মহুয়া



হুমায়ূন সাধু
অলঙ্করণ শতাব্দী জাহিদ

অলঙ্করণ শতাব্দী জাহিদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পরিত্যাক্ত ফ্ল্যাটটাতে ভূত আছে এমন গুজব আছে।

তার পাশে গোরস্থান। ভাড়া সস্তা তাও কোনো ভাড়াটিয়া আসে না। পূর্বে যারা ছিল, তারা অনেকে অনেক কিছু দেখছে। রাতের বেলা জানালায় কারে বলে দেখত। চাপা পড়া মানুষের গোঙ্গানি শুনা যাইত। শীৎকার তো। যা শুনে কাম জাগত না, লোম খাড়ায় যাইত। কে শখ করে এসব সাউন্ড শুনতে যাবে! লাস্ট টাইম রুবেলরা ছিল। মধ্যরাতে বলে ঘুম থেকে উঠে দেখে শূন্যে ভাসতেছে। যাবার সময় কোনোমতে লুঙ্গি পইরা বাইর হইছে।

সাদেকের খুব শখ ভূত দেখে। ভূত দেখার আশায় একদিন সারারাত শ্মশানে বইসা ছিল। কিচ্ছু দেখে নাই। উল্টা পরদিন তারে দেইখা বন্ধুরা দৌড়াইছে। গল্প শুনতে শুনতে ছোটবেলা থেকে ভূত আবিষ্কারে বের হওয়া তার একটা অ্যাডভেঞ্চার। ভূত-মুতে তার বিশ্বাস নাই। সে থাকে একা, লাইফে একটুস থ্রিলের দরকার আছে। একদিন নির্জন দুপুর বেলায় চইলা গেল সেই ফ্ল্যাটের ছয় তলায়। এখানে এক কিশোরী ফাঁস নিয়া আত্মহত্যা করছিল। ক’দিন কারা জানি তাশ পিটাইতে এই ফ্ল্যাট দখল নিছিল। তাদের মধ্যে মার্ডার হইছে। সাদেক আসছিল, যেহেতু ভাড়া কম। কিন্তু মালিক নতুন সিদ্ধান্ত নিছে, এই বিল্ডিং সেল করে দিবে।

ফ্ল্যাটের কলাপ্সিবল গেট লক। চারিদিকে নীরব। সে ঘুরে এসে অতি উত্তেজনার ঠেলায় কায়দা করে পিছনে পঁচা-ডোবা দিয়া লটকে লটকে ব্যালকনি দি উপরে উঠে গেল। নিজেরে বেয়ার গ্রিল ফিল লাগে। উঠে গেল কিন্তু ব্যালকনি থেকে ভেতরে ঢোকা যায় না। লাগোয়া একটা রুম আর এটাচ্‌ বাথ আছে। রুমের সোজা দরজা দিয়ে আরো ভিতরে দেখা যায়। ভিতরে কিছু কাঠ-কুঠ ছাড়া কিচ্ছু নাই। একটা ইন্দুরও না। উঁকি দিয়া যতটুক দেখা যায়। নাহ্‌, বরাবরের মতো হতাশ হইতে হয় সাদেকরে। কিছুক্ষণ সেখানেই খাড়ায়া সিগারেট ধরায় সে। হিম হিম হাওয়া আসে। ব্যালকনি থেকে বাইরের ভিউটা সুন্দর লাগতেছে। পানা-মজা ডোবাটাও ওয়ান্ডারফুল লাগে। মোবাইলে ছবি তোলে। সিগারেট শেষ করে নামতে যাবে, নিচে মানুষের আওয়াজ পায়। সে নামে না। নিজেকে আড়াল করে অপেক্ষা করে। একে তো ভূতের ব্যাপার নির্ঘাত তাকে ভূত ভেবে কেলেঙ্কারী হবে। আগুন টাগুনও দিয়া বসতে পারে। অথবা, চোর টোর মনে করে গণধোলাই দিলে ইজ্জত পাংচার। অথবা এমনও হতে পারে ওরা চোরা-কারবারি, ড্রাগস্‌ ডিলার। যদি সে দেখে ফেলে, যদি তারা সাদেকরে দেখে ফেলে—আর দুনিয়া দেখতে হবে না। ফানা। বুকে থুথু দেয়। গোয়েন্দা প্লট হয়ে যাচ্ছে নাকি? ব্যালকনি পুরান জিনিসে ভর্তি। সাদেক খুঁটি ছাড়া একটা ভাঙ্গা সোফায় বসে রেস্ট নেয়।

কখন ঘুমায় পড়ছে কখন সন্ধ্যা হয়া গেছে খেয়ালই করে নাই। উঠে নিচে তাকায় দেখে কেউ নাই, নামতে যাবে এমন সময় ‘গসগস’ শব্দ। ‘শব্দটা কিসের’, ‘কোনদিক থেকে আইছে’ বোঝা যায় না। সে একটু অপেক্ষা করে। কিছু খাওয়ার শব্দ। ভিতর থেকেই তো! হইতে পারে কোনো বিড়াল, কুকুর। পরক্ষণেই মনে হয় বিড়াল, কুকুর আসবে কোত্থেকে? ঢুকবে কোনদিক দিয়া? সাদেক ব্যালকনি দিয়ে উঁকি দেয়, একটা ক্ষীণ আগুনের মতো দেখা যাচ্ছে।

ধুম করে তার মনে বাড়ি খায়, তাহলে সবার মতো সেও দেখতে পাচ্ছে!? সবাই যা বলে সত্যি?! নাকি আলো, আঁধারিতে তার হেলুসিনেশান হচ্ছে? আগুনটারে ফলো করে সে। শুধু একটা আগুন বাথরুমের দিকে ঢুকে। বাথরুমের উইন্ডোর দিকে চোখ দিয়ে সাদেকের চক্ষু চড়কগাছ। ফিট খায়া যাবার দশা।

নগ্ন একটা মেয়ে। ইরোটিক ফিল আসার বদলে তার বডি দিয়া কারেন্টের একটা ঝনঝনানি বয়া যায়। লিটারেলি দাঁত ঠকঠক করে। হাতড়িয়ে ব্যালকনিতেই একটা রঙমোছা কাপড় ছিল সেটা মুখে গুঁজে কোনোমতে সামলায়। রঙের গন্ধটা গায়ে লাগে না।

এখন গোসলের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। অন্যপাশে হেলান দিয়ে বসে থাকে সাদেক। এমএমএস বানায় ফেলবে নাকি? ভূতের এমএমএস? সাহস করে বানায় ফেললে হেব্‌ভি মার্কেট খাবে। সে এখনো স্ট্রংলি বিলিভ করে এটা ভূত না। অন্য কাহিনী আছে। কাহিনী বাইর করতে হবে। সাদেকের ব্রেইন তছনছ খায় গেছে। গুছায় নিতে পারে না। রুমের এলুমিনিয়াম ডোর আস্তে আরেকবার ঠেলার ট্রাই করে। এইসময় তথাকথিত ভূত বের হয়। ভূত, পেত্নি, পরী, রহস্যময়ী যা-ই হোক বাথরুম থেকে বের হইছে। গুনগুন করে গানও গায়—“একটা ছেলে মনের আঙিনাতে, ধীর পায়েতে এক্কা দোক্কা খেলে, বন পাহাড়ী ঝর্না খুঁজে, বৃষ্টি জলে একলা ভিজে, সেই ছেলেটা আমায় ছুঁয়ে ফেলে।”

ভূতে এত সুন্দর গায়! আউটস্ট্যান্ডিং! এইটা কাউরে কইলে তারে বিশাল পাগল বলবে। বাট এভাবে ছাইড়া দেওন যাইব না। সাথে মেশিনপাতি কিচ্ছু নাই। পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়া আবার আসতে হবে। ডাইরেক্ট অ্যাকশন হবে।

পরদিন

সন্ধ্যা হয় হয়। সাদেক কোমর বেঁধে নামছে। সেফটি দড়ি দিয়া উপ্রে উঠে জায়গামতো পজিশন নেয়। আসার আগে সাধুরে কয়ে আসছিল। ‘কী থেকে কী হয়’—একজন সাক্ষী থাকা দরকার। সাধু এটা নিয়া লিখে জাতিরে জানাবে।

সাদেকের পিঠে ব্যাগ, ব্যাগে টুকটাক জিনিস। দেয়ালের দিকে পিঠ দিয়া ব্যাগ থেকে স্ক্রু-ড্রাইভার বের করে এলুমিনিয়ামের স্লাইড ডোরটা ফাঁক করতে যাবে—এই সময় মেয়েটা মানে কালকের ভূতটা ডোরের কাছে আসে। সে কি ধরা পড়ে গেছে? এখন কি সাদেক আক্রমণ করবে? দ্রুত ভাবে সাদেক। অনামিকা মেয়েটা স্লাইড ডোরটা খুলে হাল্কা বাতাস নেয়। তারপর ওখান থেকে সরে যায়। সাদেক কনফার্ম হয় মেয়েটা সরে গেছে। কিছুক্ষণ ওয়েট করে। এইটাই তো সে চায়। যে-ই হোক রিস্ক তো লইতেই হবে। রড দিয়া খুলতে গিয়া দেখে স্লাইড ডোর খোলা। হাল্কা খুলে দ্রুত ভিতরে ঢুকে পড়ে। সাবধানে পা ফেইলা মেয়েটারে খঁজতে খুঁজতে ঘরের ভিতরের দিকে যাইতে থাকে। কোত্থাও কেউ নাই। হাওয়ায় মিলায়ে গেলনি?!

ড্রয়িংরুমের দিকে এসে দ্রুত একটা পিলারের পিছনে লুকায় পড়ে সাদেক। কল্লাটা বের করে দেখে ভূতে চারপাশে মোমবাতি জ্বালায়ে ইয়োগারত। হাঁটু পর্যন্ত স্কার্ট বা ঘাগড়া তোলা এক পায়ের ওপর আরেক পা। দুইহাত দুইদিকে আঙ্গুলের বিশেষ ভঙ্গিমা। চোখ বন্ধ। ইয়োগাই তো। ভূত ছাড়া এই মুহূর্তে আর কিছু মনে আসে না, যদিও সাদেক নিশ্চিত ভূত না। এই সুযোগে ঝাপায়ে কি পড়বে? ইয়োগার সুবিধা নিয়া পিছন থেকে ঝাপায় পড়ল... নিজেকে ভীরু ভীরু লাগে। কুলহুআল্লাও পুরাটা মনে করতে পারে না। সাদেক ব্যাগ খুলে ক্লোরোফর্মের বোতলটা খোলে। বারবার মনে হয় ভূতটা তার পিছনেই। হঠাৎ একটা শব্দে মেয়েটা সতচকিত হয়ে ওঠে। আর অপেক্ষা করা বুদ্ধিমানের কাম হবে না মনে করে সাদেক ক্লোরোফর্মসহ ঝাপায় পড়ে। মেয়েটা জাস্ট একটা চিৎকার দিয়ে দৌড় দিতে নিলে গায়ে থাকা উপরের জামা পড়ে যায়। সাদেক তার হাত ধরে ফেলে। কিন্তু ক্লোরোফর্ম ছিটকে পড়ে। কার হাত ধরে আছে এখনো নিশ্চিত না। সাদেকের শরীর থরথর কাঁপতে থাকে। কী বলবে মেয়েটাকে? মেয়েটাও কিছুই বলে না। ব্যাপারটা কি রেইপ কেসের দিকে যাচ্ছে? সে তো মোটেই সেই টাইপ না। এটা মেয়েটারে বুঝানো উচিত। মেয়েটা শুধু গোঁ গোঁ করে। এটা মানুষও না, ভূতও না। এটা কোন জাতি? এলিয়েন জাতীয় কিছু? পরে দেখা গেল কোনো পাওয়ার টাওয়ার আছে তারে মাইরা দিল। এলিয়েনে বিশ্বাস করে সাদেক।
সাদেক : হোয়াটজ ইয়্যোর নেইম?
শালার ইংলিশই বাইর হইল কেন তার মুখ দিয়া! এলিয়েন ইংলিশ জানলে বাংলাও জানবে।
এলিয়েনটা শুধু একটা শব্দ কইল, ছারিদুয়াঁরে।
: এইটা কী ভাষা?
এলিয়েনটা বলেই যেতে থাকে ‘ছারিদুয়াঁরে, ছারিদুয়াঁরে।’

