সিলেট সিটিতে বিএনপির পরাজয়ের কারণ হতে পারে জামায়াত

, জাতীয়

সাব্বির আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 00:32:49

সিলেট থেকে: সিলেট সিটি নির্বাচনে বিএনপির পরাজয়ের প্রধান কারণ হতে পারে তাদের জোটের মূল শরিক দল জামায়াত ইসলামী। নানা সমীকরণের মধ্যে সিলেটের ভোটের মাঠে এটাই এখন আলোচনা মূখ্য বিষয়।

আগের বার বিএনপি প্রার্থী আরিফুলকে সমর্থন দিলেও এবার নিজস্ব প্রার্থী দিয়েছে জামায়াত। সিলেট সিটিতে ৯০ এর দশকেও জামায়াতের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা আছে। সে হিসেব কষে অনেকে বলছেন, তখন জামায়াত ১৮ হাজার ২৯ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছিল। ওই জাতীয় নির্বাচনে সিলেট সদর ও পাশ্ববর্তী আরেকটি উপজেলা যুক্ত ছিলো।

এরপর মাঝে গেল ২০ বছর। বর্তমানে তাদের ভোট আরও বেড়েছে বলেই দলটি মনে করছে। সে হিসেবে আরিফুল হক জামায়াতের একটি বড় ভোট হারাচ্ছেন তা প্রায় নিশ্চিত। যার সুবিধা আবার ভোগ করছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান।

জামায়াত সূত্র বলছে, দেশের ১১টি সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে ১০টিতেই বিএনপি প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছে। সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অনেক আগে থেকে বিএনপিকে জামায়াত তাদের প্রার্থী দেওয়ার বিষয়টি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি সায় দেয়নি। এ অবস্থায় বিএনপি জোট একক প্রার্থী দিতে ব্যর্থ হয়।

অনুসন্ধানে জানা যাচ্ছে, সিলেটে জামায়াত তাদের নিজস্ব প্রার্থী দেওয়ার অত্যতম কারণ মেয়র আরিফ ও বিএনপির সঙ্গে দুরত্ব তৈরি হওয়া।

বিএনপি জামায়াতের যৌথ ভোটে আরিফ মেয়র হয়ে পরে আর জামায়াতকে পাশে রাখেননি। সব দলকে নিয়ে বৈঠক করলেও বরাবর উপেক্ষা করেছেন জামায়াতকে। জামায়াত প্রতিষ্ঠিত একটি বেসরকারি মেডিকেলের দেওয়াল ভেঙ্গে দিয়েছেন রাস্তা বড় করতে গিয়ে। এসময় ওই হাসপাতালের পরিচালকের গায়ে হাত তুলেছেন আরিফুল হক। যা জামায়তের মনে ক্ষত সৃষ্টি করেছে।

জামায়াতের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি ডা শফিকুর রহমানের বাড়ি সিলেট। সিলেট মহানগর জামায়াতের সাবেক আমির ছিলেন তিনি। তিনিই মূলত জামায়াতের প্রার্থী দাঁড় করানোর মূল নির্দেশদাতা। জানা যায়, তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের ব্যবসায়িক ও ব্যাক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে। সে দিক থেকে জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বদর উদ্দিন কামরানের একটি ভালো বোঝাপড়াও  রয়েছে।

‘জামায়াত নেতার সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে‘ কামরানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'সিলেটের রাজনীতিতে সবার সঙ্গে সবার সম্পর্ক আছে। বিএনপিতে বিদ্রোহ করে একজন প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন। জামায়াত নিজস্ব প্রার্থী নিয়ে স্বতন্ত্রভাবে ভোটে অংশ নিয়েছে। তাই জনগণ আমাকে পছন্দ করবেই।

এছাড়া সিলেট সিটি নির্বাচনে বিএনপি জামায়াত আলাদা হওয়ার আরও কারণের মধ্যে রয়েছে, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতকে ছাড় না দিয়ে বিএনপির আলাদা প্রার্থী দেওয়া।

এসব নিয়ে জানতে চাইলে জামায়াতের প্রার্থী অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুবর জোবায়ের বার্তা২৪.কমকে বলেন, বিএনপির সঙ্গে যে জোট বা ঐক্য সেটা জাতীয় নির্বাচন ঘিরে। সিটি নির্বাচনে প্রার্থী ও সমর্থন দেয়া সেটা দল হিসেবে যার যার। এটা ঐক্যমতের ভিত্তিতে হতেও পারে নাও হতে পারে।

জামায়াতের এ প্রার্থীর বিরুদ্ধে ৩৬ টি মামলা রয়েছে। বেশিরভাগ মামলা হরতাল অবরোধসহ বিভিন্ন মিটিং মিছিলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর দায়ের করা। এ কারণে তিনিও আড়াই বছরের বেশি সময় জেলে ছিলেন।

জোবায়ের মনে করেন, ‘রাজনৈতিক কারণে মামলাগুলো হয়েছে। মানুষ সরকারের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে তাকেই ভোট দেবে। একটি আধুনিক পরিকল্পিত সিটি উপহার দিতে চান তিনি।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর