‘ডটবলের ম্যাচে’ বাংলাদেশের বড় হার

ক্রিকেট, খেলা

এম. এম. কায়সার, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 00:39:56

বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সময় মনে হচ্ছিল এই উইকেটে ব্যাটিং করা কি ভীষণ কষ্টকর কাজ। কি আশ্চর্য, খানিকবাদে সেই একই উইকেটে ভারতের ব্যাটিংয়ের সময়টাকে কি সাবলীলই না মনে হল! আর তাই বাংলাদেশের ১৭৩ রানের মামুলি স্কোরকে টপকে যেতে ভারতের বেশি সময়ও লাগল না। মাত্র ৩৬.২ ওভারে ৭ উইকেটে অনায়াস ভঙ্গিতে ম্যাচ জিতে নিল ভারত। সুপার ফোরে বাংলাদেশের যাত্রা হল বড় হার দিয়ে।

ওপেনিং জুটিতে ৬১ রান তুলে নিয়ে ভারত ম্যাচ জয়ের শুরুর কাজ বেশ ঝটপটই সেরে নেয়। এরপর আম্বাতি রাইডু ফিরেন ১৩ রানে। আর বাকীটা পথ মহেন্দ্র সিং ধোনিকে (৩৩) নিয়ে লড়াইটা একেবারে সহজ করে দেন রোহিত শর্মা। বাংলাদেশের পুঁজিতে আর কিছু রান থাকলে শতরানই হয়তো করতেন তিনি। কী আর করা, ৮৩ রানে অপরাজিত থাকেন রোহিত।

১৭৩ রানের সামান্য জমা নিয়ে ভারতের মতো লম্বা ব্যাটিং লাইনআপের দলকে চ্যালেঞ্জ জানানো যায় না। টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের এক নম্বর সমস্যার নাম এখন-ভঙ্গুর ব্যাটিং!

সেই ভঙ্গুর ব্যাটিংই এই ম্যাচের চিত্র ঠিক করে দেয়। দুবাইয়ের উইকেট স্লো তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু তাই বলে এই উইকেট ৬৫ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলার মতো বিষাক্ত কিছু নয়! ১৫ ওভারের মধ্যে বাংলাদেশের ইনিংসের ৬০ বলই ডট বল! সেই শুরু ডটবলের কাহিনী। ৩০ ওভার পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে রান একশ’র নিচে। ডটবলের সংখ্যা গিয়ে দাড়িয়েছে তখন ১২১! উইকেট তো পড়ল না, মনে হল ব্যাটসম্যানরা কে কত জলদি এবং অদ্ভুত সব কায়দায় উইকেট বিসর্জন দিয়ে আসবেন-তারই প্রতিযোগিতা চলল। সাকিব ও মুশফিক দুজনের আউটের ধরন এই দোষে সবচেয়ে বেশি সমালোচিত।

দুই বলে দুটি বাউন্ডারি হাঁকানোর পর সাকিবের মনে হল, হয়ে যাক বাউন্ডারির হ্যাটট্রিক। ঠিক আগের বলেই শর্ট স্কয়ার লেগে তখন ফিল্ডার সেট করেছেন ধোনি। সেখানেই ক্যাচ দিয়ে এলেন সাকিব। ৩০ গজ রেখায় ফিল্ডার থাকা সত্তেও মুশফিক রিভার্স সুইপ খেললেন। সেখানেই ক্যাচ। শেষ হয়ে গেল তারও সম্ভাবনা জাগানো ইনিংস। মোহাম্মদ মিঠুন শুধু আউটই হলেন না, সেই সঙ্গে রিভিউটাও নষ্ট করলেন! ওভাবে রিভিউ নষ্ট হওয়ায় বেচারা মাহমুদউল্লাহ সেই কারণেই আউট না হয়ে আউট হয়ে ফিরলেন! মোসাদ্দেক আসলে কি খেলতে নেমেছিলেন সেটা বোঝা মুশকিল! ১ রানে রিটার্ন ক্যাচ দিয়েও রক্ষা পান। কিন্তু ৪৩ বলে তার ১২ রানের ইনিংস দেখে মনে হচ্ছিল যেন ওয়ানডে ভুলে টেস্ট খেলতে নেমেছেন তিনি!

শুরুর দিকের ব্যাটসম্যানদের উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসার কু-অভ্যাস। এবং ক্রমাগত বল গিলে খাওয়ার মান্ধাতা আমলের ব্যাটিং-সার্বিক এই ব্যর্থতার যোগফলে স্কোরবোর্ডে ১৭৩ রানের মামুলি সঞ্চয়!

এই ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের মুল কৃতিত্ব লেজের সারিতে মেহেদি মিরাজ ও অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার ব্যাটিং। অষ্টম উইকেট জুটিতে এই দুজনে যোগ করেন ৬৬ রান। তাও আবার ওভার প্রতি পাঁচের ওপর রান গড়ে। এই দুজনের ব্যাটিং প্রমান করছে এই উইকেটে চাইলেই লম্বা সময় ধরে ব্যাট করা যায়, রানও করা যায়। ভারতের এই বোলারদের খেলা যায়। ছক্কাও হাঁকানো যায়। মেহেদি মিরাজ করেন দলের সর্বোচ্চ ৪২ রান। মাশরাফির ব্যাট থেকে রান মিলে ৩২ বলে ২৬।

ইনিংসের প্রথম ওভার থেকে একেবারে শেষ পর্যন্ত এই ম্যাচে বাংলাদেশের সমস্যা বাড়িয়েছে; ডট বল! সবমিলিয়ে বাংলাদেশের ইনিংসে ডটবলের সংখ্যা ১৯০! ওভারের হিসেবে ৩২ ওভার শুধু ডটবলেই কেটেছে বাংলাদেশের! এশিয়া কাপে সুপার ফোরে নিজেদের এই ম্যাচকে বাংলাদেশ এখন অন্য নামে ডাকতেই পারে।

হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন!

ডটবলের ম্যাচ!

সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ: ৪৯.১ ওভারে ১৭৩/১০ (সাকিব ১৭, মুশফিক ২১,  মাহমুদউল্লাহ ২৫, মাশরাফি ২৬, মেহেদি মিরাজ ৪২, জাদেজা ৪/২৯, ভুবেনশ্বর ৩/৩২, বুমরা ৩/৩৭)
ভারত: ৩৬.২ ওভারে ১৭৪/৩ (রোহিত ৮৩*, ধাওয়ান ৪০, রাইডু ১৩, ধোনি ৩৩, কার্তিক ১*; মাশরাফি ১/৩০, মিরাজ ০/৩৮, মুস্তাফিজ ০/৪০, সাকিব ১/৪৪, রুবেল ১/২১)
ফল: ভারত ৭ উইকেটে জয়ী

এ সম্পর্কিত আরও খবর