সাগর তীরে ২৫ প্রজাতির শুঁটকি উৎপাদন
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের নগরী কক্সবাজার। পর্যটন নগরী হিসেবে যেমন পরিচিত তেমনি শুঁটকির জন্যও বিখ্যাত এ শহর। প্রতি মৌসুমে কোটি কোটি টাকার শুঁটকি উৎপাদন হয় এ জেলায়।
শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে কক্সবাজারে শুরু হয়েছে শুঁটকি উৎপাদন। কক্সবাজারের নাজিরারটেক, ফদনারডেইল, নুনিয়াছড়া, মহেশখালী, সোনাদিয়া, কুতুবদিয়াতে শুরু হয়েছে শুঁটকি উৎপাদন। চলতি বছরের নভেম্বরে থেকে পরবর্তী বছরের মে পর্যন্ত চলবে শুঁটকি উৎপাদন।
জেলার কয়েকটি শুঁটকি মহাল ঘুরে দেখা যায়, সাগরের পাশে বিশেষ উপায়ে তৈরি বাশেঁর মাচার ওপর প্রায় ২০/২৫ প্রজাতির কাঁচা মাছ বিছিয়ে সূর্যের তাপে শুকিয়ে তৈরি করা হচ্ছে শুঁটকি। এরমধ্যে ছুরি, কোরাল, মাইট্যা, ফাইস্যা, লইট্ট্যা, পোপা, রূপচাঁদা, টেকচাঁদা অন্যতম। এ সব কাঁচা মাছ শুঁটকি হতে সময় লাগে ৪ হতে ৫ দিন। বড় মাছের ক্ষেত্রে সময় লাগে ১২ থেকে ১৫ দিন।
খুচরা বাজারে প্রতি কেজি লইট্যা ৪৫০-৫৫০টাকা, ফাইস্যা ৩৫০-৪০০ টাকা, ছুরি ৬০০-১২০০টাকা, চিংড়ি ৬০০-১৪০০ টাকা, ছোট পোয়া ৪০০-৪৫০ টাকা, রূপচাঁদা ১৮০০-২২০০ টাকা, লাক্ষা ২৮০০-৩২০০ টাকা, মাইট্যা ১৩০০-১৪০০ টাকা, কালা চান্দা ১০০০-১২০০টাকা, বাইম মাছ ৫৫০-৬০০টাকা, বাইলা ৪৫০-৫০০টাকা, বাশপতি(পেউয়া) ৫৫০-৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়।
ইতোমধ্যে প্রায় সকল শুঁটকি মহালে বিষমুক্ত শুঁটকি উৎপাদন শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন শুঁটকি ব্যবসায়ী আবু সুফিয়ান। তিনি বার্তা ২৪.কমকে বলেন, 'শুঁটকি মহালগুলোতে প্রতি মৌসুমে প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক কাজ করে। প্রতি দিন ৩০০ থেকে ৪০০ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদন হচ্ছে।'
অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর শুটকি উৎপাদন কম হবে বলে দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, 'সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ এবং ঘূর্ণিঝড় বুলবুল’র কারণে ৩ মাস অতিবাহিত হলেও আশানুরূপ শুঁটকি উৎপাদন হচ্ছে না।'
আরেক শুঁটকি ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন জানান, শুঁটকিতে কোন প্রকার লবণ, বিষ ও বিভিন্ন প্রকার কীটনাশক ব্যবহার না করে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে শুঁটকি উৎপাদন করছে তারা। এর ফলে কক্সবাজারের শুঁটকির হারানো সুনাম ফিরে পাবে বলে আশা করেন তিনি।
কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক মৎস্য ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আতিক উল্লাহ জানান, প্রায় ১০০ একর এলাকা জুড়ে গড়ে ওঠা দেশের বৃহত্তম এ শুঁটকি মহালে ছোট বড় প্রায় অর্ধশতাধিক আড়ত রয়েছে। এখানে নারী সহ প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক কাজ করেন।
শুঁটকি উৎপাদন নিয়ে কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম খালেকুজ্জান বার্তা ২৪.কমকে বলেন, 'দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে কক্সবাজারের শুঁটকি। বিষমুক্ত শুঁটকি উৎপাদনে মহাল মালিক ও ব্যবসায়ীদের ওপর বিশেষ নজর রাখা হয়েছে।'