কার্টেল ওভার চায়নি ভারত, চেয়েছিল রিজার্ভ ডে!

ক্রিকেট, খেলা

এম.এম. কায়সার, স্পোর্টস এডিটর, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ওল্ড ট্রাফোর্ড, ম্যানচেস্টার, ইংল্যান্ড থেকে | 2023-08-25 15:55:23

দুপুর থেকে সেই অপেক্ষা শুরু হয়েছিল। সেই ক্ষণ শেষ হল সন্ধ্যায়! মঙ্গলবার যখন আম্পায়াররা জানালেন বিশ্বকাপের প্রথম সেমি-ফাইনাল ম্যাচটা রিজার্ভ ডে’ তে যাচ্ছে, তখন ওল্ড ট্রাফোর্ডের প্রেসবক্সের ঘড়িতে সন্ধ্যা ৬টা ২৫মিনিট।

সন্ধ্যা, কিন্তু তখনো দিনের পরিস্কার আলো। এখানে যে সূর্যই ডুবে রাত ১০টায়!

বৃষ্টি বাধায় পড়ার আগে ভারত-নিউজিল্যান্ডের এই সেমি-ফাইনালে নিউজিল্যান্ড তুলেছিলো ৪৬.১ ওভারে ৫ উইকেটে ২১১ রান। রিজার্ভ ডে’ তে নিউজিল্যান্ড তাদের ইনিংসের বাকি ২৩ বল খেলবে। তারপর ভারত ব্যাটিংয়ে নামবে।

এখন প্রশ্ন হলো বৃষ্টিতে এই ম্যাচ রিভার্জ ডে’ তে যাওয়া লাভ হলো কার? ক্ষতিই হলো কোন দলের?

সহজ উত্তর আপাতত-বড় সুবিধায় আছে ভারত।

সন্দেহ নেই এই সেমিফাইনাল যদি প্রথমদিনেই ২০ ওভারের কার্টেল ম্যাচের হতো তাহলে ভারত অসুবিধায় পড়তো। ভারত কোনোমতেই গুরুত্বপূর্ণ সেমিফাইনাল ম্যাচ ২০ ওভারের কার্টেল ওভারের হোক- সেটা চায়নি। হয়তো ভারতের জয়ের টার্গেট তখন খুব বেশি হতে না। ২০ ওভারে তাদের জিততে তখন করতে হতো ১৪৬ রান।

আপাত দৃষ্টিতে সহজ টার্গেট। কিন্তু বৃষ্টিভেজা উইকেট, মেঘলা আকাশ, ঝিরি ঝিরি বাতাস। সেই বাতাসে ছড়িয়ে থাকা জলীয় বাস্পের কণা-ক্রিকেটীয় এই উপাদান গুলো পেস বোলারদের দারুণ উৎসাহিত করে। ওল্ড ট্রাফোর্ডের এই আবহাওয়া এবং কন্ডিশন পুরোপুরি মিলে যাচ্ছিলো নিউজিল্যান্ডের হ্যামিল্টন বা অকল্যান্ডের ক্রিকেটীয় পরিবেশের সঙ্গে! আর ভেজা উইকেটে জয়ের টার্গেট যতই ছোট হোক না কেন-ট্রেন্ট বোল্ট, লকি ফার্গুসন, ম্যাট হেনরি, কলিন ডি গ্রান্ডোম, জেমস নিসামের পেস বোলিংয়ের সামনে দাড়ানো সহজ কথা নয়।

আর তাই ভারত কোনো মতেই এই ম্যাচ ২০ ওভারের কার্টেল ম্যাচে পরিণত হোক- সেটা চায়নি। বিকেল ৫টা ৩০ মিনিটে যখন বৃষ্টি কমে গেলো তখন কার্টেল ওভারের ম্যাচের দিকেই গড়াচ্ছিলো এই সেমিফাইনাল। কিন্তু সন্ধ্যা ৬টা ১২ মিনিটে ফের ওল্ড ট্রাফোর্ডে বৃষ্টি নামে। মুলত সন্ধ্যার সেই বৃষ্টিতেই জানা হয়ে যায়-মঙ্গলবার বাকি সময়টায় এই ম্যাচ শুরুর আর সম্ভাবনা নেই। ম্যাচটা রিজার্ভ ডে’ তে যাচ্ছে।

হলোও তাই।

২০ ওভারে ১৪৬ রান তাড়া করার চেয়ে ভারত ৫০ ওভারে ২৫০ রান (আনুমানিক) তাড়া করাকেই বেশি সুবিধাজনক মানছে। হঠাৎ করে ওয়ানডে ফরমেট বদলে টি-টুয়েন্টিতে ফিরে যাওয়ার জন্য একটা অভ্যাস বা মানিয়ে নেয়ার বিষয়ও তো আছে। তাই কার্টেল ওভারের ম্যাচটা হলে ভারত অবশ্যই কিছুটা ঝুঁকিতে পড়তো। আর তাই ভারত অতি অবশ্যই চেয়েছিলো পুরো ৫০ ওভারের ম্যাচ খেলতে। তাছাড়া বৃষ্টিতে যদি রিজার্ভ ডে’ তেও খেলা না হয়-তাহলেও নিয়ম অনুযায়ী ভারতই যাবে ফাইনালে। কারণ গ্রুপ পর্বে নিউজিল্যান্ডের চেয়ে ভারতের পয়েন্ট ছিলো বেশি।

নিউজিল্যান্ড ইনিংসের এখনো ২৩ বল বাকি আছে। এই ২৩ বল নিউজিল্যান্ডকে খেলতে হবে ম্যাচে ভারতের সেরা দুই বোলারের বিপক্ষে; ভুবেনশ্বর কুমার ও জাসপ্রিত বুমরা। ভুবেনশ্বরের কোটার ১১ বল বাকি। আর বুমরার বাকি পুরো দুই ওভার। ওল্ড ট্রাফোর্ডের সেমি-ফাইনালে এই দুই ভারতীয় বোলারই নিউজিল্যান্ডকে চাপে রাখেন। ম্যাচে এখন পর্যন্ত বুমবার বোলিং বিশ্লেষণ ৮ ওভারে ১ মেডেন ২৫ রানে ১ উইকেট। ভুবেনশ্বরের পারফরমেন্সও চমৎকার। ৮ ওভারে ১ মেডেনসহ ৩০ রানে ১ উইকেট।

শেষের ২৩ বলে এই দুজনের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ড নিজেদের স্কোর আর কতোদূর নিয়ে যেতে পারে- সেটাই এখন দেখার বিষয়। অপরাজিত দুই ব্যাটসম্যান রস টেইল ( ৮৫ বলে ৬৭ রান) ও টস ল্যাথাম (৪ বলে ৩ রান) লম্বা সময়ের পরে এই ম্যাচে আরেকবার ব্যাট করতে নামবেন। মাঝের এই বড়ো বিরতি নিশ্চিতভাবে তাদের ব্যাটিংয়ের ফোকাসে সমস্যা তৈরি করবে।

বৃষ্টিস্নাত উইকেট ও মাঠে বাকি ২৩ বলের প্রতি বলেই নিউজিল্যান্ড চালিয়ে খেলতে চাইবে। ভারতকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো স্কোর যে এখনো জমা করতে পারেনি নিউজিল্যান্ড।

রিজার্ভ ডে তে গড়ানো সেমি-ফাইনাল নিউজিল্যান্ডের দুঃশ্চিন্তা বাড়ালেও ভারত আপাতত সুবিধায়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর