আমিনুলকে পেলাম, জুবায়েরকেও কিন্তু পেয়েছিলাম একসময়ে..

ক্রিকেট, খেলা

স্পোর্টস এডিটর, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-25 01:24:02

একটি জরুরি ঘোষণা ..। 

পাড়া মহল্লায় আগে রিক্সায় মাইক লাগিয়ে কোনো একটা জরুরি ঘোষণা এভাবে ঘোষিত হত।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও মাঝে মাঝে এমন জরুরি ঘোষণা দিয়ে লেগস্পিনার বা রিস্ট স্পিনারের খোঁজ করে। প্রায় সময়ে সেই খোঁজ মেলে না। যাও বা মেলে দুদিন পরে হারিয়ে যায়। সর্বশেষ এবার আরেকজন লেগস্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লবের খোঁজ পেয়েছে বাংলাদেশ।

চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে তার অভিষেকও হয়ে গেল। সেই ম্যাচে বেশ ভাল পারফর্ম করেছেন এই তরুণ লেগস্পিনার। আর্ন্তজাতিক ক্যারিয়ারে নিজের তৃতীয় বলেই উইকেট পেয়েছেন আমিনুল। ম্যাচে ৪ ওভারে ১৮ রানে ২ উইকেট পান তিনি। ম্যাচ শেষে সিনিয়র ক্রিকেটাররা এবং বিশেষ করে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান তরুণ এই লেগস্পিনারের বোলিংয়ের বেশ প্রশংসা করেন।

ধরেই নেয়া যাচ্ছে সামনের সময়ও খেলছেন লেগস্পিনার আমিনুল। কিন্তু কতদিন? সেই প্রশ্নের উত্তর কি জানেন কেউ?

একজন ঠিকই জানেন- জুবায়ের হোসেন লিখন!

তিনিও লেগস্পিনার। তার মধ্যেও সামনের দিনের ক্রিকেটে টিকে থাকার প্রতিভা একসময় খুঁজে পেয়েছিল বাংলাদেশ। শুরুতে তুমুল প্রশংসা পেয়েছিলেন তিনিও। বলাবলি শুরু হয়ে গিয়েছিল-আমরা পেয়ে গিয়েছি বাংলাদেশের ‘ওয়ার্নকে’! কিন্তু ২০১৪ সালের অক্টোবরে আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে অভিষিক্ত হওয়ার পর ২০১৫ সালের নভেম্বরেই আপাতত ‘শেষ’ তার বাংলাদেশ ক্যারিয়ার।

সবমিলিয়ে ৬ টেস্ট ৩ ওয়ানডে এবং ১ টি-টোয়েন্টিতেই আটকে গেল আমাদের ‘ওয়ার্ন’ এর আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার। ১০ ম্যাচের তার এই আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার সময়সীমা মাত্র ১৩ মাস!

এবার আফগানিস্তান দল যখন এল তখন আবার হঠাৎ করে তাদের প্রস্তুতি ম্যাচে জুবায়ের হোসেন লিখন বিসিবি একাদশের হয়ে খেললেন। চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের দুদিনের সেই ম্যাচে ৬৮ রানে সাফল্যহীন সময় কাটে তার।

জুবায়ের কেন লম্বা সময় ধরে টিকতে পারলেন না আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে? বয়স এখনো তার ২৫ ছাড়ায়নি। হয়তো এখনো ফেরার সময় আছে তার। কিন্তু শুরুর সুযোগটা কেন তিনি কাজে লাগাতে পারেননি- চলুন খুঁজি সেই প্রশ্নের উত্তর।
 
মাত্র ১৯ বছর বয়সে জুবায়ের হোসেন লিখনের আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়। বলা হয়ে থাকে লেগস্পিন একটা শিল্প। আর সেই শৈল্পিকতা শেখার জন্য সময় লাগে। কিন্তু শুরুতে জুবায়েরের সাধারণ পারফরমেন্স দেখে হতাশ হয়ে সবাই ধরেই নেন-‘নাহ্, এর হচ্ছে না!’

শুধু আর্ন্তজাতিক অঙ্গনেই নয়, ঘরোয়া এবং ক্লাব ক্রিকেটেও ক্রিকেট কর্তাদের সবাই ‘নগদে পারফরমেন্স’ দাবি করেন। যথাযথ প্রশিক্ষণ শেষে প্রতিভাবানের কাছ থেকে সেরাটা নেয়ার চেয়ে সবাই শুরুতেই নতুনদের কাছে বিশ্বসেরা পারফরমেন্স প্রদর্শনের দাবি করে বসেন। নতুন আসা কেউ যখন শুরুতে সেই দাবি পুরণ করতে না পারেন তখনই তার ব্যাপারে নাক কুঁচকানো সিদ্ধান্ত-‘নাহ্, এ চলে না!’

আর তাই জুবায়ের হোসেন লিখন ক্লাব ক্রিকেটে নেটে হরদম বোলিং করলেও একাদশে তার সুযোগ হয় না। একটা ম্যাচে বেশি রান খরচা করলেই কর্তাদের সাফ সিদ্ধান্ত-‘নাহ্, একে দিয়ে হবে না!

তবে নিজের ক্রিকেট পরিভ্রমণের পথ হারানোর পেছনে জুবায়ের হোসেনেরও যে দায় নেই, তা কিন্তু নয়। সামনে থাকা বাধা পেরিয়ে যে জিততে জানে, সেই তো আসল বিজয়ী।

জুবায়ের হোসেনের মধ্যে সেই বাধা জেতার জেদের দেখা মিলল কই?
 
বিপিএল চলাকালে মাশরাফি তাকে নেটে ডাকলেন। অনুশীলনে রাখলেন। জুবায়ের হোসেন এলেন। আবার কাউকে কিছু না বলে চলেও গেলেন! কিছু লড়াই নিজে থেকে জিততে হয়। জুবায়ের হোসেন লিখনের মধ্যে সেই স্পিরিটের অভাব স্পষ্ট। অনুশীলনে অনীহা। ফিটনেসে ঘাটতি। নিজের দক্ষতাকে শাণিয়ে দেয়ার যে তেজ তরুণের মধ্যে থাকা চাই-তার দেখা মিলল না। বরং সানগ্লাসটা ঠিক মানাচ্ছে কিনা। বা চুলের স্টাইলটা আর্কষণীয় হলো কিনা- সেদিকেই বেশি নজর কাড়লেন জুবায়ের হোসেন।
 
দায় বিসিবিরও আছে।

২০১৪ সালের অক্টোবরে অভিষেক এই লেগস্পিনারের। মাঝে কেটেছে পাঁচ বছর। এই সময়টায় কি লেগস্পিনার জুবায়ের হোসেন লিখনের জন্য বিশেষায়িত কোনো অনুশীলনের ব্যবস্থা করতে পারতো না বিসিবি?
 
যদি পারতো তাহলে আজ আবার একটি জরুরি ঘোষণা...‘আমরা একজন লেগস্পিনার খুঁজছি’, বিসিবির মাইকে এমন ঘোষণা শুনতে হতো না!

# পাদটীকা: ২০১৫ সালের নভেম্বরে জুবায়ের হোসেন লিখন তার একমাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ২০ রানে ২ উইকেট পেয়েছিলেন। মিরপুরে সেই ম্যাচে প্রতিপক্ষ ছিল জিম্বাবুয়ে। নতুন লেগস্পিনার আমিনুলের টি- টোয়েন্টি অভিষেক হলো জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। আমিনুলও ২ উইকেট পেলেন।

আশায় থাকলাম আমিনুলের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের গল্প যেন জুবায়েরের সঙ্গে মিল না খায়!

এ সম্পর্কিত আরও খবর