স্বাধীনতার ৫০ বছর: কতদূর এগুলো বাংলাদেশের সাহিত্য?



অসীম নন্দন, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
অলংকরণ ও সম্পাদনা: রুদ্র হক

অলংকরণ ও সম্পাদনা: রুদ্র হক

  • Font increase
  • Font Decrease

একটা দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী মানে বিরাট ব্যাপার। আর আমরা সেই মাহেন্দ্রক্ষণের স্বাদ পাচ্ছি। স্বাধীন দেশ মানে অন্য অনেক অধিকার অর্জনের সাথে সাথে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাও লাভ করা। আর মতপ্রকাশের স্বাধীনতা পেলেই কেবল একটা দেশের শিল্প-সাহিত্য সমৃদ্ধ হতে পারে। যত বেশি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা পাওয়া যায় তত বেশি সমৃদ্ধ হয় দেশের সাহিত্য।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশের সাহিত্য গত ৫০ বছরে কতটুকু সমৃদ্ধ হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাব আসলে এক কথায় দেওয়া সম্ভব নয়। এর উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের ফিরে তাকাতে হবে ইতিহাসের দিকে। কেন বাংলাসাহিত্যের কথা না বলে আমি বাংলাদেশের সাহিত্যের কথা বলছি? প্রথমেই এই বিষয়টা পরিষ্কার করে নিতে চাই। কারণ ঐতিহাসিক দিক থেকে অঞ্চলগতভাবে বাংলাসাহিত্যে একটা স্পষ্ট বিভাজন আছে। ৪৭-এর সেই দেশবিভাগের কূটকৌশলে এই বিভাজন সৃষ্টি হলো।

আর আমরা এক শাসকের থেকে মুক্তি পেয়ে আরেক শাসকের হাতে শৃঙ্খলিত হলাম। তবে আমরাই সেই জাতি যারা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছি। এটা আমাদের অহংকার। আর এই বাংলা ভাষায় কথা বলার স্বাধীনতা চাওয়ার মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীন একটা ভূখন্ডের স্বপ্ন দেখতে পেরেছিলাম। বঙ্গবন্ধু ছিলেন আমাদের স্বপ্নদ্রষ্টা। এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আমরা পেলাম এই বাংলাদেশ।

এখন আমরা বাংলাদেশের সাহিত্যের দিকে তাকালে এর বিচিত্র সম্ভাবনাকে খুঁজে পাবো। যদিও দশকের চিন্তা থেকে কোনো সাহিত্যকে কিংবা সাহিত্যিককে বিশ্লেষণ করা বিশেষ কার্যকরী বিষয় নয়। তবে আলোচনার সুবিধার্থে আমরা এই দশকের চিন্তা ধরেই এগোবো। এবং সবশেষে আমরা একটা সামগ্রিক চিত্র পাবো।

যেহেতু সত্তরের দশকেই বাংলাদেশের জন্ম তাই তার পরবর্তী দশকগুলোকেই আমাদের বাংলাদেশের সাহিত্য বলা উচিত। কিন্তু এখানেই দশকের হিসাবে গন্ডগোলটা বাঁধে। কেননা সত্তরের দশকে বাংলাদেশের জন্ম হলেও পঞ্চাশ এবং ষাটের দশকের শক্তিমান কবি-সাহিত্যিকদের অমর সৃষ্টিগুলোকে আমরা বাংলাদেশের সাহিত্য থেকে বাদ দিতে পারি না।

তাঁদের সাহিত্যের অন্তর্দৃষ্টিতে সমাজের ঐসময়টাকে আমরা প্রকটভাবে দেখতে পাই। তাঁদের বহুমাত্রিক সাহিত্যপ্রতিভা এই দেশের সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে।

সত্তর, আশি এবং নব্বইয়ের দশকে আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল উত্তাল। বারবার ক্ষমতার পটপরিবর্তন, মানুষের স্বপ্নের অতৃপ্তি আর অনাকাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক সমীকরণগুলো বাংলাদেশকে সেসময়ে একরকম দুঃস্বপ্নের দেশে পরিণত করেছিল। আর সেই উত্তাল সময়কে আমরা আমাদের বাংলাদেশের সাহিত্যের মাঝেও দেখতে পাই।

একরকম নির্মোহ বয়ানে সেই সময়টা লেখকদের লেখায় চিত্রিত হয়েছিল। তবে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর সত্তরের দশকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-নির্ভর কোনো কাজ তখন প্রকাশিত হয়নি। মানে কোনো সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধার বয়ানে কোনো কথাসাহিত্য সেই দশকে কেন হয়নি তা প্রশ্নবিদ্ধ। পরবর্তী সময়ে যদিও সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ।

এই সময়কার কবিতায় সবচেয়ে যে বৈশিষ্ট্যটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল, তাহলো কবিতার শ্লোগানধর্মীতা। এই সময়ের কবিতাগুলোই একেকটি শ্লোগান হয়ে উঠেছিল। কিংবা বলা যায় শ্লোগানই হয়ে উঠেছিল কবিতা।

তবে ৮০'র দশকে বাংলাদেশের কবিতায় একটা নতুন ভাবনার বিকাশ ঘটে। এই দশক থেকেই লিটল ম্যাগাজিনের উত্থান ঘটে। গাণ্ডিব, অনিন্দ্য, পেঁচা, দামোদর, পূর্ণদৈর্ঘ্য, ফু, প্রসূন এবং আরো অনেক লিটল ম্যাগাজিনের উত্থান ঘটে এই সময়ে। যার ফলে বাংলাদেশের সাহিত্যে একটি নতুন মাত্রা যুক্ত হয়। এসময়ে সাহিত্যে নানানরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়। এছাড়া লিটল ম্যাগাজিনের কল্যাণে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা'র তাত্ত্বিক আবহাওয়া এসময় খুব জনপ্রিয়তা পায়।

যদিও বর্তমানে লিটল ম্যাগাজিনের সেই প্রতাপ এখন ম্লান হয়ে গেছে। তবে এখনও কালি ও কলম, চিরকুট,মেঘফুল, দেশলাই, বিন্দু, ড্যাস এবং আরো অনেক লিটলম্যাগ নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। ৮০'র দশককে লিটল ম্যাগাজিনের দশক বলা হলেও এর প্রকৃত সূত্রপাত হয়েছিল ৬০'র দশকে। সেই সময়কার উল্লেখযোগ্য লিটলম্যাগগুলো হচ্ছে স্যাড জেনারেশন, সপ্তক, স্বাক্ষর, না, বহুবচন প্রভৃতি।

৯০'র দশকে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সাহিত্যের আরো একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। এবং এই দশকের পরবর্তী সময়ে মানে একবিংশ শতকের শূন্য দশক এবং তারপরের দুই দশকে এদেশের সাহিত্যে নানানরকম সংযোজন শুরু হয়।

শ্লোগানধর্মীতা থেকে কবিতা ধীরে ধীরে উত্তরাধুনিককালে উন্নিত হয়। এবং কবিতার বৈশিষ্ট্য অনেক বেশি বিমানবিকতার দিকে ধাবিত হয়েছে। কবিতার মাঝে গল্পধর্মী পরাবাস্তববাদী এক অদ্ভুত বৈশিষ্ট্যের সন্ধান পাওয়া যায় বর্তমান সময়ে। এছাড়া কথাসাহিত্যের ক্ষেত্রেও নানানরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলমান আছে। কথাসাহিত্যে সুররিয়ালিটির ব্যবহার দেখা পাওয়া যায় এসময়ে।

এছাড়া ইতিহাস-নির্ভর কথাসাহিত্যও প্রবলভাবে বিকশিত হয়েছে এই সময়ে। ইতিহাস-নির্ভর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বই হচ্ছে নিষিদ্ধ লোবান, মা, দেয়াল, রাইফেল রোটি আওরাত, জীবন আমার বোন, হাঙর নদী গ্রেনেড, আমার বন্ধু রাশেদ, জোছনা ও জননীর গল্প, ক্রাচের কর্নেল ইত্যাদি।

গত পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশের সাহিত্যে অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রভাব-বিস্তারকারী কাজ সেই তূলনায় অপ্রতুলই রয়ে গেছে। যে কারণে মৌলবাদীতার নীল দংশন থেকে আমাদের স্বপ্নের দেশ এখন বাস্তবের রূপ দেখতে পায়নি। আমাদের সাংস্কৃতিক উন্নয়ন যতটা হবার কথা ছিল, সেই তুলনায় হয়েছে সামান্যই। সমাজতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক যে সমাজের স্বপ্নের জন্য মুক্তিযোদ্ধারা অকাতরে প্রাণ দিয়েছিল, তা রয়ে গেছে অধরাই।

সত্তর, আশি কিংবা নব্বইয়ের দশকে আমরা প্রকৃত মুক্তমনা সাহিত্যিকদের দেখা পেলেও একবিংশ শতকের শূণ্য, এক এবং দুইয়ের দশকে তেমন সাহিত্যিকদের কাজ পেয়েছি খুব কম। একটা দেশের মননকে সমুন্নত করতে মুক্তমনা সাহিত্যের যে পরিমাণ সহযোগিতা দরকার ছিল, তা আমরা সেই চাহিদা মতো পাইনি। বাংলাদেশের সাহিত্যে মননশীল পাঠক তৈরির জন্য যে অনমনীয় দৃষ্টান্ত থাকা উচিত ছিল, এই সময়ের চাটুকার সাহিত্যের জয়জয়কারে তা বিঘ্নিত হয়েছে।

বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত জনগণ জ্ঞান অর্জন করে মননশীল ও সৎ-মানুষ হবার চেষ্টার দিকে না গিয়ে, একপ্রকার ছা-পোষা কেরানি হবার স্বপ্নের দিকে ধাবিত হয়েছে। এই ব্যর্থতার দায়ভার অবশ্যই বাংলাদেশের সাহিত্যিকগোষ্ঠী এবং সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীকে নিতে হবে। কেননা তাঁরা সেই রকম প্রভাববিস্তারকারী কাজ করতে পারেনি।

স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে আমরা যেসব গুণী কবি-সাহিত্যিকদের বাংলাদেশের সাহিত্যে পেয়েছি তাঁরা হলেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, আহমদ ছফা, সৈয়দ শামসুল হক, আবুল হাসান, শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, হুমায়ুন আজাদ, নির্মলেন্দু গুণ, হেলাল হাফিজ, আবিদ আজাদ, রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, হুমায়ুন আহমেদ, শহীদুল জহির, প্রমুখ।

এছাড়া আরো অনেকেই আছেন যাদের নাম নিতে গেলে আসলে নামের তালিকাটা দীর্ঘ থেকে আরো দীঘর্তর হবে। আগেই বলেছিলাম সাহিত্য কিংবা সাহিত্যিক কাউকেই দশকের হিসেবে বিশ্লেষণ করাটা কঠিন এবং কখনো কখনো অচল ব্যবস্থাও বলা যায়।

এখন কথা হচ্ছে আমাদের দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আসলে কতটা কার্যকরী হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবটা সন্ধান করা খুবই জরুরি। কারণ সমৃদ্ধ সাহিত্যের জন্যই এই স্বাধীনতা থাকাটা খুব জরুরি। এবং সাহিত্য যত সমৃদ্ধ হবে তত বেশি মানুষের মাঝে তা প্রভাববিস্তার করবে।

৫২'র ভাষা আন্দোলনে তো আমরা স্বাধীনভাবে নিজের ভাষায় কথা বলতে পারার অধিকারের জন্যই প্রাণ দিয়েছিলাম। এই ইতিহাস যেমন আমাদের জন্য গৌরবের, সেরকমই আমাদের দেশে এই মতপ্রকাশের অধিকার যে এখনও প্রশ্নবিদ্ধ; এই প্রশ্নবিদ্ধতাও আমাদের জন্য পীড়াদায়ক।

এই বিশ্লেষণ থেকেই কি আমরা বলতে পারবো বাংলাদেশের সাহিত্য গত পঞ্চাশ বছরে সমৃদ্ধি'র চরম শিখরে পৌঁছে গেছে? না, একেবারে এত মোটা দাগে বলা মুশকিল। যেহেতু এখনও আমাদের বাংলাদেশের সাহিত্যের আন্তর্জাতিক কদর সেরকম অর্থে আমরা বৃদ্ধি করতে পারিনি। এবং অনুবাদ সাহিত্যে আমরা কাঙ্খিত সফলতা পাইনি।

সাহিত্যের আন্তর্জাতিক কদর বৃদ্ধি করতে চাইলে আমাদেরকে অনুবাদ-সাহিত্যে মনোযোগী হতে হবে। বাংলাদেশের সকল উল্লেখযোগ্য বইকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছে দিতে হলে প্রয়োজন ভালো অনুবাদের ব্যবস্থা করা। আর এর মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের সাহিত্যের বিচিত্র সম্ভার বিশ্বের মানুষের দরবারে পৌঁছে যাবে ও সমৃদ্ধি পাবে।

সকলরকম প্রাপ্তি এবং অপ্রাপ্তির হিসাবনিকাশ শেষ হলে আমরা একটা কথা খুব দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি, বাংলা ভাষাকে বিশ্বের দরবারে কেবল বাংলাদেশের সাহিত্যই টিকিয়ে রাখতে পারবে। যদিও অনেকে মনে করেন ঔপনিবেশিক ভাষাগুলোর প্রভাব বাংলা ভাষাকে দূষণ করছে, তবে এই দূষণকে আমরা শাপে-বর বলতে পারি। কেননা ভাষা তো চিরকাল প্রবহমান। পরিবর্তনই তার ধর্ম।

আর পরিবর্তনের জন্য অন্য ভাষা থেকে গ্রহণটাও বাংলা ভাষার জন্য পুষ্টিকর। তবে অধিক আহার গ্রহণ করা যেমন স্বাস্থ্যের জন্য ভয়ংকর হতে পারে, সেরকমভাবে অন্য ভাষার অধিক প্রভাবও ভাষার জন্য অস্বাস্থ্যকর হতে পারে।

তাই বাংলাদেশের সাহিত্যিক এবং সাংস্কৃতিক কর্মীদের এই ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। আর আমরা প্রচন্ডরকম আশাবাদী; এই সকল প্রশ্ন এবং জবাবের মধ্য দিয়ে, বাংলা ভাষার দীর্ঘদিন টিকে থাকার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সাহিত্য নিজেকে আরো সমৃদ্ধ করে তুলবে।

 

   

নারীর পোশাক, নারীর ইচ্ছে হয়ে থাক—এই ভাবনায় ১৩ লেখিকার বই ‘শাড়ি’



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
‘নারীর পোশাক, নারীর ইচ্ছে হয়ে থাক- এই ভাবনায় ১৩ লেখিকার বই ‘শাড়ি’

‘নারীর পোশাক, নারীর ইচ্ছে হয়ে থাক- এই ভাবনায় ১৩ লেখিকার বই ‘শাড়ি’

  • Font increase
  • Font Decrease

চারপাশে এত কিছু ঘটে যে চিন্তা ও উদ্বেগ প্রকাশ করার মতো বিষয়ের অভাব নেই। তবে এর মধ্যে কিছু জনগোষ্ঠীর চিন্তাভাবনার একটি জায়গায় আটকে আছে; আর তা হলো নারীর পোশাক। নারী কী পোশাক পরল, কেমন পোশাক পরল, কেন পরল ও এমন পোশাক পরা উচিত ছিল না; ইত্যাদি নিয়ে দিন-রাত ব্যস্ত। আর এমন জনগোষ্ঠী সংখ্যায় দিন দিন বেড়েই চলছে। নানা সময়ে এ নিয়ে তর্ক বিতর্কে মেতে উঠে বাঙালি। নারীর পোশাক নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে গিয়ে ব্যক্তিস্বাধীনতা তো বটেই, অন্য ধর্মের অস্তিত্ব এবং ভিন্ন জীবন দর্শনকেও ভুলে যায় সমালোচনাকারীরা।

বিভিন্ন সময় নারী দেহে আঁচলের বিশেষ অবস্থান দেখে ‘ভালো মেয়ে’, ‘খারাপ মেয়ে’র সংজ্ঞা নির্ধারণ পদ্ধতি স্থির করে দিতে চাওয়া হয়েছে মত প্রকাশের স্বাধীনতার আড়ালে। আর এর প্রতিবাদ- প্রতিরোধ উঠে এসেছে সমাজের নানা স্তর থেকে। কেউ কেউ বিপক্ষে মত প্রকাশ করেছেন।

নারী পোশাক নিয়ে ভাবনা ও মতামত ইতিহাসের দলিল রূপে প্রকাশ করার জন্য উদ্যোগে নিয়েছে কলকাতার ঋত প্রকাশনী। আগামী ১১ মে বিকেল সাড়ে ৫টায় অভিযান বুক ক্যাফে-তে প্রকাশিত হতে চলেছে ‘শাড়ি’ নামের এই বইটি।

বইটি বের করার পরিকল্পনা, সম্পাদনা ও নিমার্ণের দায়িত্বের রয়েছেন তানিয়া চক্রবর্তী। প্রচ্ছদ ও চিত্রের দায়িত্বে রয়েছেন অংশুমান।


সংকলনটিতে অলংকরণ ও লেখার মাধ্যমে আলোকপাত করা হয়েছে আবহমানকাল জুড়ে পোশাককে কেন্দ্র করে বাঙালি মেয়েদের আহত দেহ ও মনের দিকে। সোচ্চারে উচ্চারণ করা হয়েছে সেই ইতিহাস যা অনুচ্চারিত থেকে যায় সামাজিক বিধি নিষেধেরে আড়ালে।

বইটির মাধ্যমে বিতর্ক সৃষ্টি নয়, অস্তিত্বের সন্ধানে বের হয়েছেন তেরোজন লেখক। যারা হলেন- জিনাত রেহেনা ইসলাম, যশোধরা রায়চৌধুরী, মধুজা ব্যানার্জি, চৈতালী চট্টোপাধ্যায়, রোহিণী ধর্মপাল, সেবন্তী ঘোষ, মিতুল দত্ত, অমৃতা ভট্টাচার্য, রত্নদীপা দে ঘোষ, অদিতি বসু রায়, দেবাবৃতা বসু, শ্রুতকীর্তি দত্ত ও তানিয়া চক্রবর্তী।

দৃশ্য বা শব্দের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে ভাইরাল হওয়া নয়, সংকলনটির উদ্দেশ্য একটি প্রলেপ সৃষ্টি যা আগামী প্রজন্মের মাথায় ছায়া দেবে। মেনে নেওয়া নয়, প্রশ্ন করার সাহস জোগাবে নতুন করে নয়।

এ প্রসঙ্গে তানিয়া চক্রবর্তী বলেন, ‘শাড়ি’ নিয়ে একটি বই প্রকাশ করা হচ্ছে। সম্প্রতি নারীদের পোশাক নিয়ে ভারতে একটা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। আমি মনে করি, ২০২৪ সালে এসে নারীর পোশাক নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই। মেয়েরা যা ইচ্ছা তাই পরতে পারে। তাদের বুদ্ধি, কর্ম ও অভিব্যক্তি বিষয়টিই আসল। এ বিষয়গুলো বইটিতে স্থান পেয়েছে।

;

৩ গুণী পাচ্ছেন বাংলা একাডেমির রবীন্দ্র ও নজরুল পুরস্কার



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
-অধ্যাপক রাজিয়া সুলতানা, অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী ও অধ্যাপক লাইসা আহমদ লিসা

-অধ্যাপক রাজিয়া সুলতানা, অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী ও অধ্যাপক লাইসা আহমদ লিসা

  • Font increase
  • Font Decrease

রবীন্দ্র ও নজরুল সাহিত্যে গবেষণায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলা একাডেমির রবীন্দ্র ও নজরুল পুরস্কার পাচ্ছেন ৩ গুণী গবেষক।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) বাংলা একাডেমির জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক সমীর কুমার সরকার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলা একাডেমি রবীন্দ্র-সাহিত্যের গবেষণায় অবদানের জন্য এবার রবীন্দ্র পুরস্কার ২০২৪ পাচ্ছেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী এবং অধ্যাপক লাইসা আহমদ লিসা। অন্যদিকে, বাংলা একাডেমি নজরুল-সাহিত্যে গবেষণায় অবদানের জন্য অধ্যাপক রাজিয়া সুলতানা পাচ্ছেন নজরুল পুরস্কার ২০২৪।

আগামী ২৫শে বৈশাখ ১৪৩১/৮ মে ২০২৪ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বাংলা একাডেমি আয়োজিত অনুষ্ঠানে রবীন্দ্র পুরস্কার-২০২৪ ও আগামী ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১/২৩ মে ২০২৪ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে নজরুল পুরস্কার-২০২৪ প্রদান করা হবে।

অধ্যাপক ড. রাজিয়া সুলতানা 

খ্যাতিমান নজরুল গবেষক অধ্যাপক ড. রাজিয়া সুলতানার জন্ম ২৫শে জুলাই ১৯৩৭। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় ১৯৫৮ সালে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৫৯ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৮৫ সালে মধ্যযুগের কবি আবদুল হাকিমের জীবন ও কর্ম নিয়ে গবেষণা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি এইচ.ডি. ডিগ্রি অর্জন করেন।

বাংলাদেশের মহিলাদের মধ্যে তিনি প্রাচীন ও মধ্যযুগের পাণ্ডুলিপি ও সাহিত্য বিষয়ে প্রথম গবেষক। ১৯৮৩ সালে তিনি ফারসি ভাষায় ডিপ্লোমা লাভ করেন। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রণীত মধ্যযুগের সাহিত্য-সম্পাদনা-গ্রন্থ 'নওয়াজিশ খান বিরচিত গুলে-বকাওলী কাব্য। পরে প্রকাশিত হয় তাঁর গবেষণাগ্রন্থ ‘আবদুল হাকিম : কবি ও কাব্য (১৯৮৭)। অপর সাহিত্য সম্পাদনা-গ্রন্থ 'আবদুল হাকিম রচনাবলী' (১৯৮৯)।

কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে ড. রাজিয়া সুলতানার গবেষণাগ্রন্থ 'কথাশিল্পী নজরুল (১৯৭৫), 'নজরুল (১৯৮৮), অন্বেষা' (২০০১) এবং 'সাহিত্য-বীক্ষণ' (১৯৮৮)। ড. রাজিয়া সুলতানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। ইতোপূর্বে তিনি বিভিন্ন সরকারি কলেজে ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন।

অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধোত্তর প্রজন্মের বিশিষ্ট সাহিত্য-সমালোচক ভীষ্মদেব চৌধুরীর জন্ম ১৯৫৭ সনের ৩০শে নভেম্বর সিলেট শহরে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি সম্পন্ন করেন। ১৯৮৪ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদানের মধ্য দিয়ে তাঁর কর্মজীবনের সূচনা। ২০০০ সনে তিনি অধ্যাপক হিসেবে উন্নীত হন। বাংলা উপন্যাস, রবীন্দ্র ছোটগল্প এবং বাংলাদেশের সাহিত্য তাঁর অনুধ্যান ও মূল্যায়নের কেন্দ্রীয় বিষয়। ভীষ্মদেব চৌধুরীর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ : জগদীশ গুপ্তের গল্প : পঙ্ক ও পঙ্কজ (১৯৮৮); মিরজা আবদুল হাই (১৯৮৯); বাংলাদেশের সাহিত্যগবেষণা ও অন্যান্য (দ্বি সংস্করণ ২০০৪); সৈয়দ মুজতবা আলীর পত্রগুচ্ছ (সম্পা. ১৯৯৩); তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস : সমাজ ও রাজনীতি (১৯৯৮); তারাশঙ্কর স্মারকগ্রন্থ (সম্পা. ২০০১); দু-চারটি অশ্রুজল : রবীন্দ্রগল্পের ভিন্নপাঠ (২০০৫); কথাশিল্পের কথামালা : শরৎচন্দ্র ও তারাশঙ্কর (২০০৭); সাহিত্য-সাধনায় ঢাকার নারী (২০১১); প্রভাতসূর্য :রবীন্দ্রনাথ সার্ধশত জন্মবর্ষ স্মরণ (সম্পা. ২০১১)।

