পারভিন শাকিরের কবিতা



রূপান্তর: সৈয়দ তারিক
অলঙ্করণ: আনিসুজ্জামান সোহেল

অলঙ্করণ: আনিসুজ্জামান সোহেল

  • Font increase
  • Font Decrease

[উর্দু কবিতার উজ্জ্বল ঐতিহ্য কয়েক শতাব্দীর। কিন্তু মির তকি মির, মির্জা গালিব, ইকবাল, ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ, আহমেদ ফারাজ—উর্দু ভাষার মহিমান্বিত কবিরা সবাই পুরুষ। সব ভাষাতেই অবশ্য কবিতায়, সাহিত্যে, শিল্পে ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সাধারণত পুরুষেরই আধিপত্য ছিল, তবে অনেক ভাষাতেই প্রাচীন আমল থেকেই দু-চারজন বিখ্যাত নারী কবির সন্ধান মেলে। উর্দু ভাষায় উল্লেখযোগ্য নারী কবিদের পাওয়া যায় বিংশ শতাব্দীতে এসে।

আদা জাফরি, জেহরা নিগাহ, কিশওয়ার নাহিদ, ফাহমিদা নিয়াজ প্রমুখ নারী উর্দু ভাষার কবি হিসেবে খ্যাতিমান হয়েছেন। তবে এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কাব্যসাফল্য অর্জন করেছেন পারভিন শাকির। তার কবিতা অনবদ্য বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন।

উর্দুভাষার এই অনন্য আধুনিক কবি পারভিন শাকির পাকিস্তানে জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫২ সালে। অল্প বয়স থেকেই তিনি লিখতে শুরু করেন। কবিতা ও গদ্য দুটোই লেখেন তিনি। পত্রিকায় কলাম লিখতেন। ‘বীণা’ এই কলমি নামে আগে লিখতেন তিনি। পেশায় প্রথমে শিক্ষকতা করতেন, পরে পাকিস্তানের সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন।

পারভিন শাকিরের প্রথম কবিতার বই ‘খুশবু’ প্রকাশিত হয় ১৯৭৬ সালে। বেশ সুনাম অর্জন করে এটি। এরপর ক্রমে তার অন্যান্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয় : ‘সদ-বার্গ’ [জলাভূমির ফুল] (১৯৮০), ‘খুদ কালামি’ [ নিজের সাথে আলাপ] (১৯৯০), ‘ইনকার’ [ অস্বীকার] (১৯৯০) ও ‘কাফ-ই-আয়না’ [আয়নার কিনারা]। সব রচনাই প্রশংসিত হয়। তার কলামগুলো সংকলিত হয় ‘গোশা-ই-চাশম’ [চোখের কোণা] নামে। সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৭৬ সালে তিনি পাকিস্তানের সর্বোচ্চ পদক ‘দ্য প্রাইড অব পারফরম্যান্স’ লাভ করেন। তার কবিতাসমগ্র প্রকাশিত হয় ‘মাহ-ই-তামাম’ [পূর্ণ চাঁদ] নামে।

উর্দু কবিতার ঐতিহ্যশীল রচনা প্রকরণ গজল লেখেন তিনি। তার লেখা গজল মেহদি হাসান, নুসরাত ফতেহ আলি খান প্রমুখ বিখ্যাত শিল্পী গেয়েছেন। তার গজলে ঐতিহ্যিক বিষয় ও ভঙ্গির সাথে আধুনিকতাকে মিশিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া তিনি আজাদ নজম অর্থাৎ মুক্তছন্দের কবিতা রচনা করেন। তার বিষয়বস্তুতে রোমান্টিক ভাবধারা যেমন আছে তেমনি সমকালীন বিভিন্ন বিষয়, নারীর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ঘটনার বয়ান, সামাজিক বিষয়-আশয় ইত্যাদি রয়েছে। কবিতায়, একজন নারী হিসেবে, তার ব্যক্তিত্ব বড় চমৎকার ফুটিয়ে তোলেন তিনি। ‘আমি’ কথাটি তিনি উর্দু ভাষায় স্ত্রী-লিঙ্গেই লেখেন, যা উর্দু কবিতার ঐতিহ্যে ছিল না। উপমা, উৎপ্রেক্ষা, ইঙ্গিতময়তা, বাকসংক্ষেপ ইত্যাদির বিশিষ্ট প্রয়োগ আছে তার কবিতায়।

‘সে তো সৌরভ, হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে
ঝামেলা ফুলটি নিয়ে, ও কোথায় যাবে?’

এখানে অবিশ্বস্ত প্রেমিককে সুরভির সাথে আর প্রেমিকাকে ফুলের সাথে উপমিত করা হয়েছে। এরকম অজস্র প্রয়োগ আছে তার কবিতায়। প্রচলিত ইংরেজি শব্দ (যেমন, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর) অনায়াসে প্রয়োগ করেন তার কবিতায়। উর্দু কবিতায় তার অবদান গুরুত্বপূর্ণ। এখন অবধি তিনি উর্দু ভাষার শ্রেষ্ঠ নারী কবি।

পারভিন উচ্চশিক্ষা অর্জন করেছিলেন। ইংরেজি ভাষাতত্ত্ব ও ইংরেজি সাহিত্যে তিনি দুইটি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি পিএইচডি করেন। আবার পরে ব্যাংকিংয়ে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিসে উত্তীর্ণ হন ও তারপর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় হতে লোকপ্রশাসনে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন।

তিনি এক ডাক্তারকে বিয়ে করেছিলেন ও তাদের একটি পুত্রসন্তান হয়। কিন্তু বিয়েটা টেকেনি। বিবাহবিচ্ছেদ ঘটেছিল।

১৯৯৪ সালে তার মৃত্যু ঘটে দুর্ঘটনায়। ইসলামাবাদে অফিসে যাবার পথে তার গাড়ি একটি বাসের সাথে সংঘর্ষে পড়ে। এই ঘটনার পরিণতিতেই তিনি মারা যান। যেই রাস্তায় দুর্ঘটনাটি ঘটে পরে তার নামকরণ হয় পারভিন শাকির রোড। ইসলামাবাদেই তার সমাধি অবস্থিত।


গলন্ত সন্ধ্যায়

এই গলন্ত সন্ধ্যায়
সবকিছু মিলিয়ে যায়
তোমার পোশাকের ঘ্রাণ
আমার স্বপ্নের কুঁড়িগুলো
সবকিছু মিলিয়ে যায়

দৃষ্টি স্থগিত...

কিছুক্ষণের মধ্যে
দিগন্তে জাগবে একটি তারা
তোমার দিকে তাকাতে
অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে...

তোমার হৃদয় স্মরণ করবে তখন
একটি স্মৃতির প্রতিধ্বনি
একটি বিচ্ছেদের কাহিনী
একটি অসমাপ্ত মুহূর্তের কথা
না ফোটা স্বপ্নের, না বলা কথার...

আমাদের দেখা হওয়া দরকার ছিল
অন্য কোনো সময়ে
যখন স্বপ্নপূরণ হতে পারত
ভিন্ন আকাশের নিচে
ভিন্ন পৃথিবীতে
আমাদের দেখা হওয়া দরকার ছিল...

তোমার ভাবধারা

আমার প্রতি তোমার ভাবধারা যেন-বা তেমন
যেমন থাকে তূখোড় কূটনীতিকের
কোনো তরুণ সাংবাদিকের প্রতি
—প্রত্যেকটা কথায় আশার ইঙ্গিত,
সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ার কথা ভেবে রাখা,
প্রতিটা শব্দ সাবধানে সুপরিমিত,
(উদ্ধৃতির তোড়ে বিষয়টাই হারিয়ে গেছে)।
তার কোনো কথাই তীরের মতন
ফিরে গিয়ে বিদ্ধ করবে না তাকে,
(যেন তাকে অনুতাপ করতে হয়)।

প্রত্যাবর্তন

চোখদুটো নমিত
কণ্ঠস্বর ক্লান্ত
কথা বলছে ভেঙে ভেঙে
চোখের পাপড়িতে জমে আছে ধুলো
রোদে পোড়া চেহারা।

আলুঝালু মাথাটি নত করে
এসেছে অনেক আগে হারিয়ে যাওয়া বন্ধু।
হৃদয় প্রলুব্ধ হয়ে উঠল তার হাতটি ধরতে,
একছুটে গিয়ে তার মুখে চুমু খেতে,
আর কখনো তাকে একা চলে যেতে না দিতে।

কিন্তু আমার গভীর হতে কেউ বলে উঠল :
এই সবকিছুই ছলনা, মিথ্যা ভান,
কখনো বিশ্বাস করো না
কখনো বিশ্বাস করো না।

ভাগ্য

আমি সেই বধূ যাকে বাসররাত্রিতে
ঘোমটা উঠিয়ে কেউ বলেছিল,
‘আমার যা কিছু আছে সবই তোমার,
শুধু আমার হৃদয়টা বাদ দিও।’

বিমোক্ষণ

আমার কাঁধে তার মাথাটি রেখে আজ
সে কারো জন্য তার মনভরে কেঁদেছে।

সৌন্দর্য

পুরো একটি জীবন দরকার
সৌন্দর্য কী তা বুঝতে,
কারণ মেয়েরা নিজেদের মেলে দেয় না
ক্ষণিক দেখায়।

আরোগ্য

আর কোনো ফুল নাই
আমার কামনার জ্বলন্ত বাগানে,
এটা তো পাতা ঝরবার ঋতু।
তবু একান্ত ইচ্ছার একফোঁটা শিশির
এখনো আমার দুচোখ ভরে রয়েছে,
ঝিকমিকে তারার মতন,
যে ছড়ায় আলো
তোমার হাঁটবার অন্ধকার অলি-গলিতে;
নিঃশব্দে তোমার কানে-কানে সে
তোমার সুস্থতার জন্য প্রার্থনা জানাচ্ছে।
যে তুমি ভালোবাসো
সদ্যফোটা ফুলের সুরভি,
আর মৃদুমন্দ বাতাস,
নীরব নদীতে ধীরে প্রবহমাণ স্বচ্ছ পানি,
আর জীবনের উজ্জ্বল বর্ণমালা,
সু্স্থ হয়ে উঠবে তুমি—
রয়েছে ওরা প্রতীক্ষায়,
বসন্তের নতুন সকাল
তোমার হাসিমাখা দৃষ্টি দেখবার অপেক্ষায় আছে।

বিদায় চিহ্ন

সে গিয়েছে চলে,
কিন্তু যখন সে এখানে ছিল
তখনকার একটি তরতাজা মুহূর্ত
লটকে রয়েছে
আমার হাতের পিঠে,
আমার জীবনে,
বাঁকা চাঁদের মতন।

তোমার নাচের সাথী

নাচের সময়
যার কাঁধের উপর
রেখেছ তোমার মাথা
আমিও একদা তার আশ্রয়ে ছিলাম।
পার্থক্য কেবল এই,
সন্ধ্যা হবার আগেই আমি পরিত্যক্ত হয়েছি,
আর তুমি এই মিথ্যা নিরাপত্তায় রইবে
ভোর পর্যন্ত।

পিকনিক

আমার বন্ধুরা সৈকতের অন্য কোথাও হাসছে,
আর আমি বসে আছি এখানে, গুনে যাচ্ছি ঢেউ,
লিখছি—তার উপরে আবার লিখছি—তোমার নাম এই বালুকাবেলায়...

স্বীকারোক্তি

তোমার চিত্রটি আমার দৃষ্টিকে উদ্বেলিত করল।
দীর্ঘ রজনী পার হলো, আমি
আবিষ্ট হয়ে পড়লাম তোমার প্রতিকৃতিতে।
তারপর সেই মুহূর্ত এলো, যখন আমি
ধীরে ধীরে রাখলাম আমার ঠোঁট
তোমার ছবিতে...

বৃষ্টি

বৃষ্টিতে কেন তুমি একা একা শিহরিত হচ্ছো,
ও মেয়ে?
আলিঙ্গন করো তাকে যার উষ্ণতা জাগানো প্রেমে
তোমার শরীর ও মন হবে সিক্ত।
আর কোনো বৃষ্টি নাই যেটি
প্রেমের বৃষ্টির চেয়ে বড়,
যার পর বিচ্ছেদের উজ্জ্বল রঙধনু
বর্ণের রহস্য নিয়ে ঝলমল করে উঠবে।

আমার শরীরের ভাবসাব

আমি সেই দিনের জন্য আকাঙ্ক্ষা করি যেদিন তুমি
আমার প্রতি আবিষ্ট হবে,
যখন দুনিয়া ভুলে গিয়ে তুমি
গভীর আবেগে আমার অভাব অনুভব করবে,
আর আমার স্বল্পভাষিতা নিয়ে অভিযোগ করবে না।
তখন হয়তো আমি ভুলে যাব অন্য সব
লেনদেন আর দায়দায়িত্ব
যেন আমি তোমার বাহুতে আমার জগতকে অনুভব করতে পারি,
আমার শরীরের ভাবকেই আমাকে পরিচালনা করতে দিতে পারি।
সেই মুহূর্তে সব সীমাপরিধির বাইরে
যখন আমরা নেকাব ও পাগড়ির প্রথা প্রত্যাখ্যান করি,
আসো আমরা আমাদের ভাগ্য পরীক্ষা করি,
আর নিষিদ্ধ ফলের স্বাদ চুরি করি।

চাঁদ

আমাদের সকলে যাত্রী,
একই ভাগ্য নিয়ে আছি আমরা সবাই।
তবু আমি একা আছি এই পৃথিবীতে
আর সে রয়েছে একা ওই আসমানে।

অসারতা

তার জগৎ বড়ই সরল, বড় বেশি
আলাদা আমার থেকে
খুবই স্পষ্ট তার স্বপ্ন
আর ইচ্ছাগুলো।
কথা বলে সে খুব কম।
আজ ভোরে লিখেছে সে,
“আমি দেখলাম
চমৎকার কিছু ফুল আর
তোমার কথা মনে পড়ল।”
হাহ! আমি জানি
আমার বুড়িয়ে যাওয়া মুখ
কোনো অর্কিড পুষ্প নয়...
কিন্তু আমি কিভাবে এই ইচ্ছা করি,
যে আমি বিশ্বাস করব
যা কিছুই বলুক সে,
অন্তত ক্ষণিকের জন্য।

অভিযোগ

বরাবর অভিযোগ করত সে,
‘আমাদের চারপাশে এত-এত মানুষ
আমাদের নিজেদের জন্য সময়ই নাই।
মৌসুমের প্রথম বৃষ্টিতে,
বছরের প্রথম তুষারপাতে,
পূর্ণিমা রাতে,
সন্ধ্যার সৌরভে,
ভোরের মিষ্টি ঠান্ডায়,
আমি তোমার সাথে একা থাকতে চাই,
কিন্তু মনে আমার বেদনা কেবল।’

আজ আমাদের দুজনার মাঝে আর কেউ নাই,
হাত একটু নাড়ালেই সে আমাকে ছুঁতে পারে।
কিন্তু কত-কত মৌসুম এলো আর গেল,
কিন্তু অমন কথা আর বলে না সে।
তার কাছে যাওয়া আমার জন্য কঠিন কিছু না,
কিন্তু সত্যি ব্যাপার হলো,
তার কণ্ঠস্বরে ভাবাবেগ গেছে কমে
কথার ধরনটাও আগের মতন নাই আর;
যদিও সে একই গান গায়,
কিন্তু তার হৃদয় শীতল হয়ে গেছে।

আমরা সবাই ড. ফস্টাস

কোনো না কোনোভাবে আমরা সবাই ড. ফস্টাস,
কেউ তাদের আত্মাকে বেচে
আবেগ-অনুভূতির জন্য,
আবার পরিস্থিতি যখন তাদের ধোঁকা দেয়
কেউ-বা তাদের চোখ বন্ধক রাখে
স্বপ্ন বেচার জন্য,
কেউ-বা পুরো মনটাই বিনিময় করে।
আসলে নির্ধারণ করা দরকার
যুগের মুদ্রাটা কী।
কিছু বিশ্লেষণ হতে জানা যায়
জীবনের বাণিজ্যিক এলাকায়
আজকের ক্রেতারা
সর্বোচ্চ মূল্য দিচ্ছে
আত্মসম্মানের জন্য।

দ্বিপদীগুচ্ছ


সে তো সৌরভ, হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে
ঝামেলা ফুলটি নিয়ে, ও কোথায় যাবে?


তারা জেদ ধরেছে, দিনের আলোয় জোনাকি পোকা ধরে দিতে হবে,
একালের ছেলেমেয়েরা অনেক বুদ্ধিমান হয়ে গেছে।


ঘুম থেকে জেগে উঠলাম আমি, এতে কি তোমার কিছু আসে-যায়?
হাওয়া আমার দরজা ধাক্কাচ্ছে, এতে কি তোমার কিছু আসে-যায়?


আমি মরে গেলে লোকে কখনো কি ভুলে যাবে?
আমার শব্দগুলো আমার অস্তিত্বের সাক্ষ্য দেবে।


বাতাসের মতো তার যাযাবর জীবনযাপন
ঝঞ্ঝার মতো সে চলে যাবে উড়িয়ে নিয়ে।


সত্যি কথা বলব আমি, আর যাব হেরে;
মিথ্যা বলে সে নির্বাক করবে আমারে।


আমার কাঙ্ক্ষিত ছিল শুধু একজনই, যখন তাকে পেলাম না
প্রার্থনা হতে আমার হাত নেমে গেল, এমনকি কী যে চাইছিলাম তাও ভুলে গেলাম।


হাঁটার কোনো শক্তি নাই, থামাও অসম্ভব
প্রেমের সফর আমাকে নির্জীব করে দিয়েছে।


তরতাজা প্রেমের নেশা আমার শরীরে ও মনে,
আবার ফুলের মৌসুম এসেছে আমার বাগানে।

১০
আরো কিছুক্ষণ তাকে দেখতাম,
হায়, চোখের পানিতে সেই সুখ সইল না।

১১
সে এখন অন্য কারো তাতে কী?
আমার সাথে তো তার শুরুই হয় নাই।

১২
যেখানে তোমার খুশি বাতাসের মতো ঘুরে বেড়াও,
আমার কল্পনার ডানা কাটা গেলে তোমার কী আসে যায়?

১৩
মেয়েদের দুঃখ আজব, আরো আজব তাদের সুখ;
হাসতে থাকে তারা অথচ কাজল ভিজে যায়।

১৪
প্রিয় হে, তোমার সাথে একশর্তে প্রেমের খেলা খেলব,
যদি আমি জিতি আমি তোমাকে পাব, যদি হেরে যাই তবে আমি তোমার হব।

১৫
রাতে আমার হৃদয়ে এমন ব্যথা জাগল,
ভোর পর্যন্ত আমি অস্থির হয়ে থাকলাম।

১৬
মিলন—পুনর্মিলনের প্রতিশ্রুতি—বিচ্ছেদ;
হঠাৎই কত কিছু ঘটে গেল!

১৭
আমি জানি বাতাসের দিকে তুমি চোখ রাখো,
কিন্তু এ কেমন কথা যে একটু দেরিও করলে না!

১৮
আমার মতোই চাঁদ গলে যাচ্ছিল
ঘুমের ঘোরে চলছিল সারারাতভর।

১৯
অনেককাল ধরে আমার আমার দুঃখ একা,
খোদা, আমার অশ্রু ঝরাচ্ছে কে?

২০
তার সব ইচ্ছা আমি পূরণ করতে চাই, শুনতে চাই তার সব কথা;
আমি তাকে শিশুর মতো হাসতে দেখতে চাই।

২১
তোমার কথা ভাবলে আমি আলো দেখতে পাই,
মনে হয় স্মৃতিগুলো চাঁদে পরিণত হয়েছে।

কু-বা-কু ফেইল গেয়ি

সবখানে ছড়িয়ে পড়েছে আমাদের প্রেমকাহিনী,
ফুলের সুরভি ছড়ানোর মতো সে আমাকে ভালোবেসেছিল।

কী করে বলি যে সে আমাকে ছেড়ে গিয়েছে,
সত্য হলেও সে তো বড়ই লজ্জার কথা।

যখনই সে গেছে কোথাও, ফিরেছে আমার কাছে ফের,
এটুকু ভালোই মনে সান্ত্বনা জাগায়।

তোমার হৃদয়ের মতো তোমার সাথীও ঋদ্ধ থাকুক,
বিরহের রাত কখনো তোমাকে ধ্বংস না করুক।

যখনই সে আমার তপ্ত কপালে তার হাত রাখত,
আরোগ্যের অনুভূতি জাগত আমার আত্মার গভীরে।

   

নারীর পোশাক, নারীর ইচ্ছে হয়ে থাক—এই ভাবনায় ১৩ লেখিকার বই ‘শাড়ি’



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
‘নারীর পোশাক, নারীর ইচ্ছে হয়ে থাক- এই ভাবনায় ১৩ লেখিকার বই ‘শাড়ি’

‘নারীর পোশাক, নারীর ইচ্ছে হয়ে থাক- এই ভাবনায় ১৩ লেখিকার বই ‘শাড়ি’

  • Font increase
  • Font Decrease

চারপাশে এত কিছু ঘটে যে চিন্তা ও উদ্বেগ প্রকাশ করার মতো বিষয়ের অভাব নেই। তবে এর মধ্যে কিছু জনগোষ্ঠীর চিন্তাভাবনার একটি জায়গায় আটকে আছে; আর তা হলো নারীর পোশাক। নারী কী পোশাক পরল, কেমন পোশাক পরল, কেন পরল ও এমন পোশাক পরা উচিত ছিল না; ইত্যাদি নিয়ে দিন-রাত ব্যস্ত। আর এমন জনগোষ্ঠী সংখ্যায় দিন দিন বেড়েই চলছে। নানা সময়ে এ নিয়ে তর্ক বিতর্কে মেতে উঠে বাঙালি। নারীর পোশাক নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে গিয়ে ব্যক্তিস্বাধীনতা তো বটেই, অন্য ধর্মের অস্তিত্ব এবং ভিন্ন জীবন দর্শনকেও ভুলে যায় সমালোচনাকারীরা।

বিভিন্ন সময় নারী দেহে আঁচলের বিশেষ অবস্থান দেখে ‘ভালো মেয়ে’, ‘খারাপ মেয়ে’র সংজ্ঞা নির্ধারণ পদ্ধতি স্থির করে দিতে চাওয়া হয়েছে মত প্রকাশের স্বাধীনতার আড়ালে। আর এর প্রতিবাদ- প্রতিরোধ উঠে এসেছে সমাজের নানা স্তর থেকে। কেউ কেউ বিপক্ষে মত প্রকাশ করেছেন।

নারী পোশাক নিয়ে ভাবনা ও মতামত ইতিহাসের দলিল রূপে প্রকাশ করার জন্য উদ্যোগে নিয়েছে কলকাতার ঋত প্রকাশনী। আগামী ১১ মে বিকেল সাড়ে ৫টায় অভিযান বুক ক্যাফে-তে প্রকাশিত হতে চলেছে ‘শাড়ি’ নামের এই বইটি।

বইটি বের করার পরিকল্পনা, সম্পাদনা ও নিমার্ণের দায়িত্বের রয়েছেন তানিয়া চক্রবর্তী। প্রচ্ছদ ও চিত্রের দায়িত্বে রয়েছেন অংশুমান।


সংকলনটিতে অলংকরণ ও লেখার মাধ্যমে আলোকপাত করা হয়েছে আবহমানকাল জুড়ে পোশাককে কেন্দ্র করে বাঙালি মেয়েদের আহত দেহ ও মনের দিকে। সোচ্চারে উচ্চারণ করা হয়েছে সেই ইতিহাস যা অনুচ্চারিত থেকে যায় সামাজিক বিধি নিষেধেরে আড়ালে।

বইটির মাধ্যমে বিতর্ক সৃষ্টি নয়, অস্তিত্বের সন্ধানে বের হয়েছেন তেরোজন লেখক। যারা হলেন- জিনাত রেহেনা ইসলাম, যশোধরা রায়চৌধুরী, মধুজা ব্যানার্জি, চৈতালী চট্টোপাধ্যায়, রোহিণী ধর্মপাল, সেবন্তী ঘোষ, মিতুল দত্ত, অমৃতা ভট্টাচার্য, রত্নদীপা দে ঘোষ, অদিতি বসু রায়, দেবাবৃতা বসু, শ্রুতকীর্তি দত্ত ও তানিয়া চক্রবর্তী।

দৃশ্য বা শব্দের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে ভাইরাল হওয়া নয়, সংকলনটির উদ্দেশ্য একটি প্রলেপ সৃষ্টি যা আগামী প্রজন্মের মাথায় ছায়া দেবে। মেনে নেওয়া নয়, প্রশ্ন করার সাহস জোগাবে নতুন করে নয়।

এ প্রসঙ্গে তানিয়া চক্রবর্তী বলেন, ‘শাড়ি’ নিয়ে একটি বই প্রকাশ করা হচ্ছে। সম্প্রতি নারীদের পোশাক নিয়ে ভারতে একটা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। আমি মনে করি, ২০২৪ সালে এসে নারীর পোশাক নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই। মেয়েরা যা ইচ্ছা তাই পরতে পারে। তাদের বুদ্ধি, কর্ম ও অভিব্যক্তি বিষয়টিই আসল। এ বিষয়গুলো বইটিতে স্থান পেয়েছে।

;

৩ গুণী পাচ্ছেন বাংলা একাডেমির রবীন্দ্র ও নজরুল পুরস্কার



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
-অধ্যাপক রাজিয়া সুলতানা, অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী ও অধ্যাপক লাইসা আহমদ লিসা

-অধ্যাপক রাজিয়া সুলতানা, অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী ও অধ্যাপক লাইসা আহমদ লিসা

  • Font increase
  • Font Decrease

রবীন্দ্র ও নজরুল সাহিত্যে গবেষণায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলা একাডেমির রবীন্দ্র ও নজরুল পুরস্কার পাচ্ছেন ৩ গুণী গবেষক।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) বাংলা একাডেমির জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক সমীর কুমার সরকার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলা একাডেমি রবীন্দ্র-সাহিত্যের গবেষণায় অবদানের জন্য এবার রবীন্দ্র পুরস্কার ২০২৪ পাচ্ছেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী এবং অধ্যাপক লাইসা আহমদ লিসা। অন্যদিকে, বাংলা একাডেমি নজরুল-সাহিত্যে গবেষণায় অবদানের জন্য অধ্যাপক রাজিয়া সুলতানা পাচ্ছেন নজরুল পুরস্কার ২০২৪।

আগামী ২৫শে বৈশাখ ১৪৩১/৮ মে ২০২৪ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বাংলা একাডেমি আয়োজিত অনুষ্ঠানে রবীন্দ্র পুরস্কার-২০২৪ ও আগামী ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১/২৩ মে ২০২৪ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে নজরুল পুরস্কার-২০২৪ প্রদান করা হবে।

অধ্যাপক ড. রাজিয়া সুলতানা 

খ্যাতিমান নজরুল গবেষক অধ্যাপক ড. রাজিয়া সুলতানার জন্ম ২৫শে জুলাই ১৯৩৭। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় ১৯৫৮ সালে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৫৯ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৮৫ সালে মধ্যযুগের কবি আবদুল হাকিমের জীবন ও কর্ম নিয়ে গবেষণা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি এইচ.ডি. ডিগ্রি অর্জন করেন।

বাংলাদেশের মহিলাদের মধ্যে তিনি প্রাচীন ও মধ্যযুগের পাণ্ডুলিপি ও সাহিত্য বিষয়ে প্রথম গবেষক। ১৯৮৩ সালে তিনি ফারসি ভাষায় ডিপ্লোমা লাভ করেন। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রণীত মধ্যযুগের সাহিত্য-সম্পাদনা-গ্রন্থ 'নওয়াজিশ খান বিরচিত গুলে-বকাওলী কাব্য। পরে প্রকাশিত হয় তাঁর গবেষণাগ্রন্থ ‘আবদুল হাকিম : কবি ও কাব্য (১৯৮৭)। অপর সাহিত্য সম্পাদনা-গ্রন্থ 'আবদুল হাকিম রচনাবলী' (১৯৮৯)।

কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে ড. রাজিয়া সুলতানার গবেষণাগ্রন্থ 'কথাশিল্পী নজরুল (১৯৭৫), 'নজরুল (১৯৮৮), অন্বেষা' (২০০১) এবং 'সাহিত্য-বীক্ষণ' (১৯৮৮)। ড. রাজিয়া সুলতানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। ইতোপূর্বে তিনি বিভিন্ন সরকারি কলেজে ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন।

অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধোত্তর প্রজন্মের বিশিষ্ট সাহিত্য-সমালোচক ভীষ্মদেব চৌধুরীর জন্ম ১৯৫৭ সনের ৩০শে নভেম্বর সিলেট শহরে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি সম্পন্ন করেন। ১৯৮৪ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদানের মধ্য দিয়ে তাঁর কর্মজীবনের সূচনা। ২০০০ সনে তিনি অধ্যাপক হিসেবে উন্নীত হন। বাংলা উপন্যাস, রবীন্দ্র ছোটগল্প এবং বাংলাদেশের সাহিত্য তাঁর অনুধ্যান ও মূল্যায়নের কেন্দ্রীয় বিষয়। ভীষ্মদেব চৌধুরীর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ : জগদীশ গুপ্তের গল্প : পঙ্ক ও পঙ্কজ (১৯৮৮); মিরজা আবদুল হাই (১৯৮৯); বাংলাদেশের সাহিত্যগবেষণা ও অন্যান্য (দ্বি সংস্করণ ২০০৪); সৈয়দ মুজতবা আলীর পত্রগুচ্ছ (সম্পা. ১৯৯৩); তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস : সমাজ ও রাজনীতি (১৯৯৮); তারাশঙ্কর স্মারকগ্রন্থ (সম্পা. ২০০১); দু-চারটি অশ্রুজল : রবীন্দ্রগল্পের ভিন্নপাঠ (২০০৫); কথাশিল্পের কথামালা : শরৎচন্দ্র ও তারাশঙ্কর (২০০৭); সাহিত্য-সাধনায় ঢাকার নারী (২০১১); প্রভাতসূর্য :রবীন্দ্রনাথ সার্ধশত জন্মবর্ষ স্মরণ (সম্পা. ২০১১)।

অধ্যাপক লাইসা আহমদ লিসা

অধ্যাপক লাইসা আহমদ লিসা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী, ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তনের শিক্ষক ও সাধারণ সম্পাদক। গুণী এই শিল্পীর জন্ম রাজশাহীতে। বাবা অধ্যাপক মফিজ উদ্দিন আহমদ ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের শিক্ষক ও মা খানম মমতাজ আহমদ। রবীন্দ্রনাথের গানসহ সুস্থধারার সংগীত পরিবেশনের মধ্যদিয়ে তিনি সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে যুক্ত থেকেও তিনি দেশজুড়ে শুদ্ধ সঙ্গীতের চর্চাকে ছড়িয়ে দিতে ভূমিকা রাখছেন। 

;

মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা আবুল মাল আবদুল মুহিত



কবির য়াহমদ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, বার্তা২৪.কম
মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা আবুল মাল আবদুল মুহিত

মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা আবুল মাল আবদুল মুহিত

  • Font increase
  • Font Decrease

আবুল মাল আবদুল মুহিত সাবেক অর্থমন্ত্রী। সবচেয়ে বেশিবার বাজেট উপস্থাপন করে রেকর্ড গড়া অর্থমন্ত্রী তিনি। দীর্ঘ চাকরিজীবন শেষে রাজনৈতিক জীবন এবং স্বেচ্ছায় রাজনীতি থেকে অবসর—সব ছিল তার বর্ণাঢ্য জীবনে। তার পর দেশের অর্থমন্ত্রী হয়েছেন আবু হেনা মোহাম্মদ মুস্তাফা কামাল ও বর্তমানে আবুল হাসান মাহমুদ আলী; কিন্তু কেউই আবুল মাল আবদুল মুহিতের মতো সাফল্যের সাক্ষর রাখতে পারেননি। মুস্তাফা কামালের মন্ত্রিত্ব কালের পুরোটা সময় কেটেছে ‘অনুপস্থিতি’ আর বিবিধ ব্যর্থতা দিয়ে। নতুন অর্থমন্ত্রী মাত্রই নিয়েছেন দায়িত্ব, তাই তাকে এনিয়ে এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছা কঠিন।

আবুল মাল আবদুল মুহিত কেবল অর্থনীতিবিদ ও সাবেক অর্থমন্ত্রীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন লেখক, গবেষক, ভাষাসংগ্রামী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। বাঙালির মহাকাব্যিক মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তিনি সরকারি চাকরি ত্যাগ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্যে কাজ শুরু করেছিলেন। ১৯৫৬ সালে যোগ দিয়েছিলেন পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে (সিএসপি)। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ওয়াশিংটন দূতাবাসে পাকিস্তানের কূটনীতিকের দায়িত্বে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের জুনে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। ১৯৮১ সালে স্বেচ্ছায় সরকারি চাকরি ছেড়েও দেন। সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদেরও অর্থমন্ত্রী ছিলেন তিনি। গণতন্ত্রে দেশকে ফেরানো হবে এই শর্তে তিনি এরশাদের মন্ত্রিসভায় যোগ দেন। এরপর বছরখানেক দিন শেষে যখন দেখেন এরশাদ তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছেন না, তখন তিনি স্বেচ্ছায় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ের পর যে মন্ত্রিসভা গঠন করে সেখানে শেখ হাসিনা তাকে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। প্রবল প্রতিকূল দেশীয় ও বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নেওয়া আবুল মাল আবদুল মুহিত বৈশ্বিক মন্দা সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতিকে যে জায়গায় নিয়ে গেছেন তার সুফল দীর্ঘদিন ভোগ করেছে দেশ। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্পসহ আরও অনেক প্রকল্প তার আমলে শুরু হয়। তিনি আর্থিক ব্যবস্থাপনার দিকটি সুনিপুণভাবে করে গেছেন। তার দায়িত্বকালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের যে ঊর্ধ্বগতির সঞ্চার হয়েছিল সেখান থেকে দেশ একটা সময়ে ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছায়।

মাথাপিছু আয়, জিডিপি, রিজার্ভ, মূল্যস্ফীতিসহ অর্থনীতির নানা খাতের ব্যবস্থাপনায় তিনি যে সাফল্যের সাক্ষর রেখেছেন তার পথ ধরে পরের অর্থমন্ত্রীরা সেটা অব্যাহত রাখতে পারেননি। সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করতে পারেননি এবং পদে থেকেও তার কাজে অনুপস্থিতি দেশকে গভীর সংকটে নিপতিত করেছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মুস্তাফা কামাল বিজয়ী হলেও তাকে মন্ত্রিসভায় রাখেননি শেখ হাসিনা, এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে।

নানা কারণে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে এই দেশ স্মরণ রাখবে। তন্মধ্যে একটি যদি পেনশন ব্যবস্থা হয়, অন্যটি নারীর ঘরের কাজের মূল্যায়ন। নারীর ঘরের কাজের মূল্যায়নের বিষয়টি এখনো আনুষ্ঠানিক হয়নি যদিও, তবে এনিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। নয় মাস আগে দেশে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু হয়েছে, এবং এই নয় মাসে ব্যাপক সাড়া যদিও পড়েনি, তবে এখন পর্যন্ত ১ লাখ লোক এই সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। অথচ তিনি যখন প্রথমবার সবার জন্যে পেনশন চালুর কথা বলেন, তখন এই উদ্যোগের বিরোধিতা করেছিলেন অনেকেই। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে তিনি এক বৈঠকে সকলের জন্যে পেনশন চালুর ব্যবস্থার কথা বলে অনেকের বিরোধিতার মুখে পড়েছিলেন। তবু তিনি এর একটা খসড়া প্রণয়নের দায়িত্ব দেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে। আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, ‘সবার জন্য পেনশন চালু করতে পারলে এ দেশ থেকে অনেক কিছু দূর হবে। মানুষ যখন দেখবে তার ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত তখন অনেকেই অনিয়ম থেকে সরে আসবে। মানুষ এত অনিয়ম-হানাহানি করে শুধু ভবিষ্যতের জন্য।’ শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে খসড়া তৈরি হয়ে আসার পর তিনি জানালেন, কিছুই হয়নি। এরপর তার নিজের তত্ত্বাবধানে শুরু হয় খসড়া তৈরির কাজ। তিনি এনিয়ে কথা বলতেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবুল মাল আবদুল মুহিতের ওই উদ্যোগের পক্ষে ছিলেন, এবং কাজ করার নির্দেশ দেন। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর পর তথ্যগুলো একটি গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন শ্রম মন্ত্রণালয়ের সাবেক এক কর্মকর্তা।

আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের বাজেটে দেশের সকল নাগরিকের জন্যে পেনশন ব্যবস্থা চালুর স্বপ্নের কথা বলেছিলেন। তিনি তার বাজেট বক্তৃতার ৫৯ নং পৃষ্ঠার পেনশন অধ্যায়ে বলেছিলেন ‘সরকারি পেনশনারগণ দেশের সমগ্র জনগণের একটি ক্ষুদ্রাংশ মাত্র। তাই সরকারি কর্মচারীদের পাশাপাশি সকলের জন্যে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় অংশগ্রহণমূলক সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুকরণে আমরা কাজ করছি। আমাদের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডের অন্তর্নিহিত লক্ষ্য বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ-রাষ্ট্রে রূপান্তর করা।’ এর আগের বছরের বাজেটে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, ‘দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মাত্র ৫ শতাংশ, যাদের প্রায় সবাই সরকারি চাকুরে, এখন পেনশন সুবিধা পান। বাকি ৯৫ শতাংশের মধ্যে প্রায় ৮ শতাংশ গ্র্যাচুইটি সুবিধা পেলেও অন্যদের জন্য সে সুবিধাও নেই।’ তার বক্তব্য তখন সে পর্যন্তই ছিল, এবং এক বছর পর পরের বাজেটে এসেছে স্বপ্নের পূর্ণ অবয়ব। আর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকারে। এরবাইরে আছে ২০১৮ সালে পেনশন নিয়ে আবুল মাল আবদুল মুহিতের উদ্বোধন করা এক পাইলট প্রকল্পে, যেখানে ৫৭ জন ব্যক্তিকে এই প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হয়। দেশের মানুষদের জন্যে পেনশন ব্যবস্থা চালু নিয়ে যে স্বপ্নের রূপরেখা দিয়েছিলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত, সেটা তার জীবদ্দশায় পূরণ হয়নি। তার মৃত্যুর কয়েক মাস পর সরকারি তরফে হয়েছে প্রকাশ্য এবং প্রধানমন্ত্রী করেছেন এর বাস্তবায়ন।

সম্প্রতি নারীদের গৃহকর্মের অর্থনৈতিক মূল্য নির্ধারণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। গত ২৩ এপ্রিল সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয় বলে সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। নারীদের গৃহকর্মের এই মূল্যায়নে ঘরে হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল পালন, বিভিন্ন জাতের সবজি উৎপাদনসহ নানা হিসাব এর মধ্যে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেশের অন্তত ৪৩ শতাংশ নারী পুরোপুরিভাবে গৃহস্থালি কাজের সঙ্গে যুক্ত। দেশের মোট জাতীয় উৎপাদনে (জিডিপি) নারীর অবদান ২০ শতাংশ। তবে নারীর এই গৃহস্থালি কাজকে জাতীয় আয় পরিমাপের পদ্ধতিতে যোগ করা হলে জিডিপিতে নারীর অবদান দাঁড়াবে ৪৮ শতাংশ বা তার কাছাকাছি। এখন নারীদের গৃহস্থালি কাজের মূল্যায়নের বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে, এ নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। এটাও ছিল সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের স্বপ্ন। দায়িত্ব পালনকালে একাধিকবার তিনি এনিয়ে কথা বলেছেন, নারীদের কাজের রাষ্ট্রীয় মূল্যায়নের গুরুত্বারোপ করেছেন। ২০১৭ সালের অক্টোবরে রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে প্রয়াত এই অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমাদের দেশে ঘরের সেবামূলক কাজের কোনো মূল্যায়ন নেই। সে কারণে জিডিপিতে এর কোনো অন্তর্ভুক্তি নেই। এটার মূল্যায়ন করা জরুরি।’ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মাধ্যমে এই মূল্যায়নের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়ে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, ‘বিষয়টি আমরা পরিসংখ্যান বিভাগে যুক্ত করব এবং সরকারিভাবে আমরা এটিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাব।’

আবুল মাল আবদুল মুহিত নেই আজ দুই বছর। ২০২২ সালের ৩০ এপ্রিল না ফেরার দেশে চলে যান বরেণ্য এই ব্যক্তিত্ব। মৃত্যুর মাস দেড়েক আগে তাকে দেওয়া সিলেটে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি নিজের জীবনের মূল্যায়নে বলেছিলেন, ‘আমি আমার জীবনকে নিয়ে গর্বিত।… অনেকে হয়ত একে আত্মগরিমা বলবেন। কিন্তু এটা অন্যায় নয়। বরং এরজন্য নিজেকে গড়ে তুলতে হয়।’ ৮৮ বছরের দীর্ঘ সময়কে তিনি বলতেন ‘মহাতৃপ্তির-মহাপ্রাপ্তির জীবন’।

মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা আবুল মাল আবদুল মুহিত।

;

চতুর ঘুঘু



শরীফুল আলম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নেশাখোরের মত কখনো কখনো খিলখিল করে হাসি
প্রথমত দহন উষ্ণতায় ,
তারপর সুবিশাল শূন্যতায় ,
কখনো কখনো ছুঁয়ে ফেলি সাজানো প্রতিমা
জীবনের দাবী ,
তবে আপাতত গন্তব্য বলে কিছু নেই আমার
কবিতার অবয়ব এখনো যেটুকু আছে
তাকে আমি রঙ্গের উৎসবই বলি
কিম্বা যেটুকু আছে তা জীবনের দাবী ।

ক্রমাগত অন্তর্গত দ্বন্দে
অবাধ্য ভাষা এখন প্রাচীর তোলে
প্রসারিত মৃত্যুর কথা বলে ,
আমি তার গল্পের শেষটা জানার চেষ্টা করি
রাতের গহ্বর থেকে তোলে আনি মৃত্যুর পরোয়ানা ,
কিন্তু অস্পষ্টতা কিছু থেকেই যায়
আবার নিজে নিজেই বলি
আমার জলভূমিতে আবার কিসের নিঃসঙ্গতা ?

স্বপ্নবাসর ? সে এক চতুর ঘুঘু
আমি তার ক্ষণিকের হটকারীতা বুঝতে পারি
এমনকি চোখ বুজে
আমি ভুলে যাই তার সন্ধ্যার ঘায়েল
যেন দেখেও দেখিনা
বিনা মোহে সারারাত অহেতুক তার অহংকার
নিরর্থক বাজি ধরে সে
অর্কিড নিরালায় আমিও একা থাকি
ভাঙ্গা চোরা রাত জেগে থাকে আমার পাশে
মনে হয় চোখ দিয়ে ছুঁয়ে দেখি তার ঢাকাঢাকি
ফিরতি নজরে সেও আমায় দেখে
আমার মিষ্টি কবিতার মতই
আমিও থমকে যাই পাখীর ডাকে
দূর দরিয়ায় তখন উলুধ্বনি শংখ বাজে ,
ইচ্ছে হয় নাগরদোলায় আবার গিয়ে দুলি
আর জানই তো কবিরাই প্রেমে পড়ে
কবিরাও চুমু খায়
সুন্দরী পেলে তাঁরাও শুয়ে পরে।

*************************
শরীফুল আলম ।
২১এপ্রিল । ২০২৪ইং
নিউইয়র্ক । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ।

;