রাসিক-জেলা পরিষদ ‘দ্বন্দ্বে’ ঝুলে গেছে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ

রাজশাহী, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী | 2023-08-31 05:31:17

ভিত্তিফলক স্থাপন করা হয়েছে পাঁচ মাস আগেই। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে মিলেছে ৫ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দও। তবুও শুরু করা যায়নি রাজশাহীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশের সর্ববৃহৎ ম্যুরাল নির্মাণকাজ। কারণ ম্যুরালটি নির্মাণে প্রয়োজনীয় পরিমাণ জমি বরাদ্দ দিচ্ছে না রাজশাহী জেলা পরিষদ। ফলে বাস্তবায়ন হচ্ছে না বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী আগামী ১৭ মার্চে ম্যুরালটির উদ্বোধন।

নির্মাণ প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন- সিটি করপোরেশন এবং জেলা পরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দু’পক্ষের মধ্যে ‘বিরোধ’ এর জেরে ঝুলে গেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল নির্মাণকাজ।

জমি বরাদ্দ নিয়ে এমন সংকটের মুখে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীকে ডিও লেটার দিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় ১০ কর্মদিবসের মধ্যে জেলা পরিষদের কাছে মতামত তলব করেছে। এরই মধ্যে নিজেদের মতামত মন্ত্রণালয়কে জানিয়েও দিয়েছে জেলা পরিষদ।

সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলীদের অভিযোগ- ম্যুরালের ভিত্তিফলক উদ্বোধনের সময় খোদ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানও উপস্থিত ছিলেন। অথচ এখন তিনি জমি বরাদ্দ দিতে বেঁকে বসেছেন। মূলত সেখানে আধুনিক ডাকবাংলো নির্মাণ করতে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপনে জমি দিচ্ছে না জেলা পরিষদ।

তবে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের দাবি- ম্যুরাল নির্মাণে সিটি করপোরেশনের দাবিকৃত ১৯ শতাংশ জমি বরাদ্দ দিয়েছে জেলা পরিষদ। কিন্তু নতুন নকশা করে তারা এখন ৪২ শতাংশ জমি চাইছে। যা দিতে গেলে জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তার বাড়ির সীমানা প্রাচীর ভেঙে জমি দিতে হবে। সিটি করপোরেশনের অপরিকল্পিত পরিকল্পনার কারণে সংকটের সৃষ্টি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর রাজশাহী নগরীর সিঅ্যান্ডবি মোড়ে দক্ষিণপাশে জেলা পরিষদের জমিতে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপনে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। ৫০ ফুট উচ্চতার বঙ্গবন্ধুর এই ম্যুরালটি হবে দেশের সর্ববৃহৎ। যা নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে পাঁচ কোটি টাকা। অর্থায়ন করছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। নির্মাণকাজ শেষে ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে উদ্বোধন করা হবে বলে জানানো হয়।

ম্যুরালটির ভিত্তিফলক স্থাপনের পর সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় রাসিক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেছিলেন, ‘নির্মাণ কাজ শেষে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০২০ সালের ১৭মার্চে ম্যুরালটির উদ্বোধন করব আমরা। এই কাজটি করতে পেরে নিজেকে অনেকখানি হালকা মনে হচ্ছে আমার।’

তবে জমি বরাদ্দ নিয়ে জটিলতা ও পাল্টাপাল্টি অভিযোগে থমকে গেছে ম্যুরালটির নির্মাণ কাজ। ফলে পূরণ হচ্ছে না সিটি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের আশাও। এজন্য অবশ্য সিটি করপোরেশনের গাফিলতিকেই দায়ী করছেন অনেকে।

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের একজন অধ্যাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কম-কে বলেন, জায়গার নিষ্পত্তি না করে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের মতো স্পর্শকাতর প্রকল্পে হাত দেওয়া মোটেই ঠিক হয়নি সিটি করপোরেশনের । এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের আগেই সবকিছুই নির্বিঘ্ন করার দায়িত্ব ছিল তাদের। ফলক উন্মোচনের পর এখন জায়গা নিয়ে যে সংকট দেখা দিয়েছে, তার দায়ভার সিটি করপোরেশন কী এড়াতে পারবে? এমন প্রশ্নও তোলেন তিনি।

তবে ম্যুরাল নির্মাণে পরামর্শক হিসেবে থাকা বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্ন কথা। ম্যুরালের শিল্পমান বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সদস্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিক্স ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক এসএম জাহিদ হোসেন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘ম্যুরালে বঙ্গবন্ধুর অবয়বসহ পুরো নকশায় বেদিও রাখা হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সংগ্রামী ইতিহাসও ফুটিয়ে তোলা হবে। ফলে চূড়ান্ত নকশা অনুযায়ী বৃহৎ পরিসরে জায়গার প্রয়োজন। এজন্য জমি বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে।’

জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার বার্তা২৪.কম-কে বলেন, রাজশাহীতে আমরাই প্রথম বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ করেছি। সিটি করপোরেশন আরেকটি ম্যুরাল নির্মাণ করতে চাইলে কেউ বাধা দেবে না। কিন্তু তারা ৪২ শতাংশ জমি চাইছে।’

তিনি বলেন, ‘তাদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা গত ২৪ ডিসেম্বর মিটিং করেছিলাম। মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে, যে জায়গাটুকু তারা আগে থেকেই ব্যবহার করছিল সেখানেই ম্যুরাল করলে কোন সমস্যা নেই। বাড়তি জায়গা দিতে হলে আমাদের নিজস্ব স্থাপনার ক্ষতি হবে।’

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আমরা ম্যুরাল নির্মাণকাজের জন্য টেন্ডার ও নকশা বাছাই শেষ করেছি। তবে জেলা পরিষদ কেন এখন সংকট তৈরি করছে তা বোধগম্য নয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে অবগত রয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা আসলেই পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর