আ’লীগের আঁতুরঘর, পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেন

আওয়ামী লীগ, রাজনীতি

তপন কান্তি রায়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-12-12 20:41:05

পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক স্থাপনা রোজ গার্ডেন। এই রোজ গার্ডেনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস।

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন এই বাগানবাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগ। ২২ বিঘার জমির উপর বাগানবাড়িটি নির্মিত হয় ১৯৩০ সালে; বাড়ির মালিক ছিলেন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ঋষিকেশ দাস।

 

রুচিশীল স্থাপত্যশৈলীর আদলে দোতলা এই বাড়িটি যখন নির্মিত হয়েছিল; তখন বাড়ির চারপাশে লাগানো হয়েছিল দুর্লভ প্রজাতির গোলাপ গাছ। আর সেই কারণে বাড়ির নাম ‘রোজ গার্ডেন’ রাখা হয়।

তবে বাড়ির মূল ফটকের দেয়ালে ‘রোজ গার্ডেন’ লেখা থাকলেও বাড়ির দোতলা বরাবর ‘রশীদ মঞ্জিল’ লেখা আছে।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ঋষিকেশ দাস ১৯৩৭ সালে তার সৌখিন বাগানবাড়ি খান বাহাদুর কাজী আবদুর রশীদ নামে বিত্তশালী ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দেন। বাড়ি ক্রয়ের পর রশীদ তার নামে বাড়ির নাম রাখেন ‘রশীদ মঞ্জিল’। বাড়ির বর্তমান মালিক রশীদের ছেলে কে এম বশির হুমায়ুন।

স্থানীয়দের কাছে বাড়িটি ‘হুমায়ুন বাড়ি’ নামে পরিচিত। এই এলাকায় বেড়ে উঠেছেন ৩৯ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ। তিনি বার্তা২৪.কম-কে জানান, এই রোজ গার্ডেনে আওয়ামী লীগের জন্ম হলেও স্থানীয়দের কাছে হুমায়ুন সাহেবের বাড়ি নামে পরিচিত পায়।

২০১৮ সালে সরকার বাড়িটি কেনার পর থেকে রোজ গার্ডেন নামটি নতুনভাবে সামনে আসে। তিনি বলেন, ‘এটার উপর তেমন কোনো লেখালেখি, বই নেই- এগুলো তো পাই না। যা শুনছি, জানছি আর যেগুলো আলোচনা করে পাইছি; এইটুকুই ইতিহাস।‘

মাকসুদ বলেন, ‘এর আগে এখানে স্থানীয়দের ছোটখাটো অনুষ্ঠানাদি ছাড়া তেমন কোনো দলীয় অনুষ্ঠান হয়নি। দলের পক্ষ থেকে এবারই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন করা হচ্ছে এই রোজ গার্ডেনে।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান জাঁকজমক হবে। এদিন বিকাল ৩টার দিকে আলোচনা অনুষ্ঠান ও সন্ধ্যার দিকে সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।’

আওয়ামী লীগে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘যেখান থেকে জন্ম, সেই জায়গায় আমরা ফুলেল শুভেচ্ছা জানাই; সেই স্মৃতিময় জায়গাটুকু স্মরণ করি এবং যথাযথ নিয়মে এবারও তা করব।’

১৯৪৯ সালের ২৩-২৪শে জুন নতুন দল গঠনের উদ্দেশে কাউন্সিলের আহ্বান করা হয়। ২৩ জুন বিকাল ৩টার দিকে এই রোজ গার্ডেন থেকে আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্ম হয়।

এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক হন টাইঙ্গালের শামসুল হক। আর দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হন শেখ মুজিবুর রহমান।

পরে ১৯৫২ সালে শেখ মুজিবুর রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এর পরের বছর দলের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন শেখ মুজিব।

দলের সাধারণ সম্পাদক হয়ে শেখ মুজিব ১৯৫৫ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে অসাম্প্রদায়িক আওয়ামী লীগ গঠন করেন।

শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের সভাপতি নিবার্চিত হয়ে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে।

পূর্ব পাকিস্তানের শোষিত নির্যাতিত মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় নিমিত্তে গড়ে উঠা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর