তামিমের উল্টো প্রশ্ন-কারা বলছে এসব কথা?

ক্রিকেট, খেলা

এম. এম. কায়সার, স্পোর্টস এডিটর, বার্তা২৪.কম, টন্টন, ইংল্যান্ড থেকে | 2023-09-01 08:08:57

বাংলাদেশ ক্রিকেটে এটা নতুন কিছু নয়। দল যখন ভালো অবস্থানে থাকে না। টানা কয়েকটা ম্যাচ হারে। তখনই হঠাৎ করে অনেক ‘ক্রিকেট পন্ডিত’ জন্ম নেন! আর অধুনা ফেসবুক কেন্দ্রিক এই ‘ক্রিকেট স্যার’রা প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে পরামর্শ দিচ্ছেন। সমালোচনায় ধুয়ে ফেলছেন বিশ্বকাপে খেলা বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের।

অমুক কেন দলে? তুমুককে বাদ দাও! ওকে ফিরিয়ে আনো। আরে ও তো পুরো আনফিট, ওকে হটাও! হরদম নানান সমালোচনার বিষবাস্পের জটিলতা ছড়িয়ে এরা ক্রিকেট দলের উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি করছে। যাদের অবদান এবং কীর্তির ওপর দল আজ এই সাফল্যের স্তম্ভে দাড়িয়ে তাদেরকেই এরা বিশ্বকাপের মাঝপথ থেকে ছুঁড়ে ফেলার শ্লোগান তুলছেন!

মাশরাফির খেলা তাদের ভালো লাগছে না।  বলাবলি হচ্ছে মাশরাফি আনফিট। তামিম তাদের পছন্দের কেউ না। এমনকি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকেও তাদের ভালো লাগছে না। মুস্তাফিজও অনেকের চক্ষুশূল হয়ে পড়েছেন! বাইরের পরিমন্ডল থেকে আসা এমনসব সমালোচনা ক্রিকেটারদের কানেও যাচ্ছে। তারাও সামাজিক পরিমন্ডলেরই একজন। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের গ্রæপ পর্যায়ের ৯ ম্যাচের মাত্র ৪টি গেছে; এমন সময় সমালোচকদের এমনসব তীর্যক মন্তব্য ক্রিকেটাররা কিভাবে সামাল দিচ্ছেন? এই প্রশ্নটা করা হয়েছিলো শনিবার টন্টনের সংবাদ সম্মেলনে তামিম ইকবালকে।

প্রশ্নটা শুনে তামিম ইকবাল পাল্টা প্রশ্ন করলেন-‘কারা বলছে এসব কথা?’

তারপর তামিম ইকবাল পুরো ২ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড সময় নিয়ে এই প্রসঙ্গে যা বললেন তার পুরোটাই এখানে-‘আমারও সমালোচনা হচ্ছে শুনেছি। আমি আমার কথা বাদই দিলাম। মাশরাফি ভাইয়ের কথাই বলি। কিছুদিন আগে আমি এক সাক্ষাতকারে বলেছিলাম, যারা এসব কথা লিখছে বা বলছে, তারা এসব লেখা বা বলার আগে যদি দুইটা মিনিট একটুখানি চিন্তা করে যে আমি কার ব্যাপারে বলছি! যার সম্পর্কে বলছি, সে বা তিনি পেছনের ১৫/১৬ বছর বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য কি করেছেন, সেই হিসেব যদি মেলাই! বলা হচ্ছে সে আনফিট! আরে মাশরাফি ভাইকে যদি এখন আনফিট বলেন তাহলে তিনি তো ১০ বছর ধরেই আনফিট! অস্ত্রোপচার হওয়া তার দুটো হাঁটু তো কোনো সময়ই ভালো ছিলো না। তখন কিন্তু আমরা সেটা আবেগপ্রবণ হয়ে দেখেছি। এখন যখন একটু উনিশ-বিশ হচ্ছে (পারফরমেন্স) তখন সেটাকে আমরা অনেক বড়ো করে দেখছি। এমন একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে এখন কথা বলাবলি হচ্ছে যে ব্যক্তির হাত ধরেই আজ আমরা এখানে এসেছি। দল হিসেবে এবং ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেও এভাবেই এসেছি। এখন তাকে নির্দয় সমালোচনা শুনতে হচ্ছে। এটা খুবই দুভার্গ্যজনক। উনি বাংলাদেশ ক্রিকেটকে এতদুর নিয়ে আসার জন্য যা করেছেন, তাতে উনার বিপক্ষে এমনভাবে আলোচনা-সমালোচনা করাটা খুবই দুভার্গ্যজনক! তিনি যা পেয়েছেন তারচেয়ে আরো অনেক অনেক বেশি সন্মান ও শ্রদ্ধা তার পাওয়া উচিত। আসলে লোকে কি বলে সেটা আমি খুব একটা গনায় আনি না। এখানে এসে দেখলাম কিছু কিছু বিদেশি ক্রিকেটার কিসব বলছে? আমার প্রশ্ন হলো-এই বিদেশিরা নিজেদের ক্যারিয়ারে কি করেছে? আগে সেদিকে তাদের নজর দেয়া উচিত। দেশের বাইরের মানুষজন কি বলছে না বলছে, সেটা আমার কাছে খুব বেশি বড়ো কোনো ব্যাপার না। কারণ প্রত্যেকের আলাদা একটা মতামত থাকতেই পারে। তবে দেশের মানুষের এটা বোঝা উচিত- কেউ যদি মাশরাফি মুর্তজার ব্যাপারে কথা বলার আগে অন্তত এটা তার জেনে নিক; মাশরাফি এই দেশকে কি দিয়েছেন! একজন ক্রিকেটারের জীবনে ভালো-মন্দ সময় যাবো। কখনো ভালো খেলবে। কখনো ভালো খেলবে না। শুধু ভালো খেললেই যে সঙ্গে থাকবেন তা তো না। যখন কোনো ক্রিকেটার খারাপ খেলবে তখনো তার পাশেই থাকতে হবে। এরকম মেগা ইভেন্টে প্রত্যেকটা খেলোয়াড় কিন্তু ভালো খেলে না। এই বিশ্বকাপের যে দল চ্যাম্পিয়ন হবে সেই দলেরও সব খেলোয়াড় কিন্তু ভালো খেলবে না। এগারোজনই ভালো খেলে না। কিছু খেলোয়াড় থাকবেই যারা অফফর্মে থাকবে। আশা করছি মানুষ সামনের সময়টায় সমালোচনা না করে ক্রিকেটারদের অবদানের কথাই বেশি মনে রাখবে!’

এ সম্পর্কিত আরও খবর