‘দুর্ঘটনাপ্রসূত’ আবিষ্কার এন্টিবায়োটিকের ইতিহাস



সাইফুল মিল্টন, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
পৃথিবীর প্রথম এন্টিবায়োটিক পেনিসিলিন

পৃথিবীর প্রথম এন্টিবায়োটিক পেনিসিলিন

  • Font increase
  • Font Decrease

“আমি পেনিসিলিন উদ্ভাবন করিনি বরং প্রকৃতিই তা করেছে। এটা আমার দুর্ঘটনাপ্রসূত আবিষ্কার মাত্র”—পৃথিবীর প্রথম এন্টিবায়োটিক পেনিসিলিন আবিষ্কার সম্বন্ধে এটা ছিল আবিষ্কারক বিজ্ঞানী অ্যালেকজান্ডার ফ্লেমিংয়ের সরল স্বীকারোক্তি।

সাধারণভাবে এন্টিবায়োটিক বলতে বোঝায় বিভিন্ন অণুজীব থেকে প্রাপ্ত উপাদান যা মানবদেহে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করে বা এগুলোকে মেরে ফেলে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের যুগান্তকারী আবিষ্কার এন্টিবায়োটিক আজ রোগ নির্মূলে বহুল ব্যবহৃত ঔষধ। বিজ্ঞানের অন্যান্য আবিষ্কারের মতো এন্টিবায়োটিক আবিষ্কারেরও আছে সুদীর্ঘ ইতিহাস।

এন্টিবায়োটিকের ইতিহাসকে আলোচনার সুবিধার্থে আমরা দুইভাগে ভাগ করতে পারি, প্রাচীন কালের ইতিহাস ও আধুনিক ইতিহাস। প্রাকৃতিক উপাদানের যে রোগ নিরাময়ের ক্ষমতা আছে, তা এন্টিবায়োটিক আবিষ্কারের বহু পূর্বে মানুষের জানা ছিল। প্রাচীনকালে মানুষ ক্ষত নিরাময়ে বিভিন্ন জৈব পদার্থ ব্যবহার করত। যেমন—
➤ গ্রিক ও ভারতীয়রা ক্ষতস্থানের সংক্রমণ রোধে ছত্রাক ও অন্যান্য উদ্ভিদ ব্যবহার করত।
➤ রাশিয়ানরা আঘাতপ্রাপ্ত স্থানের ঘা শুকাতে ঈষৎ উষ্ণ মাটি ব্যবহার করত।
➤ সুমেরীয়ও সভ্যতার সময়ে চিকিৎসকরা কচ্ছপের খোল ও সাপের চামড়া প্রতিষেধক হিসাবে ব্যবহার করত।
➤ ব্যাবিলনীয়রা ব্যাঙের পিত্ত ও টক দই দিয়ে ওষুধ তৈরি করে চোখের সংক্রমণ রোধ করত।
➤ প্রাগৈতিহাসিক আমলে সিংহলী সৈন্যরা ক্ষত নিরাময়ে অয়েল কেক ব্যবহার করত।
➤ বহু বছর আগে চীনে সয়াবিনের ছত্রাক আক্রান্ত বীজ বিভিন্ন ফোঁড়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হতো।

এন্টিবায়োটিকের আবিষ্কারক স্যার আলেকজান্ডার ফ্লেমিং ◢ 


আধুনিক এন্টিবায়োটিক আবিষ্কারে অগ্রগামী ভূমিকা রাখার জন্য চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে স্যার আলেকজান্ডার ফ্লেমিং (১৮৮১-১৯৫৫) নামটি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি ছিলেন একাধারে চিকিৎসক, উদ্ভিদবিজ্ঞানী, ফার্মাকোলজিস্ট ও অণুজীববিজ্ঞানী (ব্যাকটেরিয়োলজিস্ট)। ১৮৮১ সালে স্কটল্যান্ডের লোচফিল নামক ছোট্ট শহরতলীতে এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ফ্লেমিং। সেখানে স্কুল জীবনের পাঠ চুকিয়ে ১৮৯৫ সালে লন্ডনে বড় ভাই থমাস ফ্লেমিংয়ের বাসায় ওঠেন। ভর্তি হন লন্ডন রিজেন্ট পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে যা বর্তমানে ওয়েব মিনিস্টার বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে উচ্চমাধ্যমিক পড়াশোনা শেষ করে যোগ দেন সেনাবাহিনীতে। ফ্লেমিং ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর স্কটিশ রেজিমেন্টের সদস্য ছিলেন। ১৯০১ সালে চাচার পরামর্শ ও অর্থনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অধীনে সেন্ট মেরি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন এবং এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। সেখানে অসাধারণ ফলাফল করায় কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে সোনার মেডেল প্রদান করে। বিজ্ঞানী ফ্লেমিংয়ের ইচ্ছা ছিল সার্জন হবার কিন্তু ঘটনাচক্রে একই মেডিকেল কলেজের ইনকুলেশন ডিপার্টমেন্টে গবেষক হিসাবে যোগ দেন।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মানুষের মৃত্যুর মিছিল গভীর দাগ কাটে তরুণ গবেষক ফ্লেমিংয়ের মনে


১৯১৪ সালে শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। আনুমানিক ৬০ মিলিয়ন ইউরোপীয় ও ৭০ মিলিয়ন সেনাসদস্য ইতিহাসের এই ভয়াবহতম সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। অ্যালেকজান্ডার ফ্লেমিং এসময়ে সেনাবাহিনীর রয়্যাল মেডিকেল কোরের সদস্য হিসাবে কর্মরত ছিলেন। নিজের চোখে দেখা মহাযুদ্ধে মানুষের মৃত্যুর মিছিল গভীর দাগ কাটে তরুণ গবেষক ফ্লেমিংয়ের মনে। চারিদিকে মৃত্যু আর মৃত্যু, মানুষ যেন মানুষের শত্রু। তার চেয়েও বড় শত্রু আহতদের মধ্যে ‘জীবাণু সংক্রমণ’ যা থেকে মানুষের জীবন বাঁচাতে চিকিৎসকরা অনেকটা অসহায় ছিল সেসময়। এটাই ফ্লেমিংকে এন্টিবায়োটিক আবিষ্কারের প্রাথমিক অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল।

১৯১৮ সালে বিশ্বযুদ্ধ শেষে ফ্লেমিং সেন্ট মেরি হাসপাতালে ইনকুলেশন ডিপার্টমেন্টের অ্যাসিস্টেন্ট ডিরেক্টর পদে পুনর্যোগদান করে গবেষণায় মনোনিবেশ করেন। ১৯২৮ সালের এক স্নিগ্ধ বিকেলে ফ্লেমিং একমাসের অবকাশ যাপন শেষে যখন ল্যাবরেটরিতে ফিরে আসেন তখন এক আশ্চর্য জিনিস দেখেন। তিনি দেখেন তার একটি পরীক্ষা পাত্রে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া স্টেফাইলোকক্কাস এক প্রকার ছত্রাকের আবির্ভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। তিনি এই ছত্রাকের নাম দেন পেনিসিলিন। পেনিসিলিনের আবিষ্কার সেসময়ের দুরারোগ্য ব্যাকটেরিয়া বাহিত রোগসমূহ থেকে মানুষকে বাঁচাতে পারবে বুঝেও এর উৎপাদনের স্বল্পতার কারণে বিজ্ঞানী মহল ফ্লেমিংয়ের আবিষ্কার নিয়ে পরবর্তী এক যুগ তেমন একটা গা করেনি।

এন্টিবায়োটিকের আবিষ্কার ও বাজারজাতকরণের স্বীকৃতিস্বরূপ নোবেল পুরস্কার পান এ তিন বিজ্ঞানী

১৯৪০ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ব্রিটিশ বিজ্ঞানী হাওয়ার্ড ফ্লোরি (১৮৯৮-১৯৬৮) ও আর্নেস্ট চেইন (১৯০৬-১৯৭৯) এক পরীক্ষার মাধ্যমে পেনিসিলিন বিশুদ্ধকরণ ও ঘনীভবন প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করে পেনিসিলিনের বাণিজ্যিক উৎপাদনের দ্বার উন্মুক্ত করেন। পরবর্তীকালে ১৯৪৫ সালে এই দুই বিজ্ঞানীর সাথে পেনিসিলিনের আবিষ্কারক স্যার অ্যালেকজান্ডার ফ্লেমিং নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। ফ্লোরি ও চেইনের গবেষণার কিছুদিনের মধ্যেই বেজে ওঠে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা। এ মহাযুদ্ধে আহতদের জীবাণু সংক্রমণে মৃত্যু ঠেকাতে পেনিসিলিন বহুল পরিমাণে ব্যবহৃত হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই কল্যাণকর আবিষ্কারের ফলে অসংখ্য মানুষ প্রাণে বেঁচে ঘরে ফেরেন। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিপুল ব্যয়ের কারণে ব্রিটেনের জন্য এন্টিবায়োটিক গবেষণা ও উৎপাদনের খরচ বহন করা কঠিন হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় এন্টিবায়োটিকের উৎপাদন ও বিপণনের মাধ্যমের বিশ্ববাসীকে এর সুফল দিতে এগিয়ে আসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। উৎপাদনে ব্রিটিশদের ‘ফ্লাস্ক পদ্ধতির’ পরিবর্তে মার্কিনীরা কারখানায় স্থাপন করে ভারী যন্ত্রপাতি। এতে উৎপাদন বহুগুণে বেড়ে যায়।

এন্টিবায়োটিক উৎপাদন কারখানায় ভারী যন্ত্রপাতি


এরপর এন্টিবায়োটিকের ইতিহাস শুধুই এগিয়ে যাওয়ার ইতিহাস। আমেরিকার পাশাপাশি ডেনমার্ক, জার্মানি, ইংল্যান্ড, ভারত প্রভৃতি দেশে নতুন নতুন এন্টিবায়োটিক গ্রুপ আবিষ্কৃত হয় যা সিফিলিস, গনেরিয়া, অ্যান্থ্রাক্স, গ্যাংগ্রিন, ডিপথেরিয়া, মেনিনজাইটিসসহ অনেক জীবাণুবাহিত রোগের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করে।

১৯৪৫ সালে নোবেল পুরস্কার হাতে নিয়ে স্যার অ্যালেকজান্ডার ফ্লেমিং বিশ্বকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, এন্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার প্রকৃতিতে এন্টিবায়োটিক সহনীয় (রেজিস্ট্যান্ট) ক্ষতিকারক অণুজীবের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে যা বুমেরাং হতে পারে। ফ্লেমিংয়ের এই সতর্কবার্তা বর্তমান এন্টিবায়োটিক পরিস্থিতিতে ধ্রুব সত্যে পরিণত হয়েছে। তাই তো আজ আমরা দেখি অনেক রোগীদের ওপর এন্টিবায়োটিক চিকিৎসা কোনো প্রভাব রাখতে পারে না। এন্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে প্রকৃতিতে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট জীবাণুর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। শরীরের জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়াও এন্টিবায়োটিকের অতি ব্যবহারে ধ্বংস হয়ে যায়, যার কারণে প্রকারান্তরে মানুষের মৃত্যু ঘটতে পারে।

সবশেষে এন্টিবায়োটিক নিয়ে একটা ঘটনা বলি। ভারতের হায়দ্রাবাদে পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ওষুধ শিল্প এলাকা অবস্থিত। এখানে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নাকি প্রয়োজনের অতিরিক্ত পরিমাণ এন্টিবায়োটিকের কাঁচামাল উৎপাদন করে। এই অতিরিক্ত এন্টিবায়োটিক উপাদান সংলগ্ন নদীতে গিয়ে মেশে। এতে হায়দ্রাবাদসহ অনেক দূর অঞ্চল পর্যন্ত এন্টিবায়োটিক সহনীয় জীবাণুর বিস্তার হয়। গবাদিপশু ও পানি বাহিত হয়ে এ জীবাণু অনেক মানুষকে আক্রান্ত করে। বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ, নিজেদের তৈরি ওষুধের চাহিদা বাড়াতে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এরকম করে থাকে। অধিক মুনাফা লাভ করতে এরকম হীন কর্ম পৃথিবীর অনেক জায়গায়ই হয়ে থাকে।

আসুন, আমরা এন্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার রোধ করে একে প্রকৃত অর্থে মানব কল্যাণে কাজে লাগাই। তা না হলে স্যার অ্যালেকজান্ডার ফ্লেমিংয়ের অনন্য আবিষ্কার তার ভাষায় ‘দুর্ঘটনা প্রসূত’ই থেকে যাবে।

   

এক ঘরেই তিন বলী



তাসনীম হাসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
দুই ছেলের সঙ্গে খাজা আহমদ বলী/ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

দুই ছেলের সঙ্গে খাজা আহমদ বলী/ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

  • Font increase
  • Font Decrease

চুল থেকে দাড়ি-সবই সফেদ। হাঁটাচলায় মন্থর। স্বাভাবিকভাবেই প্রবীণের বয়সটা আঁচ করা যায় প্রথম দেখাতেই। কিন্তু তার ষাটোর্ধ্ব বয়সটা যেন কেবল ক্যালেন্ডারের হিসাব। বয়স যতই ছোবল বসানোর চেষ্টা করুক না কেন-তিনি যেন এখনো ২৫ এর টগবগে তরুণ। সেই বলেই তো ফুসফুসের রোগবালাইকে তুড়ি মেরে ঐতিহাসিক আবদুল জব্বারের বলীখেলা এলেই হাজির হয়ে যান রিংয়ে। এক দুবার নয়, এবার কিনা পূর্ণ হলো সুবর্ণজয়ন্তী!

চট্টগ্রামের অন্যতম আবেগের ঠিকানা ঐতিহাসিক এই বলীখেলার বড় বিজ্ঞাপন হয়ে ওঠা এই বলীর নাম খাজা আহমদ বলী। ৫০ বছর ধরে বলীখেলায় অংশ নিয়ে দর্শকদের আনন্দ দিয়ে যাওয়া এই বলীর এখন পড়ন্ত বয়স। ফুসফুসে বাসা বেঁধেছে রোগ। কানেও শোনেন কম। খাজা আহমদ বুঝে গিয়েছেন, তার দিন ফুরাচ্ছে। কিন্তু তিনি যে বলীখেলার স্মৃতি থেকে সহজেই মুছে যেতে চান না। সেজন্যই উত্তরসূরী হিসেবে এরই মধ্যে গড়ে তুলেছেন নিজের দুই ছেলেকে। বাবার পাশাপাশি দুই ভাইও এখন বলীখেলার নিয়মিত প্রতিযোগী।

খাজা আহমেদ বলীর বাবাও বলীখেলায় অংশ নিতেন। বাবার সঙ্গে বলীখেলায় এসে ১৯৭৪ সালে শখের বসে খেলতে নামেন খাজা আহমেদও। বয়স তখন ১২ বছরের আশপাশে। সেই শুরু, আর কোনোদিন মিস করেননি বলীখেলায় অংশ নেওয়া। একবার চ্যাম্পিয়নের গৌরবও অর্জন করেছিলেন। বহু বছর ধরে খাজা আহমেদ বলী ও সত্তরোর্ধ্ব মফিজুর রহমানের ‘বলীযুদ্ধ’ জব্বারের বলীখেলার অন্যতম আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে এই দ্বৈরথ হয়তো আর দেখা যাবে না। দুই বছর আগে উৎপত্তি হওয়া ফুসফুসের রোগটা ইদানিং যে খাজা আহমদকে বেশিই ভোগাচ্ছে। সেজন্য গতবছর অবসরের ঘোষণাও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এবার দুই ছেলেকে নিয়ে বলীখেলায় এসে আবেগ সামলাতে পারেননি খাজা আহমেদ। ছেলেদের সঙ্গে নিজেও নেমে পড়েন রিংয়ে। সেজন্য আরও একবার মফিজুর রহমান-খাজা আহমেদের লড়াই দেখল হাজারো দর্শক। যদিওবা যৌথ বিজয়ী ঘোষণা করে দুজনের মুখেই হাসি ফুটিয়েছেন রেফারি।

প্রতিপক্ষ মফিজুর রহমানের সঙ্গে বলী-যুদ্ধে খাজা আহমদ

কেন অবসর ভাঙলেন এমন প্রশ্নে হাসি খেলা করে যায় খাজা আহমেদ বলীর মুখে। বলতে থাকেন, ‘বয়সের কারণে শরীর দস্ত। ফুসফুসও ঠিকঠাক কাজ করছে না। সেজন্য অবসর নিয়েছিলাম। কিন্তু বলীখেলায় আসার পর দেখলাম দর্শকেরা সবাই অনুরোধ করছেন। সেজন্য মন বলল, না খেললে দর্শকদের প্রতি অন্যায় হবে। আর আবেগ ও ভালোবাসার কাছে বয়স-রোগ পেরেছে কবে?’

তবে এখানেই সব শেষ, বলে দিয়েছেন খাজা আহমেদ বলী। বলেছেন, ‘বয়স হয়ে গেছে। মনে হয় না আর খেলতে পারব। অসুখটা বেশি যন্ত্রণা দিচ্ছে। সেজন্য মনে মনে মেনে নিয়েছি এটাই আমার শেষ অংশগ্রহণ। বাকিটা আল্লাহর হাতে।’

তিন ছেলে ও এক মেয়ের বাবা খাজা আহমদের বাড়ি চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গায়। কৃষিকাজ করেই চলে সংসার। তবে বলীখেলা এলে সব কাজ বাধ। কয়েকদিন ধরে চলে প্রস্তুতি। নিজের স্মৃতি ধরে রাখতে এরই মধ্যে খাজা আহমেদ নিজের দুই ছেলেকে গড়ে তুলেছেন বলী হিসেবে। ২০১২ সাল থেকে বলীখেলায় নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন তার বড় ছেলে মো. সেলিম। গত বছর থেকে যোগ দিয়েছেন ছোট ছেলে মো. কাইয়ুমও। এখন বলীখেলার আগে দুই ছেলেকে নিয়ে চলে খাজা আহমদের প্রস্তুতি।

জানতে চাইলে সেলিম বলেন, ‘বাবার কাছ থেকে আমরা বলীখেলা শিখেছি। বয়সের কারণে বাবা এখন অসুস্থ। হয়তো আর খেলা হবে না। সেজন্য তার উত্তরসূরী হিসেবে আমরা বলীখেলায় অংশ নেব সামনের দিনগুলোতে। এটা শুধু পরিবারের বলীর প্রজন্ম ধরে রাখার জন্য নয়, তরুণদের মাদক-সন্ত্রাসী কার্যক্রম থেকে দূরে রাখতে উদ্বুদ্ধ করার উদ্যোগও।’

বাবাকে পাশে রেখে একই কথা বললেন ছোট ছেলে মো. কাইয়ুমও। বলেন, ‘হয়তো বাবা আর খেলবেন না। তবে তিনি না খেললেও যতদিন বেঁচে থাকবেন বলীখেলা দেখতে আসবেন। রিংয়ের নিচে দাঁড়িয়ে আমাদের উৎসাহ দিয়ে যাবেন।’

ছেলের কথা শুনে আবেগ খেলে যায় খাজা আহমেদ বলীর মনে। কাঁধের গামছাটা হাতে তুলে নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বললেন, ‘না খেললেও যতদিন বাঁচি এখানে, এই বলীর মাঠ লালদীঘি ময়দানে ছুটে আসব। এটা থেকে দূরে থাকতে পারব না।’

খাজা আহমেদ যখন কথা বলছিলেন দূরে কোথাও তখন মাইকে বাজছিল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই অমর গান। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় অক্লান্ত গলায় গেয়ে চলেছেন, যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে, আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে...

;

চাকরি ছেড়ে বসের সামনেই ঢোল বাজিয়ে নাচলেন যুবক!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নিত্যদিনের অফিসের কর্মপরিবেশে অনেকের মধ্যেই 'বিরক্তি' চলে আসে। তবুও ধৈয্য নিয়ে সব সহ্য করে টিকে থাকার জন্য চালিয়ে যান লড়াই। তবে এ যাত্রায় সকলের দ্বারা টিকে থাকা সম্ভব হয় না। অফিসের 'বিষাক্ত' কর্মপরিবেশে অনেকেই ভোগেন মানসিক সমস্যায় কিংবা ব্যক্তিজীবনে। এমন পরিবেশ থেকে বাঁচতে একেক জন একেক পন্থা অবলম্বন করে থাকেন।

তবে অনিকেত নামের এক যুবক এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে যা করেছেন নেট দুনিয়ায় তা রীতিমতো ভাইরাল। এসব থেকে মুক্তি পেতে চাকরিটাই ছেড়ে দিয়েছেন এই যুবক। এতেই ক্ষান্ত হননি তিনি, বসের সামনেই ঢাকঢোল বাজিয়ে নেচে উদযাপন করেছেন এমন মুহূর্তের।

ঘটনাটি ভারতের পুনে রাজ্যের। অনিকেত নামের ওই যুবক বিক্রয় সহযোগী হিসেবে চাকরি করতেন।

তার এমন উদযাপনের একটি ভিডিও ইন্সটাগ্রাম শেয়ার করেছেন অনীশ ভগত।

ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, গত তিন বছর ধরে এই কোম্পানির সাথে কাজ করেও বেতন খুব একটা বাড়েনি। এছাড়াও অফিসের বসের দ্বারাও তাকে বিভিন্ন সময়ে অপমানিত হতে হয়েছে।

তাই তার কাজের শেষ দিনে বন্ধুরা অফিসের বাইরে ঢোল নিয়ে জড়ো হয়েছিলেন এবং নেচেছিলেন। ভিডিওতে দেখা গেছে, এ ঘটনায় তার বস অনেক উত্তেজিত হয়েছেন। পাশাপাশি তার বস লোকজনকে ধাক্কা দিয়েছেন এবং চিৎকারও করেছেন।

ভিডিওটির ক্যাপশনে ভগত লিখেছেন, আমি মনে করি আপনারা অনেকেই এর সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারবেন। আজকাল বিষাক্ত কাজের সংস্কৃতি খুব বেশি দেখা যায়। সম্মান এবং অধিকারের অভাব খুবই সাধারণ। অনিকেত তার পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। আমি আশা করি এই গল্প মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে।

পোস্ট করা ভিডিওটি এক মিলিয়নেরও (১০ লাখের বেশি) বেশি ভিউ পেয়েছে। পোস্টটিতে অসংখ্য লাইক ও কমেন্টও রয়েছে।

একজন ইন্সটাগ্রাম ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি জানি না কেন এটি আমাকে এত সন্তুষ্ট করেছে।'

আরেকজন লিখেছেন, 'নাচটি আমাকে অন্য মাত্রার তৃপ্তি দিয়েছে।'

'আপনি সত্যিই আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে ইতিবাচক এবং উত্সাহী ব্যক্তি'- তৃতীয় একজন ঠিক এভাবেই নিজের অনুভূতি জানিয়েছেন।

তথ্যসূত্র: হিন্দুস্থান টাইমস 

;

অভয়ারণ্যে মানুষ যখন বন্দিখাঁচায়



প্রমা কোয়েল, ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চিড়িয়াখানা, নানানরকম পশুপাখি ও প্রাণীর বন্দিশালা। কেবল রং-বেরঙের চিড়িয়াই নয়; বাঘ, সিংহ, ভালুক, বানর, গণ্ডারসহ কত বন্যপ্রাণীই না খাঁচায় বন্দি থাকে!

চিড়িয়াখানায় রাখতে বন্য প্রাণীদের প্রকৃতির স্বাধীন জীবন থেকে ছিনিয়ে আনা হয়। তাদের খাঁচায় বন্দি করা হয় যেন, মানুষ তাদের দেখে আনন্দ পায়। অনেক প্রাণীর জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি খাঁচাতেই কেটে যায়।

ছোট থেকে বড় সব বয়সের মানুষই চিড়িয়াখানায় ঘুরতে যেতে পছন্দ করেন। শিশুরা না হয় অবুঝ! তবে যারা প্রাপ্তবয়স্ক তারাও চিড়িয়াখানায় এই বন্দি প্রাণীদের জীবনকে গভীরভাবে অনুধাবন করতে পারেন না।

এশিয়ার বড় দেশ চীনে রয়েছে, এক অদ্ভুত চিড়িয়াখানা। চংকিংয়ে অবস্থিত সেই চিড়িয়াখানার নাম ‘লেহে লেদু বন্যপ্রাণী চিড়িয়াখানা’। একে ‘রিভার্স জু’ (বিপরীত চিড়িয়াখানা) বলেও ডাকা হয়।

এখানেও মানুষ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে পশু দেখতে আসেন। তবে একেবারেই ভিন্ন উপায়ে। মূলত, একটি খাঁচা রয়েছে, যেখানে মানুষদের সেই খাঁচায় পুরা হয়। তারপর সেই খাঁচাবন্দি মানুষদের নিয়ে রাখা হয়, অভয়ারণ্যে। সেখানে বন্য প্রাণীরা মানুষের খাঁচার চারপাশে অবাধে ঘুরতে থাকে। চিড়িয়াখানায় বন্দি প্রাণীদের বন্দিজীবনের এক প্রতীকী দৃশ্য!

অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষদের জন্য এটি এক নতুন অভিজ্ঞতা!

অভয়ারণ্যে খাঁচায় বন্দি মানুষ, ছবি-সংগৃহীত

খুব কাছে থেকে হিংস্র বন্যপ্রাণীদের মুক্ত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যেমন লোমহর্ষক, ঠিক তেমনই আতঙ্কজনকও হতে পারে। বিপরীতধর্মী এই চিড়িয়াখানাটি সবার জন্য প্রথম উন্মুক্ত করা হয়, ২০১৫ সালে। তখন বিশ্বের সংবদমাধ্যমের শিরোনাম কেড়েছিল এ চিড়িয়াখানাটি।

একটি শক্ত লোহার খাঁচাবেষ্টিত দর্শনার্থীদের একটি ট্রাকে তুলে অভয়ারণ্যে রেখে দেওয়া হয়। সেখানে তাদের ঘিরে ধরে ঘুরতে থাকে বাঘ, ভালুক, সিংহ ইত্যাদি হিংস্র প্রাণী।

এ বিষয়ে চিড়িয়াখানার প্রধান চ্যান লিয়াং বলেন, দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা রক্ষার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। খাঁচার ফাঁকা অংশ দিয়ে হাতের আঙুলও বের না করার নির্দেশনা দেওয়া থাকে।

তবে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই চিড়িয়াখানাটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে অনেক। এর নৈতিকতা নিয়ে অনেকে প্রশ্নও তুলেছেন।

অনেকে মনে করেন, এরকম ব্যবস্থাপনায় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। কারণ, শিকারী প্রাণীগুলো প্রচণ্ড হিংস্র। তাই, সে কারণে যে কোনো সময় বিপজ্জনক ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

আবার এরকম চিন্তাভাবনার প্রশংসাও করেছেন অপর একটি পক্ষ। তাদের বক্তব্য, পৃথিবীটা কেবল মানুষদের নয়। প্রকৃতিতে সব প্রাণীদের একটা ভারসাম্য থাকা প্রয়োজন। তাদের বন্দি করে রাখা মানুষের উচিত নয়। কারণ, মুক্ত প্রকৃতিতে বিরাজ করার অধিকার সব প্রাণীরই রয়েছে।

তাদের মন্তব্য, আমরা প্রাণীদের আবাসস্থল বনজঙ্গল সব উজাড় করেছি। সে কারণে তাপমাত্রাও অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। আবার প্রাণীদের বন্দি রেখে তাদের জীবন চরম দুর্বিষহ করে তুলি।

চাইলে এবং সুযোগ পেলে এই ধরনের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিতে চিড়িয়াখানাটি ঘুরে আসতে পারেন বৈকি!

তথ্যসূত্র: এনিমেল অ্যারাউন্ড দ্য গ্লোব

;

৫ বছরের শিশুর বিস্ময়কর প্রতিভা!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বয়স সবে ৫ কিংবা ৬। এই বয়সেই তার প্রতিভা দেখে অবাক হবে যে-কেউ!

গত বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সের (সাবেক টুইটার) একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এখন পর্যন্ত ভিডিওটি ১ মিলিয়নের (১০ লাখের বেশি) বেশি মানুষ দেখেছেন। খবর এনডিটিভি। 

ভিডিওতে রিলি নামের ওই শিশুটিকে প্রথমে শ্বাস নিতে দেখা যায়। তারপর সে একটি শক্তিশালী গর্জন দিয়ে শ্বাস ছাড়ে। ওই গর্জনটি হুবুহ সিংহের গর্জনের অনুরূপ।

রিলির মা অ্যামি ভিডিওটি এক্সে শেয়ারের পরই তা ভাইরাল হয়ে যায়। শিশুটির এমন নিখুত দক্ষতা দেখে মুগ্ধ দর্শকরা। ভিডিওটিতে অনেকেই নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, এত অল্প বয়সে এমন বাস্তবসম্মত গর্জন তৈরি করার রিলির ক্ষমতার বিস্ময় প্রকাশ করে।

আরেকজন লিখেছেন, শিশুরা খুব দ্রুত শিখে। তার এমন প্রতিভা সত্যিই অবাক করার মতো।

;