পানি না ছুঁয়ে কি বিএনপি মাছ ধরতে পারবে?

, রাজনীতি

মুজাহিদুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | 2023-09-01 12:31:11

ঢাকা: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কি যাবে বিএনপি? এখনো কেন্দ্র থেকে তেমন কোন নির্দেশনা আসেনি। সম্প্রতি খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ফল কিন্তু ২০১৩ সালের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ফলের মতো নয়। সরকারদল যে শুধু বলপূর্বক ভোট কেড়ে নিয়েছে তা নয়, বরং বিএনপি’র অভ্যন্তরেও জানা হয়ে গেছে ’মাঠের অবস্থা ভাল নয়’।

কেন্দ্রের প্রভাব পড়েছে মাঠপর্যায়েও। সরকার দলের হামলা মামলা ও শোষণ নিপীড়নের অভিযোগ করে রাজনীতি থেকে দূরে অবস্থান করছেন দলের নেতারা। বলতে গেলে গা বাচিয়ে চলা, যেন- 'ধরি মাছ, না ছুঁই পানি'। ফলে আগামী নির্বাচন বা ভবিষ্যত সর্ম্পকে এখনো অনিশ্চিত দলের সকল স্তরের নেতাকর্মীরা।

বিএনপি’র জেলা কিংবা হাইকমান্ড সর্ব পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ যেন দিশেহারা। একদিকে তাদের নেত্রী কারাগারে অবস্থান করছেন, অন্যদিকে নির্বাচন প্রশ্নে স্পষ্ট কোন নির্দেশনা নেই। এরই মধ্যে একটা বিষয় কিন্তু বিএনপি নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারাও বুঝতে পারছেন যে, এই সরকার তার অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত করবে, এবং তাদের নির্বাচনে যাওয়ার বিকল্প নেই। কেন্দ্র থেকে নেই কোন স্পষ্টত নির্দেশনা, এমন অবস্থায় কি করবেন জেলা উপজেলাসহ তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা?

দলে যে এখন সিদ্ধান্ত দেয়ার কেউ নেই, সেটা নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বললেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সূত্র জানিয়েছে, চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে সঙ্গে, মানসিক অবস্থাও। এমন অবস্থায় তিনি সিদ্ধান্ত দেয়ার মতো অবস্থায় নেই। ফলে তার কাছ থেকে সঠিক দিক-নির্দেশনা এখন চাইলেও পাওয়া যাচ্ছে না। কারাবাসের মধ্য দিয়ে সরকার তাকে দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রেখেছেন।

আবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে নির্দেশনা দিলেও তা দলের নেতাকর্মীদের উজ্জ্বীবিত করতে পারছে না। এর অন্যতম কারণ তিনি দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন না। শুধুমাত্র গুটিকয়েক নেতাদের সঙ্গেই যোগাযোগ রেখে যাচ্ছেন তিনি। এতে করে দলের মধ্যে গ্রুপিং তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন একটি অংশ। ফলে সাময়িক দলের মধ্যে কোন বিভেদ নেই বলে নেতারা প্রচার করলেও নির্বাচনকে সামনে রেখে এটা বড় আকারে প্রকাশ পেতে পারে। তখন পরিস্থিতি মোকাবেলা দলটির জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। এবং তৈরি হতে পারে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা।

বার্তা২৪.কম কথা বলেছে বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের থেকে শুরু করে কেন্দ্রের নীতিনির্ধারণী পর্যৃায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে। তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, নির্বাচনে বিএনপি’র ভবিষ্যত কি? সেই পুরনো জবাবই নতুন করে শুনিয়েছেন তারা।

মাঠের কর্মীরা যেমন স্বাভাবিকভাবেই কেন্দ্রের নেতাদের দোষ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যে সিনিয়র নেতার কেনো আন্দোলনে নামছেন না। কর্মসূচি দিয়ে ঘরে বসে থাকেন? তূণমূল নেতাকর্মীদের এমন প্রশ্নের জবাবে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ উল্টো কর্মীদের দিকে ছুড়লেন প্রশ্নের তীর! তিনি বলেই বসলেন, ‘মাঠে নেমেছেন কখনো? আপনারা আমাদেরকে মাঠে নামতে বলেন । আপনাদের সময়ও আমরা মাঠে নেমেছি, আন্দোলন সংগ্রাম করেছি।’ এর আগে রাজনীতিতে এমন বক্তব্য কেউ কখনো শুনেননি।

নির্বাচনে অংশ না নিলে বিএনপি’র ভবিষ্যত কি হবে? মেহেরপুর জেলা বিএনপি’র সভাপতি মাসুদ অরুন বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘আপাতত নির্বাচন নিয়ে ভাবনা নয়। বরং চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনই গুরুত্বপূর্ণ। ঈদের পরেই খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্যে যে আন্দোলন সংগ্রাম শুরু হবে, তার মধ্য দিয়েই নির্বাচনের ব্যাপারে হয়তো সিনিয়র নেতৃবৃন্দ সিদ্ধান্ত দেবেন। এখন পর্যন্ত নির্বাচন সংক্রান্ত কোন ধরনের নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।

এতো গেলো জেলা পর্যায়ের কথা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন শুনালেন দেশের সংকটের কথা। তবে বিএনপি কি করবে সেই বিষয়ে কোন স্পষ্ট বক্তব্য নেই। তিনি বলেন, ‘সংকটটা হলো দেশের মানুষ সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারেন না। সবার যেটা ভয় এবং উদ্বেগ যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটাররা ভোট দিতে পারবে না, গায়ের জোরে একটা সরকার আসবে। এটাই হচ্ছে সংকট।

নিজ দল বিএনপি’র ভবিষ্যত তিনি আওয়ামীলীগের উপরই ছেড়ে দিয়েছেন। সেই পুরনো শব্দগুলোর পুনরাবৃত্তি করে সরকারের কাছে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, সহায়ক সরকার দাবি করেন তিনি।

মোশাররফ হোসেনতো সরকারের উপর দায় দিয়ে ভারমুক্ত হলেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেকজন সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের কথাতেও সংকট আর সরকারের কাছে অসহায় আত্মসমর্পনের ছায়া। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, বর্তমান সময়ে যে রাজনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে, সেটা নিরসন করতে হলে যারা ক্ষমতায় রয়েছে তাদেরকেই উদ্যোগ নিতে হবে। আর এই উদ্যোগ তখনই সফল হবে যখন ক্ষমতাসীন দলসহ বিরোধীদল এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো যখন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দেবে।

এই সংকটের সমাধান করার জন্য যে পথ অবলম্বন করা দরকার সেই পথে সরকার পা বাড়াবে না বলে হতাশার মধ্য দিয়েই কথা শেষ করলেন তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর