হিসেবটা সহজ ছিলো আবাহনীর জন্য। শিরোপা অক্ষুণ্ন রাখতে হলে এই ম্যাচে জিততেই হবে। তখন লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ দিনের অন্য ম্যাচে জিতলেও তাতে আবাহনীর কোন সমস্যা হবে না। শিরোপা আবাহনীরই থাকবে। পয়েন্ট রূপগঞ্জের সমান হলেও উন্নততর রান রেট আবাহনীকে টেবিলের শীর্ষে রাখে।
শেষ পর্যন্ত সেই রানরেটই আবাহনীকে এনে দিলো ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের ২০ নম্বর শিরোপা। তবে আবাহনীর চ্যাম্পিয়নশিপের এই ম্যাচটা বিখ্যাত হয়ে থাকবে সৌম্য সরকারের কীর্তির জন্য।
ব্যাট হাতে এই ম্যাচে নিজের সব ইচ্ছে পুরো করেছেন আবাহনীর এই ওপেনার। ১৫৩ বলে অপরাজিত ২০৮ রান। ১৪ বাউন্ডারি ও ১৬ ছক্কা। লিস্ট-এ মর্যাদা পাওয়ার পর ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে কোনো ব্যাটসম্যানের সীমিত ওভারের ক্রিকেটে এটাই প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি। এক ইনিংসে এটাই সবচেয়ে বেশি ছক্কা। যে কোনো উইকেট জুটিতে ৩১২ রান-সর্বোচ্চ জুটিরও রেকর্ড।
একদিনে তিন রেকর্ডের সবকটিতে সৌম্য সরকারের নাম! এই ম্যাচ, এই রেকর্ডের ডাবল সেঞ্চুরি, ছক্কার ঝড়-ক্রিকেট নিয়ে গল্প করার মতো এক ম্যাচে অনেককিছু পেয়ে গেলেন সৌম্য সরকার।
মঙ্গলবার সকালে সাভার বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে টসে জিতে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব ব্যাটিং বেছে নেয়। শুরুতেই সমস্যায় পড়ে তারা। মাশরাফির বোলিং তোপের মুখে পড়ে ৮৫ রানে ৫ উইকেট হারায় শেখ জামাল। কিন্তু তানভীর হায়দারের সেঞ্চুরির সুবাদে শেষ পর্যন্ত ৩১৭ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে শেখ জামাল। লিগের শেষ ম্যাচে মাশরাফি চার উইকেট পান।
ম্যাচ জিততে আবাহনীর চাই ৩১৮ রান। ওয়ানডে ক্রিকেটে তিনশ’র ওপর যে কোন রান তাড়া করা কঠিন কাজ। উইকেট তা সে যতোই ব্যাটিং সহায়ক হোক না কোনো? তবে আবাহনীর দুই ওপেনার সৌম্য সরকার ও জহুরুল ইসলাম যেভাবে শুরু করলেন তাতে আবাহনীর জন্য এই ম্যাচ জেতাটা হয়ে দাড়ায় ‘দুধ-ভাত’!
৮ ওভার দলের ৫০ রান পুরো। নিজের প্রথম ৫২ বলে সৌম্য সরকার হাফসেঞ্চুরির আনন্দে ব্যাট তুললেন। ইনিংসের বাকি সময়জুড়ে সৌম্যের ব্যাটে বিদ্যুৎ চমকালো! ৭৮ বলে পেলেন সেঞ্চুরি। ১০৪ বলে করলেন ১৫০ রান। ততক্ষনে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ১১ ছক্কার রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। হাঁকিয়েছেন ১৫ ছক্কা। নিজের রান দেড়শ হওয়ার পর বুঝলেন ইচ্ছে করলেই ডাবল সেঞ্চুরি সম্ভব। সেই চিন্তায় নিজের খেলা কিছুটা বদলে ফেললেন। নিরাপদে ডাবল সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে চললেন। আর আবাহনী সামনে বাড়লো ট্রফি হাতে নিয়ে উৎসবের আলো ছড়িয়ে। সঙ্গী ওপেনার জহুরুল ইসলামও তুলে নিলেন চলতি লিগে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। ১৪৯ বলে ডাবল সেঞ্চুরি পুরো করার আনন্দে দু’হাত তুলে উৎসবে মাতলেন।
জয়ের জন্য ৩১৮ রানের বড় লক্ষ্য আবাহনী টপকে গেলো অনায়াস ভঙ্গিতে প্রায়। জিতলো ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে। তখনো ম্যাচের ১৭ বল বাকি!
দিনের অন্যম্যাচে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবকে মিরপুরে রূপগঞ্জ হারালো ৮৮ রানে। আরেক ম্যাচে মোহামেডানকে ৩ রানে হারালো প্রাইম দোলেশ্বর। কিন্তু সেইসব ম্যাচের ফল যে সব তখন গুরুত্বহীন।
সব আলো এবং আলোচনা যে আবাহনীর জয় এবং সৌম্য সরকারের ডাবল সেঞ্চুরি নিয়ে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব: ৩১৭/৯ (৫০ ওভারে, তানভীর হায়দার ১৩২*, ইলিয়াস সানি ৪৫, মেহরাব হোসেন ৪৪, মাশরাফি ৪/৫৬)। আবাহনী: ৩১৯/১ (৪৭.১ ওভারে, জহুরুল ১০০, সৌম্য ২০৮*, ইমতিয়াজ ১/১০)। ফল: আবাহনী ৯ উইকেটে জয়ী। ম্যাচ সেরা: সৌম্য সরকার।