মন জিনিসটা কী



টোকন ঠাকুর, কবি
অলংকরণ ও সম্পাদনা: রুদ্র হক

অলংকরণ ও সম্পাদনা: রুদ্র হক

  • Font increase
  • Font Decrease

‘পিজারোর মন যত না বাইবেলের দিকে, তার চেয়ে বেশি সোনার খনির দিকে।’-এটি প্রায় প্রবাদ আজ। এক রাজনৈতিক ভাষণে সেইন্ট কাস্ত্রো পিজারো সম্পর্কে এ কথা বললেন। বাঙালি পাঠক মাত্রই কি পিজারোকে চিনতে পারছেন? তা মনে হয় না।

পিজারো হচ্ছেন একজন স্প্যানিশ যাজক। তার হাতে বাইবেল। একদিন তিনি পৌঁছলেন ল্যাতিনো দেশের মাচ্চুপিচ্চুতে। মাচ্চুপিচ্চুর স্থানীয় আদিবাসীরা গভীর কৌতূহল নিয়ে পিজারোকে দেখতে থাকে। পিজারো মহান যিশুর ঐশী বাণী ছড়াতে ব্যস্ত হলেন। মাচ্চুপিচ্চুবাসীরা সে বাণী মুগ্ধ হয়ে শোনায় মনোযোগ দিল। পিজারো বাইবেল থেকে অনুবাদপূর্বক উচ্চারণ করে চললেন, ... হে মেষপালক, দ্যাখো, আকাশ কত নীল। অথচ নীল হচ্ছে নিছক দৃষ্টি সীমানার মরমি শূন্যতা, আর সমস্ত শূন্যতা জুড়ে থাকি আমি। আমাকে তুমি কোথায় খুঁজবে, বলো? শূন্য থেকে ক্রমাগত শূন্যতার অভিযাত্রায় দ্যাখো আমি তোমাকেই দেখা দেব বলে দীর্ঘকাল নীল হয়ে আছি, আকাশ হয়ে আছি। কত মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে কথা হয়ে, কত পাখি উড়ে যাচ্ছে সুরধ্বনি তুলে, কত রোদ ঝরে ঝরে পড়ছে গান হয়ে, কত প্রেম ঘনীভূত হচ্ছে কবিতা হয়ে...

যাজকের জলদ-গম্ভীর গলা শুনতে শুনতে মাচ্চুপিচ্চুবাসীদের চোখে ঘুম এসে যায়। তারা ঘুমিয়ে পড়ে নবনির্মিত চার্চের বারান্দায়, তারা ঘুমিয়ে পড়ে নক্ষত্রের পাশে। তাদের ঘুমন্ত শিয়রে ধবধবে ছায়া ফেলে রেখে হেঁটে বেড়ান যাজক পিজারো। ঘুম ভাঙলে তারা দ্যাখে, তাদের সোনার খনি লুট হয়ে গেছে, কিন্তু তাদের মাথার কাছে বাইবেল, তাদের হাতে হাতে বাইবেল। এরপর ইতিহাসের কালো পৃষ্ঠায় বহু রক্ত, গ্রন্থাগারের তাকে তাকে মাচ্চুপিচ্চুবাসীদের সারি সারি লাশ। তাদের সোনার খনি লুট হয়ে গেছে। পিজারোর মুখে ঐশী আভা, দিগবিজয়ীর চার্চীয় হাসি। একদিন কুব্যার রাজনৈতিক সেইন্ট ফিদেল কাস্ত্রো তার এক ভাষণে বললেন, ‘পিজারোর মন যত না বাইবেলের দিকে, তার চেয়ে বেশি সোনার খনির দিকে।’

দৃশ্যত, হাতে বাইবেল, কিন্তু লুট হয়ে গেল সোনার খনি- তাহলে মন কী জিনিস? মনের মধ্যে কত রাজনীতি! মনের মধ্যে কত যুদ্ধ, রক্তপাত? মনের মধ্যে কত ইতিহাস, গাথা, গান, কবিতা কিংবা ছটফটানি! মনের মধ্যে কত প্রেম, বিরহ, জ্বালা, অসুখ এবং উপশম! মন নিয়ে কত ছিনিমিনি। মন নিয়ে কত বাড়াবাড়ি, কত ভাব-অভাব! মনের কী প্রভাব! মনের কথা লিখে প্রকাশ, কীরূপে সম্ভব, হরি? মন কি কথা শোনে? মন কি বারণ শোনে? মন কি শোনে আদৌ? তবে কি মন বোবা-কালা-বধির? মনের কথা ভাষায় লেখা আর পানের দোকানদারের পক্ষে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার সভাপতি হওয়া একই রকম দুরহ ব্যাপার।


ঠিক এ কারণেই হয়তো লিখে রেখেছি, ‘ভাষার সমস্যা আছে। সব কথা সে প্রকাশে সমর্থ নয়। যতই পণ্ডিতি করি, সান্ধ্য সুর ধরি, ঠিক যেন হলো না- মনের কী বলার ছিল? কী বলার মধ্যে আমি কী ভাব বোঝাতে চেয়েও, শেষ পর্যন্ত বাক্য যেন বাগে এলো না, বরং মহা বিট্রে করে বসল। কুয়োর মধ্যে হারিয়ে যাওয়া চৈত্র মাসের মহাজোছনা যেন আমি আর তুলে আনতে পারলাম না। ভাষায় আমি জোছনা দেখাতে পারছি না, সূর্যাস্ত দেখাতে পারছি না, যুদ্ধ দেখাতে পারছি না, রক্ত কতটা লাল দেখাতে পারছি না, বাতাসের বেয়াদপ আচরণ দেখাতে পারছি না। এমনকি আমার মন কতখানি অবাধ্য যে, সে আমার ঘরেই থাকে না, প্রত্যেকদিন একই রাস্তায় একই দিকে যায়- মনোগমনের এ বর্ণনা লিখে বোঝানো অসম্ভব! অ্যাবসার্ড! কারণ, ভাষা শিল্পকে যতটা সমর্থন করে বা শিল্পীকেও উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করতে পারে কিন্তু শিল্প ও শিল্পীর মধ্যে যেটুকু প্রচ্ছন্ন দূরত্ব, যতটা লৌহবেদনা- ভাষা তা কখনোই স্পর্শ করতে পারে না। কতটা নির্মম, দুর্ভাগ্যপীড়িত, যদি বলো, এই ভাষাতেই আমাকে লিখে জানাতে হবে সেই প্রচ্ছন্ন দূরত্বের গল্প, লৌহবেদনার ইতিকথা! মন-আনমনা, বাক্য যেন ভাব বুঝল না, বাক্য মহা বিট্রে করে বসল। অথচ কুয়োর মধ্যে চৈত্র মাসের মহাজোছনা গড়াগড়ি যায়...’

কিন্তু মন যতই আনমনা হোক, মন যতই পরিস্থিতি এড়িয়ে যেতে চাক না কেন, এত সহজে আমরা মনকে ছেড়ে দিতে পারি না। মন নিয়ে যথেষ্ট মনোযোগ আমাদের দিতেই হবে। মনের সঙ্গে বা মনের কাছে হেরে গেলে চলবে না।

মন কি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, যে তার হুকুম মেনে চলতে হবে? মন কি পুলিশ, যে তেড়ে আসবে যখন-তখন? পুলিশের কথাই যখন এলো, তখন বলব, মন কি বিডিআর, বিদ্রোহ করেছে? মনের বিদ্রোহ দমন হয় একসময়, মনের নাম পাল্টে যায়। মন সীমান্ত প্রহরী হয়ে যায়। মন বর্ডার গার্ড দেয়। মন যুদ্ধে লিপ্ত হয়। তার মানে মন সেনাবাহিনীও? মনকে কোথায় রাখি?

দেশে আজ মন গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। হারানো মন অনুসন্ধান কমিটিও কাজ করে চলেছে। মন সংরক্ষণ ও বিকাশে প্রত্যেকের ব্যক্তিগত বাজেটে বরাদ্দ আছে। মন কী চায়, তার ওপরে রিসার্চ-ফেলো চলছে। মনোসমীক্ষকের আনাগোনা বাড়ছে। মন ঢুকে পড়ছে গানে গানে, কবিতায়। মন অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছে নো-ম্যানস-ল্যান্ড ছাড়িয়ে পররাষ্ট্রের উঠোন বাড়িতে। মনকে কোনোভাবেই বাগে আনা যাচ্ছে না। মন যা চাচ্ছে, তা কিছুতেই মিলছে না। মন যা চাচ্ছে না, তাও কিছুতেই সরানো যাচ্ছে না। দিনে দিনে মন বারমুডা ট্রায়াঙ্গল হয়ে উঠছে। ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে, সর্বদা অদৃশ্য, মন। গগন হরকরা মনের মানুষ খুঁজতে খুঁজতে হন্যে হয়ে গেলেন, লালন ‘মনোবেড়ি’ দিতে চাইলেন, র. ঠাকুর মনের ওপর জমিদারিও দেখালেন, তবু মন কি কারও আয়ত্তে এলো? মনের কথা আমি কাকে বলব? কারে জানাব মনের দুঃখ গো, আমি কারে জানাব জ্বালা? আমার মনের ঘরে তালা।

দেখলাম, স্মরণ করতে পারি, সেই প্রথম, কিংবা তারও আগে ঘটে থাকতে পারে কিন্তু মনে পড়ছে সেই এক প্রথমেষু, আমার তাজা মন ভেঙে গেল। মনভাঙা কাকে বলে, জানা হলো। কারণ কী? মামাবাড়ির ইশকুলেই প্রথম ভর্তি হই, সেখানে বনভোজন হবে, তখনও আমি জানি না, বনভোজন জিনিসটি কী? তো পঞ্চাশ পয়সার চাঁদায় সেই ইশকুলের বনভোজনে আমার নাম লেখা হলো। আমার মন খুশিতে নেচে উঠল। বনভোজন হবে শনিবার। কিন্তু মামাবাড়ি থেকে বনভোজনের তিনদিন আগেই, কী কারণে যেন আমাকে দাদাবাড়ি নিয়ে যাওয়া হলো। তখন আমি পড়ি হয়তো ওয়ানে। দাদাবাড়িতে যাওয়ার দু`দিন পর, বনভোজনের আগের দিন আমার মন খারাপ হলো। সন্ধ্যায় মন আরও খারাপ হতে লাগল। রাত পোহালেই শনিবার, মামাবাড়ির ইশকুলে বনভোজন। মামাবাড়ির ইশকুলের পেছনে সত্যি সত্যি একটা বড় বাগান ছিল। বনভোজন হবে সেই বাগানে।

তো মন আমার যতই খারাপ হোক, বাড়ির বড়রা তা তেমন আমলে নিল না। রাতে আমার ঘুম হলো না। ভাবলাম, সকালে আমাকে ঠিকই নিয়ে যাওয়া হবে মামাবাড়িতে। তারপর আমিও যোগদান করব বনভোজনে। যাই হোক, সকাল হলো। আমার মন খারাপ আরও বাড়ল। আশা করলাম, আমার মন খারাপ দেখে কেউ আমাকে ঠিকই নিয়ে যাবে জোড়াদহে, ভায়নায়। কিন্তু সে রকম কোনো সম্ভাবনা দেখতে না পেয়ে আমি কান্না শুরু করলাম। আমি জোরে জোরে কাঁদতে লাগলাম। আমি কাঁদতে কাঁদতে উঠোনে গড়াগড়ি দিলাম। আমার কান্নায় বাড়ির কারও মন গলল না। ফলে আমার মন ভেঙে গেল। ভীষণ মন ভেঙে গেল। সেটাই কি আমার প্রথম মনভাঙা? এর কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই।

দাদাবাড়ির ইশকুলে, মধুপুরের পাশে গাড়াগঞ্জে পাকাপাকিভাবে চলে আসার পর, ক্লাস টুতেই ভালো লেগে গেল ঊর্মিকে। ঊর্মিরা একদিন বদলি হয়ে চলে গেল। খুব মন খারাপ হলো। এক রাতে, বাড়ি থেকে পালিয়ে বাজারে আসা কমলা সার্কাসের তেলেসমাতি খেলা দেখতে গেলাম। যাবার পথে, কোথাও যেন এক ছাতিম ফুলের ঘ্রাণে, সেই জোছনা রাতে, রূপোলি আলোয় ভেসে যাচ্ছিল চরাচর। মন কেমন করে ওঠা রাত। মন হুহু করে যাওয়া রাত। মন পু পু করে যাওয়া জোছনা। মন ধু ধু করে যাওয়া ছাতিমের আগ্রাসী ঘ্রাণ, ঘ্রাণজুড়ে চরাচর কিংবা চরাচর জুড়ে ঘ্রাণ- সেই ঘ্রাণে মন কেমন করে? সে বয়সে, একটি ঘটনা খুব মনকে নাড়া দিয়ে গেল। আমাদের ইশকুলেরই নবম শ্রেণীর এক ছাত্রী কাকে যেন ভালোবেসে শেষে ধানগাছে দেওয়া ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করল।

সেই মেয়েটির নাম কী? ভুলে গেছি। কিন্তু তার কবর দেখতে গিয়েছিলাম। তার জন্য যে কী পরিমাণ মন খারাপ হয়েছিল সেসময় কিছুদিন, আমি জানতাম, সেই মন খারাপ থেকে আমি আর বেরুতে পারব না। সেই মেয়েটির নাম আমার ডায়েরিতে লেখা আছে। কিন্তু সে সময়ের ডায়েরি আর আমার এ সময়ের ইতিহাস কত বিস্তর ফারাক। আমি ডায়েরি লিখতাম।


