নাইপল : অর্জন করেছেন যিনি নাইটহুড, নোবেল প্রাইজ ও দুশমনি



আলফ্রেড কনোফ

  • Font increase
  • Font Decrease

ভাষান্তর মঈনুস সুলতান

লেখক পরিচিতি বিদ্যাধর সূর্যপ্রাসাদ নাইপলের জন্ম ১৯৩২ সালে ক্যারিবিয়ানের ত্রিনিদাদ নামক একটি দেশের চাগুয়ানাস বলে অখ্যাত এক শহরে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত দুনিয়া জোড়া সুনামধন্য এ লেখকের পিতামহ উত্তর প্রদেশের গোরখপুর থেকে শ্রমিক হিসাবে ত্রিনিদাদে অভিবাসি হন। অনেকগুলো সফল উপন্যাস, গল্পগ্রন্থ ইত্যাদি ছাড়াও নাইপল একাধিক ভ্রমণ কাহিনীর রচয়িতা। তাঁর ভ্রমণ বৃত্তান্তে তিনি তৃতীয় বিশ্বের যে বসবাস-অনুপযোগী চালচিত্র এঁকেছেন তা অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। তাঁর কিছু লেখায় ইসলাম ধর্মকেও উপস্থাপন করেছেন নেতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে। তাঁর ‘হিন্দুত্ববাদ’ বা হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন, এবং বাবরি মসজিদ ধ্বংসকে ‘ক্রিয়েটিভ প্যাসন’ বা সৃজনশীল আবেগ বলে অভিহিত করে তিনি অত্যন্ত বিতর্কিত হন।

যদিও নাইপল বেশ কয়েকবার ভারতে ফিরে এসে গোরখপুরের কাছাকাছি তাঁর পূর্বপুরুষের ভিটা সনাক্ত করতে চেষ্টা করেন—তারপরও তাঁর ভারতকে নিয়ে লেখা গ্রন্থ, ‘এন এরিয়া অব্ ডার্কনেস্’ তার পিতৃপুরুষের স্বদেশ সম্পর্কে বিষোদগারে পূর্ণ।

ব্যক্তিগত জীবনে একসময় নাইপল প্যাটরিসিয়া হেইল বলে এক ইংরেজ শিক্ষয়িত্রীর সাথে ৪১ বৎসর বিবাহিত ছিলেন। এ মহিলার সাথে বিবাহিত থাকাবস্থায় নাইপল মার্গারেট মারি বলে বিবাহিতা আরেক এ্যংলো-আর্জেন্টিনিয়ান নারীর সাথে ভ্রমণ করতে ভালোবাসতেন। নাইপল তাঁর বইগুলো রচনার জন্য তাঁর স্ত্রী প্যাটরিসিয়া হেইলের সক্রিয় সহায়তার ওপর ছিলেন নির্ভরশীল। তবে প্রায়শ তিনি মার্গারেট মারির প্রতি তাঁর ভালোবাসার উল্লেখ করে, এমনকি রূপজীবীদের প্রতি তার যৌন মিলনের কথা বাগাড়ম্বর করে বলে বেড়িয়ে প্যাটরিশিয়াকে মানসিকভাবে পীড়া দিতে পছন্দ করতেন। ব্রেস্ট ক্যানসারে প্যাটরিসিয়া হেইলের মৃত্যুর দু’মাস পর নাইপল দু’বার তালাকপ্রাপ্ত পাকিস্তানী সাংবাদিক নাদিরা খানুম আলভীকে বিবাহ করেন। ২০১৮ সালের ১২ অগাস্ট, লন্ডনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। (অনুবাদক)

