ফিল্ডিংয়ের প্রাথমিক শ্রেণিতে ফিরে গেলেন ক্রিকেটাররা!

ক্রিকেট, খেলা

স্পোর্টস এডিটর, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-28 00:38:36

বিশ্বকাপে বাংলাদেশ আটটি ম্যাচ খেলেছে। এই কটি ম্যাচে একেবারে ফুল চান্সের সংজ্ঞায় পড়ে এমন ৮টি ক্যাচ হাত ফসকেছে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের।

বিশ্বকাপ শেষে শ্রীলঙ্কা সফরে বাংলাদেশ দল তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ হেরেছে ৩-০ ব্যবধানে। কোনো ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বীতাও গড়তে পারেনি দল। তবে হোয়াইট ওয়াশ হওয়ার সেই সিরিজে সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যর্থতার নাম-ফিল্ডিং! হাত গলে ক্যাচ পড়ছে মাটিতে। পায়ের ফাঁক দিয়ে বল বাউন্ডারিতে!

বাংলাদেশ দলের হাস্যকর ভঙ্গিতে ফিল্ডিং মিস ক্রমশ হাসি-ঠাট্টার বিষয়েও পরিণত হয়। বিসিবি এই লাগাতার ফিল্ডিং ব্যর্থতার কারণ জানতে চেয়ে ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুককে তলব করে।

বিশ্বকাপ এবং শ্রীলঙ্কা সিরিজের পর ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুক তার রিপোর্ট জমা দিয়েছেন বিসিবির কাছে। যে রিপোর্টের সারাংশ হচ্ছে-‘বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ফিল্ডিং ব্যর্থতার মুল কারণ হচ্ছে -তাদের বেসিকের অভাব! অর্থাৎ প্রাথমিক পর্যায়ে যেটা তাদের শেখার কথা সেটাই তারা জানে না।

টেস্ট খেলতে শুরু করার ১৯ বছরের মাথায় এসে এখন বাংলাদেশ দলকে শুনতে হচ্ছে-‘দলের ক্রিকেটাররা ফিল্ডিংয়ের বেসিকটা জানে না।’

পেশাদার ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুক সেটা বিশ্বাস করেন বলেই কথাটা রিপোর্টে লিখেছেন। বিসিবি কর্তারাও সেটা মেনে নিচ্ছেন। আর তাই রায়ান কুক এখন প্রতিদিনের ফিল্ডিং অনুশীলনে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ফিল্ডিংয়ের বেসিকটাই বেশি শেখাচ্ছেন!

কন্ডিশনিং ক্যাম্পের ফিল্ডিং অনুশীলনের প্রথমদিন ছিলো শনিবার, ২৪ আগস্ট। অনুশীলনের প্রায় পুরোটা সময় জুড়ে ফিল্ডিং কোচ ক্রিকেটারদের ফিল্ডিংয়ে যা শেখালেন সেটাকে বলে ফিল্ডিংয়ের ‘অ, আ, ই, ঈ.....!

যেই সেশনে তার ছাত্র ছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুশফিক রহিম, আবু হায়দার রনি, রুবেল হোসেন, জহুরুল ইসলাম অমি থেকে শুরু করে হালের সাদমান ইসলাম পর্যন্ত।
একহাতে বল তুলে থ্রো করতে হলে শরীর কিভাবে বাঁকাতে হয়? পায়ের ভারসাম্য কিভাবে ঠিক রাখতে হয়? কাঁধ কতোটুকু উপরে তুলতে হয়? এমন সব কায়দা মাহমুদউল্লাহকে বারকয়েক রায়ান কুক দেখিয়ে দিলেন। একই দীক্ষা নিলেন মুশফিক রহিমও।

একটু জানিয়ে দেই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট খেলছেন ১২ বছর ধরে। আর মুশফিকের টেস্ট অভিষেক হয়েছিলো ২০০৫ সালে।

প্রথমদিনের ফিল্ডিং সেশনে খেলোয়াড়দের পরিশ্রম করানোর পর ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুক সাংবাদিকদের সামনে এসেও জানালেন-‘আমরা দিনকে দিন উন্নতি করছি। কত দ্রুত শিখছি সেটার ওপর উন্নতি নির্ভর করছে। অবশ্যই ক্রিকেটারদের ফিল্ডিংয়ের বেসিকে কিছু সমস্যা আছে। যতদূর সম্ভব পারা যায় সেটা আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি। যদি খেলোয়াড়রা অনুর্ধ্ব-১৫ দল থেকে আসে তাহলে এই বেসিকটা সেখানে শেখা হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু অনেক সময় অনেক খেলোয়াড় কোনো বয়সভিক্তিক দলে না খেলে সরাসরি জাতীয় দলে আসে। উদাহরণ হিসেবে এবাদতের নামটা বলতে পারি, তখন বেসিক ফিল্ডিংয়ে এমন ক্রিকেটারদের মানিয়ে নিতে কিছুটা সমস্যা হয়।’

ফিল্ডিং তখনই বেশি খারাপ হয়, যখন কোনো ক্রিকেটারের ফিল্ডিংয়ের বেসিক জ্ঞানের অভাব থাকে। আর তাই এই সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে হলে বেসিকটা ঠিক করা ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছেন না ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুক। সামগ্রিক অর্থে বাংলাদেশের ফিল্ডিংকে এই কোচ মধ্যম মানের শ্রেণীতে রাখছেন।

দলের ফিল্ডিংয়ের মান মধ্যম শ্রেণীর। অথচ বাংলাদেশ সার্বিক অর্থে র‌্যাঙ্কিংয়ে তিন-চারে উন্নীত হওয়ার স্বপ্ন দেখছে।

বাস্তবতার সঙ্গে পার্থক্যটা তাই এতো বেশি। এতো বড়!

-কতো বড়?

দু’হাত আপনি দুপাশে যতদুর প্রসারিত করতে পারেন, এই পার্থক্য ঠিক তত বড়!

এ সম্পর্কিত আরও খবর