জীবনের অনুভব ও অনুরণনে শীতের কবিতা



গোলাম কিবরিয়া পিনু
অলঙ্করণ শতাব্দী জাহিদ

অলঙ্করণ শতাব্দী জাহিদ

  • Font increase
  • Font Decrease

বছরের পৌষ মাসের শেষে আর মাঘ মাসের প্রথমে সারা দেশের ওপর দিয়ে কোনো কোনো বছর মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়! পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে আসে। কিছু কিছু এলাকার মানুষ ঘরবন্দী হয়ে পড়ে। শীতার্ত মানুষের বিভিন্ন দুর্ভোগও সেইসাথে লেপ্টে থাকে। এরমাঝে আমরা যারা ঢাকায় বসবাস করি, তারাও কনকনে শীত অনুভব করে থাকি। হিমেল বাতাসও কাউকে কাউকে কাবু করে। এমন পরিবেশে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য জায়গায় কবি সম্মেলনে কবিরা ছুটে গিয়ে কবিতা পড়ে। এই সময়টায় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বেড়ে যায়, বিভিন্ন পেশার মানুষ তার সুযোগ ও সাধ্য অনুযায়ী বিভিন্ন উৎসবে অংশ নেয়। এমন অবস্থায় আমরা যারা কবিতা লিখি বা পড়ি, তারা তো কবিতা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকি না, কবিতার কণ্ঠলগ্ন থেকে যাই, এই শীতেও।

এই শীতে বেছে বেছে খুঁজে খুঁছে বেশকিছু শীতের কবিতা পড়লাম, আর তা থেকে পাঠস্পৃহার উষ্ণতা পেলাম। এই শীতকে নিয়ে পুরো কবিতা লিখেছেন কোনো কোনো কবি, আবার কোনো কোনো কবি শীতের অনুষঙ্গ টেনে নিয়ে কবিতার কোনো পঙ্ক্তি সাজিয়েছেন। শীতের বর্ণনা ও অনুষঙ্গ পেয়ে যাই বাংলা কবিতার ধারাবাহিকতায়, সেই চর্যাপদের কবি থেকে আজকের তরুণতম কবির কবিতায়।

আমরা তো জানি—বাংলা কবিতা বহু বিষয় নিয়ে লেখা হয়েছে। এই কবিতায় তো মিশে আছে এদেশের মানুষের চৈতন্য-বুদ্ধি-আবেগ-কল্পনা ও বহুবিধ বোধ। আমরা পাঠক হিসেবে খুঁজে পাই জীবনের খণ্ড খণ্ড রূপ, খুঁজে পাই নিজের মুখ এবং দেশ ও প্রকৃতির মুখ।

ঋতুর বৈচিত্র্য একেক দেশে একেকভাবে উন্মুখ হতে দেখা যায়। বাংলাদেশের ঋতু বৈচিত্র্য প্রকৃতির এক স্বকীয়তা নিয়ে আছে। ছয় ঋতুর দেশ এই বাংলাদেশ। একেক ঋতু একেক আবহ ও রূপবৈশিষ্ট্য নিয়ে আমাদের জীবনের সাথে একাকার হয়ে আছে। শীত আমাদের ছয় ঋতুর মধ্যে অন্যতম। হেমন্তের পর বসন্তের আগে শীতের অবস্থান। পৌষ-মাঘ মাস নিয়ে শীত ঋতু আমাদের দিনপঞ্জির হিসেবে থাকলেও—শীত শুরু হয় কিছু আগে ও সমাপ্তিও কিছু পরে হতে দেখা যায়। বসন্ত জাগিয়ে দিয়ে শীত যেন চলে যায়।

শীতে বিভিন্ন রকমের শাকসবজির দেখা মেলে। বন্যার ছোবল থাকে না। নতুন ধানের আনন্দে কৃষক যেন খুঁজে পায় জীবনের সৌন্দর্য। শীত হয়ে ওঠে অন্যান্য ঋতুর চেয়ে আরো বেশি উৎসবলগ্ন। কত রকম পিঠা খাওয়ার ধুম। শীতে পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠান জেগে ওঠে। কোথাও পালাগান, কোথাও যাত্রাগান, কোথাও সাংস্কৃতিক উৎসব ও মেলা। এসব বাংলাদেশের মানুষের সামাজিক ঐকভূমি নিয়ে জীবনকে প্রবহমান রাখছে যুগ যুগ ধরে।

কবিরা তার দেশ, প্রকৃতি ও ঋতু অনুভব করেন—তাদের অনুভূতি দিয়ে, অভিজ্ঞতা  দিয়ে ও প্রজ্ঞা দিয়ে। এ-কারণে কবিতা হয়ে ওঠে শব্দের দ্যোতনায় পাঠকের কাছে সুখপ্রদ ও চৈতন্যআশ্রয়ী এক শিল্প। আমরা যদি আমাদের ঋতুর বৈভব ও বিভিন্ন অনুষঙ্গ অনুভব করতে যাই—তাহলে বাংলা কবিতার কাছে যেতে হবে। আমি এই শীতে বেশকিছু শীতের কবিতার কাছে গিয়ে এক ভিন্ন ভূগোল পেয়েছিলাম, তারই ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন ভূ-ভাগ তুলে ধরছি।

সেই চর্যাপদের এক কবি লিখেছেন :

‘করুণা মেহ নিরন্তর ফরিয়া
ভাবাভাব দুংদুল দুলিআ।’ (কবি ভুসুকুপাদালাম)

আধুনিক বাংলায় রূপান্তর করা  হয়েছে এভাবে :
‘ভাব-অভাবের কুয়াশা দলিত করে করুণা মেঘ
নিরন্তর স্ফুরিত হচ্ছে।’

মধ্যযুগের বাংলা কবিতায় শীতের ব্যঞ্জনা পাই এভাবে :
‘শিশিরক অন্তরে আওয়ে বসন্ত।’

এখনকার বাংলায় তা হয়ে এমন :
‘শীতকালের পর বসন্ত আসে।’

‘চণ্ডিমঙ্গল’ কাব্যে কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী লিখেছেন শীতসময়ের  কথা, যেমন :
‘শুনো দুঃখের কাহিনী শুনো দুঃখের কাহিনী
পুরান দোপাটা গায়ে দিতে করি পানি
পউষে প্রবল শীত সুখী যগজন।
তুলি পাড়ি পাছড়ি শীতের নিবারণ
হরিণী বদলে পাই পুরান খোসলা।’

মাইকেল মধুসূদন দত্ত-র ‘মেঘনাদবধ’ কাব্যে খুঁজে পাই এক ভিন্নমাত্রার শীতের কাব্য-সুষমা :
‘আলু থালু হায়, তবে কবরীবন্ধন!
আভরণহীণ দেহ, হিমানীতে যথা
কুসুমরতন-হীন  বন-সুশোভিনী
লতা!’

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতায় বাংলাদেশের বিভিন্ন ঋতুর অনুষঙ্গ এসেছে বৈচিত্র্যের সাথে। বাংলাদেশের প্রকৃতির বন্দনা তাঁর কবিতায় বিভিন্নভাবে প্রাণ পেয়েছে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘চিত্রা’ কাব্যগ্রন্থের ‘সিন্ধুপারে’ কবিতায় লিখেছেন :
‘পউষ প্রখরে শীতে জর্জর, ঝিল্লিমুখর রাতি
নিদ্রিত পুরী, নির্জন ঘর, নির্বাণদীপ বাতি।’

কিংবা ‘শীতে ও বসন্তে’ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ শীতের স্পর্শমান কাঁপুনির কথা বলেছেন, এভাবে :
‘প্রথম শীতের মাসে
শিশির লাগিল ঘাসে,
হু হু করে হাওয়া আসে,
       হি হি করে কাঁপে গাত্র।

কাজী নজরুল ইসলামের কবিতায় :
‘পউষ এলো গো!
পউষ এলো অশু-পাথার হিম-পারাবার পারায়ে।
ঐ যে এলো গো—
কুজ্ঝটিকায় ঘোমটা-পরা দিগন্তরে দাঁড়ায়ে।’

শীতের কত কবিতা লিখেছেন কবিরা, ভিন্নভিন্ন আদলে, আঙ্গিকে ও বোধভাষ্যি নিয়ে। বিষ্ণু দে-র কবিতায় প্রতীকী ব্যঞ্জনায় শীতের শব্দমালা পায় ভিন্নমাত্রা :
‘হিমের হাওয়া বয়ে তো গেল
                      দোঁহার মাঝে।
নীলোৎপল হয়েছে আজ কাঠগোলাপ।’

জীবনানন্দ দাশের কবিতায় শীতের কুয়াশা, রোদ, শিশির, ভেজাঘাস আরো অনেক শীতের অনুষঙ্গ বিভিন্নভাবে এসেছে, যা অন্য কবিদের কবিতায় ততটা দেখা যায় না। জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’ কবিতায় আমরা পাই এমন পঙ্ক্তি :
‘সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন
সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;’

তাঁর ‘শঙ্খমালা’ কবিতায় উপমা নিয়ে শীত :
‘বেতের ফলের মতো নীলাভ ব্যথিত তোমার দুই চোখ
খুঁজেছি নক্ষত্রে আমি—কুয়াশার পাখনায়—’

কবি সমর সেনের কবিতায় নগরজীবন রয়েছে এক মূল বিষয় হিসেবে, আর সেই জীবনের ক্লান্তি, বেদনাহত ক্লেদ ও বিভিন্ন অনুষঙ্গ এসেছে। একই পাটাতনে লেখা তার ‘মৃত্যু’ নামের কবিতাটি :
‘সূর্য অস্ত গেল, সূর্যদেব কোন দেশে—
এখানে সন্ধ্যা নামল,
শীতের আকাশে অন্ধকার ঝুলছে শূকরের চামড়ার মতো,
গলিতে গলিতে কেরোসিনের তীব্র গন্ধ
হাওয়ায় ওড়ে শুধু শেষহীন ধূলোর ঝড়;
এখানে সন্ধ্যা নামল শীতের শকুনের মতো।’

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য শোষণ ও শৃঙ্খল-মুক্তির দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে শ্রমজীবী মানুষের সংবেদনায় কবিতা লিখেছেন, তারই প্রতিভাস ‘প্রার্থী’ নামক কবিতায় :
‘হে সূর্য! শীতের সূর্য!
হিম শীতল সুদীর্ঘ রাত তোমার প্রতীক্ষায়
                       আমরা থাকি
যেমন প্রতীক্ষা করে থাকে কৃষকের চঞ্চল চোখ
                         ধান কাটার রোমাঞ্চকর দিনগুলির জন্য।’

আর কবি শামসুর রাহমানের কবিতায় এসে শীতের অস্তিত্ব পাই অন্য এক অনুভবে :
‘একদার কুয়াশায় লীন কোনো পৌষের হিমেল
রাত আজো অস্তিত্বের গীর্জের চূড়োয়
ঝরায় শিশির কণা।’
(শীতরাত্রির সংলাপ)

কবি আহসান হাবীব তাঁর ‘শীতের সকাল’ কবিতায় এক ভিন্ন চিত্রকল্পে শীতের ছবি টেনে এনেছেন :
‘রাত্রিশেষ!
কুয়াশায় ক্লান্ত শীতের সকাল—
পাতার ঝরোকা খুলে ডানা ঝাড়ে ক্লান্ত হরিয়াল।’

কবি শহীদ কাদরী শীতের শব্দ টেনে এনে মানবিকতার বন্ধনকে কবিতায় প্রাণ দিতে কুণ্ঠিত হন না, বরং সামাজিক জীবনকে সংহত করার জন্য কাব্যশক্তিকে অভিজ্ঞতায় ও কাব্য-সুষমায় উজ্জ্বল করেন :
‘অথচ এ-শীতে একা, উদ্ধত আমি,
আমি শুধু পোহাই না ম্লান রোদ
...
নিয়ত উত্তাপ দেই বন্ধু পরিজনে।’
(এইশীতে)

শীতের সময়ে উল্লিখিত কবিসহ অন্যান্য কবিদের শীতের কবিতা পড়তে পড়তে মনে হয়—কী এক জাদুকরী প্রতিভাসে শীতের অনুষঙ্গ টেনে এনেছেন কবিরা, কাব্যের শিল্পশর্তে কবিতাকে করেছেন সমৃদ্ধ, আর তা থেকে পাঠক হিসেবে আমরা বিভিন্ন বোধের সাজুয্যে পেয়ে যাই আমাদের শীত, স্বদেশ ও জীবন।

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;