১৯৯৮ সালে পল থেরেক্স ‘স্যার ভিবিয়া’স্ শ্যোডো’ বলে ত্রিনিদাদে জন্ম গ্রহণকারী লেখক ভি, এস নাইপলকে নিয়ে তাঁর দীর্ঘ জীবনের বন্ধুত্বের সূত্রে একটি স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ রচনা করেন। নাইপলের চরিত্রে মজ্জাগত বর্ণবাদ, অহমিকা ও কিপ্টেমি এবং তাঁর প্রথমা স্ত্রীর প্রতি নির্মমতা প্রভৃতি রকমারি বিষয়ের উন্মোচনের কারণে সমঝদার মহলে এ বইটির আইসকিউব দেওয়া সাবধানে মিশ্রিত ককটেল বলে পরিচিতি রয়েছে। এ গ্রন্থ প্রকাশের পাক্কা এক দশক পর বাজারে আসলো প্যাটরিক ফেঞ্চের ‘দ্যা ওয়ার্ল্ড এ্যাজ ইট্ ইজ্’ নামক নাইপলের জীবনীগ্রন্থ। খোদ নাইপলের অনুমোদিত এ জীবনী গ্রন্থের সুদর্শন ভলিয়মটির জ্যাকেট রুপালি ও কৃষ্ণ বর্ণে রঞ্জিত; যার মলাটে দন্তহীন নাইপল ফোকলা হাসিতে জুতার ফিতা বাঁধছেন। এ বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টালেই পাঠক মোকাবেলা করবেন—নাইপলের এক কালের জানি দুশমন থেরেক্স সাহেবের জবানী থেকে উদ্ধৃতি, ‘এ সব কেচ্ছা কেলেঙ্কারির কিছু কি আমার জানতে বাকি আছে?’ এবং এ মন্তব্যের সাথে সাথেই শুরু হয় অনভিপ্রেত অর্গানের বাদ্য ঝংকার। পাঠক ভাবেন, ৫৫০ পৃষ্ঠার নুতন জীবনী গ্রন্থের কেচ্ছার কিসতি বেয়ে তারা সাবলীলভাবে পাড়ি দেবেন এ লেখকের সমাজ বিচ্ছিন্ন, কখনো কুৎসিত জীবন যাপনের প্রবাহমান দরিয়া। সুসংবাদ হচ্ছে যে, তরুণ ব্রিটিশ সাংবাদিক ফ্রেঞ্চ সাহেব তাঁর রচনায় উদ্দিষ্টের জীবনের কুৎসিত তথ্যসমূহ প্রকাশে মোটেই পিছপা হননি। কিন্তু আরো জাঁকালো খবর হচ্ছে—এ বইটি বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে অত্যন্ত কৌতূহলী ৭৬ বৎসর বয়স্ক একজন নামজাদা জিন্দা লেখকের জীবন-তথ্য; অনেক দিন পর বাজারে এ ধরনের বই আসলো কিন্তু।

যেসব লেখক সচরাচর জীবনী রচনা করে থাকেন তাদের মধ্যে প্যাটরিক ফেঞ্চ সাহেবকে একজন বিরল প্রতিভা বলে মান্যগণ্য করা হয়ে থাকে। তাঁর নো-ননসেন্স টাইপের খাঁটি লেখক বলে পরিচিতি আছে। তাঁর বর্ণনা এ্যয়সা প্রাণবন্ত যে—এখানে নাইপলের সম্পাদক ফ্রান্সিস উইন্ডহাম সম্পর্কে তাঁর এবারতের একটি নজির পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে। “লোক নন্দিত, নির্জনতাপ্রিয় ও বেয়াড়া স্বভাবের উইন্ডহাম বাস করেন তার জননীর সাথে। তার মা ভারী কাচের চশমা চোখে স্থূল পাছায় বিচিত্র বর্ণের—সম্ভবত ছালার টাটে তৈরি ট্রাউজার্স জড়িয়ে যখন থড়বড়িয়ে হাঁটেন, তখন মনে হয়, তার শরীর রূপান্তরিত হচ্ছে জল ও স্থল উভয় ভূভাগে বিচরণকারী বৃহৎ ব্যাঙে।”

