বাঙলার কিছু বিলুপ্ত বই পুস্তক



তানিয়া চক্রবর্তী
অলঙ্করণ শতাব্দী জাহিদ

অলঙ্করণ শতাব্দী জাহিদ

  • Font increase
  • Font Decrease

বহু গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য সৃষ্টি হয়েও কালের অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছে, কখনোবা লেখকরা সমসাময়িক সময়ে গুরুত্ব পেয়েও পরে হারিয়ে গেছেন। কোথাও চর্চার আড়ালে, কোথাও বা পুস্তকের দুর্লভ হওয়ার কারণে কোথাওবা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ইত্যাদি ইত্যাদি কারণে বইপত্র অনেকসময় ধ্বংস হয়ে স্মৃতির ধুলোতে আচ্ছন্ন হয়ে গেছে।
এখন যে বইয়ের কথা বলছি যথা ‘ছেলেদের মহাভারত’, ‘মসূয়ার ইতিহাস’, ‘ধ্রুব’, ‘বিক্রমাদিত্য’ ও ‘প্রতাপাদিত্য’, এই সকল বইয়ের রচয়িতা শ্রদ্ধেয় শ্রী পূর্ণচন্দ্র ভট্টাচার্য্য—সম্পর্কে আমার মায়ের ঠাকুরদা হন। আমার মা শ্রীপূর্ণচন্দ্র ভট্টাচার্য্যের জ্যেষ্ঠ পুত্র শ্রী প্রতাপ ভট্টাচার্য্যের সন্তান। পূর্ণচন্দ্র ভট্টাচার্য্যের স্ত্রী শ্রীমতী সুনীতি দেবীকে আমি দেখেছি ও তার মুখে ছেলেবেলায় কিছু গল্পও শুনেছি, তাঁকে সম্বোধনে বম্মা (বড়মা থেকে) বলে ডাকতাম। এই পাঁচটি বইয়ের প্রতিটিই রচনার দিক থেকে ভিন্ন। হিন্দু-মুসলিম দ্বন্দ্বের কারণে ১৩৫৪ সনের ১২ই চৈত্র মসূয়ার (বর্তমান বাংলাদেশের ময়মসিংহ জেলার মসূয়া গ্রাম) বাড়ি (ভারতী কুটীর) ত্যাগ করে স্ত্রী, দুই পুত্র ও দুই কন্যা নিয়ে তাকে ভারতবর্ষে আসতে হয়। সেইসময়  স্বভাবতই তাঁকে বেশ অর্থকষ্টে পড়তে হয় কিন্তু এসবের মধ্যেও ক্রমাগত নিজের সাহিত্যসৃষ্টি অব্যাহত রেখেছিলেন।

প্রথমে গৌরীপুর, কালীপুরে কিছুদিন কাটিয়ে মালদার চাঁচলে বাস করেছিলেন। ভারতবর্ষে ফিরে তিনি যতদিন বেঁচে ছিলেন শারীরীকভাবেও খুব সুস্থ ছিলেন বলে জানা যায় না। ১২৯০ বঙ্গাব্দে ময়মনসিংহ জেলার মসূয়া নামক বর্ধিষ্ণু গ্রামে শ্রী পূর্ণচন্দ্র ভট্টাচার্য্য জন্মগ্রহণ করেন। এই মসূয়া গ্রামেই শ্রদ্ধেয় উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর জন্ম হয়। বম্মার মুখে শুনেছি বড়দাদু তথা শ্রী পূর্ণচন্দ্র ভট্টাচার্য্যের বিশেষ সুহৃদ ছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। সাহিত্যের বিভিন্ন কর্ম নিয়ে তাঁরা আলোচনা করতেন। তাঁর যেসকল বই বিশেষ জনপ্রিয় ছিল তার মধ্যে ‘ছেলেদের মহাভারত’, ‘প্রতাপাদিত্য’, ‘বিক্রমাদিত্য’, ‘কেদার রায়’, ‘ঈশা খাঁ’, ‘ধ্রুব’, ‘মসূয়ার ইতিহাস’ উল্লেখযোগ্য। শিশুসাহিত্যের এই মূলগ্রন্থগুলি ছাড়াও পাখি নিয়ে বিশেষ কিছু কাজ করেছিলেন যথা ‘গায়ক পাখি’, ‘বাংলার পাখি’, ‘পক্ষীতত্ত্ব’। বাংলার পাখি সম্পর্কে শিশুদের সম্যক জ্ঞান হোক এই আশায় এসকল বই তিনি লিখেছিলেন। এই বইগুলো আজ প্রায় দুর্লভ। ১৩৬০ সনের ১লা বৈশাখ তাঁর জীবনাবসান ঘটে। 

আমাদের মহাকাব্যের দিক থেকে “মহাভারত” মানুষের সংবেদনশীলতাকে, জীবনযাপনকে বোঝার সবচেয়ে অপূর্ব সৃষ্টি। সম্ভবত ছোটদের মহাভারতকেই এখানে ‘ছেলেদের মহাভারত’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে। এখন সময় ও উন্নত ভাবনায় এসে এই নামকরণে আমাদের অসন্তোষ থাকতেই পারে। তবে যেভাবে ছোটবেলাকে ছেলেবেলা বলা হয় এটা তারই সাদৃশ্যযুক্ত প্রয়োগ সমসাময়িক প্রভাব থেকে। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী রচিত ‘ছেলেদের মহাভারত’ প্রকাশের বেশ কয়েকবছর পরে শ্রী পূর্ণচন্দ্র ভট্টাচার্য্যের ‘ছেলেদের মহাভারত’টিও প্রকাশিত হয়। সেইসময়ের বিশিষ্ট প্রকাশক ‘বৃন্দাবন ধর এন্ড সন্স লিমিটেড” থেকে এই বই প্রকাশিত হয়। তিনটি স্থানে এই প্রকাশনার অফিস ছিল যথা ৫, বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট, কলকাতা, ৯০, হিউয়েট রোড, এলাহাবাদ এবং ৭৮/৬, লায়েল স্ট্রিট, ঢাকা”। এই প্রকাশনার স্বত্বাধিকারী ছিল আশুতোষ লাইব্রেরি। এই আশুতোষ লাইব্রেরিই তাঁর বেশীরভাগ বই প্রকাশের দায়িত্ব নিয়েছিল। এই প্রকাশনী সেইসময়ের বিখ্যাত প্রকাশনীদের অন্যতম। ওখান থেকে ছোটদের বই বেশি প্রকাশিত হতো। এই প্রকাশনা থেকেই ‘শিশুসাথী’ পত্রিকা প্রকাশিত হতো। এই পত্রিকায় বহু বিশিষ্টজনেরা লিখেছেন নিয়মিত। এই পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা বিখ্যাত ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার সম্পাদনাও করেছেন। সেই সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ছিলেন। শ্রী পূর্ণচন্দ্র ভট্টাচার্য্য ও রমেশ্চন্দ্র মজুমদার দুজনের পরিবারের মধ্যে বিশেষ ভাবের সম্পর্ক ছিল বলে জানতে পারি। শ্রী পূর্ণচন্দ্র ভট্টাচার্য্য’র অজস্র লেখা প্রকাশিত হয়েছে ‘শিশুসাথী’ পত্রিকায়।

১৩৫৬ সনে ‘ছেলেদের মহাভারত’-এর চতুর্থ সংস্করণটি প্রকাশিত হয়। সেইসময় এই বইটির মূল্য ছিল আড়াইটাকা। এই বইটি মুদ্রিত হয়েছিল ‘নিউ আর্য্যমিশন প্রেস (১১নং রঘুনাথ চ্যাটার্জি স্ট্রিট, কলকাতা)’ থেকে। ‘ছেলেদের মহাভারত’ আসলেই শিশুদের সুখপাঠযোগ্য একটি বই। আঠারোটি পর্বে রচিত এই মহাভারত অতি সরল সহজ ভাষায় রচিত। মূলগ্রন্থটিতে ব্লক প্রিন্টের অপূর্ব সব ছবি সাযুজ্য বজায় রাখে। দ্রৌপদীর কেশাকর্ষণ, অভিমন্যুর যুদ্ধ, ভীম ও বকরাক্ষস এইসব ছবি মনের মধ্যে রচনা ও চিত্রের যুগপৎ ব্যবহারে দারুণ কল্পজগৎ সৃষ্ট করে। মহাভারতটি পড়লে বোঝা যায় কিশোর-কিশোরীদের মনের কথা ভেবেই যেন সতর্ক থেকে লেখা হয়েছে। প্রকাশভঙ্গি সাধুভাষায় হলেও তা ভীষণভাবে বোধগম্য। “মাকে বলিও,—বাবাকে বলিও,—জ্যেঠা মহাশয়,—মাতা দ্রৌপোদী আর অপরাপর সকলকে বলিও—অভিমন্যু বীরের মতো মরিয়াছে। আর বলিও অভিমন্যু শত্রুর নিকট একটিবার দয়া ভিক্ষা করে নাই—যুদ্ধে বিন্দুমাত্র ভয় পায় নাই; অভিমন্যু বাপের মান রাখিয়াছে। সূত! তুমি আরো বলিও, আমার জন্য যেন কেউ কাঁদেন না”—যুদ্ধ শেষে বালক যোদ্ধা অভিমন্যুর তাঁর সারথির প্রতি কথাকে তিনি এইপ্রকারের ভাষায় লিখেছেন। যার ফলে “ছেলেদের মহাভারত” পরপর ঘটনার পারম্পর্যে এক সুখপাঠ্য রচনা হয়ে উঠেছে।

১৩৩৬ সনে হেমচন্দ্র ভট্টাচার্য্য কতৃক ৭নং বেচু চ্যাটার্জি স্ট্রিট (কলকাতা) থেকে তাঁর লেখা ‘মসূয়ার ইতিহাস’ প্রকাশিত হয়। সেই সময়ে এর মূল্য ছিল ২ টাকা। ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জ মহকুমার অধীনে মসূয়া গ্রামের কাশ্যপবংশীয় ব্রাহ্মণ ও মৌদগল্য গোত্রীয় কায়স্থগণের বংশ পত্রিকা, বংশ-বিবরণ, প্রধান ব্যক্তিগণের জীবনী ও অন্যান্য কথা নিয়ে এই বই। এটি মূলগ্রন্থে ‘প্রথম ভাগ, ব্রাহ্মণ কাণ্ড’ নামে অভিহিত। এই গ্রন্থের শেষে শ্রী পূর্ণচন্দ্র ভট্টাচার্য্য খেদোক্তি করেছেন—“এই ইতিহাস সংগ্রহ করিতে গিয়া আমি পদে পদে বিশেষ বাধা পাইয়াছি। গ্রামের প্রায় কাহারও নিকট সহানুভূতি পাই নাই। এমনকি বইখানা লেখা হইলে পরেও সকলকে পুনঃ পুনঃ আহ্বান করিয়াছি। বড় দুঃখ এই যে, এমন একটা গুরুতর বিষয় বুঝিবার বা জানিবার কাহারও একবিন্দু কৌতূহল নাই।”

তিনি এও বলেছেন—“বিভিন্ন অসুবিধের কারণে এর সব অংশ প্রকাশ পায়নি। এটা প্রথম ভাগ। সম্ভব হলে পরে বাকিটা প্রকাশিত হবে।” সেই ভাবনা থেকেই হয়তো এই বই ‘প্রথম ভাগ, ব্রাহ্মণ কাণ্ডের’ নামে নামাঙ্কিত ছিল। মূলত যাঁর মুখনিঃসৃত উপদেশ বাণী শুনে শ্রী পূর্ণচন্দ্র ভট্টাচার্য্য এই বই লিখতে তৎপর হয়েছিলেন তাঁর সেই বংশের অন্যতম শ্রেষ্ঠপুরুষ শ্রী ঈশান চন্দ্র ভট্টাচার্য্যকে এই বই তিনি উৎসর্গ করেছেন। বইটি বাঙালির জীবনচরিত বোঝার এক অপূর্ব ঐতিহাসিক কাজ। সমাজ, সংস্কৃতি, শিক্ষা, রাজনীতি, খাওয়া-দাওয়া, বেশভূষা সমস্ত কিছুর সুন্দর বিবরণ এই বইতে পাওয়া যায়।

