ভেনাস ও পিউমিস



রাবেয়া রব্বানী
অলঙ্করণ: কাজী যুবাইর মাহমুদ

অলঙ্করণ: কাজী যুবাইর মাহমুদ

  • Font increase
  • Font Decrease

ইলুতমিস লজ
ঘোড়াগুলো লেজ দিয়ে মশা তাড়াচ্ছে। কুয়াশা গাছের ফাঁক গলে নেমে গেছে ফসলের মাঠে। দূরের রান্নাঘরগুলো থেকে উগরে উঠছে সাদাটে ধোঁয়া। মাখনের মতো শীত লেপটে আছে ইলুতমিস লজে। আস্তাবলের দরজায় দাঁড়িয়ে পিউমিস দেখছে এইসব।

এখন, পুরো বাড়িটাকে গিলে নিয়েছে পোড়া মাংস আর মদের গন্ধ। ঘ্রাণেন্দ্রিয় যদি মেয়ে মানুষ আলাদাভাবে সনাক্ত করতে পারত তবে অবশ্য তাও যোগ হতো। কেননা পিউমিসের ভাই সেরিমিস, রাইমিস, কিছু স্থায়ী কর্মচারী এমনকি তাদের ছোট বোনের স্বামীও শীতটা ভাড়াটে মেয়েদের নিয়ে কাটায়। তারা করবেইটা বা কী? গ্রামে গ্রামে টিভি প্রজেক্টর একটা, পার্ক একটা, স্কুল কলেজও একটা করে। সব আইনের ফিতেয় বাঁধা, শুধু নারী-পুরুষের যৌনতার কোনো আইন নেই। যে যেভাবে যার সাথে যে কোনো সময় ঘনিষ্ঠ হতে পারে তবে সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে দুজনকে অবশ্যই বিবাহিত হতে হয়।

হাতমোজা পরার পরও পিউমিসের হাতের আঙুলগুলো কনকন করছে কিন্তু একেবারে হাল্কা কাপড়ে আস্তাবলে ঢুকেছে শেরপা। রঙচটা একটা ফতুয়া, একটা জিনসের প্যান্ট, ব্যাস। শেরপার হাতে একগাদা ছালা। পিউমিস বলল, সবগুলোর উপর দিয়ে দাও। ধূপ কোথায়? মশা কামড়াচ্ছে তো এদের।

শেরপা জিভ বের করে মাথা নাড়ল। পাজামার পকেটে রাখা বোতলে হাত রেখে দাঁত বের করে বোঝাল এখনো তার মদ্য পান করা শেষ হয়নি, আর কিছুটা সময় সে চায়।

পিউমিস কালো ঘোড়াটার শরীরে হাত বুলাল। নাহ! শেরপার যত্নের প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। তার বাবা মরে গেছে কিছুদিন হয়। ছোটখাট এই জমিদারিতে একটা ঝাঁকুনি যাচ্ছে। নিয়ম ভেঙেছিল বলে সেরিমিস আর রাইমিসকে সরকারি লোকজন ধরে নিয়ে গিয়েছিল, সে অনেক আগেই। আর ছেলে পুলে হবে না ওদের। তখন থেকেই কোনো কাজে গরজ নেই, খাজনার অংশ পেয়ে গেলে তাদের আর ঘরের বাইরে দেখা যায় না। ঘরের ভেতর দুই ভাই যতটা উদ্ভট আর অস্থির জীবন যাপন করে পিউমিস ততটাই সুস্থির হয়ে চলে। তবে আজকের কথা আলাদা। বছরে এই দিনটাতে সে সকল ছদ্মবেশ খুলে রাখে। পরিবারের সবার এইদিনে মনে পড়ে যায়, পিউমিস আসলে দাঁতে দাঁত চেপে নিয়ম মেনে যায় বছরে একবার শহরে যেতে পারবে বলে।

ওভারকোটটায় হাত বোলাল পিউমিস। বগল উঠিয়ে শুঁকে দেখল সুগন্ধিটা বহুদিন ট্রাংকে পড়ে থাকায় ভ্যাপসা গন্ধটা আড়াল করতে পেরেছে কিনা। লাইসেন্স আর গগলসটা পকেটে অনুভব করে বলল, শেরপা, লুইরের লাইসেন্স কার্ডটা দাও।

শেরপা বোতলটা মুখ দিয়ে ধরে রেখে একটা বাক্স থেকে প্লাস্টিকে মোড়া কার্ডটা নিয়ে এসে লুইরের পিঠে পানির থলের সাথে বেঁধে দিল। পিউমিস আকাশের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাল। চাঁদ নেই, তারার আলোও সেভাবে উসকে উঠছে না। কুয়াশার পরত মেঘের মতো সেঁটে আছে। ইলুতমিস লজের বারান্দায়-জানালায় কাউকেই দেখা যাচ্ছে না এখন। পতিত বাড়ির মতো ভূতুড়ে আবহ। শুধু রাইমিসের ঘর থেকে নাকি সুরে গান ভেসে আসছে—
কোথায় ঘুরে গা করেছো কালো?
কেন তোমায় দেখছি না আজ ভালো?
অন্ধকারে মিশলে কিছু আলো
দুঃখগুলো তবেই লাগে ভালো।
গাঁজা খেয়ে কোথায় গেলে চাঁদ?
এইদিকে রাত পেতে আছে ফাঁদ।।

শেরপা এই গান শুনেই না কি মদের নেশায় বিশ্রী সুরে গোঙাতে শুরু করেছে পিউমিস বুঝতে পারল না। লুইরের খুঁড়ের শব্দ এখন একটু একটু করে সব শব্দ গ্রাস করে নিল। বাইরে বের হতে পেয়ে লুইর গর্বিত ভঙ্গিতে তার লম্বা দুই ডানা মেলে ধরল। খুঁড়ে একটু আকটু তাল তুলেই ডানা ঝাপটে দিল উড়াল। পিউমিস গগলসটা পরে শব্দ করে হেসে ফেলল। শীতের কারণে প্রথমে কুঁকড়ে গেলেও বারালি নদীর তীরে কুচি কুচি আলো চোখে পড়তেই লুইরের গলার চেইনটা ধরে একটু পাশ ফেরাল, তারপর পেটের দিকে হাল্কা চাপড় দিল সে।

লুইর নামতে শুরু করেছে। নিজের হৃৎপিণ্ডের শব্দে কানে তালার লাগার যোগাড়। নিজেকে প্রবোধ দিচ্ছে পিউমিস, এই তো, আর কিছুক্ষণ। এরপরই শহরে রওয়ানা দেওয়া যাবে। কত দিন দেখা হয়নি! হুজ্জতি ব্যবস্থাপত্রগুলো! গাদা গাদা রোবট, ট্রান্স এনিমেল হিউম্যান, আলোয় ধোওয়া রাস্তা, আকাশের সরাইখানা আর... ভেনাস।

সাবদি গ্রাম
মুমূর্ষু রোগীর মতো দেখাচ্ছে পিউমিসকে। চোখ বোজা, মুখ বাঁকানো, মদ ছলকে পড়ে যাচ্ছে হাতের পেয়ালা থেকে, শেষ কথাটা বলতে চেয়েও যেন সে বলতে পারছে না। ত্রিশ-চল্লিশজন চাষী গোল হয়ে ঘিরে আছে তাকে। সবচেয়ে বুড়ো একজন এসে পিউমিসের মুখ তুলে চোখের নিচের চামড়া টেনে ধরল, আহ... কিছু না। একটু ঝাঁঝ লেগেছে। সরষে ফুলের মদ তো।

বুড়ো চাষীর শরীর থেকে পোকায় কাটা পুরনো কাপড়ের গন্ধে বেশ বমিভাব হলো পিউমিসের কিন্তু তাকে সরিয়ে কালো টুপি পরা যুবক একটা চাষী তার সামনে এসে বলল, বারালি নদীর তীরে শীত এবার সৈন্য সামন্ত নিয়ে আক্রমণ করেছে দেখেছেন ছোটবাবু। এই মদ না হলে চলবে কিভাবে? আমাদের কপালে তো আর অত মাংস অত ভারী কাপড় নেই।

পিউমিসের খারাপ লাগা ছুটে গেল। মাথা ঝাঁকি দিয়ে এক চোখ বন্ধ করে সে চাষীটার দিকে তাকাল। শুরুতেই অভাবের কথা বলছে এরা, তাহলে কি খাজনা দিতে চাচ্ছে না? খাজনা ওঠানোর চেয়ে বড় কথা শহরে তাকে আজ যেতেই হবে। শরীরের প্রতিটা কোণা ঝেড়ে পুছে তৈরি হয়ে বের হয়েছে। চাষীরা তার বাবা মরে যাওয়ার সুযোগটা নিতে চাইছে? নাকি তার একা আসাতে এই হাল? কিন্তু দু ভাইকে এনেই বা কী লাভ হতো। এতক্ষণে মেয়েদের সাথে কোনো এক ঘরে চলে যেত মদ খেতে। পিউমিসের হঠাত্ খুব রাগ হলো। বাবার অনুকরণ করে সে ভারী কণ্ঠে বলল, বিদ্রোহ করছো না আশা করি।

চাষীরা একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়িই করল। কলেজ শেষ করেনি পিউমিস তবে যেটুকু জ্ঞান আছে তা এক করে সে একটা তিক্ত বক্তৃতা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিল। সরষের ফুলের মদেই আবার চুমুক দিয়ে বলল, জমিগুলো আমাদের। এই জমি কেনার জন্য আমার পূর্বপুরুষদের অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। ভাগ্য নয় তাদের কষ্টের ফসল এই জমিগুলো। সবাই দেখতে পাও জমিগুলোতে সর্বক্ষণ ড্রোন ঘুরে বেড়ায়। ফলন কী পরিমাণ হয় তা সরকার হিসেব রাখে এবং সেই হিসাবেই খাজনার হার ঠিক করে দেয়। যাতে তোমরা যেমন আছো তেমনই থাকো। এর চেয়ে ভালোও না খারাপ ও না। তোমরা কি বুঝতে পারছো পরিস্থিতি স্থির রাখাই সরকারের উদ্দেশ্য। তোমরা নিশ্চয়ই নিজের অবস্থা আরো ভালো করার কথা ভাবছো।

পিউমিস থামতেই চাষীরা বিড়বিড় করে একে অপরের সাথে কথা বলতে লাগল। পিউমিস আগুনের কুণ্ডুলীর কাছে হেঁটে গিয়ে আবার বলল, আমাদের অধীন তিনটি গ্রাম থেকে প্রতি বছর তিনজন করে ইলুতমিস লজের আওতায় থাকতে পারে, ভালো সুবিধা পায়। এমনকি বড় হয়ে তাদের থেকেও কেউ কেউ শহরে থাকার অনুমতিও পেয়ে গেছে। এভাবেই সরকার উন্নতির একটা অতিধীর প্রক্রিয়া তৈরি করেছে।

দুটো মেয়ে এবার চাষীদের জটলা ফাঁক করে দাঁড়াল। এই ধরনের মেয়েদের এখানে বলে পর্না। এই শীতেও তারা নাভি বের করে শার্টের বোতাম খুলে রেখেছে। অন্তর্বাসের বালাই নেই। স্তন দেখা যায় তো যায় না এমন অবস্থা। নিচে আবার ধূতির মতো মোড়ানো পেটিকোট। মাথায় ওলের টুপি। ইলুতমিস লজে এরা সহজলভ্য। টিকতে না পারলেই এদের পথ মাড়ায় পিউমিস। মিছিমিছি এদের দেখতেও তেমন ভালো লাগে না তার কিন্তু আজ এত লোকের মাঝে চোখ ফেরানো যাচ্ছে না কেন? ভীষণভাবে জেগে উঠেও পিউমিসের মনে হচ্ছে এর কারণ শুধু বীর্যের তাড়না নয় আসলে একটা ধাঁধা তৈরির মতো বৈসাদৃশ্য তৈরি করে রেখেছে এরা নিজেদের সাজ সজ্জায়। সে নিশ্চিত মেয়েগুলো সুক্ষ্ণ কৌশল খাটাচ্ছে। জোর করে সেখান থেকে চোখ সরিয়ে সে বলল, এখন খাজনা না দিলে সরকার জানতে পারবেই এবং তা তোমাদের জন্য ভালো হবে না।

পর্না দুজন পিউমিসের কাছে এসে বসেছে। একজন পায়ের ধূতি আরো কিছুটা উপরে উঠিয়েছে। হাঁটুর উপর ইচ্ছে করেই ঝাপসা একটা নকশা এঁকেছে মেয়েটা যাতে যে কারো কাছ থেকে স্পষ্ট করে দেখতে ইচ্ছে করবে আর একজন নিজের খোলা শার্টের বোতাম এভাবে ধরে আছে যেন এখনি পুরোটা খুলে ফেলবে কিন্তু খুলছে না। মেয়েগুলি আসলে তাকে নিজেদের ঘরে নিতে চাইছে। এদিকে রাত বাড়ছে। চাষীরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছে। পিউমিস আশা ও নিরাশার মাঝে দুলতে না চেয়ে সরিষের মদে বার কয়েক চুমুক দিয়ে চেহারা বিকৃত করল। তারপর শেয়ালের ডাক, ঝিঁঝিঁ পোকার গান, আগুনের কুণ্ডুলীতে পুড়তে থাকা কাঠের পটপট ককানি শুনে শুনে ঝিমাতে লাগল। কতটা সময় চলে গেছে সে বুঝতে পারল না। ঝনঝন শব্দে ক্রেডিট জমা হতে শুনে বড় করে তাকাল পিউমিস। দেখল পর্না দুজনও চলে গেছে।

ভীষণভাবেই জেগে উঠেছে পিউমিস। লুইরকে খর বিচালি আর পানি খাইয়ে নিচ্ছে। চাষীগুলোর নীরবতায় তাদের হতাশা টের পাওয়া যায়। তাতে তার কী বা আসে যায়! সে কোন প্রাগৈতিহাসিক চরিত্র তো নয় যে এদের নেতা হয়ে উঠে বেহুদা প্রক্রিয়াগুলো নষ্ট করবে। মহান নিহিয়ান বলেছেন, নেতা হবার ইচ্ছার মধ্যে অন্যের উপকার কম নিজের জয়ধ্বনির শোনার লোভ বেশি কাজ করে। সে পিউমিস তাকে সব নিয়ম মানতে হবে, ইলুতমিস লজকে চালিয়ে নিতে হবে, বছরে অন্তত একবার শহরে যেতে হবে, যেখানে আছে অদ্ভুত সব ব্যবস্থাপত্র, আছে ভেনাস।

নগরlদ্বার
পেটমোটা সি হর্সের মতো ড্রোনটা লুইরের দৃষ্টি সীমানায় ঘুরে ঘুরে তাকে বিভ্রান্ত করছে। সামনে এগুতে দিচ্ছে না। লুইর বিরক্ত হয়ে শরীর বাঁকিয়ে ঝাঁকি দিচ্ছে। চিঁহি করে ডেকে উঠছে। পিউমিস ঘুমিয়ে পড়েছিল। জেগে অবাক হয়ে দেখল সামনেই বিশাল নগরদ্বার আর তার পেছনে আলোয় ধোওয়া শহর। চেইন টেনে লুইরের পেট চাপড় দিল সে। লুইর রাগী ষাঁড়ের মতো সোজা নিচের দিকে নামতে লাগল কিন্তু তার চেয়েও গোয়ার ড্রোনটা তাদের নামা পর্যন্ত পিছু ছাড়ল না, লুইরের পা মাটিতে নামার পরই আবার উপরের দিকে উঠে চলে গেল।

শহরে রাত দিন নেই, সারাদিনই যাত্রী আসা যাওয়া করে। পিউমিসের মতো আরো কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছে কাউন্টারের সামনে। কয়েকজন খাকি পোশাকের লোক দাঁড়িয়ে হাতের তালু থেকে চানা খাচ্ছে। সামনেই একজন ভদ্রলোকের হাতে একটা কালো মাদী ঘোড়া। পিউমিস লুইরের দিকে খেয়াল করল। কোনো অভদ্রতা না করে বসে।

এত সুন্দর সাদা ঘোড়া, পুলিশটা লুইরকে ছুঁয়ে ছেনে দেখল। লুইর এতে বিরক্ত হয়ে তার খুঁড় দিয়ে রাস্তায় শব্দ করে পিছিয়ে গেল।

ইলুতমিস এরিয়া থেকে এসেছেন? আচ্ছা আপনার আর ঘোড়ার কার্ড দুটা দেখান।

পিউমিস কার্ডগুলোর পাশাপাশি ওভারকোটের ভেতরের পকেট থেকে ক্রেডিটের থলেটাও বের করে দেখাল। তার খুব প্রস্রাব চেপেছে। পুলিশটা পিউমিসের তাড়াহুড়ো বুঝে সন্দেহের চোখে তাকাল। হেসে বলল, ক্রেডিট দেখতে চাইনি এখনো। ঠিক কী কারণে আসেন এখানে। অনেক খরচ তো তাই না?
বছরে একবার আসার অনুমতি আছে।
এটাও তো উত্তর হলো না।

আবার সন্দেহজনক ভাবে পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে পুলিশটা বলল, আপনি আসুন আমার সাথে।
কেন?

আরো দুজন পুলিশ পিউমিসকে ঘিরে দাঁড়াল। লুইরের চেইনটা পিউমিসের হাত থেকে একজন পুলিশ নিয়ে নিল।

বেশ বড় একটা ওয়াশরুমে পিউমিসকে জামা কাপড় খোলার জন্য আনা হয়েছে। উত্তেজনায় জামা কাপড় একটানে খুলে ফেলে সামনের আয়নায় নিজেকে দেখতে পেল। ইলুতমিস লজে প্রচুর আয়না তবে অর্ধেক শরীর দেখা যাওয়ার মতো লম্বা। মন খারাপ হয়ে গেল তার, এর আগে প্রতিবার সহজেই শহরের ভেতর চলে গেছে সে আর এবার শেষ পর্যন্ত এভাবে একজন পুলিশের সামনে যেতে হচ্ছে। হাত মুখ ধুয়েও আয়নার সামনে সে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। একটা ভয়ের স্রোত তার মেরুদণ্ড বেয়ে উপরে উঠল। ইচ্ছে করেই সময় নিয়ে মূত্রত্যাগ করল সে, নিজেকে বাধ্য করল খেয়াল করতে টালিটা শুধু লালই না ইচ্ছে করেই এমনভাবে রঙ করা হয়েছে যে দেখে মনে হবে কিছুক্ষণ আগেই কারো রক্তে জায়গাটা ভেসে গেছে। দরজায় টক টক শব্দ হতেই পিউমিস দীর্ঘশ্বাস ফেলে বের হলো। টেবিলের অপর পাশে কম বয়সী একটা পুলিশ তার জন্য অপেক্ষা করছে।

এত ক্রেডিট খরচ করে আপনি ঘুরতে আসেন কেন?
এমনি।
সারা বছর চলেন কিভাবে? বৌ বাচ্চা?

কথাটা জিজ্ঞেস করতে করতেই পুলিশটা পিউমিসের লাইসেন্সের নাম্বার ঘেঁটে কম্পিউটার থেকে তথ্য পেয়ে গেল। বিবাহিত না দেখতে পেয়ে “ও” শব্দ করে নড়েচড়ে বসল তারপর বলল, এমনিতে কী করেন?
কিছু করি না। সারাদিন বারান্দায় বসে বসে সূর্যের উঠানামা দেখি আর এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করি।

পুলিশটা হেসে বলল, আমার বাবা পুলিশ ছিল তার বাবাও পুলিশ ছিল। আমিও সারাদিন বসে বসে আপনাদের মতো মানুষদের পরীক্ষা করি, প্রশ্ন করি।

মাথার উপর থেকে পিউমিসের শরীরের ওপর সবুজ আলো পড়েছে। পুলিশটা থেকে থেকে তার দিকে আর কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে তাকাচ্ছে আর বলছে, ডানে ঘুরেন, এবার বায়ে, সোজা হন। পোশাক ছাড়া একটা মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে যে পরিমাণ স্থিরতা দেখাতে হবে তা দেখানোর জন্য পিউমিস শহরের কথা ভাবতে লাগল। চমৎকার পার্ক আছে অতসী লেনে, স্কাই বোটগুলো কি অদ্ভুত রকম দোল খায়, দেখার মতো ডলফিনের শো হয় উত্তর সিটিতে, কিছু মানুষ দেখা যায় যাদের দিকে তাকিয়ে থেকে থেকেও গবেষণা করেও বোঝা যায় না কোন লিঙ্গ, আবেগ যোগ করা রোবটগুলো কী মজার! ভেনাসের সাথে আজই দেখা হবে তো! ভেনাসের সুন্দর মুখ, আধ খোলা ঠোঁট, এলোমেলো চুল, ভেজা হাতের তালু, নাকের ফুলের বড় সাদা পাথর!

কিছুক্ষণ পর কম বয়সী পুলিশটা বলল, আপনার ঘোড়াকেও পরীক্ষা করা হয়েছে। সব ঠিক আছে। পরশু ঠিক এসময় আপনি বহির্গমন ধরে বের হবেন। নির্ধারিত হোটেলগুলোতেই কেবল থাকতে পারবেন। ভ্রমণ আনন্দময় হোক।

কাপড় পরতে পরতে পিউমিসের কণ্ঠ কেঁপে উঠল, ধন্যবাদ।

ভেনাস ও আকাশের সরাইখানা
সরাইখানাটা আকাশে, টানা ঝকঝকে, সাদা একটা দালান। প্রতিবছর শহরে এলে রাতটা এখানেই কাটায় পিউমিস। আজ সরাইখানার সামনে লম্বা লাইন। পিউমিসের পেছনে একটা টিকটিকি মানব স্ট্র থেকে সুড়ুত সুড়ুত শব্দ করে জুস খাচ্ছে। তার সামনের এক বয়স্ক ভদ্রলোক হাতঘড়ি থেকে কাউকে হলোগ্রাফে দৃশ্যমান করতে চেষ্টা করছে। সামনে-পিছে প্রায় ত্রিশজন অপেক্ষমাণ। এমনিতেই শীত তার ওপর আকাশে আলগা সাজগোজ নেই। সবার দৃষ্টি এখন সরাইখানার সদর দরজার দিকে। কতক্ষণে ভেতরে ঢুকবে। একজন গার্ড লুইরকে নিয়ে পিউমিসের হাতে একটা টোকেন ধরিয়ে দিল।

উপরের পেটে যেন আগুন লেগে গেছে পিউমিসের। বলি বলি করে সে টিকটিকি মানবকে বলে ফেলল, আচ্ছা আমার খুব খিদে পেয়েছে।

টিকটিকি মানব মাথা এক চুল না নাড়িয়ে চোখের ইশারায় জুসের কাউন্টারটা দেখাল।
না না জুস না। ফুড কোর্টের জন্য কি এটাই লাইন?

হতাশ করা মেয়েলী কণ্ঠে লোকটা বলল, এখন আর লাইন ধরা লাগে না। সরাসরি বেসমেন্টে চলে যান।

কোনো রকম দৌড়ে পিউমিস একটা টেবিলে এসে বসল। রোবট মেয়েটা স্ট্রাইপড বিকিনি পরে হাতে একটা থালায় বেশ কিছু মদের গ্লাস নিয়ে হাঁটছিল, পিউমিসকে বসতে দেখেই তার শার্টের কলারে স্পর্শ করে বলল, কী লাগবে শুনি।

পিউমিস হেসে বলল, আলু, রুটি, মাংস, ভারী বিয়ার আর মোটা চুরুট সব লাগবে।

রোবট মেয়েটা ভ্রু কুঁচকে বলল, ও গ্রাম থেকে এসেছো বুঝি? তাইতো বলি! এখানে এখন আর কার্ভ চলে না বাপু। নদর শরীর এখন আবার কেউ পছন্দ করে না। আমাকে দেখো, এক ফোটা ফাও নেই, পুরোটাই সলিড। রোবটটা চোখ টিপে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে শরীরের যে সব জায়গাগুলো যতটা দেখাল পিউমিস সেসব জায়গাগুলো ততটাই আগ্রহ নিয়ে দেখল। একবছর পর পর আসে বলে রোবট বিজ্ঞানের উন্নতিটা তার বেশ চোখে লাগে।

তার ডান দিকের টেবিলে দুজন লোক কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থেকে একজন আরেকজনকে বলল, গ্রামের মানুষ ইদানীং আসেই না।
আরে আসবে কিভাবে ক্রেডিটের যে চাপ দিচ্ছে বেচারাদের।

প্রথম জন আবার বলল, কিচ্ছু করার নেই এভাবেই একটা স্পষ্ট প্রভেদ তৈরি করে সরকার মানুষের সংখ্যা আর প্রবণতাকে নিয়ন্ত্রণ করে, প্রকৃতিকে রক্ষা করে।
কিন্তু ব্যাপারটা বেশ বাড়াবাড়ি। এরা কি মানুষ না?
যে কোনো নিয়ন্ত্রণই বাড়াবাড়ি। বেশিরভাগ মানুষ স্বাধীনতা বলতে স্বেচ্ছাচারিতা বোঝে। কয়েক হাজার বছর আগে আমরা আমাদের বিখ্যাত স্বাধীনতা নিয়ে গ্রহটার তেরোটা বাজিয়ে ফেলেছিলাম না? অথচ মানুষের মতো বুদ্ধিমান প্রাণীর সুপার অর্গানিজম হিসাবে কাজ করার কথা।

পিউমিস তাদের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাসছে দেখে লোক দুটো তাদের একইভাবে ঠোঁট প্রশস্ত করল তারপর তাদের কথোপকথন ফিসফাস পর্যায়ে নিয়ে গেল।

রোবট মেয়েটা খাবার নিয়ে এলে পিউমিস তাকে বলল, আচ্ছা একজনকে খবর পাঠাব। আমার তো সেরকম ওয়াচ নেই। আগেরবার তো কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠিয়েছিলাম। এবার...
তার কি সরাইখানায় একটা নিজস্ব কামরা আছে?
হ্যাঁ।
নাম বলো। এখুনি যোগাযোগ করিয়ে দিচ্ছি।
ভেনাস, শব্দকার, ০০৯ভ।
ও... ২৩০৯ নাম্বার কামরার ভেনাস, রোবটটা মুখ বাঁকাল।

পিউমিস রোবটটার কৃত্রিম হিংসা দেখে খুব হাসল। খাবার শেষ হবার পর তার চারপাশ দেখার কথা মনে পড়ল। মদের কাউন্টারে এখন সবচেয়ে বেশি ভিড়। অদ্ভুত ভাষার গান হচ্ছে। তিন চারজন করে মানুষ আর ট্রান্স এনিমেল এক একটা টেবিলে বসে গল্প করছে। এবার নতুন যা দেখা যাচ্ছে তা হচ্ছে ট্রান্স এনিমেলদের জুটি। যেমন, একজন বেড়াল মানব আর একজন বেড়াল মানবীকে চুমু খাচ্ছে। আগেরবারের চেয়ে এদের সংখ্যাও এবার বেশি। সবকিছু একটু বেশিই অদ্ভুত লাগছে পিউমিসের তার ওপর হলরুমটায় জানালা নেই। মেঘ বা চাঁদ কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না। আকাশের সরাইখানা বলে কোনো প্রমাণই এখানে নেই।

চুরুটটা ধরাতেই পিউমিসের সামনে ভেনাস এসে বসল। পেটে চালান করা খাবারগুলো যেন মাথায় গিয়ে ঠেকল, প্রচণ্ড বিষম খেল পিউমিস। এত দ্রুত আজ ভেনাসকে আশা করেনি সে। একটা আশঙ্কা বা অশুভ কামনাও ছিল তার, হয়তো ভেনাস আজ এখানে আসবেই না, হয়তো আগামীকাল অল্প সময়ের জন্যই দেখা হবে কিংবা হয়তো তাকে দেখে চিনতেই চাইবে না ভেনাস।

পিউমিস! তোমাকে দেখে ভালো লাগছে। আচ্ছা আজই এলে?

ভেনাস পিউমিসকে জড়িয়ে ধরে গালে একটা টপকা চুমু খেল। ভেনাসের চুলগুলো এবার আগের চেয়ে লম্বা মনে হচ্ছে পিউমিসের। গায়ের রঙটাও আরো খুলেছে। উগ্র একটা সুগন্ধি মাখা গায়ে সাদা শাড়ি চাপানো ভেনাসকে দেখে যে কারো গন্ধরাজ ফুলের কথা মনে পড়বে এটা ঠিক। তবে এখানে দৃষ্টি আকর্ষণের কোনো সূক্ষ্ণ কৌশল নেই, পা থেকে মাথা পর্যন্ত সবকিছুই অতি পরিচিত ও মানানসই তারপরও চোখ ফেরানো যাচ্ছে না।

দুদিন থাকবে তো তাই না?
...
এত শুকিয়ে গেছো কেন?
...
পাইন নগরে যাবে আমার সাথে? এক দিনের জন্য? ওহ পারমিশন লাগবে?...

ভেনাস উত্তরের অপেক্ষা না করে প্রশ্ন পর প্রশ্ন করে যাচ্ছে। পিউমিসের সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী পিউমিসের নিজের কোনো ইচ্ছে নেই, যে কারো যে কোনো সিদ্ধান্তই সে মেনে নেয়। ভেনাস সময় নষ্ট না করে তার কন্টাক ওয়াচে ব্যস্ত হয়ে গেল। পিউমিস ভাবল, চোখ ফেরানো যাচ্ছে না তাতে কী? চোখ ফেরাতেই বা হবে কেন? সে চুরুটের ধোঁয়াগুলো সরিয়ে সরিয়ে দেখতে লাগল, যতটা দেখা যায়। পলক ফেলার মূহূর্তটাও নষ্ট করতে না চাওয়ায় তার চোখ মিছিমিছি কিছু পানি এনে জমা করল এবং তা মুছতে তার কিছু মুহূর্ত নষ্ট হলো। নিজের চোখের এমন মাতব্বরিতে পিউমিস খুবই বিরক্ত হলো।

ক্রেডিট
ভেনাসের কামরায় বসে আছে তারা। জানালাটা অল্প খোলা। ভেনাস আর মাইলান মিলে হলোগ্রাফিক স্ক্রিনটা ঘাঁটছে। মাইলান বলল, তোমার কাছে আছে কত ক্রেডিট?
তিন হাজার ছিল। কিন্তু আসা যাওয়া বাবদ কাটবে এক হাজার আর খাওয়া থাকা মিলে পাঁচশ। মানে বাকি থাকবে পনেরশো। এর মধ্যে ফেরার পথে থাকতে হবে এক হাজার।

ভেনাস ভ্রু কুঁচকে বলল, সকাল থেকে তো কোনো হোটেলে আর থাকতে হবে না। খাওয়ার খরচ পাইন বনের ভিজিটের ভেতরই অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তারপরও লাগবে আরো এক হাজার। দুই হাজার ক্রেডিট ছাড়া যেতে পারবে না।

মাইলান জিভ দিয়ে চুক চুক শব্দ করল। পিউমিস শুনেও শুনল না। যেতে পারলে, যাবে না পারলে নেই। দুদিন সব ঘুরে দেখলে আর ভেনাসের সাথে বসে থাকলেই তার জন্য যথেষ্ট।
ভেনাস আবার অস্থির হয়ে মাইলানকে বলল, কী করা যায়, ভোরের মধ্যে লাগবে ক্রেডিটটা। পিউমিসের এখানে থাকার মেয়াদ মাত্র দুদিন।

কিছুক্ষণ অবোধ্য ভাষায় ফিসফিস করল দুজন। মাইলান ভেনাসের ভালো বন্ধু। প্রায় প্রতিবারই তার সাথে দেখা হয়েছে পিউমিসের। হাতব্যাগে সবসময় একটা গিনিপিগ থাকে যা উঁকি দিয়ে বারবার ভেতরে চলে যায়। আজও নিশ্চয়ই তাই করছে। পিউমিস গিনিপিগটাকে আজ খেয়াল করছে না। তার দৃষ্টি ভেনাসের দিকে। বেশ কিছু স্থিরচিত্র মাথায় পুরে নেয়াই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের মতো কাজ বলে তার মনে হচ্ছে। এবার আর চোখে পানি জমতে দিচ্ছে না পিউমিস। শাটারের মতো পলক পড়ছে থেকে থেকে।

গতবার অবশ্য ভেনাসকে এভাবে দেখতে পারেনি পিউমিস। সেবার তাকে দেখেও একজন সুদর্শন পুরুষের সাথেই সময় কাটিয়েছিল ভেনাস। পিউমিস অবশ্য তাতে মোটেও অবাক বা হতাশ হয়নি। আবার, গতবারের আগেরবার যখন দুদিন সাথে ছিল, কথায় কথায় গালে মুখ ঘষে দিয়েছিল, ঝাঁকুনি দিয়ে আলিঙ্গন করেছিল সেবারও স্বপ্নরাজ্যে ভেসে যায় নি। ভেনাস যে তার ধারণা আর চাওয়া পাওয়ার বাইরে তা প্রথম পরিচয়েই তার বুঝে সারা।

