সারথি



গুলজার
অলঙ্করণ শতাব্দী জাহিদ

অলঙ্করণ শতাব্দী জাহিদ

  • Font increase
  • Font Decrease

অনুবাদ ফজল হাসান

গেইটওয়ে অব ইন্ডিয়া ঘাটের জেটি থেকে দিনের প্রথম বাষ্পচালিত ফেরী সকাল সাড়ে সাতটায় এলিফ্যান্টা কেইভ-এর উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। তাই মারুতিকে সকাল সাড়ে ছ’টার মধ্যে সেখানে হাজির হতে হয়। তার দৈনিক কাজকর্ম নির্ধারিত, যেমন ফেরীর পাটাতন ঝাড়ু দেওয়া, আগের রাতের যাত্রীদের ফেলে যাওয়া ময়লা জিনিসপত্র তুলে নেওয়া এবং সবশেষে পাটাতন ধুয়েমুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা। এক ফেরীর কাজ শেষ করেই সে অন্য ফেরীতে যায়। এই হলো তার নিত্যদিনের সাত-সকালের ধরাবাঁধা কাজের তালিকা।

মারুতির কাজে মনিব নারাসিংঘা রাও বেজায় খুশি, তবে তার মুখ অত্যন্ত জঘন্য। নিজের জিহ্বার প্রতি কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই এবং অশ্রাব্য গালিগালাজ লেগে থাকে ঠোঁটের ফাঁকে। তবে একথা সত্যি যে, সে যেসব শব্দ উচ্চারণ করে, আসলে তা বোঝাতে চায় না। কিন্তু তার প্রতিটি কথাই মারুতির কানে অশ্লীল শোনায়। নারাসিংঘা রাওয়ের পরনের লুঙ্গি উরুর উপরে বাঁধা থাকে। তার কপালে ছয়-আঙুল প্রশস্ত একটা বিশাল তিলক। সেখানে সে মলম মাখে। নিশ্চয়ই সে খুব সকালে ঘুম থেকে জেগে ওঠে।

মারুতির ধোয়ামোছার কাজ শেষ হলে ফেরীতে চড়ার জন্য নানান কিসিমের মানুষ এসে জেটিতে লাইন ধরে দাঁড়ায়। বিদেশি পর্যটকেরা, বিশেষ করে আমেরিকা এবং জাপান থেকে আগত, তাদের ট্যুর গাইডের তত্ত্বাবধানে দল বেঁধে জড়ো হয়। দিনের প্রথম ফেরীতে আরোহণ করার জন্য প্রায় সময়ই জেটির অনতিদূরে তাজ হোটেল থেকে পর্যটকরা ধীরেসুস্থে বেরিয়ে এসে জেটিতে পৌঁছে। তাদের হাতে থাকে ছোট ব্যাগ, মাথায় বিভিন্ন ধরনের হ্যাট এবং কাঁধে ঝোলানো থাকে ক্যামেরা ও বাইনোক্যুলার। দ্বিতীয় ফেরীতে কাজ করার সময় মারুতির মনে প্রথম ফেরীতে কাজ করার স্মৃতি মনে থাকে না। প্রথম ফেরী ছেড়ে যাওয়ার পরপরই যাত্রীরা দ্বিতীয় ফেরীতে ওঠার জন্য রীতিমত হুমড়ি খেয়ে পড়ে, এমনকি অনেক সময় মারুতির কাজ শেষ করার আগেই তারা উঠতে শুরু করে। তখন মারুতির চেহারা বিগড়ে যায়। কেননা দ্বিতীয় ফেরীর যাত্রীরা সৌখিন এবং ভদ্র নয়। উল্টোদিকে তাদের চাহিদা অনেক বেশি। তাই সে সকলের উদ্দেশ্যে গালিগালাজ না করে বরং হালকাভাবে অভিসম্পাত দেয়। ক্রমশ যাত্রীদের ওপর বিরক্তি জমা হয়ে ভারি হতে থাকে এবং তা তার শরীরের চামড়ায় কষাঘাত করে। রোদের তেজ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কষাঘাত আরো বেশি প্রকট হয়।

নারাসিংঘা রাও তিনটি ফেরীর মালিক। তার সবগুলো ফেরী গেইটওয়ে এবং এলিফ্যান্টার মাঝে যাতায়াত করে। ফেরীগুলো একপাশের যাত্রীদের উদরে পুরে অন্য পাশে নিয়ে উগড়ে দেয়। শুধু মেঝেতে পড়ে থাকে আবর্জনা, যেমন চানাচুরের খালি প্যাকেট, চিনাবাদামের খোসা, কমলার খোসা, চকলেট মোড়ানোর কাগজ, ক্যান্ডি, যাত্রীদের উদগীরণ, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ির খালি প্যাকেট, ভাঙা নেকলেসের পুঁতি, কারো ফেলে যাওয়া টুপি এবং অন্য কারো রুমাল। এসব জিনিসপত্র তুলে পরিষ্কার করতে মারুতির হাত প্রায় অবশ হয়ে যায়।

সমুদ্রের পানিতে কোনো কিছু ছুঁড়ে ফেলার জন্য যাত্রীদের অনুমতি নেই। কিন্তু যাত্রীরা আকছার তাই করে। মারুতির চোখে পড়লেও সে কখনোই কাউকে বাধা দেয় না। যাত্রীরা যদি তার কাজ কিছুটা লাঘব করতে চায়, তাহলে সে বাধা দেওয়ার কে? ফেরীর পাটাতন থেকে বমি পরিষ্কার করা সবচেয়ে কঠিন কাজ। যারা জীবনে প্রথম সমুদ্র যাত্রা করে, প্রধানত তাদের মাঝেই বমি করার প্রবণতা বেশি। অনেকে রেলিংয়ের ওপর ঝুকে পড়ে এবং সেখানেই উদগীরণ করে। অনেক সময় তারা নিজেদের কাপড়চোপড়ে, এমনকি বসার বেঞ্চিতেও বমি করে। জোয়ারের সময় পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি খারাপ হয়। তখন যাত্রীদের মধ্যে অনেকেই যে সমস্ত খাবার গলাধঃকরণ করে, পুরোটাই উগড়ে দেয়। নারাসিংঘা রাও যাত্রীদের সতর্ক করে দিয়েছে যে, যারা বমি করবে, তারা তৎক্ষণাৎ ট্যাঙ্ক থেকে পানি তুলে নিজেরা পরিষ্কার করবে। প্রতিদিন নিচু হয়ে পাটাতন থেকে বমি সাফ করার জন্য মারুতির পিঠের ব্যথা বেড়ে দ্বিগুণ হয়। মাঝে মাঝে মনিব তাকে তাড়িয়ে দেয়। এসব ফেরীতে সে নিচুশ্রেণির লোকজনের মধ্যেও নিম্নতম—সে আসলে মেথর—সাধারণ ঝাড়ুদার। সুতরাং যাত্রীরা যা চায়, তারা তাই করতে তাকে বাধ্য করে। ফেরীর সারেং বাক্স করে দুপুরের খাবার নিয়ে আসে, কিন্তু সেই খাবার সে থালায় নিয়ে খায়। মারুতি ময়লা লাঞ্চবাক্স এবং থালাবাসন ধুয়েমুছে পরিষ্কার করে এবং ঝুড়িতে রাখে, যেন বিকেলে যাওয়ার সময় সারেং বাড়ি নিয়ে যেতে পারে।

উত্তাল সমুদ্রের মাঝে মারুতি প্রতিদিন পুরো দশঘণ্টা কাজ করে। ফেরী যখন অন্য ঘাটে পৌঁছে, তখন কঠোর পরিশ্রমের জন্য তার হাড়মাংস ব্যথা করে। সেই সময় কাজ করার মতো শরীরে কোনো শক্তি থাকে না।

মারুতির মাকে নারাসিংঘা রাও কটূক্তি করেছে এবং জবাবে মারুতির মা বলেছে, ‘তাহলে আপনি কেন ফেরী পরিষ্কার করেন না … তা নাহলে সকালে আপনি নিজেই নিজের পাছা চাপড়াবেন।’

মালিকের কথার পিঠে কথা বলার শক্তি নেই মারুতির। সে শুধু আকারে-ইঙ্গিতে বলল, ‘সকালে … এখন শ্বাস ফেলার মতো শক্তি নেই।’ তার মনে হয়, সমস্ত অঙ্গপত্যঙ্গ যেন প্রাণহীন।

জনতার ভীড়ের মাঝে ফাঁকফোকর গলিয়ে মারুতি কোনোভাবে চার্চগেইটের কাছে পৌঁছে। তারপর সে স্থানীয় ট্রেনে চড়ে। ক্লান্তিতে তার শরীর নুইয়ে পড়ে এবং চোখের পাতা বন্ধ হয়ে আসে। যোগেশ্বরীতে যাত্রীরা প্রায় তাকে ধাক্কা দিয়ে ট্রেন থেকে নামিয়ে দেয়। এ-টা নিত্যদিনের ঘটনা।

মারুতি কোনোভাবে শরীরে সামান্য শক্তি সঞ্চয় করে এবং রীতিমত টলতে টলতে বড় রাস্তার পাশে উঁচু জায়গায় গিয়ে দাঁড়ায়। সেখানে শহরতলী সাওয়ান্ত নগরে যাওয়ার ১০৯ নম্বর বাস থামে। অন্য সব দিনের মতো তুলসিবাই কলসি থেকে চকচকে বাটিতে পানি ঢালে এবং হাতে নিয়ে বলে, ‘ক্লান্ত? এই নাও, খাও।’

মারুতি কনুই দিয়ে দেহের ভর রক্ষা করে এবং এক নিঃশ্বাসে পুরো বাটির পানি পান করে। তার মনে হয়, পান করা পানি যেন গলা ভিজিয়ে মুহূর্তেই শরীর-মনকে শীতল করেছে।

তুলসি এসে মারুতির পাশে খাটিয়ায় বসে এবং ব্যথায় কাতর পায়ে চাপ দিয়ে দিনের সব ঘটনা একের পর এক বলতে শুরু করে।

শ্বশুরবাড়ি থেকে লক্ষী এসেছে। ওর শ্বশুর-শাশুড়ি নাসিকে গিয়েছে।

মারুতি চোখের পাতা বন্ধ করে। পলকে মুহূর্ত সময় চলে যায়। তুলসি আরেকবার বলল, ‘ছোট্টি খুব দুষ্ট হয়েছে … ভাবতে পারো, আমাকে সে নানী ডাকে! এবং তোমাকে তোমার নাম ধরে ডাকে। সে জিজ্ঞাসা করে, তুমি কখন আসবে … আধো বুলি এবং তোতলামির ভঙ্গিতে বলে, ‘মালুতি কখন আসবে? কখন?’

মারুতির দুশ্চিন্তাপীড়িত মুখমণ্ডলে এক টুকরো হাসি ফুটে উঠে, যা তার সারা মুখের ওপর জমে থাকা ক্লান্তির রেখা মুছে দেয়।
‘সে হিন্দীতে কথা বলে!’
‘ওহ্, হ্যাঁ।’
‘মারাঠি শিখেনি?’
‘শিখে নিবে। এখনও ঢের সময় আছে।’
মারুতির শরীর থেকে সারাদিনের ক্লান্তি-অবসাদ ক্রমশ মিলিয়ে যেতে থাকে। ভাঁজ করা বাহুর ওপর সে মাথা এলিয়ে দেয়।
‘ওরা কেমন করে ফিরে গেছে?’
‘ওরা যায়নি … সিনেমা দেখতে গেছে।’
‘ছোট্টিও?’
‘পুচকি দুষ্টটা এক মুহূর্তের জন্যেও মাকে কোথাও যেতে দেয় না। মা কী করবে? তাই ওরা সঙ্গে করে নিয়ে গেছে।
মারুতি ঘোঁতঘোঁত করে একটা দীর্ঘশ্বাস টেনে নেয় বুকের ভেতর।
‘এবং কার্তিক? সে কোথায়?’
‘আজ আবারও সে স্কুলে কার সঙ্গে মারামারি করেছে।’
‘হারামজাদা …!’
মারুতি চট করে ঘোরে এবং উঠে দাঁড়ায়।
‘হতচ্ছারা, প্রতিদিন স্কুলে মার খায় এবং বাড়ি আসে … ভিতু কোথাকার। ঘটি। মারাঠিদের জন্য সে রীতিমত লজ্জাজনক!’
তুলসিও উঠে দাঁড়ায়।
‘যাও … হাত-মুখ ধুয়ে এসো … আমি পোহা রান্না করেছি … সামান্য খেয়ে নাও।’

মারুতি একটা তোয়ালে টেনে নেয় এবং স্নান করার জন্য এক কোণে মাথা নিচু করে বসে। ‘আমার ধূতি-কুর্তা নিয়ে এসো,’ সে বলল।

চুলায় আগুন জ্বলছে। বাতিও জ্বলছে। ঘরের ভেতর মারুতি হাত ভাঁজ করে মূর্তির সম্মুখে উপাসনা করে এবং বিড়বিড় করে মন্ত্র পড়ে। তার পরনে ধোওয়া ধূতি-কুর্তা।

কার্তিক ঘরে প্রবেশ করে। মারুতি রীতিমত কার্তিকের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে এবং দু’হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে হালকাভাবে বিছানায় ছুঁড়ে দেয়। তারপর সে কার্তিককে চেপে ধরে আদর করে।
‘এসো, দুষ্ট। এসে আমার সঙ্গে কুস্তি করো।’

কার্তিকের সুড়সুড়ি লাগে ।

মারুতি বলল, ‘কাল থেকে শরীরে সরিষার তেল মাখবে, আখড়ায় যাবে এবং সেখানে কুস্তি শিখবে।’
কার্তিক হাসতে থাকে। বাতাসে কেরোসিনের জ্বলন্ত চুলার শোঁ শোঁ শব্দের মাঝেও তুলসি সব কিছু শুনতে পেয়ে বলল, ‘কেন ওকে এসব বাজে জিনিস শেখার কথা বলছো?’
‘ওকে আমি সঠিক জিনিস শেখার কথাই বলেছি। একজন মারাঠির ছেলে হবে অতিশয় বুদ্ধিমান মারাঠি।’

বাবু দরজার বাইরে এসে দাঁড়ায় এবং ঘর থেকে বেরিয়ে আসার জন্য মারুতিকে ডাকে।

‘কী বললে, মারুতি? পাটকারের সভায় যেতে চাচ্ছো?’
খোলির ভেতর থেকে মারুতি বলল, ‘হায় কপাল, তোমার কি আদৌ কোনো ধারণা আছে যে, লোকজন সেখানে কেন যায়? আমার বউ বলেছে, ওখানে গিয়ে তোমরা সবাই আন্ডা চুলকাও।’
হেঁশেল থেকে তুলসি দু’জনকেই অভিসম্পাত করে, ‘ধিক্, তোমাদের দূর্ভোগ!’

মারুতি বের হয়ে আসে।

‘শুনেছো, বউ কী বলেছে?’

স্থানীয় মদিরার কারখানায় সভা শেষে তারা বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। তারা বাবা আমবেটকার থেকে মেধা পাটকার, চবন থেকে পাওয়ার—সবাইকে নিয়ে চুলচেরা আলোচনা-সমালোচনা করে।

মাঝ রাতে যখন কয়েকজন মাতাল সরু রাস্তার নিস্তব্ধতাকে ভেঙে চুরমার করে, তখন তুলসি বিছানা ছেড়ে ওঠে। সে চুলা জ্বালিয়ে পুনরায় খাবার গরম করে। বারান্দার তার মেয়ের জামাই ঘুমিয়েছে। মারুতির বিছানা মেয়ের জামাইয়ের পাশে। মারুতি ঘরের ভেতর ঢোকে এবং আপন মনে হাসে। কার্তিক কাঠের বিছানায় ঘুমিয়ে আছে। লক্ষীও গভীর ঘুমে বিভোর। তার পাশেই পিচ্চিটা দোলনায় ঘুমিয়ে আছে। মারুতি পিচ্চির মাথায় হাত রাখে এবং গাল টিপে। তারপর পিচ্চির ঠোঁট টিপে সে অনুকৃতি করে বলল, ‘মালুতি এসেছে।’

তুলসি তিরস্কারের ভঙ্গিতে বলল, ‘ওকে ঘুমাতে দাও। এখন জাগাতে হবে না।’

লক্ষী জেগেছে। সে বাবাকে জড়িয়ে ধরে। ছোট্টিও উঠে গেছে। কার্তিক অন্যপাশে ঘুরে শোয় এবং বিড়বিড় করে, ‘বাপু!’ মেয়ের জামাই মাথা নুইয়ে মারুতির পা ছোঁয়।

এখন মারুতি নিচুশ্রেণির লোকজনের মধ্যে নিম্নতম নয় … এমনকি মেথরও নয়। সে পুরো পরিবারের ক্যাপ্টেন, একজন সারথি, যে সাতটি ঘোড়ায় বাঁধা রথের চালক।

[মূল গল্পে পাদটীকা নেই। পাঠকের সুবিধার্থে অপরিচিত শব্দের ব্যাখ্যা দেওয়া হলো। - অনুবাদক]।
ব্যাঙ্গাত্বক শব্দ, যা মহারাষ্ট্রের বংশধর কিংবা সেই এলাকার লোকজনকে কৌতুক করে বলা হয়। সাধারণত সংস্কৃতিহীন এবং অশিক্ষিত লোকদের বোঝাতে ‘ঘটি’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়।
চিড়া দিয়ে তৈরি একধরনের হালকা খাবার। অল্প ভাজা চিড়ার সঙ্গে বাদাম, মনাক্কা, এলাচি এবং স্বাদ অনুযায়ী চিনি মিশিয়ে মধ্যপ্রদেশে সকালের নাস্তা হিসাবে পোহা খাওয়ার রেওয়াজ আছে। অন্যদিকে মহারাষ্ট্রে হালকা ভাজা সরিষা, হলুদ, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজকুচি ও বাদামের সঙ্গে চিড়া ভেজে মশলাযুক্ত ঝোলের সঙ্গে মিশিয়ে পোহা রান্না করা হয়। ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে পুদিনার চাটনি দিয়েও নাস্তা হিসাবে পোহা খাওয়া হয়।
যেখানে থাকা-খাওয়ার সঙ্গে ভারতীয় মার্শাল আর্টস্ শেখানো হয় অথবা ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করে সন্ন্যাসী হওয়া যায়।
মারাঠি বা হিন্দিতে এক কক্ষের ঘর। তবে অনেক ক্ষেত্রে অ্যাপার্টমেন্টের প্রতিশব্দ হিসাবেও ব্যবহার করা হয়।

গুলজার ভারতের প্রথিতযশা গীতিকার, চিত্রনাট্যকার, চলচ্চিত্র পরিচালক, কবি, ছোটগল্প লেখক এবং ঔপন্যাসিক। তাঁর আসল নাম সাম্পুরাণ সিং কালরা। তৎকালীন অখণ্ড ভারতের পাঞ্জাব (বর্তমানে পাকিস্তানে) প্রদেশের ঝিলাম জেলার দিনা শহরে তিনি ১৯৩৪ সালের ১৮ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। মূলত হিন্দি, উর্দু এবং পাঞ্জাবি ভাষায় সাহিত্য রচনা করলেও ভারতের বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় লেখালেখি করেন। ‘টু’ তাঁর একমাত্র উপন্যাস, যা ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির পরে শরণার্থীদের করুণ কাহিনী নিয়ে রচিত। তিনি তিনটি কাব্যগ্রন্থ রচনা করেন। ‘রাভি পার অ্যান্ড আদার স্টোরিজ’ (১৯৯৭) এবং ‘হাফ এ রুপি স্টোরিজ’ (২০১৩) ইংরেজিতে প্রকাশিত তাঁর ছোটগল্প সংকলন। তবে ‘রাভি পার অ্যান্ড আদার স্টোরিজ’ থেকে চারটি গল্প নিয়ে ২০০২ সালে প্রকাশিত হয়েছে ‘সীমা অ্যান্ড আদার স্টোরিজ’। কাব্যিক ভাষায় চরিত্র চিত্রণের, বিশেষ করে শব্দ প্রয়োগের, জন্য তাঁকে ‘মাস্টার ওয়ার্ডস্মিথ’ বা ‘শব্দ কারিগর’ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়।

গুলজারের কর্মজীবন শুরু হয়েছে সঙ্গীত পরিচালক হিসাবে। পরবর্তীতে তিনি গীতিকার, চিত্রনাট্যকার এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসাবে সুপরিচিতি লাভ করেন। গীতিকার হিসাবে তিনি ২০০৪ সালে ‘পদ্ম ভূষণ’ এবং ২০০২ সালে ‘সাহিত্য অ্যাকাডেমি’ পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া তিনি ‘দাদাসাহেব ফালকে’ পুরস্কারসহ একাধিক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছেন। ‘স্লামডগ মিলিনিয়র’ চলচ্চিত্রের গান ‘জয় হো’ সঙ্গীত রচনার জন্য তিনি অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড এবং গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডও অর্জন করেছেন। তিনি ২০১৩ সালের এপ্রিলে আসাম ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলার হিসাবে নিযুক্ত হন। ১৯৭৩ সালে বলিউডের বিখ্যাত নায়িকা রাখীর সঙ্গে ‘সাত পাকে বাঁধা’ পড়েন।

গল্পসূত্র
‘সারথি’ গল্পটি গুলজারের ইংরেজিতে অনূদিত ‘দ্য চ্যারিওটিয়্যার্স’ গল্পের অনুবাদ। হিন্দি থেকে গল্পটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন সঞ্জয় শেখর। গল্পটি লেখকের ‘হাফ এ রুপি স্টোরিজ’ ছোটগল্প সংকলন থেকে নেওয়া।

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;