এ গ্রন্থের অস্তিত্বের জন্য অবশ্যই নাইপলের তারিফ করতে হয়। ফেঞ্চ সাহেবের ভাষ্যানুযায়ী—নাইপল সত্যি সত্যিই বিশ্বাস করেন যে, ‘লিখতে হলে অতি অবশ্যই লেখা উচিৎ সত্যিকারের সৎ জীবনী।’ ‘এবং জীবদ্দশায় এ ধরনের খোলামেলা রাখঢাকহীন জীবনী প্রকাশের অনুমতি দিয়ে তিনি একই সাথে বিনয় ও নার্সিসাস প্রবণ আত্মপ্রেমের প্রর্দশনী করেছেন।’ ভি, এস নাইপল ফেঞ্চ সাহেবকে এ গ্রন্থ মুসাবিদা করার জন্য ব্যক্তিগত মোহাফেজখানা ব্যবহারের অধিকার দিয়েছেন। এমনকি তাঁকে পড়তে দিয়েছেন তাঁর পয়লা স্ত্রীর সংগ্রহ করা জার্নালগুলো—যা তিনি কখনো নিজেও পড়ে দেখেননি। এ বইয়ের পাণ্ডুলিপি তৈরি হলে পর ভি, এস নাইপলকে সম্পূর্ণ স্ক্রিপ্ট পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে পড়ে দেখার সুযোগ দেওয়া হয়; তিনি কোনো প্রকারের অদল বদলের জন্য চাপ দেননি। এ বই লেখার আগেভাগেই ফ্রেঞ্চ সাহেব ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে—তিনি ছেলেখেলায় মাতেন নি। এ বইয়ের দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় নানা রকমের আন্তর্জাতিক সব সামাজিক ইস্যুতে নাইপলের মতামতকে তুলে ধরতে গিয়ে তিনি সোজাসাপ্টা ভাষায় তাঁর বরাত দিয়ে লিখেছেন যে, “আফ্রিকার কোনো ভবিষ্যৎ নেই, ইসলাম ধর্ম হচ্ছে বিপর্যয়ের সামিল, ফরাসিরা জাতি হিসাবে ধাপ্পাবাজ এবং সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী সাংবাদিকরা বাদরের তূল্য।” সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদের তারিফ করার পরিবর্তে নাইপল এ মতবাদকে সচরাচর তফাৎ যেতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তিনি তাঁর চেয়ে চেহারা-সুরতে কালো মানুষদের গাত্রবর্ণ নিয়ে ঠাট্টা মশকরাও করে থাকেন। এমনকি যেসব জাতি অতীতে উপনিবেশবাদীদের দ্বারা নিপীড়িত হয়েছে, তিনি তাদের বর্তমানে ব্যর্থতার জন্য দোষারোপ করতেও পিছপা হন না। এসব বিষয়ে ফেঞ্চ সাহেবের মতামত হচ্ছে ‘একজন সফল অভিবাসি লেখক হিসাবে নাইপলের এ ধরনের মতামতকে অনেক পাঠকই বেঈমানী হিসাবে বিবেচনা করে থাকেন।’

এসব তথ্য প্রকাশ করে সাথে সাথে ফেঞ্চ সাহেব কিন্তু পাঠককে নাইপলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন ব্যাপক দৃষ্টিকোণ থেকে। অত্যন্ত জটিল এ ব্যক্তিত্ব ১৯৯০ সালে নাইটহুড খেতাবে ভূষিত হন। তাঁর নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তি ঘটে ২০০১ সালে। অসাধারণ কিছু গ্রন্থ রচনার সাথে সাথে এ একাকিত্ব বিলাসী জিনিয়াস, যৌনভাবে অসংযত, উস্কানীমূলক চরিত্রের অধিকারী, বিতর্কিত এ চিন্তাবিদ কিভাবে উপনিবেশবাদের মতো প্রতিক্রিয়াশীল মতামতকে আঁকড়ে ধরে থাকেন, ফেঞ্চ সাহেব তারও খানিক হাদিস দলিল পাঠকের দরবারে হাজির করেন।

