বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ ও আদর্শে আমরা কতটুকু জাগরিত?

  • প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান মিয়া
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। আর এই গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের নায়ক একজন। তিনি আমাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি মহানায়ক, মহাননেতা, আমাদের জাতির পিতা। বাঙালি আর বাংলাদেশের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্দ হয়ে উঠেছিলেন শেখ মুজিব। টুঙ্গিপাড়ার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে নায়ক হয়ে উঠে এসেছেন জাতীয় অঙ্গণে, এরপর মহানায়ক হিসেবে দ্যুতি ছড়িয়েছেন বিশ্বমঞ্চে।

বাংলার শোষিত, নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের মুক্তিই ছিল তাঁর জীবনের মূল লক্ষ্য ও আদর্শ। যে লক্ষ্য বাস্তবায়নে তিনি আজীবন শুধু সংগ্রামই করে গেছেন। বাংলার মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বারংবার জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন। মাত্র ৫৪ বছরের (১৯২০-১৯৭৫) জীবনকাল তার। শৈশব ও কৈশোরকাল পেরিয়ে ৩০ বছরের মতো তার রাজনৈতিক জীবন। এর মধ্যে তের (১৩) বছরই কাটিয়েছেন জেলখানায়। মোট ১৮ বার কারারুদ্ধ হয়েছিলেন। ২৪টি মামলা তিনি সাহসের সঙ্গে লড়েছেন। মৃত্যুর সামনে থেকে ফিরে এসেছেন ২ বার। বস্তত জেল-জুলুম-নিপীড়ন তার জীবনে এক নিয়মিত অধ্যায়ে পরিণত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিজীবন বলতে কিছুই ছিলনা। তাঁর চিন্তা-চেতনা, ধ্যান, সপ্ন, কর্ম সবই ছিল দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য। তাঁর পুরো জীবনটাই ছিল বাঙালির জন্য নিবেদিত তাই ফাঁসির মঞ্চকেও কখোনো তিনি ভয় পাননি। ভোগ নয়, রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছিল ত্যাগের। বঙ্গবন্ধু রাজনীতিতে নীতি-আদর্শকে সর্বোচ্চ স্থান দিতেন। তাঁর রাজনীতির লক্ষ্য নিছক ক্ষমতায় যাওয়া ছিল না, তা ছিল বাঙালির অধিকার আদায় বা জাতীয় মুক্তি অর্জনে নির্দেশিত।

বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির মূল দর্শন ছিল বাঙালির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি অর্জন। তিনি ছিলেন বাংলার অবিসংবাদিত নেতা। সারা জীবন নির্লোভ ও নির্মোহ থেকে বাংলার মানুষের অধিকার নিয়ে লড়াই করেছেন। বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ের প্রশ্নে তিনি ছিলেন সম্পূর্ন আপসহীন। অসাধারণ ধৈর্য, সাহস ও দৃঢ়তা নিয়ে তিনি তার সুদীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামে অসংখ্য অগ্নি-পরীক্ষার মধ্যদিয়ে পাকিস্তানি শাসক ও শোষকচক্রকে রুখে দাঁড়িয়ে একটি স্বাধীন দেশের জন্ম দিয়ে গেছেন। যা বিশ্বে বিরল। তাঁর অদম্য সাহস, ইস্পাত-কঠোর সংকল্প, আদর্শ ও লক্ষ্যের প্রতি নিষ্ঠা এবং জনগণের ঐক্য ও সংহতিতে প্রগাঢ় বিশ্বাস থেকে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করার মুহূর্তেও তিনি এক বিন্দু সরে আসেননি।

বাংলাদেশকে নিয়ে জাতির পিতা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন তার সুযোগ্য উত্তরসুরী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সততা ও আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে বঙ্গবন্ধুর আর্শিবাদ সাথে তিনি এগিয়ে চলছেন দূর্বার গতিতে। চারদিকে কত শত বাধা। তারপরও তিনি থেমে নেই। দেশের আপামর জনসাধারণের সমর্থনে তিনি বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেলে রূপান্ত্রিত করেছেন। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগে এখন নেতা কর্মীর অভাব নেই। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও কর্ম থেকে শিক্ষা নিয়ে নিঃস্বার্থভাবে দেশের জনগণের সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করার মতো রাজনীতিবিদের ব্যাপক অভাব রয়েছে। আমরা অনেকেই মুখে বঙ্গবন্ধুর কথা বলি, বঙ্গবন্ধুর নামে গগণ বিদারী স্লোগান দেই কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ ও আদর্শ অন্তরে ধারণ করিনা। বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগকে সমর্থন করি, যতটা না দেশের প্রয়োজনে তার চেয়ে বেশী ব্যক্তি স্বার্থে। আজ বঙ্গবন্ধু নেই কিন্তু রয়েছে তার আদর্শ। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে হলে আওয়ামী লীগের প্রত্যেক নেতা কর্মীকে সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর দর্শন, ত্যাগ ও আদর্শ নিজেদের মধ্যে জাগ্রত করতে হবে। এর বিকল্প নেই। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

লেখক: পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, (সাবেক শিক্ষক ফেলো, ইউনিভার্সিটি সায়েন্স মালেয়শিয়া, মালেয়শিয়া)।