ছাতা মাথার লোকটি



ফাহ্‌মিদা বারী

  • Font increase
  • Font Decrease

হাহা হা হা...এখনো আমি হাসি থামাতে পারছি না। মনে হচ্ছে এইরকম দারুণ মজা অনেকদিন পাইনি। কী, আগ্রহ হচ্ছে না গল্পটা শোনার? বলছি শুনুন...
সেদিন হয়েছে কী, স্কুল থেকে কাঁদতে কাঁদতে বাসায় ফিরলাম। দাঁতের ব্যথায় আমি সারাদিন ক্লাসে অস্থির হয়ে ছিলাম। মোটেও মনোযোগ দিতে পারছিলাম না। আমার ক্লাস টিচার একবার আমাকে বলেও বসলেন, ‘বাসায় চলে যাও রুনু। আমি তোমার অর্ধেক দিনের ছুটির এপ্লিকেশনটা লিখে দিচ্ছি। তুমি বাসায় গিয়ে একটু আরাম করো।’
টিচারের প্রস্তাবটা খুবই লোভনীয়। ফেলে দিতে মন সায় দিচ্ছিল না। কিন্তু মায়ের মুখটা ভেসে উঠল চোখের সামনে। এমনিতেই তার ধারণা, আমি নাকি সুযোগ পেলেই স্কুল কামাই দিই। থাক বাবা, দরকার নেই!

কষ্টেশিষ্টে পুরো ক্লাসটা শেষ করেই বাসায় যাই।
আমাকে কাঁদতে দেখেই মা ধারণা করে বসল, নিশ্চয়ই ক্লাসে পড়াটড়া পারিনি। টিচার খুব করে মার দিয়েছে। দাঁত ব্যথা করছে বলতেই অর্ধেক বিশ্বাস আর অর্ধেক অবিশ্বাস নিয়ে মা আমার মুখটাকে টেনে হাঁ করালো। তারপরে বেশ চিন্তিত গলাতেই বলল, ‘এত বড় একটা ফুটো হয়ে বসে আছে দাঁতের মধ্যে, আর তোর কোনো খবরই নাই!’

তারপরে স্কুল ড্রেসটাকে কোনোমতে শুধু পাল্টানোর সময় পেলাম।
সেই অবস্থাতেই মা আমাকে নিয়ে রওয়ানা হলো ডেন্টিস্টের কাছে। চকোলেট খেয়ে যতগুলো দাঁত নষ্ট করেছি আমি, মা নাকি আজ ডেন্টিস্টকে বলে সেগুলো সব তুলে ফেলার ব্যবস্থা করবে।  আমার কলিজা ঠান্ডা হয়ে গেল এমন কথা শুনে। কী সাঙ্ঘাতিক কথা! মা’র ওপরে ভরসা নেই। যা বলছে তা করে ফেলাটা তার জন্য অসম্ভব কিছু নয়।
কিন্তু সবাই কি আর আমার মায়ের মতো এত কড়া হয়?

ডেন্টিস্ট আঙ্কেল আমার সাথে অনেক গল্প করলেন। মজার জোকস শোনালেন। তারপরে আমাকে একটুও কষ্ট না দিয়ে আমার দাঁতের গর্তটাকে সুন্দর করে ভরে দিলেন। ও হ্যাঁ, বলতে ভুলে গেছি। আসার সময়ে আমাকে একটা ক্যাডবেরির প্যাকেট দিতেও ভুললেন না। আর সুন্দর করে হেসে বললেন, ‘খাওয়ার পরে দাঁতটা ব্রাশ করে নিও, কেমন?’

আমি চকোলেট হাতে নিয়ে দিদ্বিজয়ী ভঙ্গিতে মায়ের দিকে চাইলাম। মনে মনে ভাবলাম, ‘কেমন এখন?’

ডেন্টিস্ট আঙ্কেলের চেম্বার থেকে বের হতেই দেখি, স্ট্রবেরি মিল্কশেকের একটা দারুণ দোকান। কাচের দেয়ালের এপাশ থেকে দেখা যাচ্ছে, লম্বা লম্বা গ্লাসে সবাই স্ট্রবেরি মিল্কশেক খাচ্ছে। দেখেই আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল।

সবে দাঁতের ফুটো বন্ধ করে আসলাম। মা কি আর এখন আমাকে মিল্কশেক খেতে দেবে?

দুঃখিত চোখে দেয়ালের এপাশে দাঁড়িয়ে অন্যদের খাওয়া দেখছি, এমন সময় আমাকে অবাক করে দিয়ে মা সেই দোকানে আমাকে নিয়ে চলল। মা’র মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি, হাসি হাসি মুখ। আমার খুশি তখন দেখে কে? আজ কোনদিকে সূর্য উঠেছে কে জানে!

আমি আয়েশ করে সময় নিয়ে ধীরে সুস্থে মিল্ক শেক খেতে লাগলাম। এদিকে বেলা পড়ে যাচ্ছে। সেই সাথে আকাশে ঘন কালো মেঘ ঘুরে বেড়াচ্ছে। মা’র মুখে আবার সেই চিরাচরিত শক্ত ভাব ফুটে উঠল। আমাকে তাড়া দিয়ে বলল, ‘কী হচ্ছে রুনু? একটু তাড়াতাড়ি করো না! দেখতে পাচ্ছিস না, আকাশে কেমন মেঘ করেছে? এক্ষুনি বৃষ্টি নামবে!’
‘এই তো, আর একটু!’ আমি আয়েশের রেশটাকে যথাসম্ভব সংক্ষিপ্ত করে মিল্ক শেক শেষ করলাম।

বাইরে বেরিয়ে দেখি কঠিন বিপদ। মা’র দুশ্চিন্তা একেবারে ঠিক আছে। আকাশে ঘন মেঘ। বলতে বলতেই দু’চার ফোঁটা নামতেও শুরু করেছে।

রাস্তা প্রায় ফাঁকা হয়ে এসেছে। আর তার চেয়েও ভয়ানক কথা হচ্ছে, রাস্তাতে বলতে গেলে গাড়ি ঘোড়া কিছুই নেই। সব যেন এই কিছুক্ষণের মধ্যে ভোজবাজির মতোই হাওয়া হয়ে গেছে। যে দু’চারটি চোখে পড়ছে, সেগুলো ইতোমধ্যেই যাত্রী পেয়ে গেছে।

আমরা দু’জন অসহায়ের মতো ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ভিজছি। সাথে কোনো ছাতাও নেই আমাদের!
আমি বললাম, ‘মা, চল আবার সেই দোকানটায় ফিরে যাই। এখানে থাকলে তো একেবারে ভিজে যাবো!’ আমার মাথায় তখন ঘুরছে আরেক গ্লাস মিল্কশেক! মা যেন শুনতেই পেল না আমার কথা। ব্যগ্রভাবে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। অশান্ত গলায় বলেই ফেলল, ‘ইস! যদি একটা গাড়ি থাকত আমাদের! আর একজন ড্রাইভার!’

এই দুঃখটা মা প্রায়ই করে।
আমাদের অনেক কিছুই থাকতে পারত! আমার বাবা আমাদের সাথে থাকতে পারত! তাহলে হয়তো সবকিছুই আমাদের সাথে থাকত। কিন্তু বাবা তো সেই কবেই আমাদের দুজনকে ছেড়ে...

‘একটু শুনবে মা?’—ডাক শুনে আমি আর মা দুজনেই চমকে পেছনে তাকালাম।
প্রায় সত্তর বাহাত্তর বছর বয়সের একজন অতিশয় বৃদ্ধ ভদ্রলোক এসে দাঁড়িয়েছেন আমাদের পেছনে। বৃদ্ধ ভদ্রলোকের পরনে পরিপাটি বেশবাস, পায়ে চমৎকার একজোড়া জুতো।
মোচ আর কপালের ভ্রু দুটোই পেকে একেবারে সাদা হয়ে গেছে। ভদ্রলোক মাথার ওপরে খুব সুন্দর একটা ছাতা ধরে রেখেছেন।

মা ভ্রু কুঞ্চিত করে তার দিকে তাকাল, ‘জ্বি, বলুন।’ মা’র কণ্ঠস্বরে আশ্চর্য শীতলতা আর কেমন যেন দূরত্ব বজায় রেখে চলা একটা প্রচ্ছন্ন ভাব। মা’র এরকম রুক্ষতায় খুব খারাপ লাগে আমার। কেন যে মা মানুষের সাথে একটু নরম মোলায়েম হতে পারে না কে জানে! তার মতো সন্দেহবাতিক মানুষ খুব কম দেখেছি আমি। বিশেষ করে দুটি জিনিসের প্রতি তার সীমাহীন সন্দেহ, একটি হচ্ছে সিদ্ধ ডিম আর অপরটি অচেনা মানুষ।

সিদ্ধ ডিমের মাথাটা চামচ দিয়ে ভেঙে নিয়ে এমনভাবে মা উঁকি দেয় যে, মনে হয় ভেতর থেকে বুঝি ইঁদুর বেরিয়ে আসবে। আর অচেনা মানুষের ব্যাপারে মায়ের থিওরি ভারি অদ্ভুত। ‘যাকে যত বেশি মধুর হতে দেখবি, বুঝবি যে তার প্রতি তোর সন্দেহের তত বেশি কারণ আছে।’

এই বৃদ্ধ ভদ্রলোকটি খুবই বেশি মধুর।

কাজেই মা’র কথানুযায়ী তার প্রতি সন্দেহটা বেশ জোরালো হওয়া উচিত। তবে তিনি যে ভদ্রলোক এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ মা’র আরেকটি বিখ্যাত বচন হচ্ছে, ‘সবসময় একজন মানুষের জুতার দিকে তাকাবি। জুতাটি যদি ভালো হয়, বুঝতে হবে তিনি একজন ভদ্রলোক।’ এই বৃদ্ধ লোকটির জুতোজোড়া দেখে আমার মনে অন্তত তার ভদ্রলোক হওয়ার ব্যাপারে আর কোনো সন্দেহ রইল না।

ভদ্রলোক খুবই কাতর আর নরম গলায় বললেন, ‘মা, আমাকে ছোট্ট একটা সাহায্য করতে পারো? খুব সামান্য একটা সাহায্য। চিন্তা করো না...তুমি আমাকে নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করতে পারো। একটা কথাও বানিয়ে বলছি না আমি। আর তাছাড়া রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে... কাউকে থামিয়ে এভাবে কথা বলতে কার ভালো লাগে বলো?

আসলে এই বয়সে মানুষের ভুলে যাওয়ার রোগ হয় তো! আমারও একই দশা! ভুলে আমার মানিব্যাগটা বাসায় ফেলে এসেছি। মনে হয়, সেটা আমার অন্য কোটটার পকেটে ছিল। এখন কী বিপদ দেখ! বাসায় যে ফিরবো সেই টাকাটাও আমার সাথে নেই!’

এবার মা তার সেই বিখ্যাত চুলচেরা দৃষ্টিপাতটা করল ভদ্রলোকের দিকে।

এই দৃষ্টিপাতের সামনে স্বাভাবিক থাকতে পারা যথেষ্ট হিম্মতের ব্যাপার। আমার স্কুলের হেডমিস্ট্রেসকে পর্যন্ত মা’র এই দৃষ্টির সামনে একেবারে তোতলা হয়ে যেতে দেখেছি। তবে অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম বৃদ্ধ লোকটির কোনো ভাবান্তর হলো না। তিনি একইরকম স্মিত মুখে মোলায়েম গলায় বলে যেতে লাগলেন, ‘আমি কখনো মানিব্যাগ ফেলে আসি না বুঝলে? আজই প্রথম এই দশা হলো! প্রতিদিনই আমি হাঁটতে বের হই...’
মা’র কণ্ঠস্বর এবারে আরো রুক্ষ্ণ শোনালো।
‘আপনি কি আমার কাছে টাকা চাইছেন?’
‘না না একদম নয়...ছিঃ ছিঃ! তা আমি কেন চাইব?’
‘তাহলে কী চাইছেন তাড়াতাড়ি বলুন। দেখছেন না আমরা ভিজে একসা হয়ে গেছি!’
‘সেই ব্যাপারে সাহায্য করতেই তো আমি এসেছি। আমি দেখলাম তোমাদের সাথে ছাতা নেই। তোমরা বরং এক কাজ করো। আমার এই ছাতাটি নাও...আর বিনিময়ে...আমাকে ট্যাক্সি ভাড়া হিসেবে একশোটা টাকা যদি দিতে...। দেখ, আমার এই ছাতাটি কিন্তু এখনো একেবারে নতুন আর এটা সিল্কের। আমি এটা প্রায় পাঁচশো টাকা দিয়ে কিনেছিলাম।’

আমার মা’র সন্দেহ কিছুতেই দূর হচ্ছে না।

মা আবার প্রশ্ন করল, ‘আপনার কাছে যদি ফেরার জন্য কিছুই না থেকে থাকে তাহলে আপনি আসার পরে কিভাবে ভাড়া মিটিয়েছিলেন?’
‘ওহ্‌, আমি আসলে প্রতিদিন অনেকখানি হেঁটে এসে যাওয়ার পথে একটি ট্যাক্সি নিয়ে বাড়ি ফিরে যাই।’
‘বেশ তো! আজ না হয় ট্যাক্সির বদলে হেঁটেই বাড়ি ফিরুন!’
বৃদ্ধ ভদ্রলোক করুণ হাসি হাসলেন। বললেন, ‘তাই যদি পারতাম, তাহলে কি আর আমি এভাবে দাঁড়িয়ে থাকি? এতদূর হেঁটে আসার পরে আমার পা জোড়ায় আর কোনো শক্তিই অবশিষ্ট থাকে না। এখন আমার পক্ষে আর কিছুদূর হাঁটাও সম্ভব নয়।’

বৃদ্ধ লোকটির কথা শুনে আমার বুকটা ফেটে যেতে লাগল। মা’র প্রশ্ন তবু শেষ হয় না।

‘কিন্তু আপনার ছাতাটা এত দামী! আমি কিভাবে এটাকে মাত্র একশো টাকা দিয়ে কিনি?’ মা’র গলার স্বর অনেকটা নরম হয়ে এসেছে। বুঝতে পারলাম, বরফ গলতে শুরু করেছে।
‘মা গো! আমি যদি এখন বাড়ি ফিরতে না পারি তাহলে আমার এই ছাতা কোন কাজে আসবে?’

মা একটু লোভী চোখে ছাতাটার দিকে তাকিয়ে পার্স খোলার চেষ্টা করতে যেতেই আমার সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল। আমি চোখ দিয়ে অনুনয় করলাম, ‘প্লিজ মা, এমন করো না। এত দামী ছাতাটার বিনিময়ে মাত্র একশো টাকা দিও না!’

মা’র হাত পার্স থেকে আবার সরে এলো। আবার লোকটির দিকে ফিরে বলল, ‘এক কাজ করি। আমি আপনাকে ট্যাক্সি ভাড়াটা দিয়ে দিই। আপনি বাড়ি চলে যান। আপনার ছাতার আমার দরকার নেই।’

বৃদ্ধ লোকটি একেবারে হা হা করে উঠল এই প্রস্তাবে।
‘না না মা, তা কিছুতেই হতে পারে না। আমি কিছুতেই তোমার কাছ থেকে ভিক্ষা নিতে পারি না। তুমি এই ছাতাটা নিয়ে আমাকে দয়া করে একশো টাকা দাও। আমি আর দাঁড়িয়েও থাকতে পারছি না।’
অগত্যা ‘কী আর করা’ এমন একটা ভাব নিয়ে মা হাত বাড়িয়ে ছাতাটাকে নিলো। আর লোকটিকে একশোটা টাকা দিয়ে দিলো। তাকিয়ে বুঝলাম, মা’র চোখজোড়া খুশিতে চিকচিক করে উঠেছে।
‘কী বলে যে তোমাকে ধন্যবাদ দিব মা! তুমি যে আমার কত বড় উপকার করলে!’—বলতে বলতেই লোকটি বিদায় নিয়ে চলে গেল।

লোকটি চলে যেতেই আমি কিছুটা দুঃখিত মন নিয়েই মাকে বললাম, ‘মা, তুমি লোকটার সাথে প্রথম থেকেই এত সন্দেহ নিয়ে কথা বলছিলে কেন? এত চমৎকার একজন ভদ্রলোক!’
‘হুম, চমৎকার তো বটেই! কিন্তু আমি তাকে ভালোমত যাচাই করে নিতে চাচ্ছিলাম। শোন একটা জিনিস শিখতে হবে তোকে। কোন কাজে তাড়াহুড়া করবি না, বুঝলি? আর বিশেষ করে নতুন কোনো মানুষের ব্যাপারে চট করে সিদ্ধান্ত নিবি না। সময় নিয়ে আস্তে ধীরে বিচার করবি সবসময়, বুঝতে পেরেছিস?’
‘হুম, বুঝলাম!’
মা খুশি খুশি গলায় বলল, ‘লোকটা আসলেই খুব ভালোমানুষ। কী সুন্দর একটা ছাতা মাত্র একশো টাকার বদলে দিয়ে গেল! আজ সত্যিই খুব ভালো দিন। কতদিন ধরে এমন একটা ছাতা কেনার ইচ্ছে ছিল আমার! এই যে...তুই বৃষ্টিতে ভিজছিস কেন এখন? ছাতার নিচে আয়!’

ছাতার নিচে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছি। এখনো আমরা কোন ফাঁকা গাড়ির সন্ধান পাইনি। হঠাৎ সেই বৃদ্ধ লোকটিকে চোখে পড়ল আমার। আশ্চর্য! লোকটা কী দ্রুতগতিতে রাস্তা পার হচ্ছে! মাকে সঙ্গে সঙ্গে দেখালাম, ‘মা মা... দেখো দেখো! সেই লোকটা! কিন্তু লোকটাকে তো এখন একটুও ক্লান্ত বলে মনে হচ্ছে না মা!’
আমার মাও তখন এক দৃষ্টিতে লোকটিকেই দেখছিল। আমরা অবাক হয়ে দেখলাম, দ্রুত গতিতে রাস্তা পার হয়ে সে সুড়ুৎ করে ডান দিকের গলিতে ঢুকে পড়ল। আমি আবার বললাম, ‘সে কোনো ট্যাক্সি ধরবে বলেও তো মনে হচ্ছে না!’
মা’র চোখের দৃষ্টি সুচারু হয়ে এসেছে। চোয়াল শক্ত। গম্ভীর মুখে বলল, ‘সে কিছু একটা ধরার জন্য যাচ্ছে। কী সেটা? জানতে হবে আমাকে। চল!’
এই বলে মা আমার কনুই খামচি মেরে ধরে তার সাথে নিয়ে চলল। আমি ভয়ার্ত মুখে বললাম, ‘মা, আমরা কোথায় যাচ্ছি?’
‘ঐ লোকটা কোথায় যাচ্ছে সেটা জানতে। জানতে আমাকে হবেই। সে আমাকে মিথ্যে বলেছে!’

লোকটা আমাদের থেকে মাত্র বিশ গজের মতো সামনে। পেছনে ফিরলেই আমাদের দেখতে পাবে। বৃষ্টির বেগ আরো বেড়েছে। লোকটার কোট ভিজে গেছে বৃষ্টিতে। টুপি থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে। সে একেবারে নির্বিকার। আর আমরা তার সিল্কের ছাতার নিচে একেবারে শুকনো হয়ে পথ চলছি।

লোকটি ঠিক যেন খরগোশের গতিতে লাফিয়ে লাফিয়ে চলেছে। তার গতির সাথে তাল রেখে চলতে রীতিমত বেগ পেতে হচ্ছে আমাদের। একবার ডানে একবার বাঁয়ে... এঁকেবেঁকে চলতে লাগল সে।

আমি আবারো ভয়ে ভয়ে বললাম, ‘মা, যদি আমাদের দেখে ফেলে?’
‘ফেললে ফেলুক! আমি ছাড়ব না ব্যাটাকে। আমার সাথে মামদোবাজি! দেখ তো, কোথায় গেল?’
‘ওই যে ওই রেস্টুরেন্টের ভেতরে ঢুকেছে।’
‘রেস্টুরেন্ট না, পাব!’ মা বিড়বিড় করে বলল।
আমি আবার বললাম, ‘আমরা কি ভেতরে ঢুকবো মা?’
‘নাহ্‌, আমরা কাচের জানালা দিয়ে দেখব ব্যাটা কী করে!’

আমরা দেখতে লাগলাম। ভেতরে একটু ধোঁয়াশা থাকলেও সবকিছু পরিষ্কারই বোঝা যাচ্ছিল। লোকটা তার কোট আর হ্যাট খুলে এসে বসেছে। তারপরে বেয়ারাকে ডেকে কিছু একটার অর্ডার দিলো সে। কিছুক্ষণ পরেই বড় এক গ্লাস পানীয় নিয়ে বেয়ারা এসে দাঁড়াল। বিশাল এক গ্লাস ভর্তি সোনালী পানীয়। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘গ্লাসে কী মা?’
‘মনে হচ্ছে হুইস্কি!’

মাত্র কিছুক্ষণের মধ্যে লোকটা ঢকঢক করে পুরো হুইস্কি তার পেটে চালান করে দিলো।
তারপরে তৃপ্তির একটা ঢেঁকুর তুলে তার সাদা মোচের এককোণে জিহবা ঠেকিয়ে চেটে নিলো হুইস্কির শেষ বিন্দুটুকু। কেমন একটা সুখী সুখী ভাব ফুটে উঠেছে লোকটার চোখে মুখে।

বেয়ারা ফিরে আসতেই পকেট থেকে একশো টাকার নোটটা বের করে সামনে রাখল। সেই একশো টাকা!

মা অবাক হয়ে বলল, ‘লোকটা কি পাগল? এই এক গ্লাস হুইস্কির জন্য পাঁচশো টাকার একটা সিল্কের ছাতাকে এত সস্তায় দিয়ে দিলো! তাও আবার এক চুমুকেই শেষ হয়ে গেল!’
আমিও বললাম, ‘লোকটা নির্ঘাৎ পাগল!’

বৃদ্ধ লোকটি উঠে দাঁড়ালো। দরজার পাশে ঝুলিয়ে রাখা হ্যাঙ্গার থেকে তার টুপি আর কোটটাকে তুলে নিলো। তারপরে...খুবই সহজ আর ক্যাজুয়াল ভঙ্গিতে ঝুলে থাকা বেশ কয়েকটি ভেজা ছাতার মধ্য থেকে একটাকে তুলে নিলো। এমনভাবে... যেন সেটা তার নিজেরই!
মা সাথে সাথে বলে উঠলো, ‘দেখলি? দেখলি? কী করল লোকটা?’
আমি হাঁ করে সেটাই দেখছিলাম। লোকটা পাব থেকে বের হয়ে আসতেই আমরা ছাতাটাকে নিচু করে আমাদের মাথাদুটোকে লুকিয়ে ফেললাম, যাতে লোকটার নজরে না পড়ে।

লোকটা ছাতা হাতে বেরিয়ে গেল, ঠিক যেদিক থেকে সে এসেছিল।
মা হাঁ হয়ে থাকা মুখ বন্ধ করে বলল, ‘ওহ্‌! এই তাহলে খেলা!’
আমি এবার অন্য ভয় পেলাম। বললাম, ‘মা, এই ছাতাটার মালিক যদি দেখে ফেলে যে, আমরা তার ছাতা মাথায় দাঁড়িয়ে আছি... তাহলে কী হবে?’
মা’র মুখ সাথে সাথে পাংশু হয়ে গেল। তাড়াতাড়ি বলে উঠল, ‘চল চল...চল এখান থেকে। তাড়াতাড়ি বাসায় যাই...’

(রোল্ড দালের ‘দ্য আমব্রেলা ম্যান’ গল্পের ছায়া অবলম্বনে)

অলঙ্করণ শতাব্দী জাহিদ

   

বরাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলন: পূর্ণ স্বীকৃতি কতদূর?



প্রদীপ কুমার দত্ত
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আমরা বাংলাদেশে ভাষা আন্দোলন বলতেই বুঝি বৃটিশ শাসন পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানে ১৯৪৮-এ শুরু হওয়া এবং বায়ান্নর অমর ভাষা শহীদদের আত্মদানের মাধ্যমে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে। একুশে ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর ভাষা আন্দোলনের জন্য একটি দিক নির্দেশক দিন। সেই আন্দোলনের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয় পূর্ব বাংলার বাঙ্গালীরা। পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে দানা বাঁধে স্বাধিকার অর্জনের আন্দোলন। বহু আন্দোলন, সংগ্রাম ও সর্বোপরি মহান মুক্তিযুদ্ধের অবর্ণনীয় কষ্ট আর সমুদ্রসম আত্মত্যাগ এবং অসীম বীরত্বের ফলশ্রুতিতে আমরা পাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

এর বহু পরে, বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে, বাংলাদেশী কানাডা প্রবাসী রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম এর নেতৃত্বে পৃথবীর বিভিন্ন ভাষাভাষীদের নিয়ে মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ লাভার্স অফ দি ওয়ার্ল্ড গঠিত হয় কানাডার ভ্যাংকুভারে। এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ ও নিরলস প্রচেষ্টা এবং বাংলাদেশ সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় দিনটি বিশ্বসভায় আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত। এই দিনের জাতিসংঘ ঘোষিত অঙ্গিকার বিশ্বের প্রতিটি ভাষাকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করা এবং বিদ্যমান প্রায় ৭০০০ ভাষার একটিকে ও আর হারিয়ে যেতে না দেয়া। ইতিমধ্যে আধিপত্যবাদের কারণে ও সচেতন মহলের সচেতনতার অভাবে বহু ভাষা, সাথে সাথে তাদের সংস্কৃতি, পুরাতত্ত্ব ও ইতিহাস পৃথিবীর বুক থেকে মুছে গেছে।

কাজেই আমাদের বুঝতে হবে, ভাষা আন্দোলনের স্বর্ণখচিত ইতিহাস ও সাফল্যের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও কেবলমাত্র বাংলাদেশের ((তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের) বাঙ্গালীরাই ভাষার জন্য সংগ্রাম করা ও প্রাণ দেয়া একমাত্র জাতিগোষ্ঠী নই। অর্ধ সহস্রাব্দের আগে স্পেনীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দক্ষিণ আমেরিকার মায়া,আজটেক,ইনকা নামের তৎকালীন উন্নত সভ্যতার জাতিসমূহকে জেনোসাইডের মাধ্যমে ধ্বংস করে দিয়েছে।প্রতি মায়া লোকালয়ে একটি করে পাঠাগার ছিল। এইরকম দশ হাজার লোকালয়ের পাঠাগারের সব বই তারা ধ্বংস করে দেয়। আজকের দিনে মাত্র আদি মায়া ভাষার তিনখানা বই (মেক্সিকো সিটি,মাদ্রিদ ও ড্রেসডেনে) সংরক্ষিত আছে। যুদ্ধ করেও মায়ানরা পাঠাগারগুলো বাঁচাতে পারেন নি। সাথ সাথে ক্রমে ধ্বংস হয়ে যায় তাঁদের সংস্কৃতি ও জাতিসত্তা।

বাংলাভাষী জনগণের ভাষার মর্যাদা রক্ষায় উল্লেখ্যোগ্য অবদান রয়েছে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির সাঁওতাল পরগণার অন্তর্গত মানভূমের বাঙ্গালীদের। বহু বছর সংগ্রাম,রক্ত ও জীবনের মূল্যে তাঁরা তাঁদের দাবি অনেকটা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এরপর বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় আন্দোলনের সূচনা আসামের কাছাড়ে।বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দেয়া প্রথম মহিলা শহীদ কমলা ভট্টাচার্য সহ এগার তরুন প্রাণ ঝড়ে পড়েছে এই আন্দোলনে।

১৯৬১-তে আসামের বরাক উপত্যকার বাঙালি জনগণ তাদের মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আন্দোলনে শামিল হয়। যদিও বরাকের সিংহভাগ জনগণ বাংলা ভাষায় কথা বলেন,তবুও ১৯৬১-তে অহমিয়াকে আসামের একমাত্র রাজ্যভাষা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। ফুসে ওঠেন বরাকের বাঙ্গালীরা।বাংলাভাষা বরাক উপত্যকার অন্যতম সরকারি ভাষার মর্যাদা পায়।

মানভূম ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস দীর্ঘ। সাঁওতাল পরগণার মানভূম জেলা বাঙালি অধ্যুষিত হলেও তা দীর্ঘকাল বিহারের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ভারতের স্বাধীনতার পর সেখানে হিন্দি প্রচলনের কড়াকড়িতে বাংলা ভাষাভাষীরা চাপের মুখে পড়েন। মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাঁরা। ১৯৪৮ থেকে দীর্ঘ আট বছর চলা এই আন্দোলনের সাফল্যে ১৯৫৬ এর ১ নভেম্বর মানভূমের বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয় পুরুলিয়া জেলা। বিহার থেকে নিয়ে পুরুলিয়াকে যুক্ত করা হয় পশ্চিমবঙ্গের সাথে। তাঁদের মাতৃভাষা বাংলা ব্যবহারের দ্বার উন্মুক্ত হয় তাঁদের সামনে।

এবারে আবার ফিরি ১৯ মে'র ইতিহাসে। আসামের বরাক উপত্যকা আদিকাল থেকেই বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল। একসময় এই এলাকার অধিকাংশ ডিমাসা জনগোষ্ঠীর কাছাড় রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ডিমাসা রাজন্যবর্গ ও বাংলাভাষার পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। কালক্রমে ব্রিটিশরা ভারত বিভাগ করে চলে গেলে আসাম প্রদেশের একাংশ সিলেট পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হয়। সিলেটের একাংশ ও ডিমাসা পার্বত্য ও সমতল অঞ্চল নিয়ে কাছাড় জেলা গঠিত হয়। এই জেলা বর্তমানে বিভক্ত হয়ে কাছাড়,হাইলাকান্দি,করিমগঞ্জ ও উত্তর কাছাড় পার্বত্য জেলা (ডিমা হাসাও)এই চার নতুন জেলায় রূপ নিয়েছে।

১৯৪৭ এ দেশবিভাগের পর থেকেই বরাক উপত্যকার কাছাড় জেলার অধিবাসীরা বৈষম্যের শিকার হতে থাকেন। আসাম অহমিয়াদের জন্য এবং বাঙ্গালীরা সেখানে বহিরাগত এমন বক্তব্য ও ওঠে। এখনও সেই প্রবণতা বিদ্যমান। জাতীয়তাবাদের জোয়ারে এক শ্রেণির রাজনীতিবিদরাও গা ভাসান। বঙ্গাল খেদা আন্দোলনও গড়ে ওঠে একসময়ে। সরকারিভাবে সেসব আন্দোলন ও সহিংসতা দমন হলেও পরবর্তী কালে সময়ে সময়ে এই জাতীয় সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে থাকে।

