি কর্তৃক গঠিত বিশেষজ্ঞ টিমের রিপোর্ট আমরা শুধু স্থায়ী কমিটির কাছে জমা দিয়েছি, জনসমক্ষে প্রকাশ করিনি। কিন্তু এখন প্রয়োজনবোধে এসব কোম্পানির নাম ও তাদের প্রত্যেকের সম্পর্কে আমাদের সুপারিশ কী ছিল তার পূর্ণ বৃত্তান্ত প্রকাশ করতে আমি সচেষ্ট আছি।

এসব অসত্য অভিযোগ কোনো রকম যাচাই না করে আমাদের সম্পূর্ণ অজ্ঞাতে হুবহু প্রকাশ করে আপনারাও অত্যন্ত গর্হিত কাজ করেছেন।

১০)  আপনাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে যে আমার নামে নাকি এসব অভিযোগে শাহবাগ ও রমনা থানায় জিডি করা আছে। অথচ এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। কবে জিডি করা হয়েছে, কী অভিযোগে করা হয়েছে ইত্যাদি কিছুই আমি জানি না। জিডির বাদী বা থানা কর্তৃপক্ষ - কেউই আমাকে কখনো এবিষয়ে কিছু জানায়নি। এ ব্যাপারে অবশ্যই খোঁজ নেয়া হবে।

১১) আপনারা লিখেছেন যে এবিষয়ে কথা বলতে আমাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। কিন্তু এই অভিযোগটি গ্রহণযোগ্য নয়। কোনো ফোনকল এলে আমি তা রিসিভ করার চেষ্টা সবসময়ই করি। আমার পরিচিতজনরা তা জানেন। তবে কখনো ক্লাশে বা কোনো মিটিংয়ে থাকলে কিংবা গভীর রাতে ফোন করলে আমি ফোন ধরতে পারি না।

সেক্ষেত্রে কললিস্ট দেখে আমি কলব্যাক করে থাকি। জরুরি কল হলে অনেকে মেসেজ দিয়ে ফোন ধরতে অনুরোধ করেন। কিন্তু আমি আপনাদের পত্রিকার কারো কাছ থেকে কোনো ফোনকল বা রিকোয়েস্ট মেসেজ কিছুই পাইনি।

আপনারা আমার সম্পর্কে অনেকগুলো অসত্য, মনগড়া ও বানোয়াট অভিযোগ প্রকাশ করেছেন। প্রকাশের আগে আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগও দেননি। এর ফলে বিনা দোষে আমার পরিবার, বন্ধুমহল, শুভানুধ্যায়ী ও দেশবাসীর কাছে আমি অত্যন্ত হেয় হয়েছি, আমার এতকালের অর্জিত সম্মান ও ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয়েছে, আমি মারাত্মকভাবে অপমানিত হয়েছি এবং মানসিক শান্তি বিনষ্ট হয়ে আমি অত্যন্ত কষ্ট পাচ্ছি। এসব কারণে আমি অত্যন্ত সংক্ষুব্ধ।

তাই অনুগ্রহ করে যে গুরুত্ব দিয়ে আপনারা একটি বেনামী চিঠি হুবহু ছেপেছেন, আমার এই প্রতিবাদলিপিটিও সমান গুরুত্ব সহকারে, যাতে আমার বক্তব্য অস্পষ্ট বা বিকৃত না হয় তার জন্য কোনো কাঁটছাট না করে, হুবহু আপনার পত্রিকায় প্রকাশ করার জন্য সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি।

   

তীব্র দাবদাহে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে পশুপাখিদের জন্য 'বিহঙ্গের জল'



গণ বিশ্ববিদ্যালয় করেসপন্ডেন্ট, সাভার
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

দেশব্যাপী চলমান তীব্র দাবদাহে সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয় (গবি) ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়ানো পশুপাখিদের জন্য খাবার পানির ব্যবস্থা করেছে, গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (গবিসাস)। এ কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে, পশুপাখিদের জন্য 'বিহঙ্গের জল'!

বৃহস্পতিবার (২ মে) বিকেলে গবিসাসের সভাপতি আখলাক ই রাসূলের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাদামতলা থেকে এ কর্মসূচি শুরু করা হয়।

এরপর বাদামতলা, আমতলা, তালতলা, ট্রান্সপোর্ট ইয়ার্ডসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গাছে প্লাস্টিকের বোতল ঝুলিয়ে এবং মাটির হাড়ি স্থাপন করে পাখি, কুকুর, বিড়ালসহ অন্যান্য প্রাণীদের জন্য খাবার পানির ব্যবস্থা করে গবিসাস।

পশুপাখিদের জন্য এমন উদ্যোগ গ্রহণ করায় গবিসাসকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. ফুয়াদ হোসেন বলেন, সাংবাদিক মাত্রই যে মানবিক, তা গবিসাসের এই উদ্যোগ থেকেই বোঝা যায়। বিরূপ আবহাওয়ায় প্রাণীকুলের জন্য পানির ব্যবস্থা করার জন্য আমাদের শিক্ষার্থীদের সাধুবাদ জানাই।

'বিহঙ্গের জল' কর্মসূচিতে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। ছবি- বার্তা২৪.কম

গবিসাসের সাধারণ সম্পাদক সানজিদা জান্নাত পিংকি বলেন, বিগত কয়েকদিনের দাবদাহে ও তাপপ্রবাহে জনজীবনের সঙ্গে ওষ্ঠাগত প্রাণীকুলও। এর পাশাপাশি পানি সংকটও লক্ষণীয়। তীব্র গরমে ক্যাম্পাসের কুকুর, বিড়াল ও পাখিদের পানির পিপাসা মেটাতেই এবং ফেলনা প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহারের প্রচেষ্টায় গাছে গাছে মাটির হাড়ি এবং পানির বোতল কেটে ঝোলানো হয়েছে।

এসময় উপস্থিত অন্যান্য শিক্ষক এ কার্যক্রমের প্রশংসা করেন। পরবর্তীতে এই ধারা অব্যাহত রাখতে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দেন তারা।

পানির সংকট দূর না হওয়া পর্যন্ত রোজ পাত্রগুলোতে পানির ব্যবস্থা করা হবে বলে নিশ্চিত করেন গবিসাসের সদস্যরা।

কর্মসূচিতে আরো উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং গবিসাসের সদস্যরা।

 

;

নারী নিপীড়নের অভিযোগে জাবি থিয়েটার সম্পাদককে অব্যাহতি



জাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নারী নিপীড়নের অভিযোগে অভিযুক্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাংস্কৃতিক সংগঠন জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের (অডিটোরিয়াম) সাধারণ সম্পাদক চন্দন সমাদ্দার সোম হিমাদ্রীকে সংগঠনের পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২ মে) জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের দপ্তর সম্পাদক জায়েদ হোসেন আলিফ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৮ এপ্রিল জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের (অডিটোরিয়াম) সাধারণ সম্পাদক চন্দন সমাদ্দার সোম হিমাদ্রীর বিরুদ্ধে একটি নিপীড়নের অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। এক জরুরি সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাকে এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেয়া হলো।

তদন্ত চলাকালে চন্দন সংগঠনের কোন কার্যক্রমের সাথে যুক্ত থাকবে না। তদন্ত শেষে রিপোর্ট প্রকাশের পর জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার (অডিটোরিয়াম) তার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। ততদিন পর্যন্ত সংগঠনের যাবতীয় সাংগঠনিক কাজকর্ম পরিচালনার জন্য বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক সুমাইয়া জাহানকে মনোনীত করা হলো। তদন্তকাজে প্রশাসনকে জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার যেকোনো ধরনের সাহায্য ও সহযোগিতা করতে সবসময় প্রস্তুত।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গত কিছুদিন যাবত অনলাইন মাধ্যমে জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারকে জড়িয়ে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার, গুজব ও মিথ্যাচার আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের (অডিটোরিয়াম) সাবেক ও বর্তমান সদস্যদের নামে যে-সব তথ্য দেয়া হয়েছে, তা নিতান্তই মিথ্যা এবং অতিরঞ্জিত। এর পেছনে অন্তর্নিহিত কোন অসাধু উদ্দেশ্য আছে বলে মনে হচ্ছে। পাশাপাশি, নিপীড়নের তদন্ত প্রমাণের পূর্বেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ, নানা মাধ্যমে ধর্মীয় উসকানিমূলক এবং হয়রানিমূলক আচরণ দেখা যাচ্ছে, তা কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়। এর প্রভাব বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের উপর ভয়াবহভাবে পড়বে। এ ধরনের মিথ্যাচার, গুজব ও অপপ্রচারের কারণে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার (অডিটোরিয়াম) এসব অপপ্রচারকারী ও তাদের মদতদাতাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। এহেন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার সকলকে আহ্বান জানাচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৮ এপ্রিল জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের (অডিটোরিয়াম) সাধারণ সম্পাদক চন্দন সমাদ্দার সোম হিমাদ্রীর বিরুদ্ধে শারীরিক ও মানসিক নিপীড়নের অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থী। অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, ভুক্তভোগী ও হিমাদ্রীর মধ্যে ২০২২ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রেমের সম্পর্ক থাকাকালীন হিমাদ্রীর দ্বারা ৪ বার গুরুতরভাবে আহত হন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগীর কানের পর্দা ফাটিয়ে দেওয়া, আঙুল ভেঙ্গে দেওয়া, মাটিতে ফেলে বুকের উপর বসে গলা চেপে ধরাসহ কথায় কথায় গায়ে হাত তোলার অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী। পাশাপাশি ভুক্তভোগীকে হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টাও করা হয়ে বলে অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়।

আনিত অভিযোগের বিষয়ে চন্দন সমাদ্দার সোম হিমাদ্রী বলেন, এতদিন পরে এসে এইধরনের অভিযোগে আমি বিব্রত এবং বিরক্ত। এতদিন পরে এসে এধরনের কথা আমার জন্য মানহানিকর এবং আমিও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এবং আমার মনে হয় উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং মিথ্যামিশ্রিত। তারপরেও যেহেতু আমার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ এসেছে, আমিও চাই এই অভিযোগ যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তদন্ত হোক।

এদিকে ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থীর লিখিত অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আলমগীর কবির জানান, আমরা লিখিত অভিযোগপত্র পেয়েছি। ইতিমধ্যে দু'জন সহকারি প্রক্টরকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ইখতিয়ার উদ্দিন ভূঁইয়া এবং গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক প্রকৃতি বিশ্বাস। প্রতিবেদন দাখিলের পর প্রয়োজনে নিপীড়নবিরোধী সেলে এ অভিযোগ পাঠানো হতে পারে।

;

ছাত্রলীগের হল সভাপতির কক্ষ দখল, হত্যার হুমকি



রাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে কক্ষ দখল ও হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করেছেন একটি আবাসিক হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি।

বুধবার (১ মে) রাত ১০টায় নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে এই অভিযোগ তুলেন তিনি। এ ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করে দল থেকে পদত্যাগ করবেন বলেও ওই পোস্টে উল্লেখ করেন তিনি।

ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ নেতা তাজবিউল হাসান অপূর্ব ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি শাহ মাখদুম হলের ২০৭ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী এবং হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্বে আছেন।

অভিযুক্তরা হলেন, শহীদ হবিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো. মিনহাজুল ইসলাম, শাহ মাখদুম হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক মিঠু মোহন্ত ও কর্মী ইমন। অভিযুক্তরা রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী।

ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ নেতা তাজবিউল হাসান অপূর্ব বলেন, আমার স্নাতকোত্তরের দুটি পরীক্ষা হয়েছে। এখনো তিনটা বাকি আছে। বাকি পরীক্ষাগুলো ১২ মে এর পরে হবে। আমি মঙ্গলবার আমার জিনিসপত্র নিয়ে ঢাকা চলে এসেছি। ওরা ভেবেছে, আমি হল ছেড়ে চলে এসেছি। এই ভেবে ওরা আমার রুমমেটের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকেও রুম ছেড়ে চলে যেতে বলেছে। আমার রুমমেট বলেছে, অপূর্ব ভাইতো হলে আসবে। উনি যেদিন হল ছেড়ে চলে যাবে, আমিও সেদিন চলে যাবো।

তিনি বলেন, এসব জানতে পেরে আমি মিনহাজ ভাইকে কল দিই। তখন উনি আমাকে গালাগালি দিয়ে তর্কাতর্কি করেন। আমি বলি, আমি হলের সভাপতি ভাই। আমার রুমে দশজনও থাকতে পারে। আপনাকে কৈফিয়ত দেবো কেনো? আমি কি বাবু ভাইয়ের কনসার্ন ছাড়া ননপলিটিক্যাল ব্লকে একটা ছেলেকেও তুলেছি? পলিটিক্যাল ব্লকে একটা ছেলেকেও তুলিনি আমি। কমিটি হওয়ার পর থেকে আমি নিষ্ক্রিয়। অভিমান করে আমি আর যাইনা রাজনীতির সাথে।

তখন উনি আমাকে বাবু ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। এবং বলেন, তুই বাকি তিনটা পরীক্ষা বাড়ি থেকে দিবি। বিষয়টি বাবু ভাইকে জানালে তিনি বলেন, ঠিক আছে। আমি মিনহাজকে বলে দিচ্ছি। মিনহাজ ভাইকে কল দিলে তিনি বলেন, বাবু ভাই রুম লক করে দিতে বলেছে। তখন আমি বলি, আমার রুমমেটরা কোথায় থাকবে ভাই?’ উনি বলেন, সেটা আমি জানি না। তুই রাজশাহী এসে আমার সঙ্গে দেখা করবি। তারপর সমাধান করবো। আবার বাবু ভাইকে কল দিয়ে বিস্তারিত জানালে তিনি বলেন, ঠিক আছে দেখছি।

এরপরে আমার হলের মিঠু আমাকে কল দিয়ে বলে, ভাই, আপনি নাকি বলেছেন যে, আমার রুমে যে কয়জন গিয়েছে, রাজশাহী গিয়ে তাদের ব্যবস্থা করবো। আমি বললাম, হ্যা, বলেছি। আমার রুমে যাবি কেনো? তখন বলে, ঠিক আছে ভাই। রাজশাহী আসেন। আপনার বাকি তিনটা পরীক্ষা কিভাবে দেন, দেখছি।সবকিছু বাবু ভাইকে জানালেও তিনি ডিরেক্ট কোনো পদক্ষেপ নেননি। এরপরেই আমি ফেসবুকে পোস্ট করেছি। পোস্ট করার পরে বাবু ভাই আমাকে কল দিয়ে পোস্ট ডিলিট করার কথা বলেছেন। ডিলিট করতে না চাওয়ায় তিনি বলেন, পোস্ট ডিলিট না করলে তোর মত তুই থাক। আর সমাধান করতে পারলে, কর। আমি ঢাকাতেই আছি। সাদ্দাম ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করে কথা বলবো এ বিষয়ে।

রুমমেট দুইজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ও আবাসিক শিক্ষার্থী কিনা জানতে চাইলে তাজবিউল হাসান অপূর্ব বলেন, আমি আবাসিক। আর ওরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কিন্তু আবাসিক না।

অনাবাসিক শিক্ষার্থীকে রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজনীতি করতে গেলে এরকম দুয়েকজনকে রাখা লাগে ভাই। বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতিরতো ছাত্রত্বই নাই! সে হলে থাকে না? আর আমিতো হলের ভাড়া দিয়ে পাঁচবছর রয়েছি। রাজনৈতিক প্রয়োজনে অন্য হলের ছেলেপেলেও নিয়ে এসে রাখা লাগে। আমার একজন রুমমেটের বাড়ি বিনোদপুরে। নতুন কমিটি হওয়ার পরে এক বড় ভাইয়ের পরামর্শেই আমি ওকে লোকাল ছেলে হিসেবে আমার রুমে রাখছি।

সব অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে অভিযুক্ত মিঠু মোহন্ত বলেন, আমি না বরং উনিই (অপূর্ব) আমাকে গালাগালি করেছেন এবং হুমকি দিয়েছেন। আমরা ওনার রুম দখল করতে যাবো কেনো? বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নতুন কমিটি সিট বাণিজ্য বন্ধ করতে বদ্ধপরিকর। অপূর্ব ভাইয়ের বিরুদ্ধে সিট বাণিজ্যের অনেক অভিযোগ আছে। মূলত আমাদের কাছে তথ্য ছিলো যে, উনি দশ হাজার টাকার বিনিময়ে একটা ছেলেকে ওনার রুমে রেখেছেন। তাই, আমরা ওই ছেলের সঙ্গে কথা বলেছি যে, সে টাকার বিনিময়ে হলে আছে কিনা বা আবাসিক কিনা।

তিনি আরও বলেন, ওই ছেলেকে যে উনি হলে তুলেছেন, সেটা হলের বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারাও জানেনা। ওই ছেলে পলিটিক্সও করে না, সে অনাবাসিক। উনি (অপূর্ব) সভাপতি বলেতো যা ইচ্ছা, তা করতে পারেন না। এটা পলিটিক্যাল ঝামেলা। উনি ঢাকায় শিফট হওয়ার আগে একটা ঝামেলা করতে চাচ্ছেন।
আরেক অভিযুক্ত মিনহাজুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি, তবে পুরোপুরি অবগত না। আমি ক্যাম্পাসের বাইরে আছি। ক্যাম্পাসে ফিরে এটা সমাধানের চেষ্টা করবো।

