রাজনৈতিক জোট ও দলে ‘ভাঙা-গড়ার’ ইঙ্গিত

বিএনপি, রাজনীতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 22:12:13

 

বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতি একটি ক্রান্তিকাল পার করছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক জোট ও দলে ভাঙনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এবং বিকল্পধারায় ভাঙনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

জানা গেছে, বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর মধ্যে একটা চাঁপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। মতামত না নেয়া, একক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া, মূল্যায়ন না করাসহ বিভিন্ন প্রেক্ষিতে জোটের শরিকদের মধ্যে এই ক্ষোভ।

এরই মধ্যে বিএনপি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে 'জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট' গঠন করেছে। যেখানে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) আসম আব্দুর রব ও যুক্তফ্রন্টের বেশকিছু নেতা যোগ দিয়েছেন। এই জোট অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি আদায় ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্র বিনির্মাণের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। তবে নিজেদের অর্জন-বিসর্জনের অঙ্ক মেলাতে না পেরে আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের মঞ্চ প্রস্তুত করছেন ২০ দলীয় জোটের দুই শরিক দল।

জানা গেছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, ২০ দলীয় জোট ও চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত জানাতে জরুরি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপি। যেখানে দুই দলের পক্ষ থেকে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরা হবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি থেকে কোনো আশার বার্তা না আসলে জোট থেকে বেরিয়ে আসার ঘোষণাও দিতে পারেন নেতারা।

বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির একজন সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘বিএনপি একক সিদ্ধান্ত জোটের ওপর চাপিয়ে দেয়, বৈঠকে আমাদের মতামত নেওয়া হয়না। তারপরও আমরা জোটের স্বার্থে চুপ ছিলাম। কিন্তু বিএনপি শরিকদের মূল্যায়ন না করে এখন যাদের কর্মী নেই তাদের সঙ্গে পিরিত (ভালোবাসা) করছে।’

২০ দলীয় জোটের শরিক অন্য আরেক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আক্ষেপ করে বলেন, ‘ধৈর্যেরও একটা সীমা আছে। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামে পরীক্ষিত বন্ধুদের বাদ দিয়ে তারা কাদের পেছনে দৌঁড়াচ্ছে? আমাদের সাথে পরামর্শও করে না। উল্টো বলে আমাদের (শরিক) জন্য নাকি বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত। বিএনপি ৯০ ভাগ হলে পরিধি অনুযায়ী আমরাও তো ১০ ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত। যেখানে মূল্যায়ন নেই সেখানে থেকে লাভ কী?’

ভাঙনের মুখে বিকল্পধারা বাংলাদেশ

অন্যদিকে, বিভক্ত হয়ে পড়েছেন বিকল্পধারার সভাপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন জোট যুক্তফ্রন্ট। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদ ও উদারতাবাদকে পুঁজি করে বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও নাগরিক ঐক্য নিয়ে ২০১৭ সালে এই জোট গঠন করা হয়। জেএসডি, নাগরিক ঐক্য ইতোমধ্যে ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিয়েছেন। তবে বিকল্পধারার একটি অংশকে দেখা গেছে ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচিতে। ফলে ভেঙে যেতে পারে বিকল্পধারা।

বিএনপিকে এককভাবে ক্ষমতায় আনা যাবে না, জামায়াতকে বাদ দিতে হবে, ১৫০ আসন ছেড়ে দিতে হবে, দুই বছর ক্ষমতায় থাকতে দিতে হবে-এমন কয়েকটি শর্ত দেন বি চৌধুরীর। ফলে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে ছিটকে পড়ে দলটি। তবে বিকল্পধারার একটি বড় অংশ প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের যোগ দিতে।

দল থেকে বের হয়ে আসা এক নেতা না প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শিগগিরই তলবি সভা করে এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে। বিকল্পধারার সাংগঠনিক অবস্থা অনেকটা নড়বড়ে। দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ৭১ জন সদস্যের নাম থাকলেও কার্যত সক্রিয় আছেন ১৭-২০ জন। এখন এর মধ্যে ১৭ জনই দলত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। শিগগিরই সংবাদ সম্মেলন করে আমাদের অবস্থান জানাবো।

দলীয় সূত্র বলছে, বিক্ষুব্ধ নেতারা বর্তমান সভাপতি, মহাসচিব ও যুগ্ম মহাসচিবসহ কয়েকজনকে বহিস্কার করে নতুন কমিটি ঘোষণা করতে পারেন।

এদিকে নবগঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক তিন দলের মধ্যে সমন্বয় করে নির্বাচনে আসন বণ্টন এবং নানামুখী চাপের মধ্যে ঐক্য সংহত রাখতে একমত হয়েছেন নেতারা। এ নিয়ে ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে বৈঠকও হয়েছে।

সূত্র বলছে, সুষ্ঠু নির্বাচন এবং নির্বাচনকালীন সরকার কী ধরনের হবে এ নিয়ে ঐক্যফ্রন্ট নতুন কর্মসূচির একটা রূপরেখা শিগগিরই তুলে ধরা হবে। আন্দোলন ও নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করে সরকারকে সময় বেঁধে দেওয়া হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর