কেইপ ট্রিবিউলেশন : হোয়্যার দ্য রেইনফরেস্ট মিটস্ দ্য রিফ



ফজল হাসান
ইকো ট্যুরিজম স্পট খ্যাত কেইপ ট্রিবিউলেশন

ইকো ট্যুরিজম স্পট খ্যাত কেইপ ট্রিবিউলেশন

  • Font increase
  • Font Decrease

অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত ট্রপিক্যাল নর্থ কুইন্সল্যান্ডে আমাদের ভ্রমণ যাত্রার শেষ গন্তব্য ছিল দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে ‘ইকো ট্যুরিজম স্পট’ খ্যাত কেইপ ট্রিবিউলেশন। কেইর্ন্স থেকে একশ দশ কিলোমিটার উত্তরে কেইপ ট্রিবিউলেশন, যা ডেইনট্রি ন্যাশনাল পার্ক এবং ওয়েট ট্রপিক্স রেইনফরেস্ট এলাকা জুড়ে অবস্থিত। জায়গাটির নামকরণের আড়ালে রয়েছে ক্যাপ্টেন জেমস কুকের আক্ষেপ, হতাশা এবং দীর্ঘশ্বাস। অস্ট্রেলিয়া আবিষ্কারক ক্যাপ্টেন জেমস কুকের জাহাজ যখন কেইপ ট্রিবিউলেশনের অদূরে সমুদ্রপথ দিয়ে যাচ্ছিল, তখন তিনি সঠিক পথ চিনতে পারছিলেন না। বারবার গোলক ধাঁধায় পড়েছিলেন। তাই আক্ষেপ করে তিনি এলাকা সম্পর্কে বর্ণনা করে বলেছেন, “দ্য ইনসেইন ল্যাবিরিনথ্”, অর্থাৎ উন্মত্ত গোলকধাঁধা। পরবর্তীতে তাঁর ‘ইনডেভার’ জাহাজ গ্রেট বেরিয়ার রিফের সঙ্গে ধাক্কা লাগে এবং ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জাহাজ সারানোর জন্য সহকর্মীসহ তাঁকে দু’মাস থাকতে হয়েছিল। তাই একরাশ হতাশা নিয়ে তিনি লিখেছেন, “এই জায়গাটির নাম দিয়েছি কেইপ ট্রিবিউলেশন, কেননা এখানেই আমাদের সমস্ত সমস্যা শুরু হয়েছে।” পরে লোকজন কাব্যিক করে উপাধি দিয়েছে “হোয়্যার দ্য ওল্ডেস্ট রেইনফরেস্ট ইন দ্য ওয়ার্ল্ড মিটস্ দ্য গ্রেট বেরিয়ার রিফ’, যা সংক্ষেপে দাঁড়িয়েছে হোয়্যার দ্য রেইনফরেস্ট মিটস্ দ্য রিফ। এই উপাধি দেওয়ার নেপথ্যেও কারণ আছে। কেননা জায়গাটি ভৌগোলিক দিক থেকে ইউনেস্কো ঘোষিত দুটো হেরিটেজ এলাকায় অবস্থিত। হেরিটেজ এলাকা দুটো হলো ওয়েট ট্রপিক্স ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ এবং গ্রেট বেরিয়ার রিফ। ১৯৩০ সালের দিকে ইউরোপ থেকে লোকজন এসে সেখানে বসতি গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু রেইনফরেস্টের বৈরি ও অপরিচিত আবহাওয়ার সঙ্গে নিজেদের খাপ খাওয়াতে পারেনি এবং তখন তাদের কাছে বেঁচে থাকাটাই ছিল দারুণ চ্যালেঞ্জ। তারা অনেক ধরনের কাজ করার চেষ্টা করেছে, যেমন ফলমূল চাষ করা, মাছ ধরা, গবাদি পশু লালন-পালন করা এবং বনজঙ্গলের কাঠ কাটা। কোনো চেষ্টাই সফল হয়নি। এছাড়া দুর্গম এলাকায় যাতায়াত করা ছিল তাদের কাছে আরেক বিরাট সমস্যা। ষাটের দশকে রাস্তাঘাট তৈরি শুরু হলেও নব্বইয়ের দশকে চলাচলের উপযোগী রাস্তার নির্মাণ কাজ শেষ হয়। অবশেষে ২০১১ সালে ব্রিজ তৈরি হলে সারা বছর লোকজন এবং পর্যটকদের যাতায়াতের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। তবে সবকিছু সহজে হয়নি। ১৯৮৩ সালে বনবাঁদাড় কেটে রাস্তা তৈরি করার বিরুদ্ধে স্থানীয় আদিবাসী এবং পরিবেশ সচেতন কর্মীরা সংঘটিত হয়ে প্রচণ্ড আন্দোলন করে। তাই বাধা-বিপত্তির মধ্যে স্থানীয় সরকার তড়িঘড়ি করে রাস্তার কাজ সম্পন্ন করেছে।

সকাল সাতটায় ট্যুর প্যাকেজের মাইক্রোবাস এসে আমাদের হোটেল থেকে তুলে নিয়ে যাবে। মেহেরুন এবং আমি অন্ধকার থাকতে জেগেছি, কিন্তু জেগে ওঠার পরপরই আমাদের মন বিষণ্নতায় ভরে ওঠে। স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি বৃষ্টির আওয়াজ। আমি বিছানা ছেড়ে উঠে জানালার কাছে গিয়ে পর্দা খানিকটা সরিয়ে বাইরে তাকাই। রাস্তার লাইটপোস্টগুলো নীরবে আলো জ্বালিয়ে নিরীহ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে। একসময় আমি চোখেমুখে একরাশ হতাশার চিহ্ন ফুটিয়ে নীরস গলায় মেহেরুনকে বললাম, “আজ হয়তো আমাদের যাওয়া হবে না।” আমার করুণ কণ্ঠস্বর মেহেরুনকে কিঞ্চিৎ স্পর্শ করেছে বলে মনে হলো না। ট্যুর কোম্পানির লোকজন যেহেতু আমাকে ফোন করেনি কিংবা মোবাইলে কোনো ম্যাসেজও রাখেনি, তার অর্থ ট্যুর বাতিল হয়নি। তাই সময় নষ্ট না করে আমরা নাস্তা সেরে ঘণ্টা খানেকের মধ্যে তৈরি হয়ে নিচে নেমে অপেক্ষা করি।

সঠিক সময়ে মাইক্রোবাস এসে হাজির। ড্রাইভার নেমে এসে আমাদের সঙ্গে পরিচিত হয়। তার নাম ম্যাট, অর্থাৎ মেথ্যু। আমরা গাড়িতে উঠি। গাড়ির মধ্যে আরো জনা বারো যাত্রী বসেছিল। তাদের চোখমুখ বাইরের আকাশের মতোই বিবর্ণ। একসময় গাড়ি চলতে শুরু করে। পথের মাঝে পাম কোভ থেকে ম্যাট আরো চারজনকে তুলে নিয়ে আমাদের সারাদিনের কর্মসূচী জানিয়ে দেয়। তারপর ক্যাপ্টেন কুক হাইওয়ে দিয়ে বাস ছুটতে থাকে অন্তিম গন্তব্য কেইপ ট্রিবিউলেশনের দিকে। আমাদের ভ্রমণ ছিল সারাদিনের জন্য। উল্লেখ্য, যারা প্রকৃতির প্রেমে আত্মহারা এবং নানান ধরনের ঝুকি নিতে আগ্রহী, সেসব অ্যাডভেঞ্চার এবং ইকো ট্যুরিস্টদের রাত্রিযাপনের জন্য কেইপ ট্রিবিউলেশনের গহীন বনজঙ্গলের ভেতর রয়েছে সীমিত সংখ্যক বেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্ট, ইকো লজ, রিসোর্ট এবং ব্যাকপেকার হোস্টেল। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে ব্যাকপেকারদের জন্য কম খরচে থাকার বাসস্থান তৈরি করা শুরু হয় এবং নব্বইয়ের দশকে অর্থবান পর্যটকদের জন্য ক্রমান্বয়ে একাধিক বেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্ট, ইকো লজ এবং রিসোর্ট নির্মাণ করা হয়। সেখানে স্বল্প সংখ্যক মানুষের বসতি, যারা সুপেয় পানি এবং বিদ্যুৎ ছাড়াই জীবন নির্বাহ করে। বলা বাহুল্য, অস্ট্রেলিয়ার পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৬ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী কেইপ ট্রিবিউলেশনের জনসংখ্যা ছিল মাত্র একশ আঠর জন।

আমাদের প্রথম স্টপেজ ছিল পোর্ট ডগলাস। সেখানে পৌঁছার আগেই ম্যাট বলেছে আমাদের মধ্যে যাদের সঙ্গে ছাতা কিংবা রেইনকোট নেই, তারা যেন পোর্ট ডগলাসে কিনে নেয়। সেখানে আমাদের ত্রিশ মিনিটের বিরতি। যারা নাস্তা খায়নি, তারা ক্যাফেতে নাস্তার পর্ব শেষ করতে পারে। এছাড়া প্রাকৃতিক ডাকেও সাড়া দেওয়ার জন্য আধুনিক ব্যবস্থা আছে। যাহোক, ‘টু ডলার শপ’ থেকে আমরা দুটো রেইনকোট কিনি। তারপর ক্যাফেতে ঢুকে কফি, অর্থাৎ কাপুচিনো নিই। বৃষ্টিভেজা বাতাসে কফির গন্ধটা অপূর্ব লেগেছিল। জিভে ফেনায়িত কফির প্রথম স্পর্শ অনুভব করার সঙ্গে সঙ্গেই আমার মলিন মনটা চনমনিয়ে ওঠে। নির্ধারিত সময় ফুরিয়ে যাওয়ার পরে আমরা বাসে উঠে নিজেদের আসন গ্রহণ করি। ম্যাট আমাদের মাথা গোনে এবং তারপর গাড়ি চালানোয় মনোযোগ দেয়। অনেকটা পথ যাওয়ার পর আমাদের চোখে পড়ে খানিকটা দূরে রাস্তার সমান্তরাল অবারিত আখক্ষেত। নর্থ কুইন্সল্যান্ডের আবহাওয়া অনেকাংশে বাংলাদেশের মতো। তাই সেখানে আম-কাঁঠাল, লিচু-কলা, তেঁতুল থেকে শুরু করে কৃষ্ণচূড়া, বেলী, বৌগ্যানভিলিয়া—সবই হয় । বলা বাহুল্য, অস্ট্রেলিয়ার আনুমানিক পঁচানব্বই শতাংশ আখ চাষ হয় নর্থ কুইন্সল্যান্ডে এবং আশি থেকে পঁচাশি ভাগ উৎপাদিত চিনি বিদেশে রপ্তানি করা হয়। আখ চাষের বৃত্তান্ত বলার সময় ম্যাট বলেছে, ১৭৮৮ সালে ক্যাপ্টেন কুক জাহাজে করে আখ নিয়ে এসেছিলেন। আগের দিনে জমি থেকে আখ সংগ্রহ করার আগে জমিনের ফসলে আগুন ধরিয়ে দিত যেন আখ গাছের ছাল-বাঁকল এবং আশেপাশের আগাছা পুড়ে যায়। কিন্তু বর্তমানে আখ গাছ সবুজ থাকতেই মাটিতে গোড়া রেখে কাটা হয়। সেই গোড়া থেকে পুনরায় নতুন গাছ জন্মায়। এভাবে চার-পাঁচ বছর চলে। তারপর জমি এক বছর অনাবাদি রেখে পুনরায় একই নিয়মে নতুন করে আখ চাষ করা হয়। যান্ত্রিক উপায়ে আখ কাটার পরে প্রথমে পাতা ছাড়ানো হয় এবং পরবর্তীতে সেগুলোকে ছোট করে কেটে তারের তৈরি বিশাল বাক্সে ভরে নিয়ে যাওয়া হয় ক্ষুদ্র আকারের লোকোমোটিভ রেলগাড়িতে। সেখান থেকে রেলগাড়ি যায় মসমন চিনিকলে।

◤ জমি থেকে আখ চিনিকলে নিয়ে যাওয়ার বিশেষ ধরনের রেলগাড়ি ◢


যদিও রাস্তা মোটামুটি ফাঁকা ছিল, কিন্তু ঝিরঝির বৃষ্টির মধ্যে ম্যাট সকর্তভাবেই গাড়ি চালাচ্ছিল। মাঝেমধ্যে আশেপাশের উল্লেখযোগ্য ঘটনা বা জায়গা সম্পর্কে বর্ণনা দিচ্ছিল। একসময় সে বলল, “জানো, এই এলাকায় বিখ্যাত আইসক্রিম এবং চা পাওয়া যায়। ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ট্রপিক্যাল ফলফলাদি দিয়ে তৈরি আইসক্রিমের সুনাম শুধু অস্ট্রেলিয়ায় নয়, বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ডেইনট্রি টি কোম্পানির চায়ের বিশেষত্ব হলো অতুলনীয় সুগন্ধ এবং চা বাগানে কোনো ক্ষতিকারক কীটনাশক ঔষধ ব্যবহার করা হয় না। তবে দুঃখের বিষয়, ওগুলোর স্বাদ নেওয়ার কোনো সুযোগ আমাদের নেই। কেননা ট্যুর প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত না। আইসক্রিম ফ্যাক্টরি এবং চা বাগানের যাওয়ার জন্য আলাদা ট্যুর প্যাকেজ রয়েছে।” ম্যাটের বিবরণী শোনার সময় অনেকেরই মন আইসক্রিম এবং চায়ের স্বাদ নেওয়ার জন্য আকুপাকু করছিল, কিন্তু ম্যাটের কথা শেষ হলে মুহূর্তেই তাদের মুখ আমসি হয়ে যায়। অনেকে দীর্ঘশ্বাসের উষ্ণ বাতাস ছড়িয়ে দেয় বন্ধ গাড়ির ভেতর। আমি হতাশায় শরীর ছেড়ে দিয়ে নরম সিটের মধ্যে নিজেকে সমর্পণ করি।

একসময় আমরা ডেইনট্রি নদীর তীরে এসে পৌঁছি। নদী পারাপারের জন্য রয়েছে ক্যাবল্ ফেরি। সেই ফেরি ডেইনট্রি ন্যাশনাল পার্কের উত্তরাংশের সঙ্গে কেপ ট্রিবিউলেশন যাওয়া-আসার একমাত্র পথ। ফেরিতে আমরা গাড়ির ভেতরেই বসেছিলাম। নদী পাড়ি দিতে মাত্র পাঁচ মিনিট সময় লেগেছে। ম্যাট তার আসনে বসেই পেছন ফিরে বলল, “জানো, নদীর এক পাড়ে আধুনিক অস্ট্রেলিয়া এবং অন্য পাড়ে সম্পূর্ণ আলাদা জগত—ঘন সবুজ রেইনফরেস্ট।” ফরেস্টে আছে বিশেষ প্রজাতির পশুপাখি, গাছপালা এবং মনোরম সমুদ্র সৈকত। তবে ডেইনট্রি নদীতেই বাস করে ভয়ঙ্কর কুমির। ফিরতি পথে আমরা নদীতে নৌকাভ্রমণে গিয়েছিলাম। সেই প্রসঙ্গে পরে আসছি। আমরা নদী পাড়ি দিয়ে প্রথমে যাই মসমন গর্জ বা গিরিসঙ্কট। মসমন গর্জের কাছাকাছি মসমন গর্জ সেন্টারে এসে গাড়ি থামে। উল্লেখ্য, মসমন গর্জ এবং আশেপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও স্থানীয় আদিবাসীদের জীবনযাপন রক্ষণাবেক্ষন করার জন্য এমনকি দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে নিজেদের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিকে তুলে ধরার জন্য তৈরি করা হয়েছে মসমন গর্জ সেন্টার। সেই সেন্টার গঠন সম্পর্কে স্থানীয় আদিবাসী প্রবীণ নেতা রয় গিবসন বলেছেন, “আদিবাসী সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার এবং অভিন্ন হিসেবে একসঙ্গে পথচলার এটাই আমাদের পথ।” ম্যাটের সঙ্গে আমরা সবাই গাড়ি থেকে নেমে হালকা বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সেন্টারে যাই। আসলে ম্যাটের গাড়ি কিংবা অন্য কোনো ট্যুরিস্ট গাড়ি ভেতরে ঢোকার অনুমতি নেই। শুধু স্থানীয় স্পেশালিষ্ট ট্যুর গাইডের তত্ত্বাবধানে সেন্টারের নিজস্ব বাসে করে পর্যটকদের যেতে-আসতে হয়। আমরা বাস থেকে নেমে বনবাঁদারের ভেতর কাঠবিছানো পথ ধরে মিনিক পাঁচেক হেঁটে মসমন গর্জে পৌঁছি। তখনও টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছিল। উপর থেকে ঢালু বেয়ে স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ পানির ধারা অনবরত গড়িয়ে পড়ে পাথরের গায়ে। পানির একটানা শব্দ এবং বৃষ্টির ভেজা বাতাস মনের মধ্যে একধরনের মুগ্ধতার রেশ ছড়িয়ে পড়ে। আমি বিমোহিত দৃষ্টিতে পানির স্রোত এবং বৃষ্টিপড়া দেখি। সেই বৃষ্টির মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে ঝটপট ছবি তোলে। দশ মিনিটের মতো থেকে ম্যাটকে অনুসরণ করে আমরা হাঁটতে থাকি গাড়ির দিকে।

ডেইনট্রি ন্যাশনাল পার্কের ভেতর দিয়ে সাপের মতো প্যাঁচানো সরু পথ ধরে গাড়ি কেইপ ট্রিবিউলেশনের দিকে চলছিল এবং মাঝেমধ্যে ম্যাট ধারাবিবরণী দিচ্ছিল। একসময় গাড়ির গতি কিছুটা শ্লথ করে জিজ্ঞেস করে, “তোমরা কি কেউ জানো, কোনটি ডেইনট্রি?” আমাদের মধ্যে অনেকেই ডেইনট্রি খুঁজতে জানালার বাইরে তাকায়। ভাবটা যেন সবাই গাছটি আগে দেখেছে এবং চেনে। ম্যাট হাসতে হাসতে বলল, “জানি, তোমরা কেউ খুঁজে পাবে না। যদিও ডেইনট্রি শব্দের সঙ্গে লেজুর হিসেবে ট্রি আছে, আসলে ডেইনট্রি কোনো গাছের নাম নয়। ডেইনট্রি হলো একজন শিক্ষকের নামের শেষাংশ। ভদ্রলোক এই এলাকায় এসে গাছপালা এবং প্রকৃতি-পরিবেশ নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাঁর পুরো নাম রিচার্ড ডেইনট্রি। পরবর্তীতে তাঁর এক ছাত্র এখানে এখানে শিক্ষকের প্রতি সম্মান জানিয়ে এলাকার নাম রাখেন ডেইনট্রি। একসময় আমরা কেইপ ট্রিবিউলেশনে পৌঁছি। ঘড়িতে তখন প্রায় একটা। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কেপ ট্রিবিউলেশনের সমুদ্র সৈকতের একটু দূরে ছায়া সুনিবিড় জায়গায় এক রেস্টুরেন্টে যাই। ট্যুর প্যাকেজের মধ্যে অতিরিক্ত ডলার দিয়ে অনেকেই সেখানে দুপুরের আহার করেছে। আমাদের যেহেতু বাইরের খাবার-দাবারের সীমাবদ্ধতা আছে, তাই আমরা আগের রাতে নির্দিষ্ট দোকান থেকে খাবার কিনে নিয়ে গিয়েছিলাম। খাওয়া-দাওয়া শেষে অনেকেই বৃষ্টির মধ্যে ছাতা মাথায় সমুদ্রের পাড়ে গিয়েছিল। আমরা অবশ্য যাইনি।

◤ ডেইনট্রি ফরেস্টের গভীরে মসমন গর্জ ◢


নির্ধারিত সময়ে আমরা কেপ ট্রিবিউলেশন থেকে রওনা হই। ফিরতি পথে আলেকজান্ড্রা রেঞ্জের চূড়ায় আলেকজান্ড্রা লুকআটউটে এসে গাড়ি থামে। ভাগ্য ভালো হলে গেছো ক্যাঙ্গারুর সাক্ষাত পাওয়া যায়, যা অস্ট্রেলিয়ার অন্য কোথাও দেখা যায় না। লুকআউটের এক পাশে বিশাল ফার্ন গাছ দেখিয়ে ম্যাট বলল, “জানো, কত বছরের পুরনো এই ফার্ন?” আমরা একে অন্যের মুখের দিকে তাকাই। ম্যাট নিজেই বলল, “এই ফার্নের পূর্বপুরুষের সূচনা হয়েছিল একশ কুড়ি থেকে একশ ত্রিশ মিলিয়ন বছর আগে এবং এই ফার্ন আমাদের গ্রহের সবচেয়ে প্রাচীন ফার্ন।” ফার্ন গাছকে স্পর্শ করার লোভ সামলাতে না পেরে আমি গাড়ি থেকে নেমে পাশে গিয়ে দাঁড়াই। ঝটপট মেহেরুন ছবি তোলে। প্রাচীনতম ফার্নের সঙ্গে আমি সাক্ষী হয়ে রইলাম।

একসময় গাড়ির গতি শ্লথ করে ম্যাট বলল, “দেখো, বাম দিকে দিকে তাকিয়ে দেখো, অই যে বড় গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে ক্যাসোওয়ে।” সঙ্গে সঙ্গে আমরা সবাই বৃষ্টিভেজা জানালার কাচের বাইরে তাকাই। যারা গাড়ির ডান দিকে বসেছিল, তারা কেউ ঘাড় কাত করে, কেউ মাথা নিচু করে এবং দু তিনজন নিজেদের সিট ছেড়ে গাড়ির বাম দিকে এসে আমাদের সঙ্গে শামিল হয়। হয়তো লজ্জা পেয়ে, নতুবা ভয়ে আমাদের ছবি তোলার কোনো সুযোগ না দিয়ে ক্যাসোওয়ে দ্রুত গাছগাছালির আড়ালে চলে যায়। উল্লেখ্য, দৈহিক গড়নের দিক থেকে দেখলে উট পাখির পরেই ক্যাসোওয়ের অবস্থান। এদের ঠোঁট গাঢ় নীল, গলা লাল, ঘাড় হলুদ এবং শরীরের পালক কালো হয়। প্রাগৈতিহাসিক যুগে যখন সব মহাদেশ একসঙ্গে ছিল এবং ডাইনোসোর পৃথিবী চষে বেড়িয়েছে, তখন থেকেই উড়তে অক্ষম ক্যাসোওয়ে পাখি বনবাদাড়ে মনের সুখে ঘুরে বেড়ায়। তবে কখনো কখনো ওরা বিধ্বংসী হয়ে ওঠে এবং পাল্টা আক্রমণ করে। অনেক সময় অন্য জন্তুদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নদী সাঁতার দিয়ে জীবন রক্ষা করে। ট্রপিক্যাল নর্থ কুইন্সল্যান্ড ছাড়াও ওদের জ্ঞাতি ভাই-বোন ইন্দোনেশিয়া এবং নিউ গিনির জঙ্গলে বাস করে। ক্যাসোওয়েরা আস্ত ফল খায় এবং পরে দূর-দূরান্তে পুরো বিচিটাই নির্গত করে। সচরারচর এদের দেখা যায় না। কিন্তু সেদিন আমাদের ভাগ্য সুপ্রসন্নই ছিল। সবাই নিজেদের আসনে বসার পর ম্যাট গাড়ির গতি বাড়ায়।

◤ প্রাকৃতিক পরিবেশে ক্যাসোওয়ে পাখি ◢


আলেকজান্ড্রা লুকআটউট থেকে নামার সময় সমুদ্রের দিকে আঙুল তুলে ম্যাট বলল, “দূরের দ্বীপটির নাম স্ন্যাপার আইল্যান্ড। আইল্যান্ডের আকৃতি দেখতে অনেকটা পানির ওপর ভাসমান কুমিরের মতো। সেখানেই ২০০৬ সালের ৪ সেপ্টেম্বর টেলিভিশনের জন্য প্রামাণ্যচিত্রের শুটিং করার সময় স্টিংরে-র উপর্যুপরি লেজের আঘাতে ‘ক্রকোডাইল হান্টার’খ্যাত স্টিভ আরউইনের মৃত্যু হয়।” তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে সারা অস্ট্রেলিয়া, এমনকি আমেরিকা ও ব্রিটেন স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল। এখন স্টিভের ছেলে বাবার মতো হয়ে উঠছে। যাহোক, অনেকটা পথ চলার পরে আমরা পুনরায় ডেইনট্রি নদীর তীরে পৌঁছি। ফিরতি পথে আমরা ফেরিতে নদী পার হইনি। আমাদের জন্য ছিল গহীন অরণ্যের মাঝে আঁকাবাঁকা নদীপথে একঘণ্টার নৌকা ভ্রমণ। ইঞ্জিন চালিত সেইসব বোট চালকরা ট্যুর গাইড হিসেবে বিশেষ ট্রেনিং প্রাপ্ত, অর্থাৎ এরা ইকো-ট্যুরিজমের খুঁটিনাটি এবং ইকো-ট্যুরিস্টদের নিরাপত্তা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল। ম্যাট নতুন ট্যুর গাইডের হাতে আমাদের বুঝিয়ে দেওয়ার সময় দুষ্টুমির ভঙ্গিতে সতর্ক করে বলল, “ওর কথা শোনো। নইলে কিন্তু আজ রাতে ক্রকের (ক্রোক্রোডাইলের সংক্ষিপ্ত নাম) ডিনার হবে।” আমাদের মাঝে কয়েকজন সমস্বরে রীতিমত চেচিঁয়ে ওঠে, “উই উইল। ডোন্ট অরি।” ম্যাট ফেরিতে গাড়ি নিয়ে চলে যায় নদীর অন্য পাড়ে। আমরা ইঞ্জিনচালিত বোটে উঠি। রোদ ও বৃষ্টি থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য বোটের উপরে ছাদ আছে, কিন্তু আশেপাশের মনোরম দৃশ্য অবলোকন করার জন্য দুপাশ ফাঁকা।

◤ ডেইনট্রি নদীতে নৌকা ভ্রমণ ◢


আমাদের বোট চালক কাম ট্যুর গাইড জানে কখন কোথায় কোন প্রাণীর সাক্ষাত লাভ করা যাবে। তাই সে বোট চালিয়ে মূল নদী থেকে বাম দিকে মোড় নিয়ে একটা খালের ভেতর প্রবেশ করে। কিছু দূর যাবার পরই সে হাত উঁচিয়ে দেখায় পানির উপর ঝুলে থাকা গাছের ডালে একটা সাপ নিশ্চিন্ত মনে শুয়ে আছে। সাপটি দেখে মনে হয়েছে, সে যেন পরম আয়েশে পড়ন্ত বিকেলের সোনালি রোদের সবটুকু উষ্ণতা শুষে নিচ্ছে নিজের মধ্যে। আশেপাশের কোনো কিছুর প্রতি তার ভ্রক্ষেপ নেই। অন্যদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মেহেরুনও টুক করে মোবাইল ফোনে ছবি তোলে। উল্লেখ্য, তিরিশ বছর আগে স্যার রিচার্ড অ্যাটেনবোরো মসমন নদী, ক্রক এবং দুপাশের গাছপালা ও জীবজন্তু নিয়ে ডকুমেন্ট তৈরি করেছিলেন। সেই থেকে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে পুরো এলাকা, বিশেষ করে মসমন নদী এবং নদীর দু পাড়ের ঘন বনজঙ্গল, পরিচিতি লাভ করে। যাহোক, শুরুর দিকে নদীতে ভাসমান অথবা নদীর পাড়ে আলসেমির ভঙ্গিতে শুয়ে থাকা কোনো ক্রকের দর্শন লাভ করতে পারিনি। কিন্তু ফেরার সময় দূরে ভাসমান কুমিরের দেখা পাওয়া মাত্র গাইড আমাদের নজর কাড়ে এবং বোটটি ভাসমান কুমিরের কাছাকাছি নিরাপদ দূরত্বে নিয়ে যায়, যেন আমরা কাছ থেকে দেখতে পারি। পিঠ পানির ওপর ভাসিয়ে রাজকীয় ভঙ্গিতে কুমির হয়তো ফিরে যাচ্ছে শুকনো পাড়ে। অবশেষে একঘণ্টা পরে স্থানীয় গাইড আমাদের নদীর উল্টো পাড়ে নামিয়ে দেয়। সেখানে ম্যাট গাড়ি নিয়ে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। আমরা রওনা হই কেইর্ন্সের উদ্দেশ্যে।

গাড়িতে বসে জানালার বাইরে দৃষ্টি মেলে ভাবছিলাম এবং আপনমনে নিজেকে প্রশ্ন করেছি, অ্যাডভেঞ্চার এবং ইকো ট্যুরিজমের মধ্যে যে এত জানার বিষয় এবং দেখার উত্তেজনা আছে, তা আগে কেন আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়নি। তার কারণ হয়তো অতীতে আমার মনের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি হয়নি। তবে বলতে দ্বিধা নেই যে, ট্রপিক্যাল নর্থ কুইন্সল্যান্ডের সফর আমার চোখ ও কান খুলে দিয়েছে। এখন আমি বুঝতে পারছি, উৎসাহী পর্যটকরা ঝুঁকি নিয়ে কেন এসব সবুজে মোড়া বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে জীবনের সুখ-আনন্দের সবটুকু নির্যাস শুষে নেয়।

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;