শাহ মাখদুম হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক রুহুল আমিন বলেন, দুই পক্ষের কেউই আমাকে কিছু বলেনি। রাতে ফেসবুকে অপূর্বের পোস্টটা আমি দেখেছি। এখানে পরস্পর বিরোধী বিষয় আছে। এজন্য আমি আজ সকালে হলে গিয়ে বিষয়টা জানার চেষ্টা করেছি। পুরো বিষয়টা এখনও ক্লিয়ার হতে পারিনি। অপূর্ব নিজেও কিছু ঝামেলা করে রেখে গিয়েছে। এখন ও যেভাবে দোষারোপ করছে, সেটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত, সেটাও একটা বিষয়।

;

কুবিতে শিক্ষকের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন



কুবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) লোক প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জান্নাতুল ফেরদৌস লতা ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মোর্শেদ রায়হান ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে পৃথক মানববন্ধন করেছে বিভাগ দুইটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (২ মে) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কলা অনুষদের সামনে এই মানববন্ধন করা হয়।

লোক প্রশাসন বিভাগের ১৫তম আবর্তনের শিক্ষার্থী মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, 'আজকের এই সংকটময় দিনে আমরা কিছু দাবি-দাওয়া নিয়ে দাঁড়িয়েছি। গত ২৮ তারিখ যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে আমরা সেটার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। শিক্ষকরা যেখানে হামলার সম্মুখীন হয়েছে সেটা খুবই লজ্জার। দাবি জানাচ্ছি সব ধরনের  বিশৃঙ্খলার অবসান ঘটিয়ে ক্যাম্পাসকে শিক্ষার্থী বান্ধব হিসেবে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করার জন্য।'

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ১৭তম আবর্তনের শিক্ষার্থী হিজবুল্লাহ আরেফিন তাজবী বলেন, 'একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় কিভাবে একজন শিক্ষক আরেক শিক্ষকের ওপর হামলা চালায়! এই রকম অমানবিক কর্মকাণ্ডের জন্য আমরা সুষ্ঠু বিচার চাই।'

লোক প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাহিদ বলেন, 'আমরা এখানে আমাদের অধিকারের কথা বলতে এসেছি, নিপীড়নের কথা বলতে এসেছি। বিশ্ববিদ্যালয় কেন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে? তিনি (ভিসি) চিন্তা করেছেন এই সময়টাতে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকলে তার জন্য উপকার হবে। একজন ভাইস চ্যান্সেলর কিভাবে একজনের গায়ে হাত তুলতে পারে? এমন কোনো নজির পৃথিবীর ইতিহাসে আছে? উনি আমাদের প্রিয় সহকর্মী লতা ম্যামকে অপমান করেছেন। উনি এখানে থাকার সমস্ত যোগ্যতা হারিয়েছেন। আমরা আপনাকে আর চাই না। আপনি এখানে আর আসবেন না।' 

মানববন্ধনে উপস্থিত সহকারী অধ্যাপক শারমিন রেজওয়ানা বলেন, 'একজন মানুষের ভিতর রাগ বিদ্বেষ থাকতে পারে। কিন্তু তাই বলে একজন শিক্ষক আরেক শিক্ষকের ওপর হামলা করতে পারে! এই অবস্থায় কিভাবে আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার পরিবেশ সৃষ্টি করবেন। তার পাশাপাশি আপনি হঠাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল গুলো বন্ধ করে দিলেন। এইভাবে শিক্ষার্থীদের কোণঠাসা করার দরকার কি!'

উল্লেখ্য, গত ২৮ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিজ কার্যালয়ে প্রবেশ করতে গেলে শিক্ষক সমিতি বাঁধা প্রদান করে। একপর্যায়ে শাখা ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মী ও শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দের মধ্যে মারামারি ও উপাচার্যের সাথে শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। সে সময় ধাক্কাধাক্কিতে আঘাতপ্রাপ্ত হন লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জান্নাতুল ফেরদৌস লতা এবং প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মোর্শেদ রায়হান।

;