দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নৌরুটে নাব্যতা সংকট

বরিশাল, জাতীয়

জহির রায়হান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, বরিশাল | 2023-08-28 23:12:19

বরিশাল-ঢাকা নৌরুটের বিভিন্ন নদ-নদীতে পলি বা বালি জমাট পড়ায় নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নৌরুটে প্রায় ৩০ জায়গায় বিগত বছরের তুলনায় এ বছর নির্ধারিত সময়ের এক-দেড় মাস আগেই দেখা দিয়েছে নাব্যতা সংকট। ফলে এসব এলাকায় মালবাহী জাহাজ ও যাত্রীবাহী লঞ্চ জোয়ারের পানির উপর নির্ভর করে চলাচল করছে।

এছাড়া মাসকাটা নদীতে বার বার নাব্যতা সংকট দেখা দেওয়ায় আগামী দু’মাসের মধ্যে বরিশালের মিতুয়া পাতারহাট লঞ্চঘাটটি বর্তমান স্থান থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দক্ষিণে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

জানা গেছে, বরিশাল-ঢাকা নৌরুটের কীর্তনখোলার নদী বন্দর, মেঘনা নদীর হিজলার মিয়ারচর, মেহেন্দিগঞ্জের কালীগঞ্জ, পটুয়াখালী-ঢাকা রুটের লোহালিয়া, কবাই ও কারখানা নদীর বেশ কয়েকটি চ্যানেল ও বরিশাল-ভোলা রুটে লাহারহাট-ভেদুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায়, বরগুনার খাকদন এবং বিষখালীসহ বিভিন্ন নদীর পয়েন্টে পলি বা বালু জমে পড়ে নাব্যতা সৃষ্টি হয়েছে।

বরিশাল-ঢাকা রুটের অ্যাডভেঞ্চার-১ লঞ্চের মাস্টার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে আসা যাওয়া করতে মেঘনা নদীতে যাতায়াত করতে হয়। গত ২ মাস ধরে পলি আর বালু জমে মিয়ারচর চ্যানেলটিতে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পরে বিআইডব্লিউটিএ’র নির্দেশে কালীগঞ্জ রুট দিয়ে ঢাকা-বরিশাল দিয়ে চলাচল করছি। তবে সেখানে বর্তমানে নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। ভাটার সময় যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলের জন্য স্বাভাবিক পানি কম থাকায় জোয়ারের উপর নির্ভর এবং ডুবোচর থাকায় ধীরগতিতে চলাচল করতে হয়।’

এদিকে, সোমবার (৪ নভেম্বর) সকালে বরিশাল নৌ-বন্দর এলাকার কীর্তনখোলা নদীতে ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। ওই স্থান থেকে প্রায় ১ লাখ কিউবিক মিটার পলি/বালু ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে অপসারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ’র সহকারী প্রকৌশলী রেজাউর রশীদ খন্দকার।

তিনি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘বরিশাল নদীর বন্দর ছাড়াও ইতিমধ্যে ভেদুরিয়া, লাহারহাট, শ্রীপুর, লোহালিয়া ও কারখানা এলাকায় বিআইডব্লিউটিএ'র সাতটি ড্রেজার মেশিন দিয়ে পলি/বালু অপসারণের কাজ চলছে। প্রয়োজনে আরও ড্রেজার সংযুক্ত করে পলি/বালু অপসারণ করা হবে।’

বিআইডব্লিউটিএ'র বরিশালের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-পরিচালক আজমল হুদা মিঠু সরকার বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন নৌরুট এলাকায় নাব্যতা সংকট নিরসন ও নৌযান চলাচলের চ্যানেলগুলো সচল করার জন্য নদীগুলোতে পর্যায়ক্রমে ড্রেজিং করা হবে।’

এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) নৌপথে নাব্যতা সংকট নিরসনে বরিশাল নদীবন্দর ভবনের সভাকক্ষে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বিআইডব্লিউটিএ'র ড্রেজিং বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘উজানের পানি ও বন্যার কারণে বিগত বছরগুলোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছর নির্ধারিত সময়ের এক মাস আগেই দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীগুলোতে নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিগত কয়েক বছরের হিসেব অনুযায়ী উজান থেকে আসা নদীর পানির সঙ্গে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন মেট্রিকটন পলি আসে। যার মধ্য থেকে ৪০ শতাংশ পলি দেশের বিভিন্ন নৌপথে প্রাকৃতিক কারণে জমে থাকে। এরইমধ্যে বরিশাল অঞ্চলে প্রায় ৩০টি পয়েন্টের নাব্যতা সংকটের তথ্য আমাদের হাতে এসেছে। এসব থেকে প্রায় ৩০ লাখ কিউবিক মিটার পলি/বালু ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে অপসারণের চিন্তাভাবনা রয়েছে।’

এদিকে, বরিশাল-ঢাকা নৌরুটের মিয়ারচর ও কালীগঞ্জের চেয়ে নিরাপদ, দুর্ঘটনা রোধ ও তেল সাশ্রয়ের জন্য হিজলার মৌলভীর হাট-আবুপুর চ্যানেল সচল করার দাবি জানিয়েছেন ওই রুটের চলাচলকারী একাধিক লঞ্চের মাস্টাররা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর