নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যেসব সংসদ সদস্য নৌকার বিপক্ষে অপস্থান নিয়েছেন তাদের বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমপিদের উদ্দেশ্যে বলেন, যারা নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছে তারা এখন নিজ নিজ এলাকায় নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে, এটা তো আমাদের দেখতেই হবে। আগামীতে তাদের আর মনোনয়ন দেওয়া হবে না। এছাড়া দল ও সংসদে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য এমপিদের কঠোর বার্তা দেন প্রধানমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) রাতে জাতীয় সংসদ ভবনের নবম তলায় সরকারি দলের সভাকক্ষে আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের সভায় এই নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সাবেক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, এ কে এম শামীম ওসমান, ফজলে নূর তাপস, আতিউর রহমান আতিক, মমতাজ বেগম ও মুন্নুজান সুফিয়ান বক্তব্য রাখেন।
বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের কয়েকজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। বৈঠকে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, এমপিদের শৃঙ্খলা রক্ষার নির্দেশ দিয়ে বলেন, প্রত্যেককে নিজ নিজ এলাকার প্রতি আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে।
দলের মধ্যে যেসব এমপি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচন করে এমপি হয়ে এখন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সেই নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তাদের বিষয়টা তো আমাদের দেখতেই হয়। আগামী নির্বাচনে তাদের আর মনোনয়ন দেওয়া হবে না। নৌকা মার্কা নিয়ে বিজয়ী হয়ে এলাকায় নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে শুক্রবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকা এবং সংসদে পরিপূর্ণ শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সংসদ সদস্যদের প্রতি তাগিদ দিয়ে বলেন, যার যার এলাকায় যান, দলীয় কর্মকাণ্ডে মনোযোগী হন, নেতা-কর্মীসহ জনগণের পাশে থাকুন, তাদের সুখ-দুঃখের সঙ্গী হয়ে কাজ করুন। তিনি প্রত্যেক জেলা-উপজেলায় দলের নিজস্ব কার্যালয় স্থাপনের তাগাদা দিয়ে বলেন, যেসব জেলা বা উপজেলায় নিজস্ব দলীয় কার্যালয় নেই, দ্রুত সেখানে কার্যালয় নির্মাণ করতে হবে। এ ব্যাপারে তিনি পরিপূর্ণ রিপোর্ট দেওয়ার জন্য বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের নির্দেশ দেন।
এছাড়া যেসব মন্ত্রী এখনও ন্যাম ভবনের ফ্ল্যাট ছাড়েননি তাদের উদ্দেশ্য বলেছেন, ন্যাম ভবনের প্রতি এতই যদি দরদ থাকে তাহলে মন্ত্রিপাড়ার বাসা ছেড়ে ন্যাম ভবনে ওঠেন। এখানে গাড়ী চালক, পিয়নদের জন্য না। ন্যাম ভবন ছেড়ে অন্যদের থাকার সুযোগ করে দেন।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বৈঠকে দলের মধ্যে কোনো ধরণের কোন্দল-দ্বন্দ্বে জড়িত না হওয়ার জন্য সংসদ সদস্যদের নির্দেশ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, কোনোভাবেই কোন্দল বা দ্বন্দ্বে জড়িত হবেন না। এ সময় সাবেক এক মন্ত্রীর নাম উল্লেখ না করে তাকে তীব্র ভৎর্সনা করে তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচনে দলের মনোনীত নৌকার প্রার্থীর বিরোধীতা করেছেন। বিরোধীতা করতে গিয়ে সংঘর্ষে একজন কর্মীর প্রাণ গেছে। এসব কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না। যে যত বড় নেতাই হোন না কেন, দলের বিরোধীতা কিংবা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে কাউকেই ছাড়া হবে না। অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবার সংসদে দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বাজেট দেওয়া হয়েছে। বাজেট বাস্তবায়নকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। তাই নিজ নিজ এলাকায় যেয়ে গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ যেন দ্রুত সম্পন্ন হয় সেদিকে নজর রাখবেন। উন্নয়নের কাজকে ত্বরান্বিত করুন। মনে রাখবেন, দেশের জনগণ আমাদের ওপর পূর্ণ আস্থা-বিশ্বাস রেখে ভোট দিয়েছে। জনগণের সেই ভোটের মর্যাদা আমাদের রক্ষা করতে হবে। বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে আরও ত্বরান্বিত করতে হবে।
সূত্র জানায়, বৈঠকে আওয়ামী লীগের সংসদীয় সম্পাদক নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের দলের ফাণ্ডে বার্ষিক চাঁদা বাকি থাকার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী দ্রুত যেসব সংসদ সদস্যদের দলের বার্ষিক চাঁদা বাকি রয়েছে তা দ্রুত পরিশোধের নির্দেশ দেন।