বিদ্যাধর সূর্যপ্রসাদ নাইপলের জন্ম হয় ১৯৩২ সালে ত্রিনিদাদের অত্যন্ত দরিদ্র এক ভারতীয় পরিবারে। তিনি যখন ১৯৬১ সালে ‘অ্যা হাউস র্ফ মিঃ বিসওয়াস্’ লিখেন, তখন তাঁর অসহায় পিতা সাইনবোর্ডের সস্তা চিত্রকর—আধখিচড়ে সাংবাদিক মশাই ছিলেন তাঁর প্রেরণার উৎস। তবে পরবর্তী জীবনে তাঁর অত্যন্ত সপ্রতিভ জননী নাইপলের ‘উজ্জ্বল, নিশ্চিত, জবরদস্ত ও খানিকটা ঠাট্টা মশকরায় উচ্ছল’ সাহিত্য-স্বরকে গড়ে তুলতে সাহায্য করেন। ১৮ বৎসর বয়সে বৃত্তি পেয়ে নাইপল অক্সফোর্ডের ইউনিভারসিটি কলেজে পাড়ি জমান। সে থেকে তিনি কিন্তু আজ অব্দি বাস করছেন বিলাতে। ১৯৫৭ সালে তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘দ্যা মিস্টিক ম্যাসুর’ প্রকাশিত হয়। ফেঞ্চ সাহেবের ভাষায় “যেভাবে বাঘের বাচ্চা তার প্রথম শিকারকে নিয়ে আসে গুহায়—সেভাবে নাইপল তাবৎ রিভিউ ঘেঁটে প্রশংসাগুলোর সংক্ষিপ্তসার কপি করে পাঠান তার জননীর কাছে।” এ বইয়ের একটি বড় অংশ জুড়ে আছে নারীদের সাথে নাইপলের সহবৎ ও সুরত লীলার বৃত্তান্ত। তাঁর কিছু কিছু এবারত এ্যয়সা রগরগে যে, পড়তে পড়তে পাঠকের ইচ্ছা হয় হাত দিয়ে চোখের পাতা ঢাকতে। নজির স্বরূপ—প্যাটরিসিয়া হেইল বলে এক কালের এক তরুণী নায়িকার সাথে তাঁর সম্পর্কের বিষয়টি হাজির করা যেতে পারে। দৈহিক স্পর্শের উষ্ণতায় উত্তপ্ত যৌন সংযোগের পরপর নাইপল তাকে প্রস্তাব দেন। যদিও তাঁদের সম্পর্ক ছিল বন্ধুর, জটিল ও ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু—তাঁরা আইনত বিবাহিত থাকেন ১৯৯৬ সাল অব্দি। তাঁদের দাম্পত্য জীবনে নাইপল প্যাটরিসিয়ার সমালোচনা করতেন নির্দয়ভাবে; এবং হর হামেশা পতিতাদের সান্নিধ্যে সময় কাটাতেন। এ সময় তিনি মার্গারেট মারি বলে এক যুবতীর সাথে দীর্ঘস্থায়ী দৈহিক সম্পর্কে লিপ্ত হন। মাঝে মধ্যে মার্গারেটকে তিনি বেদমভাবে প্রহারও করতেন। মার্গারেট কখনো সখনো নাইপলকে আনন্দ দেওয়ার জন্য ডাকযোগে পাঠাতেন—“লেবু রঙের কাউবয় হ্যাট্ কিংবা নীল রোদ চশমা পরা উত্থিত শিশ্নের বিশাল সব ড্রয়িং।” নাইপল যখন তাঁর ভ্রমণকাহিনী সমূহের জন্য নানা দেশে গবেষণা করে বেড়ান; তখন অভিসার প্রবণ মার্গারেট প্রায়শ তাঁর সন্নিধ্যে আসতেন। তবে প্যাটরিসিয়া যেন ভেসে থাকতেন ছায়ামূর্তির মতো সমস্ত কিছুর আবডালে। নাইপল কখনো কিন্তু তাঁর কথা কোথাও ঘূণাক্ষরেও উল্লেখ করেননি। পরবর্তী জীবনে প্যাটরিসিয়া যখন ব্রেস্ট ক্যানসারে মৃত্যু পথযাত্রী, নাইপল ক্রোধান্বিত হন মহিলার দ্রুত মৃত্যু হচ্ছে না দেখে। ততদিনে তিনি যে তাঁর বর্তমানের স্ত্রী নাদিরাকে বিয়ে করার জন্য উস্কে আছেন।

নাইপল তাঁর মানসে ধারণ করেন তীব্র বর্ণবাদ; এবং তাঁর সাহিত্যিক সফলতা কোনো কোনো ক্ষেত্রে অন্য লেখকদেরও এ মতবাদে উৎসাহিত করে। নাইপলের সাথে নোবেল প্রাইজ বিজয়ী ক্যারিবিয়ান কবি ড্রেক ওয়ালকটের কাজিয়া বিবাদ ও দুশমনীর বিষয়টি ফেঞ্চ সাহেব সবিস্তারে বয়ান করেন। কৃষ্ণাঙ্গ কবি ওয়ালকট একবার সওয়াল করেছিলেন—নাইপল যে কালো গাত্রবর্ণের মানুষদের বিরুদ্ধে নোংরা সব বিষোদগার করে বহাল তবিয়তে ভাসছেন সুনামের জোয়ারে—তাঁর কি হিম্মত হবে ইহুদিদের বিরুদ্ধে এ ধরনের মন্তব্য করতে?

এ বইয়ের শেষ অধ্যায়গুলো নাইপলের বিচিত্র ব্যবহারের বর্ণনায় ভরপুর। পাঠক জানতে পারেন—তিনি কিভাবে একবার বিলাতের ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটে মার্গারেট থ্যাচারের সাথে ভোজসভায় প্রথাবিরুদ্ধ চক্রবক্রা পোশাকে হাজির হয়েছিলেন, অথবা অত্যন্ত উন্নাসিকভাবে পরিবেশিত খাদ্যদ্রব্য নাপছন্দ্ করে বিষিয়ে তুলেছিলেন বিলাতের প্রধান মন্ত্রীর দফতরের পরিবেশ।

‘মোদ্দা কথা হচ্ছে—একজন লেখককে কিন্তু তাঁর গ্রন্থে খুঁজে পাওয়ার উপায় নেই, তিনি মূলত বেঁচে থাকেন তাঁর কিংবদন্তীতে।’ ভি, এস নাইপল তাঁর জটিল জীবনের কিংবদন্তী প্রকাশ করে অবশ্যই হিম্মতের পরিচয় দিয়েছেন। এ জীবনীগ্রন্থ একজন পাঠককে তাঁর রচিত চমৎকার সব বইগুলো সত্ত্বর পড়ে ফেলতে অনুপ্রাণিত করে। সাথে সাথে পাঠক স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন এই ভেবে যে—নাইপল তার প্রতিবেশী, বন্ধু বা বাড়িওয়ালা নন বলে। আর শেষ কথা হচ্ছে—অনেক কুৎসিত কদাকার চরিত্রের লোকও কিন্ত চমৎকার সব বই পুস্তক লিখে থাকতে পারেন। এ প্রসঙ্গে খোদ নাইপলের বক্তব্য হচ্ছে, ‘মানুষ আমাকে নিয়ে কী ভাবে—এসব ব্যাপারে আমি তেমন একটা পরোয়া করি না।’

* লেখাটি নিউইয়র্ক টাইমসের ১৮ নভেম্বর, ২০০৮ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়।

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;