বিএনপিতে ‘অদৃশ্য বলয়’, দ্বিধায় তৃণমূল

বিএনপি, রাজনীতি

মুজাহিদুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 23:25:31

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে (বিএনপি) একাধিক ‘অদৃশ্য বলয়’ সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ তৃণমূল নেতাকর্মীদের। কারণ দলটির কোনো কর্মসূচিতে এখন শীর্ষ নেতাদের একসাথে দেখা যায় না। ফলে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও। বিএনপি টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে বলেও মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রের নির্দেশনা না থাকায় নেতারা খেয়াল খুশি মতো চলছেন। দল পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও নেতৃত্বে বিভক্তির ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বিশেষ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন একটি বলয়ে এবং গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মির্জা আব্বাস ও আব্দুল মঈন খান অপর একটি বলয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

আর নানামুখী চাপে আছেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। আলোচনা সভা- মানববন্ধনে নেই আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও নজরুল ইসলাম খান। কোরামের বাইরে আছেন লে. জে. মাহবুবুর রহমান ও রফিকুল ইসলাম মিয়া সহ বাকিরা।

জানা যায়, গত নির্বাচনের পর দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক হলেও পরবর্তীতে আর কোনো বৈঠকের বিষয়ে একমত হতে পারেননি কেন্দ্রীয় নেতারা। পরবর্তীতে ব্যর্থতার জন্য দোষারোপের রাজনীতি শুরু হয় নেতাদের মধ্যে।

নেতাকর্মীদের অভিযোগ, কেন্দ্রের কোনো কর্মসূচিতে এখন আর গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মির্জা আব্বাস সহ প্রভাবশালীদের একসাথে দেখা যায় না। রুহুল কবির রিজভী চলেন নিজের মতো। এক সময়ের মাঠ কাঁপানো ছাত্র নেতারাও আছেন আড়ালে। তারেক জিয়ার একেক সিদ্ধান্তে বিরক্ত দলের সর্বোচ্চ ফোরাম। খালেদার মুক্তিতে তারেক জিয়া আসলে কী চান সেটা মির্জা ফখরুলদের কাছে স্পষ্ট নয়। ফলে কর্মসূচি দেওয়ার ক্ষমতা কার হাতে- সেটা জানতে চায় তৃণমূল।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, মূলত কেন্দ্রের নির্দেশনা না থাকা, নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করা, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে ব্যর্থ হওয়া, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার সব দরজা বন্ধ হওয়া, নির্বাচনের ব্যর্থতা, কূটনৈতিক ব্যর্থতা, আন্দোলনেরব্যর্থতা ইত্যাদি পর্যালোচনা করে ব্যর্থতার দায় কেউ নিতে চান না। সবাই একে অপরকে দুষছেন। ফলে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামেও বিভক্তি দেখা দিয়েছে। আর এই বিভক্তি ছড়িয়ে পড়েছে তৃণমূলে।

এই বিভক্তি স্পষ্ট হয় জাতীয় নির্বাচনের পর। ভোট কারচুপির বিরুদ্ধে নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে মামলা করার নির্দেশনা থাকলেও তা মানেননি কেউই। আর গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেন। এরপর দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করে বিএনপি।

এ বিষয়ে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘দলীয় নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তবে দলের মধ্যে সমন্বয়হীনতাও রয়েছে।’

বিএনপির অর্থ যোগানদাতা হিসেবে পরিচিত এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘গত ১০থেকে ১১ বছর ধরে দলকে আর্থিক সহায়তা করে আসছি, এখন ব্যবসা বন্ধের পথে। টিকে থাকতে ক্ষমতাসীনদের সাথে মিশে থাকতে হচ্ছে। দলের নেতাদের ভুল সিদ্ধান্তে আমরা সর্বস্বান্ত। নিজের পরিচয় টুকুও দিতে পারি না। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকেও রাজনৈতিক পরিচয় মুছে ফেলতে হচ্ছে।’

প্রসঙ্গত, একাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আটটি আসন পায়। পরবর্তীতে জোটগতভাবে শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু সেই নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শপথ নিয়েছেন গণফোরামের প্রার্থী সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। আর শপথ নেওয়ার আশায় আছেন গণফোরামের আরেক বিজয়ী প্রার্থী মোকাব্বির।

এদিকে, রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে বিএনপির নির্বাচিত প্রার্থীরা শপথ নিতে পারেন- এমন আলোচনাও শুরু হয়েছে। অবশ্য বিএনপির আইনজীবীরা জানিয়েছেন, আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়। যেহেতু তাকে রাজনৈতিক মামলায় শাস্তি দেওয়া হয়েছে তাই এটা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে এখন সমঝোতার প্রশ্ন আসছে। কিন্তু সমঝোতা তখন হয়, যখন শক্তি সমান সমান থাকে। শক্তি ভারসাম্যহীন হলে কিছুই হয় না।’

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে সবকিছুই করতে হবে। তাই সেটা আইনি বা রাজনৈতিক যেটাই হোক।’ খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে সরকারের সাথে সমঝোতা চান কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সমঝোতার প্রশ্ন আসছে কেন?দেশে কি আইন কানুন নেই?’

এ সম্পর্কিত আরও খবর