ঢাবির দুই শিক্ষককে ৩ বছরের জন্য অব্যাহতি
পরীক্ষার ফলাফলে অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দুই শিক্ষককে তিন বছরের জন্য পরীক্ষা সংক্রান্ত কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অব্যাহতিপ্রাপ্ত দুই শিক্ষক হলেন- ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন ও অধ্যাপক ড. মো. আব্দুস সবুর খান।
সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়টির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. বাহালুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০১৭ সালের তৃতীয় বর্ষ ষষ্ঠ সেমিস্টার বি.এ সম্মান পরীক্ষার ফলে ব্যাপক ব্যবধান রেখে চূড়ান্ত করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় শৃঙ্খলা পরিষদের সুপারিশ ও সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিন বছরের জন্য পরীক্ষা সংক্রান্ত সব কার্যক্রম থেকে তাদের বিরত রাখা হলো। পরীক্ষার প্রথম ও দ্বিতীয়বার টেবুলেশন সংক্রান্ত সব বিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগারে ফেরত দিতে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, অভিযুক্ত দুই অধ্যাপকের তৈরি করা ফলে অসঙ্গতির অভিযোগ ওঠে ২০১৮ সালে। সেসময় ফলে অনাস্থা এনে ফল পুনঃনীরিক্ষণের দাবি জানান বিভাগের ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। ক্ষোভ ও মনোমালিণ্য থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে ফলে অসঙ্গতি করা হয়েছে বলে তখন অভিযোগ ওঠে।
উপস্থিতি, মিডটার্ম এবং কোর্স ফাইনাল— এ তিন ধরনের নম্বরের ক্ষেত্রে অসঙ্গতি পাওয়া যায় বিভাগের পরীক্ষার ফলাফলে। কোথাও আবার মূল নম্বরের থেকেও বেশি দেখানো হয়েছিল। ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কোনও কোর্সে সর্বোচ্চ ১৩ দশমিক ৫০ নম্বর পর্যন্ত গরমিল হয়েছে। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর বেলায় প্রকৃত নম্বর থেকে প্রদর্শিত নম্বর কম দেখানো হয়েছিল। তবে কয়েক স্থানে প্রকৃত নম্বর থেকে প্রদর্শিত নম্বর বেশি দেওয়া হয়েছিল।
এক ছাত্রীর ফলাফলে সবচেয়ে বড় অসঙ্গতি দেখা গিয়েছিল। চার কোর্সে তাকে মোট ২৮ দশমিক ৫০ নম্বর কম দেওয়া হয়েছিল। ৩০৫ নম্বর কোর্সে তার প্রদর্শিত কোর্স ফাইনাল নম্বর ২৮, পরবর্তীতে তিনি সেই কোর্সে ৪১ দশমিক ৫০ নম্বর পান। এখানে তাকে ১৩ দশমিক ৫০ নম্বর কম দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া ৩০৬, ৩০৭ এবং ৩০৮ নম্বর কোর্সে যথাক্রমে ৩, ৩ দশমিক ৫০ এবং ৮ দশমিক ৫০ নম্বর কম দেওয়া হয়। ৩০৮ নম্বর কোর্সে এক ছাত্র ৪৪ দশমিক ৫০ পান। পরে তার ফলাফল বেড়ে হয় ৪৭ দশমিক ৫০।
৩০৭ নাম্বার কোর্সে ফাইনাল পরীক্ষায় সূর্যসেন হলের শাহিন আলম নামের এক ছাত্র ২৩ পেলেও পুনঃপরীক্ষায় তিনি পান ২৯। ৩০৫ নম্বর কোর্সে যে শিক্ষার্থী ৪০ দশমিক ৫০ পান, তিনি পুনঃপরীক্ষণে পান ৪২ নম্বর। তবে প্রদর্শিত নম্বর ছাড়াও পুনঃপরীক্ষণের ফলে অনেকেই বিভিন্ন কোর্সে কম নম্বরও পেয়েছিলেন। এর মধ্যে এক শিক্ষার্থীর ৩০৭ নম্বর কোর্সে প্রদর্শিত নম্বর ৪২, কিন্তু তার প্রকৃত নম্বর ৩১ দশমিক ৫০। এখানে ১০ দশমিক ৫০ নম্বর বাড়িয়ে দেখানো হয়েছিল।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি অভিযোগের প্রমাণ পেয়ে তিন বছরের জন্য দুই অধ্যাপককে পরীক্ষা সংক্রান্ত কার্যক্রম থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করে।
পরে অধিকতর তদন্তের স্বার্থে কলা অনুষদের বর্তমান ডিন অধ্যাপক আবু মো. দেলোয়ার হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিও তদন্তের মাধ্যমে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় পুনরায় উপাচার্যের নিকট তিন বছরের জন্য দুই শিক্ষককে পরীক্ষা সংক্রান্ত কার্যক্রম থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করে।