ভেনাস হঠাত্ উৎফুল্ল হয়ে উঠল। বলল, পিউমিস তিন তলায় যাও তো। ওখানে দিরিস লাইন আছে।
আচ্ছা।
তুমি তোমার সব ক্রেডিট বের করে জুয়া খেলবে।
আচ্ছা।
দিরিস লাইন হেরে গিয়ে তোমাকে একটা ঘুষি দিবে। তুমি কন্ট্রোল প্যানেলে অভিযোগ করবে। খেলার ক্রেডিটসহ বাড়তি কিছু ক্রেডিট তুমি পেয়ে যাবে। ভালো অভিনয় করবে ঠিক আছে, যাতে গার্ডরা নিশ্চিত হয় তুমি খেলেই ক্রেডিটটা পাচ্ছো।
আচ্ছা।

মাইলানের মুখে রা নেই। সে পিউমিসের চেহারা মাপছে। ‘এতগুলো ক্রেডিট আমি কেন উনার কাছ থেকে নিতে যাব, কিভাবেই বা ফিরিয়ে দিব’—হয়তো এইরকম আক্ষেপ জাতীয় কিছু শুনতে চাইছে সে। ভেনাস ঠিকই পাইন বনে যাওয়ার নিয়ম-কানুন দেখতে শুরু করেছে কারণ সে জানে পিউমিসের কাজ আপত্তি করা না, সমর্থন করা।

পাইনের বন
পাইন গাছগুলোকে প্রায় চেনাই যাচ্ছে না। সাদা চুলো বুড়োদের নকল করে সার সার দাঁড়িয়ে আছে। আশ-পাশের মাঠ, গেস্ট হাউজের ছাদগুলো সবই পুরোপুরি সাদা। ছোট একটা জেট প্লেন থেকে নেমে পিউমিস অবিরত মাথা ঘুরাতে লাগল। প্রচণ্ড দুঃখজনক ও প্রচণ্ড আনন্দের ঘটনা দুই অবাস্তব চেহারা নিয়ে নেয় তার ওপর এমন একটা জায়গা! পিউমিস খেই হারিয়ে ফেলে কিছুক্ষণ বরফ ছাটা পিচের রাস্তা ধরে হাঁটতে লাগল। তারপর আবার দৌড়ে কাউন্টারে ভেনাসের কাছ থেকে চাবি নিয়ে দ্রুত কামরায় চলে গেল। উত্তেজনায় বারবার প্রস্রাবের চাপ হচ্ছে তার।

ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে মুগ্ধ হয়ে গেল পিউমিস। কামরার ভেতরটাও সাদা, আরামদায়ক উষ্ণতার ব্যবস্থা করা আছে, আছে বিশাল বড় জানালা, একটা ফায়ার প্লেস, টেবিলে বড় বড় ক্যান্ডল ল্যাম্প। একপাশে বিয়ারের ক্যান, হুইস্কি, চুরুট, সিগারেট, কি নেই! বিছানাকে পুকুর ভেবে নিয়ে লাফ দিয়ে পিউমিস বুঝতে পারল অস্বাভাবিক আচরণ করছে সে। ওমনি ভেনাস কামরায় ঢুকে ওভারকোট খুলতে খুলতে ওয়াশরুমে চলে গেল কিন্তু বের হলো যেন অন্য কেউ। হাঁটু পর্যন্ত পাতলা মিডি পরে ভেনাস সিগারেট আর লাইটার খুঁজে নিল তারপর শিশুদের মতো পা মুড়ে বিছানায় বসল। তারপর কয়েক টান দিয়ে বলল, তোমাদের ওখানে পাইন গাছ নেই?
আছে এমন একসাথে না।
আচ্ছা তুমি তো এর আগে তুষারপাত দেখোনি তাই না?

পিউমিস হেসে বলল, না।

ভেনাসের হঠাত্ মুখ গম্ভীর করে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়াল, তিবারকে ছেড়ে দিয়েছি, বলেছি তোমাকে?
না। মেয়েটা?
আছে এখন বাবার সাথে। ওকে মনে পড়ে।
আচ্ছা।

পিউমিস আবিষ্কার করল, সে ভেনাসের কাছে চলে এসে পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরেছে। কিন্তু কই? কোন ধুপধাপ নেই, ভেতরটা বরফের মতো জমে আছে। পিউমিসের হঠাত্ এভাবে জড়িয়ে ধরাতে ভেনাস হেসে ফেলল। পিউমিসের দিকে ঘুরে বলল, আচ্ছা, প্রেমিকা আছে তো তোমার?
প্রেমিকা নেই, তবে মাঝে মাঝে পর্নাদের সাথে শুতে হয়।
তা ঠিক আছে। কিন্তু এখানে নিয়ে এসেছি বলে আমাকে নিয়ে কিন্তু আবার কিছু ভেবো বসো না।
আচ্ছা।
দেখো, তুমি গ্রামের, আমি শহরের।
জানি। (ভেনাসের চুলে মুখ ডুবিয়ে বলল পিউমিস)
আমার অনেক প্রেমিক আছে। (আবার পিউমিসের মুখটা সামনে এনে ধরে বলল ভেনাস)
জানি। (ভেনাসের গলার চেইনের পাথরগুলোতে চুমু খেয়ে বলল পিউমিস)
বিয়ে টিয়ে আমি একদম পছন্দ করি না। (আবার পিউমিসের মুখ সামনে এনে বলল ভেনাস)
আমিও না। আমি তো বিয়ের জন্য কখনোই ক্রেডিটই জমাইনি। (সোজা হয়ে মাথা পিছনে নিয়ে বলল পিউমিস)
কেন?

উত্তর দিতে না চেয়ে এবার ভেনাসকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল পিউমিস। প্রবলভাবে জেগে উঠতে উঠতে খেয়াল করল কটকটে দিনের আলোয় ঘর-দোর ভেসে যাচ্ছে। সব কিছু স্পষ্ট, হাল্কা সবুজ অন্তর্বাস, একই রঙা মিডি, সবুজ কানের দুল, পাতলা একটা সোনার চেইন, তাতে শিশিরের মতো কিছু ছোট ছোট পাথর। নাহ কোনো কৌশল নেই, বৈসাদৃশ্য নেই কিন্তু চোখ ফেরানো যাচ্ছে না কেন। পিউমিস ব্যাপারটা বুঝতে চাইল। ভেনাসের ঠোঁটে ঠোঁট রেখেও চোখ বুজল না। এসময় চোখ বুজতেই হবে কেন?

   

ফেরদৌস আরার প্রবন্ধের আলপথ বেয়ে পাঠক চলে যান জ্ঞানের সমুদ্রদর্শনে



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

‘লেখকের প্রচুর অধ্যয়ন, পাঠগভীরতা, নিবিড় অনুসন্ধিৎসা, ঘোরলাগা শব্দপুঞ্জে, ভাষার শিল্পিত সুষমায় লেখাগুলি প্রাণ পেয়েছে। তাই গ্রন্থের তথ্যসমৃদ্ধ বারোটি প্রবন্ধই সুখপাঠ্য শুধু নয়, নতুন চিন্তার খোরাক জোগাবে, জানার তাগাদা তৈরি করবে—বোধে, তৃষ্ণায়, জীবনজিজ্ঞাসায়। নিজের কথাই বলি, ফেরদৌস আরা আলীমের চোখ দিয়ে পড়তে পড়তে আমি নিজে প্রায় তৃষ্ণার্ত হয়ে উঠেছি আফরোজা বুলবুল কিংবা প্রতিভা মোদক (‘যে জীবন শিল্পের, যে শিল্প জীবনের’), করুণা বন্দোপাধ্যায়, রবিশংকর বলকে (‘চন্দ্রগ্রস্ত পাঠঘোর’) পড়ার জন্য। একই সঙ্গে আস্বাদ করি সময়-পরিক্রমায় লেখক ফেরদৌস আরা আলীমের কলমের ক্ষুরধার ক্রমমুগ্ধকর সৌন্দর্য।’

