মধ্যরাতের মেয়েটি



মাহতাব হোসেন
অলঙ্করণ কাব্য কারিম

অলঙ্করণ কাব্য কারিম

  • Font increase
  • Font Decrease

ঘুম ভেঙে যাওয়ার পর মোবাইল গুঁতোগুঁতি করতে করতে অলস সময় কাটাচ্ছিলাম। এই বাজে স্বভাবটা কিছুতেই দূর হচ্ছে না বা সেসব নিয়ে আমি ভাবিও না। সকালে ঘুম ভাঙলে বালিশের তলে আপনা আপনি হাত চলে যায়। আর রাতের বেলা ঘুমুতে যাওয়ার আগে নিয়ম করে রাখা মোবাইলটা নিয়ম করেই বালিশের তল থেকে হাতে চলে আসে।

বুয়া এসে বেল টিপে ঘুম ভাঙিয়ে দেয়। এরপর দীর্ঘ সময় অলস বিছানায় গড়াগড়ি খাই। ছুটিরদিন থাকলে তো কথাই নেই। বিছানায় গড়াগড়ি খেতে খেতে দুপুর পেরিয়ে কখনো কখনো বিকেলের দিকে ঝুঁকে পড়ে সূর্য। ব্যাচেলর জীবনের এই এক মিশ্রিত বিষয়—না ভালো না মন্দ। তবে অভ্যেস। বুয়া এসে কাজকর্ম সেরে চলে গেল। দুধ গরম করে দিয়ে গিয়েছিল। দুধ আর কর্ন দিয়ে নাস্তা সেরে ফের বিছানায় এলাম।

বিছানার এক কোনায় হরিশংকর জলদাসের ‘প্রস্থানের আগে’ বইটা পৃষ্ঠা খোলা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। অনেক রাত পর্যন্ত পড়েছি। এখনো অর্ধেকের বেশি বাকি। হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করলাম। বেশ চমৎকার মলাট। তারচেয়েও বড় কথা গল্পটা জেলে সম্প্রদায়ের এক যুবকের উত্থানের। পড়তে পড়তে হরিশংকর জলদাসের নিজের জীবনের ছাপ অনেকটাই পাচ্ছি। জানি না শেষ পর্যন্ত গল্প কোথায় গিয়ে শেষ হয়। অবশ্য আমার অনুমান ভুল হতে পারে। কারণ লেখকেরা একটা সূত্র পেলে সেটার আগাগোড়ায় রঙ মিশিয়ে একটা বর্ণিল কাহিনী দাঁড় করিয়ে ফেলে। এখানেই আর দশজনের চেয়ে লেখকেরা অনন্য, যেটা আমি পারি না। শুধু পড়ে যাই।

অবশ্য এই উপন্যাসে কোনো বর্ণিল কাহিনী নেই, রয়েছে পাতায় পাতায় সাদা-কালো জেলে জীবনের উত্থান-পতন আর সমুদ্রের সঙ্গে সংগ্রাম করে টিকে থাকার গল্প। নেড়েচেড়ে বইটা যেখানে ছিল সেখানেই ভাঁজ করে রেখে দিলাম। এখন পড়তে ইচ্ছে করছে না। রাতে টানা শেষ করে ফেলব।

জানালার পর্দাটা সরিয়ে দিয়ে মোবাইলটা হাতে নিয়ে ডিগবাজি খেয়ে বিছানায় গড়িয়ে পড়লাম। ফেসবুকে লগ ইন করে স্ক্রল করছি। স্ক্রল করতে করতেই একসময় বিরক্ত লাগা শুরু হলো। মানুষের জীবনটা এই এক মোবাইলের ভেতর ঢুকে গেছে। যেন জীবন হয়ে গেছে জি বাংলা না হয় স্ক্রলময়। ফেসবুক থেকে বেরিয়ে একটা অনলাইন পোর্টালে লগ ইন করলাম। দিনের শুরুর ঘটনাগুলো এক নজর দেখে নেওয়াও অভ্যাসের একটা অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংবাদ স্ক্রল করতেই পোর্টালের মাঝের একটা খবরে চোখ আটকে গেল—‘মধ্যরাতে কামরাঙ্গীর চরে কিশোরী ধর্ষিত’।

দ্রুত খবরটায় ক্লিক করলাম। কামরাঙ্গীর চরে গত রাত সাড়ে ১২টা ১টার দিকে এক কিশোরী সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। ভোরে পুলিশ উদ্ধার করেছে। কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। কিশোরীর বয়স ১৫ হবে। নাম উল্লেখ নেই। ছবির জায়গায় কামরাঙ্গীরচরের একটা মানচিত্র ব্যবহার করা হয়েছে।

খবর শেষ করতে না করতেই বুকের ভেতরটা ছ্যাঁত করে উঠল। কেমন যেন অদ্ভুত শীতলতা এসে আমাকে গ্রাস করে ফেলল। মেরুদণ্ড দিয়ে প্রবেশ করে গভীর শীতলতা যেন বিবশ করে ফেলল আমায়। এক বোধহীন অনুভূতি, যেটা শব্দে বর্ণে প্রকাশ করার ক্ষমতা এই মুহূর্তে আমার নেই। ধর্ষণের খবর এখন পত্র-পত্রিকার নিত্য খবরের অনুষঙ্গ হয়ে গেছে। কিন্তু এই খবর আমাকে ভেতর থেকে টেকটোনিক প্লেটের মতো নাড়িয়ে দিয়েছে। এখন আমার করণীয় কী? কিছুই বুঝতে পারছি না।

গতকাল রাতে বাইক নিয়ে হাতিরঝিল হয়ে বাসায় ফিরছিলাম। বৃহস্পতিবার হাতিরঝিলে তেমন ভিড় থাকে না। আজও ছিল না। কিন্তু মহানগরের ওভারব্রিজ থেকে নামতেই একটা জটলা চোখে পড়ল। প্রায়ই এমন ভিড় কারণে অকারণে চোখে পড়ে। কখনোই ভ্রুক্ষেপ করিনি। কিন্তু এই ভিড়টা আমাকে কৌতূহলী করে তুলল। বাইক থামিয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম—আসলে ঘটনা কী! রাস্তার এপাশ থেকে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। বাইক একদিকে পার্ক করে ভিড়ের দিকে এগিয়ে গেলাম। একটা মেয়েকে কেন্দ্র করে ভিড়। বয়স ১৫-১৬ হবে। দেখে ভদ্র ঘরের মেয়েই মনে হলো। মানুষজন জিজ্ঞেস করতেই একেকজন একেক রকম তথ্য দিচ্ছে। অসামাজিক কাজ করেছে মেয়ে। দীর্ঘ সময় ধরে নানা রকম বিচার শালিস চলেছে মনে হলো। কিন্তু সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না কেউ। ভিড়ের মধ্যে নেতৃত্ব দিচ্ছে ২০-২২ বছরের কয়েকজন যুবক। সাথে কয়েকজন মুরব্বি গোছের লোকজনও রয়েছেন। এরা সবাই সম্ভবত মধুবাগ বা তার আশেপাশের বস্তিতে থাকে। এদের মধ্যে থেকে দুই-একজন যুবক হালকা চিল্লিয়ে ভিড় কমাতে বলছে।

আমি কাছাকাছি যাওয়ার আগেই মেয়েটাকে ছেড়ে দেওয়া হলো, তারপর চলে যেতে বলা হলো। কিছুই বুঝলাম না।
‘ভাই কী হয়েছে?’
নিজের গলার স্বর নিজের কাছেই অপরিচিত মনে হলো। বাক্যটা মনে হয় বেশ জোরেই বলে ফেলেছি। মেয়েটাও আমার দিকে ঘুরে তাকাল। টিনেজ মেয়ে। একদম সরল চেহারা। কিন্তু এই আলো আঁধারিতেও মেয়েটি যে আতঙ্কিত তা অনুমান করতে অসুবিধা হলো না। মনে হলো প্রেমিক বা স্বজনের সাথে ঘুরতে এসেছিল। কিন্তু সাথে তো কেউ নেই। অসামাজিক কোনো কাজের সাথেই সে যদি জড়িয়ে থাকে তাহলে সে একা কেন? যার সাথে ঘটনা সে কোথায়? এসব প্রশ্ন মনে ঘুরপাক খাওয়ার আগেই দুজন যুবক এগিয়ে এল। কালো কুচকুচে গায়ের বরণের এক যুবক বলল—‘ভাই খারাপ মেয়ে।’
‘খারাপ মানে? না বললে বুঝব কী করে?’