আসাম রাজ্য বিধান সভায় ভারতের স্বাধীনতার পর পর সদস্যরা বাংলা, হিন্দি বা ইংরেজিতে বক্তব্য রাখতে পারতেন।প্রথম আঘাত এলো ভাষার উপর। অহমিয়াকে একমাত্র রাজ্যভাষা ঘোষণা, শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে চালুর চেষ্টা এবং বিধানসভায় বাংলায় বক্তব্য রাখার অধিকার ক্ষুণ্ণ করে আইন চালুর বিরুদ্ধে আসামের বাঙ্গালী জনগণ দল-মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। আসাম রাজ্য সরকার কোনও গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথে গেলেন না। তাঁরা অহমিয়া জাতীয়তাবাদ এর সংকীর্ণ মানসিকতার নেতাদের প্রাধান্য দেয়ার নীতি গ্রহণ করেন। বাঙ্গালীরাও সংগঠিত হতে থাকেন।

অনুমান করা যায় আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বাহান্নর ঢাকার ভাষা আন্দোলন ও মানভূমের ভাষা আন্দোলনের সাফল্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।১৯৬০ সালের শেষে আসাম বিধান সভায় ভাষা বিল পাশ হয়। কফিনে শেষ পেরেক ঠোকা হয়ে গেলো। বাঙ্গালীরা ফুঁসে উঠলেন। লাগাতার আন্দোলন চলতে থাকলো।সত্যাগ্রহ,অসহযোগ, হরতাল, রেল রোখো,সংকল্প দিবস, ইত্যাকার অহিংস আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠল বরাক উপত্যকা। এই আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৬১ সালের ১৯মে তারিখে বরাকের কেন্দ্রবিন্দু শিলচরের রেলস্টেশনে ভোর থেকে আন্দোলনকারী সত্যাগ্রহীরা জড়ো হয়। হাজার হাজার ছাত্র যুবা জনতা রেলস্টেশন প্রাঙ্গন ও রেললাইনের উপর অবস্থান নেয়। তাঁদের সরাতে না পেরে সরকার নির্মম দমননীতির আশ্রয় নেয়। পুলিশ বাহিনী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ শুরু করে। নিহত হন পৃথিবীর প্রথম মহিলা ভাষা শহীদ কমলা ভট্টাচার্য সহ মোট ১১ জন ছাত্র যুবা। তাঁরাই একাদশ ভাষা শহীদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

তাঁদের আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষা দ্বিতীয় রাজ্যভাষার মর্যাদা পায়। শিলচর রেলস্টেশনের সামনে স্থাপিত হয় শহীদদের প্রতিকৃতি সম্বলিত শহীদ মিনার। যার পথ ধরে পরবর্তী কালে ছড়িয়ে পড়ে একই আকৃতির শহীদ মিনার সমগ্র বরাক উপত্যকায়। শিলচর রেলস্টেশনের নাম পাল্টে জনতা ভাষা শহীদ রেল স্টশন নাম রেখেছেন। যদিও পূর্ণ সরকারি স্বীকৃতি এখনও তার মেলেনি।

বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় একাদশ শহীদ সহ আন্দোলনকারীদের আত্মত্যাগ ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে। কিন্তু সব এলাকার বাঙ্গালিরা কি এই ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখেন? উত্তরটি ‘না’ সূচক। আমাদের কর্তব্য তাঁদের আত্মত্যাগের কাহিনী সকলকে জানানোর উদ্যোগ নেয়া যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম তাঁদের সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হতে শেখে। বরাক উপত্যকার একাদশ ভাষা শহীদ অমর রহে। বাংলা সহ সকল মাতৃভাষার অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত থাকুক।

এখনও সেই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন এমন অনেকেই বেঁচে আছেন। বেঁচে আছেন নেতৃত্ব দেয়াদের মধ্যে অনেকে। সাথে সাথে প্রত্যক্ষদর্শীদের ও সন্ধান পাওয়া এখনও কষ্টকর নয়। তবে সামনের সিকি শতাব্দীর মধ্যে প্রাকৃতিক নিয়মেই তাঁরা আর আমাদের মাঝে থাকবেন না। এখনই প্রকৃষ্ট সময় তাঁদের সাক্ষাৎকার রেকর্ড করে রাখার। পর্যাপ্ত গবেষণা হওয়া প্রয়োজন সেই আন্দোলন,তার কুশীলব এবং শহীদ পরিবার সমূহের বিষয়ে। বীরের সন্মান উপযুক্ত ভাবে হওয়া প্রয়োজন। বাংলা ভাষার এবং বাংলা ভাষাভাষী জনগণের মর্যাদা বিশ্বব্যাপী সমুন্নত রাখার জন্য আমাদের এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আরও অনেক বীরের আমাদের প্রয়োজন। যে মাটিতে বীরের যথাযোগ্য সন্মান নেই, সে মাটিতে বীর জন্মায় না।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও পরিব্রাজক

;

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;