যে কারণে সাব্বিরকে পছন্দ অধিনায়ক মাশরাফির

ক্রিকেট, খেলা

এম. এম. কায়সার, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-24 23:18:48

একটা ম্যাচ হচ্ছে।

ইনিংসের শেষভাগের খেলা চলছে। প্রতিপক্ষ ভারত। ম্যাচ জিততে বাংলাদেশের চাই শেষ ৩৬ বলে ৫৫ রান। হাতে জমা শেষ তিন উইকেট। ব্যাটিংয়ে আছেন সাব্বির রহমান। জাসপ্রিত বুমরা ও ভুবেনশ্বর কুমার উভয়ের তিনটি করে ওভার বাকি। টেনশনে উভয় দলের ডাগআউট। উৎকণ্ঠার মাত্রা বাংলাদেশ শিবিরে একটু বেশি। ভরসা বলতে সেই শুধু সাব্বির রহমানের ব্যাট!

তবে বাংলাদেশের ডাগআউটে একজন বেশ নির্ভার। তার বিশ্বাস সাব্বির পারবেন। এজন্যই তো তাকে দলে নেয়া। এজন্যই তার হয়ে লড়াই করা। এই সময়ের ব্যাটিংয়ের জন্য শুধু কৌশল নয় সঙ্গে যে সাহসও চাই।

সাব্বির রহমানের ব্যাটে সেই সাহসটা আছে!

অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা তার বিশ্বকাপ দল বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছিলেন বেশ আগে থেকে। কোন পজিশনে কোন খেলোয়াড় সেই হোমওয়ার্ক সেরেছেন তিনি গেলো বছরের এশিয়া কাপের আগে থেকেই।

ব্যাটিংয়ের নিচের দিকে লোয়ার মিডলঅর্ডারে একজন ম্যাচ উইনারের খোঁজ করছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। বেশ কয়েকটি নামই ছিলো। তবে সাব্বিরকেই বেছে নেন অধিনায়ক। তার সাফ কথা- শেষের দিকে যখন প্রতিপক্ষের সেরা বোলাররা বল করবে, সেই সময় ব্যাট হাতে দ্রুতগতিতে রান তুলে  ম্যাচ জেতানোর সক্ষমতা বিচার করলে সাব্বিরই সেরা পছন্দ।

আর তাই অধিনায়ক তাকে দলে চেয়েছিলেন বলেই শৃঙ্খলা ভঙ্গের শাস্তির নিষেধাজ্ঞাও কমিয়ে তাকে বিসিবি দলে ফিরিয়ে আনে। নিউজিল্যান্ড সফরের ওয়ানডে সিরিজ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে সাব্বির রহমান অধিনায়কের সেই আস্থার প্রতিদান দেন। বিশ্বকাপের এবারের দলে মুলত সেই সেঞ্চুরির পরই সাব্বির রহমানের জায়গাটা নিশ্চিত হয়ে যায়।

২০১৪ সালের নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে ক্রিকেটে সাব্বির রহমানের বাংলাদেশের জার্সি গায়ে অভিষেক হয়। অভিষেক ম্যাচেই দুর্দান্ত পারফরমেন্স! সাত নম্বরে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ২৫ বলে ৩ ছক্কা ও ৩ বাউন্ডারিতে ঝলমলে অপরাজিত ৪৪ রান। ম্যাচ শেষে অধিনায়ক মাশরাফি জাতীয় দলে তার নতুন সতীর্থের পিঠ চাপড়ে দিলেন। মুলত সাব্বিরের সেই ইনিংসই ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের দলে জায়গা করে দিলো।

এবার দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে গেছেন সাব্বির রহমান। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে নিজের অভিষেক ম্যাচটা সুখকর কিছু হয়নি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ জয় পায় তবে সাব্বির ফিরেন মাত্র ২ রান করে। সেই ব্যর্থতা ভুলিয়ে দিলেন সাব্বির পরের পাঁচ ম্যাচে। মেলবোর্নে পরের ম্যাচেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হাফসেঞ্চুরি পেলেন। বিশ্বকাপের সেই প্রথম হাফসেঞ্চুরি তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারেরও প্রথম। সৌম্য সরকারের সঙ্গে এই ব্যাপারে বেশ ভালো একটা মিল থাকলো সাব্বিরের।

বাকি চার ম্যাচেও ব্যাট হাতে সেবার সাব্বিরের পারফরমেন্স মন্দ নয়। সব ম্যাচেই ডাবল ডিজিট। তবে হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তার ৫ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় মাত্র ২৩ বলে ৪০ রানের ইনিংস আরেকবার জানিয়ে দিলো কেন মাশরাফি তাকে পছন্দ করেন? ১৭৩.৯১ স্ট্রাইকরেটে টিম সাউদি, ট্রেন্ট বোল্ট, অ্যান্ডারসন ও ম্যাকক্লেগানকে পাওাই দিলেন না সাব্বির।

বিশ্বকাপের মাঠে নিজের অভিষেক আসরে ১৮৫ বলে ১৮২ রান সাব্বিরের। যেখানে বাউন্ডারি ১৮টি। ছক্কা ৫টি। স্ট্রাইকরেট ৯৮.৩৭। বিশ্বকাপের মাঠে এত সমৃদ্ধ স্ট্রাইকরেট বাংলাদেশের আর কোন ব্যাটসম্যানের নেই।

অধিনায়ক মাশরাফি তাহলে ঠিক ব্যাটসম্যানকেই বেছে নিয়েছেন!

এ সম্পর্কিত আরও খবর