বিশ্বকাপে বাংলাদেশের যতো ভুল (পর্ব-২)

ক্রিকেট, খেলা

এম. এম. কায়সার, স্পোর্টস এডিটর, বার্তা২৪.কম, লন্ডন, ইংল্যান্ড থেকে | 2023-08-30 17:19:13

৩ জয়। ৫ হার। বৃষ্টিতে বাতিল একটি ম্যাচ। বিশ্বকাপের দশ দলের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সাত নম্বরে। র‌্যাঙ্কিংয়ের সাত নম্বর দল হিসেবেই খেলতে এসেছিল বাংলাদেশ। ফিরে গেলো সেই একই অবস্থানে থেকে। অনেক সম্ভাবনা নিয়ে এবারের বিশ্বকাপ শুরু করা বাংলাদেশ ফিরছে সেমিফাইনালের আগে। মাঠের ক্রিকেটে ভাল-মন্দ দুই সময়ই দেখেছে বাংলাদেশ এই বিশ্বকাপে। ভুলও করেছে বেশ। সেই ভুলের খোঁজ এই ধারাবাহিক রিপোর্টে-

ভুল একাদশ:

সতেজ বাতাস। বৃষ্টি স্নাত মাঠ। দুদিনের ঢাকা উইকেট। সুইং। সব অনুষঙ্গ প্রমাণ দিচ্ছে-কার্ডিফের উইকেটে পেসাররা বাড়তি সুবিধা পাবেন। সেই উইকেটে বাংলাদেশ টসে জিতে আগে বোলিংয়ের সুযোগটা নিলো। কিন্তু তিন পেসার ও তিন স্পিনারের আগের ম্যাচের একাদশ নিয়েই কার্ডিফে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও নামলো বাংলাদেশ।

এমন উইকেটে বোলিং করতে না পারার দুঃখ নিয়েই রুবেল হোসেন আরেকটি ম্যাচে শুধু বসে কাটালেন। রুবেল হোসেন খেলতে নামলেই যে বাংলাদেশকে জিতিয়ে আনতেন, সেই নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু পরিস্থিতি, আবহাওয়া এবং মাঠের আনুষাঙ্গিকতা জানাচ্ছে ইংল্যান্ড ম্যাচে একজন পেসার কম নিয়ে খেলেছে বাংলাদেশ।

কার্ডিফের এই ম্যাচে শুরু থেকে বাংলাদেশের বোলিংকে নিয়ে স্রেফ খেললো ইংল্যান্ড! দুই ইংলিশ ওপেনারের জুটিতেই জমা হলো ১২৮ রান।

অথচ এই ম্যাচেই ইংল্যান্ড তাদের মুল স্পিনার মঈন আলীকে বসিয়ে রেখে একাদশে নিয়ে এলো বাড়তি পেসার হিসেবে লিয়াম প্লাঙ্কেটকে। কার্ডিফের বৃষ্টিতে ভেজা উইকেটে পাঁচ পেসার খেলিয়ে বাংলাদেশকে গুটিয়ে দিলো ইংল্যান্ড মাত্র ২৮০ রানে। বাংলাদেশের ১০ উইকেটের ৯টি উইকেটই তুলে নিলেন ইংল্যান্ড পেসাররা।

বামিংহ্যামের এজবাস্টনেও মাঠের আকৃতি নিয়ে ম্যাচের আগে অনেক চর্চা চলে বাংলাদেশ দলে। মাঠের একপাশ ছোট-এটা জেনে একাদশ থেকে স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজকে বাদ দেয়া হলো! অথচ পুরো বিশ্বকাপে মিরাজ তার ১০ ওভারের বোলিংয়ে রান আটকে রাখার জন্য দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করছিলেন। ভারত ম্যাচে মিরাজকে বাদ দেয়া হলেও সেই ম্যাচে স্পিনার সাকিব রানের খরচ হলো মাত্র ৪১। দলের সবচেয়ে ইকোনোমি বোলার তিনিই।

নিশ্চিতভাবে এই ম্যাচে মিরাজের অফস্পিন মিস করে বাংলাদেশ।

শুরুর সংকট:

ভালো শুরু যে কোনো দলকে এগিয়ে দেয়। কিন্তু এই বিশ্বকাপে তামিম- সৌম্যের ওপেনিং জুটির সর্বোচ্চ রান ৬০। বাকি ম্যাচগুলোতে কখনো সৌম্য আগে, কখনো তামিম ফিরেছেন আগেভাগে। ব্যাটিংয়ের শুরুটা ভালো হয়নি। প্রায় সব ম্যাচেই ওয়ানডাউন পজিশনে সাকিবকে নামতে হয়েছে প্রথম পাওয়ার প্লে’তে।

অন্যদিকে যে চার দল সেমিফাইনালে নাম লিখিয়েছে, তাদের ওপেনাররা দলের সেরা পারফর্মার। রোহিত শর্মা ৪টি সেঞ্চুরি করেছেন। ইংল্যান্ডের ওপেনার জনি বেয়ারস্টোর সেঞ্চুরির সংখ্যা ৩টি। ডেভিড ওয়ার্নারের এই বিশ্বকাপে রান পাঁচ শ’র উপরে।

বাংলাদেশের ওপেনাররা দক্ষিণ আফ্রিকার যে ম্যাচে ৬০ রানের জুটি গড়েন, সেই ম্যাচে বাংলাদেশ জিতে। পুরো বিশ্বকাপ জুড়ে দলের ওপেনাররা উইকেটে সেট হওয়ার পর আউটের বাজে নজির গড়েন। তামিম ইকবাল এই ভুলে পড়েন পুরো বিশ্বকাপেই!

যখনই তার ইনিংস বড় করার কথা, তখনই আউট! তামিম শুধুমাত্র একটি হাফসেঞ্চুরি পান এই বিশ্বকাপে। আর সৌম্য সরকার ব্যাট হাতে ৮ ম্যাচে করলেন মাত্র ১৬৪ রান। ম্যাচ প্রতি রান গড় ২০.৫! শুরুর ব্যাটিংয়ের এই সঙ্কট শেষ ম্যাচ পর্যন্ত এড়াতে পারেনি বাংলাদেশ।

ফিল্ডিংয়ে পিচ্ছিল হাত:

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সবচেয়ে খারাপ দিক কোনটা?

শেষ ম্যাচে এই প্রশ্নের উত্তরে অধিনায়ক মাশরাফির স্পষ্ঠ উচ্চারণ-‘বোলিং এবং ফিল্ডিং ছিলো আমাদের নেভেটিভ দিক। এই বোলিং এবং বাজে ফিল্ডিং-ই বিশ্বমানের দলগুলোর সঙ্গে আমাদের পার্থক্য বুঝিয়ে দিচ্ছে। ব্যাটিংয়ে আমরা ভালো ফাইট দিয়েছি। কিন্তু বোলিং আমাদের আপ টু দ্য মার্ক ছিলো না।’

৮ ম্যাচে সহজ-কঠিন সবমিলিয়ে বাংলাদেশ আটটি ক্যাচ মিস করেছে। ওয়ার্নারের ক্যাচ মিস হয়েছে ট্রেন্টব্রিজে। সেই ম্যাচ ওয়ার্নার শেষ করেন ১৪৪ রানে। রোহিত শর্মার ক্যাচ পড়েছে এজবাস্টনে। সেই ম্যাচে রোহিত শেষ পর্যন্ত করেন ১০৪ রান। লর্ডসে ৫৭ রানে ক্যাচ পড়ে বাবর আজমের। পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান সেই ম্যাচে করলেন ৯৬ রান! শুধু ক্যাচ মিসই নয়। গ্রাউন্ড ফিল্ডিংও কখনো কখনো হাস্যকর হয়েছে বাংলাদেশ দলের। নিশ্চিত রান আউট মিস হয়েছে। ম্যাচ জিততে হলে হাফ চান্সকে ফুল চান্স করতে হয়। বাংলাদেশ দল ফিল্ডিংয়ে ফুল চান্সকেই জিরো চান্স করেছে!

আরো পড়ুন-

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের যতো ভুল (পর্ব-১)

এ সম্পর্কিত আরও খবর