অধ্যাপক লাইসা আহমদ লিসা

অধ্যাপক লাইসা আহমদ লিসা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী, ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তনের শিক্ষক ও সাধারণ সম্পাদক। গুণী এই শিল্পীর জন্ম রাজশাহীতে। বাবা অধ্যাপক মফিজ উদ্দিন আহমদ ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের শিক্ষক ও মা খানম মমতাজ আহমদ। রবীন্দ্রনাথের গানসহ সুস্থধারার সংগীত পরিবেশনের মধ্যদিয়ে তিনি সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে যুক্ত থেকেও তিনি দেশজুড়ে শুদ্ধ সঙ্গীতের চর্চাকে ছড়িয়ে দিতে ভূমিকা রাখছেন। 

;

মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা আবুল মাল আবদুল মুহিত



কবির য়াহমদ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, বার্তা২৪.কম
মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা আবুল মাল আবদুল মুহিত

মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা আবুল মাল আবদুল মুহিত

  • Font increase
  • Font Decrease

আবুল মাল আবদুল মুহিত সাবেক অর্থমন্ত্রী। সবচেয়ে বেশিবার বাজেট উপস্থাপন করে রেকর্ড গড়া অর্থমন্ত্রী তিনি। দীর্ঘ চাকরিজীবন শেষে রাজনৈতিক জীবন এবং স্বেচ্ছায় রাজনীতি থেকে অবসর—সব ছিল তার বর্ণাঢ্য জীবনে। তার পর দেশের অর্থমন্ত্রী হয়েছেন আবু হেনা মোহাম্মদ মুস্তাফা কামাল ও বর্তমানে আবুল হাসান মাহমুদ আলী; কিন্তু কেউই আবুল মাল আবদুল মুহিতের মতো সাফল্যের সাক্ষর রাখতে পারেননি। মুস্তাফা কামালের মন্ত্রিত্ব কালের পুরোটা সময় কেটেছে ‘অনুপস্থিতি’ আর বিবিধ ব্যর্থতা দিয়ে। নতুন অর্থমন্ত্রী মাত্রই নিয়েছেন দায়িত্ব, তাই তাকে এনিয়ে এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছা কঠিন।

আবুল মাল আবদুল মুহিত কেবল অর্থনীতিবিদ ও সাবেক অর্থমন্ত্রীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন লেখক, গবেষক, ভাষাসংগ্রামী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। বাঙালির মহাকাব্যিক মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তিনি সরকারি চাকরি ত্যাগ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্যে কাজ শুরু করেছিলেন। ১৯৫৬ সালে যোগ দিয়েছিলেন পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে (সিএসপি)। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ওয়াশিংটন দূতাবাসে পাকিস্তানের কূটনীতিকের দায়িত্বে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের জুনে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। ১৯৮১ সালে স্বেচ্ছায় সরকারি চাকরি ছেড়েও দেন। সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদেরও অর্থমন্ত্রী ছিলেন তিনি। গণতন্ত্রে দেশকে ফেরানো হবে এই শর্তে তিনি এরশাদের মন্ত্রিসভায় যোগ দেন। এরপর বছরখানেক দিন শেষে যখন দেখেন এরশাদ তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছেন না, তখন তিনি স্বেচ্ছায় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ের পর যে মন্ত্রিসভা গঠন করে সেখানে শেখ হাসিনা তাকে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। প্রবল প্রতিকূল দেশীয় ও বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নেওয়া আবুল মাল আবদুল মুহিত বৈশ্বিক মন্দা সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতিকে যে জায়গায় নিয়ে গেছেন তার সুফল দীর্ঘদিন ভোগ করেছে দেশ। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্পসহ আরও অনেক প্রকল্প তার আমলে শুরু হয়। তিনি আর্থিক ব্যবস্থাপনার দিকটি সুনিপুণভাবে করে গেছেন। তার দায়িত্বকালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের যে ঊর্ধ্বগতির সঞ্চার হয়েছিল সেখান থেকে দেশ একটা সময়ে ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছায়।

মাথাপিছু আয়, জিডিপি, রিজার্ভ, মূল্যস্ফীতিসহ অর্থনীতির নানা খাতের ব্যবস্থাপনায় তিনি যে সাফল্যের সাক্ষর রেখেছেন তার পথ ধরে পরের অর্থমন্ত্রীরা সেটা অব্যাহত রাখতে পারেননি। সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করতে পারেননি এবং পদে থেকেও তার কাজে অনুপস্থিতি দেশকে গভীর সংকটে নিপতিত করেছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মুস্তাফা কামাল বিজয়ী হলেও তাকে মন্ত্রিসভায় রাখেননি শেখ হাসিনা, এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে।

নানা কারণে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে এই দেশ স্মরণ রাখবে। তন্মধ্যে একটি যদি পেনশন ব্যবস্থা হয়, অন্যটি নারীর ঘরের কাজের মূল্যায়ন। নারীর ঘরের কাজের মূল্যায়নের বিষয়টি এখনো আনুষ্ঠানিক হয়নি যদিও, তবে এনিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। নয় মাস আগে দেশে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু হয়েছে, এবং এই নয় মাসে ব্যাপক সাড়া যদিও পড়েনি, তবে এখন পর্যন্ত ১ লাখ লোক এই সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। অথচ তিনি যখন প্রথমবার সবার জন্যে পেনশন চালুর কথা বলেন, তখন এই উদ্যোগের বিরোধিতা করেছিলেন অনেকেই। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে তিনি এক বৈঠকে সকলের জন্যে পেনশন চালুর ব্যবস্থার কথা বলে অনেকের বিরোধিতার মুখে পড়েছিলেন। তবু তিনি এর একটা খসড়া প্রণয়নের দায়িত্ব দেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে। আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, ‘সবার জন্য পেনশন চালু করতে পারলে এ দেশ থেকে অনেক কিছু দূর হবে। মানুষ যখন দেখবে তার ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত তখন অনেকেই অনিয়ম থেকে সরে আসবে। মানুষ এত অনিয়ম-হানাহানি করে শুধু ভবিষ্যতের জন্য।’ শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে খসড়া তৈরি হয়ে আসার পর তিনি জানালেন, কিছুই হয়নি। এরপর তার নিজের তত্ত্বাবধানে শুরু হয় খসড়া তৈরির কাজ। তিনি এনিয়ে কথা বলতেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবুল মাল আবদুল মুহিতের ওই উদ্যোগের পক্ষে ছিলেন, এবং কাজ করার নির্দেশ দেন। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর পর তথ্যগুলো একটি গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন শ্রম মন্ত্রণালয়ের সাবেক এক কর্মকর্তা।

আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের বাজেটে দেশের সকল নাগরিকের জন্যে পেনশন ব্যবস্থা চালুর স্বপ্নের কথা বলেছিলেন। তিনি তার বাজেট বক্তৃতার ৫৯ নং পৃষ্ঠার পেনশন অধ্যায়ে বলেছিলেন ‘সরকারি পেনশনারগণ দেশের সমগ্র জনগণের একটি ক্ষুদ্রাংশ মাত্র। তাই সরকারি কর্মচারীদের পাশাপাশি সকলের জন্যে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় অংশগ্রহণমূলক সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুকরণে আমরা কাজ করছি। আমাদের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডের অন্তর্নিহিত লক্ষ্য বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ-রাষ্ট্রে রূপান্তর করা।’ এর আগের বছরের বাজেটে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, ‘দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মাত্র ৫ শতাংশ, যাদের প্রায় সবাই সরকারি চাকুরে, এখন পেনশন সুবিধা পান। বাকি ৯৫ শতাংশের মধ্যে প্রায় ৮ শতাংশ গ্র্যাচুইটি সুবিধা পেলেও অন্যদের জন্য সে সুবিধাও নেই।’ তার বক্তব্য তখন সে পর্যন্তই ছিল, এবং এক বছর পর পরের বাজেটে এসেছে স্বপ্নের পূর্ণ অবয়ব। আর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকারে। এরবাইরে আছে ২০১৮ সালে পেনশন নিয়ে আবুল মাল আবদুল মুহিতের উদ্বোধন করা এক পাইলট প্রকল্পে, যেখানে ৫৭ জন ব্যক্তিকে এই প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হয়। দেশের মানুষদের জন্যে পেনশন ব্যবস্থা চালু নিয়ে যে স্বপ্নের রূপরেখা দিয়েছিলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত, সেটা তার জীবদ্দশায় পূরণ হয়নি। তার মৃত্যুর কয়েক মাস পর সরকারি তরফে হয়েছে প্রকাশ্য এবং প্রধানমন্ত্রী করেছেন এর বাস্তবায়ন।

সম্প্রতি নারীদের গৃহকর্মের অর্থনৈতিক মূল্য নির্ধারণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। গত ২৩ এপ্রিল সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয় বলে সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। নারীদের গৃহকর্মের এই মূল্যায়নে ঘরে হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল পালন, বিভিন্ন জাতের সবজি উৎপাদনসহ নানা হিসাব এর মধ্যে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেশের অন্তত ৪৩ শতাংশ নারী পুরোপুরিভাবে গৃহস্থালি কাজের সঙ্গে যুক্ত। দেশের মোট জাতীয় উৎপাদনে (জিডিপি) নারীর অবদান ২০ শতাংশ। তবে নারীর এই গৃহস্থালি কাজকে জাতীয় আয় পরিমাপের পদ্ধতিতে যোগ করা হলে জিডিপিতে নারীর অবদান দাঁড়াবে ৪৮ শতাংশ বা তার কাছাকাছি। এখন নারীদের গৃহস্থালি কাজের মূল্যায়নের বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে, এ নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। এটাও ছিল সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের স্বপ্ন। দায়িত্ব পালনকালে একাধিকবার তিনি এনিয়ে কথা বলেছেন, নারীদের কাজের রাষ্ট্রীয় মূল্যায়নের গুরুত্বারোপ করেছেন। ২০১৭ সালের অক্টোবরে রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে প্রয়াত এই অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমাদের দেশে ঘরের সেবামূলক কাজের কোনো মূল্যায়ন নেই। সে কারণে জিডিপিতে এর কোনো অন্তর্ভুক্তি নেই। এটার মূল্যায়ন করা জরুরি।’ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মাধ্যমে এই মূল্যায়নের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়ে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, ‘বিষয়টি আমরা পরিসংখ্যান বিভাগে যুক্ত করব এবং সরকারিভাবে আমরা এটিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাব।’

আবুল মাল আবদুল মুহিত নেই আজ দুই বছর। ২০২২ সালের ৩০ এপ্রিল না ফেরার দেশে চলে যান বরেণ্য এই ব্যক্তিত্ব। মৃত্যুর মাস দেড়েক আগে তাকে দেওয়া সিলেটে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি নিজের জীবনের মূল্যায়নে বলেছিলেন, ‘আমি আমার জীবনকে নিয়ে গর্বিত।… অনেকে হয়ত একে আত্মগরিমা বলবেন। কিন্তু এটা অন্যায় নয়। বরং এরজন্য নিজেকে গড়ে তুলতে হয়।’ ৮৮ বছরের দীর্ঘ সময়কে তিনি বলতেন ‘মহাতৃপ্তির-মহাপ্রাপ্তির জীবন’।

মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা আবুল মাল আবদুল মুহিত।

;

চতুর ঘুঘু



শরীফুল আলম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নেশাখোরের মত কখনো কখনো খিলখিল করে হাসি
প্রথমত দহন উষ্ণতায় ,
তারপর সুবিশাল শূন্যতায় ,
কখনো কখনো ছুঁয়ে ফেলি সাজানো প্রতিমা
জীবনের দাবী ,
তবে আপাতত গন্তব্য বলে কিছু নেই আমার
কবিতার অবয়ব এখনো যেটুকু আছে
তাকে আমি রঙ্গের উৎসবই বলি
কিম্বা যেটুকু আছে তা জীবনের দাবী ।

ক্রমাগত অন্তর্গত দ্বন্দে
অবাধ্য ভাষা এখন প্রাচীর তোলে
প্রসারিত মৃত্যুর কথা বলে ,
আমি তার গল্পের শেষটা জানার চেষ্টা করি
রাতের গহ্বর থেকে তোলে আনি মৃত্যুর পরোয়ানা ,
কিন্তু অস্পষ্টতা কিছু থেকেই যায়
আবার নিজে নিজেই বলি
আমার জলভূমিতে আবার কিসের নিঃসঙ্গতা ?

স্বপ্নবাসর ? সে এক চতুর ঘুঘু
আমি তার ক্ষণিকের হটকারীতা বুঝতে পারি
এমনকি চোখ বুজে
আমি ভুলে যাই তার সন্ধ্যার ঘায়েল
যেন দেখেও দেখিনা
বিনা মোহে সারারাত অহেতুক তার অহংকার
নিরর্থক বাজি ধরে সে
অর্কিড নিরালায় আমিও একা থাকি
ভাঙ্গা চোরা রাত জেগে থাকে আমার পাশে
মনে হয় চোখ দিয়ে ছুঁয়ে দেখি তার ঢাকাঢাকি
ফিরতি নজরে সেও আমায় দেখে
আমার মিষ্টি কবিতার মতই
আমিও থমকে যাই পাখীর ডাকে
দূর দরিয়ায় তখন উলুধ্বনি শংখ বাজে ,
ইচ্ছে হয় নাগরদোলায় আবার গিয়ে দুলি
আর জানই তো কবিরাই প্রেমে পড়ে
কবিরাও চুমু খায়
সুন্দরী পেলে তাঁরাও শুয়ে পরে।

*************************
শরীফুল আলম ।
২১এপ্রিল । ২০২৪ইং
নিউইয়র্ক । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ।

;