বিএনপি ও খালেদাকে নিয়ে যা বললেন নাসিম

, রাজনীতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-27 02:16:37

ঢাকা: কামরুল হাসান নাসিম যিনি নিজেকে বিএনপি পুনর্গঠনের উদ্যোক্তা হিসেবে দাবি করে আসছেন। কখনো দল পুনর্গঠনের ডাক, কখনো সাংবাদিক সম্মেলন, আবার কখনো বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি দিয়ে আলোচিত সমালোচিত হয়েছেন তিনি।

সম্প্রতি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে তিনি যে কথা বলেছেন তা নতুন আলোচনা সমালোচনা তৈরি হবে।

নাসিম মনে করেন বিএনপি আর জিয়াউর রহমানের আদর্শের পথে নেই। এমনকি জাতীয়তাবাদী চিন্তা চেতনার বাইরে চলে গেছে। বিএনপি এখন জামায়াতবাদী চেতনা লালন করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

একদিকে তিনি বিএনপিকে জাতীয়তাবাদী চেতনার উপর দাঁড়িয়ে পুনর্গঠনের কথা বলছেন, অন্যদিকে দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে তার অপরাধ স্বীকার করার কথাও বলছেন।

সেই সঙ্গে তিনি খালেদা জিয়াকে নতি স্বীকার করে বলতে বলেন, ‘আমি (খালেদা জিয়া) দল ও দেশের জন্য নেতৃত্ব দেয়ার মত চরিত্র কখনই ছিলাম না। আমার পুত্র তারেক রহমান ওর বাবার মত হতে পারেনি। আমি জামায়াতের সাথে রাজনীতি করাটাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলাম।’

নাসিম মনে করেন, এই স্বীকারোক্তির মাধ্যমে বিএনপি জাতীয়তাবাদী চেতনায় ফিরে যাবে এবং দলের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হবে। জিয়ার আদর্শ বাস্তবায়নে সকলে এক হয়ে কাজ করবে।

খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, দলের পক্ষ থেকে আমি বর্তমান সরকারকে বলবো, আপনারা খালেদা জিয়াকে মুক্তির দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করুন। কারণ, ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার আমাদের কোন উদ্দেশ্য নেই। আবার তৃতীয় অগণতান্ত্রিক শক্তিকে প্রত্যাশা করি না। সব ভুলে একজন অযোগ্য নেত্রী ও দুষ্টু মা খালেদা জিয়াকে মুক্ত দিন। কারণ, দল পুনর্গঠনে অতিসত্বর তাঁকে আমাদের দরকার।

নিজেকে একজন ওষুধওয়ালা দাবি করে নাসিম বলেন, বিএনপি'র পাঁচটি অসুখ রয়েছে। এ রোগগুলো যতদিন দল থেকে দূর করা না হবে, ততদিন জিয়ার আদর্শ বাস্তবায়ন হবে না। অসুখগুলো হলো- দলটি জাতীয়তাবাদী চেতনা থেকে জামায়াতবাদী হয়ে পড়েছে, নাশকতাকে রাজনীতির হাতিয়ার করে নিয়েছে, বিদেশি শক্তির ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, জনস্বার্থ সংরক্ষণে রাজনীতি করতে পারছে না এবং দল পরিচালনায় জিয়া ও তারেক রহমান ব্যর্থ। অথচ তারা এই সমস্যাগুলো সমাধানে কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না।

তিনি মনে করেন, এই মুহূর্তে বিএনপি আওয়ামী লিগের সঙ্গে রাজনৈতিক লড়াই করার সক্ষমতা নেই। তাই আমি (নাসিম) চেষ্টা করছি বিএনপি'র সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দকে এটা বোঝাতে যে, আপাতত দল পুনর্গঠন করতে বছর চারেক সময় লাগবে।
আগামী চার বছরে দল পুনর্গঠন করে ২০২২ সালে শুরু হবে লড়াই। কেননা এই মুহূর্তে জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলোতে আমরা কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। এমনকি আগামীতে ক্ষমতায় গেলে আমি জনগণের জন্য কি করব তার কোন সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ নিয়ে আমাদের কাছে। আমাদের উচিত হবে একদিকে দলকে পুনর্গঠন করা এবং দলের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা যে আমিরা দেশের জন্য কি কাজ করবো।

বিএনপি‘র পুনর্গঠন প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, জিয়াউর রহমানকে সামনে রেখে রাজনীতি করতে হবে। ত্রিশ বছরের অধিক সময় ধরে খালেদা জিয়াই দলের ঐক্যের প্রতীক। তাকে রেখেই পুনর্গঠন করতে হবে। তবে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে দেয়া যাবে না। তাছাড়া সজ্জন চরিত্রের দুই একজন মির্জা ফখরুলের মতো নেতাদের নিয়ে বিএনপি পুনর্গঠন করতে হবে। গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচনের মাধ্যমে শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচিত করে ঢেলে সাজাতে হবে।

কামরুল হাসান নাসিম এও বলেন যে, দল পুনর্গঠনের পর জনগণের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে 'তোমরা আমাদের নির্বাচিত করো'। পুনর্গঠিত বিএনপি মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করে শহীদ জিয়াকে নিয়ে গর্ব করবে, বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা বলবে। জামায়াতকে নিয়ে রাজনীতি করবে না। এতে করে দলের ভেতরে যেমন শৃঙ্খলা ফিরে আসবে তেমনইভাবে দলের বাইরে যারা জাতীয়তাবাদী চেতনায় বিশ্বাসী ড. কামাল, বি. চৌধুরী, মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ অনেকেই আমাদের সেই লড়াইয়ে শামিল হবে। এমনকি, বিএনপির জন্য শেখ হাসিনাও উদার হবেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর