ব্রাসেলসের মরোক্কান পল্লী



মঈনুস সুলতান

  • Font increase
  • Font Decrease

ব্রাসেলসের টাউন হলের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে গ্র্যান্ড প্লেসের ফ্লোরাল কার্পেট ঘিরে ঘুরপাক করনেওয়ালা পর্যটকদের উল্লাস দেখতে বেশ ভালোই লাগে। টাউন হলে আমি এসেছি আমার জানপহচান সুহৃদ লুকাস ও তার গার্লফ্রেন্ড এঞ্জেলিকের সাথে। আজ ভোরবিহানে ব্রাসেলসে আমি বেড়াতে এসেছি ইবোলা উপদ্রুত সিয়েরা লেওন থেকে। মাস সাতেক আগে লুকাস ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসাবে সিয়েরা লেওনে আসে জনমানুষের জিন্দেগিতে ইবোলার কারণে সৃষ্ট দুঃখকষ্টের খতিয়ান সংগ্রহ করতে। তখন আমার সাথে তার দোস্তির সূত্রপাত। তার মারফতে এঞ্জেলিকের সাথে আমার বার কয়েক স্কাইপে কথাবার্তা হয়েছে। কিন্তু মেয়েটির সাথে সাক্ষাত দেখা হলো কেবলমাত্র আজ। আমি প্যারিস যাওয়ার পথে একরাত্রির জন্য ব্রাসেলসে থেমেছি। এঞ্জেলিক আমাকে তার এপার্টমেন্টে সোফাবেডে শুয়ে রাত কাটানোর আমন্ত্রণ জানিয়েছে।

একটু আগে আমরা টাউন হলের সিঁড়ি বেয়ে নেমে এসেছি দিন শেষ হয়ে আসলেও গ্র্যান্ড প্লেসের সর্বত্র মোলায়েম আলো খেলছে। এখানকার চত্তর জুড়ে হাজারবিজার তরতাঁজা ফুল দিয়ে একটু আগে তৈরি হয়েছে একটি ফ্লোরাল কার্পেট। তাতে ভলানটিয়ার হিসাবে কাজ করেছে এঞ্জেলিক। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে লুকাসের সাথে তার সম্পর্কে ধরেছে বেহদ চিড়। সিয়েরা লেওন থেকে ফিরে এসে লুকাস হিন্দুস্থানী এক গুরুদেবের কাছে সেলিবাসি বা সেক্স পরিহারের দীক্ষা নিয়েছে। সে হামেশা সকাল-সন্ধ্যা হরেক কিসিমের মেডিটেশন করে বেড়াচ্ছে। বিষয়টা এঞ্জেলিক একসেপ্ট করছে না। তাতে আমাদের সমবেথ মিথস্ক্রিয়ায় ছড়াচ্ছে টেনশন। লুকাসের আচরণে আমিও তাজ্জব হচ্ছি। ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতার উপার্জনে তার চলছে না। সুতরাং সে নাইটগার্ডের পার্টটাইম চাকরি নিয়েছে। এবং তাতে হাজিরা দেওয়ার আগে সে শহরের সেমিটারি বা গোরস্থানে বসে শবাসন করে সময় কাটাচ্ছে। সঙ্গত কারণে তার তাবৎ বিষয়াদি আমার কাছে আজব ঠেকছে।

/uploads/files/6tDrJKzPIvCCvvdwz0MhrWk5P48RWfCYlZ0b7iRT.jpegমলেনবেকের সড়কে হেজাব পরা নারী 

টানা চারঘণ্টা খুব কনসেনট্রেটেড্‌ভাবে ফ্লোরাল কার্পেট তৈরিতে মেহনত করে এঞ্জেলিক ক্লান্ত। তার খিদে পেয়েছে। সে ডিনার না করে এপার্টমেন্টে ফিরতে চায় না। যেহেতু তার ডেরাতে রাত কাটাতে যাচ্ছি তাই সৌজন্যবশত আমি লুকাস ও তাকে ডিনারে নিয়ে যেতে চাই। মরোক্কান রেস্টুরেন্টের প্রস্তাব করলে এঞ্জেলিক প্রাচ্যদেশীয় খাবারের মশলাদার খোশবুর কথা ভেবে এক্সাইটেড হয়। গ্র্যান্ড প্লেসের মিনিট তিরিশেকের হাঁটা দূরত্বে আছে ব্রাসেলসের মরোক্কান পল্লী মলেনবেক। ওদিকে যাওয়ার ডিরেকশন মৌখিকভাবে দিয়ে লুকাস কেটে পড়তে চাইলে—এঞ্জেলিক অনুনাসিক স্বরে আবদার করে, ‘কাম-অন ম্যান, বেচারা সুলতান কতদূর সিয়েরা লেওন থেকে এসেছে, লেটস্ হ্যাভ অ্যা মিল টুগেদার।’ লুকাস মিনিমিনিয়ে কী যেন একটা অজুহাত দিতে গেলে আমিও তাকে অনুরোধ করি, ‘ইউ রোউট এন ইনফরমেটিভ আর্টিকেল এবাউট মরোক্কানস্ লিভিং ইন মলেনবেক। মূলত তোমার প্রবন্ধ পড়ে আমি ব্রাসেলসে মরোক্কান পল্লীটি দেখতে আগ্রহী হয়েছি লুকাস। সো প্লিজ টেইক আস টু মলেনবেক।’ অনিচ্ছায় পথ দেখিয়ে আমাদের সামনে খুব নিরাসক্তভাবে হাঁটে লুকাস। এঞ্জেলিক আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বলে, ‘সিয়ারা লেওন থেকে ফিরে আসার পর থেকে সে এ রকমের মুডি আচরণ করতে শুরু করেছে।’ আমি কোনো জবাব না দিয়ে চোখের ইশারায় এঞ্জেলিককে বলতে চাই—লুকাসের উপস্থিতিতে আমি তার সাথে এ ধরনের সেনসেটিভ কথাবার্তায় এনগেইজড্ হতে চাই না। সে ঠোঁট বেঁকিয়ে অবজ্ঞা করার ফেমিনিন ভঙ্গি করে।

গ্র্যান্ড প্লেস ছাড়িয়ে একটি ব্লক অতিক্রম করতেই দেখি মধ্যবৃত্তদের এক সাদামাটা আবাসিক এলাকার পার্কিং লট জুড়ে বাজছে মস্ত মস্ত সাউন্ড বক্সে স্টিরিও। মন চনমন করা সুরেতালে নাগরিকরা মেতেছে নৃত্যে। অবস্থা দেখে মনে হয়, সারা ব্রাসেলস্ আজ মেতেছে ফ্লোরাল কার্পেট নির্মাণের আনন্দে। জোড়ায় জোড়ায় যুগলরা স্টেপ ফেলে ছন্দিত দেহে নিমজ্জিত হয়েছে সোয়িং ড্যান্সের রিদমিক আবহে। এঞ্জেলিক দাঁড়িয়ে পড়ে কোমরের ঊর্মি ছড়িয়ে নীরবে জানতে চায়—যুগল ডান্সে কারো আগ্রহ আছে কি না? ‘আই ডোন্ট রিয়েলি হ্যাভ মাচ্ টাইম, ডিনার সেরেই... আই রিয়েলি হ্যাভ টু রান,’ বলে এঞ্জেলিকের দেহমনে জ্বলে ওঠা নৃত্যপ্রবণ শিখাতে পানি ঢেলে দেয় লুকাস। তার নিরাসক্ত আচরণে স্যাফয়ার পাথরে আলো পড়ার মতো এঞ্জেলিকের নীল চোখ থেকে ঠিকরে বেরোয় ক্রোধ ও হতাশা মেশানো দ্যুতি।

/uploads/files/oexbK1qO9ynm1RSrq7xiDXVwOlwMejaLyf4kbGR1.jpegনাগরিকরা মেতেছে নৃত্যে

লুকাস আগ বাড়তে বাড়তে বলে, ‘আমরা এবার মরোক্কান পল্লী মলেনবেকে ঢুকতে যাচ্ছি। ব্রাসেলসে লক্ষাধিক মরোক্কানদের বাস। টু বি স্পেসিফিক, ২০০৭ সালে নেওয়া আদমশুমারীতে নাম ওঠে দুই লাখ চৌষট্টি হাজার মরোক্কান বংশোদ্ভূত মানুষের। এদের অনেকেই জন্ম হয়েছে বেলজিয়ামে।’ আমরা চলে আসি মলেনবেকের একটি সড়কে। রাস্তায় প্রচুর হেজাব পরা নারী দেখে এঞ্জেলিক মন্তব্য করে, ‘সিমস্ লাইক উই আর ওয়াকিং থ্রু অ্যা স্ট্রিট অব মিডিলইস্ট।’ আমারও মনে হতে থাকে আমরা যেন চলে এসেছি মুসলিম প্রধান কোনো দেশে। হাঁটতে হাঁটতে শুনি পথচারীদের আইফোনে বাজছে মাগরিবের আজানের ধ্বনি। আমাদের ঠিক সামনে সড়ক অতিক্রম করছে একটি মরোক্কান পরিবার। দাড়িওয়ালা পুরুষ ঠেলছে খালি স্ট্রলার। পিছনে শিশুর হাত ধরে হাঁটছে খয়েরি রঙের বোর্কা পরা নারী।

স্ট্রিটের দুপাশে পর পর কয়েকটি মরোক্কান রেস্তোরাঁ। আমাদের কেউ একজন যেন দাঁতের ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছি, আর লুকাস অনুগ্রহ করে অনিচ্ছায় আমাদের নিয়ে এসেছে ডেন্টিস্টের চেম্বারে, এ রকম ভঙ্গিতে সে আমাদের নিয়ে ঢুকে পড়ে একটি রেস্তোরাঁয়। ক্যানোপির চঁদোয়া তলে সাজিয়ে রাখা অনেকগুলো বেতের সোফা। কাবাবের সুরভি নাকে লাগতেই বাতাসে এরোমা শুঁকে এঞ্জেলিক বলে, ‘লেটস্ হ্যাভ গুড টাইম উইথ ওরিয়েন্টাল ফুড।’ দেখি বেতের সোফায় খুব রিলাক্সড্ কায়দায় বসে এক মরোক্কান প্রৌঢ় কাপোল শিশা হুঁকায় ধূমপান করছেন। স্যুট পরা আরব বংশোদ্ভূত সুদর্শন পুরুষের চুল পেকে সম্পূর্ণ রুপালি। তার সঙ্গী সম্ভবত কঙ্গোলীজ কোনো গোত্রের এক কৃষ্ণাঙ্গী মহিলা। আমাদের দেখতে পেয়ে তারা দুজনে মাথা মৃদু ঝুঁকিয়ে বাও করেন। রেস্তোরাঁর ভেতর সম্পূর্ণ নির্জন। এঞ্জেলিক খুব উৎসাহ নিয়ে ম্যানুতে খাবারের ছবি দেখে। স্টার্টার হিসাবে চট জলদি পরিবেশন করা হয় সাত ধরনের সিদ্ধ করা সব্জিতে তৈরি স্যালাদের সাথে গরম গরম রুটি। বেশ তারিয়ে তারিয়ে আমরা স্টার্টার চাখি। মেইন কোর্স হিসাবে এঞ্জেলিক ফিস চারমৌলা বলে গ্রিল করা মাছের সাথে কুসকুসের অর্ডার করে। আমি সবুজ অলিভের সাথে চাকতি করে কাটা লেবু মেশানো তাজিন পদ্ধতিতে রান্না করা চিকেনের কথা ভাবি। এঞ্জেলিক ফিসফিসিয়ে বলে—মেইন কোর্সের পর আমি কিন্তু হেভি একটা ডেজার্ট নিচ্ছি। আমার চাই সিনেমন মেশানো তিন তিনটি বাকলোবা। তার চোখেমুখে খেলছে এক ধরনের চটুল অভিব্যক্তি। আন্দাজ করি—ফ্লোরাল কার্পেট বুনটের জটিল কাজ সুন্দর মতো সমাপ্ত হওয়ায় সে সেলিব্রেশনের মুডে আছে। আমি বিষয়টা টুঁইয়ে দেয়ার জন্য, ‘হাউ এবাউট অ্যা এরোমেটিক শিশা আফটার দ্যা মিল?’ বললে সে উচ্ছ্বসিত হয়ে আমার কব্জি চেপে ধরে বলে, ‘লেটস্ গো ফর আ ওয়ার্ম স্মোক।’ আমাদের হাল্কা মুডের মিথস্ক্রিয়া বোধ করি লুকাসের পছন্দ হয় না। সে হুমাস ও রুটির ভেজিটারিয়ান কোর্স টেক-আউট হিসাবে প্যাকেট করে দিতে বলে। স্টাইরোফোমের প্যাকেট হাতে আসতেই সে—‘হ্যাভ অ্যা ফেবুলাস ইভিনিং.. .. ইউ টু,’ বলে কবরখানায় শবাসনের ক্রিয়াকলাপে যাতে দেরি না হয় এ অজুহাত দিয়ে উঠে পড়ে। লুকাস চৌকাঠ অতিক্রম করে রেস্তোরাঁর বাইরে যেতেই এঞ্জেলিক বিষণ্ণ চোখে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে, ‘লেট হিম স্ক্রু হিমসেল্ফ ইন দ্যা গ্রেভইয়ার্ড, আমি চাই না তার মুডের জন্য আমাদের সন্ধ্যাটা রুয়িন্ড হোক।’ আমি তার চোখের ভাষা পড়ে নিয়ে বাড়িয়ে দেওয়া হাত মুঠো করে ধরে একটু পর তা আলতো করে ঠোঁটে ছোঁয়াই। সাথে সাথে এঞ্জেলিকের গণ্ডদেশ ভরে ওঠে গোধূলির রক্তিমাভায়।

/uploads/files/LdPV8CYH7Yg86Kkt4CLZcnK20vE6L7Y3ny9Cr734.jpegশিশা হুঁকায় ধূমপান

নিরিবিলিতে আমরা খাবারের স্বাদ চাখি। গ্রিল করা ফিস চারমৌলা খেতে খেতে মাঝে মাঝে চোখের ঘন পাপড়ি তুলে আমার দিকে তাকাচ্ছে এঞ্জেলিক। মনে হয় তার মনে জমছে কিছু কথা কিংবা কৌতূহল, কিন্তু কিভাবে বিষয়টা পাড়বে ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। অলিভ মেশানো চিকেনের স্বাদ চমৎকার, তা তারিয়ে খেতে খেতে অনুভব করি শরীরে হঠাৎ করে জ্বর আসার মতো তার চমৎকার দেহবল্লরীর প্রতি আমার মধ্যে তৈরি হচ্ছে এক ধরনের আকর্ষণ। লুকাস আমার খুব কাছের লোক, ইবোলাক্রান্ত সিয়েরা লেওনের কঠিন দিনগুলোতে তার সাথে আন্তরিকভাবে মিথস্ক্রিয়ায় লিপ্ত হয়েছি, তার সাথে এঞ্জেলিকের সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে ভেঙে যাওয়ার আগে তার গার্লফ্রেন্ডের শরীর নিয়ে ভাবা আপত্তিকর মনে হয়। তাই, মেয়েটির কাঁধের নিচে ভি শেইপের নিরাবরণ ত্বকে ছড়াচ্ছে লাবণ্যের যে জোছনা—তা থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে আমি বাকলভা ও মিন্ট টি’র অর্ডার করি। খানিক পর পরিবেশিত হয় শিশা হুঁকা। তার চিলিম থেকে ছড়াচ্ছে এপ্রিকটের ফ্লেভার মেশানো তামাকের সৌরভ। চায়ে চুমুক দিয়ে শিশায় দম দিতে গেলে দেখি—কেন জানি অবাক হয়ে এঞ্জেলিক আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

আর ঠিক তখনই রোস্তোরাঁর জানালা জুড়ে বেজে ওঠে নানা ধরনের বাদ্য-বাজনা। খোলা শার্সি দিয়ে দেখি—ওখানে এসে দাঁড়িয়েছে জরির জবরজং পোশাক ও লাল রঙের ট্যাসেল ঝোলানো টুপি মাথায় স্ট্রিট সিংগারদের ছোট্ট একটি দল। তার খুব জোশে বাজায়—‘ওয়া লাললা ফাতেমা/ জার রাব্বি গির কালিমা..।’ এঞ্জেলিক আমার হাত থেকে হুঁকার নল সরিয়ে নিয়ে জানতে চায়, ‘টেল মি দ্যা মিনিং অব দিস সঙ।’ জবাবে আমি বলি, ‘আই ডোন্ট রিয়েলি নো, রেস্তোরাঁর ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করো।’ সে এবার আমার চিবুক ছুঁয়ে আবদার করে, ‘আই নো ইউ আর অ্যা মুসলিম, ইউ মাস্ট নো দ্যা মিনিং, আমাকে গানের অর্থটা বলবে না।’ আমি তার হাত মুঠো করে ধরে উঠে দাঁড়ালে—সেও আমার শরীর সংলগ্ন হয়ে হেঁটে আসে জানালায়। স্ট্রিট সিংগারদের থালায় আমরা দুজনে দরাজ হাতে ইউরোর কিছু কয়েন ছুঁড়ে দেই। খুশি হয়ে কেবলমাত্র আমাদের দুজনের জন্য এক বাদক বাঁশরীতে বিশেষ টিউন বাজায়। তন্ময় হয়ে শুনতে গিয়ে খেয়াল করি—আমার হাত আলতো করে পেঁচিয়ে আছে এঞ্জেলিকের কোমর।

/uploads/files/WJDgSvOHmHrZKQ7TzMDWwPMxXKbY9DlaqoAj2Ovl.jpegস্ট্রিট সিংগারদের ছোট্ট দল 

সাবওয়ে ধরে আন্ডারগ্রাউন্ডের দুটি স্টেশন পাড়ি দিয়ে আমরা চলে আসি এঞ্জেলিকের এপার্টমেন্টের কাছাকাছি। স্টেশনের পাশেই ফুটপাত থেকে সামান্য দূরে পার্ক করে রাখা তার মিনিয়েচার মডেলের ইলেকট্রিক কার। কায়ক্লেশে কেবলমাত্র দুজনের বসার উপযোগী গাড়িটিকে কিউট দেখায়। আমি ব্যাকপ্যাক কোলে নিয়ে তার পাশে বসলে এঞ্জেলিক স্টিয়ারিং হুইলে হাত রেখে বিমর্ষ ভঙ্গিতে জানতে চায়, ‘ক্যান আই আস্ক ইউ ওয়ান স্ট্রেইট কোয়েশ্চন?’ আমি মাথা হেলিয়ে সম্মতি দিয়ে বলি, ‘প্লিজ গো এহেড।’ ব্লক হয়ে যাওয়া ওয়াটার টেপে হঠাৎ করে তোড়ে জল এসে যাওয়ার মতো আবেগ নিয়ে সে জানতে চায়, ‘হোয়াট হেপেনড্ টু লুকাস? সিয়েরা লেওনে সে কী করে সময় কাটিয়েছে? ডু ইউ নো হোয়াই হি লস্ট ইন্টারেস্ট ইন মি?’ আমি সরাসরি এ প্রশ্নের জবাব না দিলে সে মন্তব্য করে, ‘ইউ নো দ্যা হৌল থিং, বাট ইউ আর নট টেলিং মি দ্যা ট্রুথ। নিশ্চয়ই সে কারো সাথে জড়িয়েছে।’ কথা না বলে আমি নিশ্চুপ থাকলে সে আমার হাত মুঠো করে চেপে ধরে। তার করতল ছড়াচ্ছে শরীরে জ্বর আসার মতো উত্তাপ। সে আমার চোখে চোখ রেখে জানতে চায়, ‘বা’ গাল ও গলার এক পাশ পুড়ে যাওয়া ব্লন্ড চুলের নারীটি কে? টেল মি হু দ্যা হেল ইজ শি?’ বর্ণনা থেকে আমি চিনতে পারি এঞ্জেলিক লরা শেলক্রসের কথা বলছে। আমি জবাব দেই, ‘লরা সিয়েরা লেওনে ইবোলা রিকভারি প্রোগ্রামে কাজ করছে। এর আগে কয়েক বার সে ইরাকে ত্রাণ সরবরাহের কাজে যুক্ত ছিল। রোড-সাইড বোমার বিস্ফোরণে তার শরীরের বা’ দিকের বেশ খানিকটা ঝলসে গেছে।’ তারপর উল্টা জানতে চাই, ‘তুমি লরার কথা জানলে কিভাবে?’ এঞ্জেলিক জবাব দেয়, ‘লুকাসের আইফোনে আমি তার ছবি দেখেছি, নাউ টেল মি হোয়াট ইজ দ্যা স্টোরি উইথ লরা?’ আমি রেসপন্সে বলি, ‘অনেস্ট টু গড আই ডোন্ট নো, তবে লরা তার কটেজে নানা ধরনের মেডিটেশনের আয়োজন করে থাকে। শুনেছি লোকাস তার সাথে মেডিটেশন প্র্যকটিশ করত।’ এঞ্জেলিক এবার প্রশ্ন করে, ‘লরা কি হিপনোটিজমের চর্চা করে?’ আমি জবাব দিই, ‘ইয়েস, শুনেছি সম্মোহনের অনেক কলাকৌশল তার জানা আছে। ইবোলা দূরীকরণের কাজ করতে গিয়ে যারা স্ট্রেসড্ আউট হয়েছে, এদের কাউকে কাউকে লরা আত্মসম্মোহনের প্রসেস্ শিখিয়েছে যাতে তারা স্ট্রেস্ ম্যানেজ করতে পারে।’ এবার হিস্টিরিয়া রোগীর মতো ঝরঝরিয়ে কেঁদে এঞ্জেলিক বলে, ‘নাউ আই নো দ্যা ট্রুথ, দ্যাট বিচ্ লরা লুকাসকে হিপনোটাইজড্ করেছে, সে এখনো সম্মোহনের ঘোরের মাঝে আছে। দিস ইজ এবাউট সিক্স মান্থ, সে আমার দিকে ফিরেও তাকায়নি... আই অ্যাম শিওর কবরখানায় শবাসনে বসে সে লরার ধ্যান করছে। আই রিয়েলি হেইট হিজ মেডিটেশন এন্ড স্টুপিড সেলিবাসি বিজনেস।’

/uploads/files/OKXwJV6PnnZ1JgeOh6ryDUe3oMHo12kncCgpxpvp.jpegএঞ্জেলিকের ছোট্টমোট্ট ইলেকট্রিক কার

ব্যাকরোড ধরে গলিগুঁজির ভেতর দিয়ে ভ্রমর গুঞ্জনের মতো ধ্বনি তুলে ছোট্টমোট্ট ইলেকট্রিক কারটি মিনিট বিশেকের মাঝে চলে আসে এঞ্জেলিকের এপার্টমেন্টের কাছে। পার্ক করে গাড়ি থেকে নামতে গিয়ে সে আফসোস করে মন্তব্য করে, ‘লুকাস আবহাওয়া দূষণের কারণে পেট্রোল চালিত গাড়ি পছন্দ করে না। তাই খুব আগ্রহ নিয়ে বিদ্যুত-চালিত ছোট্ট এ গাড়িটি কিনেছিলাম। ভেবেছিলাম দেশে ফেরা লুকাসকে হোমকামিং হিসাবে সারপ্রাইজ দেবো। সে কিন্তু একদিন পাশে বসেও এ গাড়িটা ট্রাই করেনি। সিয়েরা লেওন থেকে ফিরে এয়ারপোর্টে আমার চুমো ফিরিয়ে না দিয়ে কোল্ড ভয়েসে জানাল যে, সে সেলিবাসির দীক্ষা নিয়েছে। আই গিভ অ্যা ড্যাম টু হিজ স্টুপিড সেলিবাসি।’ তারপর এপার্টমেন্টের দিকে হাঁটতে হাঁটতে আমার দিকে চেয়ে ফিক করে হেসে বলে, ‘আমি তো সেলিবাসির দীক্ষা নেইনি, কয়েক মাস তার জন্য অপেক্ষা করলাম, নাউ টেল মি হোয়াই শুড আই স্টার্ভ?’ আমিও হেসে হাল্কা মুডে জবাব দেই, ‘তোমার অনাহারে থাকার তেমন কোনো কারণ তো আমি দেখতে পাচ্ছি না।’

‘হিয়ার ইউ গো’, বলে এঞ্জেলিক এপার্টমেন্টের তালা খোলে।

   

বরাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলন: পূর্ণ স্বীকৃতি কতদূর?



প্রদীপ কুমার দত্ত
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আমরা বাংলাদেশে ভাষা আন্দোলন বলতেই বুঝি বৃটিশ শাসন পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানে ১৯৪৮-এ শুরু হওয়া এবং বায়ান্নর অমর ভাষা শহীদদের আত্মদানের মাধ্যমে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে। একুশে ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর ভাষা আন্দোলনের জন্য একটি দিক নির্দেশক দিন। সেই আন্দোলনের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয় পূর্ব বাংলার বাঙ্গালীরা। পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে দানা বাঁধে স্বাধিকার অর্জনের আন্দোলন। বহু আন্দোলন, সংগ্রাম ও সর্বোপরি মহান মুক্তিযুদ্ধের অবর্ণনীয় কষ্ট আর সমুদ্রসম আত্মত্যাগ এবং অসীম বীরত্বের ফলশ্রুতিতে আমরা পাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

এর বহু পরে, বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে, বাংলাদেশী কানাডা প্রবাসী রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম এর নেতৃত্বে পৃথবীর বিভিন্ন ভাষাভাষীদের নিয়ে মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ লাভার্স অফ দি ওয়ার্ল্ড গঠিত হয় কানাডার ভ্যাংকুভারে। এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ ও নিরলস প্রচেষ্টা এবং বাংলাদেশ সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় দিনটি বিশ্বসভায় আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত। এই দিনের জাতিসংঘ ঘোষিত অঙ্গিকার বিশ্বের প্রতিটি ভাষাকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করা এবং বিদ্যমান প্রায় ৭০০০ ভাষার একটিকে ও আর হারিয়ে যেতে না দেয়া। ইতিমধ্যে আধিপত্যবাদের কারণে ও সচেতন মহলের সচেতনতার অভাবে বহু ভাষা, সাথে সাথে তাদের সংস্কৃতি, পুরাতত্ত্ব ও ইতিহাস পৃথিবীর বুক থেকে মুছে গেছে।

কাজেই আমাদের বুঝতে হবে, ভাষা আন্দোলনের স্বর্ণখচিত ইতিহাস ও সাফল্যের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও কেবলমাত্র বাংলাদেশের ((তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের) বাঙ্গালীরাই ভাষার জন্য সংগ্রাম করা ও প্রাণ দেয়া একমাত্র জাতিগোষ্ঠী নই। অর্ধ সহস্রাব্দের আগে স্পেনীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দক্ষিণ আমেরিকার মায়া,আজটেক,ইনকা নামের তৎকালীন উন্নত সভ্যতার জাতিসমূহকে জেনোসাইডের মাধ্যমে ধ্বংস করে দিয়েছে।প্রতি মায়া লোকালয়ে একটি করে পাঠাগার ছিল। এইরকম দশ হাজার লোকালয়ের পাঠাগারের সব বই তারা ধ্বংস করে দেয়। আজকের দিনে মাত্র আদি মায়া ভাষার তিনখানা বই (মেক্সিকো সিটি,মাদ্রিদ ও ড্রেসডেনে) সংরক্ষিত আছে। যুদ্ধ করেও মায়ানরা পাঠাগারগুলো বাঁচাতে পারেন নি। সাথ সাথে ক্রমে ধ্বংস হয়ে যায় তাঁদের সংস্কৃতি ও জাতিসত্তা।

বাংলাভাষী জনগণের ভাষার মর্যাদা রক্ষায় উল্লেখ্যোগ্য অবদান রয়েছে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির সাঁওতাল পরগণার অন্তর্গত মানভূমের বাঙ্গালীদের। বহু বছর সংগ্রাম,রক্ত ও জীবনের মূল্যে তাঁরা তাঁদের দাবি অনেকটা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এরপর বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় আন্দোলনের সূচনা আসামের কাছাড়ে।বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দেয়া প্রথম মহিলা শহীদ কমলা ভট্টাচার্য সহ এগার তরুন প্রাণ ঝড়ে পড়েছে এই আন্দোলনে।

১৯৬১-তে আসামের বরাক উপত্যকার বাঙালি জনগণ তাদের মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আন্দোলনে শামিল হয়। যদিও বরাকের সিংহভাগ জনগণ বাংলা ভাষায় কথা বলেন,তবুও ১৯৬১-তে অহমিয়াকে আসামের একমাত্র রাজ্যভাষা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। ফুসে ওঠেন বরাকের বাঙ্গালীরা।বাংলাভাষা বরাক উপত্যকার অন্যতম সরকারি ভাষার মর্যাদা পায়।

মানভূম ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস দীর্ঘ। সাঁওতাল পরগণার মানভূম জেলা বাঙালি অধ্যুষিত হলেও তা দীর্ঘকাল বিহারের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ভারতের স্বাধীনতার পর সেখানে হিন্দি প্রচলনের কড়াকড়িতে বাংলা ভাষাভাষীরা চাপের মুখে পড়েন। মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাঁরা। ১৯৪৮ থেকে দীর্ঘ আট বছর চলা এই আন্দোলনের সাফল্যে ১৯৫৬ এর ১ নভেম্বর মানভূমের বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয় পুরুলিয়া জেলা। বিহার থেকে নিয়ে পুরুলিয়াকে যুক্ত করা হয় পশ্চিমবঙ্গের সাথে। তাঁদের মাতৃভাষা বাংলা ব্যবহারের দ্বার উন্মুক্ত হয় তাঁদের সামনে।

এবারে আবার ফিরি ১৯ মে'র ইতিহাসে। আসামের বরাক উপত্যকা আদিকাল থেকেই বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল। একসময় এই এলাকার অধিকাংশ ডিমাসা জনগোষ্ঠীর কাছাড় রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ডিমাসা রাজন্যবর্গ ও বাংলাভাষার পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। কালক্রমে ব্রিটিশরা ভারত বিভাগ করে চলে গেলে আসাম প্রদেশের একাংশ সিলেট পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হয়। সিলেটের একাংশ ও ডিমাসা পার্বত্য ও সমতল অঞ্চল নিয়ে কাছাড় জেলা গঠিত হয়। এই জেলা বর্তমানে বিভক্ত হয়ে কাছাড়,হাইলাকান্দি,করিমগঞ্জ ও উত্তর কাছাড় পার্বত্য জেলা (ডিমা হাসাও)এই চার নতুন জেলায় রূপ নিয়েছে।

১৯৪৭ এ দেশবিভাগের পর থেকেই বরাক উপত্যকার কাছাড় জেলার অধিবাসীরা বৈষম্যের শিকার হতে থাকেন। আসাম অহমিয়াদের জন্য এবং বাঙ্গালীরা সেখানে বহিরাগত এমন বক্তব্য ও ওঠে। এখনও সেই প্রবণতা বিদ্যমান। জাতীয়তাবাদের জোয়ারে এক শ্রেণির রাজনীতিবিদরাও গা ভাসান। বঙ্গাল খেদা আন্দোলনও গড়ে ওঠে একসময়ে। সরকারিভাবে সেসব আন্দোলন ও সহিংসতা দমন হলেও পরবর্তী কালে সময়ে সময়ে এই জাতীয় সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে থাকে।

আসাম রাজ্য বিধান সভায় ভারতের স্বাধীনতার পর পর সদস্যরা বাংলা, হিন্দি বা ইংরেজিতে বক্তব্য রাখতে পারতেন।প্রথম আঘাত এলো ভাষার উপর। অহমিয়াকে একমাত্র রাজ্যভাষা ঘোষণা, শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে চালুর চেষ্টা এবং বিধানসভায় বাংলায় বক্তব্য রাখার অধিকার ক্ষুণ্ণ করে আইন চালুর বিরুদ্ধে আসামের বাঙ্গালী জনগণ দল-মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। আসাম রাজ্য সরকার কোনও গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথে গেলেন না। তাঁরা অহমিয়া জাতীয়তাবাদ এর সংকীর্ণ মানসিকতার নেতাদের প্রাধান্য দেয়ার নীতি গ্রহণ করেন। বাঙ্গালীরাও সংগঠিত হতে থাকেন।

অনুমান করা যায় আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বাহান্নর ঢাকার ভাষা আন্দোলন ও মানভূমের ভাষা আন্দোলনের সাফল্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।১৯৬০ সালের শেষে আসাম বিধান সভায় ভাষা বিল পাশ হয়। কফিনে শেষ পেরেক ঠোকা হয়ে গেলো। বাঙ্গালীরা ফুঁসে উঠলেন। লাগাতার আন্দোলন চলতে থাকলো।সত্যাগ্রহ,অসহযোগ, হরতাল, রেল রোখো,সংকল্প দিবস, ইত্যাকার অহিংস আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠল বরাক উপত্যকা। এই আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৬১ সালের ১৯মে তারিখে বরাকের কেন্দ্রবিন্দু শিলচরের রেলস্টেশনে ভোর থেকে আন্দোলনকারী সত্যাগ্রহীরা জড়ো হয়। হাজার হাজার ছাত্র যুবা জনতা রেলস্টেশন প্রাঙ্গন ও রেললাইনের উপর অবস্থান নেয়। তাঁদের সরাতে না পেরে সরকার নির্মম দমননীতির আশ্রয় নেয়। পুলিশ বাহিনী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ শুরু করে। নিহত হন পৃথিবীর প্রথম মহিলা ভাষা শহীদ কমলা ভট্টাচার্য সহ মোট ১১ জন ছাত্র যুবা। তাঁরাই একাদশ ভাষা শহীদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

তাঁদের আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষা দ্বিতীয় রাজ্যভাষার মর্যাদা পায়। শিলচর রেলস্টেশনের সামনে স্থাপিত হয় শহীদদের প্রতিকৃতি সম্বলিত শহীদ মিনার। যার পথ ধরে পরবর্তী কালে ছড়িয়ে পড়ে একই আকৃতির শহীদ মিনার সমগ্র বরাক উপত্যকায়। শিলচর রেলস্টেশনের নাম পাল্টে জনতা ভাষা শহীদ রেল স্টশন নাম রেখেছেন। যদিও পূর্ণ সরকারি স্বীকৃতি এখনও তার মেলেনি।

বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় একাদশ শহীদ সহ আন্দোলনকারীদের আত্মত্যাগ ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে। কিন্তু সব এলাকার বাঙ্গালিরা কি এই ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখেন? উত্তরটি ‘না’ সূচক। আমাদের কর্তব্য তাঁদের আত্মত্যাগের কাহিনী সকলকে জানানোর উদ্যোগ নেয়া যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম তাঁদের সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হতে শেখে। বরাক উপত্যকার একাদশ ভাষা শহীদ অমর রহে। বাংলা সহ সকল মাতৃভাষার অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত থাকুক।

এখনও সেই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন এমন অনেকেই বেঁচে আছেন। বেঁচে আছেন নেতৃত্ব দেয়াদের মধ্যে অনেকে। সাথে সাথে প্রত্যক্ষদর্শীদের ও সন্ধান পাওয়া এখনও কষ্টকর নয়। তবে সামনের সিকি শতাব্দীর মধ্যে প্রাকৃতিক নিয়মেই তাঁরা আর আমাদের মাঝে থাকবেন না। এখনই প্রকৃষ্ট সময় তাঁদের সাক্ষাৎকার রেকর্ড করে রাখার। পর্যাপ্ত গবেষণা হওয়া প্রয়োজন সেই আন্দোলন,তার কুশীলব এবং শহীদ পরিবার সমূহের বিষয়ে। বীরের সন্মান উপযুক্ত ভাবে হওয়া প্রয়োজন। বাংলা ভাষার এবং বাংলা ভাষাভাষী জনগণের মর্যাদা বিশ্বব্যাপী সমুন্নত রাখার জন্য আমাদের এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আরও অনেক বীরের আমাদের প্রয়োজন। যে মাটিতে বীরের যথাযোগ্য সন্মান নেই, সে মাটিতে বীর জন্মায় না।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও পরিব্রাজক

;

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;