গণহত্যার বিশ্ব স্বীকৃতি আদায়ে কাজ চলছে, ২০ রাষ্ট্রের সমর্থন

, জাতীয়

সেন্ট্রাল ডেস্ক ২ | 2023-08-31 03:52:35

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনীর নৃশংস ও বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডকে গণহত্যা দিবস হিসেবে বিশ্ব স্বীকৃতি আদায়ের দাবি ক্রমেই জোড়ালো হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশে কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে আজ রাত ৯টা থেকে এক মিনিট পুরো দেশে বাতি নিভিয়ে কর্মসূচি পালন করা হবে। ২০১৫ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ৯ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব অনুমোদন করে। এর পর থেকে সেই তারিখ বদলে ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এই প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, গণহত্যা দিবসের বিশ্ব স্বীকৃতি আদায়ের জন্য জোড়ালোভাবে কুটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে সরকার। ৯ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস ঘোষণার জন্য জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কাছে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সরবরাহ করা হয়েছে। ২০টি দেশ এসব তথ্য-প্রমাণ হাতে পেয়ে বাংলাদেশের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্রগুলোরও সহযোগিতাও চাওয়া হচ্ছে। আশা করছি দুই বছরের মধ্যে আমরা স্বীকৃতির বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া পাবো। ১৯৪৮ সালে গৃহীত জাতিসংঘের ‘কনভেনশন অন দ্য প্রিভেনশন অ্যান্ড পানিশমেন্ট অব দ্য ক্রাইম অব  জেনোসাইড’-এ গণহত্যার যে পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ আছে তার একটি বাদে সব অপরাধই মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হয়েছে। এর মধ্যে আছে- কোনো গোষ্ঠীর মানুষকে হত্যা, জীবনমানের প্রতি আঘাত ও শারীরিক ক্ষতিসাধন, শারীরিক ও মানসিকভাবে চরম ক্ষতিসাধন, জন্মদান বাধাগ্রস্ত করা এবং শিশুদের অন্য গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেওয়া। এই পাঁচটি বৈশিষ্ঠের কোনো একটি থাকলেই সে ঘটনা গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত হবে। ২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসকে জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হয়। এতে বলা হয়, ‘সংসদের অভিমত এই যে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে বর্বর পাকিস্তানি  সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যাকে স্মরণ করে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস ঘোষণা করা হোক এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হোক।’ এর পর ২০ মার্চ মন্ত্রিসভার  বৈঠকেও ২৫ মার্চকে 'গণহত্যা দিবস' ঘোষণার বিষয়টি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। পরদিন ২১ মার্চ জারি হওয়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে দিবসটিকে 'ক' শ্রেণিভুক্ত দিবস হিসেবে পালনের অনুমোদন দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমাদের প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস ধরে চালানো গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টায় জোর দেওয়া। অথবা ২৫ মার্চ বাংলাদেশে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর চালানো হত্যাযজ্ঞকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ে কাজ করা। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করতে হবে একাত্তরের যুদ্ধটি পাকিস্তানের গৃহযুদ্ধ নয় বা এটা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার কোনো যুদ্ধও নয়। এই যুদ্ধটা ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ। বাংলাদেশে গণহত্যার বিষয়ে পাকিস্তান এবং তাদের এ দেশীয় দোসরদের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় করতে হলে আরো বেশি একাডেমিক গবেষণা দরকার। কানাডা ও আর্জেন্টিনাসহ বিশ্বের আরো কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত নির্মম গণহত্যার বিষয় নিয়ে পড়ানো ও গবেষণা হচ্ছে। এগুলোকেও আমাদের তথ্য উপাত্ত হিসেবে কাজে লাগানো উচিত। তাহলে আমরা সহজেই আমাদের দাবি প্রতিষ্ঠা করতে পারবো। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারোয়ার আলী বলেন, ‘এখনো আমাদের করণীয় অনেক কিছুই আছে। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের পর মাত্র ৯ মাসে এতো বেশি সংখ্যক মানুষ হত্যার ঘটনা অন্য কোথাও নেই, তাই আমাদের প্রথমে প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিটা অর্জন করা। সেটা হলেই পরবর্তী প্রক্রিয়া সহজ হয়ে যাবে। এই বিষয়ে সরকার কুটনৈতিকভাবে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আশাবাদী। আমরা প্রথমে নয় মাসের স্বীকৃতি অর্জন করতে পারলে গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি পাওয়া খুব একটা কঠিন হবে না।’ ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান ডা. এম এ হাসান বলেন, ‘আমরা ২০০১ সাল থেকে ব্যক্তি উদ্যোগে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতির জন্য ইউনেসকোর কাছে আবেদন করে আসছি। টানা তিন বছর আবেদনের পর ২০০৪ সালে তারা জানায়, ব্যক্তি পর্যায়ে নয়, রাষ্ট্রীয়ভাবে যথাযথ তথ্য প্রমাণসহ আবেদন করতে হবে। এরপর বিএনপি জামায়াত সরকার বিষয়টা নিয়ে কোনো আগ্রহ দেখায়নি। এটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু পরবর্তীতে এই সরকারও যথা সময়ে সঠিকভাবে আবেদন করতে পারেনি। ২০১২ সালেও সরকার আবেদন করতে পারেনি। এরই মধ্যে ২০১৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ৯ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব অনুমোদন করে। এর মধ্যদিয়ে আমাদের স্বীকৃতির সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়। আমরা যথা সময়ে যথা কাজটা করতে পারিনি। সেই ট্রেন চলে গেছে। আমরা সেই ট্রেন ধরতে পারিনি।’ তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের উচিৎ হবে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে অথবা মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস ধরে যে গণহত্যা চলেছে তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের জন্য কাজে ঝাঁপিয়ে পড়া।

এ সম্পর্কিত আরও খবর