একজন ফিরোজের দিন



জুলিয়ান সিদ্দিকী
অলঙ্করণ শতাব্দী জাহিদ

অলঙ্করণ শতাব্দী জাহিদ

  • Font increase
  • Font Decrease

আগস্ট মাস। এ মাসের একুশ তারিখটি বিশেষ একটি দিন। ক্যালেন্ডারের পাতায় লাল কালি দিয়ে বেষ্টন করে রাখা আছে কালো রঙে ছাপানো  তারিখটি। এ দিনটি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, সেদিন যে কোনো মূল্যে ফিরোজকে থাকতে হবে ঢাকায়। সেদিন তার হাত ভাঙুক কি পা ভাঙুক এমন কি ডায়রিয়া হয়ে বিছানা থেকে উঠতে না পারলেও তাকে যেতে হবে সেখানে। বিকেল চারটা থেকে পাঁচটার মধ্যে তাকে উপস্থিত থাকতে হবে নগর ভবনের সামনে।

তাদের গ্রামের ফরিদ সাহেব চাকরি করেন সেখানে। অনেক বড় চাকরি। দামী আর ইস্ত্রি করা শার্ট-প্যান্ট, পায়ে দামী চকচকে জুতো পরে তিনি মাঝে মধ্যেই গ্রামে আসেন। লোকজন তাকে ঘিরে রাখে সারাক্ষণ। মানুষটি খুবই ভালো। গ্রামের বেশ কয়েকজনকে চাকরি দিয়েছেন। কিছুদিন আগে ফিরোজও মায়ের সঙ্গে গিয়েছিল ফরিদ সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে। অনেক অনুনয় করে মা  ফরিদ সাহেবকে বলেছিলেন ছেলের জন্যে একটি চাকরির ব্যবস্থা করতে। মানুষটি ভালো বলেই হয়তো একজন মায়ের আকুতিতে সাড়া দিতে দেরি করেননি। সঙ্গে সঙ্গেই বলেছিলেন যে, আগস্ট মাসের একুশ তারিখ যেন তিনি ছেলেকে পাঠিয়ে দেন। সেদিন বিকেল চারটার সময় নগর ভবনের গেটে থাকবেন। সঙ্গে করে নিয়ে যাবেন রতনের গ্যারেজে। পেটে-ভাতে সেখানে কাজ শিখবে আর রাতে সেখানেই ঘুমাবে। কাজ শেখা হয়ে গেলে ভালো বেতন পাবে ফিরোজ। তখন মাতা-পুত্রের খাওয়া-পরার অভাব থাকবে না।

স্কুল মাস্টার রজব ভাণ্ডারীকে জিজ্ঞেস করে ফিরোজ জেনে নিয়েছিল একুশে আগস্ট হতে আর কতদিন বাকি। সেদিনের পর থেকেই মাতা-পুত্র অপেক্ষা করছিল দিনটির জন্যে। দিনটিকে মনে রাখতে বাজার থেকে একটি এক পাতার সরকারি ক্যালেন্ডার কিনে এনেছে দশটাকা দিয়ে। তাতে লাল কালি দিয়ে একটি বৃত্ত এঁকে কালো অক্ষরের তারিখটিকে বন্দী করে দিয়েছেন মাস্টার।

হাটের দিন গাছ থেকে বেশ কটি নারকেল পেড়ে সে নিয়ে গিয়েছিল সিদ্ধেশ্বরী বাজারে। নারকেল বিক্রি করে বাজার থেকে ফিরে আসবার পথে পশ্চিম পাড়ার ছিরিপদ জিজ্ঞেস করেছিল, কিরে ফিরুজ্যা, একুইশ তারিখ হইতে আর কয়দিন?
- দুইদিন বাদেই।
হাস্যোজ্জ্বল মুখেই জানিয়েছিল ফিরোজ।
কিছুটা পথ একই সঙ্গে চলতে চলতে ছিরিপদ আরো বলেছিল, ঢাকা শহরডা অনেক সোন্দর রে! গণশার লগে যোগালির কাম করছিলাম কয়দিন।
- গণশা কইছে আমারে।
- ঢাকা শহরের খারাপ দিক হইল থাকনের জাগার খুব অভাব। এত বড়বড় দলান থাকলে হইব কী, ঘুমান-থাকনের বেশি জাগা নাই। পানি তো কিন্যা খাওনই লাগে, হাগদে মুত্তেও ট্যাকা লাগে!
ফিরোজ কী বলবে ভেবে পায় না। গ্রামে তো এ বাড়ি ও বাড়ি দু-চার পাঁচদিন থাকলেও কেউ কিছু বলবে না। এমন অনেক গেরস্থ আছে যাদের এক-আধটি ঘর বছরের বেশিরভাগ সময় খালিই পড়ে থাকে। একবার গণশার সঙ্গে সে নিজেও ঢাকা শহরের গুলশানে কাজ করতে গিয়েছিল। যে কয়েকটি দিন সেখানে ছিল, রাতের বেলা একটি ভাঙা দালানের বারান্দায় ঘুমাত। তাও কোনো কোনো রাতে চৌকিদার এসে লাঠির গুঁতো মেরে ঘুম ভাঙিয়ে দিত। তখনই সে জেনে গিয়েছিল যে, সত্যি সত্যিই ঢাকা শহর একটি কঠিন জায়গা।

ছিরিপদ নিজের বাড়ির দিকে যাবার আগে ফিরোজের একটা হাত ধরে বলল, তুই ভালোয় ভালোয় কাজ-কাম পাইলে আমার লাইগ্যাও খাইয়া পিন্দা চলনের মতন একটা কিছু ভাও করিস।
- আইচ্ছা আইচ্ছা, তুই চিন্তা করিস না!

আর দুদিন বাদেই একুশ তারিখ। ফিরোজের জীবনে খুব প্রত্যাশিত একটি দিন। ভাবতেই মনটা ফুরফুরে হয়ে ওঠে তার।

এমনিতেই ফিরোজের মা প্রতিদিন খুব ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে পড়ে উঠোন-বার ঝাঁট দেন। রাতভর ঝরে পড়া শুকনো পাতাগুলোকে একখানে জড়ো করে একটি পুরনো বস্তায় পুরে রান্নাঘরে রেখে দেন। আর সেই শুকনো পাতার আগুনেই তাদের দুজনের খাবার রান্নাবান্না হয়ে যায়।

ভোরবেলা মায়ের উঠোন ঝাঁট দেবার শব্দে প্রতিদিনই ঘুম ভাঙে ফিরোজের। কিন্তু আজ কেন যেন মায়ের ঘুম ভাঙার আগেই জেগে উঠেছে সে। আজকের দিনটার অপেক্ষাতেই ছিল সে। এ দিনটাতেই তাকে ঢাকা যাওয়ার কথা বলে দিয়েছেন ফরিদ সাহেব। দুপুর বারোটার দিকে কুটিলা স্টেশনে এসে থামবে ট্রেন। মিনিট দশেক জিরিয়ে নিয়ে ফের ছুটতে থাকবে ঢাকার উদ্দেশ্যে। অতটা কম সময়ে টিকেট কাটা, খালি বগি খুঁজে ট্রেনে ওঠা খুবই ঝামেলার বলে মনে হয় তার কাছে। তাই খানিকটা সময় হাতে নিয়ে বের হলে আগে আগে টিকেট পেতে সুবিধা হয়।

বিছানায় শুয়ে থেকেই সে মায়ের জেগে উঠবার শব্দ টের পায়। অনেক বছর ধরে সে পরিচিত এসব শব্দের সঙ্গে। মায়ের ঘুম ভাঙার পর বিছানায় উঠে বসা। মেঝেতে পা রেখে উঠে দাঁড়ানো। পরনের কাপড় গোছাবার শব্দ। তারপর ছোট ছোট পদক্ষেপে দরজার দিকে এগিয়ে যাওয়া। হুড়কো খোলা। কাঠের দরজার পাল্লা টানবার সময় লোহার ক্যাঁচ-ক্যাঁচ শব্দ। পুকুর ঘাটে মায়ের কুলকুচা, গলা খাকারির শব্দ। শ্লথ পায়ে ফিরে আসা। মেঝেতে নামাজের পাটি বিছানো। সব শব্দই আলাদা করে চেনা আছে তার।

অন্যান্য দিন সকাল সকাল কাজে যাবার তোড়জোড় শুরু করলেও আজ কোনো তাড়া নেই বলে কেমন একটা আলসেমিতে পেয়ে বসে তাকে। অন্য দিনগুলোর মতো হাত-পা তেমন ছটফট করে না। মনের ভেতরও নেই কোনো রকম অস্থিরতার দাপানি। হয়তো মায়েরও তেমন কোনো তাড়া নেই আজ। ছেলে শহরে যাবে। সময়টা জানা আছে বলেই হয়তো উঠোন-বার ঝাঁট দেবার শব্দগুলো তেমন একটা জোরালো শোনায় না। ফিরোজ কোনো তাড়া বোধ করে না বলেই হয়তো ফের ঘুমিয়ে পড়ে। এক সময় মায়ের ডাকে দ্বিতীয় ঘুমটা ভেঙে যায় তার। কিন্তু ততক্ষণে বেশ বেলা হয়ে গেছে। সূর্যটাও তেতে উঠেছে অনেকটা। ঘামে ভিজে চিটচিটে হয়ে আছে গলার কাছটা।

ছেলেটা বেলা করে শহরে যাবে বলেই হয়তো মায়ের রান্নার আয়োজনটা অন্যান্য দিনের চেয়ে খানিকটা ভিন্ন মনে হয়। অন্য সময় প্রতিদিন সকালে পান্তা খেয়ে সে কাজে যেত। আজ পান্তার বদলে নারকেল-চিড়ে আর গুড় দেখতে পেয়ে তার মনটা যেন আরো ভালো হয়ে যায়। বছর বছর গাছে নারকেল ধরলেও তা মাতা-পুত্রের ভাগ্যে খুব কমই জোটে। সংসারের অন্যান্য প্রয়োজনে প্রায় সবগুলোই বেচে দিতে হয়। ছোটবেলা থেকেই নারকেলের নাড়ু তার খুব পছন্দ। কখনো এমনি এমনি একটা দুটো নাড়ু কখনো বা মুড়ির সঙ্গে খেতে চমৎকার।

গুড়-নারকেল দিয়ে চিড়া মেখে খেতে খেতে সে লক্ষ্য করে যে, তার মা একটি গামছাতে কিছুটা শুকনো চিড়া আর কয়েকটি নাড়ু বেঁধে রাখলেন। তারপর তাকে দেখিয়ে বললেন, এইডা লগে লইয়া যাইস কইলাম!

ফিরোজ জানে, ট্রেনে বসে খিদে পেলেও যাতে অযথা পয়সা খরচ করে বাইরের খাবার কিনে খেতে না হয়, তার জন্যেই এমন ব্যবস্থা।

মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে কুটিলা স্টেশনে এসে অবাক হয়ে যায় সে। অন্যান্য সময় স্টেশনে এত মানুষ কখনো দেখেনি সে। ঈদ আর বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতের এক দুদিন আগে ছাড়া এমন ভিড় কখনো হয় না। এত মানুষ কেন ঢাকা যাবে বুঝে উঠতে পারে না সে। টিকেট কাটতে গিয়ে দেখে কেউ নেই সেখানে। ট্রেন চলে আসতেই কেমন হুড়মুড় করে লোকজন উঠতে থাকে। বগিগুলোতে জায়গা না পেয়ে জানালায় পা দিয়ে ছাদের ওপর উঠে যেতে থাকে কেউ কেউ। ফিরোজও টিকেট ছাড়া ট্রেনের ছাদে উঠে পড়ে। আস্তে আস্তে ছাদও পরিপূর্ণ হয়ে যায়। পাশের কয়েকজনের আলাপ থেকে জানতে পারে তারা ঢাকা যাচ্ছে জনসভায় যোগ দিতে। আসলে বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়েকে দেখতে, যিনি এখন দেশের প্রধানমন্ত্রী।

এতক্ষণে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয় ফিরোজের কাছে। কখনো বঙ্গবন্ধুর মেয়ে, কখনো বা শেখ হাসিনা, কখনো বা প্রধানমন্ত্রী শব্দগুলো তার কানে এসেছে বহুবার। একজনই যে এই তিনটি নামে দেশের মানুষের কাছে পরিচিত তা সে জানলেও চর্ম চোখে কখনো দেখেনি। একজন নারী হয়ে কোনো দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, না জানি তিনি দেখতে কেমন। যদিও মাঝে মধ্যে বাজারে কোনো কোনো পত্রিকায় বা কোনো পোস্টারে ছবি দেখেছে, কিন্তু মন তার ভরেনি। নিজের চোখে সামনাসামনি দেখা আর ছবি দেখার মাঝে অনেক ফারাক বলে বিশ্বাস করে সে। তাই অনেকদিন থেকেই ইচ্ছেটি তার মনের ভেতর ডালপালা ছড়িয়ে শক্ত পোক্ত হয়ে শিকড় গেড়ে বসেছিল। কিন্তু তেমন কোনো সুযোগ সে পায়নি। ট্রেন ছাড়বার আগমুহূর্ত পর্যন্ত লোকজনের টুকরো টুকরো কথায় সে জেনে গিয়েছিল যে, বিকেলের দিকে জনসভায় আসবেন প্রধানমন্ত্রী। তখনই সে ঠিক করে রেখেছে যে, ফরিদ সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার আগে একবার জনসভায় যাবে। কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে চাক্ষুষ করে যাবে একবার।

গ্রামের আকবর সওদাগরের মুখে অনেকবার শুনেছে বঙ্গবন্ধুর কথা। শেখ হাসিনার কথা। ছোটবেলা থেকেই তাদের নাম শুনে শুনে ভালোবাসতে শিখেছে। শ্রদ্ধা-ভক্তি করতে শিখেছে। আকবর সওদাগরের কাছে যারা ভক্তি-শ্রদ্ধার পাত্র-পাত্রী, তারা কোনো অংশেই ছোটখাটো মানুষ বা অল্প-স্বল্প ক্ষমতার মানুষ নন। এমন ধরনের মানুষদের সামনে থেকে দেখতে পাওয়াটাও অনেক সৌভাগ্যের ব্যাপার বলে মনে হয় তার কাছে।

চলন্ত ট্রেনের ছাদে হুহু বাতাস ফিরোজের বাবরি চুল নিয়ে খেলা করে। দুষ্টুমি করে চেপে ধরবার মতো চোখের দু পাতা ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়। ট্রেনের দু পাশ দিয়ে পেছন পানে ধাবমান জনপদ ক্রমশ তাদের এগিয়ে নিয়ে যায় কমলাপুর স্টেশনের দিকে।

কমলাপুর স্টেশনটা অচেনা নয় ফিরোজের কাছে। তারপরও ট্রেনের ছাদ থেকে নামার পর নিজের মনোমতো হাঁটবার সুযোগ পায় না। স্রোতের মতো লোকজন নিজে চলতে চলতে সামনের আর দুপাশের লোকজনকেও যেন ঠেলতে থাকে সমান বেগে। যেন বাধভাঙা স্রোত সামনের ঘরবাড়ি, জমি ভাসিয়ে নিয়ে চলেছে অবিরাম। সে সঙ্গে হালকা পাতলা হাতাহাতি ঠেলাঠেলি বাকবিতণ্ডা কোনোটাই থেমে নেই। ফলে একটা গমগমে ভাব ফুটে উঠেছে পুরো স্টেশন জুড়ে।

জনস্রোত ছুটে চলেছে দক্ষিণের কাচ লাগানো সদর দরজা লক্ষ্য করে। কিন্তু ডানে বামে বা আগে পেছনে মানুষ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পায় না ফিরোজ। চলতে চলতে এক সময় নিজেকে আবিষ্কার করে স্টেশনের বাইরে। হায় হায়, জনসভায় যাওয়ার জন্যে আসা দলটিকে আর দেখতে পাচ্ছিল না। মনেমনে খানিকটা হতাশ হলেও সে কান রাখে কে কী বলছে সেদিকে। কিন্তু কাউকেই যেন জিজ্ঞেস করবার প্রয়োজন দেখে না। একটি ছোটখাটো মিছিল আসে উত্তর দিক থেকে। নানা রকম শ্লোগানে শ্লোগানে বাতাস কাঁপাচ্ছিল। কিছু না ভেবেই মিছিলে ঢুকে পড়ে সে। যে ভাবেই হোক মিছিল তো জনসভাতেই যাবে। আর সেখানে একবার যেতে পারলে প্রধানমন্ত্রীকেও এক নজর দেখা হয়ে যাবে।

মিছিলের লোকজনের মুখে নানা রকম স্লোগান শুনতে শুনতে আর বিচিত্র সব মানুষের মুখ দেখতে দেখতে কখন যে সে জনসভায় পৌঁছে  যায় বুঝতে পারে না। কিন্তু এরই মাঝে অনেক মানুষ চলে এসেছে। সামনের দিকে বাঁশের ঘেরের ভেতর দুভাগ হয়ে বসে আছে অনেক নারী-পুরুষ। জনসভার সীমানা থেকে অনেকটা দূরে রঙ-বেরঙের শরবত বিক্রি করছে একটি লোক। ফিরোজের ইচ্ছে হয় বের হয়ে গিয়ে এক গ্লাস শরবত খেয়ে আসে। কিন্তু বের হতে গিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে নানা রঙের পোস্টার-ব্যানার আর ফেস্টুন নিয়ে আসা নানা দলের ঠেলা ধাক্কায় বের হতে পারে না। নিরুপায় হয়ে সে সামনের সারিতেই মাটিতে বসে পড়ে। পাশের একজন বোতল থেকে পানি খেয়ে সেটা ফেলে রেখেই উঠে পড়ে সামনের দিকে আগায়। সে অবসরে ফিরোজ বোতলটা টেনে নিয়ে পানি খায় আর তখনই চারদিক থেকে মুহুর্মুহু ধ্বনি উঠতে থাকে, শেখ হাসিনা, শেখ হাসিনা!
পেছন থেকে কেউ একজন তার পিঠে খোঁচা দিয়ে বলে, এই মিয়া, চুপ কইরা আছো ক্যান?
ফিরোজ কিছু একটা বলবে বলবে ভাবতেই থেমে যায় শ্লোগান। পেছনের দিকে তাকিয়ে সে দেখতে পায় এরই মাঝে পুরো এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে গেছে। আরো পেছনের দিকে অনেক মানুষ হয়তো বসতে জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আশপাশের উঁচুউঁচু দালানগুলোর ছাদেও মানুষ ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে। কোনো কোনো দালানের জানালায়ও দেখা যাচ্ছিল মানুষের মুখ।

প্রধানমন্ত্রী আসতে হয়তো এখনো অনেক দেরি। তাই তিনি আসবার আগে আগে সে চিড়া-আর নারকেলের নাড়ুগুলো খেয়ে নিতে পারে। ভাবতে ভাবতে সামনে গামছার পুটলিটা খুলে মেলে ধরে ফিরোজ। একটি নাড়ু মুখে দিয়ে চিবোতে চিবোতে একমুঠ চিড়া-মুড়িও মুখে দেয়। আর খেতে খেতেই টের পায় যে, জবর খিদে পেয়েছে। এতক্ষণ মানুষের শ্লোগান, চিৎকার-ঠেলাঠেলিতে কিছু বুঝতে পারেনি। সামনের উঁচু জায়গাটা থেকে কেউ একজন প্রধানমন্ত্রী, শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধুসহ আরো অনেকের কথাই হয়তো বলছিল; যার অনেক কিছুই বুঝতে পারে না সে। খানিক বাদেই সেই উঁচু জায়গাটায় অনেক মানুষ উঠে আসে আর তখনই আবার চারদিক থেকে শেখ হাসিনা, জয়বাংলা চিৎকারে বিমূঢ় হয়ে যায় সে।

চারপাশ শান্ত হতেই সে পানি খেয়ে অবশিষ্ট চিড়া-মুড়ি আর নাড়ু পুটলিটা ভালো করে বাঁধে। কাঁধের ব্যাগে সেটা গুছিয়ে রাখতে রাখতে শুনতে পায় মাইকে খুব রাগী রাগী কণ্ঠে কেউ কিছু বলছে। লোকটির পেছনে সার বেঁধে চেয়ারে বসে থাকা মানুষগুলোর মাঝে অনেক ফুল যার পেছনে একজন খুব সুশ্রী মায়ের মতো মায়াবী চেহারার নারী উঠে এসে বসলেন। পাশের লোকটিকে ফিরোজ জিজ্ঞেস করে, শেখ হাসিনা ক্যাডায় গো?
- ওই যে, ফুলগুলার পিছনে দামী চেয়ারটায় বইসা আছেন। মাথায় ঘোমটা, চোখে সোনার চশমা।
তাইলে প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু কই?
কথাগুলো মাথায় ঘুরপাক খেলেও আর কিছু জিজ্ঞেস করতে সাহস হয় না তার। বরং চিৎকার করে লোকটা মাইকে কী কী বলছে তা শুনতেই মনোযোগী হয় আরো। কিন্তু দু একটি শব্দ ছাড়া বেশিরভাগই তার কানে শব্দজট ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না।

তার আবার চিড়া-মুড়ি খেতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু ব্যাগে হাত দিলেও চিড়া-মুড়ির পুটলি বের করা হয় না তার। একটি বিকট শব্দের সঙ্গে সঙ্গেই সব কিছু যেন অন্ধকার হয়ে যায়। পরপর আরো কয়েকটি বিকট শব্দ শুনতে পায় সে। তারপরই যেন হাজার বছরের নৈঃশব্দ্য গ্রাস করে তাকে। উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করতেই বুঝতে পারে হাত-পা অসাড় হয়ে আছে। চারপাশ অন্ধকার বলে বুঝতে পারছে না চোখ দুটো খোলা কি বন্ধ। এমন কি এও বুঝতে পারে না, সে বসে আছে কি শুয়ে আছে।

গলাটা বারবার শুকিয়ে আসছিল। পাশেই পানির বোতলটা ছিল কিন্তু হাত নাড়াতে না পারলে বোতল তুলবে কিভাবে? খুবই নিঃশক্তি লাগছিল তার। তাই শুয়ে পড়ে সেখানেই। পানি পিপাসা ছাপিয়ে যেন রাজ্যের ঘুম এসে জাপটে ধরে তাকে।

   

শ্রীপুরের কাওরাইদে নজরুল উৎসব শনিবার



ডেস্ক রিপোর্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ কালি নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ‘ভাগ হয়নিকো নজরুল’ শীর্ষক নজরুল উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে শনিবার। ঢাকাস্থ ভারতীয় হাই কমিশনের ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারের আয়োজনে এবং নেতাজী সুভাষ-কাজী নজরুল স্যোশাল অ্যান্ড কালচারাল ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এর সহযোগিতায় এই উৎসবে সেমিনার, আবৃত্তি ও সঙ্গীতানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জাতীয় কবির বর্ণাঢ্য জীবন ও সাহিত্যকে তুলে ধরা হবে।

নেতাজী সুভাষ-কাজী নজরুল স্যোশাল অ্যান্ড কালচারাল ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এর অন্যতম ট্রাস্টি আনোয়ার হোসেন পাহাড়ী বীরপ্রতীক জানান, আয়োজনের শুরুতে শনিবার দুপুর ২টায় সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সুনীল কান্তি দে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষক ড. সাইম রানা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস ও ছায়ানট (কলকাতা)’র সভাপতি সোমঋতা মল্লিক।

তিনি আরও জানান, বিকেলে আয়োজনে নজরুলের জাগরণী কবিতা ও গান পরিবেশন করবেন দেশের বরেণ্য শিল্পীরা। আবৃত্তি করবেন-টিটো মুন্সী ও সীমা ইসলাম। নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করবেন শিল্পী ফেরদৌস আরা, সালাউদ্দিন আহমেদসহ অনেকে। সমাপনী পর্বে প্রধান অতিথি থাকবেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। ইমেরিটাস অধ্যাপক ও সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে সমাপনী অনুষ্ঠানে থাকবেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার।

‘দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে নজরুল চর্চা বেগবান করতে এই উৎসব আয়োজন করা হয়েছে। এবছর কবি নজরুলের ১২৫তম জন্মবর্ষ। এই বছরটি নজরুলচর্চার জন্য খুবই সবিশেষ। উৎসবে দুই দেশের বিশিষ্ট লেখক ও গবেষকদের লেখা নিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে সাময়িকী। সাম্য, মানবতা ও জাগরণের যে বাণী কবি সৃষ্টি করে গেছেন, সমকালীন ক্ষয়িষ্ণু সমাজের জন্য তা আলোকবর্তিকা। প্রত্যন্ত অঞ্চলে নজরুলের এই আলোকবর্তিকা ছড়িয়ে দিতেই আমাদের এই প্রচেষ্টা’-বলেন আনোয়ার হোসেন পাহাড়ী বীরপ্রতীক। 

;

শিশু নজরুল



এ এফ এম হায়াতুল্লাহ
কাজী নজরুল ইসলাম। ছবিটি বাংলা একাডেমি প্রকাশিত নজরুল রচনাবলী থেকে সংগৃহীত

কাজী নজরুল ইসলাম। ছবিটি বাংলা একাডেমি প্রকাশিত নজরুল রচনাবলী থেকে সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী দেশ ভারত। এটি বাংলাদেশের তুলনায় আয়তনের দিক দিয়ে বহুগুণ বড় একটি দেশ। বহুজাতির বহু মানুষের বাস সে দেশে। ঐ দেশ অনেকগুলো প্রদেশে বিভক্ত। এই প্রদেশগুলোকে বাংলা ভাষায় রাজ্য বলে অভিহিত করা হয়। এই ভারতবর্ষের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত তদানীন্তন বাংলা প্রদেশের পূর্বাঞ্চল আজ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। আর পশ্চিমাঞ্চল ‘পশ্চিম বঙ্গ’ নামে ভারতের অন্তর্গত রয়ে গেছে।

এই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বর্ধমান জেলার অধীন আসানসোল মহকুমার অন্তর্গত জামুরিয়া থানার অন্তর্ভুক্ত চুরুলিয়া গ্রামে ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মে এবং ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ই জ্যৈষ্ঠ তারিখে জন্মলাভের পর একটি শিশুর কাজী নজরুল ইসলাম নাম রাখেন যে পিতা তার নাম কাজী ফকির আহমদ। আর যে মায়ের কোলে তিনি জন্মান তার নাম জাহেদা খাতুন। এই শিশুটির জন্মের আগে এই পিতামাতার আর-ও ৪ জন সন্তান জন্মের সময়ই মারা গিয়েছিল। শুধু তাদের প্রথম সন্তান কাজী সাহেবজানের বয়স তখন ১০ বছর। অর্থাৎ কাজী নজরুলের সর্বজ্যেষ্ঠ বড় ভাই শিশু কাজী নজরুলের চাইতে ১০ বছরের বড় ছিলেন। নজরুলের পর তার আর-ও একজন ভাই ও বোনের জন্ম হয়েছিল। ভাইটির নাম ছিল কাজী আলী হোসেন এবং বোনটির নাম ছিল উম্মে কুলসুম।

শিশু নজরুলের পিতা কাজী ফকির আহমদ বই-পুস্তক পড়তে পারতেন। তিনি স্থানীয় মসজিদ ও মাজারের সেবা করতেন। রাজ্য শাসকগণ কর্তৃক বিচারকাজে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ অর্থাৎ বিচারকগণ উন্নত চরিত্রের অধিকারী হতেন। মুসলমান সমাজ থেকে বিচারকাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের কাজী বলা হত। মুসলমান সমাজে কাজীগণ অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে গণ্য হতেন। নজরুল ইসলাম এইরূপ সম্মানিত পরিবারে জন্মপ্রাপ্ত এক শিশু। তাই জন্মের পর ক্রমশ বেড়ে উঠার পর্যায়ে তিনি পারিবারিকসূত্রেই ভাল-মন্দের পার্থক্য করার এবং হিংসা-বিদ্বেষমুক্ত হয়ে সকলকে সমভাবে ভালবাসার গুণাবলি অর্জন করেন।

মানবজাতির ইতিহাসে যে-সমস্ত মহাপুরুষ বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন তাদের অধিকাংশই শৈশব থেকে নানারূপ দুঃখ-কষ্টে পতিত হয়ে সেগুলো জয় করে মহত্ত্ব অর্জন করেছেন। তাদের কেউই একদিনে বড় হয়ে যাননি কিংবা বেড়ে-ও উঠেন নি। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ হযরত মুহাম্মদ (সঃ) জন্মানোর আগেই পিতাকে হারিয়েছিলেন। মাত্র ছয় বছর বয়সে হারিয়েছিলেন জন্মদাত্রী মাকেও। নজরুল তার পিতাকে হারান নয় বছর বয়সে ১৯০৮ সালে। পিতা তাকে গ্রামের মক্তবে পড়াশোনা করতে পাঠিয়েছিলেন। তখনকার দিনে পড়াশোনা করার জন্যে সরকারি ব্যবস্থা ছিলনা। বাংলাদেশের তখন জন্ম হয়নি।

বিশেষ ভঙ্গিমায় হাবিলদার নজরুল

নজরুলের জন্মভূমি বাংলা প্রদেশ ভারতবর্ষের একটি রাজ্য যা ছিল বিদেশী ব্রিটিশ শাসনাধীন তথা পরাধীন। ব্রিটিশ শাসকরা এদেশের সাধারণ মানুষ তথা প্রজাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করেনি। কারণ শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ সচেতন হয়ে উঠে-তাদের আত্মসম্মানবোধ জাগ্রত হয়-তারা পরাধীন থাকতে চায় না-স্বাধীনতার প্রত্যাশী হয়। বিদেশী শাসক ব্রিটিশরা সাধারণ মানুষের জন্য শিক্ষা উন্মুক্ত না করায় জনসাধারণ সম্মিলিতভাবে কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করত। সেই প্রতিষ্ঠানে প্রধানত মাতৃভাষা ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করা হত। এইসব প্রতিষ্ঠান মক্তব নামে পরিচিত হত। এগুলো পরিচালনার ব্যয় অর্থাৎ শিক্ষকদের বেতন মক্তব প্রতিষ্ঠারাই দান, সাহায্য ও অনুদান সংগ্রহ করার মাধ্যমে নির্বাহ করতেন। গ্রামীণ একটি মক্তবে নজরুলের পাঠগ্রহণ শুরু। তিনি ছিলেন অসাধারণ মেধাবী। তাঁর স্মৃতিশক্তি ছিল প্রখর।

একবার কিছু শোনে ও দেখেই তিনি তা মনে রাখতে পারতেন। কিন্তু শিশুসুলভ সকল প্রকার চঞ্চলতা-ও তাঁর ছিল। পিতৃবিয়োগের পর সেই চঞ্চলতার যেন ছেদ পড়ল। তার মেধাগুণে তিনি হয়ে উঠলেন শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে সেই মক্তবেরই শিক্ষক। একজন শিশু শিক্ষক। এক শিশু পড়াতে লাগলেন অন্য শিশুকে। উদ্দেশ্য নিজের অর্জিত জ্ঞান ও বিদ্যা অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া। নিজেকে অন্যের মধ্যে বিলিয়ে দেয়া। কিছু দেয়ার মাধ্যমে আনন্দ লাভ-যে আনন্দ মহৎ।

তার ভেতরে ছিল এক ভবঘুরে মন। মক্তব ছেড়ে ভর্তি হলেন উচ্চ বিদ্যালয়ে-মাথরুন নবীন চন্দ্র ইনস্টিটিউশনে। স্থিত হলেন না সেখানে। গ্রামীণ নিসর্গ, প্রকৃতি, ঋতুচক্র যেমন তার মনকে প্রভাবিত করে, অজানাকে জানার এবং অচেনাকে চেনার নিরন্তর কৌতূহল-ও তাকে আন্দোলিত করে। ঘরছাড়া স্বভাবের এই শিশু অন্য সকল মানুষের জীবন ও সংগ্রামের রহস্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়। ঘর তাকে বাঁধতে পারে না। বিশাল আকাশকেই তার মনে হয় তার মাথার ওপরে খাঁচার মত উপুড় হয়ে তাকে আটকে রেখেছে। তাই তিনি মনে মনে ‘ভূলোক, গোলোক ও দ্যুলোক’ ছাড়াতে চাইতেন কেবলÑনিজেকে মুক্ত করতে চাইতেন। মনের আহ্বানে সাড়া দিতেন, গান শোনাতেন, শুনে শুনে গাইতেন।

তারই পরিক্রমায় গ্রামীণ লোক-নাট্য ‘লেটো’ গানের দলে যোগ দিলেন। সেখানেও তার দলপতি উস্তাদ শেখ চকোর গোদা ও বাসুদেব তাকে সেরাদের ‘সেরা’ বলে স্বীকৃতি দিলেন। তিনি শুধু লেটোর দলে গানই গাইলেন না। গানের পালা রচনা করলেন। ‘ মেঘনাদ বধ’, ‘হাতেম তাই’ ‘চাষার সঙ’, ‘আকবর বাদশা’ প্রভৃতি পালা রচনা করতে যেয়ে হিন্দু পুরাণ রামায়ণ, মহাভারত, গীতা, বেদ যেমন পড়লেন, তেমনি পড়লেন কোরান-হাদিস, ইতিহাস-কাব্য প্রভৃতি। মক্তব-বিদ্যালয় ছেড়ে হয়ে গেলেন প্রকৃতির ছাত্র।

কিন্তু আগুন যে ছাই চাপা থাকে না। প্রতিভার আগুনের শিখা দেখে ফেললেন পুলিশের এক দারোগা, যিনি নিজেও কাজী বংশের সন্তান, রফিজুল্লাহ। চাকরি করেন আসানসোলে। কিন্তু তার জন্মস্থান ময়মনসিংহ জেলা। নি:সন্তান রফিজুল্লাহ মায়ায় পড়ে গেলেন শিশু নজরুলের। নিয়ে এলেন জন্মস্থান ময়মনসিংহে। ভ্রাতুষ্পুত্রের সাথে ভর্তি করে দিলেন দরিরামপুর হাই স্কুলে। কেমন ছিলেন তিনি এখানে ? জন্মভিটা চুরুলিয়া থেকে কয়েকশত কিলোমিটার দূরে-মাতৃআঁচল ছিন্ন পিতৃহীন শিশু! সহপাঠীরা কেউ লিখে রাখেন নি।

১৯১১ সনে ময়মনসিংহে আনীত হয়ে থাকলে পেরিয়ে গেছে একশত তের বছর। সহপাঠীদের কেউ বেঁচেও নেই। কিন্তু বেঁচে আছে নানারূপ গল্প ও কল্পনা। বড় বড় মানুষদের নিয়ে এমনই হয়। তাদেরকে কেন্দ্র করে অনেক কাহিনী তৈরী করা হয়। মানুষ জীবনের গল্প শুনতে ভালবাসে। তাই জীবন নিয়ে গল্প তৈরী হয় কিন্তু তা জীবনের অংশ না-ও হতে পারে। কেউ বলেন নজরুল ময়মনসিংহের ত্রিশালে এক বছর ছিলেন, কেউ বলেন দেড় বছর, কেউবা দু’বছর। প্রথমে ছিলেন কাজী রফিজুল্লাহ’র বাড়ি। এরপরে ছিলেন ত্রিশালের নামাপাড়ায় বিচুতিয়া বেপারির বাড়ি। এই দু’বাড়িতে থাকা নিয়ে অবশ্য কোন বিতর্ক নেই। কিন্তু তর্ক আছে তার প্রস্থান নিয়ে।

কেউ বলেন তিনি স্কুল-শিক্ষকের কাছে সুবিচার না পেয়ে, কেউ বলেন অভিমান করে চলে গিয়েছিলেন। তবে তিনি কাউকে না বলেই চলে গিয়েছিলেন এটাই প্রতিষ্ঠিত মত। কিন্তু গেলেন কোথায় ? সেই জন্মস্থানে। তবে এবার চুরুলিয়া থেকে বেশ দূরে রাণীগঞ্জের শিহাড়সোল সরকারি স্কুলে সরকারি বৃত্তি নিয়ে ভর্তি হলেন অষ্টম শ্রেণিতে। ১৯১৫ সন। পড়াশোনা করলেন ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। দশম শ্রেণি পর্যন্ত একটানা। নজরুলের চঞ্চলমতি, ঘরছাড়া ও ভবঘুরে স্বভাবের জন্যে যেন বেমানান। প্রতিটি ক্লাসে প্রথম হলেন।

মেধাবী বলেই নিয়মিত মাসিক ৭ টাকা বৃত্তি পেতেন। ঐ সময়ের হিসাবে মাসিক ৭ টাকা অনেক টাকা। মাসিক ৩ থেকে ৪ টাকায় সকল প্রকার থাকা-খাওয়ার ব্যয় মিটিয়ে অনায়সে চলা যেত। দশম শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়ে এন্ট্রান্স বা মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার কথা। সে প্রস্তুতি চলছে। নিচ্ছেন-ও। হঠাৎ ব্রিটিশ শাসকদল কর্তৃক যুদ্ধযাত্রার ডাক। কিন্তু প্রলোভন দেখানো হলো যে ব্রিটিশরা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জিততে পারলে ভারতবর্ষকে মুক্ত করে দিয়ে যাবে। জন্মাবধি স্বাধীনতা ও মুক্তি-প্রত্যাশীর হৃদয়ে নাড়া দিল। তিনি সাড়া দেবেন কিনা দোদুল্যমান। কিন্তু কপট ব্রিটিশ জাতি বাঙালিকে উত্তোজিত করার নিমিত্ত অপবাদ ছড়ালো যে বাঙালিরা ভীরু।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঢাকার কবিভবনে নজরুল

তারা লড়তে, সংগ্রাম করতে, যুদ্ধে যেতে ভয় পায়। স্বল্পকাল পরের (১৯১৭ সালের মাত্র চার বছর পর লিখিত হয়েছিল ‘বিদ্রোহী’ কবিতা ১৯২১ সনে) বিদ্রোহী কবির রক্ত ক্ষোভে নেচে উঠলো। কে রুখে তার মুক্তির আকাক্সক্ষা! বাঙালি সেনাদের নিয়ে গঠিত ৪৯ নং বাঙালি পল্টনে নাম লিখিয়ে বাস্তব যুদ্ধযাত্রা করলেন। গন্তব্য করাচি। ১৯১৭-১৯১৯ সাল অব্দি কঠোর সৈনিক জীবন। সুকঠিন নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যেই সাধারণ সৈনিক থেকে হাবিলদার পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার পাশাপাশি আরবি-ফার্সি সাহিত্যে অধ্যয়নসহ সঙ্গীতে ব্যুৎপত্তি অর্জনের জন্য মহাকালের এক অবিস্মরণীয় কবি-শিল্পী হিসেবে নিজেকে নির্মাণের ক্ষেত্রে করাচির জীবনই ছিল এক সাজঘর। যুদ্ধযাত্রার পূর্ব পর্যন্ত নজরুল শিশু। কিন্তু যুদ্ধফেরত নজরুল এক পরিপূর্ণ তরুণ ও চিরকালীন শিল্পী-যার মন ও মানস শিশুর মত আজীবন নিষ্পাপ।

লেখক: নির্বাহী পরিচালক, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট 

;

বরাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলন: পূর্ণ স্বীকৃতি কতদূর?



প্রদীপ কুমার দত্ত
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আমরা বাংলাদেশে ভাষা আন্দোলন বলতেই বুঝি বৃটিশ শাসন পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানে ১৯৪৮-এ শুরু হওয়া এবং বায়ান্নর অমর ভাষা শহীদদের আত্মদানের মাধ্যমে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে। একুশে ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর ভাষা আন্দোলনের জন্য একটি দিক নির্দেশক দিন। সেই আন্দোলনের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয় পূর্ব বাংলার বাঙ্গালীরা। পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে দানা বাঁধে স্বাধিকার অর্জনের আন্দোলন। বহু আন্দোলন, সংগ্রাম ও সর্বোপরি মহান মুক্তিযুদ্ধের অবর্ণনীয় কষ্ট আর সমুদ্রসম আত্মত্যাগ এবং অসীম বীরত্বের ফলশ্রুতিতে আমরা পাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

এর বহু পরে, বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে, বাংলাদেশী কানাডা প্রবাসী রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম এর নেতৃত্বে পৃথবীর বিভিন্ন ভাষাভাষীদের নিয়ে মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ লাভার্স অফ দি ওয়ার্ল্ড গঠিত হয় কানাডার ভ্যাংকুভারে। এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ ও নিরলস প্রচেষ্টা এবং বাংলাদেশ সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় দিনটি বিশ্বসভায় আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত। এই দিনের জাতিসংঘ ঘোষিত অঙ্গিকার বিশ্বের প্রতিটি ভাষাকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করা এবং বিদ্যমান প্রায় ৭০০০ ভাষার একটিকে ও আর হারিয়ে যেতে না দেয়া। ইতিমধ্যে আধিপত্যবাদের কারণে ও সচেতন মহলের সচেতনতার অভাবে বহু ভাষা, সাথে সাথে তাদের সংস্কৃতি, পুরাতত্ত্ব ও ইতিহাস পৃথিবীর বুক থেকে মুছে গেছে।

কাজেই আমাদের বুঝতে হবে, ভাষা আন্দোলনের স্বর্ণখচিত ইতিহাস ও সাফল্যের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও কেবলমাত্র বাংলাদেশের ((তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের) বাঙ্গালীরাই ভাষার জন্য সংগ্রাম করা ও প্রাণ দেয়া একমাত্র জাতিগোষ্ঠী নই। অর্ধ সহস্রাব্দের আগে স্পেনীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দক্ষিণ আমেরিকার মায়া,আজটেক,ইনকা নামের তৎকালীন উন্নত সভ্যতার জাতিসমূহকে জেনোসাইডের মাধ্যমে ধ্বংস করে দিয়েছে।প্রতি মায়া লোকালয়ে একটি করে পাঠাগার ছিল। এইরকম দশ হাজার লোকালয়ের পাঠাগারের সব বই তারা ধ্বংস করে দেয়। আজকের দিনে মাত্র আদি মায়া ভাষার তিনখানা বই (মেক্সিকো সিটি,মাদ্রিদ ও ড্রেসডেনে) সংরক্ষিত আছে। যুদ্ধ করেও মায়ানরা পাঠাগারগুলো বাঁচাতে পারেন নি। সাথ সাথে ক্রমে ধ্বংস হয়ে যায় তাঁদের সংস্কৃতি ও জাতিসত্তা।

বাংলাভাষী জনগণের ভাষার মর্যাদা রক্ষায় উল্লেখ্যোগ্য অবদান রয়েছে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির সাঁওতাল পরগণার অন্তর্গত মানভূমের বাঙ্গালীদের। বহু বছর সংগ্রাম,রক্ত ও জীবনের মূল্যে তাঁরা তাঁদের দাবি অনেকটা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এরপর বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় আন্দোলনের সূচনা আসামের কাছাড়ে।বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দেয়া প্রথম মহিলা শহীদ কমলা ভট্টাচার্য সহ এগার তরুন প্রাণ ঝড়ে পড়েছে এই আন্দোলনে।

১৯৬১-তে আসামের বরাক উপত্যকার বাঙালি জনগণ তাদের মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আন্দোলনে শামিল হয়। যদিও বরাকের সিংহভাগ জনগণ বাংলা ভাষায় কথা বলেন,তবুও ১৯৬১-তে অহমিয়াকে আসামের একমাত্র রাজ্যভাষা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। ফুসে ওঠেন বরাকের বাঙ্গালীরা।বাংলাভাষা বরাক উপত্যকার অন্যতম সরকারি ভাষার মর্যাদা পায়।

মানভূম ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস দীর্ঘ। সাঁওতাল পরগণার মানভূম জেলা বাঙালি অধ্যুষিত হলেও তা দীর্ঘকাল বিহারের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ভারতের স্বাধীনতার পর সেখানে হিন্দি প্রচলনের কড়াকড়িতে বাংলা ভাষাভাষীরা চাপের মুখে পড়েন। মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাঁরা। ১৯৪৮ থেকে দীর্ঘ আট বছর চলা এই আন্দোলনের সাফল্যে ১৯৫৬ এর ১ নভেম্বর মানভূমের বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয় পুরুলিয়া জেলা। বিহার থেকে নিয়ে পুরুলিয়াকে যুক্ত করা হয় পশ্চিমবঙ্গের সাথে। তাঁদের মাতৃভাষা বাংলা ব্যবহারের দ্বার উন্মুক্ত হয় তাঁদের সামনে।

