শূন্য থেকে শিখরে

ফুটবল, খেলা

হোসাইন মাহমুদ আব্দুল্লাহ | 2024-04-15 15:14:17

আপনি তাদের ‘আউটসাইডার্স’ বলতে পারেন। শিরোপার হিসাব-নিকাশে তারা শূদ্র। তাদের জন্য বাজি ধরার মতো থাকে না কেউ। কিন্তু কে জানে কোন মন্ত্রবলে পাদপ্রদীপের আড়াল থেকে হঠাৎ সামনে চলে আসে তারা। চমকের পর চমক দেখায়। গুটি গুটি পায়ে পাড়ি দেয় রূপকথার জগতে। জন্ম হয় কিংবদন্তির। 

একবিংশ শতকে ইউরোপীয় লিগ ফুটবলে এমন পাঁচটি ক্লাবের অবিশ্বাস্য, সংখ্যাতত্ত্বকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো শূন্য থেকে শিখরে আরোহণের গল্প জানাতেই এই লেখা।

আতলেতিকো মাদ্রিদ

লা লিগা ২০১৩-১৪

লা লিগার শিরোপা তখন রিয়াল মাদ্রিদ আর বার্সেলোনার হাতে ঘুরপাক খাচ্ছে। নয় বছরে এই শিরোপা তৃতীয় কোনো দলকে ধরা দেয়নি। রিয়াল-বার্সা বাদে বাকি ১৮ দলের জন্য সর্বোচ্চ সাফল্য হয়ে দাঁড়ায় তৃতীয় স্থান। কিন্তু দিয়েগো সিমিওনের আতলেতিকো মাদ্রিদ ২০১৩-১৪ মৌসুমে বার্সা-রিয়ালের রাজত্বে হানা দেয়। বার্সেলোনাকে পুরো মৌসুম টক্কর দিয়ে ১৯৯৫-৯৬ মৌসুমের পর প্রথমবার লিগ শিরোপা জিতে নেয় আতলেতিকো।

২৭ গোল করে আতলেতিকোর লিগ জয়ের অন্যতম নায়ক বনে যান দিয়েগো কস্তা। এই শিরোপা দিয়েই আতলেতিকোর ডাগআউটে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করে নেন আর্জেন্টাইন ম্যানেজার সিমিওনে। এক দশক পর এখনো আতলেতিকোর ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

ভিএফবি স্টুটগার্ট 

বুন্দেসলিগা ২০০৬-০৭

মৌসুমের প্রথম ম্যাচেই ৩-০ গোলের হার। প্রথম পাঁচ ম্যাচে মোটে দুই জয়। তরুণ স্টুটগার্ট দলটির লিগ জয়ের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিতে শুরুর ওই ফর্মহীনতা যথেষ্ট ছিল। কিন্তু খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে দারুণ প্রত্যাবর্তনের গল্প লেখে তারা। ১৯৯১-৯২ মৌসুমের পর প্রথমবার ছুঁয়ে দেখে বুন্দেসলিগা শিরোপা। সে মৌসুমে স্টুটগার্টের হয়ে ১৪ গোল করে জার্মান ফুটবলে নিজের জানান দেন স্ট্রাইকার মারিও গোমেজ।

মঁপেলিয়ে 

লিগ আঁ ২০১১-১২

কাতারি মালিকানায় পিএসজির প্রথম মৌসুম। ডাগআউটে কার্লো আনচেলত্তির মতো ফুটবল ট্যাকটিশিয়ান। তাদের হাতেই মৌসুম শেষে শোভা পাবে শিরোপা, বেশিরভাগ বোদ্ধারা তেমনটাই ভাবছিলেন। কিন্তু সে মৌসুমে অনেকটা যেন ‘সিলেবাসের বাইরে’ থেকে এসে লিগ শিরোপা জয় করে মঁপেলিয়ে। এখন পর্যন্ত সেটাই তাদের একমাত্র লিগ শিরোপা জয়। তরুণ অলিভিয়ের জিরুরা পিএসজিকে চমকে দিয়ে লিগ জিতে নেন।

লেস্টার সিটি

প্রিমিয়ার লিগ ২০১৫-১৬

সম্ভবত ক্রীড়া ইতিহাসেই এমন ঘটনা আর ঘটেনি। তর্কসাপেক্ষে বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক প্রতিযোগিতা প্রিমিয়ার লিগে বাঘা বাঘা সব দলগুলোকে চমকে দিয়ে লিগ জিতে নেয় ‘পুঁচকে’ লেস্টার সিটি। লিগ জেতার মোটে এক মৌসুম আগে যারা কিনা প্রথমবার দেখা পেয়েছিল প্রিমিয়ার লিগের।

জেমি ভার্ডি, রিয়াদ মাহরেজ, এনগোলো কান্তের মতো একঝাঁক প্রতিভাবান ফুটবলারকে নিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করেন ইতালিয়ান ম্যানেজার ক্লদিও রানিয়েরি।

বায়ার লেভারকুজেন

বুন্দেসলিগা ২০২৩-২৪

বুন্দেসলিগায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল বায়ার্ন মিউনিখের। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল, মৌসুম শুরুর আগেই বলে দেয়া যেত বায়ার্নের শিরোপা জয়ের কথা। শক্তিমত্তায় তাদের ধারেকাছেই যে নেই জার্মানির আর কোনো ক্লাব। কিন্তু নিজের পেশাদার কোচিং ক্যারিয়ারের প্রথম মৌসুমেই সব হিসাব-নিকাশ বদলে দিয়েছেন জাবি আলোনসো। 

সাবেক বায়ার্ন ফুটবলার আলোনসোর হাতেই শেষ হয়েছে বুন্দেসলিগায় বায়ার্নের রাজত্ব। শেষ হয়েছে তাদের টানা ১১ লিগ শিরোপা জয়রথ। তার কোচিংয়ে ক্লাবের ১১৯ বছরের ইতিহাসে প্রথমবার লিগ শিরোপার দেখা পায় বায়ার লেভারকুজেন। মৌসুম শুরুর আগে অপটা’র ভবিষ্যৎবাণী অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ মৌসুমে লেভারকুজেনের লিগ জয়ের সম্ভাবনা ছিল ০.৯ শতাংশ। কিন্তু দৃষ্টিনন্দন ফুটবলে সূক্ষ্ম সে সম্ভাবনাকে সাফল্যের মহীরুহে রূপ দিয়েছে আলোনসোর দল।

এ সম্পর্কিত আরও খবর