ধারাবাহিক উপন্যাস ‘রংধনু’-৩



মাহফুজ পারভেজ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

[তৃতীয় কিস্তি]

ম্যারির গোপন কষ্ট অনুভব করলেও আবেগাক্রান্ত হন না মিসেস অ্যানি। তার মতামত ও মনোভাব অন্যরকম এবং বহুলাংশে বাস্তবসম্মত। বহু মায়ের মতো তিনিও বিশ্বাস করেন, আবার নতুন সংসার শুরু করলে ম্যারির একাকীত্বের কষ্ট ও অন্যান্য সমস্যার সুরাহা হয়ে যাবে। সে লক্ষ্যে তিনি তার চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। অন্যদিকে, তাকে ঘিরে মায়ের এসব তৎপরতার কারণে ম্যারি সারাক্ষণ তটস্থ থাকেন। অবশেষে মায়ের আতিশয্য ও উৎসাহী প্রেমিকবৃন্দের উপদ্রব থেকে বাঁচতে তিনি বাড়িতে কম সময় কাটানোর পথ খুঁজতে থাকেন। টমাস দিনে দিনে বড় হচ্ছে। একা একাই সে তার কাজকর্ম করতে পারে। এদিকে তার স্কুলিং শুরু হয়ে গেছে। ম্যারি ভাবলেন, যথেষ্ট হয়েছে, আর নয়। বাড়িতে মায়ের একতরফা কথা শোনা আর উৎসাহী প্রেমিকদের আনুষ্ঠানিক ও আতঙ্কজনক আগমনের জন্য ক্লান্তিকর অপেক্ষায় দিন কাটানোর কোনো মানে হয় না। তার যতটুকু পড়াশোনা, তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোটখাট চাকরি জুটে যাওয়ার কথা। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনি প্রাক্তনী এবং তার সাবেক স্বামী এখানে অধ্যাপনা করেছেন। নিজের পরিবারের মতোই বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্ক। ফলে অল্প-বিস্তর খোঁজ-খবর করতেই বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরিতে অনায়াসে চাকরি হয়ে গেলো ম্যারির। ম্যারি আপাতত হাফ ছেড়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস নেওয়ার ফুসরত পেলেন।

দিনের বেশির ভাগ অংশ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে লাইব্রেরির কাজে কাটিয়ে পড়ন্ত বিকেলে ক্লান্ত ম্যারি বাড়ি ফিরলে মিসেস অ্যানি ম্যার্গারেট কথাবার্তা বলার সাহস পান না। তার পরিশ্রান্ত মেয়ের দিকে তাকিয়ে কথাবার্তা বলার ভাবনায় ইতি টানেন। এদিকে, লাইব্রেরির কাজে যোগ দিয়ে এক অতলান্ত জগতের দেখা পেয়েছেন ম্যারি। কাজের ফাঁকে ফাঁকে পড়ছেন অসাধারণ নানা বই। বাস্তব জগতের কষ্ট-বেদনা থেকে তিনি যেন মুক্তির স্বাদ পান বইয়ের প্রশান্ত পাতায়। লাইব্রেরিয়ান মিসেস ন্যান্সি অনেক আগে থেকেই ম্যারিকে চেনেন। তার ব্যক্তিগত জীবনের ভাঙাগড়াও মিসেস ন্যান্সির অজানা নয়। তিনি নিজে আগ্রহী হয়ে ম্যারিকে চমৎকার সব বই পড়ার জন্য বেছে দেন। কিছু অর্ধ-পঠিত বই ম্যারি সঙ্গে করে বাসায় নিয়ে আসেন। বিশ্রাম ও নিজের কিছু কাজকর্ম করার পর সেগুলো নিয়ে বিছানায় যান তিনি। ক্রমশ তার যাপনের আটপৌরে রুটিনে বড় ধরনের রূপান্তর ঘটে। তিনি আর বই একাকার হতে থাকে দিনে দিনে। ম্যারির এমন রুটিন ভেদ করে মা কথা বলার সুযোগ পান খুবই কম। এমন পরিস্থিতি ম্যারির জন্য কম স্বস্তির বিষয় নয়।

ফলে আজকাল মিসেস অ্যানি মার্গারেট ডিনারের সময়টাতেই শুধু ম্যারির সঙ্গে আলাপের সুযোগ নিতে পারেন। তারও কাজ কম নয়। দৌড়াদৌড়িতে তার দিন শুরু হয় মেয়ে লাইব্রেরি ও নাতীর স্কুলে যাবার তাড়ার মধ্যে। তখন দম ফেলার মতো অবস্থায় থাকে না কেউই। বাকী দিন সবাই থাকে সবার কাজে ব্যস্ত। অতএব রাতের খাবারের সময়ই কিছুটা আলাপের অবসর মেলে। তখন টুকটাক কথার বেশি কিছু বলাও সম্ভব হয় না। দিনে দিনে মিসেস অ্যানি মার্গারেটের বকবকানি অনেকটাই হ্রাস পেতে থাকে। পরিস্থিতির পরিবর্তনে মনে মনে খুশি হন ম্যারি।    

কিন্তু রাত নামতেই ম্যারির নিজের মধ্যে দ্বিধা এসে ভর করে। তার মন-প্রাণ চলে যায় অন্ধকারের কালো চাদরে আচ্ছাদিত বাগানে। তিনি নিশ্চিত হতে পারেন না যে, বাগানের পাইন গাছটি তাকে টানে, নাকি তিনি নিজেই কাছে টেনে নেন পাইনকে? নাকি ক্যাভিনের স্মৃতি, যা আচ্ছন্ন হয়ে আছে পাইনের চারপাশে, তা গাছটির সঙ্গে মিলেমিশে তাকে অলক্ষ্যে ডাকে মধ্যরাতের নিশুতি প্রহরে? ম্যারি এসব প্রশ্নের মীমাংসা করতে পারেন না। তার দ্বিধা ও সংশয় বাড়তে থাকে। তথাপি তন্দ্রাচ্ছন্ন, ভূতে পাওয়া মানুষের মতো রাতের কালচে অন্ধকারে, বেগুনী, নীলাভ ফুলকির মাঝ দিয়ে তিনি প্রতিরাতে চলে আসেন বাগানে, পাইনের নৈকট্যে। 

পাইনের কাছে এলে তার শরীর ও মনে অবাক কাণ্ড ঘটে। তিনি নিবিড়ভাবে টের পান স্মৃতির অমোচনীয় স্পর্শ। আগুন দেখে পতঙ্গের ছুটে যাওয়ার মতো তিনি যেন অজানা টানে অন্ধকার বাগানে পাইন গাছের তলে চলে আসেন নিজেরই স্মৃতিকুণ্ডলীতে। তখন নিজের উপর তার কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তিনি অতীতের লেলিহান শিখায় অনুভব করেন স্মৃতির দুর্দমনীয় দাপট। তার মনে পড়তে থাকে পাইনের তলে ক্যাভিনের সঙ্গে অতিক্রান্ত অসংখ্য দিবস ও রজনীর টুকরো টুকরো কথা ও অভিজ্ঞান। 

ক্যাভিনের সঙ্গে ম্যারি যখন প্রথম এই বাড়িতে আসেন, তখন প্রায়-জংলার মতো আগাছায় ভরা ছিল পুরো বাগান। অবহেলায় বাড়ন্ত শিশু পাইন গাছটি ছিল ঝোপের আড়ালে। বেশ কয়েক দিন কঠোর পরিশ্রম করে ক্যাভিন বাগানের চেহারা পাল্টে দেন। আগাছার কবল থেকে উদ্ধার করেন পাইন গাছটিকে। গাছের চারপাশটা সুন্দর করে গুছিয়ে বসার চমৎকার পরিবেশ তৈরি করে ফেলেন ক্যাভিন। বইপড়া, চা-খাওয়া, ম্যারির সঙ্গের গল্পের সময়গুলো তিনি কাটাতে থাকেন পাইনের তলে। সবসময় ক্যাভিনের একটি সতর্ক নজর থাকে পাইন গাছটির দিকে। গাছটির কখন কি প্রয়োজন, তা নিয়ে ক্যাভিনের আগ্রহের অন্ত নেই।

ম্যারি খেয়াল করেন পাইন নিয়ে ক্যালিনের ব্যস্ততা ও আগ্রহের বিষয়টি। একদিন তিনি সরাসরি জানতে চান,

‘পাইন গাছটিকে এতো ভালোবাসো তুমি? পাইন কি তোমার প্রিয় বৃক্ষ?’

‘না। আমার প্রিয় বৃক্ষ ঝাঁকড়া মাথার জলপাই। আমার পূর্বপুরুষ ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে এসেছিল। জলপাই তাদের স্মৃতিতে উজ্জ্বল। এই পাইনকে ভালোবাসি অন্য কারণে।’

‘কি সেই কারণ?’

‘কারণ, এই পাইন আমাদের প্রথম সন্তানের মতো। তোমার, আমার নতুন জীবনে, এই নতুন বাসগৃহে প্রথম আমরা যাকে পেয়েছি, তা এই পাইন গাছ।’

ক্যাভিনের উত্তরে দারুণ চমকে উঠেন ম্যারি। তার ভেতর মাতৃত্বের প্রবল ঢেউ আলোড়ন জাগায়। তিনি গভীর মমতায় শিশু থেকে তারুণ্যের পথে বর্ধিষ্ণু পাইনের দিকে মগ্ন চোখে তাকিয়ে থাকেন। বেশ অনেকক্ষণ পর ক্যাভিনের কথায় ম্যারির ধ্যান ভাঙে।

‘জানো তো, মা-বাবার নিবিড় সান্নিধ্যে থাকলে সন্তানের বিকাশ ভালো হয়। তাদের শৈশব, কৈশোর, বেড়ে ওঠা, সবকিছু চাপমুক্ত হয়। আমরাও যত বেশি পাইনের কাছে থাকবো, ততদ্রুত গাছটিও সাহসী মানুষের মতো সুস্থ ও সবলভাবে বড় হবে।’

এইসব স্মৃতি ও কথোপকথন প্রবলভাবে মনে পড়ে পাইনের কাছে এলে। ম্যারির কষ্টগুলোও বুনো বাতাসের  মতো হু হু করে বাড়তে থাকে। পাইনের সমান্তরালে নিজের সন্তান টমাসের অবয়ব ভাসে চোখে। পিছনের দৃশ্যপটে ক্যাভিনের উপস্থিতি। ম্যারি ভীষণ অবাক হন। যে পিতা একটি অনাথ ও অবহেলিত পাইন গাছকে পিতৃত্ব-মাতৃত্ব দিয়ে লালন করার স্বপ্ন দেখতো, দিন-রাতের অধিকাংশ সময় পাইনের আশেপাশে থাকতো, সে কি করে ঔরসজাত সন্তানের কাছ থেকে স্বেচ্ছায় দূরে চলে গেলো! এই প্রশ্নের উত্তর তিনি অনেক ভেবেও খুঁজে পান না।

ম্যারি নানাভাবে বুঝতে চেষ্টা করেন, 'আকর্ষণ' কত দূর অবধি গেলে শুধুই 'আকর্ষণ' থাকে, আবার কত দূর চলে গেলে 'অবসেশনে' পরিণত হয়? 'অবসেশন’ ও 'আকর্ষণ'-এর মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা ঠিক ঠিক জানতে না পারলেও মানুষ আকর্ষণ, বিকর্ষণ, অবসেশন নিয়েই বেঁচে থাকে। কখনো কোনো মানুষের কাছে আসে, কখনো দূরে যায়। মানুষের একা কিংবা যৌথ জীবনে এক রহস্যময় ত্রিভুজের মতো আকর্ষণ, বিকর্ষণ, অবসেশন ঘিরে থাকে।

এক সময় বাগান থেকে ঘরে ফিরে আসেন ম্যারি। বিছানায় শুয়ে টের পান তার মাথায় আগ্নেয়গিরির লাভাস্রোতের মতো বইছে প্রশ্নের স্রোত। তার আর ঘুম আসে না। সাইড টেবিল থেকে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখেন সকাল হতে অনেক বাকী। তিনি ফোনের মিউজিক অপশনে গিয়ে একটি গান বেছে নেন। তাদের ক্যাম্পাসে পড়তে আসা পল্লবী নামের এক দক্ষিণ এশীয় তরুণী গানটি তাকে প্রেজেন্ট করেছে। গানের কথাগুলো বাংলায় হলেও সুর তাকে আচ্ছন্ন করে প্রবলভাবে। কখনো সুযোগ হলে গানটি তিনি ইংরেজিতে তর্জমা করার ইচ্ছা রাখেন। তিনি গানটি চালু করে চোখ বন্ধ করেন। কিন্তু তার হৃদয় যেন গানের কথাগুলোর সঙ্গে যৌথতায় গাইছে:

'যদি আর কারে ভালবাসো

যদি আর ফিরে নাহি আসো

তবে তুমি যাহা চাও তাই যেন পাও

আমি যত দুঃখ পাই গো।'

[পরবর্তী কিস্তি আগামী শুক্রবার]

আরও পড়ুন: ধারাবাহিক উপন্যাস ‘রংধনু’-২

ধারাবাহিক উপন্যাস 'রংধনু'-১

   

গড়তে চান বই পড়ার অভ্যাস?



মোঃ শরীফুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম
বুদ্ধিবৃত্তি ও মননশীলতার বিকাশের জন্য বই পড়ুন

বুদ্ধিবৃত্তি ও মননশীলতার বিকাশের জন্য বই পড়ুন

  • Font increase
  • Font Decrease

লাইব্রেরিগুলো আজকাল ফাঁকা পড়ে থাকে। ক্যাম্পাসের আড্ডায় বই, সে বড়ই হাস্যকর! বই পড়ার মতো সময় হয়ে ওঠে না কারোরই! আমাদের বর্তমান সময়টা কেড়ে নিয়েছে মোবাইল আর ইন্টারনেট। অথচ বই পড়ার গুরুত্ব কমবেশ সকলেরই জানা।

মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য বই কতটা জরুরি সেটা আমাদের অজানা নয়। কিন্তু একটি বই পড়ার জন্য যে সময় প্রয়োজন, প্রয়োজন উপযুক্ত স্থান। সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো, সঠিক বই নির্বাচন।

বই পড়া শুরুর ক্ষেত্রে নতুন পাঠকরা নানান সমস্যার সম্মুখীন হন। এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে না পেরে অনেকের আর বই পড়াই হয় না। আজকের আলোচনায় আমরা জানব কীভাবে একটি বই পাঠ করা যায়, গড়ে তোলা যায় বই পড়ার অভ্যাস।

সময়: বই পড়ার কথা বললেই সবাই এক বাক্যে বলবে, ‘সময় নেই!’ সময় নিয়ে আমাদের অভিযোগের বড় কারণ হলো, নিজের কাজগুলো গুছিয়ে না করা। প্রতিদিন মাত্র ২০-৩০ মিনিট সময় দিয়েই কিন্তু গড়ে তোলা যায় বই পড়ার অভ্যাস। সময় না পাওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হলো ইন্টারনেট আর সোশ্যাল মিডিয়া। তাই, সকাল কিংবা সন্ধ্যা হাতের ফোনটা দূরে সরিয়ে কিছুক্ষণের জন্য বসে যান বই নিয়ে।

পরিবেশ: উপযুক্ত পরিবেশ বই পড়ার মনোযোগ বাড়িয়ে দেয়। জানালার পাশে, বেলকনিতে কিংবা বাসার ছাদে বই পড়ার স্থানটি যেন হয় নির্জন এবং শান্ত। আজকাল বিভিন্ন পার্কে ‘নীরব বই পাঠ কর্মসূচি’ দেখা যায়। চাইলে যোগ দিতে পারেন তাঁদের দলেও। বই পড়ার পাশাপাশি পরিচয় হবে বইপ্রেমী মানুষদের সাথে।

বই নির্বাচন: বই পড়ার ক্ষেত্রে ইচ্ছে যেমন জরুরি তেমনি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সঠিক বই নির্বাচন। এক্ষেত্রে নিজের ভালো লাগাকে প্রাধান্য দিন। যেসব গল্প আপনাকে আকর্ষণ করে শুরুতে সেই বইগুলোকেই আপনার পাঠ্য তালিকায় রাখুন। 

পাঠাগার: পাঠাগারে গেলেই যে বই পড়তেই হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। বইয়ের সাথে সময় কাটালে এক সময় সেটা ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছে হবে। আর ছুঁয়ে দেখতে গিয়ে কখন যে দু’য়েক পাতা পড়ে ফেলবেন, নিজেই টের পাবেন না! তাই বই পড়ার অভ্যাস গড়তে চলে যান পাঠাগারে। বই না পড়ুন, অন্তত সুন্দর সুন্দর ছবি তোলা তো হবে!

সোশ্যাল মিডিয়া: আমরা সবকিছুতেই সোশ্যাল মিডিয়াকে দায়ী করি। অথচ সোশ্যাল মিডিয়ার সুষ্ঠু ব্যবহার আপনার অভ্যাস গড়ার বড় সহায়ক। ফেসবুকে সাহিত্য তথা বই বিষয়ক বিভিন্ন গ্রুপ রয়েছে। যেখানে বিভিন্ন বই নিয়ে আলোচনা হয়, হয় বই বিষয়ক আড্ডাও। এসব গ্রুপে যুক্ত হয়ে বাড়াতে পারেন বইয়ের সাথে নিজের সম্পৃক্ততা।

ধারাবাহিকতা: বলা হয়ে থাকে টানা ২১ দিন কোনো কাজ করলে সেটা অভ্যাসে পরিণত হয়। বই পড়ার ক্ষেত্রেও তা ব্যতিক্রম নয়। অভ্যাস গড়তে হলে ধরে রাখতে হবে ধারাবাহিকতা। সামান্য হলেও প্রতিদিন পড়ুন। এই ধারাবাহিকতায় আপনার বই পড়াকে অভ্যাসে পরিণত করবে। 

বই পড়ার অভ্যাস রাতারাতি তৈরি হবে না। এজন্য প্রয়োজন ধৈর্য্য এবং অধ্যাবসায়। নতুন পাঠকদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, কিছুদূর পড়ার পর বইটি আর ভালো লাগে না। এক্ষেত্রে ধৈর্য্যহারা হওয়া যাবে। জোর করে সে বই পড়ার প্রয়োজন নেই।

বই মানুষের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়ায়। বই পড়ার অভ্যাস গড়তে পারলে জীবনে উন্নতি সাধন অবধারিত। একাডেমিক পড়ার বাইরেও বইয়ের বিশাল একটি জগত রয়েছে। সেই জগতে মানুষ জানার জন্য পড়ে, পড়ে জ্ঞান অর্জনের জন্য। বই পড়লে মানসিক চাপ হ্রাস পায়, হয় মস্তিস্কের ব্যায়াম, বাড়ে শব্দ ভান্ডার ও স্মৃতি শক্তি। বই পাঠকের চিন্তার জগতকে বিস্তৃত করে, বৃদ্ধি করে বিশ্লেষণ ক্ষমতা। বই পড়ার মাধ্যমে বুদ্ধিবৃত্তি ও মননশীলতার বিকাশ হয়। তাই বই হোক প্রত্যেক মানুষের উত্তম বন্ধু এবং বইয়ের সঙ্গে হোক আমাদের মিতালি।

;

মায়ের সমাধির খোঁজে



মহীবুল আজিজ
মায়ের সমাধির খোঁজে

মায়ের সমাধির খোঁজে

  • Font increase
  • Font Decrease

কন্ডাক্টরকে বললাম, এখানে নামিয়ে দিন,
এখানে এই মিয়াপাড়ায় আমি নামবো—
মিয়াপাড়া কবরস্থানে শুয়ে আছে আমার মা।
মায়ের কবর দেখতে এলাম আটান্ন বছর পরে,
জ্যাঠা বলেছিলেন, গেট দিয়ে ঢুকে ডানদিকে একটু গেলে
একটা গোলাপ গাছ ঘেঁষে কবরটা,
কবরের আগে আমাকে গোলাপ গাছ খুঁজতে হয়—
জ্যাঠা চলে গেছেন তা-ও বত্রিশ বছর।
ডানদিকে ঘুরতেই জড়িয়ে ধরে তাজা গোলাপের ঘ্রাণ,
পাশাপাশি চারটা কবর, চারটাতেই গোলাপের পাহারা;
এত কবর এত কবর, কবরে ভর্তি কবরস্থান—
কোথায় শেষ শয্যা নিয়েছিলেন আমার মা!
হাওয়ায় পাতা দোলে গোলাপের, চারটাই একসঙ্গে,
চারটা গাছ থেকেই মুখবাড়ানো গোলাপ ডাক দেয়—
এইখানে এইখানে এইখানে—কোন্খানে!
উবু হবো কবরের মাটি নিতে
কিন্তু চারটাই ডানদিকে, চারটাই গোলাপের পাশে,
প্রতিটি কবর থেকে একটি একটি মুঠো নিয়ে
পলিথিনের চারটে ব্যাগে রাখি।
একবার মনে হয় প্রথমটাতে,
তারপর মনে হয় দ্বিতীয়টাতে,
আবার মনে হয় তৃতীয়টাতে
এবং মনে হয় চতুর্থটাতে সন্ধান রয়েছে মায়ের।
মা সুপ্ত থেকে যান অনির্দিষ্ট মাটিতে ,
তবে কোন্ মানবের মাটি ধরে রাখি বুকের কাছে!
ঠিক তখন বিস্ময়ের মতন একটি ফুটন্ত গোলাপ
গাছ থেকে ঝরে পড়ে দ্বিতীয় কবরে,
সংশয়ী মন বলে, তবে কী গোলাপই বার্তাবহ মায়ের!
অদৃষ্টে অবিশ্বাসী মন দোলে সংশয়ে,
তখন আরেকটি গোলাপ ঝরে পড়ে চতুর্থ কবরে।
অর্থাৎ দুই যোগ দুইয়ে এসে আমার আর হিসেব মেলে না,
জ্যাঠা বলেছিলেন, কবরটা গেটের ডানদিকে ঘুরতেই
এবং গোলাপের পাশে।
বত্রিশ বছরে চতুর্গুণ হয়েছে গোলাপ
কিন্তু এক ও অবিভাজ্য আমার মা’কে
এই গোলাপের কারণেই খুঁজে পাই না আমি—
ফিরে আসি শুধু গোলাপের ঘ্রাণ নিয়ে।

১১-০৯-২০২৩

;

অর্ধেক রিয়েল, অর্ধেক ভুল



শরীফুল আলম
অর্ধেক রিয়েল, অর্ধেক ভুল

অর্ধেক রিয়েল, অর্ধেক ভুল

  • Font increase
  • Font Decrease

 

আমি সীজার হতে চাইনি
তবুও তুমি ক্লিওপেট্রাই থেকে গেলে
অহেতুক লড়াইয়ে তুমি জয়ী হতে চেয়েছিলে
সম্ভবত একেই পরিযায়ী প্রেম বলে
আলো আঁধারীর খেলা বলে
স্বপ্ন আর জেগে থাকা বলে ,
সমাপ্তি কিম্বা বিবিধ, তা সে যাই হউক
এই সহজ কথাটি
আমরা কেউ কাউকে সহজ ভাবে বলতে পারিনি
অথচ তুমি ফ্রিজিডেয়ারটি বন্ধ করে রাখলে
আর বললে, "নোটেড ",

নিউইয়র্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ।
হ্যাঁ, এটাই সত্যি
তুমি লৌহশৃংখলে অনুজ্জ্বল এক ডিমলাইট
সুচারু মোহের অভাবে তুমি প্রমত্তা নদী
বাবুই পাখীর বাসার ন্যায় তুমি ঝুলে থাক আমার স্বপ্নে
যা হতে পারতো নির্মল এক সবুজের প্রান্তর ।

তুমি ওঁত পেতে থাকা বাঁশপাতার ফাঁকে পূর্ণিমা
আমি তোলপাড় করে ছুটে চলা এক্সপ্রেস ট্রেন
দলছুট শালিক,
আজ কোন বৈভব নেই
ভালোবাসাবাসি নেই ,
কবিতাও ইদানিং প্রিয় লাগেনা
তবু স্নায়ুরা জেগে থাকে
মনে হয় হলুদ পাতায় যেন ক্লোরোফিল
আমিও প্রবণতায় ফিরে যাই সাইবেরিয়া ।

আনচান মনে কত আকুলতা
কালবৈশাখীর তান্ডব
যেন বাতাসে কাঁপন ধরে,
এসো সখা,
এই শ্রাবণে আবার রিডিজাইন করি,
স্যাটেলাইটে প্যারালাল বার্তা পাঠাই
ভুলে যাই অর্ধেক রিয়েল আর অর্ধেক ভুল
প্লাবনে অবাধ্য ঢেউয়ের উছ্বল ।

________________________________________

 ৯ সেপ্টেম্বর । ২০২৩।
নিউইয়র্ক । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ।

 

;

পাট পাতার পেলকা সজনে শাকের শোলকা



প্রফেসর ড. মো: ফখরুল ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সোনালী আঁশ বা পাটের দেশ বাংলাদেশ। এক সময় আমাদের প্রধান অর্থকরী ফসল ছিল পাট। পাটোয়ারী পরিবারগুলো তো বটেই মৌসুমি পাটের ব্যবসায়ীরাও সমাজে মযার্দা পেত। কারণ, যারা পাটের ব্যবসা করতেন তাদের হাতে থাকতো প্রচুর টাকা। তখন পাটকলে যারা চাকরি করতেন তাদের পরিবারেরও অনেক সচ্ছলতা ছিল। নাইলন ও পলিথিনের ব্যাপক ব্যবহার শুরু হলে পাটের গুরুত্ব কমে যেতে শুরু করে। পাটের চট, রশি, শাড়ি আজকাল কেউ ব্যবহার করতে চায় না। দেশের বন্ধ হয়ে যাওয়া পাটকলগুলোর বড় বড় যন্ত্রপাতি মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তবে প্রতি বছর গ্রীষ্মের শুরুতে পাট শাকের চাহিদা বেড়ে যায়।

কারণ, পাট পাতার বহুবিধ গুণ। পাট শাক তেতো ও মিষ্টি দুটোই সমভাবে মানুষের কাছে প্রিয়। পাট শাক দিয়ে তৈরি এক ধরণের জনপ্রিয় খাবারের নাম ‘পেলকা’। এই পেলকা ভাজা চালের গুঁড়ো, খাবার সোডা, কাঁঠালবিচি, গোটা রসুন ও কাঁচা মরিচ দিয়ে মিশিয়ে তৈরি করে সাদা ভাতের সাথে পরিবেশন করা হয়ে থাকে। এই রান্নায় নানা ধরণের মশলা ব্যবহার করা হয়। যেগুলো বেশিরভাগ ঘরে তৈরি ভাজা উপকরণের ঢেঁকিছাটা সুগন্ধি গুঁড়ো বা শিলপাটায় পেষানো মিহি মশলা। সাধারণত: পেলকা ও শোলকা রান্নার আগে সরিষা, মেথি, ধনে, মৌরি, কালোজিরা ইত্যাদি ভেজে এই বিশেষ মশলা তৈরি করা হয়। সবকিছুর সংমিশ্রণে ভারী স্যুপের মতো করে সবুজ রংঙের এই রান্না সম্পন্ন করা হয়ে থাকে। যার ফলে পেলকার স্বাদ হয় খুবই অনন্য ও লোভনীয়।

অনেকে পাটের মৌসুমে পেলকা খাওয়ার লোভে শহর থেকে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে এই বিশেষ রান্নার আয়োজন করতে বায়না ধরে থাকেন। অনেকে পাট শাকের শুকতানি তৈরি করে শুকিয়ে সারা বছরের ভেষজ খাবার হিসেবে যত্ন সহকারে ঘরে সংরক্ষণ করেন। গ্রামের অনেকের কাছে পাট শাকের শুকতানি ভেজা পানি নানা রোগের মহাষৌধ হিসেবে বিবেচিত। অধুনা শহরের বহুতল ছাদ বাগানে পাট শাকের আবাদ করতে দেখা যাচ্ছে।

আরেকটি বিশেষ খাবারের নাম শোলকা। যেটি কচি সজনে পাতা দিয়ে তৈরি কর হয়। পাট শাকের তৈরি পেলকা মৌসুমি রান্না। কিন্তু সজনে পাতার তৈরি শোলকা সারা বছরব্যাপী রান্না করে খাওয়া যায়। বিশেষ করে বারোমাসী সজনে গাছ বাড়িতে থাকলে তো কোন কথাই নেই।

তবে কালের স্রোতে সৌখিন এসব খাবার হারিয়ে যেতে বসেছে। ব্যস্ত কর্মজীবি মানুষ আজকাল সামনে যা পায় তাই ঝট্পট খেয়ে নিতে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। পেলকা ও শোলকা রান্নার মতো সময় ও ধৈর্য্যধারণ করার ক্ষমতা আজকাল গ্রামীণ গৃহবধূদেরও নেই। বাজার থেকে পাট শাক কিনে কোন শহুরে পরিবারে রান্না হলে বাচ্চারা সেটা তিতা বলে খেতে চায় না। কিন্তু বিদেশি তিতো চকোলেটযুক্ত দামি চকোপাই বা আইসক্রীম তাদের কাছে খুবই প্রিয়।

এভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে পাট পাতা ও সজনে পাতা দিয়ে তৈরি জনপ্রিয় খাবার দুটো। কিন্তু অবাধ ইন্টারনেটের এই যুগে আবারো পাট ও সজনে পাতা দিয়ে তৈরি বিশেষ খাবার নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়েছে। কচি পাট পাতা দিয়ে তৈরি হচ্ছে শক্তিবর্ধক ভেষজ ওষুধ ও টনিক। আর সজনে পাতা ‘সুপার ফুডের’ তালিকায় নিজের নাম লিখিয়ে সারা বিশ্বে আলোড়ন তৈরি করে ফেলেছে।

একজন জাপানিজ গবেষক আফ্রিকা থেকে সজনে পাতা এনে গবেষণা করে এই মিরাক্কেল শাক থেকে ‘মরিঙ্গা পাউডার’ তৈরি করে এর বহুবিধ গুণ প্রচার করেছিলেন। সজনে গাছকে তিনি অত্যন্ত দুষ্প্রাপ্য উদ্ভিদ হিসেবে জানতেন। কিন্তু বাংলাদেশে ‘ড্রামস্টিক ট্রি’বা সজনে গাছ এত সহজলভ্য এবং এতটাই সুপরিচিত যে তিনি সেটা জানতে পেরে ভীষণ অবাক হয়েছিলেন। সজনে পাতা নামক ‘সুপার ফুডের’প্রতি আমাদের দেশের মানুষের অজ্ঞতা ও অবহেলা তাকে খুবই বিস্মিত করে তুলেছিল।

সজনে পাতা নামক ‘সুপার ফুডের’ প্রচার ও এর চাহিদার দিকে লক্ষ্য করে আজকাল সজনে বাগান তৈরির হিড়িক পড়ে গেছে। সজনে বাগান কেন্দ্রিক কারখানা গড়ে উঠেছে। সেসব কারখনায় মহিলা শ্রমিক সহ অনেকের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে সজনে পাতার পাউডার—এর ব্যাপক গুণকীর্তন চালু থাকায় বাজারে এর চাহিদা বেড়ে গেছে বহুগুণ।

প্রচারে প্রসার—এই তত্ত্ব যেন সজনে পাতাকে আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে। সাইবার জগতের এই বিরাট সাড়া আমাদের সমাজের সাধারণ মানুষের মধ্যে তেমন কোন জাগরণ তৈরি করেছে কবলে মনে হচ্ছে না। আগেকার দিনে পাট পাতা ও সজনে পাতা দিয়ে নানাব্যঞ্জন রান্না করা হতো। পরিবারের সদস্যরা সেগুলো মজা করে খেতেন। তাই তখন এত রোগ—বালাই হতো না। এটি মূলত: একটি সাধারণ প্রচলণ অথচ গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ।

আজকাল মানুষ কৃত্রিম খাবারের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। বিভিন্ন ক্ষতিকর কেমিক্যাল ও বাহারি রং মেশানো খাবার পাতে না হলে আধুনিক মানুষের মন ভরে না। আধুনিক মশলার মধ্যে আসলে কি কি উপাদান মিশ্রিত রয়েছে তা যাচাই করা সহজসাধ্য ব্যাপার নয়। ভেজালের এই যুগে বিএসটিআই—এর প্রতীক লাগানো কতকিছুই হরদম জব্দ করে জরিমানা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে উন্নয়নের অতিপ্রচার দেখে বিদেশিরা বাংলাদেশের দিকে ঘন ঘন তাকানো শুরু করেছে। তবে ঋণ ও ক্ষমতা লাভের জন্য তাদের দিকে আমরা আরো বেশি করে তাকিয়ে থাকি। এই পরনির্ভরশীলতা আমাদেরকে আরো বেশি পঙ্গু করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এবছর দেশের একদিকে দারুণ খরা, অন্যদিকে হঠাৎ বন্যা শুরু হয়েছে। কেউ বষার্কালে গভীর নলকূপের পানিতে সেচ দিয়ে রোপা আমন ধানের চারা লাগাচ্ছে আবার কারো বীজতলা তলিয়ে গেছে ঢলের পানিতে। এরই মাঝে এডিস মশা দেশের সব জেলায় সংক্রমণ ছড়িয়ে দেয়ায় সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২৩ পর্যন্ত রেকর্ড সংখ্যাক ৬৫৭ জন মারা গেছেন। মফস্বলের হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসার সুযোগ না পেয়ে জীবন বাঁচাতে হন্যে হয়ে ছুটে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকার দিকে।

ঢাকায় গিয়ে হাসপাতালের বেডে জায়গা না পেয়ে মেঝে, বারান্দায়, ওয়েটিং রুমে মাদুর পেতে রোগী নিয়ে শুয়ে আছেন। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে যখন কোন জটিল রোগীর জন্য জরুরি ভিত্তিতে রক্তের প্রয়োজন তখন। মফস্বল থেকে আসা অধিকাংশ রোগীর আত্মীয়—স্বজন রক্ত দেয়ার ব্যাপারে সজাগ নন। রক্ত দেয়ার কথা শুনলেই তারা অনেকে আঁৎকে উঠেন। কেউ কেউ কান্নাকাটি শুরু করে দেন। এছাড়া বাইরে থেকে রক্ত সংগ্রহ, খরচ বহন ইত্যাদির জন্য তারা মোটেও প্রস্তুত নন।

এরই মাঝে রাজপথের একটি লেনে একটি বিরোধী রাজনৈতিক দলের মিছিলের লম্বা লাইন যখন ৪—৫ মাইল লম্বা হচ্ছে তখন পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নিয়ে সরকারি দলও অপর দিকের বাকি লেনটি দখল করে মিছিল শুরু করে দিচ্ছে। ডেঙ্গুর হটস্পট রাজধানী ঢাকায় সারা দেশ থেকে ভাড়ায় মানুষ ডেকে এনে সম্মেলন ও মিছিল করাচ্ছে সরকারি দলও! এর ফলে প্রতিটি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে ভয়াবহ ডেঙ্গু।

অন্যদিকে দেশে কেউ যেন কিছকেইু ঠিকমতো পাত্তা দিতে চাচ্ছে না। স্থানীয় জনগণের উপলব্ধিকে পাত্তা না দেয়া আমাদের দেশজ উন্নয়ন অবনমনের প্রধান কারণ বা অন্তরায় হিসেবে আবিভূর্ত হয়েছে। এদেশে কেউ তার নিজের দোষ সহজে স্বীকার করতে অভ্যস্ত নয়। তাই মিথ্যা-জালিয়াতির বেসাতিতে বিপদ বেড়েই চলেছে চারদিকে। সেজন্য অতিদ্রুত পারস্পরিক দোষারোপ ও পরনির্ভরশীলতা পরিহার করে দেশজ তথ্য-উপাত্ত ভিত্তিক গবেষণা করে, দেশজ সম্পদ রক্ষা করতে হবে।

আমরা যখন ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা মেনে ঘুমিয়ে থাকি তখন অন্যেরা এসে ধরে উজাড় করে দেয়। আমরা যখন জাল ফেলি তখন নদী মাছশূন্য। বিদেশি লুটেরাদের হাতে উজাড় হচ্ছে জাতীয় মৎস্য সম্পদ। ইলিশ মাছের শুধু এক ভিডিও সব ইউটিউবারদের ‘তুমি সুড়ংঙ্গে’ ছড়াছড়ি। অথচ ইলিশের এই ভরা মৌসুমে কাঁচাবাজার ইলিশ শূন্য। বাড়ছে অবৈধ রোহিঙ্গা অভিবাসীদের ফুলে ফেঁপে উঠা সংখ্যার মতো বিষফোঁড়া। মিয়ানমার থেকে পাচার হয়ে ইয়াবা আসা বন্ধ হলে শুধু কক্সবাজার জেলাতেই দশ হাজার মানুষ বেকার হয়ে যাবে বলে ভাষ্য দেন কোন বিচারক!

খুব দ্রুত আধুনিক হবার জন্য শোলকা পেলকার মতো দেশজ খাবার ত্যাগ করে যখন দুর্বল শরীর নিয়ে কালাতিপাত করছি ঠিক তখন জাপানিজ গবেষকের উদ্ভাবিত সজনে পাতার পাউডার আমাদেরকে নবজীবন দান করতে পারবে বলে সেই আশায় সেদিকে হন্যে হয়ে দৌড়াচ্ছি। তবে শোলকা—পেলকার মতো দেশজ খাবার গ্রহণ করে মেরুদণ্ড সোজা করে চলতে শুরু না করলে বৈশ্বিক উজানের হঠাৎ ঢল এসে সাতকানিয়ার নতুন রেললাইন বাঁকা করে দেয়ার মতো ঘটনা আরো ঘন ঘন জেঁকে বসতে থাকবে বৈ—কি?

*লেখক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের প্রফেসর ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডীন। E-mail: [email protected]

 

;