এবারে আবার ফিরি ১৯ মে'র ইতিহাসে। আসামের বরাক উপত্যকা আদিকাল থেকেই বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল। একসময় এই এলাকার অধিকাংশ ডিমাসা জনগোষ্ঠীর কাছাড় রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ডিমাসা রাজন্যবর্গ ও বাংলাভাষার পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। কালক্রমে ব্রিটিশরা ভারত বিভাগ করে চলে গেলে আসাম প্রদেশের একাংশ সিলেট পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হয়। সিলেটের একাংশ ও ডিমাসা পার্বত্য ও সমতল অঞ্চল নিয়ে কাছাড় জেলা গঠিত হয়। এই জেলা বর্তমানে বিভক্ত হয়ে কাছাড়,হাইলাকান্দি,করিমগঞ্জ ও উত্তর কাছাড় পার্বত্য জেলা (ডিমা হাসাও)এই চার নতুন জেলায় রূপ নিয়েছে।

১৯৪৭ এ দেশবিভাগের পর থেকেই বরাক উপত্যকার কাছাড় জেলার অধিবাসীরা বৈষম্যের শিকার হতে থাকেন। আসাম অহমিয়াদের জন্য এবং বাঙ্গালীরা সেখানে বহিরাগত এমন বক্তব্য ও ওঠে। এখনও সেই প্রবণতা বিদ্যমান। জাতীয়তাবাদের জোয়ারে এক শ্রেণির রাজনীতিবিদরাও গা ভাসান। বঙ্গাল খেদা আন্দোলনও গড়ে ওঠে একসময়ে। সরকারিভাবে সেসব আন্দোলন ও সহিংসতা দমন হলেও পরবর্তী কালে সময়ে সময়ে এই জাতীয় সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে থাকে।

আসাম রাজ্য বিধান সভায় ভারতের স্বাধীনতার পর পর সদস্যরা বাংলা, হিন্দি বা ইংরেজিতে বক্তব্য রাখতে পারতেন।প্রথম আঘাত এলো ভাষার উপর। অহমিয়াকে একমাত্র রাজ্যভাষা ঘোষণা, শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে চালুর চেষ্টা এবং বিধানসভায় বাংলায় বক্তব্য রাখার অধিকার ক্ষুণ্ণ করে আইন চালুর বিরুদ্ধে আসামের বাঙ্গালী জনগণ দল-মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। আসাম রাজ্য সরকার কোনও গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথে গেলেন না। তাঁরা অহমিয়া জাতীয়তাবাদ এর সংকীর্ণ মানসিকতার নেতাদের প্রাধান্য দেয়ার নীতি গ্রহণ করেন। বাঙ্গালীরাও সংগঠিত হতে থাকেন।

অনুমান করা যায় আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বাহান্নর ঢাকার ভাষা আন্দোলন ও মানভূমের ভাষা আন্দোলনের সাফল্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।১৯৬০ সালের শেষে আসাম বিধান সভায় ভাষা বিল পাশ হয়। কফিনে শেষ পেরেক ঠোকা হয়ে গেলো। বাঙ্গালীরা ফুঁসে উঠলেন। লাগাতার আন্দোলন চলতে থাকলো।সত্যাগ্রহ,অসহযোগ, হরতাল, রেল রোখো,সংকল্প দিবস, ইত্যাকার অহিংস আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠল বরাক উপত্যকা। এই আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৬১ সালের ১৯মে তারিখে বরাকের কেন্দ্রবিন্দু শিলচরের রেলস্টেশনে ভোর থেকে আন্দোলনকারী সত্যাগ্রহীরা জড়ো হয়। হাজার হাজার ছাত্র যুবা জনতা রেলস্টেশন প্রাঙ্গন ও রেললাইনের উপর অবস্থান নেয়। তাঁদের সরাতে না পেরে সরকার নির্মম দমননীতির আশ্রয় নেয়। পুলিশ বাহিনী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ শুরু করে। নিহত হন পৃথিবীর প্রথম মহিলা ভাষা শহীদ কমলা ভট্টাচার্য সহ মোট ১১ জন ছাত্র যুবা। তাঁরাই একাদশ ভাষা শহীদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

তাঁদের আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষা দ্বিতীয় রাজ্যভাষার মর্যাদা পায়। শিলচর রেলস্টেশনের সামনে স্থাপিত হয় শহীদদের প্রতিকৃতি সম্বলিত শহীদ মিনার। যার পথ ধরে পরবর্তী কালে ছড়িয়ে পড়ে একই আকৃতির শহীদ মিনার সমগ্র বরাক উপত্যকায়। শিলচর রেলস্টেশনের নাম পাল্টে জনতা ভাষা শহীদ রেল স্টশন নাম রেখেছেন। যদিও পূর্ণ সরকারি স্বীকৃতি এখনও তার মেলেনি।

বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় একাদশ শহীদ সহ আন্দোলনকারীদের আত্মত্যাগ ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে। কিন্তু সব এলাকার বাঙ্গালিরা কি এই ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখেন? উত্তরটি ‘না’ সূচক। আমাদের কর্তব্য তাঁদের আত্মত্যাগের কাহিনী সকলকে জানানোর উদ্যোগ নেয়া যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম তাঁদের সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হতে শেখে। বরাক উপত্যকার একাদশ ভাষা শহীদ অমর রহে। বাংলা সহ সকল মাতৃভাষার অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত থাকুক।

এখনও সেই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন এমন অনেকেই বেঁচে আছেন। বেঁচে আছেন নেতৃত্ব দেয়াদের মধ্যে অনেকে। সাথে সাথে প্রত্যক্ষদর্শীদের ও সন্ধান পাওয়া এখনও কষ্টকর নয়। তবে সামনের সিকি শতাব্দীর মধ্যে প্রাকৃতিক নিয়মেই তাঁরা আর আমাদের মাঝে থাকবেন না। এখনই প্রকৃষ্ট সময় তাঁদের সাক্ষাৎকার রেকর্ড করে রাখার। পর্যাপ্ত গবেষণা হওয়া প্রয়োজন সেই আন্দোলন,তার কুশীলব এবং শহীদ পরিবার সমূহের বিষয়ে। বীরের সন্মান উপযুক্ত ভাবে হওয়া প্রয়োজন। বাংলা ভাষার এবং বাংলা ভাষাভাষী জনগণের মর্যাদা বিশ্বব্যাপী সমুন্নত রাখার জন্য আমাদের এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আরও অনেক বীরের আমাদের প্রয়োজন। যে মাটিতে বীরের যথাযোগ্য সন্মান নেই, সে মাটিতে বীর জন্মায় না।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও পরিব্রাজক

;

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;