মুস্তাফিজের জন্য বিসিবির পরিষ্কার বার্তা 

ক্রিকেট, খেলা

এম. এম. কায়সার | 2024-04-16 19:45:26

মুস্তাফিজুর রহমানের আইপিএলে থাকা এবং না থাকা বিতর্কে পরিষ্কার দুই ভাগ বিসিবি। আগের দিন বিসিবি পরিচালক আকরাম খান বলেন, তিনি চান মুস্তাফিজ যেন আইপিএলে বাকি ম্যাচগুলোতে খেলেন। 

ঠিক কী বলেছিলেন আকরাম খান তা শুনি আগে– ‘মুস্তাফিজকে ব্যবহার করতে পারলে শতভাগ ফল পাওয়া যায়, যেটা ধোনির দল করে দেখাচ্ছে। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে খেলার চেয়ে ওখানে (আইপিএলে) খেললে সে অনেক কিছু শিখতে পারবে।’

আকরাম খানের এই মন্তব্য গত সোমবার মিডিয়ায় আসার ঘণ্টাকয়েক পরে বিসিবি টিম অপারেশন্স বিভাগ জানায় মুস্তাফিজের ছুটির মেয়াদ আরো একদিন বাড়ানো হয়েছে। আইপিএলের জন্য মুস্তাফিজ বিসিবি থেকে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি) পেয়েছিলেন ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। সেটা আরো একদিন বাড়িয়ে ১ মে পর্যন্ত করা হয়েছে। এরপরই তাকে দেশে ফিরে আসতে হবে। জাতীয় দলের সঙ্গে যোগ দিতে হবে। 

অর্থাৎ মুস্তাফিজের আইপিএলে ‘থেকে যাওয়া’ নিয়ে আকরাম খানের মতামতের সঙ্গে বিসিবির অন্য অংশ মোটেও একমত নয়। এই বিষয়ে স্পোর্টস বাংলা এবং বার্তা২৪ এর পক্ষ থেকে বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। প্রশ্ন রাখা হয় মুস্তাফিজের আইপিএল বিষয়ক যে মন্তব্য আকরাম খান করেছেন তার সঙ্গে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগও একমত কি না? 

ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের পরিষ্কার উত্তরটা এমন– ‘আমরা মোটেও এই মন্তব্যের সঙ্গে একমত নই। সিদ্ধান্ত সহজ, আইপিএল থেকে জাতীয় দলের স্বার্থটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া টানা খেলায় থাকা মুস্তাফিজের বিশ্রামেরও প্রয়োজন রয়েছে। তার ওয়ার্ক লোড ম্যানেজমেন্টও আমাদের দেখতে হবে। তাই নির্ধারিত ছুটি শেষে মুস্তাফিজকে দেশে ফিরে এসে জাতীয় দলের সঙ্গে যোগ দিতেই হচ্ছে। এই বিষয়ে আমাদের দ্বিতীয় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই।’

আইপিএলে মুস্তাফিজের নতুন করে শেখার কিছু নেই বলেও মনে করে ক্রিকেট পরিচালক কমিটি। সাত-আট বছর ধরে মুস্তাফিজ আইপিএলে খেলছেন। আইপিএল তো তার জন্য নতুন কোনো ক্ষেত্র নয়। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে এই মৌসুমে তিনি ধোনির চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে খেলছেন। কিন্তু ধোনির পরামর্শেই তিনি অনেক বেশিকিছু অর্জন করে ফেলেছেন, এমন প্রচলিত জনপ্রিয় ধারণায় বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা কমিটির মোটেও আস্থা নেই। 

তাদের বক্তব্য পরিষ্কার। মুস্তাফিজ প্রথম ম্যাচে শুধু চার উইকেট পেয়েছেন। এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টে তার শিকার ১০ উইকেট। কিন্তু যে ম্যাচগুলোতে মুস্তাফিজ রান খরুচে ছিলেন, সেটা কেন তাহলে ধোনি কমাতে পারলেন না? আসলে যার কাজ তাকেই করতে হয়। কেউ পরামর্শ দিলো আর তাতেই সব সমাধান হয়ে গেল, এই ভাবনা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ক্রিকেটে টিকে থাকা যায় না। ৯ বছর ধরে মুস্তাফিজ আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট খেলছেন। টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডে এবং টেস্ট-এই তিন ফরম্যাটের ক্রিকেট মিলিয়ে তার আর্ন্তজাতিক ম্যাচের অভিজ্ঞতা ২১০টি। আইপিএলে নিজের অভিষেক মৌসুম ২০১৬ সালে ভালো পারফরম করেছিলেন তিনি। সেবার তার দল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।মুস্তাফিজ ১৬ ম্যাচে ১৭ উইকেট পেয়েছিলেন।

তবে আইপিএলের সেই ক্লান্তি নিয়ে কাউন্টি ক্রিকেটে সাসেক্সের হয়ে খেলতে নেমে বড় ইনজুরিতে পড়েন মুস্তাফিজ। সেই ইনজুরির জন্য তাকে দেড়বছর ভুগতে হয়েছিল। বিসিবি সেই সময় তার সার্বিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। অস্ত্রোপচার টেবিলে উঠতে হয়েছিল মুস্তাফিজকে। সেই ইনজুরির ধাক্কায় মুস্তাফিজ তার শুরুর সময়কার রিদম হারিয়ে বসেন বলে বিসিবি প্রায়ই অভিযোগ করে। তাই মুস্তাফিজকে ইনজুরি থেকে বাঁচিয়ে রাখার জোর চেষ্টা তাদের। ২০২১ সালের টি- টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ হিসেবে আইপিএল খেলে ক্লান্ত হওয়া সাকিব আল হাসান ও মুস্তাফিজ রহমানের শ্রান্তি ও অবসাদকে আজও দায়ী করে বিসিবি। 

আইপিএলের কঠিন সিডিউল, ভ্রমণ ক্লান্তি, কড়া অনুশীলন-ভীষণ পরিশ্রমসাধ্য কাজ। এই ব্যস্ত সুচি এবং অতিরিক্ত ক্রিকেট ক্রিকেটারদের শক্তি শুষে নেয়। এমন অবস্থায় ক্লান্ত-শ্রান্ত শরীর নিয়ে পরবর্তী কঠিন কোনো ক্রিকেট মিশনে খেলতে নামলে ইনজুরিতে পড়ার শঙ্কা প্রচুর। সম্ভাব্য সেই জটিলতা বা দুর্ঘটনা এড়াতেই মুস্তাফিজকে টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে বাড়তি বিশ্রামে রাখতে চায় বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগ। 

জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ঘরের মাটিতে টি-টোয়েন্টি সিরিজে সব ম্যাচে মুস্তাফিজকে খেলানোর পরিকল্পনাও করা হচ্ছে না। হয়তো দুটি ম্যাচে খেলিয়ে বাকি তিন ম্যাচে বিশ্রামে রাখা হবে। মুস্তাফিজের এই ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টের বিষয়টি শুধুমাত্র বিসিবিরই চিন্তার বিষয়। নিশ্চয়ই এটা নিয়ে ধোনির চেন্নাই কিংস মেধা খরচ করবে না!  

অনেকের মতো জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও বিসিবির পরিচালক আকরাম খানেরও ধারণা, জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সিরিজে খেলার চেয়ে আইপিএলে খেললেই বরং মুস্তাফিজের জন্য বেশি উপকার হতো। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট, কঠিন প্রতিপক্ষ, বিপুল দর্শকদের চাপ সামলানো, বিশ্বের সেরাদের সঙ্গে খেলা-এসব অনুষঙ্গ নিশ্চয়ই মুস্তাফিজ জিম্বাবুয়ে সিরিজে পাবেন না। কিন্তু আইপিএলে পাবেন। 

তবে বিসিবির চিন্তা একটু ভিন্ন। মুলত জিম্বাবুয়ে সিরিজের দলকেই নিয়েই বিশ্বকাপের মঞ্চে নামতে চায় বাংলাদেশ। তাই পুরো দলকে একজোট করে রাখতে, দলের বাঁধন শক্তপোক্ত করতে সব ক্রিকেটারকে এই সিরিজে খেলাতে চায় টিম ম্যানেজমেন্ট। সেই সঙ্গে টানা ক্রিকেটে থাকা ক্রিকেটারদের ক্লান্তি এড়াতে ওয়ার্ক লোডকেও একটা সুষ্ঠ ব্যবস্থপনার মধ্যে আনতে চায় ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগ।

সেজন্যই মুস্তাফিজের এনওসি’র মেয়াদ ১ মে’র পর বাড়াতে নারাজ বিসিবি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর