চেঙ্গিস খান : রহস্যময় এক বিশ্ববিজেতা



আহমেদ দীন রুমি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
যার আগমন বদলে দিয়েছে গোটা পৃথিবীর ইতিহাস

যার আগমন বদলে দিয়েছে গোটা পৃথিবীর ইতিহাস

  • Font increase
  • Font Decrease

তিনি নিজেকে যতটা উচ্চতায় নিতে পেরেছিলেন; প্রাচ্য কিংবা পাশ্চাত্যের কোনো একক ব্যক্তির পক্ষেই তা সম্ভব হয়নি। নিজের গোত্রের প্রতি উদারতা, অনুসারীদের জন্য ভালোবাসা কিংবা শত্রুর প্রতি নৃশংসতা; সমস্তই কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছে। হয়েছেন নিন্দিত এবং নন্দিত। কিন্তু তারপরেও এক অনির্বচনীয় রহস্য তাকে কেন্দ্র করে। চেঙ্গিস খান—অনুসারীদের কাছে ঈশ্বরের দূত হিসাবে বিবেচিত ইতিহাসের এক প্রলয়ঙ্কর চরিত্র।

তার আগমনের আগে এবং পরে পৃথিবীর ফারাক ছিল আকাশ পাতাল। চেঙ্গিস খান বিখ্যাত মোঙ্গল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। জন্ম ১১৬২ সালে এবং মৃত্যু ১২২৭ সালে। তিনি ও তার বাহিনী সাম্রাজ্যের পরিধি এতটাই বৃদ্ধি করেন, রোমান শাসনকর্তারা চারশত বছরেও যা করতে পারেনি। হিন্দুধর্মে দেবতাদের অবতারবাদের ধারণা আছে। সেদিক থেকে দেখলে চেঙ্গিসকে অপদেবতার অবতার বলা যায়। ঐতিহাসিকরা তাকে “ঈশ্বরের অভিশাপ” বলে অভিহিত করেন। মঙ্গোলিয়ার ক্ষুদ্র এক গোত্রে জন্ম নিয়ে তিনি তৎকালীন পৃথিবীর নিয়ন্ত্রকে পরিণত হয়েছিলনে।

কিছু শৈশব

চেঙ্গিস খানের বাল্য নাম তেমুচিন। নামের অর্থ ইস্পাত। বাস্তবিক অর্থেই তার প্রমাণ দেখিয়েছেন। পিতা ইসুকাই ছিলেন বোরিজিন নামের এক মোঙ্গল যাযাবর গোত্রের প্রধান। অন্যান্য স্থায়ী কিংবা কৃষিনির্ভর গোত্রের মতো যাদের থিতু হবার খায়েশ ছিল না। তারচেয়ে ঢের পছন্দ ছিল শিকার এবং লুটপাট করা। তৎকালে একে অসভ্যতা বলে দেখার কোনো যুক্তি নেই। বরং বিশুদ্ধ বৈধ এবং পুরুষোচিত কাজ বলেই গণ্য হতো।

চেঙ্গিস খানের আগে যাযাবর তাতাররা ছিল বিক্ষিপ্ত


তারও আগের ঘটনা। হেলুন নামের এক কুমারী কন্যাকে বিয়ে দিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। যাযাবরদের বিয়ে, এক গাদা ঘোড়সওয়ার আর বেশ মালসামান সাথেই। বিপত্তি ঘটল পথে। বরযাত্রীর সুখযাত্রাকে পণ্ড করে দিয়ে নববধূকে উঠিয়ে আনলেন এক যাযাবর নেতা। তাকে দিলেন নিজের দ্বিতীয় স্ত্রীর সম্মান। সেই সংসারের দ্বিতীয় সন্তানই তিমুচিন। জন্মের সময় হাতে রক্ততিল থাকার কারণে মনে করা হয় ছেলে বয়সকালে বড় যোদ্ধা হবে। সেই বিশ্বাস পূরণ হতে দেরি হয়নি।

দুর্দিন ও গোত্রীয় দ্বন্দ্ব

তেমুচিনের বয়স তখন নয় বছর। পিতার বন্ধু ও প্রতিবেশি গোত্রের কোনো উৎসবে যোগ দেওয়া হয় সবাই মিলে। তার আগে কাজের জন্যই সেখানে তেমুচিনকে থাকতে হয়েছে বেশকিছু বছর। সেখানেই বোরতাই নামের এক বালিকা—পার্শ্ববর্তী গোত্রনেতার কন্যার সাথে বিয়ে হয় তার। কিন্তু বাড়ি ফেরার সময় ঘটে বিপত্তি। বিদ্রোহীদের হাতে বিষপানে মৃত্যু হয় তেমুচিনের পিতা ইসুকাইয়ের। উঠিয়ে নেওয়া হলো স্ত্রী বোরতাইকে। বিদ্রোহীরা বালক তেমুচিনকে অপসারণ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টাই করেছিল।

ওয়াং খানের দরবারে বালক তেমুচিন


তেমুচিনের পরিবারে তখন দুরবস্থা চলছে। দীর্ঘদিন ধরে শিকড়, ফল কিংবা মাছ খেয়ে কোনোমতে দিন গুজরান করছে। কিন্তু শিকারি বিড়াল শৈশবেই চেনা যায় বলে একটা কথা আছে। তেমুচিন তার পিতার বন্ধু কেরাইট গোত্রের অধিপতি ওয়াং খানের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। ওয়াং খান সম্মত হলে সৈন্য সাজিয়ে রওনা দিলেন বিদ্রোহী মেরকাইট গোত্রের মোকাবেলায়।

সাফল্য এবং উত্থান

প্রশ্ন বোরতাইয়ের প্রতি ভালোবাসা এবং নিজ বংশের সম্মান রক্ষা—দুটোই। তেমুচিন ওয়াং খানের সাহায্য নিয়ে মেরকাইটদের সফলভাবে পদানত করেন। এই বিজয় তার পরবর্তী সাফল্যের পথ অনেকটাই সুগম করে দেয়। বংশের প্রায় হতাশ মানুষগুলো তাকে কেন্দ্র করে আবার একত্রিত হতে থাকে। তারপর তেমুচিন মনোযোগ দিলেন পিতৃশত্রু তাতার গোত্রের দিকে। এবং পরাজিত করলেন শোচনীয়ভাবে।

জামুকার বিরুদ্ধে বিজয় তাকে গোত্রের ভরসায় পরিণত করে


জামুকা নামের প্রভাবশালী এক গোত্রপতি তেমুচিনের উত্থানকে মেনে নিতে পারেনি। তাই, মেরকাইট, নাইমান এবং আরো কয়েকটি বিদ্রোহী গোত্রকে একত্রিত করে জোট গঠন করেন তেমুচিনের বিরুদ্ধে। দুই বাহিনী মুখোমুখি হলো ১২০৪ সালে। জামুকা পরাজিত এবং বন্দী হলো, পরে তাকে হত্যা করা হয়। এরপর থেকে মোঙ্গল জাতির ওপর তেমুচিনের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হলো। ১২০৬ সালে কারাকোরামে কুরিলতাই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলে তিনি চেঙ্গিস খান উপাধি গ্রহণ করেন। রাজধানীর মর্যাদা পায় কারাকোরাম।

চীনের বিরুদ্ধে জয়যাত্রা

একসময়ের গৌরবে ভরা চীন তখন স্তিমিয়ে পড়েছে অনেকাংশেই। উত্তরে চীন এবং দক্ষিণে সাঙ বংশ রাজত্ব করত। চেঙ্গিস খান সবার আগে সাঙ বংশকেই লক্ষ্যবস্তু করে আক্রমণ করলেন। ১২১১ সালের এই অভিযানে বিশাল অংশ তার অধিকৃত হয়। ১২১৪ সালে চীন বংশের রাজধানী পিকিং অবরোধ করলে রাজা ভীত হয়ে পাঠায় সন্ধিপ্রস্তাব। সেই সাথে দেওয়া হয় অঢেল অর্থ, মণিমুক্তা এবং উপঢৌকন। উপহার এবং নবপরিণীতা চীনা রাজকুমারিকে নিয়ে সেই দফায় ফিরে এলেও মন ঘুরতে দেরি হয়নি। ১২১৫ সালে চেঙ্গিস খান আবার পিকিং অবরোধ করে এ পর্যায়ে দখল করে নেন।

যুদ্ধক্ষেত্রে নতুন পদ্ধতি শত্রু পক্ষের ওপর একক আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়


এদিকে দেখা দেয় অন্য সমস্যা। তাতার নেতা গুরখান বিদ্রোহ করে বসে চেঙ্গিস খানের বিরুদ্ধে। কারাকিতাইয়ের এই বিদ্রোহ দমন করার জন্য তিনি সেনাপতি জেবিকে প্রেরণ করেন। গুরখান পরাজিত ও নিহত হলে গোটা অঞ্চলে চেঙ্গিসের একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

খাওয়ারিজম শাহের সাথে দ্বন্দ্ব

খাওয়ারিজমের শাসক তখন মুহম্মদ শাহ। বাগদাদ কেন্দ্রিক মুসলিম খিলাফতের পতনের সুযোগে মুহম্মদ শাহ মধ্য এশিয়ায় সুবিশাল এক রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। চেঙ্গিস খানের সাথে তার দ্বন্দ্বের কারণ মূলত উভয়ের উচ্চাভিলাস এবং আত্মাভিমান। মোঙ্গল দূত হত্যা করার কারণেই অপমানের প্রতিশোধ নিতে যুদ্ধ ঘোষণা করেন চেঙ্গিস খান। ১২১৯ সালে চালানো এই সুবিশাল অভিযানে হতাহতের সংখ্যা ছিল প্রচুর। ছয় মাসের অবরোধের পর নিয়ন্ত্রণে আসে উস। ধীরে ধীরে দখল প্রতিষ্ঠিত হয় বোখারা, হিরাত, বলখ, খোজান্দ, তাসখন্দ, সমরখন্দ প্রভৃতি স্থানগুলো। ঐতিহাসিক গীবনের মতে, এই চার বছরে যে পরিমাণ ধ্বংস হয়েছে, তা পাঁচশত বছরেও পুনর্গঠন করা যায়নি।

প্রত্যেকটা নগরী তছনছ হয়ে যায় তাদের তাণ্ডবে


মুহম্মদ শাহ পালিয়ে জীবন যাপনের এক পর্যায়ে ১২২০ সালে মারা যান। মৃত্যুর পর তার স্থান দখল করেন পুত্র জালালউদ্দীন। দক্ষ এবং চৌকস যোদ্ধা ছিলেন তিনি। বেশ কয়েকবার মোঙ্গল বাহিনীকে পরাজিতও করেছিলেন। কিন্তু দিনশেষে ১২২১ সালের দিকে পিতার ভাগ্য বরণ করতে হয়। এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে ১২৩১ সালে আততায়ীর হাতে তার মৃত্যু হয়।

শেষের দিনগুলো

ততদিনে চেঙ্গিস এশিয়ার প্রায় পুরো অংশ দখল করে ফেলেছে। দুই সেনাপতি জেবি এবং সেবুতি গিয়ে দখল করেন উত্তর-পশ্চিম পারস্য। তারপর সেনাপতিরা রাশিয়ার দিকে অগ্রসর হয় এবং খিবা অধিকার করে। ১২২৫ সালে চেঙ্গিস খান ফিরে আসেন দেশে। কিছুদিন পরেই চীনের সাঙ সাম্রাজ্যের অংশে বিদ্রোহ দেখা দেয়। সারাজীবন ঘোড়ার পিঠে বসে থেকে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। তারপরেও বিদ্রোহ দমনের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এই রওনাই তার পরবারের উদ্দেশ্যে রওনায় পরিণত হয়। ১২২৭ সালে চীন পৌঁছানোর পূর্বেই প্রাণত্যাগ করেন এই প্রতাপশালী পুরুষ।

শাসন ও আইনব্যবস্থাতেও তার ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য


চেঙ্গিস খান কেবল তার সময়ের না; বরং গোটা ইতিহাসের এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী শাসক। তার সামরিক দক্ষতার কারণেই মোঙ্গল বাহিনী এক অপরাজেয় শক্তিতে পরিণত হয়। পরবর্তী কয়েক প্রজন্ম ধরে মোঙ্গল বাহিনী এশিয়া এবং ইউরোপের রাজাদের জন্য ত্রাস হিসাবে গণ্য হতে থাকে। প্রশাসক হিসাবেও তার খ্যাতি ব্যাপক। চীনা প্রশাসক ইয়েলু চুৎসাইয়ের তত্ত্বাবধানে প্রশাসনকে ঢেলে সাজান, সৃষ্টি করেন গোয়েন্দা এবং বিচার বিভাগ। ধর্মের দিক থেকে তাকে সহনশীল বলেই গণ্য করা হয়। পূর্বতন চীনা শিক্ষা ও সংস্কৃতি থেকে প্রভাবিত হয়ে নিজের রাজ্যকেও চালিত করেন সেই পথে। তার প্রবর্তিত আইনবিধান পরিচিত ‘উলাঙ্গ ইয়াছা’ নামে। 

মৃত্যুর পূর্বে তার রাজ্য বিস্তৃত ছিল কাস্পিয়ান থেকে প্রশান্ত মহাসাগর অব্দি


চেঙ্গিস খানের চারপুত্র—চাগতাই, ওগোতাই, জুসি এবং টুলি। পিতার মৃত্যুর পর তারা পূর্ববর্তী বেগেই জয় করতে থাকে একের পর এক রাজ্য। মুসলিম বিশ্বের ভিত্তিভূমি বাগদাদের পতন ঘটে ১২৫৮ সালে হালাকু খানের হাতে। তিনি ছিলেন চেঙ্গিসের নাতি। ছোট্ট একটা গোত্রের অধিপতির পুত্র হিসাবে জন্মগ্রহণ করে চেঙ্গিস খান নিজেকে অধিষ্ঠিত করেছেন পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তর সাম্রাজ্যের অধিপতিতে। তার রাজ্য বিস্তৃত হয়েছিল পূর্বে প্রশান্ত মহাসাগর থেকে পশ্চিমে কৃষ্ণসাগর পর্যন্ত।

   

এক ঘরেই তিন বলী



তাসনীম হাসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
দুই ছেলের সঙ্গে খাজা আহমদ বলী/ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

দুই ছেলের সঙ্গে খাজা আহমদ বলী/ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

  • Font increase
  • Font Decrease

চুল থেকে দাড়ি-সবই সফেদ। হাঁটাচলায় মন্থর। স্বাভাবিকভাবেই প্রবীণের বয়সটা আঁচ করা যায় প্রথম দেখাতেই। কিন্তু তার ষাটোর্ধ্ব বয়সটা যেন কেবল ক্যালেন্ডারের হিসাব। বয়স যতই ছোবল বসানোর চেষ্টা করুক না কেন-তিনি যেন এখনো ২৫ এর টগবগে তরুণ। সেই বলেই তো ফুসফুসের রোগবালাইকে তুড়ি মেরে ঐতিহাসিক আবদুল জব্বারের বলীখেলা এলেই হাজির হয়ে যান রিংয়ে। এক দুবার নয়, এবার কিনা পূর্ণ হলো সুবর্ণজয়ন্তী!

চট্টগ্রামের অন্যতম আবেগের ঠিকানা ঐতিহাসিক এই বলীখেলার বড় বিজ্ঞাপন হয়ে ওঠা এই বলীর নাম খাজা আহমদ বলী। ৫০ বছর ধরে বলীখেলায় অংশ নিয়ে দর্শকদের আনন্দ দিয়ে যাওয়া এই বলীর এখন পড়ন্ত বয়স। ফুসফুসে বাসা বেঁধেছে রোগ। কানেও শোনেন কম। খাজা আহমদ বুঝে গিয়েছেন, তার দিন ফুরাচ্ছে। কিন্তু তিনি যে বলীখেলার স্মৃতি থেকে সহজেই মুছে যেতে চান না। সেজন্যই উত্তরসূরী হিসেবে এরই মধ্যে গড়ে তুলেছেন নিজের দুই ছেলেকে। বাবার পাশাপাশি দুই ভাইও এখন বলীখেলার নিয়মিত প্রতিযোগী।

খাজা আহমেদ বলীর বাবাও বলীখেলায় অংশ নিতেন। বাবার সঙ্গে বলীখেলায় এসে ১৯৭৪ সালে শখের বসে খেলতে নামেন খাজা আহমেদও। বয়স তখন ১২ বছরের আশপাশে। সেই শুরু, আর কোনোদিন মিস করেননি বলীখেলায় অংশ নেওয়া। একবার চ্যাম্পিয়নের গৌরবও অর্জন করেছিলেন। বহু বছর ধরে খাজা আহমেদ বলী ও সত্তরোর্ধ্ব মফিজুর রহমানের ‘বলীযুদ্ধ’ জব্বারের বলীখেলার অন্যতম আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে এই দ্বৈরথ হয়তো আর দেখা যাবে না। দুই বছর আগে উৎপত্তি হওয়া ফুসফুসের রোগটা ইদানিং যে খাজা আহমদকে বেশিই ভোগাচ্ছে। সেজন্য গতবছর অবসরের ঘোষণাও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এবার দুই ছেলেকে নিয়ে বলীখেলায় এসে আবেগ সামলাতে পারেননি খাজা আহমেদ। ছেলেদের সঙ্গে নিজেও নেমে পড়েন রিংয়ে। সেজন্য আরও একবার মফিজুর রহমান-খাজা আহমেদের লড়াই দেখল হাজারো দর্শক। যদিওবা যৌথ বিজয়ী ঘোষণা করে দুজনের মুখেই হাসি ফুটিয়েছেন রেফারি।

প্রতিপক্ষ মফিজুর রহমানের সঙ্গে বলী-যুদ্ধে খাজা আহমদ

কেন অবসর ভাঙলেন এমন প্রশ্নে হাসি খেলা করে যায় খাজা আহমেদ বলীর মুখে। বলতে থাকেন, ‘বয়সের কারণে শরীর দস্ত। ফুসফুসও ঠিকঠাক কাজ করছে না। সেজন্য অবসর নিয়েছিলাম। কিন্তু বলীখেলায় আসার পর দেখলাম দর্শকেরা সবাই অনুরোধ করছেন। সেজন্য মন বলল, না খেললে দর্শকদের প্রতি অন্যায় হবে। আর আবেগ ও ভালোবাসার কাছে বয়স-রোগ পেরেছে কবে?’

তবে এখানেই সব শেষ, বলে দিয়েছেন খাজা আহমেদ বলী। বলেছেন, ‘বয়স হয়ে গেছে। মনে হয় না আর খেলতে পারব। অসুখটা বেশি যন্ত্রণা দিচ্ছে। সেজন্য মনে মনে মেনে নিয়েছি এটাই আমার শেষ অংশগ্রহণ। বাকিটা আল্লাহর হাতে।’

তিন ছেলে ও এক মেয়ের বাবা খাজা আহমদের বাড়ি চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গায়। কৃষিকাজ করেই চলে সংসার। তবে বলীখেলা এলে সব কাজ বাধ। কয়েকদিন ধরে চলে প্রস্তুতি। নিজের স্মৃতি ধরে রাখতে এরই মধ্যে খাজা আহমেদ নিজের দুই ছেলেকে গড়ে তুলেছেন বলী হিসেবে। ২০১২ সাল থেকে বলীখেলায় নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন তার বড় ছেলে মো. সেলিম। গত বছর থেকে যোগ দিয়েছেন ছোট ছেলে মো. কাইয়ুমও। এখন বলীখেলার আগে দুই ছেলেকে নিয়ে চলে খাজা আহমদের প্রস্তুতি।

জানতে চাইলে সেলিম বলেন, ‘বাবার কাছ থেকে আমরা বলীখেলা শিখেছি। বয়সের কারণে বাবা এখন অসুস্থ। হয়তো আর খেলা হবে না। সেজন্য তার উত্তরসূরী হিসেবে আমরা বলীখেলায় অংশ নেব সামনের দিনগুলোতে। এটা শুধু পরিবারের বলীর প্রজন্ম ধরে রাখার জন্য নয়, তরুণদের মাদক-সন্ত্রাসী কার্যক্রম থেকে দূরে রাখতে উদ্বুদ্ধ করার উদ্যোগও।’

বাবাকে পাশে রেখে একই কথা বললেন ছোট ছেলে মো. কাইয়ুমও। বলেন, ‘হয়তো বাবা আর খেলবেন না। তবে তিনি না খেললেও যতদিন বেঁচে থাকবেন বলীখেলা দেখতে আসবেন। রিংয়ের নিচে দাঁড়িয়ে আমাদের উৎসাহ দিয়ে যাবেন।’

ছেলের কথা শুনে আবেগ খেলে যায় খাজা আহমেদ বলীর মনে। কাঁধের গামছাটা হাতে তুলে নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বললেন, ‘না খেললেও যতদিন বাঁচি এখানে, এই বলীর মাঠ লালদীঘি ময়দানে ছুটে আসব। এটা থেকে দূরে থাকতে পারব না।’

খাজা আহমেদ যখন কথা বলছিলেন দূরে কোথাও তখন মাইকে বাজছিল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই অমর গান। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় অক্লান্ত গলায় গেয়ে চলেছেন, যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে, আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে...

;

চাকরি ছেড়ে বসের সামনেই ঢোল বাজিয়ে নাচলেন যুবক!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নিত্যদিনের অফিসের কর্মপরিবেশে অনেকের মধ্যেই 'বিরক্তি' চলে আসে। তবুও ধৈয্য নিয়ে সব সহ্য করে টিকে থাকার জন্য চালিয়ে যান লড়াই। তবে এ যাত্রায় সকলের দ্বারা টিকে থাকা সম্ভব হয় না। অফিসের 'বিষাক্ত' কর্মপরিবেশে অনেকেই ভোগেন মানসিক সমস্যায় কিংবা ব্যক্তিজীবনে। এমন পরিবেশ থেকে বাঁচতে একেক জন একেক পন্থা অবলম্বন করে থাকেন।

তবে অনিকেত নামের এক যুবক এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে যা করেছেন নেট দুনিয়ায় তা রীতিমতো ভাইরাল। এসব থেকে মুক্তি পেতে চাকরিটাই ছেড়ে দিয়েছেন এই যুবক। এতেই ক্ষান্ত হননি তিনি, বসের সামনেই ঢাকঢোল বাজিয়ে নেচে উদযাপন করেছেন এমন মুহূর্তের।

ঘটনাটি ভারতের পুনে রাজ্যের। অনিকেত নামের ওই যুবক বিক্রয় সহযোগী হিসেবে চাকরি করতেন।

তার এমন উদযাপনের একটি ভিডিও ইন্সটাগ্রাম শেয়ার করেছেন অনীশ ভগত।

ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, গত তিন বছর ধরে এই কোম্পানির সাথে কাজ করেও বেতন খুব একটা বাড়েনি। এছাড়াও অফিসের বসের দ্বারাও তাকে বিভিন্ন সময়ে অপমানিত হতে হয়েছে।

তাই তার কাজের শেষ দিনে বন্ধুরা অফিসের বাইরে ঢোল নিয়ে জড়ো হয়েছিলেন এবং নেচেছিলেন। ভিডিওতে দেখা গেছে, এ ঘটনায় তার বস অনেক উত্তেজিত হয়েছেন। পাশাপাশি তার বস লোকজনকে ধাক্কা দিয়েছেন এবং চিৎকারও করেছেন।

ভিডিওটির ক্যাপশনে ভগত লিখেছেন, আমি মনে করি আপনারা অনেকেই এর সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারবেন। আজকাল বিষাক্ত কাজের সংস্কৃতি খুব বেশি দেখা যায়। সম্মান এবং অধিকারের অভাব খুবই সাধারণ। অনিকেত তার পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। আমি আশা করি এই গল্প মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে।

পোস্ট করা ভিডিওটি এক মিলিয়নেরও (১০ লাখের বেশি) বেশি ভিউ পেয়েছে। পোস্টটিতে অসংখ্য লাইক ও কমেন্টও রয়েছে।

একজন ইন্সটাগ্রাম ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি জানি না কেন এটি আমাকে এত সন্তুষ্ট করেছে।'

আরেকজন লিখেছেন, 'নাচটি আমাকে অন্য মাত্রার তৃপ্তি দিয়েছে।'

'আপনি সত্যিই আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে ইতিবাচক এবং উত্সাহী ব্যক্তি'- তৃতীয় একজন ঠিক এভাবেই নিজের অনুভূতি জানিয়েছেন।

তথ্যসূত্র: হিন্দুস্থান টাইমস 

;

অভয়ারণ্যে মানুষ যখন বন্দিখাঁচায়



প্রমা কোয়েল, ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চিড়িয়াখানা, নানানরকম পশুপাখি ও প্রাণীর বন্দিশালা। কেবল রং-বেরঙের চিড়িয়াই নয়; বাঘ, সিংহ, ভালুক, বানর, গণ্ডারসহ কত বন্যপ্রাণীই না খাঁচায় বন্দি থাকে!

চিড়িয়াখানায় রাখতে বন্য প্রাণীদের প্রকৃতির স্বাধীন জীবন থেকে ছিনিয়ে আনা হয়। তাদের খাঁচায় বন্দি করা হয় যেন, মানুষ তাদের দেখে আনন্দ পায়। অনেক প্রাণীর জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি খাঁচাতেই কেটে যায়।

ছোট থেকে বড় সব বয়সের মানুষই চিড়িয়াখানায় ঘুরতে যেতে পছন্দ করেন। শিশুরা না হয় অবুঝ! তবে যারা প্রাপ্তবয়স্ক তারাও চিড়িয়াখানায় এই বন্দি প্রাণীদের জীবনকে গভীরভাবে অনুধাবন করতে পারেন না।

এশিয়ার বড় দেশ চীনে রয়েছে, এক অদ্ভুত চিড়িয়াখানা। চংকিংয়ে অবস্থিত সেই চিড়িয়াখানার নাম ‘লেহে লেদু বন্যপ্রাণী চিড়িয়াখানা’। একে ‘রিভার্স জু’ (বিপরীত চিড়িয়াখানা) বলেও ডাকা হয়।

এখানেও মানুষ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে পশু দেখতে আসেন। তবে একেবারেই ভিন্ন উপায়ে। মূলত, একটি খাঁচা রয়েছে, যেখানে মানুষদের সেই খাঁচায় পুরা হয়। তারপর সেই খাঁচাবন্দি মানুষদের নিয়ে রাখা হয়, অভয়ারণ্যে। সেখানে বন্য প্রাণীরা মানুষের খাঁচার চারপাশে অবাধে ঘুরতে থাকে। চিড়িয়াখানায় বন্দি প্রাণীদের বন্দিজীবনের এক প্রতীকী দৃশ্য!

অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষদের জন্য এটি এক নতুন অভিজ্ঞতা!

অভয়ারণ্যে খাঁচায় বন্দি মানুষ, ছবি-সংগৃহীত

খুব কাছে থেকে হিংস্র বন্যপ্রাণীদের মুক্ত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যেমন লোমহর্ষক, ঠিক তেমনই আতঙ্কজনকও হতে পারে। বিপরীতধর্মী এই চিড়িয়াখানাটি সবার জন্য প্রথম উন্মুক্ত করা হয়, ২০১৫ সালে। তখন বিশ্বের সংবদমাধ্যমের শিরোনাম কেড়েছিল এ চিড়িয়াখানাটি।

একটি শক্ত লোহার খাঁচাবেষ্টিত দর্শনার্থীদের একটি ট্রাকে তুলে অভয়ারণ্যে রেখে দেওয়া হয়। সেখানে তাদের ঘিরে ধরে ঘুরতে থাকে বাঘ, ভালুক, সিংহ ইত্যাদি হিংস্র প্রাণী।

এ বিষয়ে চিড়িয়াখানার প্রধান চ্যান লিয়াং বলেন, দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা রক্ষার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। খাঁচার ফাঁকা অংশ দিয়ে হাতের আঙুলও বের না করার নির্দেশনা দেওয়া থাকে।

তবে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই চিড়িয়াখানাটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে অনেক। এর নৈতিকতা নিয়ে অনেকে প্রশ্নও তুলেছেন।

অনেকে মনে করেন, এরকম ব্যবস্থাপনায় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। কারণ, শিকারী প্রাণীগুলো প্রচণ্ড হিংস্র। তাই, সে কারণে যে কোনো সময় বিপজ্জনক ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

আবার এরকম চিন্তাভাবনার প্রশংসাও করেছেন অপর একটি পক্ষ। তাদের বক্তব্য, পৃথিবীটা কেবল মানুষদের নয়। প্রকৃতিতে সব প্রাণীদের একটা ভারসাম্য থাকা প্রয়োজন। তাদের বন্দি করে রাখা মানুষের উচিত নয়। কারণ, মুক্ত প্রকৃতিতে বিরাজ করার অধিকার সব প্রাণীরই রয়েছে।

তাদের মন্তব্য, আমরা প্রাণীদের আবাসস্থল বনজঙ্গল সব উজাড় করেছি। সে কারণে তাপমাত্রাও অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। আবার প্রাণীদের বন্দি রেখে তাদের জীবন চরম দুর্বিষহ করে তুলি।

চাইলে এবং সুযোগ পেলে এই ধরনের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিতে চিড়িয়াখানাটি ঘুরে আসতে পারেন বৈকি!

তথ্যসূত্র: এনিমেল অ্যারাউন্ড দ্য গ্লোব

;

৫ বছরের শিশুর বিস্ময়কর প্রতিভা!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বয়স সবে ৫ কিংবা ৬। এই বয়সেই তার প্রতিভা দেখে অবাক হবে যে-কেউ!

গত বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সের (সাবেক টুইটার) একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এখন পর্যন্ত ভিডিওটি ১ মিলিয়নের (১০ লাখের বেশি) বেশি মানুষ দেখেছেন। খবর এনডিটিভি। 

ভিডিওতে রিলি নামের ওই শিশুটিকে প্রথমে শ্বাস নিতে দেখা যায়। তারপর সে একটি শক্তিশালী গর্জন দিয়ে শ্বাস ছাড়ে। ওই গর্জনটি হুবুহ সিংহের গর্জনের অনুরূপ।

রিলির মা অ্যামি ভিডিওটি এক্সে শেয়ারের পরই তা ভাইরাল হয়ে যায়। শিশুটির এমন নিখুত দক্ষতা দেখে মুগ্ধ দর্শকরা। ভিডিওটিতে অনেকেই নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, এত অল্প বয়সে এমন বাস্তবসম্মত গর্জন তৈরি করার রিলির ক্ষমতার বিস্ময় প্রকাশ করে।

আরেকজন লিখেছেন, শিশুরা খুব দ্রুত শিখে। তার এমন প্রতিভা সত্যিই অবাক করার মতো।

;