বাংলা ফিল্মের মতো ঘুরতে থাকে দুইজনে। মাটিতে গড়াগড়ি হইলে ব্যাপারটা পারফেক্ট হইত। ব্যালকনি দিয়া শিরশির বাতাস ঢুকতে থাকে। সাদেকের মনে হয় এখানে আরো কেউ আছে। হয়তো তার পিছনেই। একটা ছায়া দেখতে পেয়ে সে শট করে মেয়েটাকে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরে ঘুরে দাঁড়ালে দেখে পিছন দিকে লুঙ্গি পরা একজন মোটা কাঠ হাতে জাস্ট তার মাথায় বাড়ি দিচ্ছিল...

ষাঁড়ের মতো চিৎকার দিলে বোঝা যায় একটা ছেলে। উন্মাদ ছেলে। আলো আঁধারিতে খেলা চলতেছে। সাদেক মেয়েটার গলায় প্যাঁচায়ে রডটা ধরে। এত ভায়োলেন্ট তাকে কখনো হইতে হয় নাই। ইন ফ্যাক্ট তার ইন্টেশনও ছিল না। কী করার? এরমধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়া গেল। ছেলেটাকে দেখে মেয়েটা আরো একরোখা হয়ে গেল। ওরা কি এই দুইজন? নাকি আরো আছে? সাদেক আঁচ করার ট্রাই করে। ধস্তাধস্তি করতে গিয়া পারা গেল না, একটা কাঠের বাড়িতে মাথা ঝিলমিল করে চোখে ঝাপসা দেখতে লাগল সে।

অনেকক্ষণ পর হুঁশ ফিরলে সাদেক দেখে সে ভিতরে অন্য একটা রুমে বান্ধা। রুমটা মোটামুটি গুছানো, বিছানাপাতা সুন্দর। একটা স্টোভের মতো আছে। ওরা দুইজন তার সামনে মোটা কাঠসহ দাঁড়িয়ে। সে কী করবে? বেহুঁশের মতো থাকবে? তারা তাকে নিয়ে কী করবে? ভাবাই যায় না। দূরে ছোট্ট একটা মোমবাতির জ্বলতেছে। তাতে পোলাটার (পোলা না কি!?) মুখ ভালো বোঝা যায় না। তবে মেয়েটারে অপার্থিব সুন্দর দেখায়। আগেও অবশ্য দেখছে মেয়েটারে, খালি গায়ে। সাদেককেই শুরু করতে হবে, এইটার একটা শেষ করতে হবে। আর তাকে বুঝাইতেও হবে সে হার্মফুল না, বিশিষ্ট ভদ্রলোক।
: এক্সকিউজ মি! হু হু হুয়ার ইউ?
সে তোতলাচ্ছে কেন? এটা নার্ভাসনেসের লক্ষণ। দুর্বলতা প্রকাশ করা যাবে না। পাল্টা প্রশ্ন আসে, এবং খাঁটি বাংলায়—
: তুমি কে? এখানে কী চাও? চুরি করতে? এখানে ভূত থাকে জানো না?
ভূতে ভূতের কথা কয়! ঘাপলা আছে।
সাদেক : আমি? চুরি? না না, একদম না। আমি চোর না।
ওদের একটু ইন্সিকিউরিটিতে ফেলে দেবে নাকি?
: তোমরা এখানে কেন? এটা আমাদের...
পোলা : একদম কল্লা নামায় দেব।
একটা ঢোঁক গিলে মেয়েটার দিকে তাকাইলে দেখা যায় মেয়েটাও ফুঁসতাছে।
সাদেক : দেখো, আমি একদম সাধারণ একটা মানুষ। কোনো মারামারিতে নাই, এখানে আসার উদ্দেশ্যও খারাপ না...
ওরা একে অপরের দিকে তাকায়। বিশ্বাস না করে উপায় নাই বোধ হয়। ওদের মনোভাব বুঝার জন্য ‘পানি খাবে’—বোঝায়। দিলে ঠিকাছে না দিলে ঝামেলা আছে।

সে আবার শুরু করে : আমি ব্যাচেলর। বিশিষ্ট ভদ্রলোক। এটা ভাড়া নিতে চাইছিলাম। জানেনই তো ভূতের আছর বলে... ভূতের হইলে ভূতের আমি ডিটারমাইন আমি থাকব। সবাইরে দেখাইতে আসলাম এখানে কিছু নাই, আমি থাকতে পারি।

মেয়েটা মুখের সামনে একটা গ্লাস ধরে। পানি আসে। ছেলেটা ‘খাড়ো’ বলে একটা দা নিয়া আসে। দড়িটা কাটে, তারপর দা নিয়া সামনে খাড়ায় থাকে।
এখন ওদের হাতে অপশন থাকে সাদেকরে মাইরা ফেলা। সবাই জানবে ভূতে খাইছে। কিন্তু মনে হয় না মারবে। নিজেরা নিজেরা আলাপ করে, ‘এহন ফুয়াবিরা লই কিত্থ হদ্দে।’
অরাও বিপদে। ছেলেটা কাছে আসে,
: অই বিশিষ্ট, কী করো? এখানে কী?
সাদেক : বললাম তো, এমনেই... আমি টিচার। কম্পিউটার শিখাই, গ্রাফিক্স, প্রোগ্রাম, সফটওয়্যার...
সাদেকের ব্যাগ ঘেঁটে আইডি কার্ড, সিডি দেখে। এবার কিছুটা নমনীয় হয় অচেনা ছেলেটা।
ছেলেটা : দেখেন (আপনি করে), আমি আজিম। চট্টগ্রাম থাকি।
একটু থামে সে। তারাও অসহায় সেটা বুঝায়। বলে যেতে থাকে—
: আমি মায়ানমারে কাজ করতাম। ও মহুয়া, মায়ানমারের মেয়ে। আমরা একজন আরেকজনকে... ও আরো অনেক আগে আসছে বাংলাদেশে আমার সাথে। ওর এখন যাবার জায়গা নাই, থাকার জায়গা নাই। এই জায়গাটা আমরা বেছে নিছি। এখন আমরা বিপদে। সব ঠিক হয়ে আসলে মহুয়ারে বিয়ে করে বাসায় তুলব।

সাদেক সাহস পেয়ে কৌতূহল ঝাড়ে—
: কিন্তু ঢুকলেন ক্যামনে?
: অমা, চাবি দিয়ে। চাবি তো আগেই বানাই নিছি।
তারপর বলে, এখন আপনাকে বিশ্বাস করব কী করে?
এইসময় কোইত্থেকে ডিগবাজি দিয়ে ঢুকে সাধু। হাতে ধরা পিস্তল ওদের দিকে তাক করে। দুইজন ভয় পাইয়া যায়। ছেলেটারে উদ্দেশ্য করে বলে সাধু বলে, দা নামা।
মেয়েটা ভূত বলে চিৎকার দিতে নিয়া মুখে হাত দিয়া ফেলে। সাদেক অবাক এবং বিরক্ত হয়, হোয়াট এ টাইমিং! আরে আইলি আইলি টাইম পাইলি না!
সাধু : ব্যালকনির চিপায় আছিলাম, কাণ্ড দেখতেছিলাম।
সাদেক : আমি মাইর টাইর খায়া বেহুঁশ হয়া গেলাম, আরো কাণ্ড দেখবি?
সাধু (আস্তে আস্তে) : পিস্তলে গুলি নাই বেডা।
সাদেক ওদের দিকে তাকায়। ওরা হাত উঁচা করে দাঁড়ায়ে।
সাদেক উঠে ব্যাগ ট্যাগ গুছিয়ে চলে আসতে নেয়। আসার সময় কার্ড দেয়, নিশ্চিন্তে থাকেন। আর কোনো প্রবলেম হইলে কল দিবেন। এখানে নাম্বার আছে। থাকার প্রবলেম হলে জানায়েন। আর আমি এইখানে ভাড়া নিতে চাই। আমি আইসা পড়লে আর প্রবলেম হবে না।

কার্ডটা নেয় আজিম।
সাদেক : দড়ি বাইয়া নামতে পারুম না ভাই সিঁড়ি দিয়া নামুম।
সাধু : দড়ি দিয়া আবার, মাথা খারাপ। উঠতে গিয়া কতক্ষণ লটকায় আছিলাম জানোস?
আজিম হেসে দরজা খুলে দেয়।
সাধু : আপনাদের পরের কাহিনী শোনার অপেক্ষায় থাকলাম।

   

বরাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলন: পূর্ণ স্বীকৃতি কতদূর?



প্রদীপ কুমার দত্ত
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আমরা বাংলাদেশে ভাষা আন্দোলন বলতেই বুঝি বৃটিশ শাসন পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানে ১৯৪৮-এ শুরু হওয়া এবং বায়ান্নর অমর ভাষা শহীদদের আত্মদানের মাধ্যমে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে। একুশে ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর ভাষা আন্দোলনের জন্য একটি দিক নির্দেশক দিন। সেই আন্দোলনের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয় পূর্ব বাংলার বাঙ্গালীরা। পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে দানা বাঁধে স্বাধিকার অর্জনের আন্দোলন। বহু আন্দোলন, সংগ্রাম ও সর্বোপরি মহান মুক্তিযুদ্ধের অবর্ণনীয় কষ্ট আর সমুদ্রসম আত্মত্যাগ এবং অসীম বীরত্বের ফলশ্রুতিতে আমরা পাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

এর বহু পরে, বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে, বাংলাদেশী কানাডা প্রবাসী রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম এর নেতৃত্বে পৃথবীর বিভিন্ন ভাষাভাষীদের নিয়ে মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ লাভার্স অফ দি ওয়ার্ল্ড গঠিত হয় কানাডার ভ্যাংকুভারে। এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ ও নিরলস প্রচেষ্টা এবং বাংলাদেশ সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় দিনটি বিশ্বসভায় আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত। এই দিনের জাতিসংঘ ঘোষিত অঙ্গিকার বিশ্বের প্রতিটি ভাষাকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করা এবং বিদ্যমান প্রায় ৭০০০ ভাষার একটিকে ও আর হারিয়ে যেতে না দেয়া। ইতিমধ্যে আধিপত্যবাদের কারণে ও সচেতন মহলের সচেতনতার অভাবে বহু ভাষা, সাথে সাথে তাদের সংস্কৃতি, পুরাতত্ত্ব ও ইতিহাস পৃথিবীর বুক থেকে মুছে গেছে।

কাজেই আমাদের বুঝতে হবে, ভাষা আন্দোলনের স্বর্ণখচিত ইতিহাস ও সাফল্যের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও কেবলমাত্র বাংলাদেশের ((তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের) বাঙ্গালীরাই ভাষার জন্য সংগ্রাম করা ও প্রাণ দেয়া একমাত্র জাতিগোষ্ঠী নই। অর্ধ সহস্রাব্দের আগে স্পেনীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দক্ষিণ আমেরিকার মায়া,আজটেক,ইনকা নামের তৎকালীন উন্নত সভ্যতার জাতিসমূহকে জেনোসাইডের মাধ্যমে ধ্বংস করে দিয়েছে।প্রতি মায়া লোকালয়ে একটি করে পাঠাগার ছিল। এইরকম দশ হাজার লোকালয়ের পাঠাগারের সব বই তারা ধ্বংস করে দেয়। আজকের দিনে মাত্র আদি মায়া ভাষার তিনখানা বই (মেক্সিকো সিটি,মাদ্রিদ ও ড্রেসডেনে) সংরক্ষিত আছে। যুদ্ধ করেও মায়ানরা পাঠাগারগুলো বাঁচাতে পারেন নি। সাথ সাথে ক্রমে ধ্বংস হয়ে যায় তাঁদের সংস্কৃতি ও জাতিসত্তা।

বাংলাভাষী জনগণের ভাষার মর্যাদা রক্ষায় উল্লেখ্যোগ্য অবদান রয়েছে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির সাঁওতাল পরগণার অন্তর্গত মানভূমের বাঙ্গালীদের। বহু বছর সংগ্রাম,রক্ত ও জীবনের মূল্যে তাঁরা তাঁদের দাবি অনেকটা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এরপর বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় আন্দোলনের সূচনা আসামের কাছাড়ে।বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দেয়া প্রথম মহিলা শহীদ কমলা ভট্টাচার্য সহ এগার তরুন প্রাণ ঝড়ে পড়েছে এই আন্দোলনে।

১৯৬১-তে আসামের বরাক উপত্যকার বাঙালি জনগণ তাদের মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আন্দোলনে শামিল হয়। যদিও বরাকের সিংহভাগ জনগণ বাংলা ভাষায় কথা বলেন,তবুও ১৯৬১-তে অহমিয়াকে আসামের একমাত্র রাজ্যভাষা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। ফুসে ওঠেন বরাকের বাঙ্গালীরা।বাংলাভাষা বরাক উপত্যকার অন্যতম সরকারি ভাষার মর্যাদা পায়।

মানভূম ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস দীর্ঘ। সাঁওতাল পরগণার মানভূম জেলা বাঙালি অধ্যুষিত হলেও তা দীর্ঘকাল বিহারের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ভারতের স্বাধীনতার পর সেখানে হিন্দি প্রচলনের কড়াকড়িতে বাংলা ভাষাভাষীরা চাপের মুখে পড়েন। মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাঁরা। ১৯৪৮ থেকে দীর্ঘ আট বছর চলা এই আন্দোলনের সাফল্যে ১৯৫৬ এর ১ নভেম্বর মানভূমের বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয় পুরুলিয়া জেলা। বিহার থেকে নিয়ে পুরুলিয়াকে যুক্ত করা হয় পশ্চিমবঙ্গের সাথে। তাঁদের মাতৃভাষা বাংলা ব্যবহারের দ্বার উন্মুক্ত হয় তাঁদের সামনে।

এবারে আবার ফিরি ১৯ মে'র ইতিহাসে। আসামের বরাক উপত্যকা আদিকাল থেকেই বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল। একসময় এই এলাকার অধিকাংশ ডিমাসা জনগোষ্ঠীর কাছাড় রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ডিমাসা রাজন্যবর্গ ও বাংলাভাষার পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। কালক্রমে ব্রিটিশরা ভারত বিভাগ করে চলে গেলে আসাম প্রদেশের একাংশ সিলেট পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হয়। সিলেটের একাংশ ও ডিমাসা পার্বত্য ও সমতল অঞ্চল নিয়ে কাছাড় জেলা গঠিত হয়। এই জেলা বর্তমানে বিভক্ত হয়ে কাছাড়,হাইলাকান্দি,করিমগঞ্জ ও উত্তর কাছাড় পার্বত্য জেলা (ডিমা হাসাও)এই চার নতুন জেলায় রূপ নিয়েছে।

১৯৪৭ এ দেশবিভাগের পর থেকেই বরাক উপত্যকার কাছাড় জেলার অধিবাসীরা বৈষম্যের শিকার হতে থাকেন। আসাম অহমিয়াদের জন্য এবং বাঙ্গালীরা সেখানে বহিরাগত এমন বক্তব্য ও ওঠে। এখনও সেই প্রবণতা বিদ্যমান। জাতীয়তাবাদের জোয়ারে এক শ্রেণির রাজনীতিবিদরাও গা ভাসান। বঙ্গাল খেদা আন্দোলনও গড়ে ওঠে একসময়ে। সরকারিভাবে সেসব আন্দোলন ও সহিংসতা দমন হলেও পরবর্তী কালে সময়ে সময়ে এই জাতীয় সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে থাকে।

আসাম রাজ্য বিধান সভায় ভারতের স্বাধীনতার পর পর সদস্যরা বাংলা, হিন্দি বা ইংরেজিতে বক্তব্য রাখতে পারতেন।প্রথম আঘাত এলো ভাষার উপর। অহমিয়াকে একমাত্র রাজ্যভাষা ঘোষণা, শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে চালুর চেষ্টা এবং বিধানসভায় বাংলায় বক্তব্য রাখার অধিকার ক্ষুণ্ণ করে আইন চালুর বিরুদ্ধে আসামের বাঙ্গালী জনগণ দল-মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। আসাম রাজ্য সরকার কোনও গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথে গেলেন না। তাঁরা অহমিয়া জাতীয়তাবাদ এর সংকীর্ণ মানসিকতার নেতাদের প্রাধান্য দেয়ার নীতি গ্রহণ করেন। বাঙ্গালীরাও সংগঠিত হতে থাকেন।

অনুমান করা যায় আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বাহান্নর ঢাকার ভাষা আন্দোলন ও মানভূমের ভাষা আন্দোলনের সাফল্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।১৯৬০ সালের শেষে আসাম বিধান সভায় ভাষা বিল পাশ হয়। কফিনে শেষ পেরেক ঠোকা হয়ে গেলো। বাঙ্গালীরা ফুঁসে উঠলেন। লাগাতার আন্দোলন চলতে থাকলো।সত্যাগ্রহ,অসহযোগ, হরতাল, রেল রোখো,সংকল্প দিবস, ইত্যাকার অহিংস আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠল বরাক উপত্যকা। এই আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৬১ সালের ১৯মে তারিখে বরাকের কেন্দ্রবিন্দু শিলচরের রেলস্টেশনে ভোর থেকে আন্দোলনকারী সত্যাগ্রহীরা জড়ো হয়। হাজার হাজার ছাত্র যুবা জনতা রেলস্টেশন প্রাঙ্গন ও রেললাইনের উপর অবস্থান নেয়। তাঁদের সরাতে না পেরে সরকার নির্মম দমননীতির আশ্রয় নেয়। পুলিশ বাহিনী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ শুরু করে। নিহত হন পৃথিবীর প্রথম মহিলা ভাষা শহীদ কমলা ভট্টাচার্য সহ মোট ১১ জন ছাত্র যুবা। তাঁরাই একাদশ ভাষা শহীদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

তাঁদের আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষা দ্বিতীয় রাজ্যভাষার মর্যাদা পায়। শিলচর রেলস্টেশনের সামনে স্থাপিত হয় শহীদদের প্রতিকৃতি সম্বলিত শহীদ মিনার। যার পথ ধরে পরবর্তী কালে ছড়িয়ে পড়ে একই আকৃতির শহীদ মিনার সমগ্র বরাক উপত্যকায়। শিলচর রেলস্টেশনের নাম পাল্টে জনতা ভাষা শহীদ রেল স্টশন নাম রেখেছেন। যদিও পূর্ণ সরকারি স্বীকৃতি এখনও তার মেলেনি।

বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় একাদশ শহীদ সহ আন্দোলনকারীদের আত্মত্যাগ ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে। কিন্তু সব এলাকার বাঙ্গালিরা কি এই ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখেন? উত্তরটি ‘না’ সূচক। আমাদের কর্তব্য তাঁদের আত্মত্যাগের কাহিনী সকলকে জানানোর উদ্যোগ নেয়া যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম তাঁদের সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হতে শেখে। বরাক উপত্যকার একাদশ ভাষা শহীদ অমর রহে। বাংলা সহ সকল মাতৃভাষার অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত থাকুক।

এখনও সেই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন এমন অনেকেই বেঁচে আছেন। বেঁচে আছেন নেতৃত্ব দেয়াদের মধ্যে অনেকে। সাথে সাথে প্রত্যক্ষদর্শীদের ও সন্ধান পাওয়া এখনও কষ্টকর নয়। তবে সামনের সিকি শতাব্দীর মধ্যে প্রাকৃতিক নিয়মেই তাঁরা আর আমাদের মাঝে থাকবেন না। এখনই প্রকৃষ্ট সময় তাঁদের সাক্ষাৎকার রেকর্ড করে রাখার। পর্যাপ্ত গবেষণা হওয়া প্রয়োজন সেই আন্দোলন,তার কুশীলব এবং শহীদ পরিবার সমূহের বিষয়ে। বীরের সন্মান উপযুক্ত ভাবে হওয়া প্রয়োজন। বাংলা ভাষার এবং বাংলা ভাষাভাষী জনগণের মর্যাদা বিশ্বব্যাপী সমুন্নত রাখার জন্য আমাদের এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আরও অনেক বীরের আমাদের প্রয়োজন। যে মাটিতে বীরের যথাযোগ্য সন্মান নেই, সে মাটিতে বীর জন্মায় না।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও পরিব্রাজক

;

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;