শনিবার (৪ মে নভেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর কদম মোবারক গলিতে অবস্থিত মাসিক নারীকণ্ঠ পত্রিকা-আয়োজিত ‘বই আলোচনা’-অনুষ্ঠানে ফেরদৌস আরা আলীমের প্রবন্ধের আলপথে শীর্ষক প্রবন্ধগ্রন্থের মূল আলোচকের আলোচনায় তহুরীন সবুর ডালিয়া এসব কথা বলেন। বইটি নিয়ে বিশেষ আলোচনায় আরও অংশ নেন নারীকণ্ঠের উপদেষ্টা জিনাত আজম, সালমা রহমান ও মাধুরী ব্যানার্জী।

নারীকণ্ঠের সহকারী সম্পাদক আহমেদ মনসুরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নারীকণ্ঠের সম্পাদক ও প্রকাশক শাহরিয়ার ফারজানা। শুভেচ্ছা বক্তব্যে আখতারী ইসলাম বলেন, ‘নানা বিষয়ে ফেরদৌস আরা আলীমের পত্রিকায় প্রকাশিত লেখা পড়ে আমি অত্যন্ত মুগ্ধ। সহজভাবে তিনি আমাদের সমাজবাস্তবতার যে-চিত্র আঁকেন তা মনের গভীরে সাড়া জাগায়। তার লেখা পড়ে এটুকু বলতে পারি যে, তার লেখা আমাদের জন্য গবেষণা ও আত্মপরিচয়ের মূল্যবান আকর।’

প্রবন্ধের আলপথে বইয়ের প্রকাশক, কবি ও খড়িমাটি-সম্পাদক মনিরুল মনির বলেন, ‘নারীমুক্তি বিষয়ে এ-বইয়ে দুটি তথ্যনির্ভর গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রয়েছে। ভবিষ্যতে এ-বিষয়ে আরও কাজ করার জন্য গবেষকদের জন্য অবারিত সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে।’

প্রকাশিত বই নিয়ে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে ফেরদৌস আরা আলীম বলেন, ‘বড় কিছু হওয়ার কথা ভেবে লিখিনি, মনের আনন্দেই গোপনে গল্প-কবিতা লিখেছি। এমন একসময়ে আমরা লিখতাম, লেখা প্রকাশ করতে খুব লজ্জাবোধ করতাম। অবশ্য লিখতে গিয়ে তেমন কঠিন বাধা আমাকে ডিঙোতে হয়নি। একালের চেয়ে আমাদের সময়টা ছিল অনেক সুন্দর ও ভালো। মেয়েদের নিরাপত্তা ছিল সমাজে। গণ্ডগ্রাম থেকে পায়ে হেঁটে ও ট্রেনে চড়ে ঢাকা গিয়েছি একা-একা, কোনওদিন সমস্যা হয়নি। মা-বাবারাও নিশ্চিন্ত থাকতেন। আজকাল মেয়েরা পদে-পদে বাধা ও নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন। এর জন্য দায়ী মূলত আমাদের কলুষিত সমাজব্যবস্থা ও নষ্ট রাজনীতি।’ সাহিত্যচর্চার অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘লেখালেখির ক্ষেত্রে প্রশংসার ভূমিকা কম নয়। একজন লেখক তাঁর নিজের লেখা সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য পেলে অনুপ্রাণিত হন যা তাকে সামনে এগিয়ে নিতে শক্তি জোগায়।’

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন নারীকণ্ঠ পত্রিকার উপদেষ্টা ও সদস্য রোকসানা বন্যা, মহুয়া চৌধুরী, রেহানা আকতার, সাহানা আখতার বীথি, কানিজ ফাতেমা লিমা, বিচিত্রা সেন, শর্মিষ্ঠা চৌধুরী, চম্পা চক্রবর্ত্তী, প্রচার ব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম জয়, কবি মেরুন হরিয়াল ও কবি মুয়িন পারভেজ প্রমুখ।

;

নারীর পোশাক, নারীর ইচ্ছে হয়ে থাক—এই ভাবনায় ১৩ লেখিকার বই ‘শাড়ি’



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
‘নারীর পোশাক, নারীর ইচ্ছে হয়ে থাক- এই ভাবনায় ১৩ লেখিকার বই ‘শাড়ি’

‘নারীর পোশাক, নারীর ইচ্ছে হয়ে থাক- এই ভাবনায় ১৩ লেখিকার বই ‘শাড়ি’

  • Font increase
  • Font Decrease

চারপাশে এত কিছু ঘটে যে চিন্তা ও উদ্বেগ প্রকাশ করার মতো বিষয়ের অভাব নেই। তবে এর মধ্যে কিছু জনগোষ্ঠীর চিন্তাভাবনার একটি জায়গায় আটকে আছে; আর তা হলো নারীর পোশাক। নারী কী পোশাক পরল, কেমন পোশাক পরল, কেন পরল ও এমন পোশাক পরা উচিত ছিল না; ইত্যাদি নিয়ে দিন-রাত ব্যস্ত। আর এমন জনগোষ্ঠী সংখ্যায় দিন দিন বেড়েই চলছে। নানা সময়ে এ নিয়ে তর্ক বিতর্কে মেতে উঠে বাঙালি। নারীর পোশাক নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে গিয়ে ব্যক্তিস্বাধীনতা তো বটেই, অন্য ধর্মের অস্তিত্ব এবং ভিন্ন জীবন দর্শনকেও ভুলে যায় সমালোচনাকারীরা।

বিভিন্ন সময় নারী দেহে আঁচলের বিশেষ অবস্থান দেখে ‘ভালো মেয়ে’, ‘খারাপ মেয়ে’র সংজ্ঞা নির্ধারণ পদ্ধতি স্থির করে দিতে চাওয়া হয়েছে মত প্রকাশের স্বাধীনতার আড়ালে। আর এর প্রতিবাদ- প্রতিরোধ উঠে এসেছে সমাজের নানা স্তর থেকে। কেউ কেউ বিপক্ষে মত প্রকাশ করেছেন।

নারী পোশাক নিয়ে ভাবনা ও মতামত ইতিহাসের দলিল রূপে প্রকাশ করার জন্য উদ্যোগে নিয়েছে কলকাতার ঋত প্রকাশনী। আগামী ১১ মে বিকেল সাড়ে ৫টায় অভিযান বুক ক্যাফে-তে প্রকাশিত হতে চলেছে ‘শাড়ি’ নামের এই বইটি।

বইটি বের করার পরিকল্পনা, সম্পাদনা ও নিমার্ণের দায়িত্বের রয়েছেন তানিয়া চক্রবর্তী। প্রচ্ছদ ও চিত্রের দায়িত্বে রয়েছেন অংশুমান।


সংকলনটিতে অলংকরণ ও লেখার মাধ্যমে আলোকপাত করা হয়েছে আবহমানকাল জুড়ে পোশাককে কেন্দ্র করে বাঙালি মেয়েদের আহত দেহ ও মনের দিকে। সোচ্চারে উচ্চারণ করা হয়েছে সেই ইতিহাস যা অনুচ্চারিত থেকে যায় সামাজিক বিধি নিষেধেরে আড়ালে।

বইটির মাধ্যমে বিতর্ক সৃষ্টি নয়, অস্তিত্বের সন্ধানে বের হয়েছেন তেরোজন লেখক। যারা হলেন- জিনাত রেহেনা ইসলাম, যশোধরা রায়চৌধুরী, মধুজা ব্যানার্জি, চৈতালী চট্টোপাধ্যায়, রোহিণী ধর্মপাল, সেবন্তী ঘোষ, মিতুল দত্ত, অমৃতা ভট্টাচার্য, রত্নদীপা দে ঘোষ, অদিতি বসু রায়, দেবাবৃতা বসু, শ্রুতকীর্তি দত্ত ও তানিয়া চক্রবর্তী।

দৃশ্য বা শব্দের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে ভাইরাল হওয়া নয়, সংকলনটির উদ্দেশ্য একটি প্রলেপ সৃষ্টি যা আগামী প্রজন্মের মাথায় ছায়া দেবে। মেনে নেওয়া নয়, প্রশ্ন করার সাহস জোগাবে নতুন করে নয়।

এ প্রসঙ্গে তানিয়া চক্রবর্তী বলেন, ‘শাড়ি’ নিয়ে একটি বই প্রকাশ করা হচ্ছে। সম্প্রতি নারীদের পোশাক নিয়ে ভারতে একটা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। আমি মনে করি, ২০২৪ সালে এসে নারীর পোশাক নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই। মেয়েরা যা ইচ্ছা তাই পরতে পারে। তাদের বুদ্ধি, কর্ম ও অভিব্যক্তি বিষয়টিই আসল। এ বিষয়গুলো বইটিতে স্থান পেয়েছে।

;

৩ গুণী পাচ্ছেন বাংলা একাডেমির রবীন্দ্র ও নজরুল পুরস্কার



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
-অধ্যাপক রাজিয়া সুলতানা, অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী ও অধ্যাপক লাইসা আহমদ লিসা

-অধ্যাপক রাজিয়া সুলতানা, অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী ও অধ্যাপক লাইসা আহমদ লিসা

  • Font increase
  • Font Decrease

রবীন্দ্র ও নজরুল সাহিত্যে গবেষণায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলা একাডেমির রবীন্দ্র ও নজরুল পুরস্কার পাচ্ছেন ৩ গুণী গবেষক।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) বাংলা একাডেমির জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক সমীর কুমার সরকার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলা একাডেমি রবীন্দ্র-সাহিত্যের গবেষণায় অবদানের জন্য এবার রবীন্দ্র পুরস্কার ২০২৪ পাচ্ছেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী এবং অধ্যাপক লাইসা আহমদ লিসা। অন্যদিকে, বাংলা একাডেমি নজরুল-সাহিত্যে গবেষণায় অবদানের জন্য অধ্যাপক রাজিয়া সুলতানা পাচ্ছেন নজরুল পুরস্কার ২০২৪।

আগামী ২৫শে বৈশাখ ১৪৩১/৮ মে ২০২৪ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বাংলা একাডেমি আয়োজিত অনুষ্ঠানে রবীন্দ্র পুরস্কার-২০২৪ ও আগামী ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১/২৩ মে ২০২৪ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে নজরুল পুরস্কার-২০২৪ প্রদান করা হবে।

অধ্যাপক ড. রাজিয়া সুলতানা 

খ্যাতিমান নজরুল গবেষক অধ্যাপক ড. রাজিয়া সুলতানার জন্ম ২৫শে জুলাই ১৯৩৭। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় ১৯৫৮ সালে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৫৯ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৮৫ সালে মধ্যযুগের কবি আবদুল হাকিমের জীবন ও কর্ম নিয়ে গবেষণা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি এইচ.ডি. ডিগ্রি অর্জন করেন।

বাংলাদেশের মহিলাদের মধ্যে তিনি প্রাচীন ও মধ্যযুগের পাণ্ডুলিপি ও সাহিত্য বিষয়ে প্রথম গবেষক। ১৯৮৩ সালে তিনি ফারসি ভাষায় ডিপ্লোমা লাভ করেন। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রণীত মধ্যযুগের সাহিত্য-সম্পাদনা-গ্রন্থ 'নওয়াজিশ খান বিরচিত গুলে-বকাওলী কাব্য। পরে প্রকাশিত হয় তাঁর গবেষণাগ্রন্থ ‘আবদুল হাকিম : কবি ও কাব্য (১৯৮৭)। অপর সাহিত্য সম্পাদনা-গ্রন্থ 'আবদুল হাকিম রচনাবলী' (১৯৮৯)।

কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে ড. রাজিয়া সুলতানার গবেষণাগ্রন্থ 'কথাশিল্পী নজরুল (১৯৭৫), 'নজরুল (১৯৮৮), অন্বেষা' (২০০১) এবং 'সাহিত্য-বীক্ষণ' (১৯৮৮)। ড. রাজিয়া সুলতানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। ইতোপূর্বে তিনি বিভিন্ন সরকারি কলেজে ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন।

অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধোত্তর প্রজন্মের বিশিষ্ট সাহিত্য-সমালোচক ভীষ্মদেব চৌধুরীর জন্ম ১৯৫৭ সনের ৩০শে নভেম্বর সিলেট শহরে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি সম্পন্ন করেন। ১৯৮৪ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদানের মধ্য দিয়ে তাঁর কর্মজীবনের সূচনা। ২০০০ সনে তিনি অধ্যাপক হিসেবে উন্নীত হন। বাংলা উপন্যাস, রবীন্দ্র ছোটগল্প এবং বাংলাদেশের সাহিত্য তাঁর অনুধ্যান ও মূল্যায়নের কেন্দ্রীয় বিষয়। ভীষ্মদেব চৌধুরীর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ : জগদীশ গুপ্তের গল্প : পঙ্ক ও পঙ্কজ (১৯৮৮); মিরজা আবদুল হাই (১৯৮৯); বাংলাদেশের সাহিত্যগবেষণা ও অন্যান্য (দ্বি সংস্করণ ২০০৪); সৈয়দ মুজতবা আলীর পত্রগুচ্ছ (সম্পা. ১৯৯৩); তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস : সমাজ ও রাজনীতি (১৯৯৮); তারাশঙ্কর স্মারকগ্রন্থ (সম্পা. ২০০১); দু-চারটি অশ্রুজল : রবীন্দ্রগল্পের ভিন্নপাঠ (২০০৫); কথাশিল্পের কথামালা : শরৎচন্দ্র ও তারাশঙ্কর (২০০৭); সাহিত্য-সাধনায় ঢাকার নারী (২০১১); প্রভাতসূর্য :রবীন্দ্রনাথ সার্ধশত জন্মবর্ষ স্মরণ (সম্পা. ২০১১)।

অধ্যাপক লাইসা আহমদ লিসা

অধ্যাপক লাইসা আহমদ লিসা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী, ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তনের শিক্ষক ও সাধারণ সম্পাদক। গুণী এই শিল্পীর জন্ম রাজশাহীতে। বাবা অধ্যাপক মফিজ উদ্দিন আহমদ ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের শিক্ষক ও মা খানম মমতাজ আহমদ। রবীন্দ্রনাথের গানসহ সুস্থধারার সংগীত পরিবেশনের মধ্যদিয়ে তিনি সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে যুক্ত থেকেও তিনি দেশজুড়ে শুদ্ধ সঙ্গীতের চর্চাকে ছড়িয়ে দিতে ভূমিকা রাখছেন। 

;

মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা আবুল মাল আবদুল মুহিত



কবির য়াহমদ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, বার্তা২৪.কম
মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা আবুল মাল আবদুল মুহিত

মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা আবুল মাল আবদুল মুহিত

  • Font increase
  • Font Decrease

আবুল মাল আবদুল মুহিত সাবেক অর্থমন্ত্রী। সবচেয়ে বেশিবার বাজেট উপস্থাপন করে রেকর্ড গড়া অর্থমন্ত্রী তিনি। দীর্ঘ চাকরিজীবন শেষে রাজনৈতিক জীবন এবং স্বেচ্ছায় রাজনীতি থেকে অবসর—সব ছিল তার বর্ণাঢ্য জীবনে। তার পর দেশের অর্থমন্ত্রী হয়েছেন আবু হেনা মোহাম্মদ মুস্তাফা কামাল ও বর্তমানে আবুল হাসান মাহমুদ আলী; কিন্তু কেউই আবুল মাল আবদুল মুহিতের মতো সাফল্যের সাক্ষর রাখতে পারেননি। মুস্তাফা কামালের মন্ত্রিত্ব কালের পুরোটা সময় কেটেছে ‘অনুপস্থিতি’ আর বিবিধ ব্যর্থতা দিয়ে। নতুন অর্থমন্ত্রী মাত্রই নিয়েছেন দায়িত্ব, তাই তাকে এনিয়ে এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছা কঠিন।

