দুর্নিবার সুজনের গুচ্ছকবিতা



দুর্নিবার সুজন
অলঙ্করণ শতাব্দী জাহিদ

অলঙ্করণ শতাব্দী জাহিদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পৃথিবীর পিঠে বসে

চুম্বকীয় আকর্ষণ বিকর্ষণেই অভিকর্ষ-বল আমাকে নক্ষত্রদের দিকে
টানে না। পৃথিবী একটা বর্তুলাকার চুম্বক হয়ে প্রদক্ষিণ করে তোমাকে
নিয়ে। পৃথিবীর পিঠে বসে, তুমি আমিও জড়িয়ে থেকে কিংবা দূরত্ব
নিয়ে ঘুরি একই কক্ষপথে। পিঁপড়েদের কক্ষপথ একই হলেও কে কার
ভাষা বোঝে বলো! সকালের ব্রেকফাস্টে ব্ল্যাক কফি বানাতে গেলে
দেখি, চিনির বয়ামে হাজারো পিঁপড়া তাদের খাবার নিয়ে মত্ত।

ডাস্টবিন থেকে ছয়জন পিঁপড়া একটা ভাত নিয়ে উঠে যাচ্ছে পাইপ
বেয়ে। তাদের প্রতি আমার মায়া লাগে। তাদের যুথবদ্ধ চলাচল দেখি,
তাদের চুরি দেখি, ঘুষ দেওয়া দেখি, দুর্বলের প্রতি অত্যাচার দেখি
কর্মী পিঁপড়েদের নিরন্তর সংগ্রাম দেখি, পুরুষ পিঁপড়েদের অলস
বসে থাকা দেখি। ঘোর নিয়ে দেখি তাদের আন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম।
অতঃপর আমি, আমি হয়ে যাই; খুনী হয়ে যাই! ব্ল্যাক কফি বানানোর
সংগ্রামে শত পিঁপড়েকে ভাসিয়ে দেই পানিতে। মৃত পিঁপড়েদের শরীর
ড্রেন বেয়ে চলে যায় তাদের নিজস্ব কবরে, সৎকারহীন!

তাদের সন্মিলিত শোকের ভাষা আমার বোঝা হয় না। তাদের সন্মিলিত গালি
মানুষ জাতের প্রতি আমি বুঝতে পারি না। তারাও কি একে অন্যকে
ধর্ষণ করে, খুন করে বলে‘আহা, কী মানবিক অত্যাচার!’

মৌমাছি, উঁইপোকা, মশা, ছারপোকা, ভীমরুল, তেলাপোকাদের সাথে
সহবাসে আমি প্রায়ই খুনি হয়ে যাই, আশরাফুল মাখলুকাত হয়ে যাই।
সবার উপরে মানুষ সত্য হয়ে যাই! আমার প্রবৃত্তিতে আছে নিজেকে
শ্রেষ্ঠ বলার প্রবণতা। তাই আমি আর সব প্রাণীদের ভালোবাসার মহত্ত্ব
দেখাই; ভালোবেসে খেয়ে ফেলি হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল সব। ঘৃণায়
মেরে ফেলি ছারপোকা, তেলাপোকা! তারপর আমি অহিংসবাদী হয়ে যাই!
আমি মহত্ত্বকে ছুঁতে চাই। মুরগি না খেলে আমাকে পাঙ্গাস, রুই খেতে হয়
তার চেয়ে বেশি অহিংস হলে কচকচে পুঁই ডাঁটাদের, লাউ ডাঁটাদের
সন্মিলিত ক্রন্দনে, বিরহে জগদীশ বসু উদ্ভিদের প্রাণে সংগীতের খোঁজ পায়।
তাদের ড্যান্স-ফেস্টে যে সংগীত বাজে তার ভাষা না বুঝে
পার করে দিচ্ছি একটা জীবন!

প্রিয় মাকড়সা,
তোর অদ্ভুত ঘরের মতো আমার ঘরও কি তোর কাছে অদ্ভুত লাগে?
এতসব অট্টালিকায় তুই সবখানে শুনতে পাশ কি মানুষদের শীৎকার,
চিৎকার? লোভ, ঘৃণা, হিংসা, ভয়? তুই আমার সব কথা বুঝিস?
বুঝিস, আমার দ্বিচারি চরিত্র? আমি মানুষ; আমি এরকমই। আমি আমার
প্রবৃত্তির অবিচ্ছেদ্য কারাগারে বন্দী! আমি বুঝতে পারি,
চুম্বকীয় আকর্ষণ বিকর্ষণেই অভিকর্ষ-বল আমাকে নক্ষত্রদের দিকে টানে না!

কোলাজ গল্প - ৪

তুমি আমাকে পাত্তা না দিলে একটা নিরুদ্দেশের নিঃসঙ্গ বিবাগী নৌকায়
বেড়িয়ে পড়ব। পরিবারকে, সমাজকে, দলকে, দেশকে ভালোবেসেছি
অনেক। সময়ে এরা সকলেই পরিচয়ের হিংস্রতায় উগ্র হয়ে ওঠে দ্বেষ যেন
মানব-প্রবৃত্তির মজ্জায়, এসবে রাজনীতি নির্মোহ, নির্লিপ্ত, নিশ্চল;
ফ্রয়েড আইনস্টাইনকে চিঠি লিখল অসহায়ত্বের। বিবেকহীন প্রবৃত্তির
প্রতিষেধক নেই; যুদ্ধ অনিবার্য; জাতি সাম্রাজ্যের ভেদ রেখার লাগাম
কে টানবে! তাই যুদ্ধ তোমার আমারও; সহবাসে, মতবাদে-মতভেদে
আইডেন্টিটিকে ছুড়ে ফেলে অহিংসার গঙ্গাস্নান নিই চলো।

আহা, বীর্যময় গঙ্গা। আহা, মহাভারত! গঙ্গাকেও বিয়ে করলো শিব!
কপোতাক্ষ আর ব্রহ্মপুত্র নদ গঙ্গার মানবায়নে ক্ষেপে ওঠেনি কি?
ব্রহ্মপুত্রের ক্রাশ ছিল গঙ্গা? সেই থেকে নদী ও মানুষের দ্বন্দ্ব?
পাড়ভাঙ্গা মানুষের আহাজারিতে শিবের লাম্পট্যের বিরুদ্ধে লড়াই নেই!
অবিবাহে-বিবাহের পুনঃপৌনকিতায় শিব জড়িয়েছেন প্রফেটাইজ কবি যিশু মুহাম্মদে
তিনি যাচ্ছেন কুম্ভমেলায়; নাঙ্গাসাধুর ঘামের ঘ্রাণেই মোদিজির
আতর কারখানার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবে রিলায়েন্স! গুজরাট ছড়িয়ে পড়ছে
কানেকটিকাটে। উন্মাদ তরুণের মুহুর্মুহু গুলিতে নিউটাউন স্কুলের
অর্ধশত শিশু নিহত। ওবামা গেছেন সান্ত্বনার মণ্ডা নিয়ে। পাশেই গুজরাটি
গ্রোসারিতে গান্ধীজির নিকুচি করছেন মোদির বেনিয়া সাঙ্গত। অহিংসার
পক্ষ নিলে হিংস্রভাবে আমার মুসলমানিত্বে আঘাত দিলেন। সেদিন খৎনা
শিশ্নের শিরদাঁড়া কেঁপে কেঁপে উঠলে ড্যানভারি যুদ্ধের গাজী হয়ে সিরিয়ায়
হিজরত করতাম। আইসিস ভাইদের গনিমতে ঝাল মিটত লাফাঙ্গা শিশ্নের।
আহা আইডেন্টিটি!

দেশকে ভালোবসি; তবু দেশগুলো সব উগ্র স্বাদেশিক।
গ্রামকে ভালোবাসি; তবু গ্রামান্ধ মারামারি ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে।
ধর্মকে ভালোবাসি; তথাপি ধর্মান্ধ হিংস্র নখর মানুষকে বাস্তুচ্যুত করে চলেছে
এ শতাব্দীতেও! দলকে ভালোবাসি; তবু আন্তঃদলীয় দ্বন্দ্বের অন্তর্ঘাত বধ
করে রাজনীতির মূলমন্ত্র। মানুষকে ভালোবাসি; যদিও মানবিক হিংস্রতা আর
অহং ভড়ংয়ের ‘পাশবিক’ গালিতে লজ্জা পাই। পৃথিবীকে ভালোবাসি;
তিনিও ছায়াপথ-চ্যুতিতে চুর্ণ বিচুর্ণ মানুষের ইমারতের মণ্ড নিয়ে পৌঁছে যাবেন
কৃষ্ণগহব্বরে।

কেয়ামত সে কেয়ামত!
তুমিই আমার সাধনভজন প্রিয়,
চলো নৌকায় উঠি, নুহের নৌকা বাঁধা রাখা ঘাটে।

মুহূর্ত

মুহূর্তবাদী হতে হলে মুহূর্তকে কামড়ে কামড়ে আস্বাদন নিতে হবে।
খেতে হবে মুহূর্তের নীল গরল কামড়!
ভাবো, মুহূর্তের জন্য বাঁঁচছো তুমি। এরপর হয়তো কিছু থাকবে না;
কোনো কল্পিত স্বর্গ কি নরক। নীল সাগরের কুয়াশা মিলিয়ে যাবে দিগন্তে।
ভাবো, মানুষের প্রবৃত্তির অবিচ্ছেদ্য কারাগার ভেঙে দেবে মনোবিজ্ঞানের
কোনো আবিষ্কার। লোভ, ঘৃণা, হিংসা থাকবে না কোথাও। ভেদাভেদ
থাকবে না ধর্ম,বর্ণ, ভাষা, পেশা, ধনী, গরিব, উচ্চ, নীচ কোনো কিছুরই।
সম্পত্তি-লিপ্সা, ক্ষমতানুরাগ, খ্যাতিলিপ্সা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা কিছুই থাকবে না।
পরিচয়ের হিংসা থেকে, জীবনের ক্ষুধা থেকে খাদ্য আহরণে অপরাপর
প্রাণী ও উদ্ভিদের অনিবার্য হত্যার পাপ থেকে নিস্তার পাবে মানুষ। ভাবো;
যা ঈশ্বরও ভাবেনি, সে মুহূর্তটির কল্পনা কত সুন্দর! ভাবো প্রিয়তম
তুমি আমার চেয়েও অনেক বেশি পৃথিবীর ছিলে!

তোমার অনুভুতিগুলি দিয়ে তালপিঠা, ঝালপিঠা আর ফ্রুট কেক বানিয়ে
খেয়ে ফেলতে পারি। তোমার নিশানাকে নিশিন্দা তিতার মতো লাগছে!
পৃথিবীর নিশীথে মুহূর্ত থেমে গেলে একটা কালো শূন্যতার গর্তে পড়ে যাবে
তুমিও! এত বৃষ্টি এই অন্ধকারে অনেক জীবনের শব্দ এখানে বৃষ্টির মতো
পড়ে যাচ্ছে, স্রোত হয়ে ভেসে যাচ্ছে সমুদ্রে।
পৃথিবীর সূর্যকে কোন কক্ষপথে পাঠালে ভিন্ন ছায়াপথের সূর্যদের সাথে
হলুদ প্রেমের ঘষাঘষি করবে না! হে সূর্য, জ্বলে যাচ্ছো তুমি।
জ্বালিয়ে যাচ্ছো লোকালয়, বিরাণ প্রান্তর। তোমার তেজ আরেকটু
বাড়িয়ে এন্টার্কটিকা, হিমালয় আর আল্পস গলিয়ে সব নদীকে এক করে
সব সমুদ্রকে এক করে একক জলজ পৃথিবী বানিয়ে থৈ থৈ ঢেউয়ে
ঢেউয়ে সব প্রাণীদের ঘুম পাড়িয়ে দিতে পারো; অনন্ত নির্বাণের ঘুম।

ডেড সি’র মতো একটা একক মৃত সাগর পড়ে থাকবে পৃথিবী হয়ে!
একটা পৃথিবীময় বজ্রপাতের আলো দিনের আলোর চেয়েও বেশি
আলো দিতে পারে। ভিন্ন নক্ষত্রের ভিন্ন গ্রহে চলে যেতে পারলে ৩৬০
ডিগ্রি ক্যামেরার সিনেমাটোগ্রাফার হয়ে ছেড়ে আসা একটা ব্যর্থ
খেয়োখেয়ি পৃথিবীর সিনেমা বানিয়ে একটা করুণ সুর জড়িয়ে দিতাম!
যে মুহূর্তে এই কল্পনা, স্বপ্ন, উদগ্র প্রত্যাশায় মেতে থাকছি এটিই আমার
সেরা মুহুর্ত। আমি মুহুর্তবাদী।

আমার মতে নিমিষেই শেষ হয়ে যেতে পারে মানুষের সব প্রত্যাশা, চেষ্টা, সব।
অতএব কল্লনা করে হলেও মুহূর্তের জন্য বাঁচো।

বৃক্ষদের কনসার্টে

পৃথিবীই প্রবাসক্ষেত্র। সকলেই
অভিবাসী। অভিযোজনের বেগে বেড়ে উঠি।
হাওয়ার তালে পাল টেনে রাখি। তবুও
প্রবল ঝড়ে উলটে যায় নৌকা। ধানের
সোনালি ক্ষেত ভিজে বেঁকে দোলে..
নদীর কিনারায় সোনালু গাছে ফিঙ্গে
কেঁপে যায়। আহা শীত! আষাঢ়ের ভিজে
বিকেলের টুপটুপ ঝরে পড়া শীত।

এমন ঘটনাও ঘটে যাবে; পুরাঘটিত
কালের ইতিহাসে, যাইতেছির কালে
প্রবাহিত বাতাসের স্রোতে হৈ হৈ
আনন্দরবে তুমিরাও ছিলে। চরমপুলকের
ঘোরে অপার্থিব স্বর্গকে ডেকে আনি
সমাজের সংসদে। ধর্মঘোরের শব্দরে
সংগীতে নামাই। হু হু বাতাস বইছে
হাওয়ার রাতে। ঝিলপাড়ের বৃক্ষদের
কর্নসাট বসিয়ে দিই এক্সপেরিমেন্টাল
কিংবা ক্লাসিকাল ড্যান্স-ফেস্টে।

সেখানে পাতা-প্রপাতাদের নৃত্যমুদ্রার
পুরস্কারে মোহর তুলে দেবেন
বিশেষ অতিথি আবুল মাল!

এতসব ইনভিজিবল সিনেমাটোগ্রাফির
রেকর্ড বর্জ্যে ব্ল্যাকহোল ভরে গেলে
নতুন গ্রহ নক্ষত্রের সিনেমার কাজে
নেমে নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণাকারী
আমিই আগামী পার্লামেন্টে স্বতন্ত্র
প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী।

হঠাৎ শেখ হাসিনা বুঝলেন পরম্পরায়
মহামানবদেরই প্রধানমন্ত্রী হতে হয়!
তিনি তাঁর প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে
আমাকে সমর্থন জানালেন।

পড়ে দেখবেন। ‘আমার ইস্তেহার’
আসছে বাজারে!

প্রধানমন্ত্রীর ট্রাডিশনাল শপথের
সাথে সংগোপন শপথ হবে
‘আমি শপথ করিতেছি যে,
আমি বিশ্বসরকার আর বিশ্বনাগরিক গঠন
আন্দোলনে সারা পৃথিবীকে কমরেড
বানিয়ে তুলব আর পৃথিবীর
নাম দেব মাইগ্রেন্টল্যান্ড।

পরবর্তী শপথানুষ্ঠানে প্যালেস্টাইন, রোহিঙ্গা
আর সিরিয়ানদের সাথে হুগো, টুটসি,
জিউস, সাঁওতালি, মুরংদেরদের
মার্চপাস্টে আমাকে অভিবাদন জানাবে
রাশান, চাইনিজ, ব্রিটিশ, আমেরিকান
কিংবা জানাতে বাধ্য হবে নব্য আর্যরাও।
আই হ্যাভ এ ড্রিম, আই হেভ অডাসিটি!
প্লিজ ভোট ফর মি...

গাছগুলো সব রাগি চোখে তাকিয়ে আছে

হও, হয়ে যাও। গাও, গেয়ে ওঠো। হাসো উল্লাস করো। কড়া তামাকের
মিষ্টি ঘোর নাও হেসে ওঠো।

জ্যাক, ড্যানিয়েলকেও আসতে বলো। মার্গারিটার ককটেল পাওয়া গেলে
নিউজক্যাফের সংবাদ নিউজ হয়ে যায়। কফি হাউজে ধর্মঘট, কাটলেট
আর ফিস ফিঙ্গারের দাম দু টাকা বেড়েছে। ওয়েস্টগেটে বোমাহামলায়
দুজন ইন্ডিয়ান কেনিয়ান নিহত গাছগুলো সব রাগী চোখে তাকিয়ে আছে
মানুষগুলোর কামড়াকামড়ি আর পিঁপড়েমি একইরকম লাগছে।

সে দাঁড়িয়ে থাকে স্থির। কে যেন তাকে ভাবাচ্ছে তার শাখা-প্রশাখায়
পাতা-প্রপাতায় নৃতকম্পনের দোলা যৌনসাফল্যের স্বপ্ন তারও আছে।
নিন্দার কামিনী, নন্দনে নরম হয়ে ঘ্রাণের গভীর চেতনাটি দিয়ে যায়
মগজে। তোমার সমস্ত দ্যুতির আলোয় মাখামাখি হয়ে হাঁড়িয়া নাচন
দিই চা বাগানের হোলিতে।
ভালোবাসি।
তোমার লম্পঝম্প কোলে ওঠা শৃঙ্গারের অভিনয় কিংবা গভীর গোপন
মমতা দেখে ফ্যালে আকাশমণি। বৃক্ষতলে থাকা না থাকা সাপেদের ভয়ে
ভাই ভাই বলে হাঁক দিলে চুদিয়াপাতা ফণা তুলে লজ্জাবতীর বাগানে
হামলা করে। দশজন মল্লিকবংশীয় লজ্জা নিহত হন। সংঘর্ষ ছড়িয়ে
পড়লে ইমানুয়েল ম্যাক্রোকে ফোন দেয় জাস্টিন ট্রুডো।

লজ্জা চৌধুরী বংশের অধিকারের বিল পাশ করে ওবামা প্রশাসন। ওদিকে
সুন্দরবন আন্দোলনের নেতারা লজ্জা বংশের লজ্জাকে রোগ বলে ফতোয়া
দ্যায়। বনের ভারসাম্য নষ্টের অপরাধে ফরহাদ মজহার রক্তাত্ব সংগ্রামের
ডাক দিলে ওহাবিয়া বংশের সব কুড়াল, গ্রেনেড, ককটেল ক্ষেপে ওঠে
৫৩ জেলার বিস্ফোরণে মতিঝিল কেঁপে ওঠে
পুড়ে যায়, ফলত লুই আইকানের অনিন্দ্যসুন্দর বাস্টার্ড চাইল্ড একা হয়ে যায়!

‘মাই আর্কিটেক্ট’
উত্তরপাড়ায় ক্যাপিটাল চলে গেল!

তবুও; যা তাই হও, গাও, হাসো, উল্লাস করো
ভিজিবল, ইনভিজিবল সব মৌল-মিলিটারি শাসন ধ্বসে যাবে কালে।

সবকিছু বোঝা যাচ্ছে

চারদিক থেকে শব্দ আসছে নগরের বারান্দায়। কানকুহরের পথে মগজ কাঁপানো
ঝিরঝির। কথা বলে যাচ্ছে সবাই, গেয়ে যাচ্ছে সবাই; মানুষ, বৃক্ষ, কীটপতঙ্গ সবাই।
শব্দকে বাক্য বানিয়ে সুরেলা হাওয়ার তালে কারা যে কোরাস গায়! একটা গভীর
স্তরে যেয়ে ভাবা যায়; তুমি কে? আমি কে? একটা অন্যরকম বাস্তব পৃথিবীতে
আমাদের লেনদেন।

তাই, ‘হাতে নাইরে কড়াকড়ি’ গায় তারা। সবকিছু বুঝে ফেলি আমি; বুঝতেও কষ্ট
হয় মাঝেমাঝে। হাসাহাসির চিলেকোঠা ছেড়ে গম্ভীর হয়ে চলে যাওয়া যায় বাহিরের
পৃথিবীতে। সেখানেও অনেক বৃক্ষদের দাঁড়িয়ে থাকায়, অনেক পিঁপড়েদের চলাচলে
অনেক মশাদের ওড়াউড়িতে আছে হাসাহাসি, বিরহ রোদন।

যদিও পৃথিবীর গতির মতো নয় কারো গতি। সবকিছু এত ধীরভাবে চলে। ধীর হয়ে
গেলে তাড়াহুড়ো থাকে না। দোকানি সিগারেট না দিয়ে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রাখলেও
রাগ লাগে না। একটা পাঁচশো সত্তর সাবান চাচ্ছে লোকটা ৪৩ বছর ধরে!

একজন জাতির পিতার শোক বয়ে বেড়াচ্ছে একজন দিনমজুর। ভিক্ষুক রমিজার
স্বামী হাসমত আলীও বঙ্গবন্ধু কন্যার নামে জমি কিনে মরে যায়!
এখনো উদাসীন মানুষেরা হাওয়ায় পুরনো প্রেমিকার প্রেত হয়ে ওড়া দেখে হাসে
রমেশের মতো। রমেশের ভালোবাসার বৃক্ষটি তার জন্য কাঁদে, মানুষের জন্য কাঁদে।
আর বাকি মানুষেরা বৃক্ষটিকে কেটে নিয়ে করাতে দেবে একদিন! কার ঘরের
আসবাব হবে সে কে জানে! আসবাবকে কেউ কি ভালোবাসে প্রেমিকার মতো?

শুনেছি, একটা ট্রাককে ভালোবাসে একজন কবি। ট্রাক দেখলেই নাকি তার শিশ্ন
উত্থিত হয়! বটগাছ দেখলেই আরেকজনের বিশ্বচরাচর লুপ্ত হয়ে ঘোরপ্রেম আসে।
পৃথিবীর মানুষেরা তাদের অন্ধরাহুর মতো ভাবে। কোনো নর নরকেও ভালোবাসে
কোনো নারী নারীকে। কোনো ক্লীব সমান্তরাল জীবনের ক্লেদ নিয়ে ইশ্বরকে ছুঁড়ে
দ্যায় প্রশ্নবাণ!

তবু তারা তো এরকমই! প্রচল ভাবনার বাইরের মানুষেরা, প্রাণীরা, বৃক্ষেরাও বেঁচে
বেঁচে মরে যায়! চর-ভৈরবী ঘাটে কত কত ইলিশ শেষ কান্না কেঁদে মরে গেছে, দেখেছি।
পৃথিবীর কোন গুদারাঘাটে, কোন বন্দরে যাচ্ছো তুমি? এডেন, মোম্বাসা, হেরাক্লিয়ন
না আলেকজান্দ্রিয়ায়? সবাই সবার মতো জীবন চালিয়ে যাচ্ছে, তবু সবাই সবাইকে
টিটকারি দিচ্ছে! যুগ যুগ ধরে এরকমই চিরায়ত জীবন!

পৃথিবী একটা মহাশূন্য-যানের মতো প্রবল গতিতে ভেসে যাচ্ছে। প্রতিদিন একবার
প্রদক্ষিণ করছে সে সূর্যকে। একটা বিশাল গোল মহাশূন্য-যান উড়ছে; যার চতুর্দিকে
মানুষ অন্যান্য প্রাণীকুল ও তৃণ-বৃক্ষেরা।

এত গতির মধ্যে মানুষেরাও নিজস্ব গতিতে কিলবিল করে কেঁচোদের মতো।
জানে না কেঁচোরাও গান করে নেচেনেচে তাদের সংসারে। কি সুন্দর পৃথিবী!
অদৃশ্য চিত্রগ্রাহক হয়ে তুমি এর সব মুহূর্ত রেকর্ড করে রাখতে পারো৷ মুহূর্ত
এগিয়ে যাচ্ছে, দৌড়াচ্ছে। মানুষের মনে কত কত মুহূর্ত গেঁথে যাচ্ছে। পৃথিবীর
গঞ্জগুলো অনেক বাতি জ্বালাতে জ্বালাতে শহর থেকে নগর মহানগর হয়ে
গেছে, যাচ্ছে, চারদিক থেকে শব্দ আসছে।

   

বরাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলন: পূর্ণ স্বীকৃতি কতদূর?



প্রদীপ কুমার দত্ত
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আমরা বাংলাদেশে ভাষা আন্দোলন বলতেই বুঝি বৃটিশ শাসন পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানে ১৯৪৮-এ শুরু হওয়া এবং বায়ান্নর অমর ভাষা শহীদদের আত্মদানের মাধ্যমে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে। একুশে ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর ভাষা আন্দোলনের জন্য একটি দিক নির্দেশক দিন। সেই আন্দোলনের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয় পূর্ব বাংলার বাঙ্গালীরা। পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে দানা বাঁধে স্বাধিকার অর্জনের আন্দোলন। বহু আন্দোলন, সংগ্রাম ও সর্বোপরি মহান মুক্তিযুদ্ধের অবর্ণনীয় কষ্ট আর সমুদ্রসম আত্মত্যাগ এবং অসীম বীরত্বের ফলশ্রুতিতে আমরা পাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

এর বহু পরে, বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে, বাংলাদেশী কানাডা প্রবাসী রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম এর নেতৃত্বে পৃথবীর বিভিন্ন ভাষাভাষীদের নিয়ে মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ লাভার্স অফ দি ওয়ার্ল্ড গঠিত হয় কানাডার ভ্যাংকুভারে। এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ ও নিরলস প্রচেষ্টা এবং বাংলাদেশ সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় দিনটি বিশ্বসভায় আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত। এই দিনের জাতিসংঘ ঘোষিত অঙ্গিকার বিশ্বের প্রতিটি ভাষাকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করা এবং বিদ্যমান প্রায় ৭০০০ ভাষার একটিকে ও আর হারিয়ে যেতে না দেয়া। ইতিমধ্যে আধিপত্যবাদের কারণে ও সচেতন মহলের সচেতনতার অভাবে বহু ভাষা, সাথে সাথে তাদের সংস্কৃতি, পুরাতত্ত্ব ও ইতিহাস পৃথিবীর বুক থেকে মুছে গেছে।

কাজেই আমাদের বুঝতে হবে, ভাষা আন্দোলনের স্বর্ণখচিত ইতিহাস ও সাফল্যের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও কেবলমাত্র বাংলাদেশের ((তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের) বাঙ্গালীরাই ভাষার জন্য সংগ্রাম করা ও প্রাণ দেয়া একমাত্র জাতিগোষ্ঠী নই। অর্ধ সহস্রাব্দের আগে স্পেনীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দক্ষিণ আমেরিকার মায়া,আজটেক,ইনকা নামের তৎকালীন উন্নত সভ্যতার জাতিসমূহকে জেনোসাইডের মাধ্যমে ধ্বংস করে দিয়েছে।প্রতি মায়া লোকালয়ে একটি করে পাঠাগার ছিল। এইরকম দশ হাজার লোকালয়ের পাঠাগারের সব বই তারা ধ্বংস করে দেয়। আজকের দিনে মাত্র আদি মায়া ভাষার তিনখানা বই (মেক্সিকো সিটি,মাদ্রিদ ও ড্রেসডেনে) সংরক্ষিত আছে। যুদ্ধ করেও মায়ানরা পাঠাগারগুলো বাঁচাতে পারেন নি। সাথ সাথে ক্রমে ধ্বংস হয়ে যায় তাঁদের সংস্কৃতি ও জাতিসত্তা।

বাংলাভাষী জনগণের ভাষার মর্যাদা রক্ষায় উল্লেখ্যোগ্য অবদান রয়েছে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির সাঁওতাল পরগণার অন্তর্গত মানভূমের বাঙ্গালীদের। বহু বছর সংগ্রাম,রক্ত ও জীবনের মূল্যে তাঁরা তাঁদের দাবি অনেকটা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এরপর বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় আন্দোলনের সূচনা আসামের কাছাড়ে।বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দেয়া প্রথম মহিলা শহীদ কমলা ভট্টাচার্য সহ এগার তরুন প্রাণ ঝড়ে পড়েছে এই আন্দোলনে।

১৯৬১-তে আসামের বরাক উপত্যকার বাঙালি জনগণ তাদের মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আন্দোলনে শামিল হয়। যদিও বরাকের সিংহভাগ জনগণ বাংলা ভাষায় কথা বলেন,তবুও ১৯৬১-তে অহমিয়াকে আসামের একমাত্র রাজ্যভাষা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। ফুসে ওঠেন বরাকের বাঙ্গালীরা।বাংলাভাষা বরাক উপত্যকার অন্যতম সরকারি ভাষার মর্যাদা পায়।

মানভূম ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস দীর্ঘ। সাঁওতাল পরগণার মানভূম জেলা বাঙালি অধ্যুষিত হলেও তা দীর্ঘকাল বিহারের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ভারতের স্বাধীনতার পর সেখানে হিন্দি প্রচলনের কড়াকড়িতে বাংলা ভাষাভাষীরা চাপের মুখে পড়েন। মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাঁরা। ১৯৪৮ থেকে দীর্ঘ আট বছর চলা এই আন্দোলনের সাফল্যে ১৯৫৬ এর ১ নভেম্বর মানভূমের বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয় পুরুলিয়া জেলা। বিহার থেকে নিয়ে পুরুলিয়াকে যুক্ত করা হয় পশ্চিমবঙ্গের সাথে। তাঁদের মাতৃভাষা বাংলা ব্যবহারের দ্বার উন্মুক্ত হয় তাঁদের সামনে।

এবারে আবার ফিরি ১৯ মে'র ইতিহাসে। আসামের বরাক উপত্যকা আদিকাল থেকেই বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল। একসময় এই এলাকার অধিকাংশ ডিমাসা জনগোষ্ঠীর কাছাড় রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ডিমাসা রাজন্যবর্গ ও বাংলাভাষার পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। কালক্রমে ব্রিটিশরা ভারত বিভাগ করে চলে গেলে আসাম প্রদেশের একাংশ সিলেট পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হয়। সিলেটের একাংশ ও ডিমাসা পার্বত্য ও সমতল অঞ্চল নিয়ে কাছাড় জেলা গঠিত হয়। এই জেলা বর্তমানে বিভক্ত হয়ে কাছাড়,হাইলাকান্দি,করিমগঞ্জ ও উত্তর কাছাড় পার্বত্য জেলা (ডিমা হাসাও)এই চার নতুন জেলায় রূপ নিয়েছে।

১৯৪৭ এ দেশবিভাগের পর থেকেই বরাক উপত্যকার কাছাড় জেলার অধিবাসীরা বৈষম্যের শিকার হতে থাকেন। আসাম অহমিয়াদের জন্য এবং বাঙ্গালীরা সেখানে বহিরাগত এমন বক্তব্য ও ওঠে। এখনও সেই প্রবণতা বিদ্যমান। জাতীয়তাবাদের জোয়ারে এক শ্রেণির রাজনীতিবিদরাও গা ভাসান। বঙ্গাল খেদা আন্দোলনও গড়ে ওঠে একসময়ে। সরকারিভাবে সেসব আন্দোলন ও সহিংসতা দমন হলেও পরবর্তী কালে সময়ে সময়ে এই জাতীয় সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে থাকে।

আসাম রাজ্য বিধান সভায় ভারতের স্বাধীনতার পর পর সদস্যরা বাংলা, হিন্দি বা ইংরেজিতে বক্তব্য রাখতে পারতেন।প্রথম আঘাত এলো ভাষার উপর। অহমিয়াকে একমাত্র রাজ্যভাষা ঘোষণা, শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে চালুর চেষ্টা এবং বিধানসভায় বাংলায় বক্তব্য রাখার অধিকার ক্ষুণ্ণ করে আইন চালুর বিরুদ্ধে আসামের বাঙ্গালী জনগণ দল-মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। আসাম রাজ্য সরকার কোনও গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথে গেলেন না। তাঁরা অহমিয়া জাতীয়তাবাদ এর সংকীর্ণ মানসিকতার নেতাদের প্রাধান্য দেয়ার নীতি গ্রহণ করেন। বাঙ্গালীরাও সংগঠিত হতে থাকেন।

অনুমান করা যায় আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বাহান্নর ঢাকার ভাষা আন্দোলন ও মানভূমের ভাষা আন্দোলনের সাফল্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।১৯৬০ সালের শেষে আসাম বিধান সভায় ভাষা বিল পাশ হয়। কফিনে শেষ পেরেক ঠোকা হয়ে গেলো। বাঙ্গালীরা ফুঁসে উঠলেন। লাগাতার আন্দোলন চলতে থাকলো।সত্যাগ্রহ,অসহযোগ, হরতাল, রেল রোখো,সংকল্প দিবস, ইত্যাকার অহিংস আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠল বরাক উপত্যকা। এই আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৬১ সালের ১৯মে তারিখে বরাকের কেন্দ্রবিন্দু শিলচরের রেলস্টেশনে ভোর থেকে আন্দোলনকারী সত্যাগ্রহীরা জড়ো হয়। হাজার হাজার ছাত্র যুবা জনতা রেলস্টেশন প্রাঙ্গন ও রেললাইনের উপর অবস্থান নেয়। তাঁদের সরাতে না পেরে সরকার নির্মম দমননীতির আশ্রয় নেয়। পুলিশ বাহিনী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ শুরু করে। নিহত হন পৃথিবীর প্রথম মহিলা ভাষা শহীদ কমলা ভট্টাচার্য সহ মোট ১১ জন ছাত্র যুবা। তাঁরাই একাদশ ভাষা শহীদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

তাঁদের আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষা দ্বিতীয় রাজ্যভাষার মর্যাদা পায়। শিলচর রেলস্টেশনের সামনে স্থাপিত হয় শহীদদের প্রতিকৃতি সম্বলিত শহীদ মিনার। যার পথ ধরে পরবর্তী কালে ছড়িয়ে পড়ে একই আকৃতির শহীদ মিনার সমগ্র বরাক উপত্যকায়। শিলচর রেলস্টেশনের নাম পাল্টে জনতা ভাষা শহীদ রেল স্টশন নাম রেখেছেন। যদিও পূর্ণ সরকারি স্বীকৃতি এখনও তার মেলেনি।

বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় একাদশ শহীদ সহ আন্দোলনকারীদের আত্মত্যাগ ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে। কিন্তু সব এলাকার বাঙ্গালিরা কি এই ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখেন? উত্তরটি ‘না’ সূচক। আমাদের কর্তব্য তাঁদের আত্মত্যাগের কাহিনী সকলকে জানানোর উদ্যোগ নেয়া যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম তাঁদের সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হতে শেখে। বরাক উপত্যকার একাদশ ভাষা শহীদ অমর রহে। বাংলা সহ সকল মাতৃভাষার অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত থাকুক।

এখনও সেই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন এমন অনেকেই বেঁচে আছেন। বেঁচে আছেন নেতৃত্ব দেয়াদের মধ্যে অনেকে। সাথে সাথে প্রত্যক্ষদর্শীদের ও সন্ধান পাওয়া এখনও কষ্টকর নয়। তবে সামনের সিকি শতাব্দীর মধ্যে প্রাকৃতিক নিয়মেই তাঁরা আর আমাদের মাঝে থাকবেন না। এখনই প্রকৃষ্ট সময় তাঁদের সাক্ষাৎকার রেকর্ড করে রাখার। পর্যাপ্ত গবেষণা হওয়া প্রয়োজন সেই আন্দোলন,তার কুশীলব এবং শহীদ পরিবার সমূহের বিষয়ে। বীরের সন্মান উপযুক্ত ভাবে হওয়া প্রয়োজন। বাংলা ভাষার এবং বাংলা ভাষাভাষী জনগণের মর্যাদা বিশ্বব্যাপী সমুন্নত রাখার জন্য আমাদের এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আরও অনেক বীরের আমাদের প্রয়োজন। যে মাটিতে বীরের যথাযোগ্য সন্মান নেই, সে মাটিতে বীর জন্মায় না।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও পরিব্রাজক

;

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;