নির্বাচকরাও নার্ভাস! আফগান আতঙ্কে অস্থিরতায় ক্রিকেট!

ক্রিকেট, খেলা

এম. এম. কায়সার, স্পোর্টস এডিটর, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-26 03:41:54

আফগানিস্তান শুধু মাঠের ক্রিকেটারদের নয়, মাঠের বাইরে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকেও নাড়িয়ে দিয়েছে। বোর্ড কর্তা থেকে শুরু করে খোদ নির্বাচকরাও পর্যন্ত এক অর্থে অস্থির আফগান আতঙ্কে!

সত্যতা যাচাইয়ের জন্য খুব বেশি দুরে যেতে হবে না। প্রথমে টেস্ট ম্যাচ এবং এখন তিনজাতি টি-টুয়েন্টি সিরিজের শেষ অংশের জন্য বাংলাদেশ দল ঘোষণার মধ্যেই সেই অস্থিরতার প্রকাশ স্পষ্ঠ।

-কিভাবে?

চট্টগ্রাম টেস্টের ১৫ জনের দল ঘোষণা করা হল। সেই দলে পেস বোলার তিনজন। অথচ একাদশে খেললেন না একজন পেসারও। এমন নয় যে চট্টগ্রামে গিয়ে তারপর একাদশে পেসার না খেলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। সিদ্ধান্ত আগেই হয়েছে। তাহলে শুধু শুধু দলে তিনজন পেসারকে বয়ে বেড়ানো কেন?

উত্তর মিললো-এটা নাকি ক্যামোফ্লেজ! অর্থাৎ আফগানিস্তান দল যাতে দলে এতগুলো পেসার দেখে মনে করে- ও, বাংলাদেশ তাহলে পেস উইকেট বানাচ্ছে? আফগানিস্তানকে দোটানায় রাখতে গিয়ে সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশ যা করলো তাকে বলে নার্ভাসনেস! নিজের শক্তি সম্পর্কে নিজেই দুর্বল থাকলেই কেবল অমন অপব্যয়ী সিদ্ধান্তের পথে হাঁটে দল!

চট্টগ্রাম টেস্টে ২২৪ রানে বাংলাদেশের হারের অন্যতম কারণও এটাই-হারার আগাম ভয়! নিজ শক্তি সম্পর্কে শক্তিহীনতা!

সক্ষমতা ও সামর্থ্যরে ঘাটতি তো আছেই; তার সঙ্গে যখন আত্মবিশ্বাসহীনতাও যোগ হয় তখন দল বারান্দার রেলিংয়ে বসা পাখির সুমিষ্ট ডাককেও ঘাট ছেড়ে যাওয়া লঞ্চের তীব্র হুইসেলের শব্দ ভাবতে শুরু করে! চমকে উঠে। ভড়কে উঠে।

ভুলে যায় স্বাভাবিক রিঅ্যাক্ট কি হবে?

টেস্ট ম্যাচে হার বাংলাদেশ দলকে বড় ধাক্কা দিয়েছিল। আর টি-টুয়েন্টিতে আফগানিস্তানের কাছে ২৫ রানের আরেকটি হার গোটা দল তো বটেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্দর-বাহির চারধারের চৌকির চারপায়াকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। সেই ধাক্কায় ক্রিকেট দলের অবস্থা হয়েছে এখন এমন-দাড়ালে হাঁটু কাঁপে, বসলে বুক ধড়ফড় করে!

পরীক্ষার প্রশ্ন হাতে পাওয়ার পর সব উত্তর ভুলে বসা অসহায় ছাত্র এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট এই আফগানিস্তান ক্রিকেট দলের সামনে।

আফগানিস্তানের কাছে টি-টুয়েন্টি সিরিজে ২৫ রানে হারের পর পরের দুই ম্যাচের জন্য নির্বাচকরা যে ১৫ জনের দল দিয়েছেন তাতেই নাভার্স ব্রেকডাউনের চিত্র এবং চিহ্ন আরেকবার স্পষ্ঠ!

-কিভাবে?

এই তালিকা থেকে এমন দুজন খেলোয়াড় বাদ গেছেন যারা সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে একাদশেই ছিলেন না। অর্থাৎ না খেলেই পরের দুই ম্যাচে তারা বাদ। তাহলে কেন তাদের প্রথম দুই ম্যাচের জন্য দলে রাখা হয়েছিল? আবার পরের দুই ম্যাচে এমন পুরানোদের ফিরিয়ে আনা হয়েছে যারা মুলত সাম্প্রতিক সময়ে কিছু না করেই আবার দলে!
বিস্মিত হওয়ার আরো বিষয় আছে।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২৫ রানে হারা ম্যাচে পেসার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন সাফল্য পেয়েছেন। ৩৩ রানে শিকার করেছেন ৪ উইকেট। টি-টুয়েন্টির ক্যারিয়ারে এটি তার সেরা সাফল্য। সেই ম্যাচে পেসার সাইফুদ্দিনের পারফরমেন্স দেখে হঠাৎ নির্বাচকদের মনে হয়েছে আফগান চ্যালেঞ্জ জিততে হলে এখন পেসারদের দলে ভেড়াতে হবে। আর তাই রুবেল হোসেন ও শফিউল ইসলামকে জরুরি তলব করে চট্টগ্রাম নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

মজার বিষয় হলো মিরপুরে সাইফুদ্দিনের বোলিং সাফল্যের দিন কৃতিত্বের বিচারে আফগান স্পিনাররা ছিল এগিয়ে। অফস্পিনার মুজিব উর রহমান ক্যারিয়ার সেরা ১৫ রানে ৪ উইকেট নিয়ে সেই ম্যাচের সেরা পারফর্মার। রশিদ খান ২৩ রানে পান ২ উইকেট।

এক ম্যাচ হারেই স্পিন থেকে আবার পেসের কাছে ফেরার বাংলাদেশের এই সিদ্ধান্ত আরেকবার জানিয়ে দিল, এই অসুখের নাম-নার্ভাসনেস!

সিরিজের পরের দুই ম্যাচের জন্য এমন তিনজনকে দলে নেয়া হয়েছে যারা এখন পর্যন্ত আর্ন্তজাতিক টি-টুয়েন্টিতে খেলেননি। নতুন কাউকে নেয়া হতেই পারে। এতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো-দুই ম্যাচ পরেই কেন নির্বাচকদের নতুনদের কাছে যেতে হল?

সিরিজের প্রথম ম্যাচ থেকেই তো তারা নতুনদের সুযোগ দিতে পারতেন? দলে একজন লেগস্পিনারের প্রয়োজন, এটা তাদের এবং কোচের মনে হলে আফগানদের কাছে হারের পরপরই।

আফগানিস্তান এই সফরে শুধু ম্যাচই জিতছে না, বাংলাদেশের ক্রিকেট দলকে তো বটেই, সর্বোচ্চ ক্রিকেট প্রশাসনকে পর্যন্ত নাড়িয়ে দিচ্ছে। নার্ভাস করছে।

প্রোজ্যাক, জোলফট, প্যাক্সিল, লেক্সাপ্রো, সেলেক্সা-এগুলো প্যানিক ডিসঅর্ডার বা নার্ভাসনেস নিয়ন্ত্রণের কার্যকর ঔষধ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে পরের ম্যাচে নামার আগে বাংলাদেশ দলের জন্য কাজে লাগতে পারে!

এ সম্পর্কিত আরও খবর