আমার সে সময়েরই কোনো এক ডায়েরিতে পাওয়া যাবে আরও এক মেয়ের নাম, যে মেয়েটিও একদিন পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করল এক সীমান্ত-মালামাল পাচারকারীকে। তাতেই মন খারাপ হলো। খুব মন খারাপ হলো। একদিন তাদের ঘরে একটি সন্তান এলো। একদিন সেই পালিয়ে যাওয়া মেয়েটিকে তার ঘরেই ফ্যানে ঝুলন্ত পাওয়া গেল। তার স্বামীকে পুলিশ জেলে নিয়ে গেল। একদিন জেল থেকে বেরিয়েও এলো সে। বারবার মন খারাপ হলো। কিছুই করার থাকল না।

মন ছমছম করে গেল। পৌর শ্মশানে সারারাত সাহস-পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে গিয়ে, আমি আর আমার বন্ধু রাজু ঝুঁকি নিয়ে শ্মশানেই কাটিয়ে দিলাম। ফাঁকা মাঠের মধ্যে গিয়ে হঠাৎ চৌদিকে তাকিয়ে দেখি, কেউ নেই। লোকালয় কত দূরে। সন্ধ্যা আসন্ন। মন নিঃসঙ্গ হয়ে গেল। মন খুব লোনলিনেসে আক্রান্ত হলো। মন কাগজের নৌকা হয়ে ভেসে চলল। মন ভেসে গেল ভরা বর্ষায়, উঠোনের জমে যাওয়া জলে।

মন ভায়নার কালীতলার পুজোর মেলায় বুড়ো বটগাছের শিকড়ে বসে থাকল। মন ঝিনেদার দেবদারু এভিনিউতে কত কত সন্ধ্যা, বিকেল, রাত বসে বসে নবগঙ্গার জলে তালের ডিঙি হয়ে গেল। মন ভেসে চলল মুরারীদহের দিকে। মন পরিত্যক্ত রাজবাড়ির চিলেকোঠায় হারিয়ে যাওয়া গল্পের পেছনে ছুটতে ছুটতে ছুটতে ছুটতে শতবর্ষ পূর্বের এক সন্ধ্যায় পৌঁছে গেল। মন সেখানে যুবরাজ, মনের সামনে যুদ্ধ, মন যুদ্ধে যুদ্ধে ক্লান্ত হলো। তবু মন ক্লান্ত হয় না। মন আবার উঠে দাঁড়ায়। মন রায়মঙ্গলা নদীতীরের জোছনায়, জোয়ারের ঢেউয়ে ঢেউয়ে কল্লোল তুলে গেল। মন চন্দ্রবিন্দুর হাওয়ায় কুড়িয়ে ফের হাওয়ায় হারিয়ে ফেললাম। মাতাল রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে মন চাঁদে পৌঁছে গেল। সেখানে চাঁদের দেশে, দলছুট শিল্পী সঞ্জীব চৌধুরী মন নিয়ে গান-সুর বেঁধে চলেছেন। মন দিয়ে শুনি সেই গান...

একবার রুমাবাজার থেকে পায়ে হাঁটা ঝিরিপথে বগা লেক হয়ে পরদিন কেওক্রাডংয়ের চূড়োয় উঠলাম, সুন্দরবনের ভেতরে লালকমল-নীলকমল গিয়েছি, সেন্টমার্টিন দ্বীপাঞ্চল চষে বেড়িয়েছি, কেন? সম্ভবত, হারিয়ে যাওয়া মনটার খোঁজে। কান্তজীর মন্দিরে গিয়ে মন হারিয়ে এসেছি। স্মরণীয়া নদীর ঢেউয়ে মন খুইয়ে ফেলেছি। শীতের কুয়াশায় ছদ্মবেশে মেঘ নেমে এসেছিল একবার, সেবার মনটাও হারালাম সেই ছদ্মবেশী কুয়াশায় আবছায়া নৈঃশব্দ্যে। দেখেছি, নিঃশব্দেই মন রক্তাক্ত হয়ে গেছে। অথচ মনের কোনো আকার-প্রকার নেই। মন অনেকটা ঈশ্বরগোত্রীয়। দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না কিন্তু প্রভাব ক্রিয়াশীল।

কাগজে প্রথম কবিতা ছাপা হওয়ার ফল কী দাঁড়িয়েছিল? মন কতখানি উৎফুল্ল হতে পারে, এর আগে সে ধারণা ছিল? নিজের লেখা, নিজের নাম বর্ণমালায় ছাপানো দেখার সেই কয়েকটা দিন মন আর মন ছিল না। মন হয়ে পড়েছিল অন্য কিছু। অন্য কিছুটা কী? প্রথম পথ ভুল করে অন্য রাস্তায় চলে গিয়েছিলাম, প্রথম রাগ করে বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিলাম, প্রথম আত্মরতি করেছিলাম, প্রথম ভেঙে পড়েছিলাম, প্রথম পাখির মতো আকাশে উড়েছিলাম, প্রথম মাছের মতো মরে ভেসে উঠেছিলাম- কবে? সে-সব আর মনে নেই। তাই ‘ব্ল্যাকআউট’ নামে একটা ছবি তৈরি করলাম, বাংলা নাম দিলাম ‘মনে নেই’। কী মনে নেই, যা আমার মনে নেই। যা-টা কী? তা তো মনেই নেই।

মনের অজান্তে’ বলে একটা কথা আছে। তার মানে মন যা জানে না বা জানত না, তাই? কী কী ঘটে গেল মনের অজান্তে? কী কী সায় ছিল মনের? কী কীতে ছিল না? মাঝে মধ্যেই ভাবি, আমার মনের বয়স কত? দুই কুড়ি চার? নাকি তিন নং সাতাশ? কত কবিতায় মন ঢুকে ঘাপটি মেরে আছে। ছাপার অক্ষরে মন লুকিয়ে আছে। আঁকানো রঙে মন রাঙা হয়ে আছে। নির্মিত দৃশ্যে মন সৃজিত হয়ে আছে। তবু মন কি কোথাও আছে, আদৌ? মন জিনিসটা কী?

মনের সঙ্গে আর কত কথা বলব? মনকেও আর কত কথা শোনাব? কত ছবি আঁকলাম, মনে মনে। কত কবিতা লিখলাম, মনে মনে। কত উড়াল দিলাম, পাখির মতো, মনে মনে। কত সাবমেরিন হলাম, জলের গভীরে, মনে মনে। কত না পারাকে পারলাম, মনে মনে। মনে মনে আমি খুনও করেছি। ভালোবেসেছি, মনে মনে। তবু মনের ঠিকানা খুঁজে পাইনি। খোঁজ পাইনি, জানিও না, মন কোথায় থাকে? মন কি খায়? মন কী ঘুমায়, ক্লান্ত হলে? মনের মৃত্যু হলে কবর হয় কোথায়? মনকে কি পোড়ানো হয়? শেষ হবে না। শেষ হয়ও না। তাই শেষ কথা বলি?

‘সিয়েনা শহর পুড়ে গেছে।

সেই পোড়া শহরের কালারই হচ্ছে বার্নটাসিয়েনা। যারা ছবি আঁকে, তাদের কেউ কেউ এই কালারটা পছন্দ করে বটে। হঠাৎ রোদ মিষ্টি লাগে। হঠাৎ চৌচির করে দিয়ে যায় বখাটে হাওয়া। ঠেকানো যায় না, এমন দুর্বার, এমন মাতাল। এমনকি কী নেই কী নেই বলে বুকের মধ্যে উষ্ণজলের গুড়গুড়ি বেজে ওঠে, খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগে, স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে একা বসে থাকি। একটা শালিক আরেকটা বালিকা শালিকের খোঁজে ছটফট করতে থাকে। তখন, রোদ মিষ্টি, হাওয়া চৌচির। হঠাৎ ভালোবাসার আঁচে, আভায়, লাভায় মন পুড়ে যায়।


কৃষ্ণচূড়ার ফুল কিংবা ভার্মিলিয়ন রেড ঝুপঝাপ ঝরে পড়ে শূন্যপটে। কুয়াশার আধিক্য এমন যে, এক হাত সামনে-পেছনেও কিছু দেখা যায় না। যথেষ্ট বিভ্রম ছড়ানো পথে বাড়ি ফেরা দায় হয়ে যায়। পুরো শীতকাল ভালোবাসা শিশির হয়ে ঝরে। ভোরবেলা হাঁটতে গেলেই মাথা ভিজে যায়। পা ভিজে যায়। সমস্ত শরীর ভিজে ওঠে। এরপর আসে বসন্ত। কুয়াশা তখনও কিছু অবশিষ্ট উঁকি মারে আর তলে তলে মন বেলেসিঁদুরে লেপ্টে যায়। এক কথায়, ভালোবাসা সন্ত্রাস ঘটাতে চায়।

বনে বনে অর্কেস্ট্রা বাজে। খুব ভালো লাগে, লাগে বলেই হঠাৎ ভালোবাসা রিভার্স হয়, তখন আর মোটেই ভালো লাগে না। লোনলি লোনলি লাগে। ভালোবাসার ফর্ম চেঞ্জ হয়ে যায়। পোড়াশহর, পোড়ামনের আলাদা-আলাদা কালার ফুটে ওঠে। তখন হয়তো কবিতা লেখা হয়, সেই কবিতা ছাপাখানায় যায়। তারপর সেই কবিতা কেউ হয়তো পড়ে, পুড়ে যাওয়ার আশায়, ঘৃণায়, ভালোবাসায়।

মন এমন, কদিন ধরেই ঘুঁই ঘুঁই করছে, সে আমাকে দিয়ে বলিয়ে দিতে চাচ্ছে, তোমাকে খুব ভাল্লাগছে। তোমাকে আমার ভালোবাসতেও ভাল্লাগবে...

অলংকরণে ব্যবহৃত ছবি: রকি হকিন্স, আমেরিকান চিত্রকর

ইতিহাসবেত্তা রূপ কুমার বর্মনের বীক্ষণে দলিত, তপশিলি, নিম্নশ্রেণির ইতিহাস



সাৰ্থক লাহা
ইতিহাসবেত্তা রূপ কুমার বর্মন

ইতিহাসবেত্তা রূপ কুমার বর্মন

  • Font increase
  • Font Decrease

ইতিহাস চর্চা দীর্ঘকাল ধরে মূলত রাজনীতি, রাজনৈতিক চিন্তা, রাজবংশ, রাজা-রাজত্বের মধ্যে সীমায়িত ছিল। আবার একইসাথে ইতিহাসের সংজ্ঞায়নে কেউ কেউ বলেছেন মহান মহান মানুষের জীবন অবতারনা বা আলোচনার নামই হল ইতিহাস। থমাস কার্লাইলের ভাষায়, 'ইতিহাস হল অসংখ্য মহান মানুষের আত্মজীবনির সারবস্তু’।

মূলত একটা সময় ইতিহাস মানে নেপোলিয়ান, আলেকজান্ডার, অশোক, সমুদ্রগুপ্ত, আকবর প্রমুখ মানুষদের জীবনীগাঁথা ও তাঁদের সময়কালকেই বোঝা হতো। কিন্তু ইতিহাসের যে অন্য অনুষঙ্গ আছে বা ইতিহাস যে সমস্ত শ্রেণির মানুষের ইতিবৃত্ত সেটা বুঝতে বেশ কয়েক শতাব্দী অপেক্ষা করতে হয়।

মূলত গত শতাব্দীর ৮০’র দশক থেকে নিম্নবর্গের কথা ঐতিহাসিক কলমে উন্মোচিত হয়। তা সত্ত্বেও প্রশ্ন উঠেছে ‘নিম্নবর্গের মানুষ কি সত্যিই কথা বলতে পারে?’- এই প্রশ্নের উত্তরে সজ্জিত উপাত্ত নিয়ে ইতিহাসে যে দলিত শ্রেনি, তপশিলি জাতির উচ্চারনও সমানভাবে প্রতীয়মান, সেই জায়গাটি বাংলা ভাষায় ইতিহাসচর্চার আলোকে যিনি সম্মুখে আনেন তিনি হলেন অন্যতম ইতিহাসবেত্তা রূপ কুমার বর্মন। যার কলমে বিভিন্ন গ্রন্থে দলিত শ্রেনি, তপশিলি শ্রেণির তথা নিম্নশ্রেনির ইতিহাস, আত্মকথন, স্বকীয় রচনাগুলি পরিস্ফুটিত হয়েছে। লেখকের ‘সমকালীন পশ্চিমবঙ্গ জাতপাত জাতি-রাজনীতি ও তপশিলি সমাজ’ গ্রন্থটিও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়।

ইতিহাসচর্চা বস্তুনিষ্ঠতা, বিজ্ঞানবাদিতা, নিরপেক্ষতা সহ নানা নতুন অনুষঙ্গ নিয়ে ক্রমশই অগ্রবর্তী হচ্ছে। ইতিহাসবেত্তাদের কলমে ক্রমশই পরিবেশ, খাদ্যাভ্যাস, মহামারি, বিজ্ঞান, ক্রীড়াসহ নানাবিধ চর্চা বিশ শতকে নানা আবর্ত আলোচিত হতে দেখা যায়।

মুখ্যত বাংলা ভাষায় জাতপাত, জাতি-রাজনীতি ও তপশিলি সমাজ বিষয়ক আলোচনার আবর্ত দীর্ঘকাল যাবৎ ইতিহাসচর্চাকারীদের কলমে অপাংক্তেয় অবস্থাতেই থেকে গিয়েছিল। ঔপনিবেশিক কালপর্বে এবং সাম্প্রতিকে কিছুক্ষেত্রে জাতিচেতনা, দলিত আন্দোলন নিয়ে লেখালেখি হলেও মূলত তা ক্ষুদ্র গণ্ডির মধ্যেই সীমায়িত। কাজেই কলকাতার গাঙচিল প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত রূপ কুমার বর্মনের ‘সমকালীন পশ্চিমবঙ্গ জাতপাত জাতি-রাজনীতি ও তপশিলি সমাজ’ এই গ্রন্থটি জাতপাতের ও আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে একটি নতুন দিকনির্দেশক গ্রন্থ তা বলাই যায়।

লেখক মূলত সমকালীন পশ্চিমবঙ্গকে এক্ষেত্রে অনুধাবন করেছেন। অসংখ্য সাক্ষাৎকার ও ক্ষেত্রসমীক্ষা সহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংযোজন এবং অসংখ্য প্রবন্ধ অন্তর্ভুক্তিকরনের প্রয়াসের ফসল এই গবেষণা গ্রন্থটি। শিরোনামেই ধরা পড়েছে গ্রন্থের মূল নির্যাস। যার মধ্যে সমকালীন পশ্চিমবঙ্গের জাতপাত, জাতি-হিংসা, তপশিলিদের সামাজিক স্তরীকরণে কী অবস্থা, অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা, নারীদের বৈষম্যকরনের পাশাপাশি ডান-বাম রাজনীতির আবহে এই তপশিলি জাতির চিত্রপটের স্বরূপ অনুধাবন, জাতিকেন্দ্রিক রচনা, কিছু ব্যক্তিত্বের বর্ননের সাথেও সরকারী নীতি, বিভাগ স্থাপন, প্রতিস্থান নির্মান ও নামকরন প্রভৃতি নানাবিধ বিষয়ের সংযুক্তকরুন বইটিকে এক অনন্য মাত্রা দান করেছে।

রুপ কুমার বর্মনের গ্রন্থটিতে ভূমিকা, অধ্যায়ীকরন, উপসংহার, সুদীর্ঘ গ্রন্থ তালিকা সহ বিভিন্ন সাক্ষাৎকারের সন্নিবিষ্টকরন পরিলক্ষিত করতে পারি। গ্রন্থ তালিকায় প্রাথমিক তথ্যাদি সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক রচনা, অফিসিয়াল ও লেখ্যাগারের তথ্যাদি ও বৈদেশিক গ্রন্থের প্রয়োগ গ্রন্থটির প্রামাণ্যতাকে নির্দেশ করে। অতিরিক্ত তথ্যাদির এই ব্যবহার গ্রন্থটিকে আরো প্রাঞ্জল করেছে।

গ্রন্থটির ভূমিকাংশে জাতপাত এবং জাতি, বর্ণবাদের উৎপত্তির ব্যাখ্যা থেকে শুরু করে প্রাচীন ও আদি মধ্যযুগের বর্ণবাদের বিকাশ এবং ক্রমশই যে জাতপাতের ভারতীয় সমাজে নিম্নবর্ণীয়দের প্রান্তিকায়িত করার আভাস তার ব্যাখ্যা দেখতে পায়। লেখক ইসলামিক এবং ঔপনিবেশিক সময়কালেও গ্রন্থগুলি অবলোকন করে ভারতীয় সমাজের নিম্নবর্ণীয়দের কি অবস্থান, তারা কিভাবে জাতি বৈষম্যের শিকার সেই ব্যাখ্যা করেছেন এবং পরবর্তীকালে বিভিন্ন আইন এবং প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা মধ্য দিয়ে নিম্নবর্ণীয়দের অবস্থা যে ক্রমিক প্রভু-দাস সম্পর্কের (patron-client Relationship) বন্ধনে নিমজ্জিত হয়েছে। এবং প্রান্তিকিকরন হয়ে যাওয়ার যে ব্যাখ্যা সেটা আমরা দেখতে পাই এবং স্বাধীনতার সময়কালে ভারতের নিম্ন বর্ণের জাতি জাতি হিংসা অবসানের যে প্রচেষ্টা এবং সেই প্রচেষ্টায় তপশিলি জাতি এবং জনজাতীয় অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জাতির স্বরূপ কতটা বিকাশমূলক হয়েছে তার ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এবং খুব সুস্পষ্টভাবে ভারতীয় প্রেক্ষিতে পরিবর্তনের অনুধাবন করার চেষ্টা করেছেন এবং সমকালীন পশ্চিমবঙ্গেও জাতপাতের যে ধারাবাহিকতা সেটির আলোচনা করেছেন।

বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে তপশিলি জাতি ক্রমিক কিভাবে মৌখিক তথা বাহ্যিক এবং মানসিক জাতপাতের শিকার হচ্ছে সেই নব ব্যাখ্যাও এক্ষেত্রে সুস্পষ্ট।

গ্রন্থটির বিভিন্ন অধ্যায়ে বিভিন্ন আঙ্গিকে এই জাতপাত, জাতি-রাজনীতি, জাতি-হিংসা, জাতি-বৈষম্য এই বিষয়গুলি পরিস্ফুটিত হয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে পশ্চিমবঙ্গে জাতপাত, জাতি হিংসা এবং সামাজিক সংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক স্তরীকরণের ক্ষেত্রে জাতপাতের যে গুরুত্বপূর্ণ সেই ব্যাখ্যা যেমন আলোচিত হয়েছে তেমনি অন্য মেরুতে পশ্চিমবঙ্গের শহরাঞ্চলে চলতে থাকা বাচিক, মানসিক, ব্যবহারগত জাতপাতের যে অন্ধকার দিক সেটি লেখক তুলে ধরেছেন।
দ্বিতীয় অধ্যায়ে স্বাধীনতার পর্বে পশ্চিমবঙ্গের পরিবর্তনকালীন রাজনীতি জাতপাত বা জাতি রাজনীতি কে কতটা ত্বরান্বিত করেছে এবং তপশিলি জাতির বিকাশ তথা উন্নয়ন নাকি তপশিলিরা রাজনীতির শিকার হয়েছে সেই ব্যাখ্যায় আমরা মূলত সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত পর্যবেক্ষিত হতে দেখি।

গ্রন্থটির তৃতীয় অধ্যায় মূলত বাংলার নিম্নবর্ণীয়দের নিজস্ব স্বকীয় লেখনীর মাধ্যমে তাদের অবস্থা নির্ণয়ের বা নির্মাণের আলোকে উঠে এসেছে। খুব সুন্দর ভাবেই লেখক বিভিন্ন জীবনী সাহিত্য, সৃজনধর্মী সাহিত্য অবলোকন এবং ব্যাখ্যার মধ্য দিয়ে সাম্প্রতিক পশ্চিমবঙ্গে নিম্নবর্ণের উত্থানের প্রশ্নটিই উত্থাপন করেছেন। গ্রন্থটির চতুর্থ অধ্যায়ে বাংলার তপশিলি সমাজের থেকে রাজনীতিতে প্রতিনিধিত্বকরণ এবং বেশ কিছু নিম্নবর্ণীয় মানুষের বিস্মৃত স্মৃতির নতুন করে চর্চা এবং চর্যার জগতে আনার আলোকে রচিত হয়েছে।

জাতপাত, জাতি-বৈষম্য, জাতি রাজনীতি এই শব্দবন্ধগুলি ভারতীয় সমাজের আদি থেকে বর্তমান পর্যন্ত সমানভাবেই বহমান হয়ে রয়েছে। সমাজে অন্যকে দেখার মানসিকতা, প্রভু-দাসত্বের সম্পর্ক উচ্চবর্ণ-নিম্নবর্ণের রূপক বর্তমান বিশ্বায়ন এবং প্রযুক্তির যুগেও সমভাবেই জাজ্বল্যমান সেটি পরিস্ফুটিত হয়েছে। গ্রন্থটি অনুধাবন করলে আমরা এই বিষয়টির সুস্পষ্ট বর্ণনা ফুটে উঠতে দেখতে পারি। কাজেই শুধুমাত্র ইতিহাস চর্চার আলোকে বা ইতিহাস পাঠকদের কাছেই নয়, সমাজের প্রতিটি মানুষের কাছে এই বইটির এক অন্যকথনের গল্প বলে যে গল্প জাতপাত, জাতি হিংসা, বৈষম্য প্রভৃতি বিষয়ের সংযোজনে জাতপাতের ইতিহাসে এই গ্রন্থটির গুরুত্বকে বর্নিত করে।

অনেক প্রশ্নের জবাব রূপ কুমার বর্মনের সমকালীন পশ্চিমবঙ্গ জাতপাত জাতি-রাজনীতি ও তপশিলি সমাজ’ গ্রন্থটি সজ্জা, জাতি ইতিহাসের নানা আঙ্গিকে বর্ননা, নির্ভরযোগ্য গ্রন্থতালিকা এবং সার্বিক-সুস্পষ্ট বর্ননা গ্রন্থটিকে অনন্য মাত্রা দান করে। হাল আমলে দাঁড়িয়ে জাতপাতের বর্ননা, আঞ্চলিক প্রেক্ষিত, জাতি-হিংসার নানা দিকের উন্মোচন এবং বিভিন্ন তথ্যাদির প্রয়োগে সার্বিকভাবে সমকালীন বাংলার জাতপাতের ইতিহাস নির্মানের ক্ষেত্রে এক দিকনির্দেশক পাঠ হয়ে উঠেছে রূপ কুমার বর্মনের ‘সমকালীন পশ্চিমবঙ্গ জাতপাত জাতি-রাজনীতি ও তপশিলি সমাজ’ গ্রন্থটি।

গ্ৰন্থ আলোচনা
সমকালীন পশ্চিমবঙ্গ: জাতপাত, জাতি-রাজনীতি ও তপশিলি সমাজ
রূপ কুমার বর্মণ
গাঙচিল প্রকাশনী, কলকাতা, ২০২২, দাম- ৪০০ টাকা
.....

সাৰ্থক লাহা, গবেষক, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।

;

নজরুল পুত্রবধূ কল্যাণী কাজীর শেষ ইচ্ছা



সোমঋতা মল্লিক
নজরুল পুত্রবধূ কল্যাণী কাজীর শেষ ইচ্ছা

নজরুল পুত্রবধূ কল্যাণী কাজীর শেষ ইচ্ছা

  • Font increase
  • Font Decrease

“তোমার মহাবিশ্বে কিছু হারায় না তো কভু।

আমরা অবোধ, অন্ধ মায়ায় তাই তো কাঁদি প্রভু।।"

১৪ মে, সকাল। কলকাতার রবীন্দ্র সদনে সমবেত কণ্ঠে ধ্বনিত হল এই নজরুল সঙ্গীত। বহুল প্রচলিত গানটি এই বিশেষ দিনে আমার কাছে ধরা দেয় অন্যরূপে। সমুখে শায়িত রয়েছেন সদ্য প্রয়াত কাজী নজরুল ইসলামের কনিষ্ঠ পুত্রবধূ শ্রীমতী কল্যাণী কাজী। নিথর দেহে পুষ্পের অঞ্জলি। তাঁকে ঘিরে তাঁর আপনজনদের এই মর্মস্পর্শী উচ্চারণ মনকে ব্যাকুল করে।

তাঁর সঙ্গে আমার দীর্ঘ ১২-১৩ বছরের আত্মিক সম্পর্ক। ছায়ানট (কলকাতা)-এর হাত ধরেই যদিও এই সম্পর্ক শুরু হয়, কিন্তু পরবর্তীতে তিনি হয়ে উঠেছিলেন আমাদের পরিবারের একজন। তাঁর কাছ থেকে যে ভালোবাসা পেয়েছি তা অবর্ণনীয়। আমার জীবনে এই প্রথম নজরুল জন্মজয়ন্তী যেদিন কল্যাণী কাজী আর সশরীরে আমাদের মধ্যে নেই। একথা ভাবলেই চোখ ভরে ওঠে জলে। বছরের এই বিশেষ দিনগুলিতে তাঁর সাথে দেখা হলে মনে হত, কি অসীম ভালোবাসায় তিনি আমাদের প্রাণের কবিকে অন্তরে ধারণ করেন। আর পাঁচজন শিশুর মতো তিনিও নজরুলকে ভালোবেসেছেন শৈশবেই।


'অন্তরঙ্গ অনিরুদ্ধ' বইয়ের ভূমিকায় তিনি লিখেছেন, "ছেলেবেলা থেকেই আমার প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। 'প্রভাতী', ‘লিচুচোর’ থেকে শুরু করে ‘বিদ্রোহী', 'আমার কৈফিয়ৎ’ ‘কান্ডারী হুঁশিয়ার’, ‘ইন্দ্রপতন’ প্রভৃতি কবিতা বিভিন্ন বয়সে মনে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। ছবিতে তাঁর ঝাঁকড়া ঝাঁকড়া চুল আর বড় বড় ভাবালু চোখ দুটোর দিকে মুগ্ধ বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকতাম। খুব কাছ থেকে তাঁকে দেখার ইচ্ছা হত। মনে পড়ছে, একবার গৃহশিক্ষককে অনুরোধ করেছিলাম তাঁকে দেখতে নিয়ে যাবার জন্য। কিন্তু কেন জানি না শেষ পর্যন্ত যাওয়া হয়ে ওঠেনি। নিয়তি সেদিন অলক্ষ্যে নিশ্চয় হেসেছিলেন। নয়ত যে মানুষটাকে শুধু মাত্র চোখের দেখা দেখবার জন্য সেদিন ব্যাকুল হয়েছিলাম - পরবর্তী জীবনে তাঁরই পরিবারের একজন হয়ে তাঁর কাছে থেকে তাঁকে সেবা করার সুযোগ পেলাম কি করে? একেই বোধহয় বলে ‘বিধিলিপি’!

এই বিরল ব্যক্তিত্বের খুব কাছের মানুষ হয়েও, দুর্ভাগ্যবশত আমি সুস্থ অবস্থায় তাঁকে পাইনি। আমি এ বাড়ীর ছোট বউ হয়ে আসার বেশ কয়েক বছর আগেই বিস্মৃতি তাঁর চেতনার ওপর কালো পর্দা টেনে দিয়েছিল। তবুও আমাদের সবার প্রিয় ‘মামনি’ প্রমীলার স্নেহচ্ছায়ায় থেকে, তাঁর যতটুকু সেবা করার সুযোগ পেয়েছি তাতেই আমি ধন্য।"


এভাবেই কাজী অনিরুদ্ধর সঙ্গে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হওয়ার সুবাদে নজরুল পরিবারের একজন হয়ে উঠেছিলেন তিনি। বহু অন্তরঙ্গ আড্ডায় তিনি পরিবারিক স্মৃতিচারণা করতেন।

প্রথমবার তাঁর শ্বশুরবাবা কে সামনে থেকে দেখার অনুভূতির বর্ণনা যখনই দিতেন, মনে হত আমরাও সেই সময়ে উপস্থিত হয়েছি। তাঁর কথা বলার ভঙ্গি ছিল অসাধারণ। অতি সামান্য ঘটনাও তাঁর বাচনভঙ্গিতে হয়ে উঠত অসাধারণ।

তাঁকে ঘিরেই জমে উঠত আড্ডা। কখনও কথা, আবার কখনও গেয়ে উঠতেন একের পর এক নজরুল সঙ্গীত। নিয়মিত দূরদর্শনে নজর রাখতেন কোন্ শিল্পী কিভাবে নজরুলের গান গাইছেন। বিভিন্ন চ্যানেলের প্রভাতী অনুষ্ঠান দেখতে খুবই ভালোবাসতেন। পরিচিত শিল্পী হলে অনুষ্ঠানের পরেই চলভাষের মাধ্যমে অভিনন্দন জানাতেন। এভাবেই তিনি ভালোবাসায় আবদ্ধ করে রাখতেন সকলকে।

নজরুল চর্চার সঙ্গে যুক্ত যে কোন ব্যক্তি/সংগঠনকে তিনি আপন করে নিতেন। তাঁর পূর্ণদাস রোডের বাড়িতে ছিল নজরুল প্রেমীদের নিত্য যাতায়াত। নজরুল বিষয়ক আলোচনায় তাঁর ক্লান্তি ছিলনা। যে কোন সময়, যে কোন পরিস্থিতে তিনি পাশে থেকেছেন। ২০১৭ সালে কলকাতার বুকে প্রথম নজরুল মেলার আয়োজন করে ছায়ানট (কলকাতা), উদ্বোধক কল্যাণী কাজী। শিশুদের জন্য নজরুলের লেখা ২৫টি ছড়া ও কবিতা নিয়ে ২০২১ সালে ছায়ানটের উদ্যোগে কল্যাণী কাজীর কণ্ঠে ‘শিশু কিশোরদের নজরুল’ শিরোনামে একটি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। পরম যত্নে তাঁর হাতে গড়া দল 'বিষের বাঁশী' ছায়ানট (কলকাতা) - এর বহু অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছে।


নজরুল সঙ্গীতের শিক্ষা তিনি কিভাবে পেয়েছিলেন সেই বিষয়ে কল্যাণী কাজী স্মৃতিচারণা করেছেন, "সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিল্পী শ্রী ধীরেন্দ্র চন্দ্র মিত্রের কাছে গান শেখার সুযোগ পাই। কিন্তু আজ আমার মনে হচ্ছে আমি সে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারিনি। বাংলা গানের সাথে সাথে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতেও যাতে ব্যুৎপত্তি লাভ করতে পারি,  তিনি তার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা করতেন। কিন্তু আমার তখন চটুল গানের দিকেই ঝোঁক বেশি, তাই রাগ সঙ্গীতের জটিল পথে চলতে মন চাইত না। যতদিন যাচ্ছে ততই বুঝতে পারছি গলাকে স্ববশে রেখে গান গাইতে হলে, বিশেষ করে নজরুল গীতিকে প্রাণবন্ত করতে রাগ সঙ্গীত চর্চা খুবই দরকার।

আজ সঙ্গীতের শিক্ষকতা করতে গিয়ে নজরুল গীতির সঙ্গে সঙ্গে ছাত্র-ছাত্রীদের সব রকমের বাংলা গানের চাহিদা যে মেটাতে পারি, তারজন্য আমি আমার গুরু শ্রদ্ধেয় শ্রী ধীরেন্দ্র চন্দ্র মিত্রের কাছে বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞ। সেদিন যদি তিনি জোর করে খেয়াল, ঠুংরী, দাদরা, গীত, গজল এর সাথে সাথে কীর্তন, পুরাতনী, রাগপ্রধান প্রভৃতি গান না শেখাতেন, তবে গানের অনেক ধারাই আমার অজানা থেকে যেত। কাজী নজরুলের গানের সঙ্গে প্রকৃত পক্ষে তিনিই আমায় প্রথম পরিচয় করান। প্রথম যে নজরুল গীতিটা শিখিয়েছিলেন সেটা হল হাম্বির রাগে নিবদ্ধ 'আজো কাঁদে কাননে কোয়েলিয়া'। এরপর তিনি শেখালেন 'ভোরের ঝিলের জলে', 'প্রথম প্রদীপ জ্বালো', 'শাওন আসিল ফিরে', 'ফুলের জলসায় নীরব কেন কবি' প্রভৃতি নজরুলের রাগভিত্তিক গানগুলো।


আমার স্বামী অনিরুদ্ধ যখন নজরুল গীতির স্বরলিপির বই 'রাগবিচিত্রা'-র প্রস্তুতি নেন, তখন আমিই হাম্বির রাগের গানটির স্বরলিপির কাজে সাহায্য করেছিলাম। তিনি গানটা জানতেন না। অপ্রচলিত গানটা পরে খুবই জনপ্রিয় হয়েছে।" 

তিনি অসুস্থ ছিলেন বেশ কয়েকমাস, কিন্তু তাঁর জীবনীশক্তি ছিল প্রবল। জীবনের বহু দুঃসময়কে তিনি জয় করেছিলেন অবলীলায়। ১২ মে ভোরে নজরুল অনুরাগীদের চোখের জলে ভাসিয়ে অনন্তলোকে পাড়ি দিলেন তিনি।

তাঁর কন্যা অনিন্দিতা কাজী বলেছেন মায়ের শেষ ইচ্ছের কথা। শোকবার্তায় অনিন্দিতা লিখেছেন - "মায়ের শেষ ইচ্ছা ছিল তাঁর নিজের বাড়িতে (৭৪ এইচ, পূর্ণদাস রোড, ট্রায়াঙ্গুলার পার্ক) দাদু ও ঠাকুমার স্মৃতির উদ্দেশ্যে একটা আর্কাইভ হবে।"

আমরা সকলেই চাই তাঁর শেষ ইচ্ছে পূরণ হোক।

সোমঋতা মল্লিক, নজরুল সঙ্গীতশিল্পী ও গবেষক। সভাপতি, ছায়ানট (কলকাতা)।

;

বাজারে এলো আতিফ ওয়াফিকের বই ‘এটিকেট এনসাইক্লোপিডিয়া’ 



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

এইচ এম আতিফ ওয়াফিক, যোগাযোগের ক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞ, তার সর্বশেষ বই "এটিকেট এনসাইক্লোপিডিয়া" বাজারে এসেছে। এই বইটি আজকের পাঠকদের দ্রুত-গতির বিশ্বে সঠিক আচরণের শিল্প সম্পর্কে একটি সমসাময়িক দৃষ্টিভঙ্গি সরবরাহ করবে বলে লেখক মনে করেন।

একটি সমাজে যেখানে আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, "এটিকেট এনসাইক্লোপিডিয়া" সেই ব্যক্তিদের জন্য একটি অমূল্য সম্পদ হিসাবে কাজ করবে বলে লেখক মনে করেন। বিশেষ করে আজকের স্কুল এবং কলেজ পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রী দের এই বই টি অনেক কাজে আসবে। এই বইটি পাঠকদের আধুনিক আচরণের সূক্ষ্মতা আয়ত্ত করতে সাহায্য করার জন্য ব্যবহারিক পরামর্শ এবং কার্যকরী টিপস প্রদান করে৷

"এটিকেট এনসাইক্লোপিডিয়া" যত্ন সহকারে গবেষণা করা হয়েছে, পাঠকদের সমসাময়িক শিষ্টাচারের নিয়ম সম্পর্কে সর্বশেষ অন্তর্দৃষ্টি এবং নির্দেশিকা প্রদান করে। এর সহজ ভাষা এবং উপস্থাপন উদাহরণ সহ, সমস্ত পটভূমির পাঠকদের জন্য উপযুক্ত, তারা তাদের সামাজিক দক্ষতা পোলিশ করতে চাইছে বা তাদের পেশাদার চিত্র উন্নত করতে চাইছে।

এইচ এম আতিফ ওয়াফিক একজন অন্বেষিত যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ, তার আকর্ষক কথা বলার ব্যস্ততা এবং অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ পরামর্শের জন্য পরিচিত। বর্তমানে তিনি সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্স এ ।

রিডিং ক্যাফে, বনানীতে বইটি উন্মোচনের সময়, জনাব ববি হাজ্জাজ (একজন অক্সফোর্ড স্কলার), জনাব সোলায়মান শুকন (একজন বাংলাদেশী যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ), জনাব শাহরিয়ার নাফীস (সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার), জনাব হাসান মাহমুদ (প্রতিষ্ঠাতা, স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ার্স), জনাব বেনজির আবরার (প্রতিষ্ঠাতা, এক্সিলেন্স বাংলাদেশ), মিসেস আফরুজা তানজি (রাষ্ট্রদূত, ওয়ান ইয়াং ওয়ার্ল্ড), মিসেস শারমিন কবির (প্রতিষ্ঠাতা, রিতু), মিসেস ইশরাত নাহের ইরিনা (প্রতিষ্ঠাতা, প্রেসক্রিপশন বাংলাদেশ), জনাব ফাহিন আরাফিন (ক্রিয়েটিভ হেড, স্বপ্ন), জনাব সালেহীন মাহবুব (বিশ্ববিদ্যালয় অনুষদ), মিসেস ফারহানা শারমিন (ডিজিটাল স্ট্র্যাটেজিস্ট, রিমার্ক এইচবি), এবং আরও অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী প্রিয় শিক্ষার্থীউপস্থিত ছিলেন।

;

কলকাতা আলীপুর জেল মিউজিয়ামে 'নজরুল কক্ষ'



কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
কলকাতা আলীপুর জেল মিউজিয়ামে 'নজরুল কক্ষ'

কলকাতা আলীপুর জেল মিউজিয়ামে 'নজরুল কক্ষ'

  • Font increase
  • Font Decrease

আধুনিক বাংলা সাহিত্যে তিনি একক ও অনন্য। তিনি কাজী নজরুল ইসলাম। যার অগ্নিঝরা লেখনি ত্রস্ত করেছে ঔপনিবেশিক শাসকদের। যার বই বার বার বাজেয়াপ্ত হয়েছে। যাকে কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে কাটাতে হয়েছে দিনের পর দিন।

নজরুল শতবর্ষ আগে বন্দি ছিলেন কলকাতার আলীপুর সেন্ট্রাল জেলখানায়। নজরুল বিষয়ক সংগঠন ছায়ানট কলকাতা শিল্প, সঙ্গীত, সাহিত্য ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা-গবেষণার পাশাপাশি নজরুল স্মৃতিধন্য হেরিটেজ স্থান ও স্থাপনাসমূহ রক্ষায় জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সক্রিয় রয়েছে। ছায়ানট কলকাতার সভাপতি, বিশিষ্ট শিল্পী, সোমঋতা মল্লিক কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতের নজরুলতীর্থগুলো নিজে গিয়ে সেগুলো রক্ষার প্রশাসনিক ও নাগরিক তৎপরতা চালিয়ে ছিলেন। যার ফলে এবছর নজরুল জয়ন্তীতে কলকাতা আলীপুর জেল মিউজিয়ামে স্থাপিত হয়েছে 'নজরুল কক্ষ'।


ছায়ানট কলকাতা সভাপতি সোমঋতা মল্লিক বার্তা২৪.কম'কে জানান, গত ১৪ ডিসেম্বর,২০২২ তারিখে ছায়ানট (কলকাতা) তথ্য সহ WBHIDCO - এর কাছে এই মর্মে আবেদন করে যে, নজরুল স্মৃতি বিজড়িত আলিপুর জেল মিউজিয়ামে কাজী নজরুল ইসলাম যে জায়গায় বন্দি হিসেবে ছিলেন, সেই জায়গাটি চিহ্নিত করা এবং নজরুল মূর্তি স্থাপন করার জন্য।

তিনি বলেন, গত ১৭ জানুয়ারি,২০২৩ তারিখে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে নজরুলের আগমনের শতবর্ষকে স্মরণ করে ছায়ানট (কলকাতা) এবং আলিপুর মিউজিয়াম যৌথভাবে একটি অনুষ্ঠানও পালন করে।

শনিবার (২৬ মে) আমরা সত্যিই আনন্দিত, আমাদের এই প্রস্তাব তাঁরা বিবেচনা করেছেন এবং আলিপুর মিউজিয়ামে 'নজরুল কক্ষ' তৈরি হয়েছে, জানান সোমঋতা মল্লিক।

;