রান উৎসবের ম্যাচে শেষ হাসি পাকিস্তানের

ক্রিকেট, খেলা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-08-24 19:55:46

নটিংহ্যামের ট্রেন্ট ব্রিজ মানেই ব্যাটসম্যানদের স্বর্গরাজ্য! এই মাঠেই দুবার বিশ্বরেকর্ড গড়েছে ইংল্যান্ড। গতবছর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬ উইকেটে ৪৮১ রান। এর আগে ২০১৬ সালে এই পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩ উইকেট তুলে ৪৪৪ রান! বিশ্বকাপেও রান উৎসবের দেখা মিলল ইংল্যান্ডের পয়মন্ত ভেন্যুতে। এবারও একইভাবে ব্যাটসম্যানরাই দাপট দেখালেন এই মাঠে। কিন্তু শেষ হাসি পাকিস্তানের। রুদ্ধশ্বাস ছড়ানো ম্যাচে জয় তুলে নিয়েছে সরফরাজ আহমেদের দল।

পাকিস্তানের কঠিন চ্যালেঞ্জে টপকে জেতা হলো না স্বাগতিকদের। ১৪ রানে ম্যাচ জিতে নেয় সরফরাজের দল। টানা ১১ হারের পর অবশেষে জয়ের মুখ দেখলো দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি।

সোমবার বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে টস হেরে ব্যাট করতে নামে পাকিস্তান। ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে তারা তুলে ৩৪৮ রান। বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এটিই কোনো দলের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। এর আগের সেরা ছিল ২০১৫ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার ৯ উইকেটে ৩৪২ রান।

জবাব দিতে নেমে জো রুট ও জস বাটলারের শতরানের পরও ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ড আটকে যায় ৩৩৪ রানে।

তারই পথ ধরে ২০১৯ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ম্যাচে এসে জয়ে দেখা পেল ১৯৯২ সালের চ্যাম্পিয়ন দলটি। প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে উড়িয়ে উড়িয়ে দিয়েছিল এউইন মরগানের দল। কিন্তু এবার হোঁচট খেলো ফেভারিটরা। আর দুঃস্বপ্ন কাটিয়ে পথে ফিরল পাকিস্তান।

আগের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১০৫ রানে অলআউটের দুঃসহ স্মৃতি পেছনে ফেলে পাকিস্তান তুলে বড় সংগ্রহ। নটিংহ্যামের ব্যাটসম্যানদের স্বর্গ জস বাটলার ও জো রুটের শতরান স্বপ্ন দেখালেও জয়ের দেখা পায়নি ইংল্যান্ড।

অথচ জস বাটলার ও জো রুটই প্রায় শেষ করে দিয়েছিলেন পাকিস্তানের সম্ভাবনা। শুরুর ধাক্কা সামলে দু'জন গড়েন ১৩০ রানের জুটি। পথ খুঁজে নেয় দল। যদিও ইংল্যান্ড দলীয় ১২ রানে হারিয়েছিল প্রথম উইকেট। ৮ রান তুলে সাজঘরে ফেরেন জেসন রয়। জনি বেয়ারস্টো (৩২) সম্ভাবনা জাগিয়ে আউট। তারপর ৯ রানে এউইন মরগান ফিরে গেলে বিপাকে পড়ে স্বাগতিকরা।
পতনের এখানেই শেষ নয়, বেন স্টোকসকে (১৩) ফিরিয়ে ম্যাচে পাকিস্তানকে এগিয়ে নেন একাদশে ফেরা শোয়েব মালিক। কিন্তু তারপরই বাটলার-রুট পাল্টে দেন সব হিসাব। দেখে-শুনে খেলতে থাকেন দুজন। তাদের ব্যাটেই পথ খুঁজে নেয় ইংল্যান্ড।

যে দলটির সংগ্রহ ছিল ৪ উইকেটে ১১৮, তারাই ৫ উইকেট পৌঁছে যায় ২৪৮ রানে। ১০৪ বলে ১০৭ রানে ফেরেন রুট। তুলে নেন ক্যারিয়ারের ১৫তম শতরান। তিনি ফেরার পর শতরান আসে বাটলারের ব্যাটেও। ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরি হাঁকিয়েই ধরেন সাজঘরের পথ। ৭৬ বলে করেন ১০৩ রান।

কিন্তু শেষটা ভাল হলো না ইংল্যান্ডের। ওয়াহাব রিয়াজ ও মোহাম্মদ আমিরের বোলিং তোপে জয়ের কাছে গিয়েও হতাশ হতে হয় তাদের।

এর আগে বাবর আজম, মোহাম্মদ হাফিজ ও অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদের হাফসেঞ্চুরিতে বড় পুঁজি পায় পাকিস্তান। ফখর জামান আর ইমাম-উল-হক উদ্বোধনী জুটিতে যোগ করেন ৮২ রান। ফখর ৪০ বলে ৩৬ রান করে মঈন আলির শিকার। ইমাম ফেরেন ৪৪ রানে। এরপর দাপটে ব্যাট করেন বাবর আজম ও মোহাম্মদ হাফিজ।

বাবর আজম ৬৬ বলে ৬৩ রান তুলেন। অভিজ্ঞ মোহাম্মদ হাফিজ ঝড়ো গতিতে খেলে ৬২ বলে করেন ৮৩ রান। ইনিংসে ছিল ৮ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কা! সরফরাজ আহমেদ ৪৪ বলে ৫৫ রান করলে বড় পুঁজি পায় পাকিস্তান।

ইংল্যান্ডের সবচেয়ে সফল বোলার মঈন আলি। ১০ ওভারে ৫০ রানে তুলে নেন ৩ উইকেট। ২ উইকেট পেয়েছেন মার্ক উড। তবে হতাশ করেছেন আগের ম্যাচে ঝড় তোলা জোফরা আর্চার। ১০ ওভারে ৭৯ রান দিয়ে উইকেট পাননি এই পেসার।

তবে ম্যাচসেরা মোহাম্মদ হাফিজ। ব্যাট হাতে ঝড়ো ৮৩ ও বল হাতে ১ উইকেট নিয়েছেন তিনি!

সংক্ষিপ্ত স্কোর-
পাকিস্তান: ৫০ ওভারে ৩৪৮/৮ (ইমাম ৪৪, ফখর ৩৬, বাবর ৬৩, হাফিজ ৮৪, সরফরাজ ৫৫, আসিফ ১৪, মালিক ৮, ওয়াহাব ৪, হাসান ১০*, শাদাব ১০*; ওকস ৩/৭১, মঈন ৩/৫০, উড ২/৫৩)
ইংল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩৩৪/৯ (রয় ৮, বেয়ারস্টো ৩২, রুট ১০৭, মর্গ্যান ৯, স্টোকস ১৩, বাটলার ১০৩, মইন ১৯, ওকস ২১, আর্চার ১, রশিদ ৩*, উড ১০*; শাদাব ২/৬৩, আমির ২/৬৭, ওয়াহাব ৩/৮২, হাফিজ ১/৪৩, মালিক ১/১০)
ফল: পাকিস্তান ১৪ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা: মোহাম্মদ হাফিজ

এ সম্পর্কিত আরও খবর