আবুল মাল আবদুল মুহিত কেবল অর্থনীতিবিদ ও সাবেক অর্থমন্ত্রীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন লেখক, গবেষক, ভাষাসংগ্রামী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। বাঙালির মহাকাব্যিক মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তিনি সরকারি চাকরি ত্যাগ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্যে কাজ শুরু করেছিলেন। ১৯৫৬ সালে যোগ দিয়েছিলেন পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে (সিএসপি)। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ওয়াশিংটন দূতাবাসে পাকিস্তানের কূটনীতিকের দায়িত্বে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের জুনে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। ১৯৮১ সালে স্বেচ্ছায় সরকারি চাকরি ছেড়েও দেন। সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদেরও অর্থমন্ত্রী ছিলেন তিনি। গণতন্ত্রে দেশকে ফেরানো হবে এই শর্তে তিনি এরশাদের মন্ত্রিসভায় যোগ দেন। এরপর বছরখানেক দিন শেষে যখন দেখেন এরশাদ তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছেন না, তখন তিনি স্বেচ্ছায় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ের পর যে মন্ত্রিসভা গঠন করে সেখানে শেখ হাসিনা তাকে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। প্রবল প্রতিকূল দেশীয় ও বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নেওয়া আবুল মাল আবদুল মুহিত বৈশ্বিক মন্দা সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতিকে যে জায়গায় নিয়ে গেছেন তার সুফল দীর্ঘদিন ভোগ করেছে দেশ। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্পসহ আরও অনেক প্রকল্প তার আমলে শুরু হয়। তিনি আর্থিক ব্যবস্থাপনার দিকটি সুনিপুণভাবে করে গেছেন। তার দায়িত্বকালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের যে ঊর্ধ্বগতির সঞ্চার হয়েছিল সেখান থেকে দেশ একটা সময়ে ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছায়।

মাথাপিছু আয়, জিডিপি, রিজার্ভ, মূল্যস্ফীতিসহ অর্থনীতির নানা খাতের ব্যবস্থাপনায় তিনি যে সাফল্যের সাক্ষর রেখেছেন তার পথ ধরে পরের অর্থমন্ত্রীরা সেটা অব্যাহত রাখতে পারেননি। সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করতে পারেননি এবং পদে থেকেও তার কাজে অনুপস্থিতি দেশকে গভীর সংকটে নিপতিত করেছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মুস্তাফা কামাল বিজয়ী হলেও তাকে মন্ত্রিসভায় রাখেননি শেখ হাসিনা, এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে।

নানা কারণে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে এই দেশ স্মরণ রাখবে। তন্মধ্যে একটি যদি পেনশন ব্যবস্থা হয়, অন্যটি নারীর ঘরের কাজের মূল্যায়ন। নারীর ঘরের কাজের মূল্যায়নের বিষয়টি এখনো আনুষ্ঠানিক হয়নি যদিও, তবে এনিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। নয় মাস আগে দেশে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু হয়েছে, এবং এই নয় মাসে ব্যাপক সাড়া যদিও পড়েনি, তবে এখন পর্যন্ত ১ লাখ লোক এই সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। অথচ তিনি যখন প্রথমবার সবার জন্যে পেনশন চালুর কথা বলেন, তখন এই উদ্যোগের বিরোধিতা করেছিলেন অনেকেই। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে তিনি এক বৈঠকে সকলের জন্যে পেনশন চালুর ব্যবস্থার কথা বলে অনেকের বিরোধিতার মুখে পড়েছিলেন। তবু তিনি এর একটা খসড়া প্রণয়নের দায়িত্ব দেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে। আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, ‘সবার জন্য পেনশন চালু করতে পারলে এ দেশ থেকে অনেক কিছু দূর হবে। মানুষ যখন দেখবে তার ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত তখন অনেকেই অনিয়ম থেকে সরে আসবে। মানুষ এত অনিয়ম-হানাহানি করে শুধু ভবিষ্যতের জন্য।’ শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে খসড়া তৈরি হয়ে আসার পর তিনি জানালেন, কিছুই হয়নি। এরপর তার নিজের তত্ত্বাবধানে শুরু হয় খসড়া তৈরির কাজ। তিনি এনিয়ে কথা বলতেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবুল মাল আবদুল মুহিতের ওই উদ্যোগের পক্ষে ছিলেন, এবং কাজ করার নির্দেশ দেন। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর পর তথ্যগুলো একটি গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন শ্রম মন্ত্রণালয়ের সাবেক এক কর্মকর্তা।

আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের বাজেটে দেশের সকল নাগরিকের জন্যে পেনশন ব্যবস্থা চালুর স্বপ্নের কথা বলেছিলেন। তিনি তার বাজেট বক্তৃতার ৫৯ নং পৃষ্ঠার পেনশন অধ্যায়ে বলেছিলেন ‘সরকারি পেনশনারগণ দেশের সমগ্র জনগণের একটি ক্ষুদ্রাংশ মাত্র। তাই সরকারি কর্মচারীদের পাশাপাশি সকলের জন্যে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় অংশগ্রহণমূলক সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুকরণে আমরা কাজ করছি। আমাদের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডের অন্তর্নিহিত লক্ষ্য বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ-রাষ্ট্রে রূপান্তর করা।’ এর আগের বছরের বাজেটে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, ‘দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মাত্র ৫ শতাংশ, যাদের প্রায় সবাই সরকারি চাকুরে, এখন পেনশন সুবিধা পান। বাকি ৯৫ শতাংশের মধ্যে প্রায় ৮ শতাংশ গ্র্যাচুইটি সুবিধা পেলেও অন্যদের জন্য সে সুবিধাও নেই।’ তার বক্তব্য তখন সে পর্যন্তই ছিল, এবং এক বছর পর পরের বাজেটে এসেছে স্বপ্নের পূর্ণ অবয়ব। আর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকারে। এরবাইরে আছে ২০১৮ সালে পেনশন নিয়ে আবুল মাল আবদুল মুহিতের উদ্বোধন করা এক পাইলট প্রকল্পে, যেখানে ৫৭ জন ব্যক্তিকে এই প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হয়। দেশের মানুষদের জন্যে পেনশন ব্যবস্থা চালু নিয়ে যে স্বপ্নের রূপরেখা দিয়েছিলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত, সেটা তার জীবদ্দশায় পূরণ হয়নি। তার মৃত্যুর কয়েক মাস পর সরকারি তরফে হয়েছে প্রকাশ্য এবং প্রধানমন্ত্রী করেছেন এর বাস্তবায়ন।

সম্প্রতি নারীদের গৃহকর্মের অর্থনৈতিক মূল্য নির্ধারণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। গত ২৩ এপ্রিল সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয় বলে সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। নারীদের গৃহকর্মের এই মূল্যায়নে ঘরে হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল পালন, বিভিন্ন জাতের সবজি উৎপাদনসহ নানা হিসাব এর মধ্যে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেশের অন্তত ৪৩ শতাংশ নারী পুরোপুরিভাবে গৃহস্থালি কাজের সঙ্গে যুক্ত। দেশের মোট জাতীয় উৎপাদনে (জিডিপি) নারীর অবদান ২০ শতাংশ। তবে নারীর এই গৃহস্থালি কাজকে জাতীয় আয় পরিমাপের পদ্ধতিতে যোগ করা হলে জিডিপিতে নারীর অবদান দাঁড়াবে ৪৮ শতাংশ বা তার কাছাকাছি। এখন নারীদের গৃহস্থালি কাজের মূল্যায়নের বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে, এ নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। এটাও ছিল সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের স্বপ্ন। দায়িত্ব পালনকালে একাধিকবার তিনি এনিয়ে কথা বলেছেন, নারীদের কাজের রাষ্ট্রীয় মূল্যায়নের গুরুত্বারোপ করেছেন। ২০১৭ সালের অক্টোবরে রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে প্রয়াত এই অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমাদের দেশে ঘরের সেবামূলক কাজের কোনো মূল্যায়ন নেই। সে কারণে জিডিপিতে এর কোনো অন্তর্ভুক্তি নেই। এটার মূল্যায়ন করা জরুরি।’ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মাধ্যমে এই মূল্যায়নের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়ে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, ‘বিষয়টি আমরা পরিসংখ্যান বিভাগে যুক্ত করব এবং সরকারিভাবে আমরা এটিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাব।’

আবুল মাল আবদুল মুহিত নেই আজ দুই বছর। ২০২২ সালের ৩০ এপ্রিল না ফেরার দেশে চলে যান বরেণ্য এই ব্যক্তিত্ব। মৃত্যুর মাস দেড়েক আগে তাকে দেওয়া সিলেটে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি নিজের জীবনের মূল্যায়নে বলেছিলেন, ‘আমি আমার জীবনকে নিয়ে গর্বিত।… অনেকে হয়ত একে আত্মগরিমা বলবেন। কিন্তু এটা অন্যায় নয়। বরং এরজন্য নিজেকে গড়ে তুলতে হয়।’ ৮৮ বছরের দীর্ঘ সময়কে তিনি বলতেন ‘মহাতৃপ্তির-মহাপ্রাপ্তির জীবন’।

মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা আবুল মাল আবদুল মুহিত।

;