আবুল হাসনাত : প্রতিষ্ঠান ছিল যার সাধনা



ড. কাজল রশীদ শাহীন
আবুল হাসনাত

আবুল হাসনাত

  • Font increase
  • Font Decrease

আবুল হাসনাত সম্পাদিত পত্রিকা কালি ও কলমের তরফে তরুণ লিখিয়েদের জন্য প্রবর্তন করা হয় কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার। ২০০৮ সালে প্রবর্তিত পুরস্কার শুরুর দিকে বহুজাতিক একটা কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে দেয়া হলেও পরবর্তীতে একক উদ্যোগে পরিচালিত হচ্ছে। আবুল হাসনাত বেঁচে থাকতে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে একটা বিষয় প্রায়শ উচ্চারিত হত। পুরস্কার প্রাপ্ত তরুণ কবি নিজের অনুভূতি প্রকাশে হাজির করতেন কমন একটা অভিযোগ। কালি ও কলম পুরস্কার পাওয়াটা উনার জন্য ভীষণ আনন্দের হলেও বেদনার বিষয় হল কালি ও কলম পত্রিকা কখনো উনার লেখা প্রকাশ করেননি। বেদনার এই অভিজ্ঞতা বিনিময় করার শানে নযুল হল সম্পাদক আবুল হাসনাতের বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর ছোঁড়া।

তরুণ কবি বুঝতে অপারগ যে, কবিতা প্রকাশ আর কাব্যগ্রন্থের জন্য পুরস্কার পাওয়া দুটো আসলে দুই বিষয়। পুরস্কার দেয়ার ক্ষেত্রে সম্পাদকের কোন প্রকার ভূমিকা নেই, যদি থাকে সেটাও খুবই গৌন, ধর্তব্যের মধ্যে না রাখায় যুক্তিযুক্ত ও শ্রেয়। পুরস্কার প্রদান করা হয় বিচারকদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক। উনাদের সিদ্ধান্তেই চূড়ান্ত হয় কে বা কারা পাচ্ছেন ওই বছরের পুরস্কার। কবিতা প্রকাশের ক্ষেত্রে সম্পাদক হিসেবে উনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। কবিতা দিয়েই বিচারের ক্ষমতা রাখেন কোন কবিতা প্রকাশিত হবে আর কোন কবিতা প্রত্যাখ্যাত হবে। এক্ষেত্রে কিছু কিছু সিদ্ধান্ত কোনো লেখক-কবি-সাহিত্যিকের বিপক্ষে যেতেই পারে। সেটাই সত্য, সম্পাদকীয়তার বাস্তবতা ও প্রসাদ গুণ। সম্পাদকের বিবেচনায় লেখক নয়, লেখা মুখ্য ভূমিকা পালন করে যে, আদৌ সেটা আলোর মুখ দেখবে, নাকি অমনোনীত হবে। লেখক বিবেচনায় নিয়ে প্রকৃতি সাহিত্য সম্পাদক কখনোই সম্পাকীয়তার বাছ-বিচার নিয়ে করেন না।

আবুল হাসনাত ছিলেন অন্য ধাতুতে গড়া একজন সম্পাদক। ফি-বছরের ওই সব অভিযোগ যে উনি ধর্তব্য জ্ঞান করেননি, তার প্রমাণ মেলে একই অভিযোগ একাধিকবার উচ্চারিত হওয়ায়। আবুল হাসনাতের সম্পাদকীয়তার সৌন্দর্য এখানেই। গল্প কবিতা প্রবন্ধ সেটা যাই-ই হোক না কেন নির্বাচনের ক্ষেত্রে কখনোই দ্বিধান্বিত কিংবা সংশয়িত ছিলেন না। বরং যারা এসব অভিযোগ উত্থাপন করেন এবং মান্যতা দেন, উভয়ই বিষয়টা গুলিয়ে ফেলেন এবং আবেগবশত একটা অভিযোগ হাজির করেন।

আবুল হাসনাত সাহিত্য পাতা ও সাহিত্য ম্যাগাজিন সম্পাদনার ক্ষেত্রে নিজেকে কিংবদন্তির পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। উনার অবর্তমানে এসময়ে এসে ওরকম তুলনীয় দ্বিতীয়জন কোথায়? সংবাদ এর সাহিত্য সাময়িকী সম্পাদনা করেছেন আড়াশ দশক। কালি ও কলমের দায়িত্বে ছিলেন দেড় যুগ। এসবেরও আগে যুক্ত ছিলেন গণসাহিত্য সম্পাদনার সঙ্গে। সাংবাদিকতা-সম্পাদকীয়তায় আবুল হাসনাত নানা কারণে বিশেষভাবে স্মরণীয় ও বরণীয়। আমাদের সংবাদপত্র জগতে এরকম কীর্তিমানের সংখ্যা অপ্রতুল, কিন্তু অনুপস্থিত নয়। তিনি যে কারণে ব্যতিক্রম ও বিরলপ্রজদের অন্তর্ভুক্ত, তার দৃশ্যমান উপস্থিতি মিলেছে খুব কম প্রতিভাধরদের মধ্যেই।

আবুল হাসনাত প্রতিষ্ঠানপ্রেমী ছিলেন। এই প্রেম ছিল তার সাধনার মন্ত্রতুল্য। তিনি প্রতিষ্ঠানকে বড় করতে চেয়েছেন। সারা জীবন বুঁদ হয়ে ছিলেন প্রতিষ্ঠানকে বড় করার সাধনায়। মনে প্রাণে চাইতেন প্রতিষ্ঠান বড় হোক। এবং এই প্রত্যয় বাস্তবায়নে নিজের নিবেদন যতটা দেওয়া সম্ভব, তার পুরোটা পূরণে তিনি সচেষ্ট ছিলেন। নিজের কাজ দিয়ে স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে হেঁটেছেন নিরলস এক যোদ্ধার ভূমিকা। নিজেকে ছাড়িয়ে প্রতিষ্ঠানকে বড় করার গুণ আবুল হাসনাতকে অন্যদের থেকে স্বতন্ত্র সত্তায় দাঁড় করিয়েছে।

বাঙালির প্রতিষ্ঠান ভাবনায় একটা সংকটের উপস্থিতি দীর্ঘদিনের। এ কারণে আমাদের শতায়ু প্রতিষ্ঠান নেই বললেই চলে। অথচ প্রতিষ্ঠান গড়ে না উঠলে ব্যক্তির বিকাশ দুরূহ হয়। প্রতিষ্ঠানের বাইরে যখন কারও বিকাশ ও নির্মিতি সম্ভব হয় তখন সেটা সন্দেহাতীতভাবে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বিশেষ। একারণে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং ন্যায্যতার সঙ্গে পরিচালনার কোনো বিকল্প নেই। প্রতিষ্ঠান যদি দাঁড়িয়ে যায় এবং নিয়ম কানুনে, নৈতিকতার পরিচয় দেয়, তাহলে ব্যক্তির বিকাশ স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অংশ হয়ে যায় এবং সেটা নিশ্চিতও হয়। আমেরিকায় ট্রাম্পের বিদায়ের আগে নানামুখী সংকট হাজির হলেও শেষাবধি যে গণতন্ত্রের বিজয় সুনিশ্চিত হল, তার পেছনে মুখ্য কারণ দেশটিতে প্রবলভাবে প্রাতিষ্ঠানিকতার চর্চা জারি রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের শক্তিই তার গণতন্ত্রকে রক্ষা করেছে।

প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি কেবল গণতন্ত্রকে সংহত করে না, ব্যক্তি-সমাজ ও রাষ্ট্রে ন্যায্যতা নিশ্চিত করে। মানুষের মৌলিক অধিকার পুরণের পাশাপাশি জীবনমানেও স্বস্তি ও স্বাধীনতা এনে দেয়। বেদনা ও পরিহাসের বিষয় হল, আমাদের এখানে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার অভ্যাস নেই। আঙুলের কড়ে গুণে এক প্রজন্মের কাছাকাছি কিংবা তার চেয়ে একটু বেশি বয়সী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে দু-একটি ব্যতিক্রম বাদে আশা জাগানিয়া সেসব প্রতিষ্ঠানেও প্রাতিষ্ঠানিকতার চর্চা প্রত্যাশিত মাত্রার নয়। ভক্তিবাদও সেসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে বড় বাধা। আবুল হাসনাতের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সাধনাকে আমরা যদি গভীরভাবে অবলোকন করি, তাহলে স্পষ্টরূপে ধরা দেয় প্রতিষ্ঠানের শক্তির ওপর তার আস্থা ও প্রতীতী। খুব বড় পরিসরে বিকশিত করার মতো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে উনার যোগসূত্রতা ছিল না। এই সত্যকে মান্যতা দিয়েই বলতে হয়, প্রতিষ্ঠান ছোট কিংবা বড়’র চেয়ে উনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল কাজ। সেই কাজকে তিনি এমনভাবে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন যার মধ্যে দিয়ে প্রকৃতার্থে প্রতিষ্ঠানই বিকশিত হয়েছে। সময় পরিক্রমায় হয়েছে দিবালোকের মতো সত্য। প্রতিষ্ঠান বড়ো হয়েছে, আবুল হাসনাতও কীর্তিমান হয়েছেন।

সংবাদ দৈনিক পত্রিকা হিসেবে দীর্ঘ সময় ধরে পালন করেছে উজ্জ্বল ভূমিকা, যা সর্বজনকর্তৃক স্বীকৃত ও প্রশংসিত। কিন্তু একথা তো সত্যি, সংবাদ এর ‘সাহিত্য সাময়িকী’ মূল পত্রিকার চেয়েও গুন-মান ও জনপ্রিয়তা বিচারে এগিয়ে ছিল। সংবাদ ‘সাহিত্য সাময়িকী’র এই যে অর্জন এর পেছনে মালিক পক্ষ, সম্পাদক-প্রকাশক ও সাংবাদিক-কর্মকর্তা-কর্মচারী সহ সকলেরই ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে। যা আমলে নেয়ার পরও এই সত্য সর্বজনবিদিত যে, এই অর্জন সম্ভব হয়েছে আবুল হাসনাতের সাহিত্য সম্পাদকীয়তার বিরল নিষ্ঠা- প্রেম ও প্রতিভার মিশেলে। উনার সাধনার শক্তি এতটাই উচ্চকিত ছিল যে, নির্দিষ্ট একটা কক্ষের দায়িত্বে থেকেও পুরো স্থাপনাকেই করেছেন আলোকিত। সাহিত্য সাময়িকীর কারণেই সংবাদ এর গ্রহণযোগ্যতা ও পাঠকপ্রিয়তা ক্রম বর্ধিষ্ণু হয়েছে।

ড. কাজল রশীদ শাহীন 

সাহিত্য সাময়িকীর মতো করে একই অভিমত কালি ও কলম পত্রিকার ক্ষেত্রেও উচ্চারণ করা যায়। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন নানা কার্যক্রমের মধ্যে দিয়ে শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষণা করে আসছে। কালি ও কলম উনাদের অনেকগুলো কার্যক্রমের একটি। আবুল হাসনাতের সম্পাদকীয়তার প্রসাদ গুণে কালি ও কলম হয়ে উঠেছিল বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের অন্যতম প্রধান কার্যক্রম। দেশে শুধু নয় পাশের দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায় এবং বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা বাংলা ভাষাভাষি মানুষের মাঝেও পত্রিকাটি বিশেষ সমীহ ও প্রশংসার জায়গা করে নিয়েছিল।

আবুল হাসনাতের অভিভাবকত্বে উপর্যুক্ত অর্জন সম্ভব হওয়ার এষণায় প্রধানত একটা কারণ খুঁজে পাওয়া যায়। তিনি প্রতিষ্ঠানকে কখনোই নিজের কিংবা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধিতে কাজে লাগাননি। প্রতিষ্ঠানকে ব্যক্তিগত লাভালাভের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করেননি। উনি যখন সংবাদ এর সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে খ্যাতির মধ্যগগণে তখন দেশে পত্রিকার সংখ্যায় তুলনামূলকভাবে কম। সংবাদ ‘সাহিত্য সাময়িকী’ অপ্রতিদ্বন্দ্বী এক প্লাটফর্ম। বিভিন্ন ক্ষেত্রের পেশাজীবীরা উন্মুখ হয়ে থাকতেন লেখা প্রকাশের জন্য। চাহিবামাত্রতো বটেই, উপঢৌকন দিয়েও সুযোগ খোঁজা ব্যক্তির অভাব ছিল না। কিন্তু তিনি সেসবের পথে হাঁটেননি। লেখা নির্বাচনে পালন করেছেন সত্যপুত্র যুধিষ্ঠিরের ভূমিকা। প্রকৃত লেখকদের সঙ্গে উনার ছিল হার্দিক সম্পর্ক। প্রয়োজনীয় লেখাটি যোগ্য লেখক দিয়ে লিখিয়ে নিতে উনার জুড়ি ছিল না। পাশাপাশি এটাও জানতেন এবং সর্বদায় মেনে চলতেন লেখক-সম্পাদক সম্পর্ক আদৌ কতটুকু হওয়ার আর কতোটা হওয়ার নয়। লেখক-সম্পাদক সম্পর্কে সেতুবন্ধ থাকা জরুরি আবার দূরত্ব থাকাটাও অপরিহার্য। আবুল হাসনাত এই জায়গাটাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। লেখক, তা তিনি যতই জনপ্রিয় কিংবা ক্ষমতাধরই হন না কেন, উনি যেন সাহিত্য সম্পাদককে পরিচালিত করার ধৃষ্টতা কিংবা বাঞ্ছা প্রকাশ না করেন, সেই সাহস- যোগ্যতা- নৈতিকতা ও অপ্রিয় হওয়ার ঝুঁকে নেয়ার ক্ষমতায় পারঙ্গম ছিলেন তিনি।

এ কারণে সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে সিকান্দার আবু জাফর, আহসান হাবীবের সমতুল্য ও কিংবদন্তি খ্যাতি অর্জন করলেও উনার ওপর গোস্বা করার লেখক-কবি-সাহিত্যিকের সংখ্যাও কম ছিল না। নন্দিত হলেও নিন্দিতও ছিলেন, যা জ্যেষ্ঠ দুই কিংবদন্তির ক্ষেত্রে তেমন নেই।

আবুল হাসনাতের সাধনা, প্রতিষ্ঠান প্রেম, ও সম্পাদকীয়তার সাহস ও সৌন্দর্যকে আবিষ্কার ও অন্বেষণ করতে হলে ‘গোস্বা’ ও ‘নিন্দিত’ হওয়ার কার্যকারণ বিশ্লেষণ করতে হবে। ওরকম ‘গোস্বা’ ও ‘নিন্দিত’ হওয়াকে উপেক্ষা করতে পেরেছেন বলেই আবুল হাসনাত স্বাধীন বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সাহিত্য সাময়িকী, সাহিত্য ম্যাগাজিনের একজন সার্থক সম্পাদক হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলেন।

আবুল হাসনাত কবিতা লিখতেন। কবি নাম ছিল মাহমুদ আল জামান। ‘জ্যোৎস্না ও দুর্বিপাক’, ‘কোনো একদিন ভুবনডাঙায়’, ‘ভুবনডাঙার মেঘ ও নধর কালো বিড়াল’ উনার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। শিশু-কিশোরদের জন্য লিখেছেন, ‘ইস্টিমার সিটি দিয়ে যায়’, ‘টুকু ও সমুদ্রের গল্প’, ‘যুদ্ধদিনের ধূসর দুপুরে’, ‘রানুর দুঃখ-ভালোবাসা’ প্রভৃতি গ্রন্থ। ‘টুকু ও সমুদ্রের গল্প’র জন্য ১৯৮২ সালে পান অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য পুরস্কার। শিল্প সমালোচনা ও প্রবন্ধ সাহিত্যে অর্জন করেছিলেন নিজস্ব এক শৈলী। ‘সতীনাথ, মানিক, রবিশঙ্কর ও অন্যান্য’ এবং জয়নুল, কামরুল, সফিউদ্দীন ও অন্যান্য’ গ্রন্থ যার উজ্জ্বল প্রতিভূ।

আবুল হাসনাতের বেড়ে ওঠা ঢাকায়। ১৯৪৫ সালের ১৭ জুলাই এই শহরেই জন্মগ্রহণ করেন। আয়ুষ্কাল ছিল ৭৫ বছর। ২০২০ সালের ১ নভেম্বর মারা যান। বামপন্থা ও প্রগতির প্রতি নিবেদিত ছিলেন আমৃত্যু। সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ছায়ানট’ এর সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।

শেষ পর্যন্ত উচ্চকিত ছিল উনার কবি ও সম্পাদক জীবন। এ ক্ষেত্রেও এগিয়ে রেখেছিলেন সম্পাদকীয় সত্তাকে, যার মধ্যে দিয়ে তিনি মূলত বৃহত্তর প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতেন। বিশ্বাস করতেন যে জাতির বড় বড় প্রতিষ্ঠান নেই সেই জাতি- সেই দেশ বিশ্বসভায় মাথা তুলে দাঁড়াতেও পারেন না।

আবুল হাসনাত ওরফে মাহমুদ আল জামান কবি ও লেখক জীবনকে সম্পাদকের জীবনের সঙ্গে জড়াননি কখনোই। দুটোকে আলাদা রেখেই মিটিয়েছেন যার যার প্রেম ও প্রত্যাশা। সাধন করেছেন ব্যক্তির দায়িত্ব ও কর্তব্য। পূরণ করেছেন জীবনের লক্ষ্য। পূর্ণতা দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের চাওয়া পাওয়া। যার মধ্যে দিয়ে দেশ ও জাতি পেয়েছে দিশা। প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ হওয়ার সুযোগ পেয়েছে নতুন প্রজন্ম।

ড. কাজল রশীদ শাহীন: সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও গবেষক।
[email protected]

দারুণ সৌভাগ্য আমাদের



মহীবুল আজিজ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...

আমি ক্রমশ সরু হয়ে যাওয়া ইতিহাসের
গলিটার দিকে তাকাই।
ওপার থেকে ছিটকে আসে বিগত কালের আলোক,
ইহুদিদের চর্বি দিয়ে সাবান বানিয়েছিল জার্মানরা।
বাথটাবে সেই সাবানের ফেনার মধ্যে ঠেসে ধরে
ওরা ঠাপাতো ইহুদি মেয়েদের।
পাকিস্তানিরা ঐভাবেই ঠাপাতো আমাদের।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
সিন্ধু থেকে আসতো আমাদের জেলা প্রশাসকেরা,
পেশোয়ার থেকে গভর্নরেরা।
স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হেডটিচার
প্রিন্সিপাল ভিসি'রা আসতো লাহোর করাচি মুলতান থেকে।
ফ্যালফেলে তাকিয়ে আমরা ভাবতাম,
আহা কবে জন্ম নেবে আমাদের মেসায়া!
নেপথ্যে ভেসে আসতো অদম্য কুচকাওয়াজের শব্দ।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
আমরা লম্বা লম্বা পাঞ্জাবি পরতাম গোড়ালি পর্যন্ত।
ঘরে ঘরে রবীন্দ্রনাথ নজরুলের গান বাজতো কাওয়ালির সুরে--
আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের নাম ভুলে যেতাম
কিন্তু জিন্না'কে ভুলতাম না।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
ঢাকার মাঠে খেলা হতো পাকিস্তান ক্রিকেট টিমের।
প্রত্যেকটি খেলায় একজন করে সুযোগ পেতো
বাঙালি টুয়েল্ফথৃ ম্যান যারা মূল খেলোয়াড়দের
বিশ্রাম দেবার জন্য প্রচণ্ড দাবদাহের রোদে
প্রাণপণ ফিল্ডিঙয়ের ওস্তাদি দেখাতো।

আমাদের কাজ হতো শুধু
পাকিস্তানিদের চার-ছয়ে উদ্দাম হাততালি দেওয়া,
হাততালি দিতে দিতে তালু ফাটিয়ে ফেলা।
তীব্র হাততালির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখি
আজ মার্চের সতেরো।
দারুণ সৌভাগ্য আমাদের তুমি জন্ম নিয়েছিলে!
১৭-০৩-২০২৩

;

বঙ্গীয়’র কিশোরগঞ্জ কমিটি গঠনের দায়িত্বে শাহ্ ইস্কান্দার আলী স্বপন



মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
বঙ্গীয়’র কেন্দ্রীয় সভা অনুষ্ঠিত

বঙ্গীয়’র কেন্দ্রীয় সভা অনুষ্ঠিত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঝদ্ধ মননের প্রাগ্রসর ভূমিপুত্র শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা-চেয়ারম্যান ও মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপন বঙ্গীয়’র কিশোরগঞ্জ কমিটি গঠনের দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় মাল্টিমিডিয়া নিউজ পোর্টাল বার্তা২৪.কম'র কন্ট্রিবিউটিং এডিটর ও কিশোরগঞ্জ নিউজ'র নিয়মিত লেখক।

বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি,শিল্প, সংগীত, কৃষ্টি ও ঐতিহ্যকে বিশ্বব্যাপী তুলে ধরার বহুল কার্যক্রম নিয়ে দেশের প্রাচীনতম ও অগ্রণী প্রতিষ্ঠা নবঙ্গীয় সাহিত্য- সংস্কৃতি সংসদ’র এক সভা এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

শনিবার (১১মার্চ ২০২৩) বিকেল ৪-৩০ টায় রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় নাট্যশালার কনফারেন্স হলের ভিআইপি সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় দেশের বরেণ্য শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের উপস্হিতিতে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গীয় সাহিত্য- সংস্কৃতি সংসদ’র মূখ্য উপদেষ্টা
কবি ও গীতিকার আজিজুর রহমান আজিজ। এতে সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম সঞ্চালনা করেন।

সভায় বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদের সদস্য বার্তা২৪.কম'র কন্ট্রিবিউটিং এডিটর লেখক, কমামিস্ট ও গীতিকার শাহ্ ইস্কান্দার আলী স্বপনকে বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদ’র কিশোরগঞ্জ জেলা শাখা গঠনের দায়িত্ব আরোপ করে তার হাতে বঙ্গীয় সাহিত্য-সংস্কৃতি সংসদ’র ইশতেহার তুলে দেন বঙ্গীয় সাহিত্য-সংস্কৃতি সংসদ’র মূখ্য উপদেষ্টা কবি ও গীতিকার আজিজুর রহমান আজিজ এবং সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম এবং অন্যান্য নেতৃবর্গ ।

এতে আরো বক্তব্য রাখেন বঙ্গীয়'র জার্মানির সভাপতি কবি নাজমুন নেসা পিয়ারী, বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক আমিনুর রহমান বেদু, রবীন্দ্র একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সংগীতশিল্পী বুলবুল মহলানবিশ, ইউনেস্কোর ব্রান্ড এম্বাসেডর নাজমুল হাসান সেরনিয়াবাত, বঙ্গীয়'র সভাপতি পর্ষদের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুর রহমান, বঙ্গীয়'র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে আলী নিয়ামত, কবি নাঈম আহমেদ, বঙ্গীয়'র কেন্দ্রীয় সদস্য কবি মীনা মাশরাফী, কবি পারভিন আক্তার সহ প্রমুখ।

সভার প্রথম পর্বে আন্তর্জাতিক রবীন্দ্র সম্মিলন উদযাপন বিষয়ক যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কবি আজিজুর রহমান আজিজকে আহবায়ক এবং সংগীতশিল্পী শামা রহমানকে সদস্য সচিব করে উদযাপন কমিটি গঠিত হয়। কমিটিতে বঙ্গীয়র সভাপতি পর্ষদের সকল সদস্য, রবীন্দ্র একাডেমির নির্বাহী শাখার সকল সদস্য, বঙ্গীয়র যুগ্ম সম্পাদকবৃন্দসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিশিষ্টজনকে নিয়ে পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠিত হবে।

দ্বিতীয় পর্বে অযুত তারুণ্যের বঙ্গবন্ধু সম্মিলন, দ্বিশতজন্মবর্ষে মাইকেল মধুসূদন দত্ত স্মরণ, অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত গ্রন্থ নিয়ে লেখক কবির আলোচনা সম্পন্ন হয়।

অনুষ্ঠানে সাংগঠনিক কার্যক্রমকে বিস্তৃত করার লক্ষ্যে ইউনাইটেড নেশন্সের ব্রান্ড এম্বাসেডর জনাব নাজমুল হাসান সেরনিয়াবাতকে সভাপতি পর্ষদের সদস্য, শিশু সাহিত্যিক হুমায়ূন কবির ঢালীকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক , সংস্কৃতি সেবক রোকনউদ্দীন পাঠানকে সাংগঠনিক সম্পাদক, কবি আনোয়ার কামালকে লিটল ম্যাগ সম্পাদক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তি সাংবাদিক শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপনকে নির্বাহী সদস্য ও কিশোরগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক, কবি মীনা মাশরাফীকে নীলফামারী জেলার সমন্বয়ক, জনাব এ এইচ এম সালেহ বেলালকে গাইবান্ধা জেলার সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।

উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন, বীরমুক্তিযোদ্ধা লেখক কবি আবদুল হালিম খান, বীরমুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, কবি মানিক চন্দ্র দে, কবি অর্ণব আশিক, কবি বাবুল আনোয়ার, দৈনিক বঙ্গজননীর সম্পাদক কামরুজ্জামান জিয়া, কবি শাহানা জেসমিন, কবি গবেষক আবু সাঈদ তুলু, চলচ্চিত্র নির্মাতা ড. বিশ্ব রায় (কলকাতা), বঙ্গীয় চট্রগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ফ্যাশন ডিজাইনার আমিনা রহমান লিপি, শিল্পী শাহরিয়ার পিউ, কবি সোহরাব সুমন, কবি সরকার পল্লব, কবি রহিমা আক্তার মৌ, কবি লিলি হক, কবি আকমল হোসেন খোকন, শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপন, হিরা পারভেজ, ড. দিপু সিদ্দিকী, শিক্ষক ও কবি রওশন ই ফেরদৌস, কবি পারভীন আক্তার, কবি শিল্পী মাহমুদা, পূর্বধলার মো. জাকির হোসেন তালুকদার, কবি আনারকলি, কবি অপরাজিতা অর্পিতা, ডা. নূরুল ইসলাম আকন্দ, আবৃত্তিশিল্পী যথাক্রমে রূপশ্রী চক্রবর্তী, রবিউল আলম রবি সরকার, জেবুন্নেছা মুনিয়া, চন্দনা সেনাগুপ্তা, কবি সংগঠক রাজিয়া রহমান, কবি শামীমা আক্তার, শিল্পী সাদিয়া শারমিন, কবি কনক চৌধুরী, কবি তাসলিমা জামালসহ প্রমুখ।

;

কলকাতায় রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাহিত্য উৎসব



মাহমুদ হাফিজ
কলকাতায় রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাহিত্য উৎসব

কলকাতায় রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাহিত্য উৎসব

  • Font increase
  • Font Decrease

কলকাতায় শুরু হয়েছে রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের তিন দিনব্যাপী সাহিত্য উৎসব। শুক্রবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্দুমতি সভাগৃহে বিকালে এ উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। এবারের উৎসবে বাংলাদেশের কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন, পরিব্রাজক ও ভ্রমণগদ্য সম্পাদক মাহমুদ হাফিজ, স.ম. শামসুল আলম, নাহার আহমেদ, ড. নাঈমা খানম প্রমুখকে সম্মানিত করা হয়।

বিকালে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক নলিনী বেরা। বিশিষ্ট নাট্যকার চন্দন সেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক শঙ্করলাল ভট্টাচার্য ও কবি সব্যসাচী দেব। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাধারণ সম্পাদক কবি সুরঙ্গমা ভট্টাচার্য। এতে সমাপণী বক্তৃতা করেন সংগঠনের সভাপতি কবি স্বপন ভট্টাচার্য। উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য।

আজ ও আগামীকাল ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটি হলে বিকাল থেকে কবিতা ও গল্পপাঠ, আলোচনা, শ্রুতিনাটক, সঙ্গীত অনুষ্ঠিত হবে। রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ, নেপাল, আসাম, ত্রিপুরার কয়েশ’ কবি লেখক অংশগ্রহণ করছেন।

;

কিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি



কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
কিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি

কিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি

  • Font increase
  • Font Decrease

করোনাকালে বন্ধ থাকার পর আবারো 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, বুদ্ধিবৃত্তিক সামাজিক উদ্যোগ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনে। এবার আনুষ্ঠানিকভাবে 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কার্যক্রমে ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ রচিত 'কোরআন-হাদিসের আলোকে মানবজীবনে রমজান' বইয়ের একশত কপি শুভেচ্ছামূলক প্রদান করা হবে। 

উল্লেখ্য, আগেও ইংরেজি নববর্ষে এবং ভাষার মাসে শত বিশিষ্টজনকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রন্থ উপহার দিয়েছিল ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বরিষ্ঠ চিকিৎসক ডা. এ. এ. মাজহারুল হক ও সমাজসেবী নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের শিল্প-সাহিত্য-সমাজ উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা 'মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন' এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, আনসার বাহিনীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতার নামে গঠিত 'শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশন'। অনুষ্ঠানের মিডিয়া পার্টনার ছিল স্থানীয় নিউজ পোর্টাল কিশোরগঞ্জ নিউজ।

মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের পক্ষে জানানো হয়েছে যে, বরকতময়, নেয়ামতপূর্ণ মাহে রমজানের সঙ্গে অন্য কোনো মাসের তুলনা চলে না। রোজা হলো মাহে রমজানে অবশ্য পালনীয় ফরজ আমল, যার পুরস্কার স্বয়ং আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা নিজে দেবেন। মানবজীবনে রোজা একজন বান্দার আত্মীক ও শারীরিক কল্যাণের ও উন্নতির গুরুত্বপূর্ণ পন্থা। তদুপরি, রমজান মাসকে আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা তাঁর অপার ক্ষমা, দয়া আর অপরিসীম করুণা দিয়ে বান্দাদেরকে উপহার দিয়েছেন। রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত রোজা সঠিকভাবে পালন করলে রোজাদার নবজাতক শিশু মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রোজা রাখবে তার পূর্বের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’

পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে মানব জীবনে ও সামাজিক ব্যবস্থায় রমজান মাস ও রোজার গুরুত্ব উপস্থাপন করা হয়েছে ফাউন্ডেশন প্রদত্ত গ্রন্থে। এ গ্রন্থ রমজান মাসের তাৎপর্য এবং রোজার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে পাঠকদের সামনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছে ৩০টি সংক্ষিপ্ত অধ্যায়ের মাধ্যমে।

'কোরআন-হাদিসের আলোকে মানবজীবনে রমজান' বইয়ের লেখক মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. মাহফুজ পারভেজ। তাঁর পিতা: ডা. এ.এ, মাজহারুল হক, ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। মাতা: নূরজাহান বেগম, সমাজসেবী। ড. মাহফুজ পারভেজের জন্ম: ৮ মার্চ ১৯৬৬, কিশোরগঞ্জ শহরে। পড়াশোনা: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (পিএইচ,ডি)। পেশা: অধ্যাপনা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। লেখালেখি, গবেষণা ও সাহিত্য সাধনায় ব্রতী। প্রকাশিত গ্রন্থ কুড়িটি। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ- গবেষণা-প্রবন্ধ: বিদ্রোহী পার্বত্য চট্টগ্রাম ও শান্তিচুক্তি, দারাশিকোহ: মুঘল ইতিহাসের ট্র্যাজিক হিরো। দ্বিশত জন্মবর্ষে বিদ্যাসাগর। উপন্যাস: পার্টিশনস, নীল উড়াল। ভ্রমণ: রক্তাক্ত নৈসর্গিক নেপালে। গল্প: ইতিহাসবিদ, ন্যানো ভালোবাসা ও অন্যান্য গল্প। কবিতা: মানব বংশের অলংকার, আমার সামনে নেই মহুয়ার বন, গন্ধর্বের অভিশাপ। অধ্যাপনা ও গবেষণা ছাড়াও তিনি বাংলাদেশের শীর্ষতম মাল্টিমিডিয়া পোর্টাল বার্তা২৪.কম'র অ্যাসোসিয়েট এডিটর এবং কিশোরগঞ্জকে জানার সুবর্ণ জানালা কিশোরগঞ্জ নিউজ'র উপদেষ্টা সম্পাদক রূপে সংযুক্ত রয়েছেন।

কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, বুদ্ধিবৃত্তিক সামাজিক উদ্যোগ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের  'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে আয়োজিত হবে রমজান মাসের প্রথম সপ্তাহে। এ কার্যক্রম সমন্বয় করবেন কিশোরগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরির সম্পাদক, ইতিহাসবিদ ও পাঠাগার আন্দোলনের অগ্রণীজন মু আ লতিফ। সমন্বয় কমিটিতে আরো রয়েছেন কিশোরগঞ্জ নিউজ'র প্রধান সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম, শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শাহ ইসকান্দার আলী স্বপন, সাংস্কৃতিজন লুৎফুন্নেছা চিনু ও চিকিৎসক নেতা ডা. গোলাম হোসেন।

মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের পক্ষে আরো জানানো হয় যে, ইতিপূর্বে ঘোষিত ৬ষ্ঠ এবং ৭ম মাজহারুন-নূর সম্মাননা বক্তৃতা ২০২০ এবং ২০২১ করোনাকালের বিরূপ পরিস্থিতিতে স্থগিত থাকায় তা যৌথভাবে মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত হবে। ভাষা সংগ্রামী ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ডা. এএ মাজহারুল হক এবং সমাজসেবী নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, সমাজসেবা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংস্থা 'মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন' কর্তৃক কিশোরগঞ্জের জীবিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জীবনব্যাপী বিশিষ্ট অবদানের স্বীকৃতি জানাতে ও ঐতিহাসিক মূল্যায়ন করতে ২০১৫ সাল থেকে এ সম্মাননা বক্তৃতা আয়োজন করা হচ্ছে, যা বক্তৃতা ও লিখিত আকারে প্রদান করেন মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. মাহফুজ পারভেজ।

মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন' গতানুগতিক সম্মাননার বদলে ব্যক্তির কর্ম ও কীর্তির বিশ্লেষণমূলক-মূল্যায়নভিত্তিক সম্মাননা বক্তৃতার মাধ্যমে তাঁর প্রকৃত স্বরূপ চিহ্নিত করে এবং এরই ভিত্তিতে জ্ঞাপন করা হয় যথাযথ সম্মান। সম্মাননা স্মারকের পাশাপাশি লিখিত আকারে বক্তৃতা-পুস্তিকায় চিত্রিত হন সম্মাননা প্রাপ্তগণ। মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন এই বুদ্ধিবৃত্তিক-একাডেমিক আবহে ধারাবাহিকভাবে সম্মাননা বক্তৃতার আয়োজন করে আসছে, যা কিশোরগঞ্জে তো বটেই, বাংলাদেশের মধ্যে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী। শুরু থেকে সম্মাননা বক্তৃতা প্রদান করেন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রফেসর, বিশিষ্ট লেখক ও বুদ্ধিজীবী ড. মাহফুজ পারভেজ, যিনি কিশোরগঞ্জে পাবলিক লেকচার সিরিজের মাধ্যমে গণবুদ্ধিবৃত্তিক পরিসর তৈরির পথিকৃৎ।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে প্রথম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান শিক্ষাবিদ প্রাণেশ কুমার চৌধুরী, ২০১৬ সালে দ্বিতীয় মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান দীপ্তিমান শিক্ষকদম্পতি: অধ্যক্ষ মুহ. নূরুল ইসলাম ও বেগম খালেদা ইসলাম, ২০১৭ সালে তৃতীয় মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান ‘প্রজ্ঞার দ্যুতি ও আভিজাত্যের প্রতীক: প্রফেসর রফিকুর রহমান চৌধুরী’ এবং ২০১৮ সালে চতুর্থ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান ‘ঋদ্ধ মননের প্রাগ্রসর ভূমিপুত্র: শাহ্ মাহতাব আলী’। ২০১৯ সালে পঞ্চম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা দেয়া হয় 'স্বাস্থ্যসেবা-শিক্ষায় পথিকৃৎ চিকিৎসক-দম্পতি' প্রফেসর ডা. আ ন ম নৌশাদ খান ও প্রফেসর ডা. সুফিয়া খাতুনকে। ৬ষ্ঠ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২০ প্রদান করা হয় নাসিরউদ্দিন ফারুকী, ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন ও শাহ আজিজুল হককে। এ উপলক্ষে ‘কিশোরগঞ্জে আইন পেশার নান্দনিক বিন্যাস’ শীর্ষক সম্মাননা বক্তৃতা বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করা সম্ভব হয়নি।

৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২১ প্রদান করা হয়েছে ইতিহাসবিদ, সাংবাদিক, পাঠ ও পাঠাগার আন্দোলনের অগ্রণীজন মু.আ. লতিফ,  মুক্তিযোদ্ধা-শিক্ষাবিদ ঊষা দেবী এবং শতবর্ষ অতিক্রমকারী ১২০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান আলীমুদ্দীন লাইব্রেরীকে, যারা কিশোরগঞ্জের সামাজিক ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক বিন্যাসে স্বকীয় কৃতিত্বের প্রভায় উজ্জ্বল। জীবনব্যাপী কিশোরগঞ্জের মাটি ও মানুষের জন্য শৈল্পিক দ্যোতনায় নান্দনিক বর্ণালী সৃজন করেছেন এই তিন গুণান্বিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।

ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ জানান, ৬ষ্ঠ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা ২০২০ এবং ৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা ২০২১ একসাথে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, যা মার্চ মাসের শেষ দিকে আয়োজিত হবে।

;