নেতাদের তোপের মুখে কাদের-রাঙ্গা

বিবিধ, রাজনীতি

স্পেশাল করেসপন্ডেট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 07:56:09

'নির্বাচনী মাঠে নামিয়ে দিয়ে পার্টি কোনই খোঁজ নেয় নি, একদিকে যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, তেমনি মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত। ক্ষোভ, অভিমানে জাতীয় পার্টির ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কেউ কেউ।'

বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) জাপার বনানী কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় নেতারা এমন ক্ষোভ ঝাড়েন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের এদিন প্রথমে ডাকা হয় মতবিনিময় করার জন্য। মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গার সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের এমপি। শীর্ষ এই দুই নেতাকে অনেকটা তুলোধুনো করেন বিগত নির্বাচনের প্রার্থীরা। 

বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক নেতা বার্তা২৪.কমকে জানান, বেশিরভাগ নেতাই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নির্বাচনে নামিয়ে দিয়ে তাদের খোঁজ খবর না নেওয়ার কারণে। পঞ্চগড়-১ আসনের প্রার্থী আবু সালেক নির্বাচনে কোনো রকম সাপোর্ট না দেওয়ার অভিযোগ তুলে পার্টির সঙ্গে সম্পর্ক না রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। 

তিনি বলেছেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করি। তিলে তিলে শ্রম দিয়ে দলকে ধরে রেখেছি। কিন্তু দল আমাকে কিছুই দেয়নি। নির্বাচনে প্রার্থী করে পিছুটান দিয়েছে। আমরাই না হয় খরচ করতাম। তবু যদি কেন্দ্র থেকে নেতারা গিয়ে আমাদের জন্য ক্যাম্পেইনে অংশ নিতো তাহলে মনকে বুঝ দিতে পারতাম। ভোটের আগে অনেকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি কিন্তু ফোনেই ধরেন নি।’

এক পর্যায়ে আবেগ কাতর হয়ে বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে অনেকদিন ছিলাম, আর নয়, আমি স্বেচ্ছায় জাতীয় পার্টি ছেড়ে দিচ্ছি। আমার কোনো কথায় আচরণে কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে মাফ করে দিয়েন।’

ঢাকা-১৩ আসনের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম সেন্টু সম্প্রতি বনানী অফিসে অস্ত্র প্রদর্শনের অভিযোগ তুলে সংশ্লিষ্ট নেতারা বিচার দাবী করেন। বিচার না হলে আর জাতীয় পার্টির সঙ্গে থাকবেন না। তার এই বক্তব্যের জবাবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, ‘আমি অভিযোগ পেলাম এখন সবার সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

দিনাজপুর-৫ আসনের প্রার্থী সোলায়মান সামি বলেছেন, ‘আমরা কী অপরাধ করেছি। মাঠে নামিয়ে দিয়ে দল পিছুটান দিয়েছে। ২৪ লাখ টাকা খরচ করেছি দল একটি বারের জন্য খোঁজ নেয় নি। ভোটের দিনে সরকারি দল প্রভাব বিস্তার করে ভোটে কারচুপি করেছে কিন্তু পার্টির কোনো সহায়তা পাইনি। এভাবে আমাদের ক্ষতি করার কোনো মানে হয় না। ভবিষ্যতে যদি মূল্যায়ন করা না হয় তাহলে দল করা কঠিন হয়ে পড়বে।’

সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ ঝেড়েছেন সাতক্ষীরা সদর আসনের প্রার্থী মাতলুব হোসেন লিয়ন। বৈঠক সূত্র হতে জানা গেছে জাপার এই নেতা বলেছেন, ‘আর কতকাল এভাবে আমাদের মাথা বিক্রি করবেন। আমাদের দেখিয়ে সরকারের কাছ থেকে টাকা নেবেন। এভাবে দল টিকবে না।’

যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু অভিযোগ করে বলেছেন, ‘নির্বাচনের আগে গোয়েন্দা বাহিনীর লোকজন আমাদের হয়রানি করেছে। বসে যাওয়ার জন্য চাপ দিয়েছে। কিন্তু কেন্দ্র আমার পাশে দাঁড়ায় নি।’

সোয়া ১১ টায় শুরু হওয়া বৈঠকটি চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। বিগত নির্বাচনে অংশ নেওয়া ৩৬ জন প্রার্থী তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। তারা প্রায় সকলেই স্বচ্ছতার সঙ্গে দল চালানোর পরামর্শ দেন।

জাপা মহাসচিব তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমাকে এমন সময় দলের মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয় যখন কিছুই করার ছিল না। আমি পার্টির চেয়ারম্যানের সঙ্গে পরামর্শ করে কাজ করেছি। ভবিষ্যতে আরও গুছিয়ে সব কাজ করা হবে।’

জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্ববান জানিয়ে বলেছেন, ‘বিগত নির্বাচনের পূর্বে পার্টির চেয়ারম্যান হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় আমরা একটি জটিল পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে গেছি। আগামীতে আমরা সকলে মিলে আরও স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করব। আমরা সকলে মিলে জাতীয় পার্টিকে এগিয়ে নেব। ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবশ্যই মূল্যায়ন করা হবে।’

মহাজোট থেকে জাপাকে ২৯ টি আসন দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ২৬টি আসন জোটে। এরমধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী থাকায় ১জন সরে দাঁড়ান। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ মহাজোটের আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেয় নি। তবে জাপার বিদ্রোহীকে সমর্থন দিলে ২৪ এ দাঁড়ায়। ১৪৬ উন্মুক্ত আসনে প্রার্থী দেয় জাপা। নির্বাচিত হয়েছেন ২২ জন প্রার্থী।

এ সম্পর্কিত আরও খবর