সম্ভবত আমাকে গুরুত্ব দেওয়া শুরু করেছে এরা। অফিস থেকে ফিরছিলাম। প্যান্ট শার্ট ইন করা আমার। চেহারাতেও আমার একটা ভদ্রলোক টাইপের বিষয় রয়েছে। হয়তো এই কারণে বা জোরে কথা বলার কারণেই হোক সবার দৃষ্টি আমার দিকে এখন। অপর যুবক বলল—‘এই মাইয়া প্রাইভেট গাড়িতে কইরা তিনজনের লগে আইছিল আকাম করতে। এই মাইয়া আরেক বুড়াব্যাটা বাইরে বইসা তামাশা দেখতাছিল। বাকি দুইজন গাড়ির পিছনে আকাম করতাছিল, এই হইলো গিয়া ঘটনা।’
‘আকাম মানে?’
‘মানে ভাইজান আপনারে বুঝায়ে বলতে হইব?’
‘না ঠিক আছে, কিন্তু এই মেয়ে একা কেন?’
‘এলাকার পোলাপাইন যখন আইসা জিজ্ঞাসা করতেছিল গাড়িতে কারা? কী করে, তখন এই মাইয়া এই বেঞ্চে বইসা আছিল। সাথে ওই বুড়া ব্যাটা আছিল। তারাও রঙ শুরু করত। আমাগো কুনো কথার উত্তর দিতাছিল না। তখন আমাগো পোলাপাইন বুইঝা ফালায় পিছনের সিটে পোলা মাইয়া দুইজন রঙ্গ করতাছিল। তখন আমরা কাহিনী জিগাইলাম এই মাইয়ারে, এই মাইয়া উলটাপালটা কথা কয়। অ্যার মধ্যে বুড়াব্যাটা গাড়িতে কারা আছে দেখাইতে চাইয়া গাড়ির ভিতর ঢুইকা সাথে সাথে স্টার্ট দিয়া গাড়ি নিয়া টান মাইরা পালাইয়া যায়, আমরা ধরতে পারি নাই। এহন কন কী করমু?’

ছেলেটা গলায় জোর এনে টেনে টেনে কথাগুলো বলছিল। বিষয়টা আমার কাছে পরিষ্কার হচ্ছিল না। তবে এতটুকু বোঝা গেল চারজন একটা প্রাইভেট কার নিয়ে এসেছিল। এরমধ্যে এই মেয়েটাও ছিল। কিন্তু বেকায়দায় পড়ে মেয়েটাকে রেখে তারা দ্রুত সটকে পড়ে। আমি একটু চিন্তিত ভঙ্গিতে বললাম—‘তাহলে এখন মেয়েটাকে কী করবেন?’
‘কী আর করমু করার কিছু নাই। এই মাইয়ারে ছাইড়া দিলাম। চইলা যাইব এহন।’
বাম হাতের কবজি উল্টিয়ে ঘড়ি দেখলাম রাত পৌনে বারোটা। এই সময় একা এই মেয়ে কোথায় যাবে? নাকি এই ছেলেরাই ভিড় থেকে মেয়েটাকে সরিয়ে দিচ্ছে। পরে নিজেরা বদ মতলব আটবে। আমি বললাম—‘কিন্তু ভাই এইভাবে একটা মেয়েকে এত রাতে ছেড়ে দিলে সে কিভাবে যাবে?’
‘তাইলে কী করমু? আমরা রাইখা দিমু?’

এক শুটকো মতো ছেলে মুখের ওপর ছুড়ে মারল বাক্যটা। মেয়েটা এক কোনে গিয়ে প্রায় জড়োসড়ো হয়ে আছে। মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। দৃষ্টি আমার দিকে, এতক্ষণ মেয়েটা কী ভয়ঙ্কর মানসিক চাপের মধ্যে দিয়েই না যাচ্ছিল, মনে হলো আমার। আমি বললাম—‘না আপনাদের মধ্যে কেউ একজন মেয়েটাকে বাসে তুলে দিয়ে আসেন। যাতে মেয়েটা অন্তত নিজের বাসায় ঠিকঠাক চলে যেতে পারে।’
আমার কথা শুনে মুরুব্বি গোছের একজন এগিয়ে এলেন। চেহারায় হতদরিদ্রের ছাপ স্পষ্ট। সম্ভবত রিকশা-ভ্যান চালান। ‘বাবা তুমি তো মটর সাইকেল নিয়া আইছো, মাইয়াটারে তুমি নিয়া একটা বাসে তুইল্লা দাও।’
মুরুব্বীর কথা শেষ হওয়ার সাথেই ‘হ হ হ ঠিক ঠিক’ টাইপের সমর্থন সমস্বরে চলে এলো। কিন্তু আমি কিভাবে মেয়েটাকে বাসে তুলে দেব। যদি ঝামেলা হয়। তারমধ্যে আমাকে বাসায় ঢুকতে হবে। দারোয়ান সর্বোচ্চ ১২টা পর্যন্ত এলাউ করে। অন্তত আমার জন্য এই বাড়তি সুবিধা। এখন এই মেয়ের দায়িত্ব নিতে গেলে তো বাসায় ঢুকতে পারব না। কী এক ঝামেলার মধ্যে পড়া গেল।

সবাই প্রায় জোর করেই মেয়েটাকে আমার বাইকে তুলে দিল। দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়েই বাইক স্টার্ট দিলাম। বাইক চালাতে চালাতেই জিজ্ঞেস করলাম—‘বাসা কোথায় তোমার?’
‘কামরাঙ্গীচর।’
‘বলো কী! সে তো অনেকদূর, এত রাতে এখানে এসেছো কেন?’
‘আমি আসছিলাম কাজিনের সাথে। কাজিনের সাথে তার জিএফ ছিল। আর ড্রাইভার। আসার সময় আম্মাকে বলে নিয়ে আসে যে আমাকে ঘুরাতে নিয়ে যাচ্ছে। আম্মাও কিছু বলেনি। আমি ভাবলাম, হাতিরঝিল দেখা হয় নাই। কাজিনের সাথে গাড়িতে গেলে দেখা হবে।’
‘তোমার মা রাজি হয়ে গেলেন, আর তুমিও?’
‘সে আমার খালাত ভাই। তাই আম্মা কিছু বলে নাই। আমরা বের হইছিলাম বিকালে। কে জানত এত রাত হবে।’
‘ঘটনাটা আসলে কী, খুলে বলো তো?’
বাইকের গতি এভারেজ রেখে চালাচ্ছিলাম, যাতে মেয়েটার কথাগুলো বোঝা যায়। মেয়ে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে কথা বলছে। নাকি বাতাসের কারণে গলা কেঁপে যাচ্ছে—ঠিক স্পষ্ট না। মেয়েটার উচ্চারণ শুদ্ধ।
‘সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পর একটা রেস্টুরেন্টে খেয়ে এসে ওখানে বসছিলাম। মানে আমার কাজিন তার জিএফরে নিয়ে কী যেন কথা বলবে তাই আমাকে ওই বেঞ্চটায় বসতে বলল। একটু পর ড্রাইভারও বাইরে এসে বসল। আমি তো জানি না গাড়িতে কী কথা বলবে তারা। অনেকক্ষণ বসে থাকার পর কতগুলো ছেলে এসে গাড়ি ঘিরে ধরে। এরপর ড্রাইভার গাড়িতে ঢুকে দ্রুত টান মেরে চলে যায়। আমি একাই পড়ে যাই...’

মেয়েটা এক নাগাড়ে বলে থামল। বুঝে গেছি আসলে ঘটনা কী। এখন এই মেয়েকে কিভাবে বাসে উঠিয়ে দিই? এফডিসি মোড়ে এসে দাঁড়ালাম। কোনো বাস নেই। মাঝে মধ্যে কিছু ভারী ট্রাক শব্দ করে চলে যাচ্ছে। বাইক টান মেরে সার্ক ফোয়ারার কাছে চলে এলাম। সোনারগাঁও হোটেল ঘেঁষে বাইক রেখে কয়েক মিনিট ওয়েট করলাম। কামরাঙ্গীর চরের দিকে যাওয়ার মতো কোনো যানবাহন নেই।
‘বাস তো নেই, এখন কী করবা?’
‘ভাইয়া প্লিজ আপনি আমারে রেখে আসেন না, প্লিজ...’
‘তুমি পড়ালেখা করো?’
‘জ্বি।’
‘কিসে পড়ো?’
‘আমি এইবার এসএসসি দিব।’
কথা শেষ হতে না হতেই একটা যাত্রাবাড়ীগামী বাস চলে এলো।
‘এই বাসে উঠলে কি তুমি যেতে পারবা?’
‘আমি এই বাস থেকে কই নামব?’
‘আমিও তো জানি না কই নামবা।’
‘তোমার বাসায় ফোন দাও।’
‘আমার কাছে তো ফোন নাই, আমাকে তো ফোন দেয় নাই বাসা থেকে।’

উফফ! কেমন যেন রাগ লাগতেছে। কেন এই মেয়ে রাতে আসছিল? আর কাজিন শালাটাও কেমন কাপুরুষ, নিজের খালাত বোনকে এভাবে বিপদে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়! উবার ঠিক করে দেব কিনা ভাবছি। এইসময় একটা সিএনজি রিকশা কাছ ঘেঁষে দাঁড়াল।
‘এই কামরাঙ্গীর চর যাবেন?’
‘কামরাঙ্গীর চরের কোন জায়গায়?’
মেয়েটা আমার দিকে একটা অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে জায়গার নাম বলল।
‘হ যামু, সাড়ে তিনশো পড়ব।’
‘তিনশো নিয়েন, যান।’
‘মামা এই রাতেই, আর বিশ টাকা দিয়েন...’

আমি মেয়েটাকে উঠে যেতে বললাম। ওয়ালেট থেকে তিনশো বিশ টাকা বের করে সিএনজিওয়ালাকে দিয়ে বললাম, বাসার কাছেই যেন নামিয়ে দেয়। মেয়েটার হাতে একটা আমার কার্ড ধরিয়ে দিয়ে বাসায় গিয়ে ফোন দিতে বললাম। মেয়েটা হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে ধন্যবাদ না কী যেন একটা একটা শব্দ উচ্চারণ করল। শব্দ করে সিএনজি বেরিয়ে গেল। সিনএজির শব্দে সেটা স্পষ্ট শোনা গেল না। মধ্যরাতের ঢাকা, অদ্ভুত ঢাকা। নিজের মনে মনে কথাগুলো ভাবতে ভাবতে বাইক টান মেরে কলাবাগান হয়ে মোহাম্মদপুরে চলে এলাম। বাসায় এসে গোসল করে খেয়ে হরিশংকরের বইটায় ডুবে গিয়েছিলাম। আর কিছুই মনে ছিল না। মনে ছিল না মেয়েটা ফোন দেয়নি। ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম।

বিছানা থেকে লাফ মেরে উঠে পড়লাম। মেয়েটাকে ভর্তি করা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এখন সেখানেই যেতে হবে। পাঁচতলা থেকে দ্রুত নেমে পার্কিং থেকে বাইকটা নিয়ে রওনা দিলাম। আজ শুক্রবার, রাস্তায় তেমন কোনো জ্যাম নেই। শাহবাগ হয়ে মেডিকেলে আসতে খুব বেশি সময় লাগল না। ইমার্জেন্সির কাছে বাইকটা তালা মেরে রেখে দ্রুত দোতলায় চলে এলাম। বুক ধক ধক করছে। বুঝতেছি হৃৎপিণ্ডের গতি বেড়ে গেছে। আর ভেতর থেকে যেন কেউ বলে উঠছে—দিব্য, কাজটা ভালো করোনি তুমি, পারতে মেয়েটাকে পৌঁছে দিয়ে আসতে। রেপড কেসের ভিক্টিমাইজদের কোন কেবিনে রাখা হয় আমার তো জানা নেই। একজন নার্সকে জিজ্ঞেস করতেই তিনি ভ্রু কুঁচকে চলে গেলেন। উত্তর দেওয়ার কোনো প্রয়োজনই মনে করলেন না।

আচ্ছা আগে তো ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে মনে হয় নেওয়া হয় ভিক্টিমকে। হন্তদন্ত হয়ে নেয়ে ঘেমে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের সামনে এলাম। কিন্তু লাভ হলো না। এখান থেকে কোনো ভিক্টিমের তথ্য কেন দেবে তারা? একজনকে পাওয়া গেল, তিনি জানালেন, এমন একটা কেস আসছিল ভোরের দিকে। এর বাইরে বেশি কিছু তিনি জানেন না।

হতাশ হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছিলাম। যেন এক পরাজিত মানুষ আমি, বিধ্বস্ত। যদি গতরাতে মেয়েটাকে এগিয়ে দিয়ে আসতাম, সেক্ষেত্রে আমার দেরি হতো, কিন্তু এমন ঘটনা তো আর ঘটত না। এই অপরাধবোধ আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। পকেটে ফোন বেজে যাচ্ছে। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতেই ফোনটা হাতে নিই। অচেনা নম্বর। রিসিভ করব না করব না করেও সবুজ বাটন টেনে কানে লাগালাম।
‘হেই ভাইয়া কেমন আছেন?’
রিনরিনে এক মেয়েলি কণ্ঠ। এখন ভাইয়া-টাইয়ার জবাব দেওয়ার সময় নেই। যেতে হবে মেডিকেল কলেজের পুলিশ ফাঁড়িতে। যেহেতু পুলিশ কেস, ওখানেই তথ্য পাওয়া যাবে। পুলিশে ছুঁলে তো অনেক ঘাঁ। কী হবে হোক। নিজের বিবেকের নিকট স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে না পারলে বেঁচে থাকাটাই গ্লানিকর। গ্লানি নিয়ে বেঁচে থাকা যায় না।
‘ভাইয়া কথা বলছেন না কেন?’
‘কে আপনি?’
‘আমি মিলি।’
‘সরি, কোন মিলি... চিনতে পারছি না...’
‘এই অল্প সময়েই ভুলে গেলেন, ওই যে আমাকে গতকাল রাতে হেল্প করলেন... রাতে আম্মু বকাঝকা করেছে, তাই ফোন দিতে...’

পরের শব্দগুলো আর কানে ঢুকল কিনা মনে নেই। শুধু মনে হলো বুকের ওপর শত শত টনের চেপে থাকা পাথরটা নেমে গেল।

   

বরাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলন: পূর্ণ স্বীকৃতি কতদূর?



প্রদীপ কুমার দত্ত
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আমরা বাংলাদেশে ভাষা আন্দোলন বলতেই বুঝি বৃটিশ শাসন পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানে ১৯৪৮-এ শুরু হওয়া এবং বায়ান্নর অমর ভাষা শহীদদের আত্মদানের মাধ্যমে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে। একুশে ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর ভাষা আন্দোলনের জন্য একটি দিক নির্দেশক দিন। সেই আন্দোলনের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয় পূর্ব বাংলার বাঙ্গালীরা। পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে দানা বাঁধে স্বাধিকার অর্জনের আন্দোলন। বহু আন্দোলন, সংগ্রাম ও সর্বোপরি মহান মুক্তিযুদ্ধের অবর্ণনীয় কষ্ট আর সমুদ্রসম আত্মত্যাগ এবং অসীম বীরত্বের ফলশ্রুতিতে আমরা পাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

এর বহু পরে, বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে, বাংলাদেশী কানাডা প্রবাসী রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম এর নেতৃত্বে পৃথবীর বিভিন্ন ভাষাভাষীদের নিয়ে মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ লাভার্স অফ দি ওয়ার্ল্ড গঠিত হয় কানাডার ভ্যাংকুভারে। এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ ও নিরলস প্রচেষ্টা এবং বাংলাদেশ সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় দিনটি বিশ্বসভায় আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত। এই দিনের জাতিসংঘ ঘোষিত অঙ্গিকার বিশ্বের প্রতিটি ভাষাকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করা এবং বিদ্যমান প্রায় ৭০০০ ভাষার একটিকে ও আর হারিয়ে যেতে না দেয়া। ইতিমধ্যে আধিপত্যবাদের কারণে ও সচেতন মহলের সচেতনতার অভাবে বহু ভাষা, সাথে সাথে তাদের সংস্কৃতি, পুরাতত্ত্ব ও ইতিহাস পৃথিবীর বুক থেকে মুছে গেছে।

কাজেই আমাদের বুঝতে হবে, ভাষা আন্দোলনের স্বর্ণখচিত ইতিহাস ও সাফল্যের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও কেবলমাত্র বাংলাদেশের ((তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের) বাঙ্গালীরাই ভাষার জন্য সংগ্রাম করা ও প্রাণ দেয়া একমাত্র জাতিগোষ্ঠী নই। অর্ধ সহস্রাব্দের আগে স্পেনীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দক্ষিণ আমেরিকার মায়া,আজটেক,ইনকা নামের তৎকালীন উন্নত সভ্যতার জাতিসমূহকে জেনোসাইডের মাধ্যমে ধ্বংস করে দিয়েছে।প্রতি মায়া লোকালয়ে একটি করে পাঠাগার ছিল। এইরকম দশ হাজার লোকালয়ের পাঠাগারের সব বই তারা ধ্বংস করে দেয়। আজকের দিনে মাত্র আদি মায়া ভাষার তিনখানা বই (মেক্সিকো সিটি,মাদ্রিদ ও ড্রেসডেনে) সংরক্ষিত আছে। যুদ্ধ করেও মায়ানরা পাঠাগারগুলো বাঁচাতে পারেন নি। সাথ সাথে ক্রমে ধ্বংস হয়ে যায় তাঁদের সংস্কৃতি ও জাতিসত্তা।