ব্রহ্মপুত্র যেখানে “আড়ালিয়া খাত” নামে পরিচিত ছিল সেইসময়, সেখানে নদীর ভাঙনে প্রতি মাসে বাসস্থান সরিয়ে নিতে হতো সেই থেকে গ্রামের নাম হলো ‘মাস্যা’—এটাই নাকি মসূয়া নামের উৎপত্তির প্রাথমিক কারণ। কেউ বা বলেন মা অসূয়া থেকেই নাকি মসূয়ার উৎপত্তি। একদিকে ঈশা খাঁ অন্যদিকে সম্রাট আকবর আর এদিকে বারেন্দ্র শ্রেণীর ব্রাহ্মণ সম্প্রদায় এইসমস্ত প্রভাব ছাড়িয়ে কিম্বা নিয়ে বাঙ্গালি জাতি তার সাধারণ জীবন কিভাবে যাপন করত তারই ঐতিহাসিক নিদর্শন এই বই। মসূয়া ছাড়াও তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার ভিটাদিয়া, নওপাড়া, উখড়াশাল, বাণিয়াগ্রাম, আচমিতা এইসব অঞ্চলের কথা এবং বিভিন্ন গোত্রের ব্রাহ্মণদের জীবনযাপনের সম্যক পরিচয় এই বই থেকে পাওয়া যায়। এখানে শ্রী পূর্ণচন্দ্র ভট্টাচার্য্য নিজেদের বংশের বিশিষ্ট পণ্ডিতগণেরও কথা বলেছেন। সেইসময় দাবা, পাশা ছাড়াও ‘বলাই নিয়া পালাই’, ‘কান্দুরে কান্দু’ (গাছে চড়ে), মেয়েদের সব অভিনব খেলা ‘বাঘবন্দী’, ‘চাপিলা চুপিলা’, ‘লল্ট গোঁসাই’ প্রভৃতি খেলাধূলার প্রভাব ছিল।

পোশাকে গরদ, তসর ছাড়াও গিলাপ, বনাত, দোলাই—এইসব বস্ত্রের উল্লেখ আছে। প্রথম কিভাবে চাল ধোয়া জলের ব্যবহারে লেখার কালি প্রস্তুত হতো সেকথাও এখানে লিপিবদ্ধ আছে। স্ত্রীশিক্ষার ব্যাপারেও এই বইতে  নিজের উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন। সবমিলিয়ে বাঙ্গালির সংস্কৃতির ইতিহাস জানার অনবদ্য এক বই এই ‘মসূয়ার ইতিহাস’। ১৩২৪ সনে সম্ভবত এই বইটি প্রকাশিত হয়। এর সপ্তম সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৩৫৭ সনে। এই বইটির প্রকাশকও ‘বৃন্দাবন ধর অ্যান্ড সন্স লিমিটেড’। এটি মুদ্রিত হয়েছিল ‘শ্রীনারসিংহ প্রেস (৫, বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট,কলকাতা ‘ থেকে। বইটির সেইসময় মূল্য ছিল ‘দশ আনা’। শিশুসাহিত্যের জনপ্রিয় এই বইটি সেইসময়ে ডিরেক্টর বাহাদুর কর্তৃক অবিভক্ত বাংলার সমস্ত স্কুলের পুরস্কার ও লাইব্রেরির পাঠ্যপুস্তক রূপে অনুমোদিত ছিল। বইটির ভূমিকায় লেখক লিখেছেন, এই কাহিনী পড়ে যাতে শিশুরা ভক্তিপরায়ণ হয় এটাই তাঁর একান্ত কামনা। গল্পটি পড়লে বোঝা যায় একটি সদর্থক, ইতিবাচক শিশু চরিত্রের মাধ্যমে তিনি সততাকে সাফল্য ও সুখের উপকরণ হিসেবে দেখিয়েছেন। এধরনের বই নিঃসন্দেহে শিশুমনে সুপ্রভাব আনতে সক্ষম হয়েছিল। ধ্রুব ও ধ্রুবতারার এই যে গাঠনিক মেলবন্ধন তিনি দেখিয়েছেন তাতে কল্পনার প্রভাব থাকলেও তা খুব সহজেই  মনের কাছাকাছি এসে যায়। ঐতিহাসিক গল্প রচনার দিক থেকে এই বইটি অন্যতম। ছয় আনা মূল্যের এই বইটি প্রকাশিত হয় ১৩২২ সনে। এর প্রকাশক ছিলেন ‘পপুলার লাইব্রেরী, ঢাকা’ এবং এটি  ঢাকার আশুতোষ প্রেস হতে মুদ্রিত হয়েছিল। গোলকপুর, ময়মনসিংহের জমিদার উপেন্দ্রচন্দ্র চৌধুরী বাহাদুরকে তিনি এই বই উৎসর্গ করেছিলেন। মূলত বিক্রমাদিত্যকে কেন্দ্র করে এই কাহিনী আবর্তিত হলেও এখানে বারবার রাজ্যের কথা এবং অবশ্যই মহাকবি কালিদাসের কথা এসেছে। ভূমিকায় অবশ্য তিনি লিখেছেন যেহেতু মহারাজ বিক্রমাদিত্যের কোনো প্রামাণিক ইতিহাস নেই  তাই কিংবদন্তীর ওপর নির্ভর করেই এই বই তাকে লিখতে হয়েছে। সংস্কৃত শ্লোকের প্রাসঙ্গিক প্রয়োগে এবং কাহিনীর সহজবোধ্য ভাষায় এই বইটিও ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বই। শিশুদের কাছে কিভাবে দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতি গল্পের ছলে সামঞ্জস্য রেখে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরা যায় এই বই তার উপযুক্ত নিদর্শন।

তাঁর রচিত ‘প্রতাপাদিত্য’ নামক বইটিও বাঙালির যুদ্ধ ও বীরত্বের ইতিহাসের এক যোগ্য নমুনা বলা যায়। বাঙ্গালির শক্তি মোগলের আধিপত্যেও যে একেবারে হীন হয়ে যায়নি, তারা যে ক্রমাগত সাহস দেখিয়ে বাংলাকে রক্ষা করার প্রয়াস নিয়েছে তা স্পষ্টভাবে এই রচনাতে প্রতিভাত। বিভিন্নরকম বাধা-বিপত্তি থাকলেও সবসময় সাহিত্যের কাজ করার চেষ্টা করেছেন একাগ্রমনে, তাই হয়তো অন্যদিকের স্বচ্ছলতার প্রতি তোয়াক্কাও করেননি। তার সাহিত্যকর্মের কথা সেই সময়ে কারোরই অজানা ছিল না। মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, শ্রীনলিনীরঞ্জন সরকার (অর্থ সচিব, পশ্চিমবঙ্গ), সুরেশচন্দ্র সমাজপতি (সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক), রায় বাহাদুর জলধর সেন, অমৃতলাল বসু, ডাঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার (ভাইস চ্যান্সেলার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), ডাঃ সুরেন্দ্রনাথ সেন (ভাইস চ্যান্সেলর, দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়), ডাঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, মহামহোপাধ্যায় আদিত্যরাম ভট্টাচার্য্য (প্রো-ভাইস চ্যান্সেলার, হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়, বেনারস), রায় বাহাদুর সত্যেন্দ্রনাথ ভদ্র (জগন্নাথ কলেজের অধ্যক্ষ ও ‘ঢাকা রিভিউ ও সম্মেলন’-এর সম্পাদক), রায় বাহাদুর সুরেশচন্দ্র সিংহ (ম্যাজিস্ট্রেট, হাওড়া), পদ্মিণীভূষণ রুদ্র (অধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম কলেজ), শশাঙ্কমোহন সেন, সঞ্জীবচন্দ্র চৌধুরী (অধ্যাপক, নেপাল রাজ কলেজ), মৌলভী মহম্মদ ইছরাইল (বি-এল ওয়াকফ কমিশনার), সুরেশচন্দ্র ঘটক, ডাঃ নলিনিকান্ত ভট্টশালী (কিউরেটর, ঢাকা মিউজিয়াম) এঁদের সকলের বন্ধুতা, সম্মতি ও প্রশংসা তার সাহিত্যজীবনের সহায়ক ছিল।

তাঁর সাহিত্যকর্মের বিষয়ে অবগত হয়ে স্বয়ং রবিঠাকুর ১৩৩২ সালের ৩০শে ফাল্গুন তাঁর সম্পর্কে কিছু কথা প্রকাশ করেন, তাঁর কিছুটা অংশ এইরকম—“শ্রীযুক্ত পূর্ণচন্দ্র ভট্টাচার্য মহাশয় যে কাজে জীবন নিয়োগ করিয়াছেন তাহার কিছু কিছু পরিচয় পাইয়া আমি বিশেষ আনন্দলাভ করিয়াছি।” শোনা যায় মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ছিলেন নিতান্ত সরল মানুষ, আশুতোষ মুখোপাধ্যায় বিশেষ স্নেহ করতেন তাঁকে।  এই মেধাবী ও সরল মনের মানুষটির সঙ্গেও পূর্ণচন্দ্র ভট্টাচার্য্যের একপ্রকার বন্ধুতা ছিল। তিনি শ্রী পূর্ণচন্দ্র ভট্টাচার্য্যকে লিখেছিলেন—“নমস্কার দাদা, আপনার পাখী আর বাঙ্গালির গল্প প্রত্যেক শিক্ষার্থীর আবশ্যক। শিক্ষকেরাও ইহার প্রয়োজনীয়তা গ্রহণ করিবেন।” শ্রদ্ধেয়  উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী তাঁকে লিখছেন—“আপনার ‘গায়কপাখী’ সবগুলিই চেনাজানা অথচ কাহারো জীবনকথা আমাদের জানা নেই। আপনি জানাইলেন, বঙ্গ সাহিত্যের ইহা অভিনব সম্পদ হিসাবে গণ্য হইবে।” দুঃখের কথা এইসব বই এখন পাওয়াই যায় না, বাঙালি এইসকল বই এর কথা বর্তমানে জানেই না।

   

বরাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলন: পূর্ণ স্বীকৃতি কতদূর?



প্রদীপ কুমার দত্ত
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আমরা বাংলাদেশে ভাষা আন্দোলন বলতেই বুঝি বৃটিশ শাসন পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানে ১৯৪৮-এ শুরু হওয়া এবং বায়ান্নর অমর ভাষা শহীদদের আত্মদানের মাধ্যমে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে। একুশে ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর ভাষা আন্দোলনের জন্য একটি দিক নির্দেশক দিন। সেই আন্দোলনের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয় পূর্ব বাংলার বাঙ্গালীরা। পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে দানা বাঁধে স্বাধিকার অর্জনের আন্দোলন। বহু আন্দোলন, সংগ্রাম ও সর্বোপরি মহান মুক্তিযুদ্ধের অবর্ণনীয় কষ্ট আর সমুদ্রসম আত্মত্যাগ এবং অসীম বীরত্বের ফলশ্রুতিতে আমরা পাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

এর বহু পরে, বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে, বাংলাদেশী কানাডা প্রবাসী রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম এর নেতৃত্বে পৃথবীর বিভিন্ন ভাষাভাষীদের নিয়ে মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ লাভার্স অফ দি ওয়ার্ল্ড গঠিত হয় কানাডার ভ্যাংকুভারে। এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ ও নিরলস প্রচেষ্টা এবং বাংলাদেশ সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় দিনটি বিশ্বসভায় আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত। এই দিনের জাতিসংঘ ঘোষিত অঙ্গিকার বিশ্বের প্রতিটি ভাষাকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করা এবং বিদ্যমান প্রায় ৭০০০ ভাষার একটিকে ও আর হারিয়ে যেতে না দেয়া। ইতিমধ্যে আধিপত্যবাদের কারণে ও সচেতন মহলের সচেতনতার অভাবে বহু ভাষা, সাথে সাথে তাদের সংস্কৃতি, পুরাতত্ত্ব ও ইতিহাস পৃথিবীর বুক থেকে মুছে গেছে।

কাজেই আমাদের বুঝতে হবে, ভাষা আন্দোলনের স্বর্ণখচিত ইতিহাস ও সাফল্যের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও কেবলমাত্র বাংলাদেশের ((তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের) বাঙ্গালীরাই ভাষার জন্য সংগ্রাম করা ও প্রাণ দেয়া একমাত্র জাতিগোষ্ঠী নই। অর্ধ সহস্রাব্দের আগে স্পেনীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দক্ষিণ আমেরিকার মায়া,আজটেক,ইনকা নামের তৎকালীন উন্নত সভ্যতার জাতিসমূহকে জেনোসাইডের মাধ্যমে ধ্বংস করে দিয়েছে।প্রতি মায়া লোকালয়ে একটি করে পাঠাগার ছিল। এইরকম দশ হাজার লোকালয়ের পাঠাগারের সব বই তারা ধ্বংস করে দেয়। আজকের দিনে মাত্র আদি মায়া ভাষার তিনখানা বই (মেক্সিকো সিটি,মাদ্রিদ ও ড্রেসডেনে) সংরক্ষিত আছে। যুদ্ধ করেও মায়ানরা পাঠাগারগুলো বাঁচাতে পারেন নি। সাথ সাথে ক্রমে ধ্বংস হয়ে যায় তাঁদের সংস্কৃতি ও জাতিসত্তা।

বাংলাভাষী জনগণের ভাষার মর্যাদা রক্ষায় উল্লেখ্যোগ্য অবদান রয়েছে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির সাঁওতাল পরগণার অন্তর্গত মানভূমের বাঙ্গালীদের। বহু বছর সংগ্রাম,রক্ত ও জীবনের মূল্যে তাঁরা তাঁদের দাবি অনেকটা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এরপর বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় আন্দোলনের সূচনা আসামের কাছাড়ে।বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দেয়া প্রথম মহিলা শহীদ কমলা ভট্টাচার্য সহ এগার তরুন প্রাণ ঝড়ে পড়েছে এই আন্দোলনে।

১৯৬১-তে আসামের বরাক উপত্যকার বাঙালি জনগণ তাদের মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আন্দোলনে শামিল হয়। যদিও বরাকের সিংহভাগ জনগণ বাংলা ভাষায় কথা বলেন,তবুও ১৯৬১-তে অহমিয়াকে আসামের একমাত্র রাজ্যভাষা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। ফুসে ওঠেন বরাকের বাঙ্গালীরা।বাংলাভাষা বরাক উপত্যকার অন্যতম সরকারি ভাষার মর্যাদা পায়।

মানভূম ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস দীর্ঘ। সাঁওতাল পরগণার মানভূম জেলা বাঙালি অধ্যুষিত হলেও তা দীর্ঘকাল বিহারের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ভারতের স্বাধীনতার পর সেখানে হিন্দি প্রচলনের কড়াকড়িতে বাংলা ভাষাভাষীরা চাপের মুখে পড়েন। মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাঁরা। ১৯৪৮ থেকে দীর্ঘ আট বছর চলা এই আন্দোলনের সাফল্যে ১৯৫৬ এর ১ নভেম্বর মানভূমের বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয় পুরুলিয়া জেলা। বিহার থেকে নিয়ে পুরুলিয়াকে যুক্ত করা হয় পশ্চিমবঙ্গের সাথে। তাঁদের মাতৃভাষা বাংলা ব্যবহারের দ্বার উন্মুক্ত হয় তাঁদের সামনে।

এবারে আবার ফিরি ১৯ মে'র ইতিহাসে। আসামের বরাক উপত্যকা আদিকাল থেকেই বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল। একসময় এই এলাকার অধিকাংশ ডিমাসা জনগোষ্ঠীর কাছাড় রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ডিমাসা রাজন্যবর্গ ও বাংলাভাষার পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। কালক্রমে ব্রিটিশরা ভারত বিভাগ করে চলে গেলে আসাম প্রদেশের একাংশ সিলেট পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হয়। সিলেটের একাংশ ও ডিমাসা পার্বত্য ও সমতল অঞ্চল নিয়ে কাছাড় জেলা গঠিত হয়। এই জেলা বর্তমানে বিভক্ত হয়ে কাছাড়,হাইলাকান্দি,করিমগঞ্জ ও উত্তর কাছাড় পার্বত্য জেলা (ডিমা হাসাও)এই চার নতুন জেলায় রূপ নিয়েছে।

১৯৪৭ এ দেশবিভাগের পর থেকেই বরাক উপত্যকার কাছাড় জেলার অধিবাসীরা বৈষম্যের শিকার হতে থাকেন। আসাম অহমিয়াদের জন্য এবং বাঙ্গালীরা সেখানে বহিরাগত এমন বক্তব্য ও ওঠে। এখনও সেই প্রবণতা বিদ্যমান। জাতীয়তাবাদের জোয়ারে এক শ্রেণির রাজনীতিবিদরাও গা ভাসান। বঙ্গাল খেদা আন্দোলনও গড়ে ওঠে একসময়ে। সরকারিভাবে সেসব আন্দোলন ও সহিংসতা দমন হলেও পরবর্তী কালে সময়ে সময়ে এই জাতীয় সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে থাকে।

আসাম রাজ্য বিধান সভায় ভারতের স্বাধীনতার পর পর সদস্যরা বাংলা, হিন্দি বা ইংরেজিতে বক্তব্য রাখতে পারতেন।প্রথম আঘাত এলো ভাষার উপর। অহমিয়াকে একমাত্র রাজ্যভাষা ঘোষণা, শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে চালুর চেষ্টা এবং বিধানসভায় বাংলায় বক্তব্য রাখার অধিকার ক্ষুণ্ণ করে আইন চালুর বিরুদ্ধে আসামের বাঙ্গালী জনগণ দল-মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। আসাম রাজ্য সরকার কোনও গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথে গেলেন না। তাঁরা অহমিয়া জাতীয়তাবাদ এর সংকীর্ণ মানসিকতার নেতাদের প্রাধান্য দেয়ার নীতি গ্রহণ করেন। বাঙ্গালীরাও সংগঠিত হতে থাকেন।

অনুমান করা যায় আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বাহান্নর ঢাকার ভাষা আন্দোলন ও মানভূমের ভাষা আন্দোলনের সাফল্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।১৯৬০ সালের শেষে আসাম বিধান সভায় ভাষা বিল পাশ হয়। কফিনে শেষ পেরেক ঠোকা হয়ে গেলো। বাঙ্গালীরা ফুঁসে উঠলেন। লাগাতার আন্দোলন চলতে থাকলো।সত্যাগ্রহ,অসহযোগ, হরতাল, রেল রোখো,সংকল্প দিবস, ইত্যাকার অহিংস আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠল বরাক উপত্যকা। এই আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৬১ সালের ১৯মে তারিখে বরাকের কেন্দ্রবিন্দু শিলচরের রেলস্টেশনে ভোর থেকে আন্দোলনকারী সত্যাগ্রহীরা জড়ো হয়। হাজার হাজার ছাত্র যুবা জনতা রেলস্টেশন প্রাঙ্গন ও রেললাইনের উপর অবস্থান নেয়। তাঁদের সরাতে না পেরে সরকার নির্মম দমননীতির আশ্রয় নেয়। পুলিশ বাহিনী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ শুরু করে। নিহত হন পৃথিবীর প্রথম মহিলা ভাষা শহীদ কমলা ভট্টাচার্য সহ মোট ১১ জন ছাত্র যুবা। তাঁরাই একাদশ ভাষা শহীদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

তাঁদের আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষা দ্বিতীয় রাজ্যভাষার মর্যাদা পায়। শিলচর রেলস্টেশনের সামনে স্থাপিত হয় শহীদদের প্রতিকৃতি সম্বলিত শহীদ মিনার। যার পথ ধরে পরবর্তী কালে ছড়িয়ে পড়ে একই আকৃতির শহীদ মিনার সমগ্র বরাক উপত্যকায়। শিলচর রেলস্টেশনের নাম পাল্টে জনতা ভাষা শহীদ রেল স্টশন নাম রেখেছেন। যদিও পূর্ণ সরকারি স্বীকৃতি এখনও তার মেলেনি।

বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় একাদশ শহীদ সহ আন্দোলনকারীদের আত্মত্যাগ ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে। কিন্তু সব এলাকার বাঙ্গালিরা কি এই ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখেন? উত্তরটি ‘না’ সূচক। আমাদের কর্তব্য তাঁদের আত্মত্যাগের কাহিনী সকলকে জানানোর উদ্যোগ নেয়া যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম তাঁদের সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হতে শেখে। বরাক উপত্যকার একাদশ ভাষা শহীদ অমর রহে। বাংলা সহ সকল মাতৃভাষার অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত থাকুক।

এখনও সেই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন এমন অনেকেই বেঁচে আছেন। বেঁচে আছেন নেতৃত্ব দেয়াদের মধ্যে অনেকে। সাথে সাথে প্রত্যক্ষদর্শীদের ও সন্ধান পাওয়া এখনও কষ্টকর নয়। তবে সামনের সিকি শতাব্দীর মধ্যে প্রাকৃতিক নিয়মেই তাঁরা আর আমাদের মাঝে থাকবেন না। এখনই প্রকৃষ্ট সময় তাঁদের সাক্ষাৎকার রেকর্ড করে রাখার। পর্যাপ্ত গবেষণা হওয়া প্রয়োজন সেই আন্দোলন,তার কুশীলব এবং শহীদ পরিবার সমূহের বিষয়ে। বীরের সন্মান উপযুক্ত ভাবে হওয়া প্রয়োজন। বাংলা ভাষার এবং বাংলা ভাষাভাষী জনগণের মর্যাদা বিশ্বব্যাপী সমুন্নত রাখার জন্য আমাদের এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আরও অনেক বীরের আমাদের প্রয়োজন। যে মাটিতে বীরের যথাযোগ্য সন্মান নেই, সে মাটিতে বীর জন্মায় না।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও পরিব্রাজক

;

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;