বাংলাভাষী জনগণের ভাষার মর্যাদা রক্ষায় উল্লেখ্যোগ্য অবদান রয়েছে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির সাঁওতাল পরগণার অন্তর্গত মানভূমের বাঙ্গালীদের। বহু বছর সংগ্রাম,রক্ত ও জীবনের মূল্যে তাঁরা তাঁদের দাবি অনেকটা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এরপর বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় আন্দোলনের সূচনা আসামের কাছাড়ে।বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দেয়া প্রথম মহিলা শহীদ কমলা ভট্টাচার্য সহ এগার তরুন প্রাণ ঝড়ে পড়েছে এই আন্দোলনে।

১৯৬১-তে আসামের বরাক উপত্যকার বাঙালি জনগণ তাদের মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আন্দোলনে শামিল হয়। যদিও বরাকের সিংহভাগ জনগণ বাংলা ভাষায় কথা বলেন,তবুও ১৯৬১-তে অহমিয়াকে আসামের একমাত্র রাজ্যভাষা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। ফুসে ওঠেন বরাকের বাঙ্গালীরা।বাংলাভাষা বরাক উপত্যকার অন্যতম সরকারি ভাষার মর্যাদা পায়।

মানভূম ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস দীর্ঘ। সাঁওতাল পরগণার মানভূম জেলা বাঙালি অধ্যুষিত হলেও তা দীর্ঘকাল বিহারের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ভারতের স্বাধীনতার পর সেখানে হিন্দি প্রচলনের কড়াকড়িতে বাংলা ভাষাভাষীরা চাপের মুখে পড়েন। মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাঁরা। ১৯৪৮ থেকে দীর্ঘ আট বছর চলা এই আন্দোলনের সাফল্যে ১৯৫৬ এর ১ নভেম্বর মানভূমের বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয় পুরুলিয়া জেলা। বিহার থেকে নিয়ে পুরুলিয়াকে যুক্ত করা হয় পশ্চিমবঙ্গের সাথে। তাঁদের মাতৃভাষা বাংলা ব্যবহারের দ্বার উন্মুক্ত হয় তাঁদের সামনে।

এবারে আবার ফিরি ১৯ মে'র ইতিহাসে। আসামের বরাক উপত্যকা আদিকাল থেকেই বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল। একসময় এই এলাকার অধিকাংশ ডিমাসা জনগোষ্ঠীর কাছাড় রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ডিমাসা রাজন্যবর্গ ও বাংলাভাষার পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। কালক্রমে ব্রিটিশরা ভারত বিভাগ করে চলে গেলে আসাম প্রদেশের একাংশ সিলেট পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হয়। সিলেটের একাংশ ও ডিমাসা পার্বত্য ও সমতল অঞ্চল নিয়ে কাছাড় জেলা গঠিত হয়। এই জেলা বর্তমানে বিভক্ত হয়ে কাছাড়,হাইলাকান্দি,করিমগঞ্জ ও উত্তর কাছাড় পার্বত্য জেলা (ডিমা হাসাও)এই চার নতুন জেলায় রূপ নিয়েছে।

১৯৪৭ এ দেশবিভাগের পর থেকেই বরাক উপত্যকার কাছাড় জেলার অধিবাসীরা বৈষম্যের শিকার হতে থাকেন। আসাম অহমিয়াদের জন্য এবং বাঙ্গালীরা সেখানে বহিরাগত এমন বক্তব্য ও ওঠে। এখনও সেই প্রবণতা বিদ্যমান। জাতীয়তাবাদের জোয়ারে এক শ্রেণির রাজনীতিবিদরাও গা ভাসান। বঙ্গাল খেদা আন্দোলনও গড়ে ওঠে একসময়ে। সরকারিভাবে সেসব আন্দোলন ও সহিংসতা দমন হলেও পরবর্তী কালে সময়ে সময়ে এই জাতীয় সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে থাকে।

আসাম রাজ্য বিধান সভায় ভারতের স্বাধীনতার পর পর সদস্যরা বাংলা, হিন্দি বা ইংরেজিতে বক্তব্য রাখতে পারতেন।প্রথম আঘাত এলো ভাষার উপর। অহমিয়াকে একমাত্র রাজ্যভাষা ঘোষণা, শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে চালুর চেষ্টা এবং বিধানসভায় বাংলায় বক্তব্য রাখার অধিকার ক্ষুণ্ণ করে আইন চালুর বিরুদ্ধে আসামের বাঙ্গালী জনগণ দল-মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। আসাম রাজ্য সরকার কোনও গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথে গেলেন না। তাঁরা অহমিয়া জাতীয়তাবাদ এর সংকীর্ণ মানসিকতার নেতাদের প্রাধান্য দেয়ার নীতি গ্রহণ করেন। বাঙ্গালীরাও সংগঠিত হতে থাকেন।

অনুমান করা যায় আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বাহান্নর ঢাকার ভাষা আন্দোলন ও মানভূমের ভাষা আন্দোলনের সাফল্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।১৯৬০ সালের শেষে আসাম বিধান সভায় ভাষা বিল পাশ হয়। কফিনে শেষ পেরেক ঠোকা হয়ে গেলো। বাঙ্গালীরা ফুঁসে উঠলেন। লাগাতার আন্দোলন চলতে থাকলো।সত্যাগ্রহ,অসহযোগ, হরতাল, রেল রোখো,সংকল্প দিবস, ইত্যাকার অহিংস আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠল বরাক উপত্যকা। এই আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৬১ সালের ১৯মে তারিখে বরাকের কেন্দ্রবিন্দু শিলচরের রেলস্টেশনে ভোর থেকে আন্দোলনকারী সত্যাগ্রহীরা জড়ো হয়। হাজার হাজার ছাত্র যুবা জনতা রেলস্টেশন প্রাঙ্গন ও রেললাইনের উপর অবস্থান নেয়। তাঁদের সরাতে না পেরে সরকার নির্মম দমননীতির আশ্রয় নেয়। পুলিশ বাহিনী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ শুরু করে। নিহত হন পৃথিবীর প্রথম মহিলা ভাষা শহীদ কমলা ভট্টাচার্য সহ মোট ১১ জন ছাত্র যুবা। তাঁরাই একাদশ ভাষা শহীদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

তাঁদের আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষা দ্বিতীয় রাজ্যভাষার মর্যাদা পায়। শিলচর রেলস্টেশনের সামনে স্থাপিত হয় শহীদদের প্রতিকৃতি সম্বলিত শহীদ মিনার। যার পথ ধরে পরবর্তী কালে ছড়িয়ে পড়ে একই আকৃতির শহীদ মিনার সমগ্র বরাক উপত্যকায়। শিলচর রেলস্টেশনের নাম পাল্টে জনতা ভাষা শহীদ রেল স্টশন নাম রেখেছেন। যদিও পূর্ণ সরকারি স্বীকৃতি এখনও তার মেলেনি।

বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় একাদশ শহীদ সহ আন্দোলনকারীদের আত্মত্যাগ ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে। কিন্তু সব এলাকার বাঙ্গালিরা কি এই ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখেন? উত্তরটি ‘না’ সূচক। আমাদের কর্তব্য তাঁদের আত্মত্যাগের কাহিনী সকলকে জানানোর উদ্যোগ নেয়া যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম তাঁদের সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হতে শেখে। বরাক উপত্যকার একাদশ ভাষা শহীদ অমর রহে। বাংলা সহ সকল মাতৃভাষার অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত থাকুক।

এখনও সেই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন এমন অনেকেই বেঁচে আছেন। বেঁচে আছেন নেতৃত্ব দেয়াদের মধ্যে অনেকে। সাথে সাথে প্রত্যক্ষদর্শীদের ও সন্ধান পাওয়া এখনও কষ্টকর নয়। তবে সামনের সিকি শতাব্দীর মধ্যে প্রাকৃতিক নিয়মেই তাঁরা আর আমাদের মাঝে থাকবেন না। এখনই প্রকৃষ্ট সময় তাঁদের সাক্ষাৎকার রেকর্ড করে রাখার। পর্যাপ্ত গবেষণা হওয়া প্রয়োজন সেই আন্দোলন,তার কুশীলব এবং শহীদ পরিবার সমূহের বিষয়ে। বীরের সন্মান উপযুক্ত ভাবে হওয়া প্রয়োজন। বাংলা ভাষার এবং বাংলা ভাষাভাষী জনগণের মর্যাদা বিশ্বব্যাপী সমুন্নত রাখার জন্য আমাদের এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আরও অনেক বীরের আমাদের প্রয়োজন। যে মাটিতে বীরের যথাযোগ্য সন্মান নেই, সে মাটিতে বীর জন্মায় না।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও পরিব্রাজক

;

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;